Showing posts with label উৎসব-পার্বণ. Show all posts
Showing posts with label উৎসব-পার্বণ. Show all posts

Sunday, June 1, 2025

নবারুণের শাস্তি



- শুভ নববর্ষ নবারুণ।
- শুভ নববর্ষ। এই শুভদিনে আজ আবার এ পাপের জায়গায় কেন স্যার..। এ'সব রাউন্ড লাগিয়ে সময় নষ্ট না করে সাততাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন বরং।
- এ'টাই তো আমার কর্মস্থল হে, তা'তে আবার পাপ কীসের।
- তা বটে। যাক, সেল নম্বর বাহাত্তরে আপনার জন্য কাল্পনিক লাল কার্পেট বিছিয়ে দিলাম।
- সিগারেট খাবে?
- যাবজ্জীবন কয়েদি আমি। দারোগার দেওয়া সিগারেট পেটে সইবে কেন বলুন।
- আমিই ধরাই তা'হলে।
- বেশ তো।
- নবারুণ, তোমার তো এ'টা দ্বিতীয় বছর চলছে। তাই না।
- বছরমাস এ'সবের হিসেব রেখে লাভ দেখছি না বিশেষ।
- তোমার গুড বিহেভিয়ার মাথায় রেখে একটা ভালো চিঠি হেডকোয়ার্টারে কাল পাঠাচ্ছি।
- কাগজ, কালি এবং আপনার অতি মূল্যবান সময়ের বিশ্রী অপচয়।
- কী ব্যাপার বলো দেখি, তোমার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই দেখেছি একটা বিশ্রী নেগেটিভ মাইন্ডসেট।
- খুন করা আসামী। আমার মাইন্ডসেট তলিয়ে দেখবেন না প্লীজ।
- শাস্তি তো পাচ্ছোই, পাবেও। কিন্তু তোমার মধ্যে একটা পসিবিলিটি আমি দেখি অনবরত নবারুণ। একটা স্পার্ক।
- আমার ভদ্রলোকের মত ব্যবহার দেখে ইম্প্রেসড হচ্ছেন? পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খুনিরা যে মিটমিটে শয়তান সে'টা আশা করি আপনার মত দুঁদে দারোগাকে বলে দিতে হবে না।
- আরো খুনটুন করার ইচ্ছে আছে নাকি?
- যে একবার খুন করেছে, তার মধ্যে পসিবিলিটি তো রয়েইছে।
- তুমি কি আজ একটু বেশি ডিসটার্বড নবারুণ?
- না। দিব্যি আছি।
- তুমি প্রায় আমার ছেলের বয়সী। তোমার মনের অবস্থা আমি কিন্তু কিছুটা হলেও...।
- বয়স দেখিয়ে নিজের সুপিরিয়রিটি এস্টাব্লিশ করার কী দরকার দারোগাবাবু। আপনি আইনের রক্ষক। আমি খুনি। বয়সের হিসেবটা উল্টো হলেও আপনি স্নেহ, কমপ্যাশন ইত্যাদির ব্যাপারে আমার চেয়ে এগিয়েই থাকতেন।
- আজ তুমি এতটা বিরক্ত কেন বলবে? পয়লা বৈশাখ, বাড়ির কথা মনে পড়ছে?
- না। আমার ধারণা এই জেলের মধ্যে আমি বেশি সিকিওরড। বাড়ির চেয়ে অনেক বেশি নিশ্চিন্দি এ'খানে।
- চা খাবে? ব্যবস্থা করতে পারি কিন্তু।
- আপনার এই সিম্প্যাথিতে লজিক সবিশেষ নেই স্যার। যে'টা আছে সে'টা হলো একজন সো-কল্ড আপারক্লাস ভদ্রসন্তানের প্রতি আর এক ভদ্রসন্তানের টান।
- বড্ড তিতিবিরক্ত হয়ে আছো ভাই। কী ব্যাপার বলো দেখি আজ। বলো না।
- জানেন স্যার। অন্যায় করেছি, শাস্তি পাচ্ছি। এই স্পষ্ট ধারণার মধ্যে এক ধরণের অদ্ভুত স্বস্তি আছে। একটা লিনিয়ার প্রসেস যার অন্যথা হওয়ার নয়। সে'টা ভেবে বেশ লাগে। কিন্তু এই মাঝেমধ্যে এক একটা দিন মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ধান্ধাবাজি সুড়সুড়ি দেয়।
- ধান্দাবাজি?
- মনের মধ্যে লতায়পাতায় গজিয়ে ওঠে বিভিন্ন যুক্তি। মনে হয় অপরাধটা না করে আমার কোনো উপায় ছিল না।
- তোমার কেসফাইল পড়ে আমারও কিন্তু মনে হয়েছে যে ব্যাপারটা একতরফা নয়...।
- কেসফাইলের কথা বলছি না স্যার। ওই র্যাশনালাইজ করার প্রসেসটার কথা বলছি। এই যেমন আজ বারবার মনে হচ্ছে ওই বিশ্রী কাজটাই গোটা দুনিয়া দেখলো জানলো অথচ কী'ভাবে তিলে তিলে একটা খুনীকে গড়ে তোলা হলো সে'টা কেউ কখনও জানবে না!
- নবারুণ..শোনো..।
- নিজে নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া যায় না। এই না পারাটার কথা ভেবে বড় অসহায় লাগছে দারোগাবাবু। আর সেই বিরক্তি ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই।
- সমস্তটা হয়তো বুঝছি না তবে তুমি আজ ভালো নেই।
- আমি জানি আমার অপরাধটা। এ শাস্তি থেকে পালিয়ে যেতে চাইনা একটুও। দারোগাবাবু, তবু ভালো থাকতে চাই। কী বিশ্রী নেশা, তাই না?
- তাই তো। আর সে নেশাতেই তো সবারই প্রায় যাবজ্জীবন অবস্থা।
- এই দ্যাখো..।
- কী হলো?
- আরে দারোগাদাদা, আপনারও যে মেজাজটা আজ অফ দেখছি। আপনিও কি এই অধমের সেলে বসে নিশ্চিন্ত বোধ করছেন?
- ননসেন্স।
- হুম। একিলিস হীলে ছুঁচ ঠেকিয়ে ফেলেছি মনে হচ্ছে।
- চায়ের অফারটা আর একবার দিলাম। এ'বারেও রিফিউজ করবে?
- হোক। ইয়ে, সঙ্গে লেড়ো হবে?

Sunday, March 16, 2025

প্রতিজ্ঞা

- সামনের বইমেলায় কিন্তু কলকাতা ফিরবই! ফিরবই!
- ইয়েস!
- দেখতে পাচ্ছিস তো আমার চোয়ালটা কী ট্রিমেন্ডাস শক্ত হয়ে আছে?
- স্পষ্ট! ঠিক যেন একতাল লোহা!
- রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে ভাবলেই। মিনিমাম এক হপ্তা থাকবো, বুঝলি। রোজ মেলায় যাবো; দুপুর থেকে রাত মেলাতেই পড়ে থাকবো। বোনাসের টাকার একটা মোটা অংশ সরিয়ে রাখবো ফর বইমেলা এক্সপেন্সেস।
- এই না হলে সাচ্চা বাঘের বাচ্চা!
- মনে মনে প্রায় পৌঁছেই গেছি পরের বইমেলার মাঠে।
- সে'টাই তো আসল। ভেরি গুড। তবে ইয়ে..।
- ইয়ে কীসের? কীসের ইয়ে?
- গত পুজোয় অফিসে বসে সামনের পুজোতে এক হপ্তার জন্য বাড়ি ফিরবি প্ল্যান করেছিলিস না? টানা পাঁচ রাত জেগে ঠাকুর দেখবি, হাবিজাবি খাবি আর ভোর হলে প্যানফর্টি চার্জ করে শুয়ে পড়বি?
- হুম?
- তা'হলে সামনের পুজোয় এক হপ্তা ছুটি প্লাস সামনের বইমেলায় আরো এক হপ্তা ছুটি, তাই তো?
- হুম?
- ও কী রে, তোর চোয়ালটা কি সামান্য ঝুলে পড়ছে? টেনেটুনে রাখ ভাই!

Sunday, December 31, 2023

হ্যাপি নিউ ইয়ার

যারা বংপেন ব্লগের পেজটায় মাঝেমধ্যেই ঘুরে যান, তাঁদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইল। আর বিশেষত যারা বানান-লেখার ভুল শুধরে দিয়ে থাকেন নিয়মিত, তাঁদের কয়েক হাজার থ্যাঙ্কিউ বললেও যথেষ্ট হবে না। একটা ঢাউস ডবল-চিকেন-রোল তাঁদের অবশ্যই প্রাপ্য। লেখালিখি কতটা দাঁড়াচ্ছে জানি না, তবে বাংলাভাষাটা শিখছি, ভুলত্রুটির ব্যাপারে সচেতন হচ্ছি; সে'টা কম কথা নয়।

নববর্ষের শুভেচ্ছা জানবেন।

আগামী বছর:

দেদার হাঁটাহাঁটি হোক। 
ইএমআই-য়ের ভার কমে আসুক।
সবার কপালে মেডিকাল ইনস্যুরেন্স থাকুক।
ভালো মন্দ খাওয়াদাওয়া থাকুক, তবে মাপা পরিমাণে।
প্রতি মাসে কিছুটা টাকা অন্তত 'সেভিংস'-য়ের দিকে যাক।
বই পড়া বাড়ুক। রোজ এক পাতা পড়াটাও ফেলনা নয়। 
ভালো ভালো সিনেমা-সিরিজ থাকুক।
ঘোরাঘুরি থাকুক। থাকুক হঠাৎ উঠল-বাই-কটক-যাই।

আবারও বলি, ধন্যবাদ।

Saturday, July 1, 2023

নববর্ষের আহ্বান

হে বঙ্গ-সন্তান।
নিজের শিক্ষা-সংস্কৃতি জলাঞ্জলি দেবেন না, কেমন?
মনে রাখবেন:
মিথ্যে বলা পাপ। গুল দিন।
বড় বড় কথা বলা অন্যায়৷ বাতেলা ঝাড়ুন।
লোক ঠকানো ঘৃণ্য কাজ৷ গাছে তুলে মই কেড়ে নিন।
মানুষকে বোকা বানালে সে'টা ধর্মে সইবে না৷ লোকের মাথায় কাঁঠাল ভাঙুন।

শুভ নববর্ষ।

(১৫ই এপ্রিল ২০২৩-য়ে লেখা। পয়লা বৈশাখে)

Sunday, March 12, 2023

দোল সাফাই

খুব ছোটবেলার দোল খেলার স্মৃতির চেয়েও জমজমাট স্মৃতি হল ঘষেমেজে গায়ে-মুখের রঙ তোলা৷ বেশিরভাগ দোলের ছুটি মোটের ওপর মামারবাড়ির পাড়াতেই কাটত৷ দুপুরবেলা রঙে চুবনি খেয়ে বাড়িতে ফিরে বড়মামার কাছে সারেন্ডার করতে হত৷ আর বড়মামার তত্ত্বাবধানে হত রঙ-সাফাই৷ দু'টো জরুরি ব্যাপার মনের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
এক, মুখে যে বিশ্রী এবং ঢ্যাঁটা রঙের পরত পড়ত, সে'টা সাধারণ সাবানে যাওয়ার নয়৷ তখন তো আর অর্গানিক রঙ বাজারে আসেনি, সে'সময় পারলে মুখে প্লাস্টার করে দেওয়াটাই ফ্যাশনের পর্যায় ছিল। সেই রঙকে কাবু করতে বড়মামা একটা ন্যাকড়া প্যারাশুট নারকোল তেলে ভিজিয়ে মুখ ঘষত। সে এক হাইক্লাস ফেসিয়াল, বড়মামার হাতের গুণে সে ঘষটানিও মনে হত মখমলে মালিশ৷ অসীম ধৈর্যে সে বাঁদুরে রঙ নরম হয়ে আসত।
দুই, দু'রাউন্ড শ্যাম্পুর আগে মাথার চুলে এক রাউন্ড সার্ফ-ট্রীটমেন্ট পড়ত। এক খাবলা কাপড় কাচার সাবানগুঁড়ো দিয়ে মাথার চুলের দলাইমলাই। সে'টা ধুয়ে ফেলে ক্লিনিক অল্কক্লিয়ারের দু'টো পাউচ পরপর ফায়্যার করা হত৷ তা'তে আবির রঙ গায়েব, চুল মারাত্মক ফুরফুরে। অমন দরদী হেয়ারস্পা কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রীট ঘেঁষা বাহারে সানফ্লাওয়ার সেলুনেও দেখিনি।
আজ ডাভ সাবান শ্যাম্পু দিয়ে গা-মাথা বিস্তর রগড়ে দেখলাম, নেকু অর্গানিক আবিরের কলারও তারা টেনে ধরতে পারছে না৷ ধুস্।

Tuesday, February 14, 2023

ভ্যালেন্টাইন বিরিয়ানি




ডিয়ার বিরিয়ানি,

আশা একটাই, যেন প্রাণপণ ভালোবাসতে পারি।

দেখো, যেন নাক উঁচু তর্কাতর্কিতে আটকে না পড়ি। কলকাতাইয়া -মোরাদাবাদি জাতপাত নিয়ে বেফালতু খামচা-খামচি শুরু না করি।
যেন, স্রেফ ভালোবাসায় "এইত্তো আমি" বলে আত্মসমর্পণ করার সৎ সাহসটুকু রাখতে পারি। বাতেলায় ভেসে না গিয়ে কবজি ডুবিয়ে কেল্লা ফতে করতে পারি।

পার্থিব গল্প-আড্ডা-গুলতানিতে আটকে পড়ে যেন তোমায় ঠাণ্ডা না করে ফেলি। ইয়ারদোস্ত আর তাঁদের খাওয়ার পাতের খেজুরালাপ; ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু বিরিয়ানি চাল-মাংস থেকে উঠে আসে ধোঁয়া যদি সময়মত জিভে-নাকে চালান না করতে পারি, তা'হলে ব্যর্থ আমার সঞ্জীব পড়ে চোখ-ছলছল, ব্যর্থ আমার সমুদ্র বা পাহাড় দেখে অস্ফুটে বলা; "আহা"।

তোমার প্লেটের পাশে খিটখিটে মুখে এসে যেন কোনোদিনও না বসি। যেন মনে রাখতে পারি যে সাচ্চা কমরেডের মত; তুমি সবসময়ই ছিলে, আছো, থাকবে।

আর হ্যাঁ, যেন তোমার প্লেটের ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়ি, হামলে না পড়ি। প্রেম-ভালোবাসায় গাম্বাটপনা যেন মিশিয়ে না ফেলি। ধীরে-সুস্থে, স্মিত হেসে, যেন গা ঘেঁষে বসতে পারি। দু'দিন বইতো নয়। 

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে, বিরিয়ানি। ভালো থেকো।

ইতি, বংপেন। 

Saturday, December 31, 2022

বাহ্‌



কলকাতায় আমরা মাঝেমধ্যে গভীর রাতের দিকে ঘুরতে বেরোতাম। অকারণে বেরোনো বলে সে ঘুরতে যাওয়ায় প্ল্যানিংয়ের ধকল থাকত না৷ ধাবার চা, বা কোনও আধ-চেনা দোকানের ম্যাগি; এ'সব দু'একটা স্টপেজ ছাড়া গোটাটাই শুধু ঢিমেতালে ড্রাইভ৷

ডিসেম্বরের কোনও একটা সময়, মাঝরাতের পর হুট করে পার্ক স্ট্রিটের দিকে ঢুকে পড়ে টের পেতাম; এইত্তো, ক্রিসমাসের আলো লেগে গেছে৷

কয়েকটা অস্ফুট "বাহ্" বেরিয়ে আসত৷ প্রতিবার। আরে, অজস্র টুনির ঝলমলে যদি "বাহ্"টুকু নাই বলতে পারি, তা'হলে আর এ জীবনে রইলটা কী।
সেই মিঠে "বাহ্" টুকু সামান্য মিস করছি বটে।

Sunday, June 5, 2022

গুপীর জামাইষষ্ঠী



সতেরো দিন পুরনো আনন্দবাজারটা ঘেঁটে নতুন খবর বের করার চেষ্টা করছিলেন মন্মথ হালদার। অকারণে রোজ রোজ কাগজ কিনে টাকা জলে দেওয়ার লোক তিনি নন। একবার কাগজ কিনে সে'টাই ধীরেসুস্থে হপ্তাতিনেক পড়ে থাকেন তিনি। জরুরী খবরগুলো বারচারেক পড়তে হয় রপ্ত করতে। ক্রসওয়ার্ড পাজলের ক্লুগুলো দিনে তিনটের বেশি নয়, নয়ত মগজকে অকারণ চাপ দেওয়া হয়। এমন সময় বিপিন এসে কনসেনট্রেশন দিল নষ্ট করে। সেই একই বাতিক ছেলেটার; নেই। আজ চিনি নেই। কাল তেল নেই। পরশু কাপড় কাচার সাবান নেই। শুধু নেই নেই আর নেই। মহাখচ্চর একটা কাজের লোক জুটেছে কপালে। কিন্তু বিপিনকে ছাড়া গতিই বা কী। মন্মথ হালদারের বাড়িতে বিপিন ছাড়া কেউ কোনোদিন টিকবে না, সে কথা মন্মথবাবু নিজেও জানেন।

"টীব্যাগ শেষ", সদর্পে ঘোষণা করল বিপিন।

খবরের কাগজটা সরিয়ে রেখে পকেটে রাখা নোটবইটা বের করে খানিকক্ষণ পাতা উলটেপালটে দেখলেন। মনে মনে খানিকক্ষণ হিসেব কষলেন। ভুরু কুঁচকে গেল ভদ্রলোকের, "বিপনে, হিসেব মত টীব্যাগের স্টক আরও আট দিন চলার কথা। শেষ হল কী করে সাততাড়াতাড়ি"?

"দেখুন কাকা, ওই আপনার মত এক টীব্যাগ ডুবিয়ে দু'বার করে চা খেতে পারব না। এক কাপে একটা টীব্যাগ না হলে আমার চলবে না"। 

"ওরে আমার লাটসাহেব এলেন রে। চলবে না। অত যদি নবাবী থাকে তা'হলে দিনে দু'বারের বদলে এককাপ চা খাবিগে যা"। 

"ও'সব পারব না। দু'কাপ চা মাস্ট। নয়ত গা ম্যাজম্যাজ করে। আর সন্ধের পর এককাপ কফি। কড়া করে"। 

"শালা রাস্কেল। তুই আমার বাজার করার পয়সা মেরে কফি খাচ্ছিস"?

"বাজে কথা বলবেন না। পয়সা কতই বা আর দেন বাজার করার। ও'দিয়ে ঝরতিপড়তি মাল ছাড়া কিছু জোটে নাকি। নিজের স্যালারি থেকে নিজের কফি আনি"।

"কুকিং গ্যাসটা তো আমার যায় রে হতভাগা। উফ, এরা আমায় পথে বসিয়ে ছাড়বে"। 

"তিনকুলে তো কেউ নেই। যা মালকড়ি এরপর তো চোদ্দভূতে লুটে নেবে। এ'বার একটু ভোগটোগ করুন না কাকা"।

"দূর হ। তোর জ্ঞান আমার না শুনলেও চলবে। চায়ের ব্যাগ শেষ হয়ে গেছে যাক। নেক্সট লট কেনার ডিউ ডেট মাসের বাইশ তারিখে। এখনও ঢের দেরী। তদ্দিন এ'বাড়িতে চা বন্ধ"। 

"ভালো কথা, আমি তা'হলে নিজের চাপাতার ব্যবস্থা করে নি'গে। দেখবেন, তখন আবার আমার থেকে দিনে এককাপ ধার চাইবেন না"। 

"তুই আমায় চায়ের খোঁটা দিচ্ছিস রে ব্যাটা? জানিস আমার জ্যাঠামশাইয় এক গোরার দার্জিলিং টী-এস্টেট থেকে ডাইরেক্ট চা-পাতা আনাত"?

"এই এক রোগ দেখছি মাইরি আজকাল। পৃথ্বীরাজ দারুণ যুদ্ধ করতেন তাই আমি চাকরী না করে পাড়ার রকে বসে গুটখা খাব আর শিস্‌ দিয়ে বলব মেরা ভারত মহান। লে হালুয়া। আপনার জ্যাঠা দার্জিলিং থেকে চা আনাতেন আর আপনি সকালের এঁটো টীব্যাগ চুবিয়ে বিকেলের চা খান। এই দুয়ে কীসের তুলনা? ধুর"। 

"বেরিয়ে যা আমার সামনে থেকে। আমার টাকায় খাবি, আমার টাকায় পরবি। আর আমায় স্ক্যান্ডালাইজ করবি"? মন্মথ আর দু'কথা শোনাতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় রিক্সার প্যাঁপোরপোঁ শুনে দু'জনেই ঘুরে গেটের দিকে তাকালে। 

রিক্সা থেকে যে নামলে তাকে দেখে মন্মথর মুখ আরও খানিকটা ভেটকে গেল। 

কিন্তু বিপিনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, সে চিৎকার করে উঠল, "আরে, গুপীদা"! এই বলে বিপিন ছুটে এগিয়ে গেল অতিথির দিকে। তার দু'হাতে ভারি দু'টো ব্যাগ আর পিঠে একটা ঢাউস ব্যাকপ্যাক। হাতের দু'টো ব্যাগ বিপিনের দিকে এগিয়ে দিল গুপী। 

"কদ্দিন পর এলে এ'বার গুপীদা", বিপিনের আনন্দ আর ধরছিল না। 

"কেমন আছিস বিপনে"? বিপিনের পিঠ চাপড়ে জিজ্ঞেস করলে গুপী। 

"কোনোক্রমে আছি। চাটনিতে বেশি চিনি দেওয়ার জন্য আমায় কৈফিয়ত দিতে হয়। আমার আবার থাকা"। 

তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন মন্মথ, "তুই কত বড় ট্রেটার রে বিপনে? একটা স্ট্রেঞ্জারের কাছে গেরস্তের নিন্দে করতে তো লজ্জা করে না"?

মন্মথর কথাটা না শোনার ভান করে বিপিন গুপীকে শুধল, "হ্যাঁ গো গুপীদা, কী কী আনলে এ'বার"?

বারান্দার মোড়ায় বসে জুতোর ফিতে খুলতে খুলতে গুপী বললে, "একটা ব্যাগে আছে পাঁঠার মাংস, পাবদা, মৌরলা, দেশী মুর্গী আর হাঁসের ডিম। বুঝলি। আর অন্যটায় হিমসাগর, লিচু, আর সন্দেশের বাক্স"। 

"দই আনোনি"? সাগ্রহে খোঁজ নিল বিপিন। 

"মিত্তিরের দোকানে দাঁড়িয়েছিলাম শুধু তোর দইপ্রেম মনে করে। দু'কিলো এনেছি। এককিলো তোকেই সাফ করতে হবে কিন্তু"। 

প্রায় লাফিয়ে উঠল বিপিন। তারপর জিজ্ঞেস করল, "গুপীদা, বাড়িতে চা নেই। কফি খাবে"?

"খাবো। তবে ব্ল্যাক"। 

"হোয়াইট চাইলেও জুটত না। এ বাড়িতে দুধ ঢোকে না। বড় খরচ কিনা তা'তে", একটু বাঁকা সুরেই জানান দিলে বিপিন। 

"এখুনি বেরো রাস্কেল, বেরো তুই হারামজাদা", টেবিল চাপড়ে চিৎকার শুরু করলেন মন্মথ। কিন্তু সে চিৎকার থামাতে হল। গুপী এসে ঢিপ করে প্রণাম করেছে। 

একটু বিরক্তির সুরেই মন্মথ বললেন, "এ'ভাবে না বলে কয়ে দুমদাম এসে পড়াটা আমি মোটেও পছন্দ করিনা"। 

গুপী এ'সবে নার্ভাস হয় না। সপাটে বললে, "দুম করে কী। আজ তো আসার কথাই ছিল"।

"আজ? আজ কী ব্যাপার? কই, আজ তো তোমার আসার কোনও কথা ছিল না"? 

"আপনার মাথাটাথা গেছে। আজকের দিনটা  ভুলে মেরে দিয়েছেন তো"? 

"আজ কী"?

"যাব্বাবা। আজ জামাইষষ্ঠী। এমন দিনে শ্বশুরবাড়ি ঢুঁ মারব না"?

"এ'টা মোটেও তোমার শ্বশুরবাড়ি নয়"। 

"নাহ্‌, আপনার মাথাটা সত্যিই গেছে। এই বিপনে, তিন কাপ কফি করিস। শ্বশুরমশাইয়ের মাথার ব্যালেন্স ভালো ঠেকছে না"। 

"তোমার এই গায়ে পড়া অসভ্যতা আমার বরদাস্ত হয় না গুপী"।

"যাকগে, শুনুন। আমার সময় নষ্ট করলে চলবে না। আড়াই ঘণ্টা ধরে বাজার করেছি। বিপনের হাতে ছেড়ে দিলে সেই দায়সারা ঝোলভাতই গিলতে হবে। আমি ওপরের বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোজা রান্নাঘরে যাচ্ছি। মৌরলার একটা নতুন রেসিপি শিখে এসেছি মেজপিসির থেকে। আপনাকে জাস্ট চমকে দেব শ্বশুরমশাই"। 

"দ্যাখো। এত বছর ধরে তোমায় বলে চলেছি। আজ আবারও বলছি। তুমি আমায় শ্বশুরমশাই ডাকবে না। গা জ্বলে যায়"। 

"ও হ্যাঁ, আপনার জন্য ভালো চা পাতা এনেছি। গোপালধারা। আপনার মাস দুয়েক চলে যাবে"। 

"আমার কোনও কথা কি তোমার কানে যাচ্ছে না গুপী"? 

"শুনুন, আমায় হেঁসেলে ঢুকতে হবে। দাঁড়িয়ে বকবক করলে চলবে না। ফ্রেশ হয়ে আসছি"। 


****

দুপুর দু'টো নাগাদ বিপিন মন্মথকে ডেকে খাওয়ার ঘরে নিয়ে গেল। গুপী খাবারদাবার বেড়ে রেডি রেখেছিল। ব্যাজারমুখেই চেয়ার টেনে নিয়েছিল মন্মথ। কিন্তু গুপীর রান্নার সামনে বসে মুখ ব্যাজার রাখা সম্ভব নয়। 

মিনিট দশেক চুপচাপ খাওয়াদাওয়ার পর মন্মথ জিজ্ঞেস করেই ফেলল, "বিকেলের ট্রেনেই ফিরছ তো"?

মাংসের হাড় চিবুতে চিবুতে সে প্রশ্নকে উড়িয়ে দিল গুপী, "রাতে হালকা রেখেছি ব্যাপারটাকে, বুঝলেন শ্বশুরমশাই। জামাইষষ্ঠীর লাঞ্চটা বেশ ভারী হল কিনা। ওই সোনামুগডাল, বেগুন ভাজা, আলু পোস্ত, ডিমের ডালনা, আর রাবড়ি। এ বয়সে দু'বেলাই নালেঝোলে খাওয়া আপনার চলবে না"। 

কথা না বাড়িয়ে খাওয়ায় মন দিলেন মন্মথ। গুপী গোঁয়ারগোবিন্দ হতে পারে, কিন্তু ওর রান্নার হাতটা সত্যিই বড় ভালো। 

***

রাত দু'টো নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে ফ্রিজ খুলে একটা সন্দেশ মুখে দিয়েছিল গুপী। তখনই খেয়াল করল ব্যালকনিতে রাখা ইজিচেয়ারে মন্মথ বসে। 

"কী ব্যাপার শ্বশুরমশাই, ঘুমোননি"?

"ইনসমনিয়া ব্যাপারটা ইদানীং শুরু হয়েছে"। 

"ওহ্‌"। 

"তুমি ঘুমোওনি দেখছি"।

"ঘুমের মধ্যেই আমার মাঝেমধ্যে সন্দেশ পায়, তাই উঠতে হল"।

"এ'সব করে কী পাও গুপী"?

"কী'সব করে"? 

"কেন আস এ বাড়িতে বারবার"?

"আমার শ্বশুরবাড়ি। অবভিয়াস ক্লেম আছে"। 

"সুমিকে তুমি বিয়ে করনি"। 

"সুযোগটা পেলাম কই বলুন। তবে আমি কিন্তু ক্লাস টুয়েলভ থেকেই আপনাকে শ্বশুর বলেই চিনি। বিয়ের জন্য আটকে থাকতে হয়নি"। 

"কেন আস বারবার? কেন? সুমিই যখন থাকল না...তুমি কেন আস"?

"সুমির জন্যই আসি। ও না থাক, আমরা দু'জন তো আছি বলুন। আমরা যদ্দিন, তদ্দিন"। 

"তোমাদের বিয়ে হয়নি গুপী। আমার প্রতি তোমার কোনও দায় নেই"। 

"দায়? ও'সব ফালতু কথা ছাড়ুন। বিপনে ঠিকই বলে, আপনি মহাখিটকেল বুড়ো"।

"বিপনে আমার নামে এ'সব বলে"?

"আমি তো তাও অশ্রাব্য অংশগুলো চেপে গেলাম"।

"আমি কালই ওকে পুলিশে দেব"। 

"দেবেন'খন। শুধু দোহাই আপনাকে, এক টীব্যাগ দিয়ে দিনে দু'বার চা খেতে বলবেন না"। 

"ওহ্‌। ও তোমায় সে কম্পেলনও করেছে"।

"বিপিনের সঙ্গে আমার রোজ কথা হয়। ফোনে"। 

"সে আমার অজানা নেই"। 

"শ্বশুরমশাই, কিছু বলবেন"?

"তোমার ওই এনজিও আর ইস্কুলটা কেমন চলছে"? 

"মন্দ না"। 

"গুপী"। 

"বলুন।  

"গতমাসে সমর এসেছিল"।

"ওই, সুমির উকিলকাকু"?

"হ্যাঁ। আমার টাকাপয়সা যে'টুকু আছে, আর এই বাড়িটা। তোমার ওই এনজিওর নামে উইল করে দেওয়া গেছে। ভেবো না তোমায় এক পয়সাও দিয়েছি। শুধু সুমির নামে যদি একটা স্কলারশিপ আর একটা হোম তৈরি করা যায়...আমার তার ক'দিন"। 

"সে হবে নিশ্চয়ই"। 

"তুমি ঠিকই পারবে। সে নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা নেই। তবে আমার একটা রিকুয়েস্ট ছিল"। 

"এনিথিং। বলুন না"। 

"আমি না থাকলে তুমি বিপনেটাকে দেখো কিন্তু। ও তোমায় খুব রেস্পেক্ট করে। আর ওর মুখেই বড় বড় কথা। আমি না থাকলে ওর ভেসে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে"। 

"ন্যাওটা কিন্তু আপনারও"।

"তাও ঠিক। নয়ত কি আর এঁটো টীব্যাগ হজম করে পড়ে থাকে"?

"সন্দেশ খাবেন শ্বশুরমশাই? লাঞ্চে তো রিফিউজ করলেন। এখন আনি দু'পিস? হাইকোয়ালিটি কিন্তু। আমি অ্যাসিওর করছি"। 

Friday, April 15, 2022

১৫২৯



- শুভ নববর্ষ ভায়া৷ 

- উফ, এই তুমি পিলে চমকে দেওয়া বন্ধ কর মাইরি৷ আরে বাবা আত্মা বলে কি নক করতে নেই? মিনিমাম ভদ্রতা না জানলে চলবে কেন? দুম করে শোওয়ার ঘরের ইজিচেয়ারে এসে বসাটা জাস্ট অসভ্যতা নয়?

- তুমি ভাই জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করো৷ মড়াটি হয়েও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছ, নলিহাড় চিবিয়ে ছাতু করছ, হপ্তায় তিনদিন রেস্টুরেন্ট ঘুরে ঘুরে প্রেম করছ; আর আমায় দ্যাখো৷ পয়লা বোশেখের দিনে ফ্যাফ্যা করে এ'দিক সে'দিক উড়ে বেড়াচ্ছি৷

- শরীর বয়ে বেড়ানোর ঝামেলা তো পোয়াতে হচ্ছেনা তোমায়৷ সংসার রোজগারের টেনশনও নেই৷ ফুড়ফুড়ুৎ করে উড়ে বেড়াও, গান গাও আর আমার কানের কাছে এসে টিপ্পনী ঝাড়ো। তোমারই তো সুখ ভাই৷

- আর কদ্দিন আমায় বাইরে ফেলে রাখবে বলো৷ তুমি তো আর অক্কা পাওনি৷ খামোখা আমায় সাইড করে এমন জম্বি হয়ে ঘুরে বেড়িয়ে কী লাভ৷ 

- এই শুরু হলো৷ বলি জ্ঞান দেওয়া শেষ হলে মানে মানে কেটে পড়ো৷ আমি লুচি তরকারি খাবো৷ শেষপাতে ক্ষীরকদম৷ 

- আমায় ফিরিয়ে নাও ভাই৷ আত্মা-লেস হয়ে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো৷ খাওয়াদাওয়া, মাইনে, দশ রকমের বারফাট্টাই; এ'সব করে আর কদ্দিন? ফ্রি উইল তো নেই৷ তুমি তো বাঁধা পড়ে আছো৷ কন্ট্রোলড বট! আমায় ফিরিয়ে নাও৷ বছরটা সত্যিই শুভ হোক।

- গেট আউট।

- তোমার চোখে আমি লোভ দেখতে পারছি ভাই৷ আত্মাকে আত্মস্থ করার লোভ৷ আমায় ফিরিয়ে নেওয়ার লোভ৷ প্রাণ খুলে গান গাওয়ার লোভ৷ গলা হেঁচড়ে প্রতিবাদ করার লোভ৷ ফিরিয়ে নাও না ভাই!

- নিকলো ইহা সে৷ ব্যাটাচ্ছেলে রাস্কেল! বেরোও!

**

- কী ব্যাপার হৃদয়হরণ? এমন হন্তদন্ত হয়ে..কিছু হয়েছে?

- আজ্ঞে, সবার আগে বলি নেতাবাবু ; শুভ নববর্ষ।  

- গোটা বছরটাই শুভ হে৷ দেশজুড়ে অপার শান্তি৷ দেশের প্রতিটা মানুষ আমাদের সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ সবাই সর্বক্ষণ গদগদ হয়ে আমার কথা ভেবে আমায় এবং সরকারের অন্য নেতানেত্রীদের কথা ভেবে মনে স্যালুট ঠুকে চলেছে৷ এমন সোনার সংসার, এমন হাইক্লাস ফাংশনাল ডেমোক্রেসি; শুভ না হয়ে উপায় কী বলো৷ 

- আজ্ঞে, সে তো বটেই৷ শুধু এই সোনার সংসারে একটা সামান্য খোঁচা৷ 

- সে কী! কার এত দুঃসাহস? 

- আজ্ঞে, কলকাতার সাত নম্বর মদন মল্লিক স্ট্রিটের ভবেশ দত্ত৷ 

- পাতি লোকের খবরে আমার কী কাজ ভাই হৃদয়হরণ?

- লোকটা পাতি৷ তবে তাঁর আত্মাটা মহাছ্যাঁচড়া৷ মাঝেমধ্যেই ভবেশ দত্তর আত্মা ওর বডিটকে এসে উস্কে যাচ্ছে৷ আজ  পয়লা দেখে সকাল সকাল এসে হানা দিয়েছিলে৷ আত্মা বডিতে ঢুকতে চাইছে৷  ভবেশ দত্তর বডিও রেস্পন্ড করতে শুরু করেছে৷ 

- আত্মা বডিতে ঢুকতে চাইছে? বডি নরম হয়ে আসছে? কী সর্বনাশ! তা'হলে সরকারকে দিনে বাহাত্তরবার স্যালুট ঠুকবে কে? আজ এক ভবেশ দত্তর আত্মা বিট্রে করছে৷ কাল গোটা কলকাতা৷ পরশু গোটা দেশ৷ সমস্ত বডি তারপর আত্মা ফিরে পেয়ে নাচুক আর কী! তারপর ফের রাস্তায় প্রতিবাদ, সোশ্যাল মিডিয়ায় হইহই৷ সরকার ডকে তুলতে চাও হৃদয়হরণ? 

- আজ্ঞে, সে'টা রিপোর্ট করতেই আসা। তা'হল কী..।

- ভবেশ দত্তর আত্মা যাতে ফেরার জন্য বডি না পায় সে ব্যবস্থাই করো হে৷ পলিটিকাল প্রটেস্টের মামদোবাজি আর সহ্য হবে না৷

- যো হুকুম ভাগ্যবিধাতা। যো হুকুম৷ ভবেশ দত্তের পাকাপাকি ব্যবস্থা করে ফেলছি৷ তবে ইয়ে..।

- আবার কী..।

- নববর্ষের দিনে৷ যদি অভয় দেন, একটা আর্জি ছিল..।

- আর্জি? 

- আজ্ঞে, আত্মা হিসেবে আমি তো আর ভবেশ দত্তর আত্মার মত বেআক্কেলে নই। তবে একটা বিশ্রী শখ..।

- শুনি৷

- কদ্দিন শরীরের মধ্যে সেঁধিয়ে পৃথিবীটাকে দেখিনা৷ আমিও তো, আপনারই মধ্যে ছিলাম। অন্তত যদ্দিন না আপনি সরকারের মাথায় এসে বসেছেন৷ তদ্দিন তো..। আত্মা হিসেবেও আমি ক্ষয়ে গেছি৷ আমার দ্বারা প্রতিবাদটাদ আর হবে না৷ তাই, আজকের দিনটা কি আপনার মধ্যে ঢুকে যাব? একটু কবিতাটবিতাই পড়ব না হয়। ছোট ছেলেমেয়েদের দেখলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেব। সন্ধ্যেবেলা ছাতে বসে চা-মুড়ি খাব। শুধু এই নববর্ষের দিনটা! সুযোগ দেবেন? আমি তো আর অন্য কেউ নই৷

- তোমার ওপর আমার মায়া একটু আছে হৃদয়হরণ! একটু আছে৷ 

- চান্স দেবেন তা'হলে?

- তুমি এ'খানে একটু দাঁড়াও৷ আমি ভিতরের ঘর থেকে একটা জরুরী কাজ সেরে আসি৷ তারপর তোমার একটা হিল্লে করা যাবে। কেমন?

- যেয়াজ্ঞে৷ 

**

বহুক্ষণ অপেক্ষার পরেও যখন নেতা ঘরের বাইরে বেরোলেন না, আত্মা হৃদয়হরণ উশখুশ করে উঠলেন৷ বেলা বয়ে যাচ্ছে, অনেক কাজ পড়ে৷ দু'একবার হাঁক দিয়েও কোনও সাড়া পেলেন না৷ তবে আত্মাদের বেজায় সুবিধে, দরজা-টরজার মত ঠুনকো বাধায় আটকে যেতে হয়না৷ একরাশ হাওয়া হয়ে হুশ করে নেতার ঘরে ঢুকে পড়লেন হৃদয়হরণ।  দেখলেন, নিজের সুপরিচিত দেহটা সিলিংফ্যান থেকে ঝুলছে৷

Monday, January 3, 2022

যুধিষ্ঠির আর পয়লা জানুয়ারি

দু'হাজার বাইশ৷ পয়লা জানুয়ারি৷ রাত একটা। 

নিউ ইয়ার পার্টিতে নেচে-কুঁদে, রিমঝিমে নেশায় বুঁদ হয়ে, যুধিষ্ঠির বাড়ি ফিরছিলেন। কেলোর কীর্তিটা টের পেলেন বাসস্ট্যান্ডে এসে৷ কোন শালা পকেট কেটে মানিব্যাগ নিয়ে হাওয়া৷ 

নেশা গেল চটকে। ধেচ্ছাই৷ মানিব্যাগে তিনশো বাইশটাকা ছিল, পুরোটাই গচ্চা। এ'দিকে মানিব্যাগ ছাড়া শেষ ইন্দ্রপ্রস্থ মিনিটায় ওঠা যাবে না। এখন উপায়? 

কপাল একেই বলে, এত রাত্তিরেও বাসস্ট্যান্ড এক্কেবারে ফাঁকা নয়৷ বেঞ্চিতে আধশোয়া হয়ে যে মাতালটা শুয়ে সে ব্যাটা যুধিষ্ঠিরের রীতিমতো চেনা; যক্ষ৷ 

পিঠে চাপড় খেতেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসলে যক্ষ৷ 

- আরে! যুধিদা যে।

- হ্যাপি নিউ ইয়ার ভাইটি।

- হ্যাপ্পি হ্যাপ্পি ন্যু ইয়ার ধম্মরাজ৷ তা লাস্ট ইন্দ্রপ্রস্থ মিনি ধরবে তো? পাঁচ মিনিটে আসছে।

- যক্ষ৷ ভাইটি। কুড়ি টাকা ধার দে দেখি৷ পরশুই দিয়ে দেব।

- তুমি শালা মহাফেরেব্বাজ৷ বড় গলায় বলছ দিয়ে দেব৷ অথচ কে জানে, ফিসফিস করে হয়ত বলবে 'ইতি গজঃ'৷ আমি কি দ্রোণের মত বুড়োহাবড়া নাকি৷ 

-  অমন বলিস না ভাই৷ কে যেন মানিব্যাগটা মেরে দিয়েছে৷ কুড়িটাকা না হলেই নয়৷ লাস্ট বাস কিছুতেই মিস করা চলবে না। এই শীতের রাতে বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে আমার সাইনাস মাইনাস হয়ে যাবে।

- টাকা দিতে পারি৷ তবে সেই পুরনো শর্ত যুধিদা।

- সেই কফি উইথ যক্ষ খেলতে হবে?

- করেক্ট। ছ'টা প্রশ্ন। সবকটার সঠিক উত্তর দিতে পারলেই জ্যাকপট। তা'হলে শুধোই?

- দেরী করে লাভ নেই৷ শীত বাড়ছে। জিজ্ঞেস কর৷ 

- ইয়ে, বিড়ি আছে?

- আছে।

- আহ, সে'টা প্রশ্ন নয়৷ দাও দেখি একটা।

- ওহ হো৷ এই যে৷

- থ্যাঙ্কিউ৷ এ'বার। শুধোই৷ কেমন?

- হোক। 

- এ দুনিয়ায় সবচেয়ে আশ্চর্যের কী যুধিদা?

- জীবনে কেউ ফেসবুক ট্যুইটারে তর্কে জেতেনি৷ অথচ তবু মানুষের টাইমলাইন কাঁপানো তর্কের শখ আর আগ্রহ কিছুতেই কমে না৷ 

- ঠিক৷ সবচেয়ে সুখী কে?

- যে মানুষ খবরের কাগজ রাখে স্রেফ অরিগ্যামি প্র‍্যাক্টিস করতে৷ আর যে নিউজ চ্যানেল ব্যবহার করে স্রেফ বারান্দায় বসা কাকচিল তাড়ানোর জন্য। 

- বাতাসের চেয়েও দ্রুতগামী কে?

- মিম। 

- স্বর্গের চেয়েও উঁচু কী?

- ল্যাদ।

- পৃথিবীর চেয়েও ভারী কী?

- নিউইয়ার রিজোলিশনের বোঝা।

- গুড৷ গুড৷ তুমি গুরু হাইক্লাস মানুষ৷ ফাইনাল প্রশ্ন৷ করি?

- নিশ্চয়ই।

- ভালোবাসা কী গুরু?

- ভালোবাসা?

- কী হল গুরু৷ আউট অফ সিলেবাস? ভেবড়ে গেলে দেখছি৷ 

- ভালোবাসা..। হুঁ..। ভা..লো..বা..সা..।

- তোমার বাড়ি ফেরা আটকে গেল যে গুরু৷ কুড়ি টাকা তো পেলে না।

- ভালোবাসা কী..এ'টাই তোর প্রশ্ন?

- একদম৷ হোয়াট ইজ লাভ যুধিদা? টেল মি!

- শীতের রাত৷ এখন রাত সোয়া একটা৷ নিউ ইয়ার। শহর জোড়া হুল্লোড়৷ অথচ তুই একা এই বাসস্টপের বেঞ্চিতে নেতিপেতি হয়ে পড়ে রয়েছিস৷ মনখারাপ ভাই দক্ষ?

- এ কী! প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এ'সব কী যুধিদা!

- তোর প্রশ্ন ভুলিনি৷ উত্তরও দেব৷ তুই জিজ্ঞেস করেছিস ভালোবাসা কী। ভালোবাসা কী জানিস? তোর কুড়িটাকার দরকার আপাতত আমার নেই৷ ভোরের দিকে দিলেই হবে। 

- ও মা৷ সে কী!

- লাস্ট বাসে ফিরে আর কাজ নেই৷ 

- কেন? ফিরবে না?

- তোর সঙ্গে গেঁজিয়ে কাটাবো ভাবছি রাতটা৷ নতুন বছরের প্রথম রাত, এমন একাবোকা হয়ে পড়ে থাকবি কেন রে রাস্কেল? তার চেয়ে দু'ভাই গপ্পটপ্প করে কাটিয়ে দেব'খন৷ কী বলিস?

- পার্ফেক্ট। ছ'টা প্রশ্নের উত্তরই তুমি ঠিকঠাক দিয়েছ৷ আর ভোরের দিকে কুড়িটাকা নয়৷ তোমায় আমি রীতিমতো ট্যাক্সিতে বসিয়ে দেব। 

- হেহ্। 

- থ্যাঙ্কিউ যুধিদা। হ্যাপি নিউ ইয়ার। 

- হ্যাপি। হ্যাপি।

Friday, December 31, 2021

অভি, মানুদা আর নিউ ইয়ার



- অভি, লেট বাই থার্টি ফাইভ মিনিটস।

- সরি মানুদা৷ মাইরি, সরি৷ আসলে নিউইয়ারের মুখে লোকজনের এত হুজুগ৷ ট্র‍্যাফিকে ফেঁসে গিয়েই..।

- বাজে কথা না বাড়িয়ে আগে চা চাপিয়ে দে।

- আহ, তোমার বাড়িতে এলাম৷ কোথায় তুমিই স্টোভ জ্বালিয়ে..।

- গুরুজনের মুখে ওপর বেশি কথা বলতে নেই। 

- আচ্ছা, পাঁচ মিনিট দাও। একটু জিরিয়ে নিই। বাপ রে! বাসে সে যে কী ভিড়! 

- চায়ের সঙ্গে একজোড়া অমলেটও ভেজে আনিস, কেমন? ফ্রিজে আছে ডিম৷ 

- উফ, তোমার সেবা করতে এলাম নাকি?

- রাতের বিরিয়ানিটা আমিই খাওয়াব তো৷ অত তিতিবিরক্ত হচ্ছিস কেন।

- বলছিলাম, আর কেউ আসছে নাকি মানুদা?

- সে কী! আমার বাড়িতে আর আসবেটা কে৷ আত্মীয়স্বজন বলতেও তুই৷ বন্ধুবান্ধব বলতেও তুই৷ তুই কি নিউ ইয়ার্স ইভ পার্টি এক্সপেক্ট করে এসেছিস এ'খানে? তা'হলে পত্রপাঠ তোর ওই গদাই দত্তদের তাসের আড্ডায় চলে যা৷ চাই কী সে'খানে দু'দাগ দামী মদও জুটতে পারে৷ মাগনায়। 

- গদাই দত্তের আড্ডায় আজ সিঙ্গল মল্টের পাশাপাশি শুনেছি বিপুল সেনও থাকবে৷ স্টার অ্যাট্রাকশন! 

- থিয়েটার অভিনেতা বিপুল সেন?

- গতবছর তিনটে সিনেমাও রিলিজ করেছে ওর৷ তিনটেই সুপারহিট৷ 

- গদাই দত্ত আসর জমাতে জানে বটে৷  তা' সে'খানে তো তোর অবাধ যাতায়াত৷ সেই হাইক্লাস ফুর্তি ছেড়ে এই ব্যাচেলরের বিমর্ষ আস্তানায় কী করছিস রে অভি?

- অ্যানুয়াল হ্যাবিট৷ এ'বারেও ভাবলাম যাই৷ তোমায় চা-অমলেট খাইয়ে আর বিরিয়ানি প্রসাদ পেয়ে বছর শেষ করলে আগামী বছর ভালো কাটবে৷ 

- তা অবশ্য ঠিক৷

- চাকরীটা ভাবছি ছেড়ে দেব।

- আমায় দিয়ে রেসিগনেশন লেটার লেখাবি?

- ধুস৷ 

- তবে?

- আমি কিন্তু সিরিয়াস। 

- এ তো ভালো কথা। কদ্দিন আর ন'টা-ছ'টার ছকে আটকে থাকবি৷ তোর ট্যালেন্ট আছে৷ অধ্যাবসায় আছে৷ ভাবনা কী?

- এই এনকারেজমেন্টের জন্যই তোমার কাছে আসা৷ 

- চট করে চা'টা বানিয়ে আন৷ তারপর তোর চাকরী ছাড়ার প্ল্যান সবিস্তারে শোনা যাবে৷ 

**

- সত্যি অভি, তুই চা'টা বড্ড ভালো বানাস৷ দশে সাড়ে দশ।

- অমলেটটা কত স্কোর করেছে?

- দশে সোয়া সাত৷ পেঁয়াজটা যথেষ্ট মিহি করে কুচোসনি৷ সামান্য বেশি ভেজে ফেলেছিস৷ তাই সামান্য নম্বর কাটতে হল। 

- ডিউলি নোটেড।

- কবে ছাড়ছিস? চাকরী?

- ভাবছি সামনের হপ্তাতেই বসকে চিঠি ধরিয়ে দেব।  তারপর মুক্তি।

- মুক্তি! বাহ্!

- তুমিই বলো মানুদা৷ এই অজস্র ফাইল, খামোখা মিটিং, গাম্বাট সব টার্গেট; দিনের পর দিন, মাঝেমধ্যে মনে হয় জম্বি হয়ে পড়েছি৷

- জ্যান্ত লাশ হয়ে পড়ে থাকা মোটেও কাজের কথা নয়। 

- থ্যাঙ্ক ইউ৷ আমি জানতাম তুমি অন্তত বুঝবে।

- তা, রেসিগনেশনের পর?

- প্ল্যানটা এখনই ঠিক কষে রাখিনি৷ তবে লেখালিখি করেই আয়টায় করার চেষ্টা করব'খন৷ কিছুদিনের স্ট্রাগল৷ তবে ম্যানেজ ঠিক হয়ে যাবে। 

- এই তো চাই৷ রিস্ক না নিলে চলবে কেন? চিরকাল দুধেভাতে নেকুপুষু হয়ে পড়ে থাকলে শাইন করবি কী করে?

- মানুদা৷ তোমার কথা শুনে বুকে বল পাচ্ছি৷ সামনের বছরটা অন্তত অন্যরকম একটু..।

- এই দাঁড়া, বিরিয়ানিটা অর্ডার দিই।

**

- উফ্৷ বিরিয়ানিটা এক্কেবারে টপক্লাস ছিল মানুদা। দশে বারো।

- আর চাপটা?

- দশে নয়৷ আর একটু ঝাল দিতেই পারত।  

- কী ভাবলি? রেসিগনেশনটা নিয়ে?

- নামিয়েই দি৷ 

- নিশ্চয়ই নামাবি।

- সুমি একটু চিন্তিত৷ অবশ্য ওর আপত্তি নেই৷ তাছাড়া ওর চাকরীটাই তো আমার ভরসা।

- সুমি কনফিডেন্ট মেয়ে৷ তোকে ঠিক সামলে নেবে।

- মানুদা।

- বল।

- গদাই দত্তের তাসের আড্ডায় কেউ কোনওদিনও বিশ্বাস করবে না যে এই পনেরো বছরের চাকরীটা ঝুপ করে ছেড়ে দেওয়ার দম আমার আছে। যতবার বলেছি, উড়িয়ে দিয়েছে।

- দ্যাখ অভি, গদাই দত্তের আড্ডায় সিঙ্গল মল্ট থাকতে পারে৷ কিন্তু তোর মত ক্রিয়েটিভ মানুষকে চেনার ধক ওদের নেই৷

- ওদের আমি থোড়াই পাত্তা দি৷ তোমার ওপিনিওনটাই জানার দরকার ছিল। 

- তুই যাই করিস, শাইন করবি৷ এ আমি নিশ্চিত।

- আর এক কাপ চা বসাই মানুদা?

- হোক।

***

- বাহ্৷ এই না হলে চা৷ চমৎকার বানিয়েছিস অভি।

- আরে, বারোটা বেজে দুই৷ হ্যাপি নিউ ইয়ার মানুদা।

- হ্যাপি নিউ ইয়ার। 

- জানো,  চাকরীটা ছাড়তে একটু হলেও বুক কাঁপবে।

- স্বাভাবিক।

- আসলে..নিজের ক্রিয়েটিভ প্যাশনকে আদৌ পাত্তা না দেওয়াটা যে অন্যায় হচ্ছে..সেই অনুভূতিটা মাঝেমধ্যেই ট্রাবল দেয়।

- এই যে ছটফট তোর মধ্যে আছে। সে'টাই তোর প্যাশন অভি। 

- গদাই দত্তরা যাই বলুক৷ আমি ভীতু নই মানুদা৷ চাকরী ছাড়ার সাহস আমার আছে৷ 

- আলবাত আছে৷ কিন্তু তোর প্রমাণ করার কিছুই নেই৷ আর একটা কথা বলি অভি? একত্রিশ  ডিসেম্বর রাত্রে তুই এই বুড়োটার সঙ্গে আড্ডা জমাতে এসেছিস, সে'টাও কম দুঃসাহস নয়।

- আমি তো প্রতি বছরই শেষ দিনটা তোমার সঙ্গেই কাটাই মানুদা। 

- রাইট।

- প্রতি বছর চাকরী ছাড়ার প্ল্যানটাও বুক বাজিয়ে বলতে আসি। 

- আসিস।

- অথচ ছাড়া হয় না।

- একদিন ঠিক ছাড়বি। একদিন অন্য কিছু করবিই, দারুণভাবে৷ 

- ঠিক ছাড়ব একদিন না একদিন! শালা গদাই দত্ত আর তার দলবল যতই খোঁটা দিক। ও'দের ঠিক দেখিয়ে দেব।

- আলবাত!

**

- হ্যালো!

- হ্যালো, মানুদা৷ 

- বল সুমি।

- অভি আছে?

- ও তো এই বেরোল৷ ট্যাক্সি নিয়েছে৷ আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে।

- শুনেছ নিশ্চয়ই৷ প্রতিবারের মত এ'বারেও ওর নিউ ইয়ার রেজোলিউশন; চাকরী ছেড়ে লেখালিখি নিয়ে পড়ে থাকবে। 

- জানি। 

- তোমার কী মনে হয়, এ'বারে সত্যিই ছাড়বে?

- প্রতিবারের মত এ'বারেও অভি গদাই দত্তের আড্ডায় নিজের স্টেটাস আপগ্রেড করতে চেয়ে চাকরী ছাড়তে চাইছে রে সুমি। নিজের প্যাশনের টানটা হয়ত এখনও সে'ভাবে চাগাড় দেয়নি ওর মধ্যে৷ তুই তো জানিস, আমার কাছে সে ফিবছর আসে শুধু সে'টুকু নিজেকে মনে করাতে। আর হ্যাঁ, আমার কাজ ওকে মনে করানো গদাই দত্তদের জাজমেন্টাল জ্ঞান-টীকা-টিপ্পনিই শেষ কথা নয়, ওর মধ্যে সত্যিই সৎসাহস আছে৷ আর আছে হাইক্লাস চা বানানোর ক্ষমতা। তোর বরটা সত্যিই একটা ক্রিয়েটিভ জিনিয়াস।

- হে হে৷ তা বটে৷ পরের বছর আমিও কিন্তু যাব অভির সঙ্গে, তোমার ফ্ল্যাটে৷ বিরিয়ানি আমাকেও খাইও৷ 

-  জো হুকুম। হ্যাপি নিউ ইয়ার সুমি।

- হ্যাপি নিউ ইয়ার মানুদা৷ গুড নাইট৷