Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2015

খাবার

-কতটা নৃশংস হলে মানুষ কুকুর খেতে পারে গো? -যতটা নৃশংস হলে ইলিশ বা পাঁঠা কেটে খাওয়া যায়, ততটা হলেই চলবে। -পাঁঠা কাটা আর কুকুর কাটা এক জিনিষ গো? -একই তো। প্রোভাইডেড কাটার অবজেক্টিভ যদি একই হয়; তাদের মাংস খাওয়া। -কুকুরের মাংস তোমার পাতে দিলে খেতে পারবে বুঝি? -বায়াস্‌ড প্রশ্ন করছ নীলা। যার কাছে কুকুরের মাংস সুস্বাদু, সেও হয়তো পাঁঠার মাংসে ঘেন্না পেতে পারে। অথচ পাঁঠা ভক্ত আর কুকুরের মাংস বিলাসী দু'জনেই মোজার্ট রসিক হতে পারে। দু'জনেই সমান ভাবে সভ্য এবং সমান ভাবে অসভ্য। -ছিঃ, তুমি আমার বর হয়ে যে কী করে এমন ব্রুটের মত কথা বলতে পারো মাঝে মাঝে। এটা জেনেও যে আমি কুকুর অন্ত প্রাণ। এরপর কবে বলবে আমায় কেটে ফেললেও সেটা মাগুর মাছ কাটার চেয়ে  বড় কোন অপরাধ হবে না। -প্রোভাইডেড যদি তোমাকেও ঝোলে ফেলে খাওয়ার তাল করি। -খেতে পারবে নাকি? -প্র্যাকটিসে কী না হয়।  -তুমি মানুষ খাওয়ার প্র্যাকটিস করছ? -তাহলে বলেই দিই। তোমার এত প্রশ্ন আর সহ্য হচ্ছে না।  -কী বলে দেবে?  -আমি প্র্যাকটিস শুরু করেছি। তোমার মা যখন মারা গেলেন, তার কয়েক মাস পরে যখন তোমার বাবা মারা

হার চুরির রহস্যভেদ

- বলুন প্রশান্তদা, হারটা কখন চুরি গেছে। - হার? চু...? মানে...ইয়ে...মানে বটু, আমি তো এই এলাম। তুমি জানলে কী করে যে আমার বাড়ি থেকে হার চুরি গেছে? - গতকাল নিমাই ময়রার দোকানে ল্যাংচা নেওয়ার সময় আপনার মোবাইলে ফোন আসে। ফোনে আপনি বলেন হার আপনার বাড়িতে ডেলিভারি না দিতে, আপনি নাকি সেটা নিজে কিছুক্ষণ পরেই দোকান থেকে নিয়ে আসবেন।  আমি শুনতে পারি কারণ আমি তখন সেখানে ছিলাম খান ছয়েক গরম রসগোল্লা ট্যাক্‌ল করার জন্য। নয়  বছর আগে ঠিক সাতাশে জুলাই আপনার আর মিঠু বৌঠানের বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়েছিলাম। অর্থাৎ আপনার বিবাহ বার্ষিকী পঁচিশে মানে আজকে। তার মানে হারটার ডেলিভারি বাড়িতে না নেওয়ার কারণ সেটা মিঠু বৌদির জন্য সারপ্রাইজ গিফ্‌ট। হ্যাপি অ্যানিভার্সারি বাই দি ওয়ে। - থ্যাঙ্ক ইউ। কিন্তু ভাই বটু, চুরিটা কি করে জানলে? - কোয়ার্টার এন্ডের মুখে দাঁড়িয়ে। আপনার অফিসের যা চাপ, বিবাহবার্ষিকী বলে ছুটি বাগাতে পারবেন না। এদিকে বেলা সাড়ে নটায় আপনি অফিসমুখো না হয়ে অফিসের পোশাকে বটু গোয়েন্দার বাড়ি। আপনি গুছিয়ে পা ফেলা মানুষ, শান্ত ধীর স্থির। অথচ আপনার জামার পকেটে ছোলার ডালের স্পট্‌। অর্থাৎ ভীষণ উত্তেজনার মধ্যে আপনি জ

দেবু মল্লিক স্ট্রীটের হত্যা রহস্য

বিনয় সিগারেট ধরালেন। সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘরের বোটকা গন্ধটা একটু নরম হল মনে হল। পরনের স্যান্ডো গেঞ্জিটা ঘামে ভিজে আছে। ফ্যানটা ফুল-স্পীডে চলেও কোন কাজ হচ্ছে না। ধুর ছাই; ঘরে কী বদ গন্ধ। চার ঘণ্টার মধ্যেই লাশে পচতে শুরু করলো নাকি? অবশ্য যা গরম, জ্যান্ত মানুষের চামড়াই গলে যেতে বসেছে। পিন্টুটা যে কখন আসবে। ভোরের আগে সমস্ত কাজ মিটিয়ে ফেলতে হবে। ** - শালা পিন্টু, আধ ঘণ্টার মধ্যে আসার কথা তোর...সাড়ে চার ঘণ্টা পর বাবুর আসার সময় হল। - দা'বাবু সরি। ম্যাটাডোর পেতে এত হ্যাপা। বচা ব্যাটাচ্ছে লে শেষ মুহূর্তে ডোবাল। অনেক কষ্টে সেই শিয়ালদা পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে এক মাতাল ড্রাইভারকে বগল দাবা করে আনতে হল গো। তাইতে দেরী। যাক গে। বৌদির লাশটা কোথায়? -পিছনের বারান্দায় বস্তায় পুরে রাখা আছে। সাবধানে নিয়ে আয়। বস্তার মুখটা ভালো করে বেঁধে আনিস। ** - বটুবাবু, ফের কামাল করলেন মশাই। ক্যালক্যাটা পুলিশ যদি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড হয়, তাহলে আপনি তো হোম্‌স মশাই। - হে হে হে, কী যে বলেন ইন্সপেক্টর দাস। সিগারেট আছে? বিড়ি ধরাতে মন চাইছে না। - আছে বইকি। এই যে। দাঁড়ান ধরিয়ে দিই। ইয়ে, বটুবাবু, বাইশ নম্

ফিবোনাচিকেতা

-      তুমি   অঙ্কে   কেমন ছিলে গো ? কেমন একটা হুট্‌ করে প্রেম করে ফেললাম ভালো করে খোঁজ খবর না নিয়ে। আমার ভারী ইচ্ছে ছিল কিন্তু , যে আমার বর অঙ্কে চাবুক হবে। -      অঙ্কে অতি ধুরন্ধর আমি। -      মাধ্যমিকে কত ? -      সাতচল্লিশ। -      ধুস্‌। এই ভালো তুমি অঙ্কে ? -      মার্ক্‌স দিয়ে অঙ্কের জ্ঞান মাপিস তুই ? -      ঠিক তা নয়। তবে তাই বলে মাধ্যমিকে সাতচল্লিশ ? -      সিট পড়েছিল গ্রামের দিকের একটা হাইস্কুলে। তিন তলায় , জানলার পাশে। জানালার ওপারে গঙ্গা। একটা পেল্লায় নিম গাছ। লাল শান বাঁধানো ঘাট।স্ট্যাটিসটিকালি আমার প্রফিট ছিল জানালার ওপারে কন্সেন্ট্রেট করায়। -      প্রফিট ? -      হৃদয়ের পুষ্টি। অমন তিরিতিরে কালচে গভীর নদী। অমন দুপুরের মিহি হাওয়া। সেদিকে নজর না দিয়ে এক মনে ফুলস্কেপ পাতায় জ্যামিতি করে যাব ? সেটা একটা স্ট্যাটিসটিকাল ব্লান্ডার হত না ? -      যতসব গাঁজাখুরি। প্রফিট না ছাই। অঙ্কে তুমি কাঁচা ছিলে সে আমি বেশ বুঝেছি। অঙ্কে ভালো হলে হায়ার-সেকেন্ডারিতে সায়েন্স নিয়ে পড়তে। তারপর জয়েন্ট আইআইটি। এদ্দিনে বড় কোন সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে। বিয়ের পর

মেঝে

নিশীথবাবু মেঝের দিকে তাকিয়েছিলেন। মোজায়েক মেঝে। পুরনো। জায়গায় জায়গায় যেন চলকা উঠে গিয়েছে। অমসৃণ বড়। বড় ধুলো পড়ে। এত মানুষ হাঁটাহাঁটি করেছে কিনা। সবাই আজ ঘরে চটি জুতো পরে ঢুকে পড়েছে। ধুলোর সাথে বোধ হয় অল্প কাদা। মেঝেটা বেশ নোংরা দেখাচ্ছে।  নিশীথবাবু মেঝের দিকে তাকিয়েছিলেন। চোখের দৃষ্টিকে আশেপাশে খেলাতে মন চাইছিল না তার। মা তো নেই; যে এদিক ওদিক চাইলে মাকে দেখতে পাবেন। বড় লোক চারিদিকে। মা তো নেই। মায়ের গাওয়া হারমোনিয়ামে পল্লীগীতি তো আর নেই; সে তো কবেই চলে গিয়েছে। চারপাশের কলরবে কান পাততে মন চাইছিল না নিশীথবাবুর। দৃষ্টির গোচরে মেঝের আবছায়া সাদা কালো মোজায়েক ছাড়াও এসে পড়ছিল নিশীথবাবুর জামার পকেট। জামাটা খয়েরী, এক রঙের, দু’বছর পুরনো। তার পাকা চুল আর শিথিল চামড়ার সাথে বেশ মানানসই; জামাটা। জামার পকেট থেকে উঁকি মারছে ডট পেন। নীল ঢাকনা, দশ টাকার রেনল্ড্‌স পেনের ঢাকনা। আর রয়েছে ভাঁজ করা সার্টিফিকেট; এই কিছুক্ষণ আগে পাওয়া। নিশীথবাবু আসলে মেঝের দিকে তাকিয়েছিলেন। বলা ভালো, মেঝের এক কোণের দিকে তাকিয়েছিলেন। যে কোণে কোন ফুলের পাপড়ি এসে পড়েনি। সাদা ফুলের পাপড়ি এসে পড়েনি। চোখ সরাতে ভয় পাচ্ছ