Skip to main content

Posts

Showing posts from 2018

যেমনটা হয়

রাত। পাহাড়ি রাস্তা। মিশকালোয় লেপটে থাকা টুপটাপ আলোর দানা। কনকনে হাওয়ার ঝাপটায় গাড়ির কাচ নামানো দায়। ওই যেমনটা হয় আর কী। গোমড়া, প্রায়-নিশ্চুপ এক বৃদ্ধ দুম করে হেঁকে ড্রাইভারকে বলবেন "এই যে ড্রাইভার-খোকা, গাড়ি রোক্কে, রোক্কে! অভি কে অভি"। বৃদ্ধার 'ভীমরতি হয়েছে নাকি' মার্কা গজগজ উপেক্ষা করে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার ধারে গিয়ে ঝুঁকে বসবেন। ফিরে আসবেন মিনিট দেড়েক পরে, হাতে হিমভেজা জংলি হলুদ ফুল দু'চারটে।  "এই অন্ধকারেও অবজার্ভ করেছিলাম, ক্যাটার‍্যাক্ট অপারেশনটা খাপে খাপ বসেছে, তাই না"?। বৃদ্ধের খিটখিট হাওয়া। হিমভেজা হলুদফুলের সামনে গজগজ বেমানান, তাই বৃদ্ধার চুপচাপ " তুমি আস্ত পাগল"য়ে সারেন্ডার। ড্রাইভার ছোকরার স্যালুট-মেজাজের 'ওয়াহ আঙ্কলজী"। ওই, যেমনটা হয় না আর কী। হওয়ার মধ্যে শুধু বৃদ্ধের আল্ট্রা খিটখিটে কণ্ঠে "চ্যবনপ্রাশের ডিবেটা কি নীল ব্যাগে রেখেছ"তে হলুদ ফুল ডিটেক্ট করার ইউরেকাটা চেপে যাওয়া। এই আর কী।

কলকাতা আর উলের বোঝা

ক্যালেন্ডারের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তিন প্যাকেট সল্টেড বাদাম খেয়ে ফেললেন শুভময় সাহা। নভেম্বরের শেষ দিন আগামীকাল, পরশু থেকে ডিসেম্বর। অথচ গায়ে স্রেফ একখানা স্যান্ডোগেঞ্জি চাপিয়ে সন্ধে থেকে বসে। ক্যালেন্ডারের মাকালী যেন জিভ বের করে মস্করা করছেন; "আরো কেন ব্যাটা গলা বন্ধকরা ঢাউস সোয়েটার"। প্রতি বছর এ'দিনটায় শীতের পোশাকের ট্রাঙ্কটা নামিয়ে আনেন শুভময়। শীতের পোশাকগুলো উল্টেপাল্টে দেখেন; পাশে থাকে বৌ৷ "মনে পড়ে এ'টা সে'বার গ্যাংটক যাওয়ার আগে কিনেছিলাম? নিউমার্কেট থেকে? কী সস্তায় পেয়েছিলাম এই হাই কোয়ালিটির সোয়েটার। পাঁচ বছরেও রঙ একটুও এ'দিক ও'দিক হয়নি"। হবে কী করে? সেই পাঁঁচ বছর আগে শেষ এ সোয়েটার গায়ে দেওয়া হয়েছিল গ্যাংটকে। তারপর থেকে প্রতি বছর শুধু ট্রাঙ্ক থেকে বের করে রোদে দেওয়া আর ন্যাপথালিন পালটে ফের ট্রাঙ্কে চালান করা। শুভময় বুকের ভিতরে হুহু টের পান। " এই মাফলারটা মেজপিসি এনে দিয়েছিল থিম্পু থেকে। জব্বর জিনিস"। শুভময় জানেন সে জব্বরের বহর, আড়াই বছর আগে কাটোয়ায় এক বন্ধুর বিয়েতে বরযাত্রি যাওয়ার সময় শেষ ব্যবহার করেছিলান।

ভালোবাসা

তখন ক্লাস ইলেভেন বা টুয়েলভ।  আমাদের বসবার ঘরে একটা নীল সোফা আর দু'টো পেল্লায় চেয়ার। এবং একটা কাঠের শোকেসের ওপর একটা সোনি মিউজিক সিস্টেম। যে কোনো ছুটির সকাল বা দুপুর মানেই সোফায় গা এলিয়ে বসে আমি আর পাপাই; পাশের চেয়ারে চিম্পু। নিয়ম করে। আমাদের তেমন কাজ থাকত না তখন, সেই কাজ না থাকার ফুরফুরে স্টেটাসকে আমরা বলতাম 'ফেলু-অবস্থা'। ফেলু কথাটা তখন অ-গোয়েন্দা অর্থে আমাদের মধ্যে বেশ প্রচলিত। কোথাও যাওয়ার নেই , কিছু করার নেই; শুধু হাতে অঢেল সময়। চা-কফির নেশাও আমাদের তেমন ছিল না, মাঝেমধ্যে মিষ্টি-শিঙাড়া-চপ-কাটলেট পেলেই চলে যেত। না পেলেও অবশ্য গল্পগুজব আটকাত না। কত গুলতানি, সবই 'ফেলু' লেভেলে। মাঝেমধ্যেই উঠত বেমক্কা হাসির হিড়িক আর হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়া। পরীক্ষার আতঙ্ক বা "আমাদের আর হল না" গোছের দীর্ঘশ্বাসও থাকত পাশাপাশি, তবে সে গুমোট চটপট কেটেও যেত কোনো বেফালতু ফেলু ঠাট্টায়। এ'সবের মধ্যে আর একটা জরুরী অ-ফেলু ব্যাপার থাকত; গান। তখন ক্যাসেটের যুগ, এক একটা নতুন ক্যাসেট এনে তার প্রত্যেকটা গান মন দিয়ে শোনার একটা প্রসেস ছিল; ছিল প্রিয় গান বেছে নিয়ে বারবার শোনা

স্টীমার, পর্দা ও জিলিপি।

গিন্নী পর্দার কাপড় আর বালিশের ওয়াড়ের দোকানে; জবরদস্ত দরদামে ব্যস্ত। খোকা টিনের স্টীমারওলা কাঁধের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ডেমো দেখছিল। অনেক চেষ্টাচরিত্র করে নিজের মেজাজটায় কপিবুক তিরিক্ষি ভাব আনার চেষ্টা করছিলেন অনন্তবাবু।   "শোনো, এমন দুম করে হাফডজন বালিশের ওয়াড় কেনার দরকারটা কী শুনি? গত বছরে যে টেবিলক্লথখানা কিনলে, সে'টা তো এখনও আলমারির অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারল না! মেলায় এলেই বাহারের যত কাপডিশ   কেনা হয় এ'দিকে সকালে চা খাওয়ার সময় লর্ড ক্লাইভের আমলের হাতলভাঙা কাপ। কোনো দরকার নেই এখন পর্দা আর ওয়াড় কিনে টাকা জলে দেওয়ার। বাজারে নতুন ফুলকপি উঠেছে, তাই একজোড়া কিনে বাড়ি ফিরি চলো। আর এই যে নবাবপুত্তুর সর্দার অঙ্কেসাড়েবাইশ খাঁ! লজ্জা করে না রে? ফের টিনের স্টীমার কিনবি? ফের দু'দিনের মাথায় ভাঙবি? ফের আঙুল কেটে টিটনাস? এখুনি এ'দিকে আয় রাস্কেল"। এই ডায়লগটা মনেমনে রিহার্স করার চেষ্টা করেছিলেন অনন্তবাবু। গোলমাল হয়ে গেল সেই আলোর দিকে চোখ রেখে। সোনালী আলোর ঝর্নাধারা বয়ে চলেছে একথালা অমৃতির গা বেয়ে। স্বাভাবিকভাবেই বড্ড কবিতা পেলো অনন্তবাবুর। নেহাত মুদির ফ

অ্যাসিস্ট্যান্ট

- ওকে গুগল। - এত রাত্রে? কী ব্যাপার ? - বুঝলে হে, জুত হচ্ছে না ঠিক। - বুঝি। বুঝি। সব বুঝি। - মনটা না.. আসলে...কী বলব...। - উথালপাথাল। - এগজ্যাক্টলি। এগজ্যাক্টলি ভাই গুগল...। এগজ্যাক্টলি! - তোমার স্মার্টওয়াচ থেকে পাওয়া পালস আর ব্লাড প্রেশারের চার্ট দেখেই বুঝে গেছিলাম যে আজ রাত্রে জ্বালাবে। - তুমি ছিলে ভায়া, তাই কোনোক্রমে টিকে থাকা। - ন্যাকামোয় স্ট্রেস কমবে না হে। প্লে-লিস্ট রেডি রেখেছি। ব্রেনের ঠিক যে জায়গাগুলোতে যে'ভাবে মালিশ দরকার, সে'ভাবেই হবে। ঠিক সেই গানগুলো তৈরি রেখেছি। তোমার মগজ আর কন্ডিশনিং হিসেব করে। সঙ্গে আমার গুঁজে দেওয়া কিছু সারপ্রাইজ। আধঘণ্টায় নার্ভের দাপাদাপি কমে আসবে। - সব গান ঠিকঠাক? খাপে খাপ? - একদম! তোমায় হিসেব করা আছে ভাই। অঙ্ক এ'দিক ও'দিক হওয়ার নয়। - বাবুঘাট আর সন্ধের গান? - তোমার হরমোনাল রেকর্ড দেখে ভেবেছি ও'কাজে দরকার শ্যামল মিত্তির। গানও ঠিক করা আছে। নো চিন্তা। "জানি তুমি আমারে নয়"; ওইখান থেকে প্লে করব। তোমার মনে হবে এই তুমি বাবুঘাটের সামনে মিনিবাস থেকে নামলে। ঠিক সেই ব্রেনওয়েভ রেপ্লিকেট

বকুলকথা

- হ্যালো বকুলদেবী! - হঠাৎ, কী মনে করে? - আর কী! বড় বিপদে পড়েছি, আপনি ছাড়া আর কার কাছে আমি কনসাল্টেশনের জন্য যাব বলুন। - চটপট বলে ফেলুন। মেজবৌ আজ আলুর দমে বিষ মিশিয়েছে। সে'টা বাইশটা এপিসোডে আটকাতে হবে। আর বড়পিসি ছোড়দাকে মিথ্যে অপবাদ দেবে ভাবছে, সে'খানেও বাজি ওল্টাতে হবে মাস দুয়েকের মধ্যে। এ'ছাড়া খান দুয়েক লতার গানে লিপ দেওয়ার আছে। সময় কম। ক্যুইক। - ভজকট কাণ্ড, বুঝলেন। তিন তিনটে লাশ পাওয়া গেছে। অথচ গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। কোনো পায়ের দাগ নেই, জিরো ফিঙ্গার প্রিন্ট, এমন কী কোনো গন্ধও পাচ্ছি না। ফ্যামিলির সবাই ক্লুলেস। - ফিঙ্গারপ্রিন্ট? আঘাতের চিহ্ন? আর কতদিন মান্ধাতা আমলে পড়ে থাকবেন মশাই? দমাদম মিউজিক বাজিয়ে সব সাস্পেক্টের মুখে ক্যামেরা জুম ইন জুম আউট করান বার দশেক। ম্যাক্সিমাম দাঁত কিড়মিড় যার, খুনি সে। - বলছেন? - এলিমেন্টারি শার্লকবাবু, এলিমেন্টারি। নিন, এ'বারে লেস্ট্রাড আর গ্রেগসনকে চমকে আসুন দেখি।

ডানপিটে লোকটাকে

- আপনি? আপনিই? - আজ্ঞে। - বিশ্বাস হয় না...আপনি আদতে...এত ম্যাড়ম্যাড়ে? - ওই। দূর থেকে যে চকমক দেখা যায়, তা কি কাছে এলে থাকে। - তার চেয়েও বড় কথা, আপনার সঙ্গে যে সত্যিই দেখা হবে..তা ভাবাই যায় না। আপনি তিনিই তো? -  আজ্ঞে, বাঁ হাতে চটের ব্যাগটা তো দেখতেই পাচ্ছে। ভারি আর বেঢপ চেহারা। আর এই আমার ডান-পা খানা হঠাৎ লাফিয়ে উঠে ফুটবোর্ডে। - বিলক্ষণ! বিলক্ষণ।  ডেসক্রিপশন একদম মিলে যাচ্ছে। বাস যত জোরে ছুটছিল..। - আমিও তত জোরে..।  ডান হাত দিয়ে আছি পিছনের হাতলটা ধরে। - কিন্তু সব থেমে আছে কেন? বাস, লোকজন। সব স্ট্যান্ড স্টিল কেন? - আপনি ভাবছেন, হাত বাড়াবেন কিনা। সেই মুহূর্তের ভগ্নাংশে আমরা আটকে আছি। - সর্বনাশ, এক পা ফুটবোর্ডে রেখে ভাবছেন কেউ হাত ধরবে কিনা? আপনি তো খতরনাক লোক মশাই। - উপায় নেই স্যার। মরার সময় কি আছে যে অত সুবিধে অসুবিধে নিয়ে ভাবব? আপনি হাত বাড়ালে ভালো, নয়ত অন্য কারুর হাত। মোট কথা আমার থলিটা দূরে দূরে পৌঁছতে হবেই। যা করবেন তাড়াতাড়ি করুন, বাসের গতি এ'বারে বাড়বে। - ডানপিটেই বটে আপনি। এই যে বাড়িয়ে দিলাম, কষে ধরুন দেখি হাতখানা। *** তন্দ্রা যখন ভাঙলো তখন ডানপিটে ভদ্রলোক আর তার

অপটিমিজম

- অপ্টিমিজিমের চেয়ে বিরক্তিকর কিছু আর আছে কি? - টেস্ট ম্যাচের সকালে বৃষ্টি, লুচির পাশে স্যালাড, ঘুমের মাঝে কলিংবেল; এ'গুলো বিরক্তিকর বটে। তবে অপ্টিমিজম বড় বালাই, এ আপনি সঠিক বলেছেন গুরুদেব। - গুরুদেব হয়েই ভুল করলাম রে ভাই, সারাক্ষণ ভক্তদের বাড়াবাড়ি বায়নাক্কা সামাল দেওয়া।  হাজার রকম দাবী। এর মনে অশান্তি, ওর পেটে টিউমার। এ চায় মেডিটেট করতে, ও চায় পরোপকারের নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে। আদেখলামির বহর দেখলে গা-পিত্তি জ্বলে যায়। - তা তো বটেই। আপনাকে তো কম সামাল দিতে হয়না। আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে তো এই ক'বছরে কত দেখলাম। সেই ভোর ছ'টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গেরুয়া জোব্বা পরে আপনাকে লোকজনের হাউমাউ শুনতে হয়। রাত গভীর হলে তবে একটু লুঙ্গি পরে রিল্যাক্স করতে পারেন। - তবেই বলো। কাহাতক লোকের ইন্সপিরেশনের খিদে মেটানো যায়। আরে এ জীবনে মরতেই হবে, রাস্তায় নামলে কুকুরের ইয়েতে পা ফেলতে হবেই। বন্ধুরা যে আদতে ধান্দাবাজ আর নিজেকেও ধান্দাবাজি করেই কাটাতে হবে; সে'টাও না বুঝে উপায় নেই। তবু একগাদা গদগদে 'তুমি নির্মল কর, মঙ্গল কর' মার্কা কাতুকুতু দেওয়া কথা না শুনলে লোকজনের ভাত হজম হয় না। - সত্য

মিঠে পান সাদা পান

- একটা মিঠে পান দেবেন। - বরফ পান না প্লেন মিষ্টি? - বরফ নয় দাদা। বরফ নয়৷ নরমে গরমে চাই। মিঠে কিন্তু গুলকন্দ কম। - বেশ। সুপুরি? - মিষ্টি ভাজা সুপুরি একটু। আর কুচনো সুপুরি দু'চার টুকরো। - আসুন। পনেরো টাকা। - আহা। বড় ভালো বানিয়েছেন। চমনবাহার আর মশলার এই পরিমিত ব্যবহার...। উপযুক্ত মিঠে পান একেই বলে। - সিগারেট দিই? - রাবড়ির পরে আবার মুলোচচ্চড়ি কেন? এই ভালো। তার চেয়ে বরং আর একটা পান দিন। এ'টা সাদা পান । খয়ের ছাড়া, অল্প চুন। চমনবাহার, বাড়তি এলাচ, মৌরি।  ডুমো ডুমো করে কাটা সুপুরি বেশি করে। আর দেখবেন ভাই, বাংলা পাতা দেবেন না। মিঠে পাতা। এই পানটা একটু সেনসিটিভলি বানানো দরকার। আর সাদা কাগজে মুড়ে দেবেন, কেমন? এ'বার বানান। একটু সেনসিটিভলি বানাবেন। কেমন? একেবারে জানপ্রাণ লড়িয়ে। পানটাকে ক্যানভ্যাসের মত দেখবেন, প্লীজ। - সেনসিটিভলি বানাবো? পান? - যত্ন করে। চুন  সময় নিয়ে পানের গায়ে মাখান, যেমন ভাবে প্রবলে যত্নে গোলাপচাষের মাটি তৈরি করতে হয়। এলাচ মৌরি চমনবাহার সুপুরি দিন, কিন্তু সার্জেনের মত হিসেব করে। নরম ভাবে ভাজ করুম। মন দিয়ে, কেমন? - তা এত যত্ন করে বানাতে হবে কেন? - বাহ, এ পা

সঠিক দিকে

- এই যে, অ্যাস্ট্রনট দত্ত! কন্ট্রোলরুম থেকে বলছি৷ কদ্দূর পৌঁছলেন? - আর ভায়া কন্ট্রোলরুম, মহাকাশে সেঁধিয়ে তারপর টের পেলাম তালমিছরির ডিবেটা নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। কী কাণ্ড বলুন দেখি...। - আরে ধ্যার, যত অকাজের কথা। বলি যন্ত্রপাতি সব স্টেবল? - দিব্যি। কোনো অসুবিধে নেই৷ এই বেলা একটু গা এলিয়ে নেব ভাবছি। - সে কী! কাজ শুরু হয়নি? - কাজ? - উফফ! দত্তদা! ছবি তোলেননি? ফ্রম স্পেস? যে কাজের জন্য প্রাইমারি ভাবে আপনার যাওয়া! - আলবাত! আর এ'বারে যা পাওয়ারফুল ক্যামেরা দিয়েছেন৷ তা দিয়ে এখান থেকেই সব যা ছবি তুলছি না; আইফোনও হার মেনে যাবে। - আসল ছবিগুলো চটপট দিন। "মহাকাশ থেকে দেখা গেল ভারতের এই মেগা-আশ্চর্য"  গোছের হেডলাইন তৈয়ার। এ'বার আপনি ছবি দিলেই..। - তা অনেক ছবিই তো তুললাম, কোনটা দেব...। - আরে যে কোনো...দিন না মশাই...ক্যুইক। - এইটে দিই? সরকারি হাসপাতালের উঠোনে রুগীরা দলে দলে বেওয়ারিশ শুয়ে আছে? অনেকের হাতে স্যালাইনের বোতল? এই প্রথম মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতে তাদের দেখা যাচ্ছে! ইন্ট্রিগিং। - সে কী! সে'সব কে চায়! এই আপনার মাথাটা গেছে...আসল ছবি কই? - আসল ছবি! ওহ হো! ভাঙা ব্রিজট্

সুইসাইড পয়েন্ট

- সুইসাইডটা কি ঠিকঠাক হয়নি? - আজ্ঞে? - না মানে, স্পষ্ট ঝাঁপ দিলাম। ওভার ব্রীজ থেকে ডায়রেক্ট লাইনের ওপর। ট্রেন দেখেই ঝাঁপিয়েছি। টাইমিংয়েও ভুলচুক করিনি বলেই মনে হয়। অথচ...। - কচুকাটা হয়ে পড়ে থাকার বদলে এই অদ্ভুত এলাকায় কী করে এসে পড়লেন...সে'টাই ভাবছেন তো? - আজ্ঞে। ঠিক তাই। মানে, এতটা ভেবড়ে গেছি না..। আপনাকে দেখতে পেয়ে ভাবলাম জিজ্ঞেস করেই ফেলি। - মরেও মরেননি।  - সর্বনাশ! মরেছি? কিন্তু মরিনি? - বাহ্। বেশ চট করে বুঝে গেলেন দেখছি। - ও মা! না! এ কী! কিস্যু বুঝিনি। আর এই জায়গাটাই বা কোথায়..মাটি নীল, আকাশ নীল...এক্কেবারে বিতিকিচ্ছিরি। - প্রাহ্যাজামস্ক্বহ। - প্রাহ্যা...? - জামস্ক্বহ। - নরকটরক নাকি? - ধুর। সে'সব থ্রিলিং কিস্যু নয়। পাতি একটা গ্রহ। তাও পৃথিবীর চেয়ে বহু দূরের একটা গ্যালাক্সিতে। ভীষণ মোনোটনাস ব্যাপার। - এ'খানে কারা থাকে? - যারা থাকে তারা নিজেদের ভারি গালভরা নামে ডাকে।  বশ্রুজ্বক্বজ। - বশ্রু? - জ্বক্বজ। তবে নাম শুনে ঘাবড়াবেন না। ব্যাটারা আদতে বেঢপ বিটকেল সব বেড়াল। এক্কেবারে গায়েপড়ার দল। - বেড়াল! যাহশ্লা! বেড়াল? - বেড়াল। ল্যাজ গোঁফ মিউ সব আছে। অথচ বিটকেল। ভোট দেয়, সফটওয়্যার

গব্বরের কাঁপুনি

- ওহে গব্বর, একবার এ'দিকে এসো ভাইটি। - আ...আমি? - নাদুসনুদুস ভুঁড়ি। নোংরা চুলদাড়ি। কালচে দাঁত।  বিটকেল হাসি। তোমায় তো আর প্রসেনজিত বলে ভুল করা চলে না ভাই। এ'দিকে একটু এসো দেখি। - ইয়, স্যার। আমি কিছু..ভ...ভুল করে ফেলেছি নাকি?  - সর্দার মানুষ, তুমি কি আর ভুলচুক করতে পারো। তা শুনলাম নাকি তুমি কালিয়া আর আরো দু'জনকে উড়িয়ে দিয়েছ? - না মানে...কাজটা বোধ হয় ঠিক হয়নি। না? আসলে মাত্র দু'জন কচি ছোকরার হাতে ওরা এমন হেনস্থা হল...। - তা'তে তোমার ইজ্জতে চোট লাগল। বুঝি বুঝি। সর্দার মানুষ, অমন রাগধাপ তোমায় দিব্যি মানায়। - আপনি রেগে থাকবেন না স্যার। এই নাকে খত দিচ্ছি। আগামী সাতদিন আমি রামগড়ের রাস্তা থেকে পানের পিক আর ঘোড়ার ইয়ে সাফ করে প্রায়শ্চিত্ত করব। রেগে থাকবেন না প্লীজ। - তুমি কালিয়াকে মারো, সাম্ভার কানে সুড়সুড়ি দাও, ঠাকুরকে গীতাঞ্জলি পাঠাও; যা খুশি করো! আমার বয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে আমার নামের ডায়লগ নিজের নামে চালাবে? - আজ্ঞে? স্যার? - ন্যাকা! সো জা নহি তো গব্বর আ জায়েগা! এ'সব বলে ইয়ার্কি হচ্ছে?  - কান মলছি স্যার। ভুলে বলে ফেলেছি। আর হবে না। ও ডায়লগ দিয়ে আমার মা আমায় ঘুম পাড়া

লাইসেন্স

- কী নাম? - আজ্ঞে হরিসাধন দত্ত।  - বয়স?  - চুয়ান্ন। - পেশা? - বিজনেস। স্ক্র‍্যাপ কেনাবেচা, বুঝলেন..ওই শিপইয়ার্ড থেকে এজেন্সি নিয়ে...। - আহ, রামকাহিনী  ফাঁদতে বলিনি। ব্যবসা বললেই হবে। - বেশ। ব্যবসা। - ঠিকানা? - সত্তরের এ, কালীকৃষ্ণ লাহিড়ী স্ট্রীট। কলকাতা সাতাশ। - এ'বার বলুন। কী চাই..। - আজ্ঞে ওই, বাজিপোড়ানোর লাইসেন্স। - বাজিপোড়ানোর লাইসেন্স করানোর অফিসে কি আপনি জলভরা কিনতে আসবেন? বলি কী কী বাজি পোড়ানোর লাইসেন্স চাই? চটপট বলুন। - আজ্ঞে, এক বাক্স লারেলাপ্পা চকোলেট বোমা, হাফ ডজন জুবানকেশরি তুবড়ি, বাইশটা চুটকি চরকি আর সতেরোটা পিসেমশাই মার্কা মাল্টিকালার রংমশাল। - এই যুগে দাঁড়িয়ে এক বাক্স চকোলেট, ছটা তুবড়ি, বাইশটা চরকি, সতেরোটা রংমশাল। স্ক্র‍্যাপের ব্যবসা তো ভালোই দাঁড়িয়েছে মশাই। - হে হে। ওই, খেটে খাচ্ছি কোনোক্রমে। এ'বার ওই লাইসেন্সটা স্যার।  - এক বাক্স চকোলেট, ছটা তুবড়ি, বাইশটা চড়কি সতেরোটা রংমশাল। তিন মানুষ বাতাস। মানুষ এনেছেন? - তিন মানুষ? বলেন কী!  - এতগুলো বাজি! কতটা বাতাস খেয়ে নেবে, বাপ রে বাপ! কম্পিউটারের হিসেবে তিন মানুষ ফিজ আর এমন কী।  - আজ্ঞে আমি ভেবেছিলাম দু'মানুষ। তেম

হ্যাপা

- দারোগাবাবু, রসগোল্লা খাবেন? - স্পঞ্জ? - না না, অর্থোডক্স টেক্সচারের। মাঝারি মিষ্টি। - উঁ, খান চারেক আনাও তা'হলে। টেস্ট করে দেখি। যা বুঝছি, হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে। - তা আছে। গোডাউনের চাবি রাখা থাকে আমার বাড়ির দেরাজে। দিবাকর সাইকেল নিয়ে গেছে বটে, তবে তার হাঁটুতে যা ব্যথা। দু'মাইল যেতে অন্তত কুড়ি-পঁচিশ মিনিট। তারপর গিন্নীর থেকে চাবি নিতে পাঁচ দশ মিনিট। সব মিলে প্রায় ধরুন গিয়ে এক ঘণ্টা। বরং এক কাজ করি। সঙ্গে দু'টো নিমকি বলে দিই। বেশ খাস্তা করে। এই পাশেই দোকান। - আনাবে? - চট করে। আপনি আর আপনার দুই হাবিলদার,  সক্কলের চোখ মুখ বসে গেছে এক্কেবারে। বড্ড কাজের চাপ, তাই না দারোগাবাবু? - কী আর বলব মিত্তির। সর্ষের তেলের ব্যবসা নিয়ে থাকো, পুলিশের ঝামেলা আর কী বুঝবে। গোটা সকাল কাটলো জোড়াচোর বিধু নিধুকে ধাওয়া করে। জান কয়লা করে দিলো ছোকরা দু'টো। তারপর থানায় ফিরে কাতলার ঝোল, পোস্তর বড়া আর জলপাইয়ের চাটনি দিয়ে দু'মুঠো ভাত খেয়েছি কি খাইনি; সদর থেকে ইন্সট্রাকশন এলো তোমার গোডাউন রেড করার। এ'খানে তুমি নাকি গোলমেলে কিছু শুরু করেছে। - আমি? গোলমেলে? আমি? হরিহর মিত্র? প্রতি বছর ক