Skip to main content

Posts

Showing posts from 2017

সাঁতরাবাবুর বস

- বস! - কী মুশকিল সাঁতরাবাবু। - মুশকিল? সে কী! আমি তো কিছুই বলিনি এখনও। - আপনার এই গলার টোন আমি চিনি। - টোন? - গদগদে। ধান্দাবাজ। কী চাই? - ছুটি। - সে কী! কোয়ার্টারের অবস্থা দেখেছেন? সমস্ত হিসেব ল্যাজেগোবরে। আগামী তিন মাস ছুটির আশা ভুলে যান। - জরুরী। এমার্জেন্সি। - কবে চাই? - পয়লা। - ফার্স্ট জানুয়ারি ছুটি চাইছেন? আপনি সোমবার অফিস ডুব দিতে চাইছেন? - ক্রিটিকাল বস। ভেরি ক্রিটিকাল। - অক্টোবর থেকে পইপই করে বলে আসছি কোয়ার্টারলি টার্গেটে মন দিন, ক্রিটিকাল। অথচ ডিসেম্বরে এসে সেই মুখ থুবড়ে পড়লেন। আপনার লজ্জা করছে না পয়লা জানুয়ারি ছুটি চাইতে? - আমার বৌ বলেছিল "লজ্জা করে না বসের ফেউ হয়ে ঘুরতে"? - আপনি জরু কা গুলাম! - জরুরী কা গুলাম স্যার।ছুটিটা মাস্ট। - বললাম তো হবে না। - নিউটন আপেলকে যদি বলতেন "হবে না", তাহলে গ্র‍্যাভিটির কিছু এসে যেত? - গ্র‍্যাভিটি আপনার বৌ? - হেহ্। আর আমি আপেল। বৌ আমায় আপনার নিউটনি মাথায় টেনে হিঁচড়ে নামাবেই। পাত্তা না দিয়ে যাবেন কোথায়? - কেসটা কী? - নিউ ইউয়ার্স ইভে পার্টি। মদ! মোহ! উদ্দাম নৃত্য। হনি সিং। রাতভর। পরের দিন সকালে বমি বমি ভা

দার্জলিঙের ৮

১ - তুমি দার্জিলিং যাওনি? - না। - তোমার বয়স বত্রিশ। তুমি বলছো তুমি দার্জিলিং যাওনি? - না। - রিয়েলি? - রিয়েলি। - বোঝ! - এতে বোঝার আছেটা কী? - দার্জিলিঙের এক্সপিরিয়েন্স নেই তোমার। এ যে বিয়েবাড়ির মেনুতে মাটনের না থাকা। - মাইরি? - নব্বইয়ের ইন্ডিয়ান ব্যাটিংলাইনআপে শচীনের না থাকা। - আচ্ছা। - শুক্তোয় বড়ি না থাকা। - বুঝেছি রে বাবা। - রগরগে চুমুতে জিভ না থাকা। - উফফ! বেশ! অফিসের হলিডে হোম বুক করছি, কালই। - কফি হাউসের আড্ডায় দাড়ি চুলকানি না থাকা। - এ হপ্তার শেষেই চললাম। তৎকালে টিকিট। ২ - সোয়েটার? - টিক। অবিশ্যি দার্জিলিঙে শুনেছি আজকাল তেমন ঠাণ্ডা পড়েনা। - জ্যাকেট? - ক্রস। দার্জিলিং উইন্টার বড় জোর রাঁচির চেয়ে দু'লেভেল উপরে। - মাফলার? - টিক। তবে দার্জিলিঙের ভয়ে নয়। কান ঢেকে রাখা ইজ আ গুড হ্যাবিট। দ্যাটস অল। - বোরোলিন? - ডাবল টিক। ফাটা ঠোঁট আনবিয়ারেবল। - ফ্লাস্ক? - বাড়াবাড়ি হচ্ছে। - কফির জন্য পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকব? - ব্যবস্থা হবে'খন। - হিল স্টেশনে উষ্ণতা নিয়ে কম্প্রোমাইজ মানে কম্ফর্ট নিয়ে কম্প্রোমাইজ। - চুমুর ব্যবস্থা করব

মৃদুলবাবু ও মশা

*আজ রাত্রে* শোওয়ার ঘরের মশারির বাইরে একটা মশা ঘুর ঘুর করছে অনেকক্ষণ থেকে। নতুন ফ্ল্যাটে প্রায় বছর খানেক হতে চলল, মশার উপদ্রব এই প্রথম। মৃদুলবাবু অবশ্য মশারির ভিতরেই। মঁমঁমঁমঁ গোছের একটা গা শিরশিরানি শব্দ।  আর পাঁচটা মশার প্যানপ্যানানির মত বিরক্তিকর শব্দ নয়, বরং খানিকটা যান্ত্রিক এবং অস্বস্তিকর। ঘণ্টাখানেক ধরে চলছে এই মঁমঁমঁমঁ। রাত পৌনে একটা বাজতে চলল। এ'বার একটা হেস্তনেস্ত না করলেই নয়। মশারির আবডাল ছেড়ে বেরিয়ে এসে ঘরের আলো জ্বাললেন মৃদুলবাবু। অদ্ভুত। গোটা ঘর জরীপ করেও মশা নজরে পড়ল না, অথচ মঁমঁমঁমঁ শব্দটা কিছুতেই থামছিল না। গেলাস দুয়েক জল খেয়ে ফের মশারির মধ্যে ফেরত এসে লম্বা হলেন তিনি। তখনও একটানা মঁমঁমঁমঁ। মৃদুলবাবুর অস্বস্তিটা চড়চড় করে বাড়তে থাকল। আচমকা টের পেলেন ডান কনুইতে সামান্য জ্বালা। হাত দিয়ে টের পেলেন ফুলে গেছে। কামড়েছে ব্যাটাচ্ছেলে রাস্কেল। মশাটাকে আরও খান দুই গাল পাড়তে যাবেন কিন্তু তখনই মঁমঁমঁমঁ শব্দটা গেল থেমে। আর বালিশের পাশে রাখা মোবাইল টুং শব্দে বেজে উঠল। স্ক্রিন অন করে মৃদুলবাবু দেখলেন ব্যাঙ্কের এসএমএস। ** *বছরখানেক আগে* - মিস্টার মৃদুল, এই

সৈনিক ও পোস্টমাস্টার

চারিদিকে বিস্তর গোলাগুলি,  বোমারু বিমান দমাদম তাল ঠুকে যাচ্ছিল শহর জুড়ে। মাঝেমধ্যেই হাড়-হিম করা সব চিৎকার। বেশির ভাগই আর্তনাদ; ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা আর বিলাপ। এ'ছাড়া কিছু আস্ফালনও বাতাসে বারুদের গন্ধের সঙ্গে ঘুরঘুর করছিল; "দুশমনের মুণ্ডু চাই, হারামজাদাদের রক্ত চাই"।  এত সব কিছু মাঝে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই আধ চেনা শহরের ঠিক মধ্যিখানে একটা ভাঙাচোরা প্রাসাদের এক কোণে বসে চিঠি লিখছিলেন কম্যান্ডার নেদু।  ডিয়ার গিন্নী,  খতরনাক যুদ্ধ চলছে। এ পক্ষ ইট ছুঁড়ছে তো অপর পক্ষ সোজা পাটকেল তাক করছে খুলিতে। রে রে রে রে ব্যাপার।  খানিক আগেই মড়মড় করে পাশের বাড়িটা ধ্বসে পড়ল। ও'টা হাসপাতাল ছিল এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত। কিছুদিন ধরে অবিশ্যি বাড়িটা বেওয়ারিশ পড়েছিল। মড়াদের হাসপাতাল না গেলেও চলে। এই আমি যে'খানে বসে এখন তোমায় চিঠি লিখছি; সে'টা কিছুদিন আগেও লাইব্রেরি ছিল। আমি শিশু সাহিত্যের শেলফের সামনে একটা টুল টেনে বসেছি। বইঠই বেশির ভাগই জ্বলে ছাই, শেলফের মাথায় টাঙানো বিভাগের নামগুলো রয়ে গেছে কোনও ক্রমে।  সেই একই কথা, মড়াদের দেশে লাইব্রেরি রাখা মানে সিগারেটক

যুক্তি তর্ক গল্প

“আকাশ কী বিশ্রী রকম নীল দেখেছ”? পকেট থেকে পিতলের ছোট্ট ডিবেটা বের করে এক চিমটি মশলা জোয়ান মুখে ফেলে বলল পার্থ। লাঞ্চের পর অফিসের নিচে নেমে খানিকক্ষণ আড্ডা দেওয়াটা প্রায় অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। অজিত আর দেবনাথের সঙ্গে আড্ডাটাও এই সময় জমে ভালো। দেবনাথ পার্থর মতই পারচেজ ডিপার্টমেন্টে কাজ করে, অজিত রয়েছে  ফাইনান্সে। খেলাধুলো, সাহিত্য,রাজনীতি, সিনেমা থেকে অফিস-গসিপ; আড্ডা থেকে কিছুই বাদ থাকে না। তবে যা দিনকাল পড়েছে কোনও আড্ডা-তর্কই তো বেশি দিন চলে না। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ওদের তিনজনের এই দুপুরের আড্ডার বয়স প্রায় এক বছর হতে চলেছে। দিনের এই সময়টুকু বেশ প্রিয় ছিল পার্থর। সবচেয়ে বড় কথা ওদের তিনজনের মধ্যে গল্প বেশ জমেও ভালো, বেশির ভাগ ব্যাপারেই ওদের মতামত অদ্ভুত ভাবে মিলে যায়।  মিনিট পনেরো গল্প করে একটা সিগারেট ধরায় তিন জনে, তার দশ মিনিটের মাথায় যে যার কাজে ফেরত যায়। আজকেও যথারীতি দুপুর দেড়টা নাগাদ অফিসের ক্যান্টিনে খেয়েদেয়ে তিনজনে মিলে নিচে নেমে এসেছিল। কিন্তু আগামীকাল থেকে অজিত আর থাকবে না, তিনজনের আড্ডার আজই শেষ দিন। ভাবতেই পার্থর মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। অজিতের মত ফুরফুরে মেজাজের মান

অঙ্কের ছ্যাঁত, ছ্যাঁতের অঙ্ক

১।  মান্তুদা জবাব দিয়ে দিয়েছে। ফাইনালে অঙ্ক পরীক্ষায় ভদ্রস্থ নম্বরের আশা প্রায় নেই বললেই চলে। শুধু যদি কোনও ক্রমে পাশটা করা যায়। কোনও ক্রমে চল্লিশ। বেশ কিছুদিন ধরে দীপুকে মান্তুদা একা পড়াচ্ছেন। মান্তুদার মতে দীপুর অঙ্ক-ভয়কে ম্যান টু ম্যান মার্কিং না করলে ক্যালামিটি এড়ানো অসম্ভব। গত তিন মাস ধরে প্রতিদিন রাত্রে মান্তুদার বারান্দায় এসে পড়ে থেকেছে দীপু। প্রবাবিলিটি পারমুটেশন অমুক তমুক পড়ানো শেষ হলে মান্তুদা নিজের পকেট রেডিওতে গান শোনাতেন। সাত-পুরনো হিন্দী গান। রোজ।   "তোর মনে টার্বুলেন্স চলছে। এতগুলো কনসেপ্ট একসঙ্গে মাথায় ঘুরপাক খেয়ে ঘোল পাকাচ্ছে। সেডিমেন্ট জমতে না দিলে মুশকিল। মিউজিক কে ইউটিলাইজ করতে শেখ। নোটেশনেও অঙ্ক থাকে, সে খবর রাখিস তো"?  ডিসেম্বরের রাত বারান্দাকে জাপটে ধরত। দীপুর হাফ সোয়েটার ছাপিয়ে গা শিরশির।  মান্তুদার টেবিলে তাল দেওয়া। দীপুর বুকে " আর হল না" গোছের ছ্যাঁত ছ্যাঁত।  বারান্দা পেরিয়ে মান্তুদার বাবার নিজের হাতে চাষ করা গোলাপ বাগান। সে বাগানের ও'পাশে গোলাপের সুবাসকে জুতোপেটা করা সারের ঢিপি। তার ও'পাশে সরু গলি। গলির

কাগজের টুকরো

অন্তত পনেরো বছর পর বাপ্পাদার সঙ্গে দেখা। দক্ষিণ পাড়ার সর্বকালের সেরা অফ স্পিনার বাপ্পাদা। বিনি পয়সায় পাড়ার কুচেকাঁচাদের অঙ্ক আর আঁকা শেখানো বাপ্পাদা। বুল্টিদির এক ধমকে চেনস্মোকার থেকে চুইংগাম সর্বস্ব বাপ্পাদা। পুজোয় ধুনুচি নাচ, ভোগ বিতরণ আর লক্ষ্মী পুজোয় আলপনা স্পেশালিস্ট বাপ্পাদা। ছোটদের থিয়াটারের ডিরেক্টর বাপ্পাদা। সব ঠিকঠাক ছিল। ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে একটা চাকরী পেয়েছিল, বুল্টিদির সঙ্গে বিয়ে ঠিক। সাজানো গোছানো ছিমছাম। রঙ ওঠা ফ্যাকাসে গোলাপি বালিশের ওয়াড়ের মত ভালোলাগা চারদিকে।  আমরা মাঝেমধ্যেই বাপ্পাদার কাছে বৌভাতের মেনুর খোঁজখবর নিচ্ছি আর ওর থেকে "ডেঁপো ছেলের দল" মার্কা এন্তার কানমলা খাচ্ছি। ইন্টার-পাড়া ক্রিকেটে বাপ্পাদা উইকেট নিলেই বুল্টিদির ফর্সা কান দুটো টকটকে লাল হয়ে উঠছে। আমরা সবাই বাপ্পাদা হতে চাইতাম। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখতাম আমাদের লেখা কবিতার চিরকুট বুল্টিদির মত কারুর কেমিস্ট্রির বইয়ের বুকমার্ক হবে। বাপ্পাদা-বুল্টিদির বিয়ে জানুয়ারিতে হবে বলে ঠিক ছিল। নভেম্বরের শেষের দিকে বাপ্পাদার বাবা স্বদেশ জ্যেঠু মারা গেলেন। সেরিব্রাল। আমরা বাপ্পাদাকে কাঁদতে দেখিনি; আগেও