Skip to main content

Posts

Showing posts from January, 2015

চোখের ধুলো

- ওই আওয়াজটা কীসের রে বাবু? - কোন আওয়াজ?কোনও আওয়াজ নেই তো। তুমি ঘুমোও এবার। রাত অনেক হয়েছে। - মন দিয়ে শোন, ওই যে। খটখট করে হচ্ছে।  - বলছি তো। কিচ্ছু না। ঘুমোও এবার। জ্বালিও না। - একটু উঠে দেখ না বাবা। বারান্দায় বেড়াল ঢুকলো নাকি! পাখিগুলো রয়েছে যে। নেহাত আমি অন্ধ, নয়তো আমিই... - বেড়ালের আওয়াজ নয়। আমি কিছু কাজ করছি। ঘুমোও। এত রাত্রে ঘ্যানঘ্যান শুনতে ভালো লাগছে না। - তুই তো শুয়ে পড়েছিলি মশারি টাঙিয়ে, আবার কী এমন কাজ মনে পড়লো।

ফেলুদার আশি

ফেলুদা আশিতে এসে কী করতেন? -   লালমোহনবাবু চলে যাওয়ার পর সবুজ অ্যাম্বাস্যাডারটা নিজের বাড়ির গ্যারেজে এনে রেখেছিলেন। গাড়ির গায়ে সামান্য হাত বুলিয়ে আসতেন। আফটার অল, ভদ্রলোক তো আর শিঙ্গাড়ার ঠোঙা নিয়ে দুম করে উদয় হবেন না। -   মগনলালের নম্বর জোগাড় করে একবার ডায়াল করতেন। বৃদ্ধ বেনারসির গোলার মত কণ্ঠস্বর খড়খড়ে হয়ে কোনক্রমে পড়ে আছে জেনে সামান্য অবাক হতেন। এবং বলতেন “নো হার্ড ফিলিংস মগনলালজি, ইউ হ্যাভ বিন আ ট্রু কম্পিটিটর অ্যান্ড কাইন্ড অফ আ ফ্রেন্ড। আ ভেরি স্পেশাল কাইন্ড ইফ আই মে অ্যাড। আপনার বজরাতে করে গঙ্গা ভ্রমণের অফারটা কী এখনও বহাল রয়েছে?” -   নিজের পুরনো ডায়েরিগুলো ঘেঁটে দেখতেন আরেকবার। শেষ পাতার হিজিবিজিগুলোর মর্ম তোপসেও পারেনি কোনদিন উদ্ধার করতে। আসলে ফেলুদার সঙ্গে প্রেম কানেক্ট করতে কারুর কী ভালো লাগতো? কে জানে। নরম ইমেজ নিয়ে ক্রিমিনালদের পিছনে ধাওয়া করা যায় না। -   তোপসে রাত্রেই ফোন করেছিল। ব্যবসা সূত্রে দিল্লীতে সে আছে বছর কুড়ি হল, কিন্তু এই দিনটা সে ভোলে না। জন্মদিনের উপহারও পাঠিয়েছে সে, খান কয়েক বই। আর এক প্যাকেট স্পেশাল ডালমুট। হগ মার্কেটের ডালমুটের সে টেস্ট অবিশ্যি

রাম

রাম সেবার অনেক তপস্যা-টপস্যা করে মহাদেবকে প্রসন্ন করলেন। মহাদেব আবির্ভূত হয়ে বললেন - "কনে আমার কাছে নেই। তবে বর চাইলে দিতে পারি। খিক খিক"। রাম অবাক - "আজ্ঞে?" মহাদেব - "আরে বাজে ঠাট্টা। ফ্যাশনে আসবে। একদিন আসবে। যাক গে। বর চাও ভাই"।  রাম বললেন - "আমি আপনার শক্তির সাথে নিজের ভক্তি মিলিয়ে কিছু করতে চাই "। মহাদেব - "বেশ। তাই হবে। আমরা দু'জনে মিলে একদিন হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধনের গপ্প লিখবো"।

চামচ-অমনিবাস

মারা যাওয়ার পরেই কোথাও একটা যাওয়া দরকার। লাশটা ক্যালক্যাটাতে পড়লেও নিধুবাবু প্রথমে ভাবলেন বৈঁচিতে যাবেন। বাপ-কাকার ভিটের পাশে দিব্যি বাঁশবন, সেখানে কাটাবেন কিছুদিন। তারপর ভাবলেন মধ্যমগ্রাম গেলে কেমন হয়?  মেজোপিসির শ্বশুরবাড়ি সেখানে। সেই ছেলেবেলার পর আর সেখানে যাওয়া হয়নি, পিসেমশায়দের বিশ বিঘে জমির ওপরের আম বাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাবে। তারপর মনে হল পান্ডুয়া ব্যান্ডেল করে তো জীবনটাই কেটে গেল। ভূত হয়ে যদি সামান্য ঘোরাঘুরিই না হল তবে তেমন মারা যাওয়ার মূল্য কোথায়। তাই তিনি সোজা চলে এলেন প্যারিসে। প্যারিসে আইফেল টাওয়ার আছে সে কথা তিনি জানতেন। ফরাসীদের কেতার জবাব নেই; তা সে খাওয়া-দাওয়া, গান-বাজনা, প্রেম-চুমু, সাহিত্য; যে ব্যাপারই হোক না কেন। এটাও অবিশ্যি তার শোনা। তাছাড়া চন্দননগরটাও তো ওদেরই হাতে গড়া শহর। জায়গাটা নিশ্চয়ই মধ্যমগ্রামের চেয়ে কম যাবে না। পছন্দমত গাছপালা ও প্রতিবেশী জুটলে সেখানে কিছুদিন থাকবেন, নয়তো হাতের পাঁচ বৈঁচি তো রইলই। প্যারিসের ঝাঁ চকচকে একটা রাস্তার ওপর নামতেই অঘোরের সঙ্গে দেখা। অঘোর দে,  বারাসাত পোস্টঅফিসে তার সহকেরানী ছিলেন। গত পৌষের আগের পৌষে মারা যান। বাতাসে

দুই ভাগ

"হাওড়া ব্রিজের চুড়োয় উঠুন নীচে তাকান, ঊর্ধ্বে চান - দুটোই মাত্র সম্প্রদায় নির্বোধ আর বুদ্ধিমান।" -শঙ্খ ঘোষ পৃথিবীতে মানুষকে দুই ভাবে ভাগ করা যায়। এক, যাদের পকেটে কলম রয়ে যায় আর কলমের ঢাকনাটা হারিয়ে যায়। দুই। যাদের কাছে কলমের ঢাকনারা রয়ে যায় আর কলমটা হারিয়ে যায়। এক, যারা হঠাৎ বৃষ্টি ভালবাসেন আর দুই, যারা হঠাৎ বৃষ্টিকে ভালো না বাসার ভান করেন। এক, যারা অঙ্কে ভালো আর দুই, যাদের অঙ্ককে ভালো করে চিনিয়ে দেওয়া হয়নি, স্রেফ শেখানো হয়েছে।

চক্র

১। -হ্যালো, কী ব্যাপার...। -হ্যালো...সেন সাহেব...সেন সাহেব...। -কী ব্যাপার সামন্ত, তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? -আগুন সেন সাহেব...আগুন...। -আগুন? কোথায়? -ফ্যাক্টরি জুড়ে...। -কী বলছো...সামন্ত...কী বলছো...ফিনিশ্‌ড স্টক? নতুন মেশিনারি? -সব শেষ সেন সাহেব। সব শেষ। এত কিছু করেও পারলাম না স্যার...পারলাম না...। -কখন লাগলো? দমকল? -আধ ঘণ্টা আগে, কিন্তু এতটাই ছড়িয়ে গেছে যে...আর দমকলের এখনও দেখা নেই! -কী শুনলাম সামন্ত। আমি যে পথে বসে গেলাম। আমার সব শেষ হয়ে গেল...। ২। -বোসবাবু। হ্যালো। আমি সামন্ত।

কলকাতার মার্ফি

সবচেয়ে ছোট আলুর টুকরোটি পড়বে আপনার পাতের বিরিয়ানিতে। তাড়াহুড়োর মাথায় নেওয়া ট্যাক্সিটা গোটা রাস্তা থমকে চলবে ট্রামের পিছনে। কফি হাউসে আপনার টেবিল বাদে সমস্ত টেবিলে ওয়েটারদের নিয়মিত আনাগোনা। গড়িয়াহাট ভরপুর টাটকা ইলিশে। খড়ের গাদা থেকে বেছে নেওয়া ছুঁচের খোঁচার মত বিস্বাদ কোল্ডস্টোরেজের পুরনো মালটি আপনার থলিতে।

জন্মদিনের কলরব

- ভাই নরেন, তোমাকে হ্যাপি বার্থডে বলতে ভুলে গেছি বলে কিছু মনে করলে? - ধুর। আরে ও দুনিয়ার জন্মদিনের কী এই জগতে কোন মূল্য আছে ? ও নিয়ে ভেবো না। - না মানে আমি মুখ্যুসুখ্যু চোর ছ্যাঁচোড় মানুষ ছিলাম। তুমি সাধু। ও পারে থাকলে তো তোমার ধারে কাছেই ঘেঁষতে পারতাম না। এ দুনিয়ায় এসে তুমি যে আমায় বন্ধু বানিয়েছি তাতে আমার যে কী ইয়ে...তবু তোমার জন্মদিনটা যে কী করে ভুলে মেরে দিলাম... - ছাড়ো দেখি ওসব কথা। তামাক সেজেছি। খাবে? - জানো তো ভাই নরেন। বেঁচে থাকতে তামাক, আফিং কিছুই বাদ দিই নি। কিন্তু এ পারে এসে ঠিক করেছি ওসব আসক্তিতে আর কাজ নেই। - আমি কিন্তু ভাই ঢেঁকি, স্বর্গে এসেও স্বভাব পাল্টাতে পারিনি। - ভাই নরেন, একটা কথা বল দেখি! তোমার চেহারায় একটা বেশ চকমকি ভাব দেখতে পারছি আজ। একশো তিপ্পান্ন গুনে গুনে মৌজ করছো বুঝি? অ্যাঁ? - চকমকটা ঠিক ধরেছ গুরু।  মর্ত্যের  জন্মদিন উপলক্ষে আজ একটু ফুর্তি করতে ইচ্ছে হওয়ায় একটা নিয়ম ভেঙেছি। বলতে পারো, একটা বদমায়েশি করে ফেলেছি। তাই আমোদ নিচ্ছি আর কী।  - এ-লোকের নিয়ম ভেঙ্গেছ? - ঠিক। - তুমি ভেঙ্গেছ? - না হলে বলছি কেন।  - তুমি যে দেবতুল্য নরেন! বরপু

প্রফেসর ও রোবট

- এই যে, অমন জড়সড় হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে কেন অনির্বাণ? ভেতরে এসো। - না না, আমি এখানেই ঠিক আছি। - বোঝ। কী ব্যাপার। কোন কারণে রাগ করেছ? - রাগ? করেছি। তবে তোমার ওপর নয়। - আবার কার ওপর রাগ করলে বাবা অনির্বাণ। আরে শোন। আগে ভেতরে তো এসো। - না। - আচ্ছা এসো না। এসো। ঘরে আসলে আজই তোমার স্পাইনের লুব্রিকেটিং অয়েলটা পাল্টে দেব। - সে তুমি অনেকদিন থেকে বলছো। দিচ্ছ না। - আসলে পয়সাকড়ির একটু টান চলছিল কী না। সায়নেটিস্টদের নিয়মিত আয় আর কত বলো। আর রোবট বানানো সহজ, কিন্তু পোষা যে হাতির চেয়েও বেশি ডিফিকাল্ট। তোমার চেয়ে ভালো আর তা কে জানবে। এসো অনির্বাণ ভেতরে এসো। এসো। এসে দ্যাখ দেখি, তোমার সেন্সর কী বলছে আমার এই নতুন কাজগুলোর ব্যাপারে। এই তো। এসো। গুড বয়। - তুমি এত জোর করলে তাই এলাম। - আচ্ছা, কার ওপর এত রাগ তোমার অনির্বাণ? - তুমি ছাড়া আর কে আছে এখানে যার ওপর রাগ করা যায়? - অনিন্দ্য? অনিন্দ্যর ওপর রাগ করেছে। - সে হারামজাদার নাম নিও না আমার সামনে। - ছিঃ, ভকাবুলারি অ্যাবসর্ব করেছ গোটাটা তা ভালো কথা, কিন্তু তা বলে ভাষার এমন কদর্য  ব্যাবহার?

খিস্তি বিন্যাস

খিস্তি বালিতে বাদাম ভাজা নয়। চড়াত করে কেলটে কড়াইয়ের বালিতে ঢেলে দু’-পাঁচ মিনিট নেড়ে ডাঙায় তুলে নিলেই হল। খিস্তিকে খেলাতে হবে। নুনে হলুদে মেখে ফেলে রাখতে হবে এক বেলা। তারপর ডুবো তেলে নরম আঁচে ফেলে খিস্তির রঙ রাঙা করে আনা। ঝাঁঝরির আলতো চাপে খেলিয়ে চলা, তারপর ডাগর হলে গরম গরম পাতে তুলে আনা। খিস্তি পাখি নয় ঘুড়ি, সে নিজে থেকে ডানা মেলে না; সে অন্যের সুতোর টানে ল্যাজ বাগিয়ে ওড়ে। তাকে ওড়াতে জানতে হয়। খিস্তিকে অশ্লীল হতে হবেই এ দিব্য দেবে মধ্যমরা (অধম তারা যারা খিস্তিতে বিশ্বাস রাখেন না)। উত্তমরা খেলবেন পরতে পরতে এবং তারাই  খিস্তি কে নিয়ে যাবেন – “টু দ্য টপ, টু দ্য টপ, টু দ্য টপ”।  যথা? বলি। স্টুপিড নয়। ইস্টুপিড। ইস্টুপিড নয়। ইস্টুপিডের দল। ইস্টুপিডের দল নয়। ইস্টুপিডের দলের হোতা। ইস্টুপিডের দলের হোতা নয়। ইস্টুপিডের দলের হোতার মাথার উকুন। ইস্টুপিডের দলের হোতার মাথার উকুন নয়। ইস্টুপিডের দলের হোতার মাথার উকুনের গায়ের গন্ধ। ইস্টুপিডের দলের হোতার মাথার উকুনের গায়ের গন্ধ নয়। ইস্টুপিডের দলের হোতার মাথার উকুনের গায়ের বোটকা মানুষ মারা গন্ধ।

অমু ও বিকেল

বিকেল বেলা। এই চারটে সোয়া চারটে। ডিসেম্বরের বিকেল, রোদে ওম আছে তেজ নেই। ঝকঝকে আকাশ। ছাদটা বেশ বড়, অনায়াসে সত্তর-আশিজন লোককে বসিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে এমন। ছাদের এক কোণে টাবে প্রচুর পিটুনিয়া। নয় তলার ছাদ, রাস্তার গোলমালের আওয়াজ অল্পই আসে এখানে। ছাদের এক কোণে মাদুর পাতা, মাদুরের ওপরে নীল-সাদা ছাপা বেড কভার আর তার ওপরে একটা পাশবালিশ। পাশবালিশে ঘেঁষা একটা হজমি গুলির শিশি। মাদুরের এক কোণে আনন্দবাজারের শব্দছকওলা পাতাটা আধখোলা, তার ওপর আড়াআড়ি করে রাখা একটা ডট-পেন। তার পাশে একটা ট্রানজিস্টার। অমু পাশবালিশে কনুই রেখে আধশোয়া হয়ে মাদুর জুড়ে ছিল। আধো তন্দ্রা ভারী আরামে রাখে মনটাকে। তার পরনে একটা খয়েরি রঙের কটকি ফতুয়া আর পাজামা। গায়ের ভাগলপুরি চাদরটা খুলে পাশে রাখা। অস্ফুট গুনগুনে আধা পদ্য আধা গানের মত গুনগুন করে চলেছে সে “ সে যে গান শুনিয়েছিল হয়নি সেদিন শোনা, সে গানের পরশ লেগে হৃদয় হল সোনা”। আর থেকে থেকে ঢুলছে। ছোটমামা বলে সিঙ্গেল মল্টের মত নেশা নাকি আর দু’টি নেই। অমুর মনে হয় ছোটমামা কোনদিন শীতের বিকেলে ছাতে আসেননি। পুওর সোল।  এমন সময় ঝনাৎ করে মোবাইল ফোনে বেজে ওঠায় একরাশ নেশা-ভাঙা বিরক্তি নেমে

নিরালাপুর

দু’মাইল হেঁটে এখানে আসতে হয় নিশিকান্তবাবুকে। বাড়ি থেকে বেশ দূরে। বসতি এখানে নেই। রেল লাইন আছে। এক কোণায় একটা পুকুর, শাপলায় ভরা। ঝোপঝাড় আধো জংলা জায়গা। ট্রেন চলাচল বিশেষ নেই এ লাইনে। আপ আর ডাউন মিলে দিনে পাঁচটা লোকাল ট্রেন আসা যাওয়া করে। একটা সিমেন্টে বাঁধানো উঁচু জায়গা মত আছে ডাউন লাইন ঘেঁষে। সেখানে বসতে ভালোবাসেন সত্তর বছরের নিশিকান্ত। গায়ে শাল, গলা কান জড়িয়ে মাফলার, হাতে লাঠি। বাহাত্তর বছর হতে চললো, হাতে লাঠি তো থাকবেই। তবে এ বয়েসেও যে দৈনিক চার মাইল হন্টন চালিয়ে যেতে পারছেন, সেটাই বা কম কী।  এ জায়গাটা বেওয়ারিশ, কেউ তেমন আসা যাওয়া করে না। তাই নিজেই এ জায়গার একটা নাম দিয়ে নিয়েছেন নিশিকান্ত; নিরালাপুর। ঠিক বিকেল চারটে বাজলে নিরালাপুরে এসে পৌঁছন নিশিকান্তবাবু। চারটে বত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যে আপ লাইনে একটা প্যাসেঞ্জার ট্রেন পাস করে। সেটা চলে গেলে উঠে পড়েন নিশিকান্তবাবু। ফ্লাস্কে করে চা নিয়ে আসেন। পকেটে থাকে দু’টো বিস্কুট। কাঁধের ঝোলা থেকে আনন্দবাজার বের করে পড়তে শুরু করেন, খবরের কাগজ বিকেলে পড়ার অভ্যাসটুকু তার বহুদিনের। কাঁধের ঝোলায় থাকে ছোট ট্রানজিস্টার। এ যন্ত্রটা আজ থেকে বারো

সপ্তপদী

কৃষ্ণেন্দু বাইক স্টার্ট দিতেই টের পেলে তার কাঁধ রিনার হাত দু’টো জাপটে ধরেছে। জ্যাকেটের উপর দিয়েও রিনার হাতের উষ্ণতা ছুঁয়ে গেল কৃষ্ণেন্দুকে। সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে মিচকি হাসি অফার করলে কৃষ্ণেন্দু, প্রত্যুত্তরে রিনার উচ্ছল হাসির আলোয় ভেসে গেল সে। প্রেমের গন্ধটা যে এত মিষ্টি সেটা আগে টের পায়নি কৃষ্ণেন্দু । না কি এটা রিনার গায়ের গন্ধ? একটা বুক হালকা করে দেওয়া ভালো লাগা তার মধ্যে। রিনা। ডাকসাইটে রিনা ব্রাউন তার প্রেমিকা। মফঃস্বল ঘেঁষা ফাঁকা রাস্তা, তবু বাইকের গতি মন্থরই রাখলো কৃষ্ণেন্দু। সন্ধ্যে নেমে আসছে দ্রুত, রিনারও ঘরে ফেরার বিশেষ তাড়া, তবু বাইক জোরে ছুটিয়ে সন্ধ্যেটার ওপারে গিয়ে কলকাতার ভিড়ে মিশতে ইচ্ছে করছিল না কৃষ্ণেন্দুর। তার গান গাইতে ইচ্ছে করছিল। তবে দুম করে গান গাওয়ার থেকে কাব্য ছকাটা কী বেশি ভালো হবে? রবীন্দ্রনাথের পর থেকে এ হুজুগটা বাঙালির প্রেমিক যুগলদের মধ্যে বেশ উঠেছে। কাব্যের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে সেখান থেকে বরং গানের দিকে চলে যাওয়া যাবে।

তিন

পাপান গল্প শুনতে ভালোবাসতো। বাবু হয়ে বসে, গালে হাত দিয়ে, হা করে। সবার কাছে সে বসে যেত গল্পের আবদার নিয়ে। বাবার কাছে, মায়ের কাছে, মিমিপিসিমার কাছে, বুবাইদাদার কাছে, দিদানের কাছে, পোষা কুকুর মিতুর কাছে কাছে, মেজকার কাছে। দেখা হওয়া মানেই তাকে গল্প বলতে হবে। না বললেই ছেলের চোখ থেকে টপটপিয়ে জল। গল্প না বলে কোন উপায় থাকতো না কারোর। আর একটা গল্পই বারবার শুনতে চাইতো পাপান, অন্য কোন গল্পে তার মন ভরতো না। সকলের স্বপ্নে এসে সে বায়না ধরতো, “ বল না , সেদিনের পর থেকে তোমরা আমায় স্বপ্নের বাইরে দেখতে পাও না কেন। সেদিনের গল্পটা বল না

চলে যাওয়ার গল্প

-মহারাজ। -হুঁ। -কে। সোমানন্দ? -আজ্ঞে হ্যাঁ। এবার যে যেতে হয়। -পাঁচটা বেজে গেছে? -পৌনে পাঁচ। ছাত্ররা সব বসে রয়েছে। বিশেষ অতিথিও এসে পড়লেন বলে। -যাক। হাইস্কুল শুরু হল তবে। -আপনি মাথায় ছিলেন বলেই...। -কারোর মাথায় চড়ে কিছু হয় না সোমানন্দ। এ আশ্রমে আমার আগে যে সব মহারাজ ছিলেন,তাদের অধ্যবসায়, ঘাম, রক্ত মিশে আছে এখানের প্রতিটি ইটে। নির্মলানন্দ মহারাজের আমলেই এ আশ্রমের প্রাইমারি স্কুলের শুরু। পরমহংসের কৃপায় কাজ এগিয়েছে। আমরা নিমিত্ত।   -তবু। কত ঝড়ঝাপটা গেল, এক সময় তো মানে হচ্ছিল প্রাইমারি স্কুলটাও হয়তো টিকবে না...হাই-স্কুলের ফান্ড তো দূর অস্ত। মনে আছে সেবার সেই কত রকম হুমকি আসতে শুরু হল আশ্রম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য? অথচ আপনাকে সামান্য বিব্রতও কোনদিন কোন মুহূর্তে দেখিনি...। -বিব্রত কার জন্য সোমানন্দ? কিসের জন্য? হাইস্কুল না হলে না হত, দায় পরমহংসের, আমাদের তো নয়। প্রাইমারি স্কুলটাও বন্ধ হলে হত। আশ্রম উঠে গেলে যেত। কত পুকুর বুজে যায় দিনমানে। কিন্তু সোমানন্দ আমাদের একসাথে কাজ করাটা তো মিথ্যে হত না। এই ফুলের মত শিশুগুলোর জন্যে ব্যয় করা মুহূর্ত, দিন, মাস, বছরগুলো তো মিথ্যে হত না।