অদরকারে বই পড়তে পারাটা একটা প্রকাণ্ড প্রিভিলেজ। সে প্রিভিলেজ আমার আছে। এমন কী শখের ধাক্কায় বই কিনে সে'গুলো না পড়ে ফেলে রাখতে পারি। তাছাড়া কেনা বই দু'দশ পাতা পড়ে 'তেমন জমছে না' বলে সরিয়েও রাখতে পারি। এ প্রিভিলেজটা ছিল বলে এ যাত্রা বেঁচে গেলাম। মনখারাপে বই পড়তে পারি, অস্বস্তি কাটাতে বই পড়তে পারি। একলা লম্বা জার্নি করতে দুশ্চিন্তা হয় না। রোজ ঘণ্টাখানেকের অফিস যাতায়াতে বিরক্ত হতে হয় না। ভালো বইয়ের দোকান দেখলে হুট করে ঢুকে পড়তে পারি। সবচেয়ে বড় কথা বই উপহার দিতে পারি। এক একটা বই পড়ে সে ব্যাপারে বিশদে লিখতে এক সময় বড় ভালো লাগতো। সে ভালো লাগা একান্তই নিজস্ব, একটা বইয়ের ব্যাপারে অন্যের কাঁচা মতামত মানুষের তেমন কোন কাজে হয়তো লাগে না। ক্রমশ লেখার চেয়ে আলস্যটা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি; এটা খুব ভালো ব্যাপার কারণ বইয়ের রিভিউ লেখার থেকে নতুন বই ধরা বেশি উপকারী। তবু, প্রিয় বইয়ের ফর্দ শেয়ার করা একটা বেশ জমজমাটা কাজ। এই হয়তো কেউ বলে উঠলো "আরে ওই বইটা আমারও দারুণ লেগেছে" - ব্যাস, তাই নিয়ে তার সঙ্গে দু'টো গপ্প ফেঁদে নেওয়া যাবে। তাছাড়া এই লিস্ট করা ব্যাপারটা খানিকটা ইগো-বর্ধক ব্যাপারও বটে। তবে লিস্ট সাজানোটাও বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই ফর্দে না গিয়ে বরং ২০২৫য়ের পড়াশোনা-বিষয়ক 'হাইলাইট'গুলো লিখে রাখি। অগোছালোভাবে পড়া বইগুলো নতুন ভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে পড়ার মধ্যে একটা ছেলেমানুষি আনন্দ আছে। সে আনন্দ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলাম শার্লক হোমসের পুরো সিরিজটা ক্রোনোলজিকাল হিসেবে পড়ে। ফেলুদাকে নিয়ে আমরা খামোখা গোঁসা করি ওঁর গল্পগুলোয় তেমন ধারালো 'ডিটেকশন' থাকে না বলে। শার্লকদার অনেক গল্পের ক্ষেত্রেই সেই একই অভিযোগ দিব্যি খাটে। কিন্তু হোমসের গল্পগুলোকে ডিটেকটিভ পাজল হিসেবে পড়তে চাওয়াটা যে কী বেরসিক। কনান ডয়েলের ভাষা, প্লট, বর্ণনা; বার বার পড়েও মুগ্ধতা কম হওয়ার কোন সুযোগ নেই। স্নেহ, প্রেম, বন্ধুত্ব, ঈর্ষা, ঘৃণা; যাবতীয় অনুভূতিগুলোকে যেন কনান ডয়েলের লেখার মধ্যে দিয়ে সহজেই ছুঁয়ে দেখা যায়। সেই সময়টাকে, সে সময়ের বিলেতকে চেনার নিরিখে এ সিরিজকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেও চালিয়ে দেওয়া যায়। মাস তিনেক ধরে সমস্ত হোমস পড়েছি - পড়েছি অর্ধেক, আর শুনেছি অর্ধেক (স্টিফেন ফ্রাইয়ের কণ্ঠে); সবকটা উপন্যাস, সবকটা গল্পগুচ্ছ। সবই আগে পড়া তবে খাপছাড়া ভাবে। এইবারে সিস্টেম্যাটিকালি পড়ে এত আনন্দ হল, হোমস-ওয়াটসনের গোটা ক্যারেকটার আর্ক চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠলো। ছেলেমানুষের মত মগ্ন ছিলাম কিছুদিন হোমসে। বছরখানেক যাক, আবার ফিরবো। গতবছর জিভসকে নিয়ে কেটেছে কিছুদিন। এ বছরের আমার শ্রেষ্ঠ উডহাউসিও আবিষ্কার হল (পি)স্মিথ (অভিদা বলেছে এভাবে লেখাটাই যুক্তিযুক্ত)। এমন চরিত্র বিশ্বসাহিত্যে বিরল। পাগলা দাশুর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ আর রবি ঘোষ সেঁধিয়ে গেলে এরকম চরিত্র তৈরি করা যাবে কিনা কে জানে। উডহাউসের উপর প্রচণ্ড রাগ হলো মাত্র খানকয়েক বইয়ের পরিসরে (পি)স্মিথকে নিকেশ করে দেওয়ার জন্য। আমি শুরু করেছিলাম 'লীভ ইট টু (পি)স্মিথ' দিয়ে। ঘটনাচক্রে সেটা (পি)স্মিথ সিরিজের শেষ। দেখা গেলো প্রেমে পড়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর (পি)স্মিথের মত স্বভাবকবিকেও সাহিত্যজগৎ থেকে বিদেয় দেওয়া ছাড়া উডহাউসের কোনো উপায় ছিল না; গেরস্ত জীবন এতটাই বিষাক্ত (অন্তত উডহাউসের দুনিয়ায়)। যা হোক, উডহাউসের উপন্যাস তো, কাজেই সিরিজের শেষ বই দিয়ে শুরু করেও পিস্মিথে মুগ্ধতা ঠেকানো অসম্ভব। অতএব বাধ্য হয়ে পর পর পড়ে ফেলতে হলো; 'মাইক অ্যান্ড পিস্মিথ', 'পিস্মিথ ইন দ্য সিটি', আর 'জার্নালিস্ট পিস্মিথ'। পিস্মিথ কে? আমি লিখলেই ব্যাপারটা খেলো হয়ে যাবে। শুধু বলি যে পিস্মিথ হল ডগলাসে-অ্যাডামসিও বেয়াল্লিশের মানবরূপ। তাকে না জানলে আপনি ঠকবেন। আর চিনলে মনে হবে 'এতটুকুতে কি তোমায় চেনা সম্ভব গুরুদেব'? "লীভ ইট টু পিস্মিথ" উডহাউসের আর এক জাদু-জগতের খোঁজ পেয়েছি। ব্ল্যান্ডিংস ক্যাসেলের। ক্যাসেলের অধীশ্বর লর্ড এমসওয়ার্থ যদি দিন-ই-ইলাহি গোছের কোনো মতের প্রবর্তন করে যেতেন, আমি নিশ্চিন্তে সে'পথে নিজেকে সঁপে দিতাম। সাধক মানুষ; তাঁর দুনিয়াটাও বৈকুণ্ঠ ধামের মতই নিখুঁত। আর তার ওপর উডহাউসের হিউমর। ও জিনিস ডোভারলেনে আবৃত্তি করলে হারমোনিয়াম-তবলা-সেতার ফেল পড়বে। 'সামার লাইটিং' আর 'হেভি ওয়েদার' উপন্যাস শেষ করে ধীরেসুস্থে এগোচ্ছি ব্ল্যান্ডিংস ক্যাসেলের অন্যান্য গল্পগুলো নিয়ে। (লর্ড এমসওয়ার্থ আর পিস্মিথের দেখা হয়েছিল জানেন, সে এক ইতিহাস)। যারা পড়েছেন তারা জানেন কী বলছি। যারা পড়েননি, জেনে রাখুন আপনাদের জীবনটা জাস্ট মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে। আবার দ্য গ্রেট এক্সপেকটেশনস পড়লাম। বছর তিনেক অন্তর একবার এটা পড়াও রুটিনের পর্যায় চলে এসেছে দেখছি। এটা পড়ি শ্রী আনন্দ মিত্রর জন্য, ভদ্রলোক আমায় ইংরেজি পড়াতেন। গ্রেট এক্সপেক্টেশনস পড়িয়েছেন। সন্ধেবেলা ওঁকে ঘিরে আমরা জনা ছয়েক বসে, উনি পিপ আর মিসেস হ্যাভিশামের চরিত্রের ওপর বেশ একটা জমাট লেকচার দিচ্ছেন, এটা আমার ছেলেবেলার অন্যতম জরুরী স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটা। সে জন্যই বারবার এ বইয়ে ফিরে যাওয়া। আমি বোধ হয় পিপকে ভালোবাসি। ছেলেটা খুব একটা সুবিধের নয়, কিন্তু শত-ভুলের মধ্যে তার মধ্যে মায়া আছে। ভালোবাসা আছে। সে জন্যেই ভালোবাসা। পিপ আর অপু, এদের পাশাপাশি দেখার চেষ্টা করি। দুজনের ওপরই রাগ হয়, দুজনের জন্যই মন-কেমন। ফ্রাইসাহেবের বদান্যতায় গ্রিক মিথোলজির ওপর আগ্রহ গভীর হয়েছে। ওর মিথোস বইটা বার বার পড়া যায় (আমি অডিওবুক শুনেছি)। প্রকৃতির কত রহস্যের গভীরে আর ভাষার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে গ্রীক মিথলজির জমজমাট সব গল্প। ফ্রাই সেসব গল্প যে কী দুর্দান্ত ভাবে সাজিয়েছেন। এ'বাদে ওঁর ট্রয় আর ওডেসিয়াস দুটোও মাস্ট-রীড লিস্টে থাকার কথা। এ বছর ক্রিকেট বিষয়ক কয়েকটা বইও পড়া হয়েছে বটে। রবিচন্দ্র অশ্বীনের "আই হ্যাভ দ্য স্ট্রিটস" সম্ভবত আমার পড়া সেরা ক্রিকেট জীবনী (ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তো বটেই)। অশ্বীনের চিন্তাভাবনা স্বতন্ত্র, ধারালো আর মারাত্মক ভাবে 'এন্টারটেনিং'; এই বইটাও আগাগোড়া তাই। একটানা পড়ে শেষ না করে থামার উপায় নেই; সহলেখক সিদ্ধার্থ মোঙ্গাকেও তাই সেলাম ঠুকতেই হবে। পিটার অবোর্নের 'উন্ডেড টাইগার - আ হিস্ট্রি অফ ক্রিকেট ইন পাকিস্তান' আমার পড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট বইগুলোর মধ্যে একটা। পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাস বাদ দিয়ে উপমহাদেশ কেন, ক্রিকেটের গল্পই বলা অসম্ভব। অবোর্ন সাহেব সে ইতিহাসকে যেমন বিশদে সাজিয়েছেন, তেমনই প্রায় সিনেমার মেজাজে সে ইতিহাসকে গল্পের মত বলেছেন। বইটা পেল্লায়, কিন্তু তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। আর এ বছরের পড়া অন্যতম সেরা বই অভিষেক মুখার্জির "কট ইয়াপিং"। এই বই নিয়ে একটা ইয়াব্বড় রিভিউ লিখেছিলাম; সেটার লিঙ্ক রইলো কমেন্টে। এ'ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে 'টুটা হ্যায় গাব্বা কা ঘমন্ড' মার্কা যে ঐতিহাসিক সিরিজ-জয় (২০২০-২১), সে'টার ওপর লেখা ভারত সুন্দরেসন আর গৌরব যোশির লেখা 'মিরাকেল মেকারস' পড়লাম; ভালো লেগেছে। তবে কোথাও যেন ক্রিকেটের পরিমাণ সামান্য কম মনে হল। ইংরেজিতে একটা জবরদস্ত শব্দ আছে, 'আন্ডারহোয়েল্মিং'; আমার চোখে কথাটা এই বইয়ের ক্ষেত্রে কাটে। তবুও বলি; রেকমেন্ডেড। স্টিফেন কিংয়ের রিটা হেওয়ার্থ অ্যান্ড শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন পড়লাম। হাজারবার দেখা সিনেমা, তা সত্ত্বেও বইটা দারুণ লাগলো। বলাই বাহুল্য যে কিং-সাহেবের লেখা সিনেমার চেয়ে কোনো অংশে কম টানটান নয়। সামান্থা হার্ভের 'অর্বাইটাল' দিব্যি লাগলো, বিজ্ঞান-ভিত্তিক লেখা অথচ রূপকথার মত কল্পনার রঙে সুন্দর। লিজ ভার্কোর "দিস ইজ নট আ স্যাড বুক" বইটা শ্বেতা উপহার দিয়েছিল আমার ছেলেকে। সবার আগে পড়ে শেষ করলাম আমি। কিছু বই বয়সের অঙ্কের বাইরে, এ বই আমার ছেলের জন্য যতটা জরুরী, ততটাই জরুরী আমার জন্য। বইয়ের বিষয় দুঃখ। দুঃখ কী, কী ভাবে তাকে চিনতে হবে, কাছে টেনে নিতে হবে, আবার কী'ভাবে সে দুঃখকে বয়ে এগিয়ে যেতে হবে। লেখায় কোনো ওপর-চালাকি নেই, ছেলেভোলানো ভাষা নেই। সৎ, সোজা, কাজের লেখা। এবং বড় ভালোবেসে লেখা। ভালোবাসার বই; বার বার পড়ার মতো। এর পাশাপাশি পড়লাম মাইকেল স্যান্ডলের লেখা 'টিরানি অফ মেরিট'। এ বই অনেক জমে থাকা ভাবনার খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে। মেরিট আর প্রিভিলেজ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা যে কতটা কাঁচা আর গোলমেলে, সমাজ সম্বন্ধে আমাদের ভাবনাচিন্তা যে কী প্রবল অতি-সরলীকরণে দুষ্ট; এ বই পড়ে খানিকটা মালুম হল। বিল ব্রাইসনের "দ্য বডি" পড়ে যেমন সমৃদ্ধ হয়েছি, তেমনই এন্টারটেনড হয়েছি; ইয়াব্বড় বই ব্রাইসন-স্টাইলের ট্রিভিয়ায় ঠাসা, ভালো না লেগে উপায় কী। বেলা ম্যাকির "হোয়াট আ ওয়ে টু গো" অদ্ভুত এক নভেল। সাসপেন্স আছে, ভৌতিক ডাইমেনশন আছে। তবে কোথায় গিয়ে যেন একঘেয়ে হয়ে পড়লো। আর একটা গাব্দা বই তেমন পোষালো না তবুও কীভাবে যেন শেষ করলাম; জর্ডান পিটারসনের "দ্য টুয়েলভ রুলস অফ লাইফ"। এই বইয়ের ভারিক্কি ভাব কাটাতে চট করে পড়ে ফেলেছিলাম রোল্ড ডালের 'ফ্যান্টাস্টিক মিস্টার ফক্স'। ওই, ছোটদের গল্প ভাবতেই পারেন, কিন্তু আমি পড়লাম জমজমাট হিরো-ভিলেন মেশানো নভেল ফর অল হিসেবে। আমি ঠিক কেজো বই খুব একটা পড়ি না। তবে মর্গ্যান হাউসেলের লেখা আর ওঁর ফিনান্সিয়াল ফিলোসফি বেশ লাগে। ওঁর সাম্প্রতিক বই 'দ্য আর্ট অফ স্পেন্ডিং মানি' আমার বেশ লেগেছে। কাজের কথা সহজ গল্পে আর স্মার্ট স্টাইলে বলা, সে'টা ক'জনই বা পারে। কালকূটের 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে' বইটা আগে কেন পড়িনি কে জানে। অথচ বইয়ের তাকেই কত বছর ধরে ছিলো। চোখের জল, ভালোবাসা ছাপিয়ে মানুষের মানুষেমির মূলে আছে যে'টা আছে সে'টা হলো অন্য মানুষকে চেনার আগ্রহ। সেই আগ্রহ নিয়েই তিলে তিলে গড়ে উঠেছে মানুষের ইতিহাস, সাহিত্য, শিল্প, ধর্ম। সে আগ্রহের টানেই ভারতবর্ষকে চিনতে চেষ্টা করেছিলেন লেখক। বড় মন কেমনের লেখা। তা'ছাড়া এই বছর পুরীর সমুদ্র সৈকতে বসে গোটা 'হত্যাপুরী' এক সিটিংয়ে পড়েছি। এই নভেলটা সত্যিই জমজমাট। তাছাড়া টের পেলাম যে সত্যজিৎ যে পুরীর বর্ণনা দিয়েছেন, সেই বছর পঞ্চাশ আগের শহরটা এখনও দিব্যি টিকে আছে। অতএব দারুণ মজা পেলাম বইটা পড়ে। সমুদ্রের ধারে বসেই 'জয় বাবা ফেলুনাথ'টাও আর একবার পড়ে নিলাম, এতবার পড়ার পরেও গল্পটা এখনও জেট বাহাদুর লেভেলের সিনেম্যাটিক। বেনারসটা এ'বার ঘুরে আসতেই হবে দেখছি। আবার পড়া বইয়ের লিস্টে আবার ফিরলাম আরণ্যকে; আত্মার এমন আরাম আর মনের এমন শান্তি আর হয় না। আমাদের বিভূতিভূষণ আছে, এ গর্ব যে কোথায় রাখি। বছরের শেষ প্রান্তে এসে 'পাকদণ্ডী' ধরেছি। লীলা মজুমদার। তাঁকে ভালোবাসাটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর পাকদণ্ডী ধরে এগোতে এগোতে তাঁর প্রেমে পড়তে হয়। আর সম্মানে মাথা নুয়েও আসে। আমাদের লীলা মজুমদার আছে, সে গর্বই বা আমরা কোথায় রাখব। ২০২৬ আপনাদের ভালো কাটুক। ভালো বই পড়ুন। তার চেয়ে বড় কথা, ভালো বইরা যেন আপনাদের খুঁজে পায়।
Wednesday, December 31, 2025
২০২৫য়ের পড়াশোনা
অদরকারে বই পড়তে পারাটা একটা প্রকাণ্ড প্রিভিলেজ। সে প্রিভিলেজ আমার আছে। এমন কী শখের ধাক্কায় বই কিনে সে'গুলো না পড়ে ফেলে রাখতে পারি। তাছাড়া কেনা বই দু'দশ পাতা পড়ে 'তেমন জমছে না' বলে সরিয়েও রাখতে পারি। এ প্রিভিলেজটা ছিল বলে এ যাত্রা বেঁচে গেলাম। মনখারাপে বই পড়তে পারি, অস্বস্তি কাটাতে বই পড়তে পারি। একলা লম্বা জার্নি করতে দুশ্চিন্তা হয় না। রোজ ঘণ্টাখানেকের অফিস যাতায়াতে বিরক্ত হতে হয় না। ভালো বইয়ের দোকান দেখলে হুট করে ঢুকে পড়তে পারি। সবচেয়ে বড় কথা বই উপহার দিতে পারি। এক একটা বই পড়ে সে ব্যাপারে বিশদে লিখতে এক সময় বড় ভালো লাগতো। সে ভালো লাগা একান্তই নিজস্ব, একটা বইয়ের ব্যাপারে অন্যের কাঁচা মতামত মানুষের তেমন কোন কাজে হয়তো লাগে না। ক্রমশ লেখার চেয়ে আলস্যটা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি; এটা খুব ভালো ব্যাপার কারণ বইয়ের রিভিউ লেখার থেকে নতুন বই ধরা বেশি উপকারী। তবু, প্রিয় বইয়ের ফর্দ শেয়ার করা একটা বেশ জমজমাটা কাজ। এই হয়তো কেউ বলে উঠলো "আরে ওই বইটা আমারও দারুণ লেগেছে" - ব্যাস, তাই নিয়ে তার সঙ্গে দু'টো গপ্প ফেঁদে নেওয়া যাবে। তাছাড়া এই লিস্ট করা ব্যাপারটা খানিকটা ইগো-বর্ধক ব্যাপারও বটে। তবে লিস্ট সাজানোটাও বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই ফর্দে না গিয়ে বরং ২০২৫য়ের পড়াশোনা-বিষয়ক 'হাইলাইট'গুলো লিখে রাখি। অগোছালোভাবে পড়া বইগুলো নতুন ভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে পড়ার মধ্যে একটা ছেলেমানুষি আনন্দ আছে। সে আনন্দ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলাম শার্লক হোমসের পুরো সিরিজটা ক্রোনোলজিকাল হিসেবে পড়ে। ফেলুদাকে নিয়ে আমরা খামোখা গোঁসা করি ওঁর গল্পগুলোয় তেমন ধারালো 'ডিটেকশন' থাকে না বলে। শার্লকদার অনেক গল্পের ক্ষেত্রেই সেই একই অভিযোগ দিব্যি খাটে। কিন্তু হোমসের গল্পগুলোকে ডিটেকটিভ পাজল হিসেবে পড়তে চাওয়াটা যে কী বেরসিক। কনান ডয়েলের ভাষা, প্লট, বর্ণনা; বার বার পড়েও মুগ্ধতা কম হওয়ার কোন সুযোগ নেই। স্নেহ, প্রেম, বন্ধুত্ব, ঈর্ষা, ঘৃণা; যাবতীয় অনুভূতিগুলোকে যেন কনান ডয়েলের লেখার মধ্যে দিয়ে সহজেই ছুঁয়ে দেখা যায়। সেই সময়টাকে, সে সময়ের বিলেতকে চেনার নিরিখে এ সিরিজকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেও চালিয়ে দেওয়া যায়। মাস তিনেক ধরে সমস্ত হোমস পড়েছি - পড়েছি অর্ধেক, আর শুনেছি অর্ধেক (স্টিফেন ফ্রাইয়ের কণ্ঠে); সবকটা উপন্যাস, সবকটা গল্পগুচ্ছ। সবই আগে পড়া তবে খাপছাড়া ভাবে। এইবারে সিস্টেম্যাটিকালি পড়ে এত আনন্দ হল, হোমস-ওয়াটসনের গোটা ক্যারেকটার আর্ক চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠলো। ছেলেমানুষের মত মগ্ন ছিলাম কিছুদিন হোমসে। বছরখানেক যাক, আবার ফিরবো। গতবছর জিভসকে নিয়ে কেটেছে কিছুদিন। এ বছরের আমার শ্রেষ্ঠ উডহাউসিও আবিষ্কার হল (পি)স্মিথ (অভিদা বলেছে এভাবে লেখাটাই যুক্তিযুক্ত)। এমন চরিত্র বিশ্বসাহিত্যে বিরল। পাগলা দাশুর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ আর রবি ঘোষ সেঁধিয়ে গেলে এরকম চরিত্র তৈরি করা যাবে কিনা কে জানে। উডহাউসের উপর প্রচণ্ড রাগ হলো মাত্র খানকয়েক বইয়ের পরিসরে (পি)স্মিথকে নিকেশ করে দেওয়ার জন্য। আমি শুরু করেছিলাম 'লীভ ইট টু (পি)স্মিথ' দিয়ে। ঘটনাচক্রে সেটা (পি)স্মিথ সিরিজের শেষ। দেখা গেলো প্রেমে পড়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর (পি)স্মিথের মত স্বভাবকবিকেও সাহিত্যজগৎ থেকে বিদেয় দেওয়া ছাড়া উডহাউসের কোনো উপায় ছিল না; গেরস্ত জীবন এতটাই বিষাক্ত (অন্তত উডহাউসের দুনিয়ায়)। যা হোক, উডহাউসের উপন্যাস তো, কাজেই সিরিজের শেষ বই দিয়ে শুরু করেও পিস্মিথে মুগ্ধতা ঠেকানো অসম্ভব। অতএব বাধ্য হয়ে পর পর পড়ে ফেলতে হলো; 'মাইক অ্যান্ড পিস্মিথ', 'পিস্মিথ ইন দ্য সিটি', আর 'জার্নালিস্ট পিস্মিথ'। পিস্মিথ কে? আমি লিখলেই ব্যাপারটা খেলো হয়ে যাবে। শুধু বলি যে পিস্মিথ হল ডগলাসে-অ্যাডামসিও বেয়াল্লিশের মানবরূপ। তাকে না জানলে আপনি ঠকবেন। আর চিনলে মনে হবে 'এতটুকুতে কি তোমায় চেনা সম্ভব গুরুদেব'? "লীভ ইট টু পিস্মিথ" উডহাউসের আর এক জাদু-জগতের খোঁজ পেয়েছি। ব্ল্যান্ডিংস ক্যাসেলের। ক্যাসেলের অধীশ্বর লর্ড এমসওয়ার্থ যদি দিন-ই-ইলাহি গোছের কোনো মতের প্রবর্তন করে যেতেন, আমি নিশ্চিন্তে সে'পথে নিজেকে সঁপে দিতাম। সাধক মানুষ; তাঁর দুনিয়াটাও বৈকুণ্ঠ ধামের মতই নিখুঁত। আর তার ওপর উডহাউসের হিউমর। ও জিনিস ডোভারলেনে আবৃত্তি করলে হারমোনিয়াম-তবলা-সেতার ফেল পড়বে। 'সামার লাইটিং' আর 'হেভি ওয়েদার' উপন্যাস শেষ করে ধীরেসুস্থে এগোচ্ছি ব্ল্যান্ডিংস ক্যাসেলের অন্যান্য গল্পগুলো নিয়ে। (লর্ড এমসওয়ার্থ আর পিস্মিথের দেখা হয়েছিল জানেন, সে এক ইতিহাস)। যারা পড়েছেন তারা জানেন কী বলছি। যারা পড়েননি, জেনে রাখুন আপনাদের জীবনটা জাস্ট মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে। আবার দ্য গ্রেট এক্সপেকটেশনস পড়লাম। বছর তিনেক অন্তর একবার এটা পড়াও রুটিনের পর্যায় চলে এসেছে দেখছি। এটা পড়ি শ্রী আনন্দ মিত্রর জন্য, ভদ্রলোক আমায় ইংরেজি পড়াতেন। গ্রেট এক্সপেক্টেশনস পড়িয়েছেন। সন্ধেবেলা ওঁকে ঘিরে আমরা জনা ছয়েক বসে, উনি পিপ আর মিসেস হ্যাভিশামের চরিত্রের ওপর বেশ একটা জমাট লেকচার দিচ্ছেন, এটা আমার ছেলেবেলার অন্যতম জরুরী স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটা। সে জন্যই বারবার এ বইয়ে ফিরে যাওয়া। আমি বোধ হয় পিপকে ভালোবাসি। ছেলেটা খুব একটা সুবিধের নয়, কিন্তু শত-ভুলের মধ্যে তার মধ্যে মায়া আছে। ভালোবাসা আছে। সে জন্যেই ভালোবাসা। পিপ আর অপু, এদের পাশাপাশি দেখার চেষ্টা করি। দুজনের ওপরই রাগ হয়, দুজনের জন্যই মন-কেমন। ফ্রাইসাহেবের বদান্যতায় গ্রিক মিথোলজির ওপর আগ্রহ গভীর হয়েছে। ওর মিথোস বইটা বার বার পড়া যায় (আমি অডিওবুক শুনেছি)। প্রকৃতির কত রহস্যের গভীরে আর ভাষার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে গ্রীক মিথলজির জমজমাট সব গল্প। ফ্রাই সেসব গল্প যে কী দুর্দান্ত ভাবে সাজিয়েছেন। এ'বাদে ওঁর ট্রয় আর ওডেসিয়াস দুটোও মাস্ট-রীড লিস্টে থাকার কথা। এ বছর ক্রিকেট বিষয়ক কয়েকটা বইও পড়া হয়েছে বটে। রবিচন্দ্র অশ্বীনের "আই হ্যাভ দ্য স্ট্রিটস" সম্ভবত আমার পড়া সেরা ক্রিকেট জীবনী (ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তো বটেই)। অশ্বীনের চিন্তাভাবনা স্বতন্ত্র, ধারালো আর মারাত্মক ভাবে 'এন্টারটেনিং'; এই বইটাও আগাগোড়া তাই। একটানা পড়ে শেষ না করে থামার উপায় নেই; সহলেখক সিদ্ধার্থ মোঙ্গাকেও তাই সেলাম ঠুকতেই হবে। পিটার অবোর্নের 'উন্ডেড টাইগার - আ হিস্ট্রি অফ ক্রিকেট ইন পাকিস্তান' আমার পড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট বইগুলোর মধ্যে একটা। পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাস বাদ দিয়ে উপমহাদেশ কেন, ক্রিকেটের গল্পই বলা অসম্ভব। অবোর্ন সাহেব সে ইতিহাসকে যেমন বিশদে সাজিয়েছেন, তেমনই প্রায় সিনেমার মেজাজে সে ইতিহাসকে গল্পের মত বলেছেন। বইটা পেল্লায়, কিন্তু তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। আর এ বছরের পড়া অন্যতম সেরা বই অভিষেক মুখার্জির "কট ইয়াপিং"। এই বই নিয়ে একটা ইয়াব্বড় রিভিউ লিখেছিলাম; সেটার লিঙ্ক রইলো কমেন্টে। এ'ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে 'টুটা হ্যায় গাব্বা কা ঘমন্ড' মার্কা যে ঐতিহাসিক সিরিজ-জয় (২০২০-২১), সে'টার ওপর লেখা ভারত সুন্দরেসন আর গৌরব যোশির লেখা 'মিরাকেল মেকারস' পড়লাম; ভালো লেগেছে। তবে কোথাও যেন ক্রিকেটের পরিমাণ সামান্য কম মনে হল। ইংরেজিতে একটা জবরদস্ত শব্দ আছে, 'আন্ডারহোয়েল্মিং'; আমার চোখে কথাটা এই বইয়ের ক্ষেত্রে কাটে। তবুও বলি; রেকমেন্ডেড। স্টিফেন কিংয়ের রিটা হেওয়ার্থ অ্যান্ড শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন পড়লাম। হাজারবার দেখা সিনেমা, তা সত্ত্বেও বইটা দারুণ লাগলো। বলাই বাহুল্য যে কিং-সাহেবের লেখা সিনেমার চেয়ে কোনো অংশে কম টানটান নয়। সামান্থা হার্ভের 'অর্বাইটাল' দিব্যি লাগলো, বিজ্ঞান-ভিত্তিক লেখা অথচ রূপকথার মত কল্পনার রঙে সুন্দর। লিজ ভার্কোর "দিস ইজ নট আ স্যাড বুক" বইটা শ্বেতা উপহার দিয়েছিল আমার ছেলেকে। সবার আগে পড়ে শেষ করলাম আমি। কিছু বই বয়সের অঙ্কের বাইরে, এ বই আমার ছেলের জন্য যতটা জরুরী, ততটাই জরুরী আমার জন্য। বইয়ের বিষয় দুঃখ। দুঃখ কী, কী ভাবে তাকে চিনতে হবে, কাছে টেনে নিতে হবে, আবার কী'ভাবে সে দুঃখকে বয়ে এগিয়ে যেতে হবে। লেখায় কোনো ওপর-চালাকি নেই, ছেলেভোলানো ভাষা নেই। সৎ, সোজা, কাজের লেখা। এবং বড় ভালোবেসে লেখা। ভালোবাসার বই; বার বার পড়ার মতো। এর পাশাপাশি পড়লাম মাইকেল স্যান্ডলের লেখা 'টিরানি অফ মেরিট'। এ বই অনেক জমে থাকা ভাবনার খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে। মেরিট আর প্রিভিলেজ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা যে কতটা কাঁচা আর গোলমেলে, সমাজ সম্বন্ধে আমাদের ভাবনাচিন্তা যে কী প্রবল অতি-সরলীকরণে দুষ্ট; এ বই পড়ে খানিকটা মালুম হল। বিল ব্রাইসনের "দ্য বডি" পড়ে যেমন সমৃদ্ধ হয়েছি, তেমনই এন্টারটেনড হয়েছি; ইয়াব্বড় বই ব্রাইসন-স্টাইলের ট্রিভিয়ায় ঠাসা, ভালো না লেগে উপায় কী। বেলা ম্যাকির "হোয়াট আ ওয়ে টু গো" অদ্ভুত এক নভেল। সাসপেন্স আছে, ভৌতিক ডাইমেনশন আছে। তবে কোথায় গিয়ে যেন একঘেয়ে হয়ে পড়লো। আর একটা গাব্দা বই তেমন পোষালো না তবুও কীভাবে যেন শেষ করলাম; জর্ডান পিটারসনের "দ্য টুয়েলভ রুলস অফ লাইফ"। এই বইয়ের ভারিক্কি ভাব কাটাতে চট করে পড়ে ফেলেছিলাম রোল্ড ডালের 'ফ্যান্টাস্টিক মিস্টার ফক্স'। ওই, ছোটদের গল্প ভাবতেই পারেন, কিন্তু আমি পড়লাম জমজমাট হিরো-ভিলেন মেশানো নভেল ফর অল হিসেবে। আমি ঠিক কেজো বই খুব একটা পড়ি না। তবে মর্গ্যান হাউসেলের লেখা আর ওঁর ফিনান্সিয়াল ফিলোসফি বেশ লাগে। ওঁর সাম্প্রতিক বই 'দ্য আর্ট অফ স্পেন্ডিং মানি' আমার বেশ লেগেছে। কাজের কথা সহজ গল্পে আর স্মার্ট স্টাইলে বলা, সে'টা ক'জনই বা পারে। কালকূটের 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে' বইটা আগে কেন পড়িনি কে জানে। অথচ বইয়ের তাকেই কত বছর ধরে ছিলো। চোখের জল, ভালোবাসা ছাপিয়ে মানুষের মানুষেমির মূলে আছে যে'টা আছে সে'টা হলো অন্য মানুষকে চেনার আগ্রহ। সেই আগ্রহ নিয়েই তিলে তিলে গড়ে উঠেছে মানুষের ইতিহাস, সাহিত্য, শিল্প, ধর্ম। সে আগ্রহের টানেই ভারতবর্ষকে চিনতে চেষ্টা করেছিলেন লেখক। বড় মন কেমনের লেখা। তা'ছাড়া এই বছর পুরীর সমুদ্র সৈকতে বসে গোটা 'হত্যাপুরী' এক সিটিংয়ে পড়েছি। এই নভেলটা সত্যিই জমজমাট। তাছাড়া টের পেলাম যে সত্যজিৎ যে পুরীর বর্ণনা দিয়েছেন, সেই বছর পঞ্চাশ আগের শহরটা এখনও দিব্যি টিকে আছে। অতএব দারুণ মজা পেলাম বইটা পড়ে। সমুদ্রের ধারে বসেই 'জয় বাবা ফেলুনাথ'টাও আর একবার পড়ে নিলাম, এতবার পড়ার পরেও গল্পটা এখনও জেট বাহাদুর লেভেলের সিনেম্যাটিক। বেনারসটা এ'বার ঘুরে আসতেই হবে দেখছি। আবার পড়া বইয়ের লিস্টে আবার ফিরলাম আরণ্যকে; আত্মার এমন আরাম আর মনের এমন শান্তি আর হয় না। আমাদের বিভূতিভূষণ আছে, এ গর্ব যে কোথায় রাখি। বছরের শেষ প্রান্তে এসে 'পাকদণ্ডী' ধরেছি। লীলা মজুমদার। তাঁকে ভালোবাসাটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর পাকদণ্ডী ধরে এগোতে এগোতে তাঁর প্রেমে পড়তে হয়। আর সম্মানে মাথা নুয়েও আসে। আমাদের লীলা মজুমদার আছে, সে গর্বই বা আমরা কোথায় রাখব। ২০২৬ আপনাদের ভালো কাটুক। ভালো বই পড়ুন। তার চেয়ে বড় কথা, ভালো বইরা যেন আপনাদের খুঁজে পায়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment