Skip to main content

Posts

Showing posts from March, 2023

প্রফেসর দত্তর শেষের লেখা

একটা পেল্লায় ক্লাসরুম, দেওয়ালের রঙ হালকা নীল। সারি-সারি বেঞ্চি, সমস্তই ফাঁকা। ক্লাসঘরের উত্তরের দেওয়ালে একটা ঢাউস কাচের জানালা, বিকেলের নরম রোদে ঝলমলে। সে জানালার উলটো দিকের দেওয়ালে একটা পেল্লায় ব্ল্যাকবোর্ড। তাঁর সামনে একটা সাদামাটা কাঠের টেবিল-চেয়ার। সে চেয়ারে বসে এক বৃদ্ধ, এক মাথা কাঁচাপাকা চুল, পাতলা ফ্রেমের চশমা। বয়স অন্তত সত্তর-বাহাত্তর। পরনে সাদা হাফশার্ট, কালো ট্রাউজার। এক মনে টেবিলের ওপর ঝুঁকে ডায়রিতে কিছু লিখে চলেছেন। শব্দ বলতে ক্লাসরুমের দেওয়ালঘড়ির টিকটিক আর বৃদ্ধের কলম-চালানোর খসখস। তাঁর সামনে যে দাঁড়িয়ে, তাঁর পেটাই চেহারা, ইস্পাত-কঠিন মুখ। কিন্তু চোখে সামান্য অস্বস্তি, খানিকটা চঞ্চল বোধ হয়। সে ভদ্রলোকের গায়ে সামরিক পোশাক।  দম-বন্ধকরা মিনিট দশেকের মাথায় দাঁড়ানো ভদ্রলোক সামান্য ঝুঁকে বললেন, "প্রফেসর দত্ত। সময় হয়ে এলো"। "মেজর তেওয়ারি। হাতে এখনও সাড়ে পাঁচ মিনিট রয়েছে"।  "তাই বলছিলাম...আপনি কারুর সঙ্গে কথা বলতে চান না প্রফেসর"? "তা তো চাইই"।  "আমার কাছে ফোন আছে। আপনি চাইলে..."।  "একজনের সঙ্গে কথা বলে কী হবে মেজর? তার চেয়ে ব

সেদ্ধয় সিদ্ধ

- বুঝলে প্রশান্ত, বুকের ধড়ফড়টা কিছুতেই কমছে না। - জামাইবাবু, আপনি বড্ড নেদু হয়ে পড়ছেন! - তাই কি? ওভাররিয়্যাক্ট করছি বলছ? - আবার কী। ভাইটালস সব ঠিকঠাক। রিপোর্টটিপোর্ট যাই এসেছে সব খাপেখাপ। কখন থেকে বলছি চলুন দু'বোর্ড ক্যারম খেলি। অথচ আপনি সেই থেকে বুক ধড়ফড় নিয়ে পড়ে আছেন। - জেনুইন ধড়ফড় ভাই প্রশান্ত। আরে, নাড়ি ধরে কি সব ধড়ফড় ডিকোড করতে পারবে? ডাক্তারি কি অতটাই মুখস্থবিদ্যের জিনিস? আরে, মনের আনচানটাকে ইগনোর করলে তো চলবে না। - নাহ্‌! আপনার বয়স হচ্ছে। - সেভেন্টি ফোর। এক্কেবারে কচি তো আর নই। - আপনার মধ্যে রীতিমত ভীমরতি জেনারেট হচ্ছে। - আহ্‌, কদ্দিন পর ভীমরতি কথাটা শুনলাম ভাই। তোমার দিদি থাকতে কথায় কথায় শুনতে হত বটে। - দিদিরও বলিহারি। আপনাকে মারাত্মক প্যাম্পার করে মার্কেটে একা ছেড়ে চলে গেল। আর এখন প্রতি হপ্তায় দু'বার আমি আপনার গুপি-দেওয়া-বুক-ধড়ফড়ের খবর শুনে ছুটে আসি। আমার প্র্যাকটিস-ট্র্যাকটিস তো লাটে উঠবে এ'বার। - কথায় কথায় প্র্যাকটিস দেখিও না প্রশান্ত। প্র্যাকটিস দেখিও না। আরে, হিপোক্রেটিক ওথ নিয়ে পথে নেমেছ। ডাকলে আসবে না মানেটা কী! - আপনাকে কতবার বলেছি জামাইবাবু। আমি বলেছি, সুম

পাঠক গুলজার

আমরা যারা 'ভোর ‍ ্যেশাস রীডার' নই, অথচ বই ভালোবাসি; তারা যেন ঘাবড়ে না যাই। বই দেখলেই হয়ত আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি না, কিন্তু আলতো মলাট-স্পর্শকে ধুরছাই-কুছভিনহি বলে যারা নস্যাৎ করে থাকেন, তাদের মতামতকে তোল্লাই দিয়ে নিজেদের ক্রমাগত ইমোশনাল-ঝ্যাঁটাপেটা করার কোনও মানেই হয়না। আড়াই বছর আগে কেনা বই এখনও পড়া হয়নি, সে'টাকে শুধুই ব্যর্থতা বলে যারা দেখলেন, তাঁরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটপুটটুকুতেই নিজেদের আটকে রাখলেন। রোম্যান্স কোশেন্টকে বুঝে উঠতে পারলেন না। সব প্রেমই যদি টপাটপ ছাদনাতলায় গিয়ে পড়ত, তা'হলে কি গজলের দুনিয়াটা এমন রঙিন হত? আড়াই বছর আগে কেনা একটা বই, যে'টা আজও পড়ে ওঠা হয়নি; সে'টাকে একটা প্রবল সম্ভাবনার উৎস হিসেবে দেখতে হবে। বইয়ের তাকে বোকাসোকা হয়ে পড়ে আছে; ফুলদানির বা আমাজনের ফাঁকা বাক্সের আড়ালে ঢাকা পড়ছে, ঠিক আছে। কিন্তু দেখবেন; স্যাট করে যে'কোনও একদিন নামিয়েই ফ্যাট করে পড়া শুরু করে দেব। এই যে একটা দুর্দান্ত "পুজো আসছে পুজো আসছে" ব্যাপার, সে'টাকে উড়িয়ে দিলেই হবে নাকি। হঠাৎ একদিন বইয়ের তাক থেকে পুরনো না-পড়া বই নামিয়ে আনা হবে। ধুলো ঝেড়ে মলাটে হাত বুলনো হবে, ওজ

দোল সাফাই

খুব ছোটবেলার দোল খেলার স্মৃতির চেয়েও জমজমাট স্মৃতি হল ঘষেমেজে গায়ে-মুখের রঙ তোলা৷ বেশিরভাগ দোলের ছুটি মোটের ওপর মামারবাড়ির পাড়াতেই কাটত৷ দুপুরবেলা রঙে চুবনি খেয়ে বাড়িতে ফিরে বড়মামার কাছে সারেন্ডার করতে হত৷ আর বড়মামার তত্ত্বাবধানে হত রঙ-সাফাই৷ দু'টো জরুরি ব্যাপার মনের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এক, মুখে যে বিশ্রী এবং ঢ্যাঁটা রঙের পরত পড়ত, সে'টা সাধারণ সাবানে যাওয়ার নয়৷ তখন তো আর অর্গানিক রঙ বাজারে আসেনি, সে'সময় পারলে মুখে প্লাস্টার করে দেওয়াটাই ফ্যাশনের পর্যায় ছিল। সেই রঙকে কাবু করতে বড়মামা একটা ন্যাকড়া প্যারাশুট নারকোল তেলে ভিজিয়ে মুখ ঘষত। সে এক হাইক্লাস ফেসিয়াল, বড়মামার হাতের গুণে সে ঘষটানিও মনে হত মখমলে মালিশ৷ অসীম ধৈর্যে সে বাঁদুরে রঙ নরম হয়ে আসত। দুই, দু'রাউন্ড শ্যাম্পুর আগে মাথার চুলে এক রাউন্ড সার্ফ-ট্রীটমেন্ট পড়ত। এক খাবলা কাপড় কাচার সাবানগুঁড়ো দিয়ে মাথার চুলের দলাইমলাই। সে'টা ধুয়ে ফেলে ক্লিনিক অল্কক্লিয়ারের দু'টো পাউচ পরপর ফায়্যার করা হত৷ তা'তে আবির রঙ গায়েব, চুল মারাত্মক ফুরফুরে। অমন দরদী হেয়ারস্পা কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রীট ঘেঁষা বাহারে সানফ্লাওয়ার সেলু

শোক

- মামাবাবু, বসুন না। এই'এখানে। আপনি বসুন, আমি চা-বিস্কুট দিতে বলে দিচ্ছি। - আরে, বেঞ্চি সাফ করতে হবে না। - আরে, ধুলো দেখেছেন? নদীর ওপারেই মিল, ওই দেখুন। ওই যে চিমনি। এই পুঁছলাম তো, মিনিট দশ পরেই দেখবেন ফের কালো ধুলোর আস্তরণ পড়ে গেছে। আপনার প্যান্টট্যান্ট এক্কেবারে যেত আর কী...। নিন, বসুন। ও ঘোঁটনদা, মামাবাবুর জন্য এক কাপ চা, দু'টো বিস্কুট। ইয়ে মামাবাবু, চায়ে চিনি থাকবে? - দুধ-চিনি দু'টোই বাদ। - ঘোঁটনদা, কালো চা দিও। আর বিস্কুটটাও তা'লে নোনতা। জলদি জলদি। - তোমার নাম তো বাপন, তাই না? - হ্যাঁ। ভালো নাম অভিজিৎ সাহা। আপনি আমায় বাপনই বলবেন। - ও'দিকের ব্যাপারটা কী বুঝছ, কিছু একটা সমস্যা হয়েছে শুনলাম...। - ও নিয়ে আপনি ভাববেন না। - তবু, নীলুর বডিটাকে নিয়ে কোনও...। - তেমন কিছু নয়। ওর আধার কার্ড নেই। অন্যান্য কোনও আইডেন্টিটি কার্ডও খুঁজে পাইনি। আমি নিজে ওর বাসায় গিয়ে জিনিসপত্র উলটেপালটে দেখেছি। তাই কর্পোরেশনের লোক বলছে বডি চুল্লিতে তোলা যাবে না। - এ তো সমস্যাই বটে। আচ্ছা, কিছু পয়সাকড়ি দিয়ে যদি...মানে আমিই দেব...। - ও মা, না না। তার দরকার হবে না আশা করি। পল্টনের মেজপিসের থানায়

শ্যামল সাহার পাগলামো

- এই, আপনি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করতে এসেছেন? - সে কী ডাক্তারবাবু, আপনি পাড়ার একজন রেস্পেক্টেড মানুষ৷ আপনার সঙ্গে ঠাট্টা করব? তা'ছাড়া আমি এমন একটা ট্র ‍ ্যাজিক সমস্যার কথা বললাম, সে'টাকে এ'ভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন কেন৷ - দেখুন শ্যামলবাবু৷ আপনার দরকার ওঝার৷ সে এসে ঝ্যাঁটাপেটা করলে তবে আপনার মাথা থেকে এই বিটকেল ভূতটা নামবে৷ - আপনার ধারণা আমি ভুলভাল বকছি? - ধারণা? না৷ আমি শ্যিওর৷ - আমায় অমনভাবে ঠেলে সরিয়ে দেবেন না প্লীজ৷ - আমি আর একবার গুছিয়ে বলি? আপনি বেড়ালের ভাষা বুঝতে পারছেন, এ'টাই আপনার রোগ, তাই তো? - স্পষ্ট৷ ক'দিন ধরেই হচ্ছে৷ এই যেমন স্বপন জোয়াদ্দারের খয়েরি রঙের বেড়ালটা কাল রাত্রে আমায় "মিচকে শয়তান" বলে টোন কাটলে৷ বিশ্বাস করুন, আমি স্পষ্ট শুনেছি৷ আবার ওই মোড়ের মাথায় যে বেঢপ সাইজের হুলোটা ঘুরঘুর করে, সে রীতিমত সদালাপী৷ আজ সকালে আমি রতনের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম৷ আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুধোলে, "ক'টা বাজে কাকা"? আমি স্যাট করে বললাম "পৌনে আট"৷ বলেই বুক কেঁপে উঠল৷ বেড়ালের সঙ্গে গপ্প জুড়েছি? কিন্তু উত্তর দিয়ে ফেলেছি, তাই দু'চারটে কথা বলতেই

মনোজবাবুর লেখালিখি

- কী রে, খুব ব্যস্ত নাকি? - আরে, মনোজ। বাঁচালি ভাই। কদ্দিন ধরে ভাবছি কবে তুই আসবি। তা, একটা ফোন করে এলি না কেন? ইদানীং শ্যামলাল একটা নতুন ধরণের ডিমের চপ ভাজা শুরু করেছে। তবে সে'টার জন্য আগে থেকে কিমা আর কুচোচিংড়ি আনিয়ে রাখা দরকার। - সে'সব গুরুপাক পরে হবে'খন। এখন আগে ওঁকে দু'কাপ চা করতে বল দেখি দেবু। জরুরী কথা আছে। - দাঁড়া, এ'সময়টা শ্যামলাল একটা সিরিয়াল দেখে। এখন ওকে ডিস্টার্ব করাটা সমীচীন হবে না। দু'মিনিট বস, আমি চা বসিয়ে দিচ্ছি। - না না, তুই বস বরং। আমার তো আর তাড়াহুড়ো নেই। জরুরী কথাটা আগে সেরে নিই। - নভেলটা শেষ করেছিস মনে হচ্ছে? - আজ সকালেই শেষ চ্যাপ্টারটা লিখলাম। জানিস তো আমায়, তোকে না শোনানো পর্যন্ত সোয়াস্তি পাচ্ছিলাম না। - এক্সাইটিং। উফ, কদ্দিন পর গল্প পড়বি বলে এলি ভাই। আজ কিন্তু জমিয়ে আড্ডা হবে। - আলবাত। তোর ফিডব্যাক ছাড়া তো আর প্রকাশকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। - আমি আর সাহিত্যের কীই বা বুঝি। তবে তোর লেখার প্রতি আমার আগ্রহটা বরাবরই পার্সোনাল। বইটই তো নেহাত কম পড়ি না। তোর লেখা আমায় যে'ভাবে ইনফ্লুয়েন্স করে, মুগ্ধ করে...। - দেখিস। আবার হেগিওগ্রাফি