Tuesday, August 23, 2022
অর্ক আর সুমন
Sunday, June 19, 2022
চালশে আর ফার্স্টইয়ারি
Tuesday, November 2, 2021
অ্যাপোক্যালিপ্স
Tuesday, March 16, 2021
সুমন আর দাদু
Tuesday, April 28, 2020
ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৯
Tuesday, December 25, 2018
ডানপিটে লোকটাকে
- আপনি? আপনিই?
- আজ্ঞে।
- বিশ্বাস হয় না...আপনি আদতে...এত ম্যাড়ম্যাড়ে?
- ওই। দূর থেকে যে চকমক দেখা যায়, তা কি কাছে এলে থাকে।
- তার চেয়েও বড় কথা, আপনার সঙ্গে যে সত্যিই দেখা হবে..তা ভাবাই যায় না। আপনি তিনিই তো?
- আজ্ঞে, বাঁ হাতে চটের ব্যাগটা তো দেখতেই পাচ্ছে। ভারি আর বেঢপ চেহারা। আর এই আমার ডান-পা খানা হঠাৎ লাফিয়ে উঠে ফুটবোর্ডে।
- বিলক্ষণ! বিলক্ষণ। ডেসক্রিপশন একদম মিলে যাচ্ছে। বাস যত জোরে ছুটছিল..।
- আমিও তত জোরে..। ডান হাত দিয়ে আছি পিছনের হাতলটা ধরে।
- কিন্তু সব থেমে আছে কেন? বাস, লোকজন। সব স্ট্যান্ড স্টিল কেন?
- আপনি ভাবছেন, হাত বাড়াবেন কিনা। সেই মুহূর্তের ভগ্নাংশে আমরা আটকে আছি।
- সর্বনাশ, এক পা ফুটবোর্ডে রেখে ভাবছেন কেউ হাত ধরবে কিনা? আপনি তো খতরনাক লোক মশাই।
- উপায় নেই স্যার। মরার সময় কি আছে যে অত সুবিধে অসুবিধে নিয়ে ভাবব? আপনি হাত বাড়ালে ভালো, নয়ত অন্য কারুর হাত। মোট কথা আমার থলিটা দূরে দূরে পৌঁছতে হবেই। যা করবেন তাড়াতাড়ি করুন, বাসের গতি এ'বারে বাড়বে।
- ডানপিটেই বটে আপনি। এই যে বাড়িয়ে দিলাম, কষে ধরুন দেখি হাতখানা।
***
তন্দ্রা যখন ভাঙলো তখন ডানপিটে ভদ্রলোক আর তার ঢাউস থলে হাওয়া, বাস কন্ডাক্টর মুখ ঝামটা দিচ্ছেন দরজায় দাঁড়িয়ে ঝিমোনোর জন্য। হাতের মুঠোয় চিরকুটটা পেয়ে দিবাকর মিত্র অবাক;
"দিবাকরবাবু, হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ'বার পিছু হঠলে চলবে না। অম্লান দাস নামে একজনের ঠিকানা দিলাম। অম্লানবাবুর তেমন কেউ নেই, চায়ের দোকানে বাসন মেজে চলে যায়। তিন নম্বর মতিলাল ঘোষ লেন ঘেঁষা সে দোকান। সে'খানেই তাঁর বাস। দাসবাবুর বড় পেস্ট্রি খাওয়ার শখ৷ এক বাক্স ভালো পেস্ট্রি তাঁকে পৌঁছে দেবেন? প্লীজ? চুপিচুপি? আমার বোধ হয় থলি হাতে ও পাড়ায় যাওয়া হবে না এ'বার। প্লীজ, এ কাজটা করে দেবেন? অম্লানবাবু খুব খুশি হবেন, বছর দশেকের খোকারা যেমন খুশি আর কী; বেনামি কেক-প্যাস্ট্রির বাক্স পেলে। প্লীজ, কেমন?
ইতি ডানপিটে"।
ফ্লুরিস থেকে একবাক্স প্যাস্ট্রি কিনে যখন মিত্রবাবু বেরিয়ে এলেন, ততক্ষণে পার্ক স্ট্রিটে সন্ধ্যে নেমেছে। চারদিকে আলো; টুনি বাল্বের স্যান্টা ক্লজ ঝলমল করছে। আলোর স্যান্টার দিকে তাকিয়ে মিচকি হাসলেন মিত্রবাবু;
"স্যান্টাদা, আপনাকে সাক্ষাতে দেখতে পেলে টুনি দিয়ে আপনার এমন এলেবেলে ছবি কেউ আঁকত না"।
Sunday, October 22, 2017
মাঝরাত্রের স্কুলবাড়ি আর দাসগুপ্তবাবু
Saturday, August 12, 2017
চেনা চেনা হাসিমুখ
সেই ছোটবেলার শহর।
সেই কবেকার। কত স্মৃতি। কত পুরনো মানুষের স্নেহসুবাস জড়িয়ে রয়েছে এ শহরে। অনিন্দ্যর যে কী ভালো লাগছিল।
বাবা যখন বদলি হয়ে এখানে এসেছিল, অনিন্দ্য তখন ক্লাস ফোরে। এ'খান থেকে যখন বাবা ফের ট্রান্সফার নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসে তখন অনিন্দ্য সবে ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠেছে। ওই পাঁচ বছরের স্মৃতি আজও অনিন্দ্যর মনে জ্বলজ্বল করে। বাগানে ঘেরা চমৎকার একটা দোতলা কোয়ার্টারে ওরা থাকত। স্কুলবাড়িটা ওদের সেই বাড়ি থেকে হেঁটে
বড় জোর মিনিট দশেকের রাস্তা। স্কুলের সামনের মাঠে রোজ ফুটবল বা ক্রিকেট। বাপ্পা, মন্টু, নেপাল আর আসিফের সঙ্গে সেই সন্ধে পর্যন্ত আড্ডা। এদ্দিন পর কাজের সূত্রে এ'খানে এসে কী ভালোই যে লাগছিল। অনিন্দ্যর খুব ইচ্ছে ছিল বাবা মাকে নিয়ে আসার, কিন্তু এই ছোট্ট শহরে হোটেলের সুব্যবস্থা কেমন থাকবে সে বিষয়ে সে ততটা নিশ্চিত ছিল না। পুরনো যোগাযোগও কিছু নেই। তাছাড়া মাত্র একটা দিনের ব্যাপার।
কাজ মিটে গেছিল সন্ধ্যে ছ'টার মধ্যেই, অনিন্দ্যর ট্রেন রাত্তির পৌনে ন'টায়। অনিন্দ্য ঠিক করেছিল স্টেশনবাজারে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে, কোনও পরিষ্কার ভাতের হোটেল দেখে রাতের খাওয়াটা সেরে নেবে। সঙ্গে শুধু একটা কাগজপত্র রাখার হালকা সাইডব্যাগ, কাজেই ঘোরাফেরায় কোনও অসুবিধে নেই। এই স্টেশন বাজার অনিন্দ্যদের পুরনো কোয়ার্টার থেকে হাঁটাপথ। বেশ জমজমাট বাজার। অটোস্ট্যান্ড, রিক্সাস্ট্যান্ড, মাছ সবজির বাজার, শাড়ি জামাকাপড়ের দোকান; সব মিলে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ একটা ব্যাপার। বিশেষত সন্ধের দিকটায়।
অনিন্দ্য ছোটবেলায় এ'দিকে প্রায়ই আসত, কখনও বাবার সঙ্গে মাছসবজির বাজারে, কখনও বইখাতা কিনতে, কখনও বন্ধুদের সঙ্গে নিউ মাদ্রাজ ক্যাফের সম্বর-দোসা বা ডিলাইট বেকারির চিকেন প্যাটি খেতে, কখনও স্টেশন লাগোয়া মনোরমা বুক স্টোর থেকে আনন্দমেলা বা শুকতারা কিনতে অথবা অন্য কোনও কাজে। সে'সব স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে ঘণ্টা দুয়েক দিব্যি কেটে যাবে। পুরনো জায়গাগুলো এই সুযোগে আরও একবার ঢুঁ মারা যাবে। পরেশকাকুর একটা দশকর্মার দোকান ছিল যে'খান থেকে ঠাকুমার ফরমায়েশ মত পুজোর সামগ্রী আসত, ভদ্রলোক দুর্দান্ত ভূতের গল্প বলতেন। দিনদুপুরে এমন সমস্ত অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে গল্প বলতেন যে অনিন্দ্যর গায়ে কাঁটা দিত, পরেশকাকুর সঙ্গে দেখা হলে বেশ হয়। অথবা বীণাপাণি ক্যাসেট সেন্টারের মনাদা যার কিশোরকুমারের সমস্ত গান মুখস্ত থাকত। এরা এখন কেমন আছে? মনাদা নিশ্চই এখন সিডি ডিভিডি বিক্রি করে।
অনিন্দ্য যখন ক্লাস সেভেনে তখন তাদের বাড়িতে প্রথম টেপ রেকর্ডার আসে। ফিলিপ্সের স্টিরিও। প্রথম ক্যাসেট কেনার টাকা দিয়েছিলেন ঠাকুমা, পঞ্চাশ টাকায় সে সময় অন্তত দু'টো ক্যাসেট হয়ে যেত। সে দিনটা অনিন্দ্যর স্পষ্ট মনে আছে। মনাদা খৈনি মুখে পুরতে পুরতে বলেছিল "মিউজিকের হিমালয় একজনই, কিশোরদা। বাকি সব স্পীডব্রেকার। কাজেই তোর প্রথম দু'টো ক্যাসেট হওয়া উচিৎ গোল্ডেন হিটস অফ কিশোর কুমার ভল্যুম ওয়ান আর ভল্যুম ট্যু"।
অনিন্দ্য ভল্যুম ওয়ানটাই নিয়েছিল। বাকি টাকায় একটা নতুন গানের ক্যাসেট খুঁজছিল সে। নতুন টেপরেকর্ডারে একদম নতুন সুর, নতুন কথা আর নতুন কণ্ঠ মিলিয়ে নতুন গান। মনাদার সমস্ত জ্ঞান কিশোরকুমার ঘেঁষা। কাজেই ওর ভরসায় না থেকে অনিন্দ্য নিজেই হন্যে হয়ে খুঁজছিল বীণাপাণি ক্যাসেট সেন্টারের প্রতিটা শেল্ফে। মলাট দেখে বই বিচারের চেয়ে সতেরোগুণ বেশি কঠিন হচ্ছে ক্যাসেটের মলাট দেখে গান বিচার। অনিন্দ্য যখন প্রায় হন্যে হয় কিশোরকুমারের গোল্ডেন হিটস ভল্যুম ট্যুয়ের বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়া মুখে তখন পাশে দাঁড়ানো এক অপরিচিত কাকু তার পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন "সুমন চাটুজ্জের গান শুনেছ খোকা? না শুনে থাকলে এই বেলা ওর সদ্য রীলিজ হওয়া 'তোমাকে চাই' ক্যাসেটটা কিনে ফেল। জীবন পাল্টে যাবে সেই সুর আর কথায়"।
সেই নীল চেক শার্টের ভদ্রলোকটির কথা আজও মনে পড়ে অনিন্দ্যর। জীবনের একটা ভালোবাসা সে'দিন খুঁজে পেয়েছিল সে; সুমনবাবুর গান।
**
স্টেশন বাজার আমূল পালটে গেছে, অনিন্দ্যর প্রায় সব কিছুই নতুন ঠেকছিল। রিক্সাস্ট্যান্ড উঠে গিয়ে এখন টোটো স্ট্যান্ড হয়েছে। পরেশকাকুর দশকর্মার দোকান ভেঙে একটা ছোটখাটো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হয়েছে; মালিক পরেশকাকুরই ছেলে। ডিলাইট বেকারির চেহারা বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি জীর্ণ, আগে সন্ধেবেলা টিউশন ফেরত ছাত্রেদের একটা ভিড় লেগে থাকত একটানা, সে'টা নজরে পড়ল না।
মাদ্রাজ ক্যাফে আগে বাতানুকূল ছিল না, সামনে ইয়াব্বড় গ্লোসাইন ছিল না। ভাতের হোটেল না খুঁজে ডিনারটা সে'খানেই সেরে নিল অনিন্দ্য। মশলা দোসার স্বাদ এখন আমূল পাল্টেছে। কাউন্টারে বসা রাজু ভাইয়ার বেশ মুটিয়ে গেছে, চুলেও পাক ধরেছে। দোসা আর ফিল্টার কফি খেয়ে বেরিয়ে অনিন্দ্য দেখল হাতে তখনও আধ ঘণ্টা সময় রয়েছে।
স্টেশন বাজারের যে সরু গলিতে মনাদার বীণাপাণি ক্যাসেট সেন্টার ছিল সে'টা মাদ্রাজ ক্যাফের পাশেই। মনাদাকে দেখার সামান্য ইচ্ছে আর সময় দু'টোই হাতে ছিল। মাদ্রাজ ক্যাফের ক্যাশ কাউন্টারে রাখা স্টিলের বাটি থেকে তুলে নেওয়া ভাজা মৌরি চিবুতে চিবুতে অনিন্দ্য ঢুকল সেই গলিতে।
অদ্ভুত ব্যাপার, গোটা শহর ভোজবাজির মত বদলে গেলেও এই গলিটা আদৌ পালটায়নি। সেই সাতপুরনো পোস্টবাক্স, সেই দেওয়ালে হলুদ আর লাল পেন্টে আঁকা বাপি গেঞ্জির বিজ্ঞাপন, সেই ল্যাম্পপোস্টগুলোর গায়ে সাঁটা "এই চিহ্নে ভোট দিন" পোস্টারগুলো । গলির শেষ প্রান্ত থেকে ভেসে আসা ভেজিটেবল চপের গন্ধটাও ঠিক তেমন ভাবেই নাকে এলো; যেমনটা পাওয়া যেত অত বছর আগে।
অনিন্দ্য রীতিমত চমকে গেল বীণাপাণি ক্যাসেট সেন্টারের সামনে এসে। সেই পালিশ ওঠা সব শোকেস। সেই সবজে পেডেস্টাল ফ্যানের ঘরঘর। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার, এ'খানে এখনও ক্যাসেট বিক্রি হচ্ছে। আজকালও লোকে ক্যাসেট কেনে? এখনও কারুর কাছে ক্যাসেট প্লেয়ার পাওয়া রয়েছে? মনাদার চেহারায় এতদিনেও তেমন কোনও পরিবর্তন নেই, সেই খৈনি চিবুনো হাসি। মনাদা অবশ্যই অনিন্দ্যকে চিনতে পারেনি, সে তখন বছর বারো তেরো বয়সের ছেলেকে কিশোরকুমারের ক্যাসেট গোছাতে ব্যস্ত।
হলদেটে জামা গায়ে ছেলেটার হাতে গোল্ডেন হিটস অফ কিশোরকুমার ভল্যুম ওয়ান। মনাদা ওকে দু'নম্বর ভল্যুমটাও গছাতে চাইছে। নিজের নীল চেক শার্টের দিকে তাকিয়ে অনিন্দ্যর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। ঘামতে শুরু করেছিল অনিন্দ্য। ট্রেনের সময় হয়ে এসেছে, এখুনি ছুটতে হবে প্ল্যাটফর্মের দিকে।
ভাবনাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার আগে নিজেকে চটপট গুছিয়ে নিয়ে ছেলেটির কাঁধে হাত রাখল অনিন্দ্য;
"সুমন চাটুজ্জের গান শুনেছ খোকা? না শুনে থাকলে এই বেলা ওর সদ্য রীলিজ হওয়া 'তোমাকে চাই' ক্যাসেটটা কিনে ফেল"।
Sunday, January 24, 2016
অনেকদিন পর
১
- ওই তারাটা কী?
- নীলচে ওইটে?
- হুঁ।
- ওটা তারা নয়। গ্রহ।
- ওহ। ওটাকে তারা ভেবে গান লিখে ফেললাম গো দাদা।
- পছন্দ?
- কী?
- গ্রহটা পছন্দ? যাবি?
- যাওয়া যায়?
- প্রাণ আছে তো সেখানে।
- তাই নাকি?
- তুই বড় ভুলো বোধি। কতবার তুই ঘুরে এসেছিস ওখান থেকে।
- ওহ। তাই বুঝি এই টানটা অনুভব হচ্ছে?
- একদম। যাবি আবার ওখানে?
- কাল গোটা রাত ও'দিকে তাকিয়েই কেটে গেল। ইচ্ছে হচ্ছে। পাঠিয়ে দাও।
- যদি বিরক্তি আসে?
- আসুক। ক'দিন তবু বেঁচে আসি।
- বেশ। ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তা হ্যাঁ রে বোধি, গানটা কী লিখলি বললি না...?
- গেয়ে শোনাই?
- হোক।
- সারারাত জ্বলেছে নিবিড়....।
২
-জয়েনিং ডে'তে রেসিগনেশন? আর ইউ আউট অফ ইওর মাইন্ড ইয়ংম্যান?
-ফোন ধরে যে বেলা নয়; বেলার মা দাঁড়িয়ে ছিলেন চুপচাপ, সেটা ঠাহর করতে পারিনি।
- মানে?
- মানে বুঝে কাজ নেই স্যার। এক কপি রিসিভ করে দিয়ে দিন। আজ রাতের ট্রেনে দেওঘর যাচ্ছি। পার্মানেন্টলি।