Skip to main content

Posts

Showing posts from January, 2022

বাজে পান

এই এক রোগ। পান। এই করে করে ট্যুইটার অ্যাকাউন্টটাই উজাড় হয়ে গেল। ফেসবুকটাকেই বা ছাড় দেওয়া কেন। মাঝেমধ্যে টুইটার থেকে কয়েক পিস্‌ করে তুলে এনে এখানে রেখে যাওয়া দরকার। ** সে'বার পিকনিকে গিয়ে কিশোরকুমার বড়ই বিপদে পড়েছিলেন৷ খেতে বসে দেখলেন মাংসের ঝোলে বিশ্রী গন্ধ, অতিরিক্ত মশলাপাতি দেওয়ায় গোলমাল হয়েছে আর কী। তখনই তিনি গেয়ে উঠেছিলেনঃ শুঁকেও কেঁদে ওঠে মন, শুঁকেও কেঁদে ওঠে মন, এমনও খাসি আছে বেদনা মনে হয়; জলে ভরে দু'নয়ন, শুঁকেও কেঁদে ওঠে মন। ** তাঁবুতে হুট করে ঢুকেই আলভারেজ হতবাক! শঙ্কর মদ্যপান করছে যে। আলভারেজ শুধোলে, "কোন ব্র ‍ ্যান্ড ভাই"? স্মিত হেসে শঙ্কর জানালে, " দেবদারু"। ** পাটনা শহরে কোনও জুটমিল নেই৷ স্বাভাবিক৷ ** সাপটা তেমন বিষাক্ত ছিল না৷ Patisapta. ** ইনসমনিয়ার ওষুধঃ টর্চ জ্বেলে ভেড়া গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়ুন৷ অর্থাৎ, Aloe vera কাজে দেবে।

পিকনিকের প্রাণ

পাড়ার পিকনিক উজ্জ্বল হয় যাদের গুণে। ১। ।।"হারি আপ" জ্যেঠু।। আলো ফোটার আগে থেকেই তাঁরা মন্ত্রপাঠ শুরু করবেনঃ "পাংচুয়াল না হলে পিকনিক কেন, কোনও বড় কাজই কোনওদিনও করতে পারবি না"! "ফিরতে রাত হলে বিস্তর ঝ্যামেলা হবে, তখন যেন আমায় বলতে এসো না"! (ভোর ছ'টার সময়) "আরে দুপুর গড়ালে বেরোবি নাকি রে তোরা"! মোট কথা অনবরত ঘ্যানঘ্যান করে সবার প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলবেন৷ রাত থাকতে উঠে, স্নান সেরে ফিটফাট জামাকাপড় পড়ে বারান্দায় পায়চারি করবেন আর চিৎকার করে পাড়া মাথায় তুলবেন৷ ২। ।।"প্ল্যানার" বড়দা৷। টারজানের কলজে নিয়ে এরা পিকনিকের পরিকল্পনা সাজান। এদের মতে অন্তত তিন রাত্রি বাইরে ক্যাম্প করে না থাকলে নাকি পিকনিকই হয় না৷ শিকার করা জিরাফের ঠ্যাঙ ঝলসে না খেলে নাকি পিকনিকের মেজাজটাই মাটি৷ ঝর্নার জলে চুমুক দিয়ে তেষ্টা মেটানোর পক্ষে এরা৷ দশহাত দূরে লম্ফঝম্প করে চলা সিংহের গর্জন শুনতে শুনতে এরা শালপাতার গায়ে লেগে থাকা চাটনি চেটে খেতে চান। এইসব মোহময় চাওয়া-পাওয়া নিয়েই তাঁরা প্ল্যান ছকেন; লেপের তলে শুয়ে, মশলা জোয়ান চিবুতে চিবুতে৷ অত্যাধিক দৌড়াদৌড়িতে তাদ

পল্টু-সুমির বইমেলা

- হ্যাঁ রে পল্টু, এ'টা আনন্দেরই লাইন তো? - ভেরিফাই করে নিয়েছি সুমি৷ এই দাদা কনফার্ম করেছেন৷ - লাইনের যা বহর, সন্ধ্যে নামার আগে স্টলের গেট দেখতে পাব বলে মনে হচ্ছে না৷ যা ভীড়৷ উফ্! এত মানুষ বই পড়ে? - দেখ, আমি অত পড়িনা৷ তবে ঘাটাঘাটি করি৷ হেবি লাগে৷ - অবশ্য আনন্দর বইটইগুলোর যা দাম৷ ইএমআই ফেসিলিটি না থাকলে উল্টেপাল্টে দেখেশুনে বেরিয়ে আসা ছাড়া উপায় থাকেনা৷ - তোদের মত পাবলিকের জন্যই যত সমস্যা৷ বাপের বাড়ির দলিল বন্ধক রেখে সিনেমাহলের পপকর্ন কিনবি কিন্তু বইয়ের দাম দেখলেই গলা শুকোনো৷ - বাজে না বকে লাইনে ফোকাস কর পল্টু৷ সুট করে কেউ ঢুকে না পড়ে৷ ** লাইন মন্থর গতিতে এগোতে থাকে৷ সুমি আর পল্টুর খোশগল্প জমে ওঠে৷ পড়ন্ত বিকেলের আকাশ লালচে, মেলার মাঠ সরগরম। গল্পের আগুনের ঘি হয়ে ওঠে সুমির হাতে ধরা বাদামের ঠোঙা আর পল্টুর হাতের নুনের প্যাকেট৷ ** - সুমি! বেগুনি খাবি? - লাইনের কী হবে? - আগেও লম্বা লাইন৷ তুই দাঁড়া! আমি চট করে নিয়ে আসি! - ক্যুইক কমরেড! ক্যুইক! - লাইন সামলে। - জান কবুল। তুই আয় বেগুনি নিয়ে৷ ** বেগুনির গুনেই বোধ হয়, লাইন সামান্য গতি পেয়েছে। বেগুনি সাবাড় করে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ হাতড়ে এক ডিবে মিঠে

এম্পলয়ার

- প্রবীর? আয়, বস। - সময় কম বড়দা। টাকাটা? - ওই যে৷ টেবিলের ওপর। এনভেলপ। - চললাম। - গুনে দেখবি না? - থাক। - চারটেকেই কি গঙ্গায় ফেললি? - বড়দা। কাজ হাসিল। নগদ হিসেব মিটিয়ে দিয়েছ৷ খেল খতম। হিসেব জেনে কী করবে৷ - কাল পরশু আবার কোথায় ভেসে উঠবে৷ পুলিশ খামোখা দৌড়ঝাঁপ শুরু করবে। তাই আর কী..। - এদ্দিনে তোমার হয়ে অন্তত শ'তিনেক লাশ ফেললাম৷ তোমার দিকে কেউ আঙুল বাড়িয়েছে কি? - আসলে কী জানিস, চারজনকেই সরাতে বলতাম না৷ কিন্তু ওই, বিজনেসে এমন গোলমাল পাকাতে শুরু করেছিল৷ - আমি মাইনে করা মানুষ৷ ও গল্পে আমার কাজ নেই৷ - প্রবীর। - কিছু বলবে বড়দা? - সিংঘানিয়ার পোষ্যরা কেউ তোকে দেখেনি তো? - জিতু দেখেছিল। - ওদের সেই ম্যানেজার? অবশ্য সে ব্যাটা নিজেও গুণ্ডা৷ কিন্তু সে যদি দেখে থাকে..। ঝামেলা পাকাবে না তো? ভালো করে শাসিয়ে এসেছিস তো? - লাশকে শাসিয়ে কী হবে৷ - ওহ৷ ওকেও তুই...। - দেখে ফেলেছিল৷ না দেখলে বেঁচেবর্তে থাকত৷  - তোর মাথাটা বড্ড গরম। - জিতুর জন্য তোমায় তো বাড়তি টাকা দিতে বলিনি। কোল্যাটেরাল ড্যামেজ৷  - বলছি, বুলেটেই নামিয়েছিস তো সবকটাকে? - বুলেটের যা দাম আজকাল৷ অবশ্য প্রসেসটা তোমার জেনেও কাজ নেই। - তোর মেজাজট

সরি

র‍্যান্ডি পশ 'সরি বলার সঠিক পদ্ধতি' জলের মত সহজ ভাষায় বুঝিয়ে গেছেন৷ সবার আগে কোনও রকম 'কিন্তু', 'যদিও', 'আসলে কী হয়েছিল' মার্কা কেরদানি বাদ দিয়ে নির্ভেজাল 'সরি'টা বলতে হবে৷ তারপর স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করতে হবে "দোষটা পুরোপুরি আমার"৷ আর সবশেষে থাকবে আসল ব্যাপারটা যে'খানে নিজেকে এগিয়ে এসে বলতে হবে, "ভুল তো করেইছি৷ এ'বার কী করলে সে ভুলের খেসারত দেওয়া হবে সে'টুকু জানা দরকার"।  কিন্তু এই ধরণের হাইক্লাস মেন্টোস সলিউশন আমাদের ধুরন্ধর আম জিন্দেগীতে সবসময় চলবে না। অতএব উপায়? ওই, গোপন কোডে 'সরি' চালান করার বিভিন্ন পদ্ধতি আমরা খুঁজে বের করি৷ সে কোড অবশ্য এনিগমার মতই জটিল৷ কিন্তু সংসার, প্রেম এবং ইয়ারদোস্তি গোছের সমস্ত ব্যাপারগুলোই যে হাজারো এনিগমা-সঙ্কেতের ওপর দাঁড়িয়ে। সে হেঁয়ালির তল না পেলে সম্পর্কের পেল্লায় সব জাহাজ ভুলবোঝাবুঝির ইউবোটের আক্রমণে ডুবতে বাধ্য।  তা কী ধরণের সাঙ্কেতিক ভাষায় আমরা 'সরি' বলার চেষ্টা করে থাকি? "আরে ভাই, শোন না। আজ ভাবছি তোকে শ্যামলদার দোকানে মোগলাই খাওয়াব। না না, কিছুতেই না শুনছি

কাজের মত কাজ

কর্মব্যস্ত এবং তৃপ্ত মানুষের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকতে কী ভালোই না লাগে৷ হাজারখানা 'ইন্সপিরেশনাল' সেল্ফ-হেল্প বই পড়ার চেয়ে অমন একজন হাসিখুশি শশব্যস্ত মানুষের দিকে মিনিট দুয়েক তাকিয়ে থাকাটা বেশি কাজের বোধ হয়৷  অফিসে যখন দেখি কেউ কাঠশুকনো কোনও রিপোর্টও এক গাল হাসি আর ম্যাক্সিমাম ফোকাস নিয়ে লিখছে, মন ভরে যায়৷ সে রিপোর্ট তিনি ধীরেসুস্থে পড়বেন। রিপোর্টের প্রতিটি শব্দকে কড়াভাবে ঝালিয়ে নেবেন; যেমনভাবে কোনও কবি নিজের সদ্যলেখা কবিতাকে পালিশ করে থাকেন৷ এলেবেলে ভুল চোখে পড়লে এমনভাবে চমকে উঠবেন যেন পোলাও চিবুতে গিয়ে দাঁতে পাথরকুচি পড়েছে৷ শুধু তাই নয়, খসখসে রিপোর্টকে তিনি মখমলে করে তুলবেন নিজের একনিষ্ঠ রিসার্চে। এ'সব মানুষ সুযোগ পেলে এমন মনপ্রাণ ঢেলে মাটি কোপাবেন যে মরুভূমিতেও বাসমতি ফলিয়ে ছাড়বেন।  রিপোর্ট যত এগোবে, তাদের মুখের হাসিও ততটাই চওড়া হবে৷ মাঝেমধ্যে হয়ত টাইপিং থামিয়ে টেবিল ঠুকে তাল দেবেন, সামান্য গুনগুন না করলে যে খেটে-কামাল-করা কাজের মজাটাই মাটি৷ রিপোর্টের জটিলতম অংশটা নিখুঁতভাবে নামিয়েই হয়ত তিনি হাঁক পাড়বেন এক কাপ চায়ের জন্য, আদা দেওয়া৷ নিজেকে মাঝেমধ্যে বখশিশ না দিলে চলবে কেন?

আদত আদবকায়দা

আদত অসাবধানতা। রোলের অর্ডার দিয়ে রোলের চাটুর ওপর শ্যেনদৃষ্টি না রাখা৷ আদত অসহিষ্ণুতা। রোলের পরোটা ভালোভাবে ভাজা হওয়ার আগেই রোলদাদা বা রোলদিদিকে "হল কী" বলে বেফালতু তাড়া দেওয়া। আদত অজ্ঞানতা। প্লেটে বা বাটিতে রোল সাজিয়ে দেওয়া। আদত অসতর্কতা। রোল থেকে চিকেনের টুকরো পড়ে যাওয়া।  আদত অভব্যতা। রোলের কাগজ খোলাটা শিল্প। মিহিভাবে, সরু পরতে পরতে, নরম ভাবে সে কাগজ না খুলে, খাবলে ছিঁড়ে ফেলা। আদত অসভ্যতা। ধীরেসুস্থে রোলের রোলত্ব উপভোগ না করে, রোল কামড়াতে কামড়াতে অফিস-ব্যবসা কাজকর্ম-ব্যস্ততার গল্প ফাঁদা।

ভূত নামানোর ব্যবসা

- এ কী৷ আবার এসেছেন? - চিন্তা নেই৷ এ'বারে আর ভূত দেখতে আসিনি৷  - তাই বলে ফিজ না দিয়ে যেতে পারবেন না কিন্তু৷ আমার সময়ের দাম আছে৷  - রাখুন আপনার সময়ের দাম৷ বাইরে তো কেউই বসে নেই৷ ভূত নামানোর বাজার ডাউন যাচ্ছে?  - আসলে দু'দিন আগেই পূর্ণিমা গেল তো৷ এ'সময়টায় ঠিক তেনারা অদরকারে ঘুরঘুর করতে পছন্দ করেননা৷ তাই এ'কদিন বিজনেস একটু ওই...যাকে বলে..। - অত কথায় কাজ নেই৷ আপনার ফিজ একশো বত্রিশ টাকা তো? দেব। ইয়ে, আমায় মনে আছে আশা করি। - ভাস্কর তান্ত্রিক একবার কাউকে দেখলে সহজে ভোলে না৷ আর আপনি মাইরি ভুলবার মত লোকও নন৷ গত হপ্তায় কী কাণ্ডটাই না ঘটালেন..। আপনি তো ব্যারাকপুরের প্রবীর দত্তগুপ্ত৷ তাই তো? দিব্যি, দিব্যি মনে আছে।   - দেখুন ভাস্করবাবু..। - ও কী! আমি আপনার অফিস কল্যিগ নই৷ বাবা বলুন, গুরুজীও চলতে পারে৷  - যাকগে৷ অকারণ খেজুর করতে আমি আসিনি। গতবার আপনাকে একটু অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিলাম৷ গোটা পরিস্থিতিটাই কেমন গোলমাল হয়ে গেছিল৷ তাই ভাবলাম..। - আপনি কিন্তু আমায় সত্যিই ভেবড়ে দিয়েছিলেন প্রবীরবাবু৷ নিজের বাবার আত্মার সঙ্গে কমিউনিকেট করতে চেয়ে আমার কাছে এলেন৷ ভালো কথা। অথচ আমি তেনাকে ডাক দেও

চলো অঞ্জন!

অঞ্জন দত্তর গান নিয়ে কোনও গুরুগম্ভীর আলাপ-আলোচনাকে কোনওদিনই পাত্তা দিইনি৷ নিন্দে তো নয়ই, অন্যের প্রশংসার সঙ্গে তাল মেলানোরও প্রয়োজন বোধ করিনি৷ অঞ্জনবাবুর গান একটা অভ্যাসের মত জুড়ে গেছিল৷ তার ভালোমন্দ হয়না, ডিসেকশন হয়না৷ ভালো লাগা থাকে। আর গানের ক্ষেত্রে, সেই ভালোলাগাটুকুই বোধহয় একমাত্র ডিসিপ্লিন, অন্তত আমার মত অতিপাতি মানুষের জন্য৷  প্রথমবার অঞ্জনবাবুর গান ক্যাসেট ধার করে শোনা৷ স্কুলবয়সে৷ সে'সব গান প্রথমবার শুনেই লাফিয়ে ওঠার নয়৷ 'ওয়াহ তাজ' বলে সেলাম ঠোকার নয়৷ কিন্তু৷ অঞ্জনবাবুর গানগুলোয় রয়েছে বার বার ফিরে যাওয়ার সুর৷ আর স্কেল-বসানো সোজাসাপটা সরলসিধে কথা৷ প্রথম শোনায় যে ক্যাসেট 'ঠিকই আছে' মনে হয়েছে, বাহাত্তর নম্বর শুনানির সময় সেই ক্যাসেটই ইয়ারদোস্ত৷  ভদ্রলোকের বেশ কিছু গোবেচারা গান রয়েছে৷ একসময় তারা মাঝেমধ্যেই টেপরেকর্ডারে বাজছে৷ বিরক্ত করছে না, আবার মনে ইয়াব্বড় দাগও কাটছে না৷ কিন্তু আচমকা একদিন খেলা ওলটপালট৷ হয়ত কেমিস্ট্রির খাতার পিছনে মন দিয়ে বুক ক্রিকেটের স্কোর লিখছি৷ তখন দুম করে টের পেলাম - আরে! "শুনতে কি চাও তুমি"র সুরে কী দারুণ মায়া৷ কী অপূর্ব স্নেহ৷

নারায়ণ দেবনাথ

আমি নিজের আগ্রহে প্রথম পড়া শুরু করি মূলত ছবি সর্বস্ব ছোটদের বইগুলো৷ দাদু উপহার দিত সে'সব বিভিন্ন বাহারে বই৷ আমার উপহার পাওয়া প্রথম বই যে'টা উল্টেপাল্টে গিলে খেয়েছিলাম, সে'টা হল একটা বাংলা ছড়া সংকলন। সে'খানে ছিল ছোটছোট প্রচলিত ছড়া, আর চমৎকার সব স্কেচ৷ আমার আগ্রহ ছিল ওই স্কেচগুলোর ওপর। বইটার নাম ছিল বোধ হয় 'ছোটদের ছড়া সঞ্চয়ন'। তার প্রথম পাতায় দাদু নীল কালিতে লিখে দিয়েছিল আমার পড়া প্রথম কবিতাঃ "দাদু, আমার বড় ভালো, ছড়াগুলো পড়ে ফেলো"৷  এর বাইরে ছিল দাদুরই দেওয়া রাদুগা প্রকাশনীর ইয়াব্বড় কিছু বই, পাতা জোড়া ঢাউস সব চমৎকার আঁকা আর অল্প কথা, সহজ শব্দে সাজানো সরল প্লটের মজাদার গল্প৷ এ'ছাড়া ওই ছবিতে রামায়ণ বা মহাভারত তো ছিলই৷ মোট কথা হল সে'সব ছবি গিলতে গিলতে কয়েক লাইন পড়ে ফেলতাম৷ ছবি উপভোগ করাটাই ছিল আমার আদত পড়া। পারতপক্ষে ছবিবিহীন গল্পওলা বইটইয়ের দিকে তেমন ঘেঁষতাম না৷ সত্যি কথা বলতে কি, সেই খুদে বয়সে কমিক্সের দিকেও তেমন ঝুঁকিনি৷ বাড়িতে রাখা বাংলা কাগজে তখন নিয়মিত স্পাইডারম্যান আর ফ্ল্যাশ গর্ডনের কমিক্স প্রকাশ হত৷ দাদুর দেওয়া ছবির বইগুলোর তুলনায় সেই কমিক্

লিঙ্কডনইন মেড-ইজি সিরিজ - প্রথম পর্ব

।। শব্দঃ DISRUPTOR।।  ডিসরাপ্টর কে? মিটিং চলাকালীন যে দুম করে 'ইয়ে, আজ লাঞ্চে মটন আছে শুনেছি' বলে জরুরী আলোচনার সুরতাল ঘেঁটে দেয়। জরুরী ইমেলে সঠিক রিপোর্ট অ্যাটাচ না করে যে প্রাইভেট স্প্রেডশিটে বানানো মুদীখানার ফর্দ পাঠিয়ে ফেলে৷ অন্যমনস্ক হয়ে 'ইয়েস স্যারে'র বদলে যে ধের্বাল বলে ফেলে জিভ কাটে।  পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের থ্যাঙ্কিউ স্লাইডের পর যে একখানা চোরাগোপ্তা ক্যালভিন-হবস বা হাঁদা-ভোঁদার ছবি সাঁটা স্লাইড জুড়ে দেয়, তুকতাক হিসেবে। বাঁধা প্রমোশন হাতছাড়া হওয়ার পর যে পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড ওয়ার্ড ডকুমেন্টে সিস্টেম বিরোধী বিরাশিখানা স্লোগান লিখে মন শান্ত করে এবং তারপর আড়াই মিনিট বাউল শুনে,প্রমোশনের চিন্তা হাওয়ায় ভাসিয়ে; হাইক্লাস শিঙাড়া খুঁজতে বের হয়। যে অমুক ডিডাকশন তমুক ডিডাকশনে ফালাফালা স্যালারি স্লিপের প্রিন্ট নিয়ে, দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে; সে কাগজের পিছনে চন্দ্রবিন্দুর বুক-কাঁপানো সমস্ত গান থেকে ধার করা মনগলানো বিভিন্ন লাইন টুকে রাখে৷   যে রিভিউতে ছিন্নভিন্ন  হওয়ার পর হাফ-ডে ক্যাসুয়াল লীভ নিয়ে অফিসের ছাতে বসে শিব্রাম পড়তে পড়তে ভেজিটেবল চপ খায়৷

স্পষ্টবাদ

স্পষ্টভাষী হয়ে উঠতে পারায় যে কী পরম তৃপ্তি। সত্যিই, কাঠখোট্টা কথাগুলো সপাটে অন্যদের দিকে ছুঁড়ে মারার মধ্যে যেন দু'চামচ পাটালির পায়েস মুখে পোরার তৃপ্তি রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা; ধারালো স্পষ্টভাষী হয়ে ওঠার মধ্যে একটা মায়াবী উত্তরণ রয়েছে৷ তবে ভেবে খারাপ লাগে যে সকলে এখনও হাইক্লাস স্পষ্টবাদিতার দিকে এগিয়ে যেতে পারেননি৷ কাজেই সে বিষয়ে কিছু টিপস শেয়ার না করলেই নয়। প্রথম। আপনার পছন্দ, ভালোবাসা এবং ভালোলাগাগুলো; সে'সব সস্তাসরল ব্যাপার নিয়ে পড়ে থাকলে কিছুতেই কপিবুক স্পষ্টবাদি হয়ে ওঠা সম্ভব নয়৷ 'ভালো ভালো' জপ করে চলা মানুষদের দিয়ে আর যাই হোক রক্তগরম করা সেন্টিমেন্ট ছড়ানো সম্ভব নয়। নিজের খারাপলাগাগুলোকে আঁকড়ে ধরুন, দিনরাত সে'গুলোকেই বারবার কপচে নিজের মেজাজকে তিরিক্ষি করে তুলতে হবে৷ সে'টাই প্রথম ধাপ। মেজাজ খিটখিটে না হলে স্পষ্টবাদি ব্যাক্তিত্ব খোলতাই হয় না৷  দ্বিতীয়। সবার কলার ধরে নিন্দে করাটা আপনার দায়িত্ব৷ কিন্তু সাবধান, ন্যাকাপনা করে গঠনমূলক আলোচনার দিকে ঝুঁকলে কিন্তু সমস্তটা মাটি৷ মনে রাখবেন, আপনি অভিনয় করছেন ছবি বিশ্বাস-প্যারোডি ফ্লেভারের ভূমিকায়। আন্তরিক পাহাড়ি সান্যাল হ

মনুবাবু ও বনমালী

চৌরাস্তার মোড়ের এককোণে বঙ্কুর পানের দোকান। বঙ্কুর সেই পানের দোকান থেকে খান দশ পা এগোলেই একটা ইলেক্ট্রিক পোল। অবশ্য মনুবাবু গোপনে সে পোলটার একটা নাম দিয়ে ফেলেছেন; বনমালী। ব্যাপারটা মধ্যে একটু খ্যাপাটেপনার গন্ধ যে নেই তা নয়, কিন্তু তা সবিশেষ পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না মনুবাবু। রোজ সন্ধ্যেয় অফিস থেকে ফিরে, বঙ্কুর দোকান থেকে একটা খয়ের ছাড়া সাদা পান মুখে পুরে; সোজা বনমালীর পাশে এসে দাঁড়ান মনুবাবু। আর তারপর প্রাণ খুলে যত অভাব-অভিযোগ-মনখারাপ, সমস্ত উজাড় করে দেন বনমালীর কাছে।  "বুঝলে ভায়া বনমালী, এই চ্যাটার্জিটা নির্ঘাৎ ব্যাকস্ট্যাব করেছে৷ আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। আমি নিশ্চিত ও বড়সাহেবের কান ভাঙিয়েছে৷ নয়ত এ'বারের প্রমোশনটা আটকায় কী করে বলো"! "বনমালী! শুনেছ? রাণুর বাবা বলেছে আমি নাকি রাণুর যোগ্য পাত্র নই! আরে রাণুর সিটিসি আমার চেয়ে বেশি বলে আমি ওর যোগ্য নই? এরা কোন সেঞ্চুরিতে বাস করে বলো দেখি"! "ভায়া বনমালী, গোটা দুনিয়াটাই উচ্ছন্নে গেছে। আরে বাসভাড়া দেওয়ার পর ছাই টিকিটটা হারিয়ে ফেলেছি।  তবু কন্ডাক্টর ব্যাটা বিশ্বাস করলে না? চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে সে কী ই