Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2021

সামান্য প্রতিবাদ

- প্রটেস্ট করব ঘোষদা? - এ ছাড়া আর উপায় কী আছে বল৷ - মানে, একটা লিখিত রিকুয়েস্ট দেওয়া যেতেই পারে৷ আমরা সবাই মিলে যদি ম্যানেজমেন্টকে কনসিডার করতে বলি, মানে..একটু নরম সুরে যদি..।  - অনুরোধ কাকুতিমিনতি তো কম করা হয়নি। জানিস তো সব৷  - কিন্তু তাই বলে অফিসের মধ্যে দিনদুপুরে স্লোগান হেঁকে সিন ক্রিয়েট করব?  - সিন ক্রিয়েট? কী বলছিস! তুই খুব ভালোভাবেই জানিস যে বিমলদার চাকরিটা যাওয়াটা উচিৎ হয়নি। অন্যায়টা আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে৷ এর পরেও তুই হেসিটেট করছিস কেন? - তোমার কী ধারণা? অফিসে হইহট্টগোল করলে বিমলদাকে ওরা ফিরিয়ে নেবে? - মে কাইন্ডলি কনসিডার বলে ঝুলোঝুলি করলে লাভ হবে কি? - তাই বলে..। শোনো ঘোষদা, এ'রকম একটা হঠকারি কিছু করলে শেষে আমাদের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে৷ তার চেয়ে বরং আমরা সবাই মিলে যদি কিছু টাকাপয়সা কন্ট্রিবিউট করে বিমলদাকে সাহায্য করি..। - মৃণাল৷ এ'দিককার স্লোগান হইহল্লা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না৷ তুই তোর টেবিলে ফেরত যা৷ ভাবিসনা আমি রেগে বলছি, রিস্কটা আমি জানি, বুঝি। এবং, সে রিস্ক নিতে না চাওয়াটা যে অপরাধ নয় সে'টাও বিশ্বাস করি৷ শুধু একটা রিকুয়েস্ট, তুই অন্তত বিমলদাকে টাকা

বংপেনের জ্যেঠু

- তুমি লেখালিখি করো? - (উজ্জ্বল মুখে) ইয়ে জ্যেঠু, আমার একটা ব্লগ আছে৷ বংপেন৷  - ওহ্৷ আমি ভাবলাম লেখোটেখো বোধ হয়৷ - (পালিশ করা বিনয় বাগিয়ে) ওই ব্লগে সামান্য দু'চার লাইন..। কখনও সখনও..। - ভেরি গুড। ভেরি গুড৷ খুব খুশি হলাম শুনে৷ এ'বার আস্তে আস্তে লেখার চেষ্টা করো৷  - (সামান্য থমকে) ওই, বেসিকালি লেখাই তো৷ ব্লগে৷ ফেসবুকে৷ ট্যুইটারে। - ব্লগ। ফেসবুক। ট্যুইটার। ভেরি গুড। এই তো চাই৷ নীড অফ দ্য আওয়ার যাকে বলে৷ গুড।  -  হ্যাঁ৷ তাতেই সামান্য...অপর্যাপ্ত আর কী...লেখালিখি। - জানি তো৷ দেখেছি৷ অল্প পড়েছি। শোনো, আমি বেশ টেক স্যাভি কিন্তু৷  - ( হাঁফ ছেড়ে) ওহ, হ্যাঁ! সেটাই বলছিলাম৷ - আমিও তাই বলছিলাম৷ এ'বারে তা'হলে লেখালিখির চেষ্টা শুরু করলেই হয়। শেখার কোনও বয়স তো নেই৷ - (এ'বার দমে যেতেই হল) না মানে...ওগুলোও তো..মানে..। - ওগুলো কী?  - (মরিয়া) লেখা৷  - সে কী! - (হাহাকার) লেখা নয়? - সকালবেলা কেউ কাগজ পড়তে চাইলে তুমি তার দিকে চপের তেল চুপচুপে ঠোঙা এগিয়ে দেবে? - (থতমত) সে কী! - এগজ্যাক্টলি। - (মরিয়া) কিন্তু ব্লগে...জ্যেঠু মানে...আফটার অল..প্রসেসটা তো লেখালিখির৷ আউটপুট যাই হোক..। - অফিসের

দ্য মঙ্ক অফ মাসকাবারি

এক সময় মনে হত মনের মত রেস্তোরাঁ বা বইয়ের দোকান খুঁজে পাওয়ার মত আনন্দ আর হয়না৷ পছন্দের রেস্তোরাঁর নির্দিষ্ট একটা টেবিলের প্রতি বাড়তি মায়া তৈরি হত, জুটে যেত খাবারদাবারের অর্ডার নেওয়া পরিচিত হাসিমুখ৷ মাসে বারদুই সে'খানে গিয়ে গা এলিয়ে দিতে পারলেই নিশ্চিন্দি৷ খাবার স্বাদটাই সে'খানে শেষ কথা নয়, সে'খানে জমে উঠত আড্ডা৷ হুড়মুড় থাকত না, সে'খানে মেনুকার্ড ধরে "আজ কী খাব" ভেবে ভেবে হন্যেও হতে হত না; কারণ সমস্তটাই বড্ড পরিচিত৷ অথবা ধরুন, প্রিয় বইয়ের দোকানের ম্যানেজারের সঙ্গে খেজুর জুড়তে পারার অসীম তৃপ্তি; তিনি আমার পছন্দ বুঝবেন, আমার আব্দারগুলো মনে রাখবেন৷ একমাস সে'খানে ঢুঁ না মারলে পরেরবার জিজ্ঞেস করবেন, "অনেকদিন পর যে...ভালো একটা সাজেশন আছে৷ আগে চা'টা আসুক, তারপর বলছি"৷ সে বইয়ের দোকানের ছোট প্লাস্টিকের টুলটাই হচ্ছে থেরাপি চেয়ার৷ সে'টায় বসে একের পর এক নতুন বইয়ের পাতা উলটে যাওয়া; সেলুনে নবরত্ন তেল দিয়ে ঝাড়া আধঘণ্টা মাসাজ করালেও সে স্বস্তি মিলবেনা।  কিন্তু, আজকাল মনে হয় আদত তৃপ্তি রয়েছে একটা মনের মত মাসকাবারির দোকান খুঁজে পাওয়ার মধ্যে৷ বয়স? সম্ভাবনা উড়

সোনার ছেলে

- এ'বার তো একটা সংবর্ধনার ব্যবস্থা করতে হয় হে দত্ত। - অফিসের জুনিয়র ক্যাশিয়ার দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে৷ এশিয়াডে সোনার মেডেল পেয়েছে৷ এ তো আমাদের সকলের জন্য গর্বের ব্যাপার স্যার৷ সংবর্ধনা তো হওয়াই উচিৎ৷ - তা ছোকরা দেশে ফিরছে কবে? - পরশু, সকাল এগারোটায় দমদমে নামছে৷ অফিস থেকে আমিই না হয় ওকে রিসিভ করব..। - রিসিভ করবে? সে কী! অফিস কামাই করে এয়ারপোর্ট যাবে গায়ে হাওয়া লাগাতে?  - না মানে, এত বড় একটা অ্যাচিভমেন্টের পর মনোজ ফিরছে৷ তাই ভাবছিলাম অফিসের তরফ থেকে একটা ফুলের বোকে নিয়ে যদি..। - মনোজ না হয় এশিয়াডে মেডেল পেয়েছে৷ তোমার টেবিলের পেন্ডিং ফাইলগুলো তো কমেনি। অফিসের জরুরী কাজ বাদ দিয়ে  এয়ারপোর্ট ঘুরতে যাওয়ার কোনও দরকার নেই৷  - ওকে স্যর।  - আর ফুলটুল ডায়রেক্টলি ওই সংবর্ধনা সভায় দিলেই হবে। আর সে ব্যাপারটাও চট করে সেরে ফেলতে হবে৷ মনোজ অফিস জয়েন করলেই৷  - ওকে স্যর।  - তুমি বরং কিছু জরুরী ব্যাপার নোট করে নাও৷ সেই সংবর্ধনা সভায় ফুল ছাড়াও একটা মানপত্র চাই। দরকার একটা উপহার; উপহারের বাক্সটা ঢাউস হতে হবে কিন্তু তাই বলে খরচটা যেন ঢাউস না হয় দত্ত। ওই মিক্সার গ্রাইন্ডার গোছের কিছু একটা দিয়ে দিও৷ তেমন কো

শিবু চৌধুরি আর প্রেমের চিঠি

প্রেমের চিঠি পাওয়ার মধ্যে যে কী ফুরফুরে একটা ভালোলাগা মিশে আছে৷ শিবু চৌধুরি সে'টা বিলক্ষণ জানেন৷ একুশ বছরের বিয়েও শিবুবাবুর প্রেমে মরচে ফেলতে পারেনি, তাছাড়া গিন্নীর মধ্যেও এখনও সেই তোলপাড় ব্যাপারটা আছেই৷ সে জন্যেই তো আজও এই হাবুডুবুটুকু টিকে আছে৷ চাকরীর টানে বারোমাস কলকাতার মেসে থাকতে হয় শিবুবাবুকে, কিন্তু তার মন পড়ে থাকে উত্তর বাঙলার এক শহরতলির আঠাশ নম্বর হরিমোহন দত্ত লেনে৷ গিন্নী সে'খানে সেলাই করছে, না খোকার ওপর চেঁচিয়ে হদ্দ হচ্ছে, না দুপুরের দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে পান খিলি করে মুখে পুরছে; এই ভেবেই তাঁর মন সারাক্ষণ উড়ুউড়ু হয়ে থাকে।  হপ্তায় তিনটে চিঠি তিনি লেখেন, গিন্নী লেখেন দু'টো৷ তা'তেই অবশ্য শিবু চৌধুরি নিজেকে ধন্য মনে করেন; তিনি জানেন আদেখলামোটা তাঁর মধ্যেই বেশি৷ শুক্রুবার অফিস থেকে ফিরে মেসের স্যাঁতস্যাঁতে বাথরুমটায় ঢুকে মার্গো সাবান কচলাতে কচলাতে টপ্পা ধরেছিলেন শিবুবাবু৷ টপ্পার সুর স্যাট করে কেটে দিয়ে বাথরুমের মধ্যে রুমমেট অনন্তর হাঁক ভেসে এসেছিল; "চিঠি এসেছে শিবুদা"! মনটা চলকে উঠেছিল শিবুবাবুর৷ এ হপ্তায় দু'টো চিঠির কোটা পেরিয়ে এ'টা তিন নম্বর।

বাটারফ্লাই

ভদ্রলোক আমার হোমিওপ্যাথির চেম্বারে এসে বসতেই খটকা লেগেছিল৷ নাকের নীচে অমন বাটারফ্লাই গোঁফ এমনিতেই এ যুগে বেমানান৷ তার ওপর বিজ্ঞাপনে দেখা ঠিক অবিকল সেই সে'রকম মাথা জোড়া চকচকে টাক, গোলগাল চেহারা, থুতনিতে কাটা দাগ, মোটা কালো ফ্রেমের চশমা৷ ঠিক যেন থিয়েটারের স্টেজে উঠবেন বলে মেকআপ করে বসে আছেন, এমন চেহারা খবরের কাগজের আবছা ছবিতে একবার দেখেও ভুলে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই৷ এমন কী বিজ্ঞাপনের ছবিতে যে পোশাকে তাকে দেখা গেছে, এখনও তাই পরে রয়েছেন; চেক হাফ শার্ট আর ধুতি - ঠিক যেন পঞ্চাশের দশক থেকে কেউ টাইম মেশিনে উড়ে এ যুগে এসে পড়েছে।  নিঃসন্দেহে এ ভদ্রলোক সেই ফেরব্বাজই৷ স্থানীয় পুলিশস্টেশন থেকে গত পরশুর আনন্দবাজারে এ লোকটির ছবিসহ বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছিল যে এই মহৎপ্রাণ নাকি বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন নামে নিজেকে পরিচয় দিয়ে লোকজনকে ঠকিয়ে চলেছেন,  একে দেখলেই যেন থানায় খবর দেওয়া হয়৷ সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো এখনও পর্যন্ত লোকটা কোনও চুরিছিনতাই করেছে বলে খবর নেই৷ তবে ব্যাপারটা অত্যন্ত ফিশি, কোনও বিদেশী গুপ্তচর হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই৷  হোমিপ্যাথি করে আজকাল ক'পয়সাই বা জোটে৷ মাস দুয়েক আগে তাই সেক্র