Skip to main content

Posts

Showing posts from April, 2012

মশারির ব্যাপার

মশা দূর করবার প্রযুক্তি যতই এগিয়ে আসুক , কোনও টোটকাই নাইলনের ভালোবাসা কে টেক্কা দিতে পারবে না । মশারি । কী অনাবিল , বঙ্গ-গৃহস্থালির সব চেয়ে কমনীয় টুকরো এই মশারি। নীলে , সবুজে , হলুদে , সাদায় মিহি-মসৃন জাদু । এক সময় প্রতিটি বাঙালি খাটের স্নেহ-অংশ ছিলো স্ট্যান্ড বা খুঁটি ; মশারি টাঙ্গাবার জন্যে। সেই স্ট্যান্ড এই মশা-মারা লিকুইডেটরের যুগে প্রায় অবলুপ্ত । অথবা ঘরের বিশেষ প্রান্তের বিশেষ পেরেকটিতে পৌছবার জন্যে মশারির কোণে ঝুলতো বিশেষ মাপ বিশিষ্ট দড়ি (ক্ষেত্র বিশেষে পায়জামার দড়িও) । গৃহস্থের গার্হস্থ - Efficiency’ র পরিমাপ বুঝতে হলে তার মশারি টাঙ্গানোর ভঙ্গি কতটা অবলীলা-মিশ্রিত , সেটা বুঝে নিলেই চলবে। আমার মত দরকচা মারা আদমি যে মশারি-টাঙ্গাতে গিয়ে লম্বা-চওড়া মাপতেই যে হিমশিম খাবে , সেটাই স্বভাবিক। মশারি ছিলো দাপুটে ঘুমের প্রাথমিক শর্ত ; তাজমহলের সফেদপনা আর বাঙালির রাতের বিছানার ওপর মশারি একই রকম আবশ্যক।পরিপাটি করে পাতা পরিষ্কার কড়কড়ে চাদর , নরম পাতলা বালিশ , পুষ্ট-পাশ-বালিশ বিশিষ্ট এক ঘুমমোহিনী বিছানা। নীল-নাইলনের মশারি টানটান করে টাঙ্গানো , পরিপাটি করে তোশকের নীচ

বিকেল

দুপুর আর সন্ধ্যের মাঝের সময়টুকু বিকেল করে গড়ে তুলতে হয় ।   গ্রীষ্মের হবু সন্ধ্যে। অচানক একদিন জলদি অফিস ফেরত।সাবান-ফেনায় গা ভাসিয়ে সাবেকী স্নান। ধবধবে ফতুয়া-পাজামা। পরিষ্কার ব্যালকনি । বেতের চেয়ারে নরম কুসন । টবে পাতাবাহার , জবা ফুরফুরে। আকাশ সবে হলদে ও লালের মধ্যে হিসেব ভুল করতে শুরু করেছে। নরম হাওয়ার পাউডার মাখা কাঁধের পাশে আলগোছে ঘুর ঘুর । হাতে আদা মেশানো দার্জিলিং-চায়ের অমৃত-পানীয় সৌখিন খয়েরী আল্পনার বর্ডার দেওয়া সফেদ কাপে। রান্না-ঘর থেকে ফুলুরি ভাজার তেল-কড়াইয়ের মনমোহিনী চড়-চড় শব্দ । নিক্কন ও নারী কন্ঠের চাপা সুরে অতুলপ্রসাদি । বিকেল বিকেলের মায়াবী খাতে আপনি বয়ে চলবে। শুধু দিনের বাসী খবরের কাগজটি আওতার মধ্যে না থাকলেই হলো।      

এখন গরম-তখন গরম

গরম বেড়ে চলেছে । পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেজাজের গরমিল । অফিসিও ইঁটের পাঁজা তেতে থাকে বারো মাস , ফাইল-সেলস-হিসেব-পত্তর ছোলাভাজা হয়ে মুখের কোণে ড্যালা পাকিয়ে থাকে সর্বক্ষণ কিন্তু গেলবার উপায় নেই ।কিন্তু প্রাকৃতিক পারদ-থাপ্পড় এই অফিসের উত্তাপকে আরও দু:সহ করে তোলে। মুস্কিল হচ্ছে সেই বয়সটা নেই যে বয়সে বোশেখের দুপুরের রোদ কোন বিপন্নতা ছিল না , বরং গরমের ছুটির দুপুরের ক্রিকেটের আবেদন ছিল আরও অনেক বেশি ক্ষিপ্র ।  অনেক ভেবে দেখলাম , গরমের নির্মমতা কিন্তু ছেলেবেলায় কখনো মালুম হয় নি। অথচ সে সময় ঠান্ডা অফিস ঘরের বদলে ছিলো ঘট-ঘট শব্দে ফ্যান ঘোরা ক্লাসঘর , মোটরগাড়ির আমুদে ছায়ার বদলে ছিলো সাইকেল , ফ্রিজ-ঠান্ডা জলের বদলে ছিলো মেটে-কূঁজোর জল ; যাবতীয় গরম-বিরোধী-উপাদান সত্বেও , বোশেখ কে এখন এত প্রচন্ড মনে হয় যে বলার নয় । আমার সহকর্মীর ভাষায় , দুপুরে রাস্তায় পা রাখলে মনে হয় চল্লিশ লিটার থাম্স-আপ কিনে ড্রামে ভরে , নিজেই সেই ড্রামে উদোম হয়ে ঝাঁপ দিয়ে তুফানি করি । অথচ ছেলেবেলায় মা ’ র বারণ অগ্রাহ্য করে দুপুর রোদে মাঠে ছুটে গিয়েছি ।এখন  ভাবলে মনে হয় পাগলামি । খেলা শেষে বিকেলে ঘণ্টী-

চেনা দু:খ - চেনা সুখ

উত্তর কোলকাতার এঁদো গলি । পরিচিত বাঁক । চায়ের দোকান । পুরনো এসবেসটাস আর দরমায় বাঁধা ছোট্ট একটু দোকান । মেসের গা-ঘেঁষা । বছর কুড়ির এক মেদিনীপুরের যুবক ও তার পিতৃদেব কতৃক পরিচালিত । যুবকের নাম অমিত , আমরাও বলতাম অমিতের চায়ের দোকান । দোকানের আসবাব সর্বস্ব বলতে একটি উনুন , তিনটি বিস্কুটের বয়াম (লেড়ো , নোনতা ও মিষ্টি ধরন সমৃদ্ধ) , কাঁচের এক গুচ্ছ চায়ের গেলাস , সসপ্যান-কেটলি সমৃদ্ধ সামান্য বসন-পত্র , এবং রাস্তার ধারে ফেলে রাখা একটা সরু বেঞ্চি । চা ছাড়াও সেখানে জুটতো ডিম-পাউরুটি এবং পাড়াতুতো আড্ডা-সমূহ। ওই বেঞ্চিতে বসে চায়ের চুমুক ছিলো আমাদের মেসিও সান্ধ্য-প্রদীপ জ্বালানো। দোকান খোলা থাকতো রাত এগারোটা পর্যন্ত । অতএব অসময়ে চুমুকও যে জুটতো না তা নয় । এমনি এক শীতের রাত । মেসের গুমোট ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম চা ’ য়ের অজুহাতে। তখন রাত সাড়ে দশ । রাতের খাওয়া হয়ে গ্যাছে । অমিতের দোকান প্রায় খালি। বেঞ্চিতে একাই বসলাম । মাঝ-ডিসেম্বরের রাত্রি। গলিতে কোলকাতার ধোয়া-ধুলো মেশা কুয়াশা , সমস্তটা আবছা।গলির ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলো দৃষ্টি আরও গুলিয়ে দেয়। অমিতের বাবার গলার গামছাটা বছরের এই

লুচি-জলখাবার' কথা

প্রতিটি লুচির সঙ্গে আমি উর্বর থেকে উর্বরতর হয়ে চলি। বেগুনভাজার প্রতিটি কামড়ের ফলে আমার রন্ধ্রে জড়ো হয় স্নেহ-উল্লাস । আলু ভাজা যে মুহূর্তে জিভ ছুয়ে যায় সে মুহূর্তে আমি খুঁজে পাই দিন খাই-নির্ভরতার স্পর্শ। ধবধবে , ময়দায় প্রস্তুত , বর্তুল অতি-দৈবিক সৃষ্টি এই লুচি , কখনো গোল বেগুন ভাজার খোবলানো হৃদয় , কখনো মিহি আলু-ভাজার সাথে নিবিষ্ট হয়ে ; মুখের ভিতরে লালা-মিশ্রিত হয়ে স্বর্গীয় মণ্ডে পরিণত হয়। সেই প্রাণাধিক লুচি-আলু-বেগুন মণ্ড গলা বেয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় উদরে নামে বটে , কিন্তু রসিক মাত্রই জানেন যে লুচির জাগতিক অস্তিত্বটুকু উদর-মুখী হলেও ; লুচির পরমাত্মা নেমে আসে মানব হৃদয়ে। স্নায়ু এরপর সড়গড় হয়ে ওঠে , মানসপটে ভেসে ওঠে জিহ্বা-প্রেরিত সূর্যদয় । নোনতা-ঝালের তৈল স্পর্শ ঝেড়ে লুচি-খন্ড স্বল্প-মিষ্ট পায়েসে গা-ভাসিয়ে খোঁজে উন্মেষ । পবিত্রতা পায় এক অতি সাধারণ নাগরিক প্রাত:রাশ। এরপর জিলিপির সহজ কামড়ে নির্মল ভালোবাসায় স্তিমিত হয়ে আসে সকালের ক্ষুধা। সুস্বাগতম দিন ও দৈনিক যুদ্ধগুলি। 

বঙ্গ-হিন্দী

বঙ্গ হিন্দির মত সুমিষ্ট চাবুক ভূ-ভারতে বিরল। এক দিন কোলকাতায় কাটিয়ে এলাম। হৃদয়-বদ্ধ করে আনলাম কিছু আণবিক বঙ্গ-হিন্দির টুকরো ; বাস-ট্রাম-ফুটপাথ-অফিস ; যাবতীয় উত্‍স হতে। যত্ন করে টুকে রাখলাম ব্লগে । ভাষা-সোনা এক্কেবারে! -“ বেয়ারা , তুমকো কতবার বলা হ্যায় চায়ের কাপ কানায় কানায় ভরকে চা নাহি দেনে কো! চলকে টেবিল মে পরকে গন্দা কর দেতা হে”   -“সর্দারজি , কেতনা দিন সে ট্যাক্সি চালাতা হ্যায় তুম ?” -“আরে লাখোটিয়াজি , এই ফোনে আওয়াজ কাট-কাট জাতা হ্যায়!আমি রাখতা হ্যায় , আপ রিটার্ণ কল কিজিয়ে” -“লাড্ডু হোগা তা মোতিচুর , জার্নি হোগা তো বহুদূর”

যেমন-তেমন

আঁকশি অতি দাপুটে একটি যন্ত্র । নীল- কালির দোয়াত থেকে ড্রপারে করে ফাউন্টেন পেনে রঙ চুষে নেওয়া , সবচেয়ে সাবলীল নষ্টালজিয়া । আয়নায় দেখে ডান-দিক বাঁ-দিক গুলিয়ে ফ্যালার হিসেব করবার মত ফুর্তি বিরল । সিনেমার শব্দ বন্ধ করে দিয়ে চালিয়ে , শুধু সাব-টাইটেল পড়ে নিজের মনে শব্দ গুছিয়ে নেওয়া এক অতি উত্তেজক খেলা । শাল পাতার ফাঁক থেকে খুঁটে আনা ডাল মাখা ভাত অপূর্ব সুস্বাদু । স্কুল-প্রেমিকার ক্লাসে ফেলে যাওয়া ক্লাস-ডাইরীর পাতার ঘ্রাণ বুক ভরে নেওয়ার উত্তেজনা প্রশ্নাতীত। অফিসের টেবিলে বসে পাশের টেবিলে খবরের কাগজের খস-খস ’ য়ের মত দাবীদার ফাঁকির ডাক আর হয় না। চায়ের কাপে বৃষ্টির ফোঁটার মত বিকেলের আলস্যকে আর কেউই ডাকতে পারে না।“মা আসছি”য়ের চেয়ে জমাট প্রতিশ্রুতি আর কীই বা আছে। হাসিমাখা-অশ্লীলতা বিহীন সমালোচোনা , হাসি ছুঁড়ে ভাসিয়ে দিতে অক্ষম শাসক-গোষ্ঠীর চেয়ে উঁচু তাঁবু আর কোনও সার্কাসের নেই।   

ঘুম-বাজি

“সাবেকী ঘুম হলো গিয়ে হালদারদের পুকুরের চার কিলোর রুই বুঝলি পচা , সাবধানে খেলিয়ে বালিশের ডাঙ্গায় তুলে ফেলতে হয় ” এই বলে ভোম্বলদা চ্যবনপ্রাশের চামচটা মুখে পুরলেন । ভোম্বলদা আমার দূরসম্পর্কের পিসতুতো দাদা । পাঁচ বছর পর আমাদের বাড়িতে এসেছে ন । দাদা বলছি তবে বয়েসে আমার থেকে বেশ বড় , প্রায় চল্লিশ । বিয়ে-থা করেননি , বর্ধমানের গলসিতে বাস এবং সেখানেই আলুর পাইকারী ব্যবসাদার ভোম্বলদা । রাত্রের খাওয়া-দাওয়া সেরে আড্ডা চলছিলো । সেখানেই ভোম্বলদা বাতলে দিচ্ছিলেন “ঘুমাইবার সঠিক পদ্ধতি” । ভোম্বলদার জবানীতেই টুকে দিলাম বাকিটা: “শরীর-মনে ঘুমের মালিশ ছড়িয়ে দেওয়াটা যতটা বিজ্ঞান , ততটাই শিল্প । ঘুম ঠিক কোন মুহূর্তে গ্রীপ করতে হবে , ঠিক কতক্ষণ জুড়ে ঘুমোতে হবে , এ সবই ভারী গুরুত্বপূর্ণ। মোটের ওপর রাত্রে ঘুমের প্ল্যানিঙ্গ করতে হবে ৬ থেকে আট ঘন্টার মধ্যে। নিজের শরীর কে জরিপ করে জেনে নিতে হবে যে কতক্ষনের ঘুম দেহের জন্যে পর্যাপ্ত । তবে ৬ ঘন্টার কমে ভাব যায় না , আট ঘন্টার বেশি ঘুমলে আলিস্যি আস্তে বাধ্য । ঘুমোতে কখন যাবি ? সেটাও ব্যক্তি বিশেষে নির্ভর করবে । তবে কিছুতেই রাতের খাওয়ার ১ ঘন্টা

ম্যাওরামের যৌবনলাভ

(বিজ্ঞাপনের যুগ , Bongpen’ ও পিছিয়ে নেই । এটি একটি বিশেষ বিজ্ঞাপন-মূলক পোস্ট) ম্যাওরামের বেড়ালের বয়েস হয়েছে যথেষ্ট । সে কালের জাঁক আর নেই । তুরুক-তুরুক লাফিয়ে আর চলতে পারে না । হুলো মহলে আর সে ইজ্জত নেই , মেনি মহলে সেই আগের দেমাক নেই । নখ নরম হয়ে এসেছে , ইঁদুর ধরতে গেলে হাঁপ উঠে যায় । শরীরেও আর আগের গত্তি নেই। ম্যাওরামের ভারী দু:খ । দু:খ সইতে না পেরে ম্যাওরাম চললে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে সমুদ্দুরে পড়ে এ বীতশ্রদ্ধ জীবন বাদ দিতে। ম্যাওরাম যেই না পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিতে যাবে অমনি তার সামনে ভেসে উঠলেন বিল্লিশ্বর , সেই প্রবাদপ্রতিম দেবতা। -“করিস কী ব্যাটা ? রোককে!” -“না বিল্লিশ্বর , এ বৃদ্ধ জীবনে না আছে ইজ্জত না আছে ইঁদুর , আমায় ঝাঁপ দিতে দিন” -“এক ঝাঁপে কী হবে রে নাদান বিল্লি ? তোর যে নয়টি জীবন ? একটি ঝাঁপে কী হবে ?” -“তাই তো , কিন্তু বিল্লিশ্বর! একবারে নয়টি মরণ ঝাঁপ কিভাবে দি ? কী উপায় ?” -“উপায় নেই বাবুসোনা , আত্মহত্যা বিড়ালের ভাগ্যে নেই” -“তবে আমি কী করি প্রভু ? এ যে বড় বিটকেল জীবন” _ “সমাধান আছে বত্‍স , এই শিশিটা নাও” বিল্লিশ্বর কোঁচড় থেকে