Skip to main content

Posts

Showing posts from October, 2017

হরিহরবাবুর ডানা

১।  - গোবিন্দদা! বড্ড বিপদে পড়ে এলাম এত রাত্রে।  - হরিহর নাকি? - হ্যাঁ।  - তা কী ব্যাপার? তোমার গলা শুনতে পাচ্ছি দেখতে পাচ্ছি না কেন? - কারণ আমি আকাশে! উড়ছি। এই দেখুন।  - উড়ছ? সে কী ! সত্যিই ভাসছ তো দেখছি।  - দিব্যি ছাতে গিয়ে পায়চারি করছিলাম। আচমকা কথা নেই বার্তা নেই দুই বগলের নিচ দিয়ে দু'টো ডানা বেরিয়ে এলো। চমকে গিয়ে যেই ঝটপট করেছি অমনি ভেসে উঠলাম আকাশে। সেই থেকে উড়ছি।  - তা সমস্যাটা কোথায়? - মানুষ হয়ে উড়ব গোবিন্দদা?  - তা ঠিক। তবে...।  - তবে কী গোবিন্দদা? - বুঝে গেছি হরিহর! কোনও চিন্তা নেই।  - কী বুঝলেন? - এ'টা স্বপ্ন। স্বপ্ন ছাড়া মানুষ উড়তে পারে না।  - কার স্বপ্ন?  - আমার। আমি আসলে জানালার ধারে বসে বিড়ি খাচ্ছি না। ঘুমিয়ে আছি। স্রেফ স্বপ্নে এমনটা মনে হচ্ছে।  - বলছেন? আমি রিয়েলি উড়ছি না? - মানুষ তো। উড়বে কী করে? ২।  - পঞ্চা! আজ স্কুল ছুটি! - গরম গরম রুটি রে বিশু।  - কিন্তু ইয়ে, নোটিশ ঠিক পড়লাম তো? - আলবাত! আর তা ছাড়া হেডস্যার নিজে আমায় বললেন তো। হরিহর কাকা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। মানুষ কি উড়তে পারে? তা'হলে নিশ্চয়ই এ'

বেরাদরি

- ব্রাদার! পেরেছি! - এত রাত্রে...এত হাঁকডাক বিগ-বেরাদার...? - রাত কোথায় ব্রাদার? ভোর। শুরু। আলো। নতুন। এই তো সময়। পেরে ওঠার। আমি পেরেছি। - পেরেছ? যন্তর তৈরি? - না হলে ডাকলাম কেন? যন্তর রেডি। তুমিই প্রথম সাবজেক্ট ব্রাদার। - ওহ। এ যন্ত্র পারবে গো বিগবেরাদার? মন খারাপ বুঝতে? - চটপট। তুরন্ত। এই মনখারাপ হল, হুই ডাক এলো। - মাইরি? এ যন্তর হাঁক দেবে? - নয়ত আর বানালাম কী! ডাকেই অ্যান্টিসেপ্টিক। - তাতেই মনখারাপ গায়েব? - মনখারাপ ইজ আ ফর্ম অফ এনার্জি ব্রাদার। এনার্জি গায়েব হয় না। এক ফর্ম থেকে অন্য ফর্মে কনভার্ট হয়। মনখারাপ টু মনকেমন। মনকেমন টু কবিতা। চটপট। তুরন্ত। দুরন্ত। - কবিতা? আমি বুঝি না। - যন্তর। বুঝিয়ে দেবে। *** 'কী রে! ভাবছিস কী? বললি না তো আমার বানানো।নাড়ু কেমন খেলি'? যন্তরের চোপায় চমকে ওঠে পিলে। তাই তো। বিগ-বেরাদার তবে মিথ্যে বলেননি। আঁচলের খসখসে ছ্যাঁতছ্যাঁতে কবিতা টের পেয়ে বিগবেরাদারের প্রতি সামান্য গলে পড়তে ইচ্ছে হল।

মাঝরাত্রের স্কুলবাড়ি আর দাসগুপ্তবাবু

- আসুন মিস্টার দাসগুপ্তা। ওয়েলকাম। ওয়েলকাম টু দ্য ফার্স্ট ডে অফ স্কুল। - ধন্যবাদ। কিন্তু মানে...আমি ঠিক...। - বুঝতে পারছেন না? ন্যাচরালি, ন্যাচরালি। ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়ার আগে তাই দেখা করতে এলাম..। আমি এ'খানকার হেডমাস্টার। ইয়ে, শিক্ষক বলতেও আমিই..। - কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না...এত রাত্রে আমি এই সাতপুরনো ভাঙাচোরা স্কুলবাড়িতে কী করছি? এলামই বা কী করে?  - ভূতের স্কুল তো পোড়ো স্কুলবাড়িতেই হবে। - কী? আমি মৃত?  - অফ কোর্স। আপনি মৃত! আমি বা এ'খানের সমস্ত ছাত্ররা, সবাই...। - আমি মারা গেছি? - নিঃসন্দেহে। শুধু মড়ারা এই স্কুলবাড়িটা দেখতে পায়। - আমি মারা গেছি! ব্যারাকপুরের অরিন্দম দাসগুপ্ত মারা গেছে!  - আপনি মারা গেছেন! অরিন্দম দাসগুপ্ত মারা যাবেন কেন? তিনি এই মাত্র ইয়ারবাড খুঁজে না পেয়ে "ধ্যারশ্লা" বলে ফের শুতে গেলেন। - আমিই তো অরিন্দম দাসগুপ্ত। - মিস্টার দাসগুপ্তা। রিল্যাক্স। ইউ আর নট হিম। ইউ আর জাস্ট আ ডেড ড্রীম অফ মিস্টার দাসগুপ্তা। আপনি দাসগুপ্তবাবুর সদ্য মৃত স্বপ্ন। এ'টা মড়া স্বপ্নদের স্কুল মিস্টার দাসগুপ্ত। 

সকলই তোমারই

- মন্টুদা!  - উঁ। - ও মন্টুদা!  - কী! ঘ্যানঘ্যান করছিস কেন। - এ'বারে ভাসাতে হবে তো। - মনে সুরটা এখনও ফ্লোট করছে রে..। - সুর? - আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন। গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। - সুর বোধ হয় না মন্টুদা, বিলু বলল গাঁজার ডোজটা একটু কড়া হয়ে গেছিল নাকি...। আর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে ঠাণ্ডায়, গঙ্গার ভেজা হাওয়া তো। - গঞ্জিকা বল। ভক্তিভাব থাক। - ভাসাতে হবে যে এ'বার। - রংমশালগুলো কই? - মিঠুদা ফুলবেলপাতার ঝুড়ির সঙ্গে তুবড়ি রংমশালের পেটিটাও জলে দিয়ে দিয়েছে। - আহাম্মক। - ঠিক। - তবে মিঠু কবিতা লেখে ভাই। মিঠুকে আহাম্মক বললে ধর্মে সইবে না। - স্কাউন্ড্রেল বলো। ম্লেচ্ছ খিস্তি হিন্দু শাস্ত্রে ইন্টিগ্রেট করা নেই বোধ হয়। এ'বার চলো, তুমি না এলে ভাসান লীড করার কেউ নেই। - মন রে এমএস এক্সেল জানো না...মন রে...। - ক্লার্কপ্রসাদী মন্টুদা? - হেহ্, তুই বুঝিস। আরে ভাসাতে যাব! ভাসালে তো ভেসেই গেল। মা দু'চার মিনিট প্ল্যাটফর্মে ওয়েট করছেন,  করুন। সী অফ করতে এসে অত লাফালাফি করলে হয় না। আমরা পান্নালালের জাত, মিউজিক ইজ আওয়ার ধর্ম। চাই না মা গো রাজা হতে, রাজা

সতীনাথ ও ঘুগনির বাটি

স্টিলের প্লেটে এক বাটি ঘুগনি আর দু'টুকরো পাউরুটি। ঘুগনিটা সামান্য আলুনি, তবে ধোঁয়া ওঠা গরম; তাই দিব্যি। পাউরুটি চুবিয়ে প্রথম কামড় দিতেই মনঃপ্রাণ জুড়ে সে কী আরাম। বুদ্ধি করে দোকানির থেকে সামান্য পেঁয়াজ-লঙ্কা কুচি চেয়ে নিয়েছিলেন সতীনাথ। আর প্লেটের কোনে ছোট্ট এক ঢিপি ফাউ বিট নুন। দোকানি বলতে বছর সাতেকের একটা ছেলে, যে একটানা বাসন মেজে যাচ্ছিল। খালি গায়ে কালো হাফ প্যান্ট পরে দিব্যি সামাল দিয়ে যাচ্ছে। বাপ নাকি বিড়ি খেতে গেছে। চটপটে আর শশব্যস্ত বাচ্চা ছেলেটা হাল ধরে রেখেছে।   স্বাদে গলে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল। আহ, কদ্দিন পর সামান্য ঘুগনি আর পাউরুটি। এর সঙ্গে একটা ডিম সেদ্ধ পেলেই সতীনাথের চোখে জল আসত। কত দিন পর।  নীল রঙ করা কাঠের বেঞ্চিতে যে আরও একজন বসে রয়েছে সে'টা খেয়াল হল মিনিট খানেক পর। ততক্ষণে আরও দু'টো পাউরুটি চেয়ে নিয়েছে সতীনাথ। পরনে সাদা ফতুয়া আর সবুজ-নীল লুঙ্গি। গালে খোঁচা দাড়ি, ঝিমনো ঢুলঢুলে চোখ। সুট করে প্লেট নামিয়ে রেখে সরে পড়তে চেয়েছিলেন সতীনাথ। লাভ হল না। হাত টেনে ধরলেন সাদা ফতুয়া।  - আধ বাটি ঘুগনি পড়ে রইল যে, খেয়ে যাও! - না মানে...আমি আসি।  - যেতে চা

সৈনিক আর হারমোনিকা

১ - বিল্টুবাবু! - কে? - ভয় পেয়েছ? - তুমি কে? - আমি? আমি সৈনিক। - তুমি আমার শোওয়ার ঘরে এলে কী করে? তুমি কি ভূত? - ঠিক ধরেছ। আমি ভূত। মৃত সৈনিকের ভূত। - তুমি আমার ঘরে কেন এসেছ? আমি চিৎকার করলেই মা ছুটে আসবে কিন্তু।  তারপর তোমার যে কী দুরবস্থা হবে...। - তুমি চিৎকার কেন করবে বিল্টুবাবু? তুমি কি ভয় পেয়েছ? - ক্লাস ফোর পর্যন্ত খুব ভয় পেতাম, জানো। গতকাল ক্লাস ফাইভে যেই উঠেছি, অমনি ভয়টয় গেছে কমে। - তাই? কী রকম ব্যাপারটা? - ক্লাস ফোরে পড়ার সময়ও ধুন্ধুমার যুদ্ধ চলছিল তো। রোজ রাত্রে পাড়া অন্ধকার।  চুপটি করে বসে থাকা, এই বুঝি বোমা পড়ল। হারুদাদাদের কী হয়েছিল জানো তো? - কী হয়েছিল? - শত্রুদের একটা বোমা, পড়বি তো পড় এক্কেবারে হারুদাদাদের বাড়ি ছাদে। হারুদাদা, হারুদাদার মা, বাবা, হারুদাদার গরু লালি, আর আরও অনেকে; ছাই হয়ে গেছিল। - ওহ হো। - গোটা ক্লাস ফোর তো আমায় স্কুলেই যেতে হয়নি। যুদ্ধের জন্য। - ওহ। ২ - জল...। একটু জল। - চোপ্। - আররে, মরেই তো যাচ্ছি। একটু জল দিলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে হে ক্যাপ্টেন? - চারটে বুলেট খরচ করতে হয়েছে তোমার ওপর, তারপরেও এতক্ষণ তড়পে চলবে ভাবিনি। - এই এক

ফিরে আসার গল্প

রাতের অন্ধকারে সদর দরজাটার দিকে তাকালে বড় মায়া হয়। কোনও এককালে সবুর রঙ ছিল বোধ হয়, এখন ফ্যাকাসে, অল্পেতেই মচমচ করে ওঠে। কব্জায় বারবার নারকোল তেল দিয়েও ক্যাঁচক্যাঁচ দূর করা যায়নি। অথচ বড় মায়া। একটা কলিং বেল আছে বটে, কিন্তু সে’টা ব্যবহার করতে মন চায় না। সেলসম্যানের কাজে রোজ যে কত বাড়ির কলিং বেলে হানা দিতে হয়। কত রকমের টুংটাং, কত রকমের দরজা, কত রকমের মানুষ। ছোট্ট এক কামরার রেলের কোয়ার্টার থেকে ঝাঁ চকচকে ডুপ্লে; সবার বাড়িতেই আরশোলা আছে। আমার বিশ্বাস রাজভবনেও আরশোলা আছে।  মিসেস রাজ্যপালের সঙ্গে মিনিট দশে কথা বলতে পারলেই আয়ুর্বেদিক গুণ সম্পন্ন সুগন্ধি আরশোলাশ-প্লাস লিকুইডের তিনটে বড় শিশি আমি গছিয়ে দিতে পারতাম। গোটা ব্যাপারটাই আত্মবিশ্বাসের খেল। “বিলীভ ইন ইওর প্রডাক্ট”, আমাদের সেলস ম্যানেজার মাঝে মধ্যেই বলে। আমি রীতিমত বিশ্বাস করি। এবং সেই বিশ্বাসের প্রমাণ আমার বিক্রির পরিমাণ। শ্রীগোকুল গ্রীন ইন্সেক্টিসাইড কোম্পানির পয়লা নম্বর সেলসম্যান! তবে রাতে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার সময় কড়া নাড়তে ইচ্ছে করে। খটর খট খটর। এ’টুকুতেই দীপা সাড়া দেয়। দীপার পায়ের মৃদু ধুপধুপ শুনতে বড় ভালো লাগে, সাত সেকেন

কী বৃষ্টি কী বৃষ্টি!

- দাদা গো! কী বৃষ্টি! কী বৃষ্টি! - বটে? - ঝমঝম শুনতে পাচ্ছ না? - ঝমঝম কি? ঝিরঝির মনে হচ্ছে। - তোমার কান গ্যাছে। এদিকে আবার শঁশঁশঁশঁ করে ঝড়! - সামান্য ফুরফুর কানে এসেছে বটে। - প্রলয় এলো বুঝি, এমন দিন তিনেক চললে কলকাতা বে অফ বেঙ্গলে মার্জ হয়ে যেতে পারে। - না না। বড় জোর বেহালায় অটো উল্টোবে, আমহার্স্ট স্ট্রিটে হাঁটুজল। মেজকাকার সামান্য সর্দিজ্বর। ঠাম্মার সাধের গামছাজোড়া শুকোবে না। - এই আন্ডারপ্লে করাটা তোমার একটা বদভ্যাস দাদা। সে'বার মোদীর ল্যান্ডস্লাইড ভিক্ট্রিকে বললে স্টেজম্যানেজ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। মোহনবাগানের চার গোল খাওয়ার পর বললে ক্লোজলি ফট্ কনটেস্ট। পিসিমার কিডনি স্টোনের দুর্দান্ত ব্যথাকে মাইল্ড ডিসকমফর্ট বলে পিসেমশাইকে রিপোর্ট করলে। - বাঙালির এই অকারণ লাফিয়ে ওঠার স্বভাবটা বড় বিশ্রী রে ছোট। - ধুস, তোমার সঙ্গে কথা বলাই ঝকমারি। তার চেয়ে বরং রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের কড়াইয়ে খুন্তি নাড়া দেখি। বাবা আজ ঢাউস ইলিশ এনেছে; দেড় কিলোর। - খোকা ইলিশ নয়, সে'টা ঠিক। তাই বলে ঢাউস? ধুস। এক কিলো সাড়ে তিনশো। অনলি। - বাজে না বকে পড়তে বসো। গতবার ফিজিক্সে অক্কা পেয়েছিলে সে'টা মনে আছে তো?

ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র আর ঈশ্বর

- কী বুঝছ ভধ্রকিধস?  - ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র, আমাদের এই মিশন ঐতিহাসিক সাফল্য লাভ করতে চলেছে। - এই গ্রহ মড়া নয়? - মরাদের গ্রহ, তব এ গ্রহ চিরকালীন মড়া নয়। আজ থেকে মাত্র দেড় লাখ বছর আগেও এখানে বাসযোগ্য পরিবেশ ছিল। প্রচুর অক্সিজেন, অফুরন্ত জল। আর প্রাণ। - তুমি নিশ্চিত ভাই ভধ্রকিধস? এ'খানে প্রাণ ছিল? আমাদের টীম তো কোনও প্রমাণই যোগাড় করতে পারেনি। এ'দিকে স্পেসশিপ ফেরত নিয়ে যাওয়ার দিন সামনেই। - ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র, প্রমাণ যোগাড় করতে পেরেছি বলেই তো আপনার কাছে আসা। এ গ্রহে শুধু বহু রকমের প্রাণিই ছিল না, রীতিমত উন্নত প্রজাতিও বাস করত। - দেশে ফিরে এমন বাজে বাতেলা দিলে হবে না। যদি এতই উন্নত প্রাণীদের বাস ছিল তবে সে সব চিহ্ন কই? তাঁদের ফসিল? তাঁদের সৃষ্টি? - আমি এই বিস্তীর্ণ প্রান্তর চষে ফেলেছি ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র, আর এ'খানে সে'সব চিহ্ন কিছু নেই বটে। তবে প্রতিটা বালুকণায় রয়েছে পারমাণবিক বিস্ফোরনের চিহ্ন, সে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ যে এ গ্রহের সমস্ত কিছু সাফ হয়ে গেছে। পাহাড়  নিশ্চিহ্ন,  সমুদ্র গায়েব, বাতাস হাওয়া। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ গ্রহের আয়তনও অনেক বড় ছিল। কিন্তু সে বিস্ফোরণ এতই

নেশাভাং

- হ্যালো! - হুঁ। - বাবু, শুভ বিজয়া। - হুঁ? - শুভ। বিজয়া। - শু..শুভ। - এ'বারেও মন্টুদারা সিদ্ধিতে তামা ঘষে দিয়েছে? - আমি ভাবলাম তোর সঙ্গে কথা বলতে নেই। - নেই তো। - তাহলে...ফোন করলি কেন? - এমনি। - আমি ফোন করব? কাল? - না? - কেন? - তোর ফোন করতে নেই। - ওহ। কিন্তু তুই ফোন করতে পারিস? - পারি। সবসময় নয়। এই যেমন আজ, তোর জ্ঞানগম্যি যখন গুলিয়ে গেছে। - ভাবছি...। - তুই ভাবিস? বাবু? - ওহ,  ভাবতে নেই? - ভাবলে কেরিয়ারের কথা আর একটু মন দিয়ে ভাবতিস। অন্তত মায়ের কথা ভাবতিস। সে যাক, এখন কী ভাবছিলিস? - সিদ্ধির জন্য বিজয়াদশমী পর্যন্ত ওয়েট না করে যদি মাঝেমধ্যেই...। - মাঝেমধ্যেই আমাদের কথা বলতে নেই। - ওউক্কে। আন্টিল নেক্সট বিজয়া দশমী দেন। - কেন এমন করিস? - যাস না। - আমি নেই তো। যাব কই? - ট্রু। সরি। শুভ বিজয়া। - সাবধানে থাকিস। কেমন? - যাস না। - আবার? - সরি। - সামনের বিজয়ার সিদ্ধির আগে আর কোনও নেশাভাঙ নয়, কেমন? - তোর শশীকাকাকে মনে আছে? - স্কুলের বিহারী দারোয়ান? তুই যার সঙ্গে লুকিয়ে তাস খেলতিস? - হুঁ। - তাঁর কী হয়েছে? - অষ্টমীর দিন মারা গেছেন। ওর বডি নিয়ে ছপড়া এসেছি ওর তি

বিপিনবাবুর একাদশী

(এই লেখাটা ২০১৬ তে 'এই সময়'য়ের জন্য লেখা, সে'বার একাদশী রোব্বারে পড়েনি) বিপিনবাবুর জ্ঞান যখন ফিরলো তখন গোটা মুখে রোদ! গোটা গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। মাথার বিশ্রী দপদপ আর ঝিমঝিম মেশানো অনুভূতিটা কিছুতেই যাচ্ছে না। শরীরটা মনে হচ্ছিল আড়াইশো কিলোর এক বস্তা লোহা। “অফিস যাবে না নাকি”? বৌয়ের স্টিলের-বাসনপত্র-আছড়ে-পড়া কণ্ঠস্বরে বিপিনবাবুর মনের মধ্যে একটা সুতীব্র ঝাঁকুনি পড়ল। ঝাঁকুনি জিনিসটা খুব দরকারি। দৈনিক অটোরিকশার ঝাঁকুনিটাকে বিপিনবাবু ফ্রি জীম বলে ধরে নেন। আজকের এই বৌয়ের ডাকের ঝাঁকুনিটা তেঁতুলজলের কাজ করল। গোটা গা থেকে সিদ্ধির ভারটা এক ধাক্কায় অনেকটা নেমে গেল। অফিস! পুজো খতম! একাদশী ইজ হিয়ার! অফিস! অফিস! অফিস! ঢনঢনিয়ার ফাইলের রিকনসিলিয়েশন, বড়সাহেবের চাওয়া গত কোয়ার্টারের রিভিউ স্টেটমেন্ট; একে একে সমস্ত পড়ে থাকা কাজ মাথায় হুড়মুড় করে এসে বুকের ভিতরের ঝিমঝিমে সিদ্ধি তন্দ্রাটা ঘুচিয়ে দিল। বমিবমি ভাব অবশ্য কম হল না। ছয় গেলাস সিদ্ধি, তারপর চার পিস পান্তুয়া, তারপর দলের মেহেন্দির গানের তালে ধুনুচি নাচ। একটানা। ঠাকুর না ভাসানো পর্যন্ত। সেই থেকে বুকের ভিতরটা এমন হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড় হয়ে গ