Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2016

ক্যাপ্টেন ও খোকা

- খোকা। - উম। - তোমার জন্য কী এনেছি দেখো। - উম। - দেখবে না? - না। - এ'দিকে দেখই না একবার। - কই। কী এনেছ? - গুড বয়। এই দেখ। ইয়াব্বড় লাল এরোপ্লেন। এ'টা এই রিমোট দিয়ে ওড়ানো যায়। - উম। - তুমি নেবে না? - মা বারণ করে। কারুর থেকে কিছু নিতে। - আমি কিন্তু তোমার মাকে বলে এসেছি। - থ্যাঙ্ক ইউ। - তোমার ভালো লেগেছে? - হুঁ। - এ'টা তোমার টেডি খোকা? - ও টেডি নয়। ওর নাম গুবলু। আর ওর পাশে...। - ওই মিকি মাউস? - ও মিকি নয়। ওর নাম অভ্র। আমার দেওয়া নাম। - বাহ। দারুণ নাম তো। - তোমার নাম কী? - আমি? আমি ক্যাপ্টেন রয়। - তুমিই...। - হুঁ। তোমায় কে বলেছে? - মা। মা আমায় সব বলে। - তোমার মা খুব ভালো। - মা আমায় আইস্ক্রিম খেতে দেয়না। - ওহ। তোমার আইসক্রিম খুব ভালো লাগে? - বাটার স্কচ। বাবা আমায় খেতে দিত। - খোকা। - আমার বাবা খারাপ লোক ছিল? - না খোকা। - তুমি খারাপ লোক? - সরি। - সবাই বাবাকে খারাপ বলে। - মা কী বলে? - মা বলে বাবারা ভালো হয়। - তোমার বাবা খুউব ভালো ছিলেন। - বাবা আইসক্রিম খেতে দিত। বইতে মলাট দিত। আমায় সিন্ড্রেলার গল্প বলত। - বাবা গল্প বলত? - সিন্ড্রেলা, পিনোকিও

সঞ্জীববাবু আর ভূত

সন্ধ্যে ৬টা ১০। ড্রয়ার খুলে কবিতার ডায়েরীটা বের করলেন সঞ্জীববাবু।     রাত ১টা ১০। গঙ্গার ঘাটে পৌঁছে পকেট থেকে রিভলভার বের করে হাতের মুঠোয় ধরে সামান্য আশ্বস্ত বোধ করলেন গোকুল চৌধুরী।     রাত ১টা ১৭। চার নম্বর পাতা ছিঁড়ে চার নম্বর নৌকোটা বানিয়ে খানিক জিরিয়ে নিলেন সঞ্জীববাবু।     রাত ১টা ৪২। রাতের এ দিকটায় বাতাসের ছ্যাঁতছ্যাঁতে শীতটা বাড়ে, গায়ের আলোয়ানটা শক্ত করে জড়িয়ে পায়চারীর গতি বাড়ালেন গোকুল চৌধুরী।     রাত ১টা ৫৭। ডায়েরীটা পকেটে পুরে নিশ্চুপে ছাতের পাইপ বেয়ে বাড়ির পিছনের উঠোনে নেমে এলেন সঞ্জীব হালদার।     রাত ২টো ১২। দূর থেকে হ্যারিকেনের আলোর দুলুনি চোখে পড়তেই গোকুলবাবুর হাতটা আপনা থেকে চলে গেল বাঁ পকেটে রাখা রিভলভারের বাটে।     রাত ২টো ১৭। "ডায়েরীটা কই? একদম ওপর চালাকি নয়"।     রাত ২টো ২২। গুলিটা লেগেছে পায়ে, শিশিরভেজা ঘাস কাদায় লুটোপুটি যাচ্ছিলেন সঞ্জীববাবু, তাঁর কানে গুড়ুম গুড়ুম শব্দে শুধু শোনা যাচ্ছিল "ওই চারটে কবিতা কই? কই ওই চারটে কবিতা?"।     রাত ২টো ৩৫, ১২ সেকেন্ড।   "চারটে কবিতা...চারটে কবিতা...ভেসে গেছে..."। "সঞ্জীববাবু! আপনি কবি নন, ও চা

তানসেন ও আউরাঙ্গজেব

"পেয়ার মুঝসে যো কিয়া তুমনে তো কেয়া পাওগি"র সুরে জানপ্রাণ লড়িয়ে মোড়া আলো করে বসেছিলেন মিয়াঁ তানসেন। তার স্যান্ডো গেঞ্জিতে ট্যাংরা টেস্ট করা ঝোলের ছিটে। তার পায়জামা আল্ট্রা ঢলঢলে। তানসেনের কোলে আমতেল দিয়ে মাখা মুড়ির বাটি। তানসেনের গলায় দরদ; "মেরি হালাত কি আঁধি মে বিখর যাওগিইইই...ইইই"। "ইইইশ, ছ্যাহ্"! মুড়ি বাটি চলকে ওঠে, তানসেনের সুর কেঁপে যায় ব্যালকনি কাঁপানো হুঙ্কারে। তানবাবুর গাইবার কথা ছিল; "খোয়াব ক্যিউ দেখু উয়ো জিস্পে মে শরমিন্দা হুঁ, ম্যায় যো শরমিন্দা হুঁ, তো অউর তুম ভি শরমাওগিইইই..ইইই"। কিন্তু আউরাঙ্গজেবি ধমক অতি বিষম বস্তু। কথায় কথায় ধ ড় মুণ্ড আলাদা হয়ে যায়, কথায় কথায় বন্দী। কথা ও সুর মিয়াঁর গলার কাছটায় থেবড়ে বসে রইলে, উঁকিঝুঁকি দেওয়ার সাহস করলে না। "এ'টা গান হচ্ছে?", আউরঙ্গজেব তেলে-বেগুনে-কেরোসিনে,  "কর্পোরেশনে বলে কয়ে একটা গান গেয়ে কুকুর তাড়ানোর চাকরী জুটিয়ে নিলেই হয়"! তানসেন অভিমানী।  মুড়ি বিস্বাদ হয়ে এলো, সাউথ ফেসিং ব্যালকনিটাকে মন হলে অফিসটাইমের বজবজ লোকালের ভেন্ডর কম্পার্টমেন্ট। কিন্তু তানবাবু পান্না

ভাবনা

- ভাবুন...। - ভাবব? - ভাববেন না? - ভাবান। - ভাবুন..আপনি মারা গেছেন। - ভাগ। - ভাগছেন কোথায়? শুনুন। - ভাগব না। বেশ। বলুন। - ভাবুন আপনি মারা গেছেন। - ভাবলাম। - ভাবুন আপনার চারিদিকে একটা হালকা নীলা আলো। - ভাবলাম। - ভাবুন আপনার কানে গুনগুন করছেন পান্নালাল। - ভাবব? - ভাববেন। অবশ্যই। যেথা আছে শুধু ভালোবাসাবাসি সেথা যেতে প্রাণ চায় মা। - ভেবে চললাম। বেশ। সকলই ফুরায়ে যায় মা। - ভাবুন আরও ভাবুন। চারিদিকে ছাতিমের সুবাস। চোখে নীল ঝিমিঝিম ভাব। কানের মেঝেতে মাদুর পেতে পান্নালাল হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছেন। অনেক কেঁদেছি, কাঁদিতে পারি না। - ভাবনার ভার বাড়ছে। বুক ফেটে ভেঙে যায় মা। - ভাবুন আচমকা সেই নীল আলোর ঝিমুনি কাটিয়ে তাঁকে দেখা গেলো। - ভাবায় ধন্ধ। তিনি? - ভাবুন। নীল আঁচলের খসখস। ছোট কালো টিপ। সরু গোল ফ্রেমের চশমা। তাঁর বাঁ হাতের কবজিতে হাতঘড়ি মিনিট পাঁচেক এগিয়ে। - ভাবনা স্পষ্ট হল। - ভেবে চলুন। - ভেবে চললাম। - ভাবনা ভেদ করে তিনি আপনার পাশে এসে দাঁড়ালেন, তাঁর নাকছাবিতে একটা খুনে ব্যাপার ছিল। - ভাবনায়। ভাবনায়। - ভাবনায় তিনি এসে দাঁড়াতেই কানের মেঝে থেকে পান্নলালবাবু উঠে চলে গেলেন। হা

গোকুলবাবুর পুজো

পুজো এলেই গোকুলবাবুর নার্ভাসনেসটা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। তিন দাগ ওষুধ বাড়িয়েও হাঁটুর ঠোকাঠুকি বা হাতের কাঁপুনি কমানো যায় না। পাড়ার চাঁদা, পারিবারিক জামাকাপড় কেনার ধুম, রাস্তায় বাঁশ, চারদিকে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানের হিড়িক; সবমিলে পুজোর হপ্তাখানেক আগে থেকেই গোকুলবাবুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পুজো এলেই বুকের ধড়ফড়ানিতে মরে যেতে ইচ্ছে করে গোকুলবাবুর। ** গিন্নীর পাহাড় পছন্দ। মেয়ের সমুদ্র। ছেলের পছন্দ কলকাতার প্যান্ডেল-হপিং আর রেঁস্তোরার সামনে গিয়ে লাইন দিয়ে "কতদূর আর কতদূর বলো মা" গাওয়া। গোকুলবাবু জানেন দু'জনের চোপা খাওয়ার চেয়ে তিনজনের রাগ হজম করাতে অন্তত পলিটিকাল ঝামেলাটা এড়ানো যায়। তার সাথে খরচও কমে। অতএব পুজোয় বাড়তি অফিসের কাজের জন্য আবেদন করেন গোকুলবাবু। প্রত্যেকবারই পেয়ে যান কিছু না কিছু, কারণ ওভারটাইমের টাকা দিতেই হবে তেমন কোনও দাবী রাখেন না তিনি। ** - এত রাত্রে আপনি অফিসে বসে? - আপনি কে স্যার? - আগে আমার প্রশ্নের জবাব। - কেন দেব? - আপনার পকেটে রিভলভার আছে? - না। আপনার কাছে আছে? - থাকতেও পারে। - মানে? - মানে আপনার পকেটে শিওরলি নেই। আমার পকেটে রিভলভার থাকলেও থ

মেজদার রাগ

বিকেল থেকে মেজদাকে নিয়ে হইহইরইরই কাণ্ড। কী ব্যাপার?  মেজদার রাগ কমছে না। কেন রাগ? ব্যাপারটা সে'খানেই। রাগের কারণ কেউ জানে না, মেজদাও না। মোদ্দা কথাটা হল মেজদার রাগ কিছুতেই কমছে না। ওর চোখমুখ আগুনে লাল, মাথার চুল এতটাই উষ্কখুষ্ক যে হাজার চিরুনির র‍্যাফ নামিয়েও বাগে আনা যাবে না। মেজদা শুধু দরদর করে ঘেমে চলেছে আর হুড়মুড় করে পায়াচারী করে চলেছে। কণ্ঠস্বর মেজাজের উত্তাপে জড়ানো, কাঁপা কাঁপা। বাবার হোমিওপ্যাথি, বড়দাদুর নার্ভের ওষুধ, মায়ের তৈরি লেবু সরবত, বড়দার আবৃত্তি, এমনি তুনুপিসির মাথায় বরফ ঘষার আইডিয়াতেও সে ভীমরাগ বশে এলো না। বরং মেজদার পায়চারীর স্পীড উত্তরোত্তর বেড়েই চলল। ওদিকে প্রেশার বোধ হয় সিলিং ছাড়িয়ে ছাদে গিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। মেজদার অজানা ওজনদার রাগের খবর পাড়াময় হতে সময় লাগেনি, ঘনঘন ওকে দেখতে লোক আসছে। বাবলামামা পরের বার ইলেকশনে দাঁড়াবে, সে এসে খোঁজখবর নিয়ে গেলো। তিন্নি কলেজে ওঠার পর থেকেই খুব উড়ে বেড়াচ্ছে, সে এসেছিলো মেজদার লাগামহীন রাগে চোবানো মুখের পাশে পাউট করা মুখ রেখে ছবি তুলবে বলে। আরও কতজন। সবাই চোখ কপালে তুলে মেজদাকে দেখে যাচ্ছে, আর যে যার মত টোটকা উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে।

সঞ্জীববাবুর বিয়ে

- এ বিয়ে হবে না। - কী বলছেন বাবা? - তুমি বুঝছো না। আমার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হতে পারে না। কাজেই তোমার মুখে এই বাবা ডাকটা শুনলেই মনে হচ্ছে তোমার দু'চোখে  কাসুন্দি ছিটিয়ে দিই। - কিন্তু আমি যে...। - শর্মিষ্ঠাকে ভালোবাসো। ও'ও তোমাকে ভালোবাসে। জানি। - কাজেই দুনিয়ার...। - কোন শক্তিই তোমাদের আলাদা করতে পারবেন না। কপুর হলেও না। জানি। - আমি অব্রাহ্মণ বলে আপনি এমন হাবভাব দেখাচ্ছেন? - আমরা অমন আহাম্মক নই। - সরকারি চাকরী করি না বলে? - ধুর ধুর। চাকরী ইজ চাকরী। - তবে?  ফিনান্সিয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড উইক ভেবেছেন? - তুমি এত বদ? তুমি এইসব ভাবো? - তবে বিয়ে হবে না কেন? - কারণ আমরা এখানকার নই বলে। - বাবা...। - শাট আপ। রাস্কেল। - কাকু... আমরাও এখানকার নই। মানে, আমার দাদু বরিশালের। - না না, বুঝছো না। আমরা এখানকার নই। আমরা এলিয়েন। আমরা হোমোস্যাপিয়েন নই। আমরা মম্ভলুক। - হে হে হে। - ওরে কে আছিস এক বাটি কাসুন্দি আন। - না মানে...আমি সে'ভাবে হাসতে চাইনি। - শর্মিষ্ঠার জন্মের সাড়ে সাত বছর আগে আমরা এখানে চলে আসি। - হে হে হে। - হারামজাদা। - সরি...কিন্তু বাবা...। - তস্য হারামজাদা। -

সেনাপতির বিকেল

সেনাপতি ভালো-না-লাগার বালি খুঁড়ে চোখের জল টেনে আনছিলেন বারবার। তাঁবুর জানলা দিয়ে বিকেলের নরম রোদ এসে গোটা গায়ে ছড়িয়ে পড়ছে। হাওয়ায় ধুলো আর শীত মেশানো শিরশির। সেনাপতির ঠোঁট এবং গালের চামড়া ফেটে একাকার! যুদ্ধের চোট আঘাতে অবশ্য গাল ঠোঁটের চামড়া ফাটার হিসেব রাখাটা হাস্যকর। সেনাপতির ঘাম শুকিয়ে গেছিল। শ্বাসের অস্বাভাবিক দ্রুততাও শান্ত হয়ে এসেছিল। কনুইয়ের আঘাতের যন্ত্রণাটা বৈদ্যের লাগিয়ে দেওয়া প্রলেপে ক্রমশ নুইয়ে আসছিল। সেনাপতির তাঁবুটা শিবিরের একদম শেষপ্রান্তে। যুদ্ধব্যস্ততার শব্দগুলো খুব একটা আসে না এ'দিকে। বেশ খানিকটা নিরিবিলি,যুদ্ধক্ষেত্রের খুনোখুনি হুড়মুড় ছাড়িয়ে এসে এমন নিরিবিলি বড় আরামদায়ক। একটু তন্দ্রাভাব এসেছিল বোধ হয়, সে'টা কাটতেই সেনাপতি টের পেলেন যে আকাশে সন্ধ্যের আবছায়ার রঙ লাগতে শুরু করেছে।  আজকের যুদ্ধে বড় আঘাত হানা গেছে, দুশমনের কবজি মুচড়ে দেওয়া গেছে খানিক। এমন নিশ্চিন্দির বিকেলে মদের পেয়ালা নিয়ে গা এলিয়ে দেওয়াটাই রীতি। কিন্তু আজ কিছুতেই শিয়রের কাছে রাখা সুরাপাত্রের দিকে সেনাপতির মন এগোচ্ছিল না। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এখনও পোশাক পালটানো হয়নি, গায়ে ধুলো,বালি, মাটি আর রক্