Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2017

মাধ্যমিক

১ - আরে এই যে, দত্তবাবু যে! আসুন আসুন আসুন। খুব ভালো সময়ে এসেছেন। আজকেই আমরা লঞ্চ করলাম আম রাবড়ি। - রাবড়ি ফর আমজনতা না ম্যাঙ্গো ফ্লেভার? - আজ্ঞে,  ফ্লেভার। ফ্লেভার। - অ। - দেই? কিলো তিনেক? - তিন কিলো? - আড়াই? নাকি রসোগোল্লাতেই স্টিক করবেন? একশো পিস! - আমি পাইকারি মেঠাই কিনব কেন? - আজকের দিনটা আমি খেয়াল রেখেছি। মিষ্টির বাড়তি স্টক মজুত রাখতে সবকটা কর্মচারীকে কাল গোটা রাতের ওভারটাইম দিয়েছি। - দেখুন, আমি এসেছি চারটে গুজিয়ে নিতে। প্রত্যেক শনিবার যেমন নিই, রিক্সাস্ট্যান্ডের শনিমন্দিরের জন্য। প্লাস দশটাকা দক্ষিণা। কিন্তু ব্যপারটা কী বলুন তো? - আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে, সকাল থেকে টার্নওভার ডাবল হয়ে গেছে। আপনার মেজছেলে মন্টুও এ'বারে এগজ্যাম দিয়েছে। তাই না? - মাইরি? - মানে? - মাইরি? আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে? - ইয়ার্কি করছেন স্যার? - শেষ ইয়ার্কি করেছিলাম নাইন্টি ফাইভে। অফিসের বড়হুজুর মাইনে কাটার হুমকি দিয়েছিলেন বুঝতে না পেরে। সে যাক। আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে মানে নিশ্চিন্দি। তবে ইয়ে, মন্টেটা এ'বার মাধ্যমিক দিয়ে দিল? সেই কবে পড়েছিলাম, টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়ে

হিমসাগর

মামাবাড়ির পিছনের দিকে আধ-জংলি বাগান। জামরুল, গন্ধরাজ, টগর, জবা, সুপুরি, কাঁঠাল গাছে ঢাকা। নয়নতারার ঝোপ আর আগাছাও। গরমের দুপুরেও ছায়াছায়া ভালো লাগা। আর সেসে সমস্ত ছাপিয়ে হিমসাগরের গাছ। দু'মরসুমে একবার ফল ধরত গাছে, তখন নুয়ে পড়ত। সে অঞ্চলে হাওয়ার সুবাস পালটে যেত। তখন বেশ ছোট, আমের প্রতি হাভাতেপনায় রাশটানার দরকার ছিল না। আমে কামড় দিয়ে লাফিয়ে উঠেছি "খুউউউব মিষ্টি"! দাদু শিখিয়েছিল "কন্যোসারের ভাষায় বলো। খুব মিষ্টির বদলে বলো সুমিষ্ট"। মাঝেমধ্যেই হনুমানের উপদ্রবে গাছের আম নষ্ট হত, বিশেষত দুপুরের দিকে। ধুপধাপ শব্দ শুনলেই দিদা ছুটে যেত ছড়ি হাতে, পিছুপিছু আমি। ছড়ি ঘুরিয়ে খানিকক্ষণ তম্বি করলেই তারা লেজ গুটিয়ে বা না গুটিয়ে পালাতো। একদিন হয়েছে কী, দিদার ছড়ি আর হুঙ্কারে ডাল ছেড়ে তারা যখন শেষ স্টেশনে লোকাল খালি করার মেজাজে দৌড় লাগালে, তখন এক পুঁচকে এত্তটুকুন খোকাহনু ডাল ফসকে ধপাস। চোট তেমন পায়নি, কারণ পরক্ষণেই মায়ের হাত ধরে দুদ্দাড় ভেগে পড়ায় কোনও ঢিলেমি ছিল না। কিন্তু খোকাহনুর হাতের টসটসে হিমসাগরটা ছিটকে মাটিতে গড়িয়ে গেছিল, দিদা নাকি দেখতে পেরেছিল যে খোকা মায়ের হাত ধরে পালানো

ক্যালক্যাটা বিভ্রাট

- দাদা, আমায় বাঁচান। - ম্যাডাম! কলার না ছাড়লে বাঁচাবো কী করে? - সরি। সরি। খুব লেগেছে? - টুঁটি টনটন করছে। তবে ইট ইজ ওকে। - আমায় বাঁচান প্লীজ। - আমি ইয়ে...আমি তো পুলিশ! ডাক্তার তো নই। - ডাক্তার পারবে না পুলিশদাদা, ডাক্তারের ক্ষমতায় কুলোবে না। ওই হারামজাদার জন্যে আজ আমার এই দশা! - ওই...ওই লোকটা? দাড়িওলা? ওই বাজে মেকআপ করা লোকটা? আমি ভাবলাম আপনারা দু'জনেই থিয়েটার আর্টিস্ট। আপনি হিরোইন। ও ব্যাটা সাইডরোল। - এ'সব থিয়েটার থিয়েটার কী করছেন? বাঁচান আমায়! - ওই রাস্কেলটা আপনাকে টীজ করেছে? দেব লকআপে ঢুকিয়ে দু'ঘা মালটাকে? - ধুস। ও'সব কিছু না। - তাহলে? যাক গে, আমি রিপোর্ট লিখে নিচ্ছি। আগে নাম বলুন আপনার। - সীতা। - সীতা কী? - সীতা। - আই সী। সারনেম ইউজ করেন না। হাজব্যান্ডের নাম? - আজ্ঞে? - স্বামীর নাম? - রামচন্দ্র। - বাহ্। রাজযোটক মাইরি। এ'বারে বলুন। কেসটা কী? - ব্যাপারটা তেমন কিছুই না। এই লোকটা আমায় এই বিশ্রী জায়গায় নিয়ে চলে এসেছে। - আপনার বাড়ি কোথায়? - অযোধ্যা। - ইয়ার্কি হচ্ছে? - জনকরাজার মেয়ে আমি দাদা। গলা কাটলেও মিথ্যে বেরোবে না। - যাহ শালা। অদ্ভুত চাপ।

চ্যাটার্জিবাবুর চিন্তা

- স্যার! মিস্টার চ্যাটার্জি! - আরে! স্টোরবাবু! - চিনতে পেরেছেন তাহলে? - ঝারখণ্ডের ওই অজগাঁয়ে দিনের পর দিন বৌদির আশীর্বাদী মাছের ঝোল খেয়ে বেঁচে থেকেছি, সে ঋণ যে দশ জন্মেও ভোলার নয় স্টোরবাবু। - অমন ভাবে বলবেন না স্যার। একে আপিসের বড়বাবু, তায় আমাদের পেয়িং গেস্ট। আপনার জন্য ও'টুকু করব না? - বৌদিকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন যে সম্পর্কটা শুধু অফিসের বা পেয়িংগেস্টের ছিল না।বেনিয়মে বৌদি আমায় ধমকটমক দিতেও কসুর করতেন না। - সে'সব বিলক্ষণ জানি। - আমার ঘরের অবস্থা তো দেখছেন। আপনাকে যে কোথায় বসতে বলি...। - মাদুরটা পাতাই রয়েছে তো। আমি বরং..। - বেশ। - আপনি চলে আসার পর গিন্নীর মনটা বড় খারাপ হয়ে গেসল। আর আপনিও এমন দুম করে গায়েব হলেন...। - আসলে ব্যাপারটা এমনই...। - কী এমন ব্যাপার মশাই? যার জন্যে বছর চারেক এক্কেবারে ডুব মেরে রইলেন? আর ওইভাবে কেউ গায়েব হয়? আপনার জিনিসপত্র সব এখনও আমাদের ও'খানেই পড়ে রয়েছে। গিন্নীর উপরোধে আপনার বাড়ির ফোন নাম্বারেও কম চেষ্টা করিনি। কিন্তু সে'খান থেকেও সঠিক কোনও খবর পাইনি। - আসলে কাউকেই ঠিক...। আচ্ছা, আমি যে ভাগলপুরে স্কুলমাস্টারি করছি, সে খবর

কবরখানায় ইন্টারভ্যিউ

- মড়া হিসেবে এই কবরখানায় থাকার একটা মস্ত সুবিধে আছে জানেন দত্তবাবু! - সে'টা কী? - আপনার মত গোটা গায়ে ওডোমস মেখে হদ্দ হতে হচ্ছে না। - ফানি! যাক গে। ইন্টারভ্যিউ শুরু করতে পারি ডাক্তার? আমাদের হাতে সময় বেশ কম। অলরেডি আপনি আবছা হতে শুরু করেছেন। - ওহ হ্যাঁ। আজ বড্ড হাওয়া। বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। - এ'বার বলুন। - কী? - কবে ঘটনাটা ঘটল? - কোন ঘটনা? - মরে যাওয়াটা। - ওহ। এই, বছর তিনেক। - নর্মাল? - সুইসাইড। তাই আমায় এত সহজে ট্র‍্যাক করতে পেরেছেন। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব দত্তবাবু? - ক্যুইক। - গোরস্থান ঘুরে বেড়িয়ে এমন ইন্টারভ্যিউ নিয়ে বেড়ানোর মানে কি? - বই লিখছি। একশো ভূতের সাক্ষাতকার। গত বারো বছর ধরে এই টেকনিক ধরে দেশের অন্তত দেড়শো কবরখানা হানা দিয়েছি। এখনও পর্যন্ত বাহান্নটা ইন্টারভ্যিউ নিতে পেরেছি। আপনি ফিফটি থার্ড। - আই সী! - সুইসাইড করলেন কেন? - বহুদিনের অপরাধ বোধ। - আফসোস হয়? - নাহ্। - অপরাধ বোধটা কীসের, জানা যায়? - আই কিল্ড আ চাইল্ড। - কিল্ড? মার্ডার? - চিকিৎসায় গাফিলতি।  সোজাসুজি দায়টা আমারই ছিল। তবে খুব সুচারু ভাবে ব্যাপারটা চেপে দেওয়া হয়েছিল। আমার হোল্ড ক

মার্কেট

- সারকাস্ম কেন মন্দ হতে যাবে মামা? বঙ্কিম সারকাস্ম চালিয়ে বাংলাদেশ তোলপাড় করে ফেললেন। আর আমি সারকাস্টিকালি কিছু বললেই তুমি এত ইয়ে কর কেন? - বঙ্কিম ফেদার টাচে প্রাণে মারতে পারতেন। আর তুই কোদাল দিয়ে ঘামাচি খুঁটিস। মনে রাখিস; সারকাস্ম সঠিক লোকের হাতে চন্দ্রহার, ভুল পাবলিকের হাতে লুঙ্গির গিঁট। - ধ্যের। আধুনিক হিউমর সম্বন্ধে তোমার কোনও আইডয়াই নেই। আমার লেখায় টপাটপ কত লাইক পড়ে জানো? - লাইক? তুই বংপেনে লাইক গুনিস রে? - তা'তে কী? - তুই পার্টটাইম গুড়ের ব্যবসা কর। আজকাল এক্সপোর্ট হচ্ছে শুনেছি। ভালো মার্জিন। - মার্কেট ফীডব্যাককে উড়িয়ে দিচ্ছ মামা? আঁতলামি? - মহামুশকিল রে। এই যে তোর মার্কেট। এই নিয়ে বড় মুশকিল। - মার্কেট কী দোষ করল? - মার্কেট অর্ধেক লোকজনকে বলছে লিটল ম্যাগে কবিতা লিখে নিজের লেখা নিজে পড়তে, অর্ধেক লোককে বলছে ফেসবুকে লাইক গুনতে, আর অপেক্ষায় রয়েছে যে বাকিরা তার পিছনে আসবে। তোর মার্কেট বড় একা রে বাবু। গুড়ের মার্কেটে আয়। আমার কন্ট্যাক্ট আছে। একটু কাজের কাজ অন্তত হবে।

ক্ষুদ্র

মোহন সিংহ চেষ্টা করছিলেন ছোট হওয়ার। বেশ ছোট। ক্ষুদ্র। অ্যালবামের হলদে গ্রুপ ফটোটার এক কোণে বসে থাকা খোকার মত একরত্তি। বড্ড রোগা, জংলি ঘাসের ওপরে একটা স্মাইলি বসিয়ে দিলে যেমনটা হওয়া উচিৎ আর কী। ডেসিমালের মত কুচি। ক্ষুদ্র। 'মোহনকুমার সিংহ" বানানে হোঁচট খাওয়া খোকাটির সর্বস্ব ওই ফিক হাসি। তার সিঁথি,  যত্নে পাট করে আঁচড়ানো। এক খাবলা নারকোল তেল মাথায় রগড়ে, কুয়োর ঠাণ্ডা জলে ঝপাংঝপ স্নান করিয়ে, ঘসঘসিয়ে গামাথা মুছে; তারপর; তারপর যত্ন করে আঁচড়ে দেওয়া। যত্নে, ছায়াছায়া গন্ধে। মোহন সিংহ মনে মনে পতপত করে উড়তে থাকেন, চারদিকে হুহু। আহা, যদি হওয়া যেত; ক্ষুদ্র। ** "ধেড়ে গোবিন্দ হয়েই গোল পাকালি রে মোহন,  তুই ওইটুকুনি হলে দিব্যি তোর চুল পাট করে করে আঁচড়ে দিতাম"। "মায়ের মত, বল"?

র‍্যান্ডম

১ মা মানে গান। ছাপার শাড়ি। সন্ধ্যেবেলার পার্পল প্যাচ; খেলে ফেরা আর পড়তে বসার মাঝের মিনিট চল্লিশটুকু। মা মানে সবার আগে ওইটুকু। স্টিলের গ্লাসে গরম ধোঁয়া ওঠা কম্পল্যান হাতে আমি। ঠাকুমার ঘর থেকে ভেসে আসা ধুনোর গন্ধ। আর হারমোনিয়ামের পাশে মা। ২ বাটিচচ্চড়িতে মা পিয়ারলেস। আর বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোলে। আর আধ ফালি করা হাঁসের ডিমের ঝোলে। আর সজনের চচ্চড়িতে। দিদার হাতের রান্না আরও ভালো ছিল। তবে দিদার বয়ে আনা ঢাকার গন্ধ কিছুটা হলেও এখনও মায়ের হাতে রয়ে গেছে। ওহ্। মায়ের হাতের আলু সেদ্ধ মাখা। ঘি সর্ষের তেল আর শুকনো লঙ্কা ভাজা দিয়ে। স্বপ্নের মত। ৩ মা ঝগড়াকে ভয় পায়। যুদ্ধকে ঘেন্না করে। চিৎকারকে এড়িয়ে চলে। মায়ের মধ্যে নরম গামছা গোছের একটা ব্যাপার আছে। ৪ মা অভাব দেখেছে। চিনেছে। আত্মস্থ করেছে। সে'সব দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে আজও মা নুয়ে পড়ে, প্রণাম করে, সমীহ করে। অনটন মাকে তেতো করতে পারেনি, না পাওয়াগুলো ন্যুব্জ করে দেয়নি। না পাওয়াগুলোকে ঘিরে কত অজস্র সুখস্মৃতি যে সাজিয়ে চলে মা, ভাবলে অবাক হতে হয়।

বিস্কুটের টিন

- মা। - চুপ। - মা! - চুপ। চুপ। - খিদে। - চুপ। - ওই উল্টোদিকের দেওয়ালে..। - কী? - তাকে বিস্কুটের টিন। ওই যে, হলুদ টিনটা। - টিনে বিস্কুট না থাকলে? কার না কার বাড়ি। আর কয়েক ঘণ্টা মাত্র লুকিয়ে থাকতে হবে খোকা। - ফাঁকা টিন কেউ সাজিয়ে রাখে? - ভালো করে দেখ। ওই তাকের দিকে যেতে হলে ওই কাচের জানালা পেরিয়ে যেতে হবে। যদি সৈন্যরা দেখে ফেলে? - দেখে ফেললেই গুম গুম গুড়ুম? - ঠিক। - কিন্তু খুব খিদে পাচ্ছে মা। কাল রাত্তির থেকে কিছু খাইনি। - আর কিছুক্ষণ খোকা। সন্ধ্যে নামলেই সৈন্যরা এ অঞ্চল থেকে বেরিয়ে যাবে। তখন এ'খান থেকে দিব্যি পালানো যাবে। বিস্কুটের টিনটাও নিয়ে নেব, কেমন? - আর কতদিন পালিয়ে থাকতে হবে? - যদ্দিন যুদ্ধ চলবে। - কদ্দিন যুদ্ধ চলবে? - বিদেশ থেকে সৈন্য আসবে, মিত্রপক্ষের। আমাদের বাঁচাতে। আর মাত্র ক'দিন। - ওরা আজকেই এসে পড়ছে না কেন? এখুনি এসে পড়ছে না কেন মা? আমার বড্ড খিদে। বড্ড। - খোকা। আর একটু। ওই তাকের দিকে গেলেই জানলা পেরোতে হবে। আশেপাশেই সৈন্য। - পারছি না মা। - ঘুমো। - খিদে মা। বিস্কুট। ওই যে। একটা। - আর একটু খোকা। আর একটু। খোকার 'খিদে খিদে' গোঙানি ক্র

জাস্ট ইন

উইকিপিডিয়া বলছে জাস্টিন বীবারের বয়স তেইশ। তেইশ বছরের একজনকে নিয়ে আমরা বেশ খিল্লিটিল্লি করলাম। কারণ ওর গান গান নয়। যদিও ওর শোয়ের টিকিট না কেটেও থাকা যায়। যদিও নিজের প্লেলিস্টে ওর গান রেখে বরদাস্ত করতেই হবে তেমন দিব্যি কেউ দেয়নি। তবু। খিল্লি বড় টেম্পটিং। আমার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা আরও বড় ছিল। ওর একটাও গান না শুনে আমায় খিল্লি করতে হয়েছে। পিয়ার প্রেশার। বীবারের প্রতি খিল্লি, বীবার ভক্তদের প্রতিও। খিল্লির থীম? ওই; ওর গান গান নয়। এই তেত্রিশ বছর বয়সেও বাপে দু'টো কড়া কথা বললে মনখারাপ হয়ে ল্যাটোরপ্যাটোর অবস্থা হয়। আর এই তেইশ বছরের ছেলেটাকে কী লেভেলের খিল্লি যে ম্যানেজ দিতে হয় কে জানে। অবশ্য শোবিজনেসে খিল্লি থাকবেই। সে'টাই স্বাভাবিক। তবে ইয়ে, ওই বয়সটা। তেইশ। ও এ'রকম লাইমলাইটে রয়েছে বছর পনেরো বয়স থেকে। তেইশের আমি? মাকে কিছুদিন দেখতে না পেলেই নুনের জ্যাকেট গায়ে জোঁকের মত ছটফট করছি। আর তেইশের বীবারকে একটা বহু মানুষ প্রাণপণে ভালোবাসছে। অনেকে আবার খিল্লিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে ব্যাটাকে। কারণ ওর গান গান নয়। এর আগে কার কার গানকে গান নয় বলে নস্যাৎ করা হয়েছে যেন?

থার্ড ডিগ্রী

কৌতুহল অতি বিষম বস্তু। হজম শক্তি কমে আসে। বাঁ কানের পিছনে চুলকানি শুরু হয়। মাথার ভিতরে একটা অসোয়াস্তিকর ঝুনঝুনুন বেজে চলে একটানা। বিনয় মল্লিকের কৌতুহলটা বরাবরই বাড়াবাড়ির দিকে, আর মরার পরেও ব্যাপারটা কমেনি আদৌ। নরকে চেক্ ইন করেছেন ঘণ্টা খানেক হল। দিব্যি সিস্টেমে চলে সবকিছু এ'খানে। আসার সঙ্গে সঙ্গেই তার পাপের ক্যাটেগরি-ওয়াইজ লিস্ট হাতে পেয়ে গেছেন। তিনটে পাপের ক্যাটেগরি; ফার্স্ট ডিগ্রী অর্থাৎ হিংসে, লোভ, পরনিন্দা,  অন্যের পিছনে কাঠি ইত্যাদি। শাস্তি হিসেবে দিনে দেড়শো থেকে দেড় হাজার বার বিছুটি লাগানো মুগুর-পিটুনি, টানা দেড় হাজার বছর । বিনয়বাবুর কপালে জুটেছিল দিনে সাড়ে তিনশো ঘা। সেকেন্ড ডিগ্রিতে খুন রাহাজানির শাস্তি। দিনে মিনিমাম দু'ঘণ্টা করে উনুনে পিঠ রেখে শুয়ে খবরের কাগজ পড়া। সে শাস্তি অবশ্য বিনয়বাবুকে ভোগ করতে হবে না। সবার ওপরে থার্ড ডিগ্রী, এর থেকে নিস্তার জোটেনি বিনয়বাবুর। এক স্যুইমিং পুল ফুটন্ত তেলে বাটারফ্লাই স্ট্রোকে ঘুরে বেড়ানো, দিনে দশ ঘণ্টা; আগামী আড়াই হাজার বছর ধরে। শিউরে উঠতে হয় ভাবলেই। কিন্তু এ'খানে ডিসিশন রিভ্যিউ সিস্টেম নেই। সবচেয়ে মুশকিল হল লিস্টে থার্ড ডিগ্র

অশোকবাবুর ডেডবডি

১ অশোকবাবুর আঙুলের ডগার  তিরতিরে কাঁপুনিটা অনুভব করতে পারছিলেন। পিঠের নিচে কাঠের খরখরে ভাবটাও দিব্যি টের পাচ্ছিলেন। কিন্তু চোখ খোলার সাহস হচ্ছিল না। চারিদকে হাউমাউ চলছে উত্তাল সুরে। এ সময় দুম করে চোখ মেললে ঢিঢি পড়ে যেতে পারে। ইলেক্ট্রিক চুল্লিতে ঢোকার আগে এমন বদখত ভাবে বাঁশের ওপর শোয়ায় কেন? অসোয়াস্তি। অবিশ্যি মড়ার তো অসোয়াস্তি বোধ থাকতে নেই। মুশকিল হল অশোকবাবু দিব্যি টের পাচ্ছিলেন যে তাঁর জ্ঞান ফিরছে। অর্থাৎ তিনি মারা যাননি। তবুও। স্যাট করে চোখ মেলতে সাহস হচ্ছিল না। ২ - বাবা! - উঁউঁউঁ! - ও বাবা! - ধ্যাত্তেরি। সকাল থেকে একটানা বাবা বাবা বাবা। দেখছিস না আমি কাঁদছি? বাপ মারা যাওয়ায় দু'দণ্ড প্রাণ খুলে কাঁদব তারও উপায় নেই। তখন থেকে ব্যাবা ব্যাবা ব্যাবা। কী ব্যাপার? - দা...দাদুর আঙুল নড়ল এই মাত্র। বাঁ হাতের! - কী? - দাদুর আঙুল নড়ে উঠল। - চুপ কর স্টুপিড। যত্তসব বাজে কথা। - ওই দ্যাখো, আবার নড়লো। - কই! - ওই যে। আবার! - ও সামান্য হয়, মড়া মাঝেমাঝে নড়াচড়া করে। বাজে কথা না বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদ দেখি। কাজের বেলার লবডঙ্কা,  এ'দিকে যত আজেবাজে কথা। - বাবা! দাদুর চোখের পাতা ন