Thursday, December 4, 2025

ফুলুর প্রতি - ২

- বলছিলাম বিমলদা..।
- দেখছিস তো আমি ব্যস্ত। দুপুরের এ সময়টা খদ্দেরের ভীড় যা থাকে, খামোখা ক্রিকেট নিয়ে বাজে গল্পের সময় আমার নেই!
- ওই দ্যাখো। ওই দ্যাখো। আরে কাজের সময় অযথা ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে যাবো কেন বলো। হ্যাঁ গতকাল সন্ধেয় বাধ্য হয় তোমার এই সিন্দুকসাইজের ক্যাশবাক্সের ওপর উপুড় হয়ে পড়েছিলাম কারণ তুমি অযৌক্তিক হাবিজাবি সব কথা বলছিলে। যেমন কপিলদেব মোটেও মেটের জুস খেয়ে নিজের স্ট্যামিনা বাড়ায়নি।
- সে কথা তোকে কপিল নিজে বলেছে?
- ইয়ে মানে তুমিও তো কপিলবাবুর ক্লাসমেট নও..।
- এবার ন্যাজ গুটিয়ে বেরো দেখি। এই যে নিমাই, পাঁচ নম্বরে মিক্সড রাইসটা এখনও দিলি না বাপ?
- বিমলদা, আজ কিন্তু আমি বালক সঙ্ঘের জয়েন্ট ক্যাশিয়ার কাম তোমার কম্পিটিং উইকেটকীপার নয়। স্রেফ খদ্দের হয়েই এসেছি।
- তা টেবিলে বসে অর্ডার না দিয়ে আমার কাছে গ্যাঁট হয়ে বসে কেন?
- বলছিলাম যে, আমার একটা টেবিল রিজার্ভ করার আছে। ওই যে উত্তর দিকের ওই বড় জানলা ঘেঁষে যেই টেবিলটা। ও'দিকে সবুজ পার্ক। চেয়ে দেখো আকাশটাও আজ কী ভীষণ ব্রাইট..তাকালেই মনের মধ্যে একটা..।
- টেবিল রিজার্ভ এখানে হয় না। ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ।
- সে যে ভুখা জনতার হাহাকারের নিয়ম। রেশন বিলি করায় সে যুক্তি মানায় ভালো। সে আইনে ব্রয়লার মুর্গিদের জবাই করা চলে। কিন্তু এই যে ইন্সটিটুশন অফ ফাইন আর্ট, এই তোমাদের সোনালি রেস্টুরেন্ট, এ'খানে সামান্য রহিসি আর কাব্যিক মেজাজ না থাকলে যে তোমাদের অমন হাইকোয়ালিটি মোগলাই কাটলেট কাবাবদের আত্মাকে খুন করা হবে।
- উফ। বাপ রে বাপ। কী বাজে কথাই যে বলতে পারিস তুই নীলু!
- এই কথাটা আমার নয় কাজেই একটু অ্যাপ্রিশিয়েট করার চেষ্টা কোরো বিমলদা। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন যে বাজে কথা দিয়েই মানুষ চেনা যায়। দেখো, ক্যাশবাক্স যেন তোমার ভিতরটাকে পামঅয়েলে ভেজে শেষ না করে দেয়।
- ওই টেবিলটাই কেন চাই?
- ফুলু আসছে কিনা দু'হপ্তা পিসির বাড়ি কাটিয়ে। তাই আজ বড়দার দেওয়া গল্পর বই কেনার টাকা দিয়ে ওকে আর নিজেকে সামান্য মোগলাই খাওয়াবো ভেবেছি। কিন্তু ফুলু যদি মুখ ফুটে একটিবার বলে কাটলেট, জেনো আমি মোগলাইয়ের দিকে ফিরেও তাকাবো না।
- প্রেম করবি বলে তোর জানালার ধারে টেবিল চাই? গুরুজনের কাছে এমন রিকুয়েস্ট করতে একবারও থমকালি না?
- জানালার ধারের টেবিল চেয়েছি। কেবিন তো চাইনি। তুমি যদি ওই নিমগাছের নীচে বেঞ্চি পেতে কাটলেট খাওয়াও তা'তেও হবে। শুধু প্রকৃতিকে আড়াল করে দিও না। আজ ওকে একটা পোয়ট্রি প্রেজেন্ট করবো। এই ধরো বিকেল সোয়া পাঁচটা নাগাদ আসবো। মোগলাই, কবিতা, হাহুতাশ, সুমিষ্ট হে হে, সব মিলে এক কি সোয়া ঘণ্টা।
- একজোড়া মোগলাই দিয়ে সোয়া ঘণ্টা টেবিল ব্লক করবি?
- প্রয়োজনে প্যানথ্রাস বলবো।
- টেবিল আটকে রাখা সম্ভব নয়।
- আমি যদি ভূতোদের বলি যে তোমার কপিল আর মেটের জুসের গল্পটা জেনুইন?
- হুম?
- হুঁ!
- আগামী এক হপ্তা ক্রিকেট আড্ডায় আমি যা যা বলবো তুই চোখ বুজে সাপোর্ট করবি?
- সমস্ত গুল আমি মাথা পেতে বরণ করে নেবো।
- আর একটা শর্ত।
- দিস ইজ নট ক্রিকেট বিমলদা। তবে কবি মানুষ, অন্তরাত্মা যতক্ষণ না ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ততক্ষণ আমার কবিতার আত্মপ্রকাশ সম্ভব নয়। বলো আর কী দরকার।
- ফুলুর জ্যেঠু এ'বারেও পুজোর চাঁদা এড়িয়ে গেছে। সে চাঁদা আদায়ের দায় ফুলুর।
- ফুলের মত মেয়ে, তাকে বলবো সে দানবের পকেট নিংড়ে টাকা বের করতে? কিন্তু বিকেলের ওই জানালা ঘেঁষা টেবিল আজ বড় দরকার। অতএব, দেখি কী করা যায়।
- ইয়ে নীলু।
- আবার কী?
- তোর প্রেমটা ভেঙেটেঙে যাবে না তো?
- কী ধরণের বিশ্রী আশঙ্কা এ'টা! উইথড্র করো এখুনি!
- একটাই চিন্তা রে, ফুলু পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলে শেষে তোর কবিতা শোনার দায় আমাদের ওপর না বর্তায়।
- হার্ডওয়্যার স্টোর চালানোর কথা তোমার। খামোখা এই চপকাটলেটের বসন্তে তুমি পচামুলো হয়ে ঝুলে রয়েছো।

No comments: