Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2016

জাগ্রত

মানিব্যাগে টাকার হিসেব কখনও গড়বড় হয়না অনুপমের। পকেটের ভাঁড়ারে আটআনার হেরফেরও তার নজর এড়িয়ে যেতে পারে না।  অতিমাত্রায় হিসেবী বলে তার সামান্য বদনামও রয়েছে। অনুপম অবশ্য গায়ে মাখে না। এ যুগে হিসেবী না হলে পদে পদে ঠকতে হবে। আর ঠকার মধ্যে আর যাই হোক, বুদ্ধিমত্তা নেই। কিন্তু আজ সামান্য গড়বড় দেখা দেওয়ায় মেজাজটা গেল বিগড়ে। বাসের ভাড়া মেটানোর পর মানিব্যাগে থাকা উচিৎ ছিলো একটা পাঁচশো টাকার নোট, তিনটে একশো টাকার নোট, দু'টো পঞ্চাশ টাকার নোট, একটা কুড়ি টাকার নোট আর আটটা দশ টাকার নোট। সাথে তেরো টাকার খুচরো কয়েন। সাকুল্যে থাকার কথা এক হাজার তেরো টাকা। কিন্তু রয়েছে এক হাজার সতেরো টাকা। অর্থাৎ দু'টো দু'টাকার কয়েন বাড়তি। বোঝো! চার টাকা এলো কোথা থেকে? কথা চার টাকা নিয়ে নয়। কথা বেশি কম নিয়েও নয়। কথা হচ্ছে, এ'ভাবে হিসবে গড়বড় হবে কেন? নিজেকে চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছিল অনুপমের। আজ চার টাকা বেশি রয়েছে, কাল চারশো টাকা কম থাকবে অথচ সে টেরটিও পাবে না। ডিনারের পর পড়ার টেবিলে লেটার প্যাড, ডটপেন আর ছোট ক্যালকুলেটর টেনে নিয়ে বসলে সে। এই গড়বড়ের শেষ দেখে ছাড়তে হবেই। ** বিরক্তির সাথে যখন লেটার প্যাড আর ক

বাবুর ফোন

- ঘুমোলি? - না। - ঘুমোবি না? - ঘুম আসছে না। তুই ঘুমোসনি কেন? - এই। ফোন রেখেই শোব। - বাবু! - হুঁ। - আমার কিছু হয়ে গেলে? - কী হবে? - খুব খারাপ কিছু একটা। আমি কী না একা! খোকার কী হবে? - তোর কিছু হচ্ছে না আপাতত। - যদি হয়? - খোকা আমার কাছে থাকবে। - বাহ্‌ রে। তুই কত ব্যস্ত। - খোকা আর আমি কাজ ভাগ করে নেব'খন। - গান শোনাবি? খোকাকে? আমি না থাকলে? - বন্ধু তুমকো ইয়ে গানা সুনায়েগা বিকেলবেলা। - ঘুরতে নিয়ে যাবি? শনিবার বিকেলে? রোব্বার সকালে? খোকা খুব ঘুরতে ভালোবাসে। । - রোব্বারে ভিক্টোরিয়ায় লুচি আলুর দম। পুজোর ছুটিতে দার্জিলিং, গরমের ছুটিতে নৈনিতাল। কভি কভি পুরী। মন খারাপে খড়দার গঙ্গা। - খোকা অঙ্কে কম নম্বর পেলে? - দু'জনে প্যারামাউন্টে গিয়ে দু'পেগ ডাব শরবতে দুঃখ ভুলবো। - খোকার জ্বর হলে ওর বায়নার শেষ থাকে না।  - জলপট্টি আর পান্নালাল। ক্রসিনের বাপ। - খোকার কাজু কিশমিশ পোলাও বড় প্রিয়। - খোকা বেলা দে থেকে পড়বে। পোলাও রেসিপি। লাউড্‌লি। আমি স্যান্ডো গেঞ্জি পাজামায় রান্নাঘর দাপিয়ে বেড়াবো। - বড় চিন্তা রে আমার। খোকার জন্য। সে আমায় ছাড়া ঘুমোতেই চায় না। - তোর শাড়ি দিয়ে কাঁথ

অরিন্দমবাবুর প্রত্যাবর্তন

- অরিন্দমবাবু এখানেই থাকেন কী? - নেমপ্লেটটা দেখেই ডোরবেলটা বাজিয়েছেন আশা করি।  - আপনিই...? - দরকারটা বলুন। - আমি স্বপন চক্রবর্তী। দূর্গাপুর টাইম্‌স থেকে আসছি।  - দূর্গাপুর টাইম্‌স? - তেমন ভাবে সাড়া জাগিয়ে  না হলেও, গত বারো বছর ধরে কিন্তু এ কাগজ নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। এই, এলাকার খবরাখবর নিয়ে। সপ্তাহে দু'দিন। শনি আর বুধ। আমি সেখানেই রিপোর্টিংয়ের কাজ করছি। কিছু কপিও সঙ্গে করে এনেছি।  - তা দূর্গাপুর টাইম্‌স থেকে আমার বাড়িতে লোক পাঠানোর দরকার পড়লো কেন? - আসলে চিতার ওপর থেকে ফিরে আসা মানুষ তো খুব একটা পাওয়া যায় না। দূর্গাপুর কেন, গোটা বর্ধমান জেলাতে গত দশ বছরে আপনার মত মিরাকেল ম্যান কেউ এসেছে বলে মনে তো হয় না।  - এ খবরটা এরই মধ্যে এতটা ছড়িয়ে পড়লো? - রিপোর্টার মানুষ স্যার। এটুকু খবর না রাখলে তো...। তবে দুম করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিয়ে চলে আসাটা আমার অন্যায় হয়েছে। কিন্তু কাইন্ডলি যদি ছোট একটা ইন্টারভিউ দেন এই মিরাকেলটার ব্যাপারে...। - ইন্টারভিউ?  - আমরা চাই আপনার এই মিরাকুলাস কামব্যাকটাকে একটু তুলে ধরতে। ক্যালক্যাটা বেস্‌ড মিডিয়া হাউসগুলো তো বেঙ্গলকে প্রোজেক্ট করবে ন

মনোময় মিত্তিরের টার্গেট

বালি, রাতের শীতলতায় নরম বালি। ঢেউ ঝাপটে পড়ছে; একটানা। যেমনটা নিয়ম। মাঝে মাঝেই কয়েকটা ঢেউয়ের বাড়তি দাপট ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বিমলবাবুর পাজামার নিচের দিকটা। পায়ের পাতা ভিজে যাওয়াটা মন্দ লাগছিল না। দু'হাত ভাঁজ হয়ে মাথার নিচের বালিশ হয়েছে। আকাশ কালোয় কালোয় বুকে চেপে বসছিল ক্রমশ, কানে আছড়ে পড়ছিল বঙ্গোপসাগর। পুরী শহরটা এ প্রান্তে এসে  স্তিমিত হয়ে পড়ে। এখানে বিমলবাবুর চিত হয়ে শুয়ে থাকাটা দৃষ্টিকটু নয় মোটেও। অল্প ঘোর লাগে চোখে, বুকে।  একটা তারার চিকমিকের অসোয়াস্তিতে চোখ বন্ধ করেন বিমলবাবু।  খানিকক্ষণ আগে যে খিদে-ভাবটা মাথাচাড়া দিচ্ছিল সে'টাকে দাবিয়ে দেওয়া গেছে। মানি ব্যাগে সাতাশটাকা রয়েছে, দিব্যি রুটি সবজী হয়ে যেতে পারে। তবে হলেই তো হতে দেওয়া যায় না। অবিশ্যি এমার্জেন্সির জন্য ঝোলানো সাইডব্যাগে দু'টো বিস্কুটের প্যাকেট আর আধ বোতল জল রয়েছে।  পকেট হাতড়ে বিড়ি বের করে আনেন বিমলবাবু। সমুদ্রের হাওয়ার ঝাপটা বাঁচিয়ে বিড়িটা ধরল চার নম্বর দেশলাইরে কাঠিতে। বিড়ি জাতে কড়া কিন্তু চুরুট মাফিক শুধু ফুসফুস পলিউট না করে বুকের আনাচেকানাচে কিছুক্ষণ অন্তত ঘোরাফেরা করে।  পাজামাটা হাঁটু অবধ

ওয়ান ফর দ্য রোড

- ওয়েটার, হুইস্কি লাও। - সোডা ওয়াটার সাব? - কাঁহেকা সোডা? কাঁহেকা ওয়াটার? হামকো পাতি বাঙ্গালি সমঝা হ্যায়? বারাফ লাও..বারাফ! - সাথ মে কুছ স্ন্যাকস মঙ্গাউ সাব? - স্ন্যাক্স? ইউ মিন চাখনা? - জী সাব। কেয়া লাউ? - লাউ চিংড়ি,  মিলেগা ভাইটি? - জী সাব? - লাউ চিংড়ি। মিলেগা? - নহি সাহাব। চিকেন ফ্রাই লাউ? - যা খুশি দো প্লেট লেকে আনে কা। স্ট্রিক্টলি নন-ভেজ। - জী সাব। - আউর সুনো! - জী সাব? - আপকা মিউজিক সিস্টেম মে ইয়ে কেয়া গানা বজতা? - গজল সাব। পঙ্কজ উদাস। - শ্যামল মিত্তির মাংতা। - জী সাব? - শ্যামল মিত্র চলানেকা, আমি চাঁদেরই সাম্পান যদি পাই...যদি পাই...। ঠিক হ্যায়? - জগজিৎ সিং চলেগা সাব? - জিন্দেগী ধূপ, তুম ঘনা সায়া? - জী সাব। ** - সাব! - ওয়েটার ভায়া। আউর এক পেগ মাঙতা! - বার বন্ধ হো গয়া সাব! - ওহ। - ইয়ে রহা আপকা বিল সাহাব। - কেতনা? - সেভেন্টিন হান্ড্রেড অ্যান্ড থার্টি সাহাব। - এধর দেখো। এধর। - কিধর সাব? - মেরা পাঞ্জাবি কে ডান পকেট। মানিব্যাগ ইধর হ্যায়। নিকালো। - ইয়ে হ্যায় সাব। মানিব্যাগ। - উসমে সে চারটে পাঁচশোওলা নোট নিকালনে কা। - জী সাব। - আউর সুনো! - মানিব্যাগ প

ডস ও দাস

ঘনশ্যাম দাসকে সচরাচর এতটা বিব্রত দেখা যায় না। ঠোঁটের ঝুলন্ত সিগারেটটা ধরাতে ভুলে গেছেন বেমালুম, অকারণে ফিল্টার চিবুতে চিবুতে একটানা পায়চারি করে চলেছেন। দু'এক পশলা বৃষ্টি সবে হয়ে গেছে, বাতাসে মিহি ছ্যাঁতছ্যাঁত; অথচ ঘনশ্যামবাবুর কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সরু গলিটার সান্ধ্য অন্ধকার বা মশাদের মঁমঁকে পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজনটুকুও বোধ করছিলেন না তিনি। ক্রমাগত ঘড়ির দিকে তাকাতে হচ্ছিল; সময় যেন কাটতেই চায়না। বুকের ভিতরে এমন বীভৎস ধুকপুকুনি বোধ হয় গেল বার ইকুয়েডোরেও অনুভূত হয়নি। "ঘন া নাকি?"; এ কণ্ঠস্বর ভুল করার উপায় নেই। চকিয়ে ঘাড় ঘোরাতেই ঘনশ্যামবাবু তাঁকে দেখতে পেলেন। সেই সুপরিচিত ঢলা পাঞ্জাবি আর পাজামা। গায়ে জড়ানো শাল। হুড়মুড় করে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রথমে ঢিপ করে প্রণামটা সেরে নিলেন ঘনশ্যাম। - "কেমন আছেন স্যার?"। - "আমি? দিব্যি। ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে কারও মনে নেই। কিন্তু এখন দেখছি আর কেউ না হোক, জুনিয়র দাস আমায় ভোলেনি"।   - "ঘনশ্যাম বানান ভুলতে পারি স্যার, কিন্তু আপনাকে ভুলি কী করে? আপনি যে ছিলেন এই গ্রামেতেই। আপনার জন্য সামান্য কিছু এনেছি স

আট জন

ব্রজমোহন বিষ মাখানো ছুঁচের ডগাটা অনেক চেষ্টা করেও নিজের হাতে ফুটিয়ে দিতে পারলেন না ব্রজমোহন। এত জ্বালা, এত যন্ত্রণা; তবু আত্মহত্যাটা এখনও করা হয়ে উঠলো না। এবারেও হল না। তবে আত্মহত্যা না হোক, সুইসাইডের একটা শেষ চেষ্টায়; ছুঁচটাকে পাশে সরিয়ে রাখলেন ব্রজমোহন। সান্ত্বনা পুরষ্কারের মত,   মুখ বেয়ে ওঠা শেষ রক্তধারার মত;   উত্তেজিত ব্রজমোহনের ঠোঁটের পাশ দিয়ে পানের পিক গড়িয়ে পড়লো। নির্মল  মাথার ওপরের গাম্বাট মেঘের ড্যালাটার নাম কোনি দিলেন নির্মল চপওলা। মুঠো শক্ত করে বলা "ফাইট কোনি ফাইট" যদি মেঘমল্লারের কাজ করে; এ'টুকুই আশা। পহলাজ একদিন হয়েছে কী, পহলাজবাবু ডাউন কাটোয়া লোকালের জানালার সিট নিজের রুমাল পেতে দখল নিয়েছেন। কিন্তু মুনমুনদেবী রুমাল রিজার্ভেশন পাত্তা না দিয়ে দিব্যি বসে পড়েছেন সে সিটে। তাই দেখে পহলাজবাবু তেলেবেগুনে চিড়বিড় হয়ে চিৎকার করে উঠলেন; "সেন সর, সেন সর, সেন সর, সেন সর"!!!!! অরুন মার্ফি চেনা কবিতায় নতুন শব্দরা আবছায়া খুঁজে নিলো। নতুন কবিতাটা না পড়েই বসে পড়তে হল অরুন মিত্রকে। কারণ ততক্ষণে;

খুচরো দুই

১ - ওহ যৌনমিলন, কী গরমটাই না পড়েছে! - যা বলেছেন। তার ওপর এই যৌনমিলনরত হিউমিডিটি। - আর তার ওপর অফিসের এই প্রেশার আর বসের ট্যান্ট্রামস। উফ, যৌনমিলনরত জারজ সন্তান! - বসের ট্যান্ট্রাম? তুমি পাত্তা দাও নাকি? আমি তো একটা উড়ন্ত যৌনমিলনও দিই না। - কী যে করি! আমার নেচারটাই ও'রকম। পাত্তা না দিয়ে থাকতে পারিনা। আমার জীবনটাকে সম্পূর্ন যৌনসম্ভোগের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২ - ভদকা চলে? - নো। - আবসোলুট রয়েছে কিন্তু। - নো। - হোয়াই? - আলুর উলটো ব্যবহার মদে, সোজা ব্যবহার দমে।

মুমিনের স্বীকারোক্তি

- বাবা।  - কিছু বলবি বাবলু? - ঘুমোওনি যে! - এ'টা বলতে রাত্তির দেড়টায় উঠে এলি? - না। - তাহলে? - তোমার মুমিনকে মনে আছে? - মুমিন? - মুমিন। সেই যে। হৃষীকেশের সেই ছোট্ট ধাবাটার রাঁধুনি। - হৃষীকেশ। সে তো অনেকদিন আগেকার কথা। তাছাড়া সেই ট্রিপেই তো এই বীভৎস রোগ জুটিয়েছিলাম। উফ্‌!  - সতেরো বছর। সে'বার সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি। মুমিন আমাদের একটা চমৎকার রাজমার সবজী রেঁধে খাইয়েছিল, মনে আছে? - অস্পষ্ট, তবে ঠাহর হচ্ছে। বয়স্ক, কাঁধ পর্যন্ত নেমে আসা ধবধবে সাদা চুল। তাই তো? - ঠিক।  - তা। হঠাৎ তাঁর কথা এত রাত্রে? বৌমার সাথে হৃষীকেশ-লছমনঝুলার দিকে যাওয়ার প্ল্যান করছিস?  - না তা নয়।  - তবে?  - মুমিন এসেছিলো।  - এসেছিলো মানে? তোর সাথে অফিসে দেখা হয়েছে? রাস্তায়? চিনতে পেরেছিস ঠিক? - ভুল করছ। তা বলতে চাইনি। মুমিন, এই মাত্র, এইখানে ছিল।  - শাট আপ। ঘুমোতে যা।  - সত্যি। আমি ঘুমোইনি কিন্তু। বই পড়ছিলাম। মিলি বরং ঘুমিয়ে গেছিলো আগেই। আচমকা বেড ল্যাম্পের আবছা আলোয় অন্য দেওয়ালে দেখলাম মুমিন। দাঁড়িয়ে। ফ্যালফ্যালে চোখ। সেই আগের মতই। অবিকল।  - হ্যালুসিনেট করেছিস নাকি? - মনে হল না। স্পষ্ট কথা

মিছে

- তোমার জলে বাতি, তোমার ঘরে সাথী..। - বাবু। - হুঁ? - ঝুঠ। বিলকুল। - আমার তরে রাতি, আমার তরে তারা...। - ব্যথা। গলার কাছে, জানিস বাবু? দলা দলা। - তোমার হাতে রয়, আমার হাতে ক্ষয়...। - পাশে আয়। এসে বস। - এমনি বহে ধারা...টেলিফোন...তোমার আছে ডাঙা, আমার আছে জল। তোমার বসে থাকা, আমার চলাচল। - বসবি না? পাশে? আসতে নেই? যা। মর। থাক টেলিফোনে। ওই পাশে। - মম মন বুঝে দেখো মনে মনে, মনে রেখো করো করুণা...। - বঁধু? কার? বাবু? - পাছে আপনারে রাখিতে না পারি, তাই কাছে কাছে থাকি আপনারই....। - চির জনমের বেদনা? বাবু? - মুখে হেসে যাই..সে আমারও নহে ছলনা...। - একবারের জন্য আসবি? আমায় একটি বারের জন্য দেখে যাবি? - দিনেকেরও দেখা, তিলেকেরও সুখ...। - বাঁচিয়ে যাবি? এই ধর ঘণ্টা দুই? তার বেশি নয়। তুই বসিস মোড়ায়। মুড়ি খাস, চানাচুর। আমি দেখবো, দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাবো। আহ, বাবু! কদ্দিন ঘুমোই না। - পলকেরও পরে থাকে বুক ভরে চিরজনমের বেদনা...। - আসবি না? - বধুঁ। মিছে। - মর তুই। - এমনি বহে ধারা। - মর। - আমার হাতে ক্ষয়....। - তোর মনে ভয়। বাবু, তুই এলি না আর। - মরি? - মরিস। আগে আমি যাই। আসিস তখন। লা

বিপ্লববাবুর শনিবার

শনিবারের হাফ অফিসের শেষে বিপ্লব সমাদ্দারের হাফ শার্টের আড়ালে হাফ ডানা গজায়। অবশ্য তার হাঁটাচলায় অল্প উড়ুউড়ু ভাবটা অফিসপাড়ার ভিড়ের মধ্যে কেউ ইন্টারসেপ্ট করতে পারে না। উইকেন্ডের প্রতি সমীহটা বিপ্লববাবুর মজ্জাগত। বিকেল চারটে নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়েই অজিতের দোকান থেকে একটা গোল্ডফ্লেক। সপ্তাহে ওই একটাই। সামান্য ইনডালজেন্স। বিপ্লববাবু বিশ্বাস করেন যাদের নেশা নেই তাদের উইকেন্ডে ধক্ নেই। বয়স থাকতে বার দু'য়েক টু পাইস এক্সট্রা খরচ করে বারে ঢুঁ মেরেছেন বিপ্লববাবু, তবে মদের নেশা বয়ে হাওড়া থেকে ভিড় কাটোয়া লোকালে ওঠাটা যন্ত্রণাময়। গত সাতবছর ধরে শনি-সিগারেটের আখরি সুখটান ঝেড়ে ফেলে বিপ্লবপবাবু রিমিকিঝিমিকি মেজাজে এসে দাঁড়ান সুখলাল কচৌরিওলার কাছে। সেখানে ছয় পেগ কচুরি সাথে ডাল-সবজি আর জিলিপির চাখনা। হাওড়া স্টেশন থেকে সেই কদ্দিন আগে কেনা হিন্দি গজলের বাংলায় লিরিক্স লেখা বই। সেখানে একশো একটা গজল ছিল, বেশির ভাগই জগজিৎ সিংহ বা পঙ্কজ উদাসের গাওয়া। এদ্দিনে প্রতিটা গানই তাঁর প্রায় মুখস্ত। কচুরির সাথে থাকে বিপ্লববাবুর গুনগুন "হম তো হ্যায় পরদেশ মে, দেশ মে নিকলা হোগা চাঁদ"। এক কচুরি শেষে অন্য কচ

মধুময়বাবুর ছাদ

মাঝরাতে ছাতে উঠে মনেমনে নিজের নাম পালটে নেন মধুময়বাবু। ** স্পেসে  এসে এমন কালোজাদুর পাল্লায় পড়তে হবে সে'টা স্বপ্নেও ভাবেননি গ্যাগারিন। অপার ভ্যাকিউমে নয়নতারা, শ্যাওলা আর রাতের কলকাতার গন্ধ আসছে কোথা থেকে? সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে কিছুতেই রাশিয়ান ভাষায় ভাবতে পারছেন না তিনি, কী সব আগডুম বাগডুম ভাষায় মাথায় চিন্তা ভিড় করছে।  নিজের রাশিয়ান নামটাও কিছুতেই মনে করতে না পেরে নিজের নাম মধুময় রাখলেন গ্যাগারিন। ** নিচ থেকে গিন্নীর আকাশ ছেঁড়া চিৎকারে চিন্তার সুতো কাটে মধুময়বাবুর। "বলি এ কেমন ভীমরতি?  মাঝরাত্তিরে ছাদে পায়চারি!  যত্তসব!  তুমি নিচে নামবে  না টেনে নামাবো"? স্মিত হেসে সাড়া দেন মধুময়বাবু; "গিন্নীকভস্কভি, অত রাগস্কভ কেনোস্কি? আমি নিচেস্কু আসোকভ! এক্ষুনিস্ক! এক্ষুনিস্ক"।

অঘোরবাবুর মানিব্যাগ

বাস থেকে নামতেই অঘোরবাবু টের পেলেন পকেটের মানিব্যাগ হাওয়া। অবশ্য কত টাকাই বা ছিল সে'টায়। ** বুকের ধুকুরপুকুর থামতেই চাইছিল না মৃণালের। প্রথম চেষ্টাতেই কিস্তিমাত। আনন্দে ভেসে যেতে চাইছিলে সে। অবিশ্যি বাসের অফিসটাইমের ভিড় কাজটা সহজ করে দিয়েছিল অনেকটা। দু'পায়ে দাঁড়ানোটাই যেখানে চ্যালেঞ্জ, পাশের লোকের মুখটাই যেখানে দেখা দায়; সে'টাই তো আদর্শ পিকপকেটিও পরিবেশ। বারোর সি বাই দুই রুটেই কাল ফের বেরোবে বলে মনস্থ করলে সে। ** সকালবেলা পাঞ্জাবিটা গায়ে গলাতেই চমকটা টের পেলেন অঘোরবাবু! ডান পকেটে দিব্যি মানিব্যাগের ওজন। তবে কি পকেটমারে ব্যাপারটা উনি ভুল বুঝলেন? তবে কি পকেটে মানিব্যাগটার উপস্থিতি এমন বেমক্কা ভাবে টের পাননি তিনি? তবে  দু'শো বাইশ টাকা ফেরত পেয়ে মন্দ লাগছিল না তার, স্মৃতি বিভ্রমটা বিশেষ গায়ে মাখলেন না অঘোরবাবু। ** - হ্যাঁ রে মিনু, গোটাদিন থাকিস কোথায়? চেহারার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছিস? - কতবার বলেছি বাবা, পার্টির কাজ। দু'পয়সা আসছে তো। - কী যে করিস, তুইই জানিস। - বলছিলাম বাবা,  ভিড় বাসে রোজ যাতায়াত না করে অটো ধরে যেতে পারো তো। - বাড়তি পাঁচটাকা খরচ...। - হোক না,

জয়দ্রথ বধ

অর্জুনের মুখ চুন। ঘনঘন হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন আর কপালের ঘাম মুছছিলেন। ও'দিকে জয়দ্রথ আড়ালে বসে দিব্যি নখ চিবুচ্ছিলেন আর কিশোরভারতী পড়ছিলেন। ও'দিকে আকশে সূর্য নরম হয়ে আসছিল। উপায়ন্তর না দেখে ধুতির পকেট থেকে মোবাইল বের করে এয়ারটেল ফোর-জি'তে ইউটিউব চালালেন কেষ্টকুমার। তাতে উত্তমের লিপে হেমন্ত গুনগুন শুরু করছেন; "সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো..."। অমনি আকাশ থেকে সূর্য হাপিশ। আর তক্ষুনি জয়দ্রথ গঙ্গম মেজাজে অর্জুনের সামনে এসে লাফালাফি করতে শুরু করলেন। জয়দ্রথকে দেখতে পেয়েই ভিডিও পজ্ করলেন কেষ্টা। মিচকি হেসে কবচের মধ্যে থেকে লাক্স কোজি গেঞ্জির ডগা টেনে বের করে তাতে একটা আলতো চুমু খেলেন অর্জুন; "গাণ্ডীব ফাণ্ডীভ যাই থাক। আপনা লাক পহেনকে চলাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ"।