Skip to main content

Posts

Showing posts from October, 2016

ডাব্লু টি এফ

চলন্ত মিনিবাস থেকে হুড়মুড় করে নামতে গিয়ে ধাক্কা লাগলো রবীন্দ্রনাথের সাথে। ভদ্রলোকের দাড়ির আড়াল থেকে ফিক হাসি স্পষ্ট দেখা গেল। "ডাব্লু টি এফ", বলে মাথা চুলকে নিলাম খানিকটা। একটা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের ওপর আর্টিকল পড়তে পড়তে চোখ লেগে এসেছিল। এখন হয় কন্ডাক্টর এসে ঘুম ভাঙাবে অথবা...। শিউরে উঠতে হলো। অথবা আমি সত্যিই চলন্ত বাস থেকে নেমেছিলাম কিন্তু...। স্পটডেড না স্বপ্ন? ধ্যেত্তেরি, ভদ্রলোকের দাড়ি কাঁপানো মিচকে হাসি তবু থামে না। ** বাইশ বছর ধরে কন্ডাক্টরি করছেন অনন্ত হালদার। কত রকমের প্যাসেঞ্জারই না দেখলেন। কিন্তু এই প্রথম কেউ তাকে টিকিট ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়লে। খানিক আগেও বাঁ দিকের দ্বিতীয় সারির জানালায় নীল হাফশার্ট পরা ভদ্রলোককে দেখেছিলেন, গোলপার্ক থেকে উঠেছিলেন সম্ভবত। মৌলালির হট্টগোলে হাওয়া। নীল হাফশার্টের ভদ্রলোকের বদলে যিনি এখন সে'খানে বসে তিনি দিব্যি রবীন্দ্রনাথের সেজে বেরিয়েছেন। থিয়েটারের লোক? দাড়িটাড়ি তো প্রায় রিয়েল বলে মনে হয়। জব্বর মেকআপ। ** ও'দিকে ততক্ষণে রবীন্দ্রনাথের মিচকি হাসি হাওয়া, গলা শুকিয়ে কাঠ।

সামন্তবাবুর বাতিক

রাত বারোটা কুড়ি নাগাদ উঠেছিলেন সামন্তবাবু। ডায়াবেটিসে এই এক অসুবিধে। ঘুম মাখানো চোখে বারান্দায় এলেন তিনি, বারান্দার ও'পাশে বাথরুম। থমকে গেলেন বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা থান গায়ে জড়ানো মহিলার দিকে তাকিয়ে। বারান্দার আলোটা অল্প পাওয়ারের। সে ঘোলাটে আলোয় সেই থান জড়ানো মহিলাকে দেখেই বুক হিম হয়ে গেল সামন্তবাবুর। এমন বিধবা তো এ বাড়িতে কেউ নেই। ভূত? উফফ! চোখ রগড়ে নিলেন, তবুও সে মহিলা স্থির দাঁড়িয়ে।  গলা শুকিয়ে আসাটা বেশ টের পাচ্ছিলেন সামন্তবাবু। ঠিক তখনই মহিলার ফ্যাকাশে সাদা মুখটা নজরে এলো। চেনা, বড্ড চেনা। সে মুখে যেন একরাশ ভয় আর আতঙ্ক জমে আছে। "ওহ হো। ও'টা তো নীলিমা", সামন্তবাবুর স্বস্তি পেয়ে আপন মনে বলে উঠলেন, "আহা, এই সবে তিনদিন হলো বেচারি বিধবা হয়েছে, তাই খেয়াল থাকে না।  নিজের বৌ বলে বলা নয়,নীলিমার মত মেয়ে হয় না। তবে আনন্দের খবর এই যে ডায়াবেটিসের দুশ্চিন্তাটা গেছে তাহলে। বাথরুমের দিকে রাতবিরেতে হেঁটে যাওয়াটা স্রেফ বাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে"।

কুঞ্জবনে

- গুরু! - ইয়েস বস। - আরেক টান হবে নাকি? - নাহ্। এটুকুই। থাক বরং। - মিইয়ে গেছ দেখছি? - আমি? মিইয়ে? আরে না না! আর্কিমেডিস এখন আমায় দেখলে ইউরেকা ইউরেকা বলে লাফাতে পারতেন। ফ্লোট করছি কিনা। দুঃখের যতটা ওজন, ততটাই স্ফুর্তির জল ডিস্পলেস করছি। উথাল পাথাল, কিন্তু ডুবে যাওয়ার চান্স নেই। - দুঃখ? গুরু? আমি থাকতে তোমার দুঃখ? - আসে, যায়। যায়, আসে। দে। অত জোর করছিস যখন। বামুন মানুষ, দু'টানে তো আর জাত যাবে না। না নিলে বরং তুই খারাপ পাবি। - এই যে গুরু। - আহহহহহহহ, বুকের আগুনপানা স্টোভে কেউ জল ছিটিয়ে দিলে রে। - বল না গুরু। অমন ম্যাদা মেরে কেন রয়েছ! - ম্যাচোমাস্তানদের ম্যাদা মারতে আছে রে পাগলা? - বত্রিশ বছর ধরে ট্রাকের খালাসি গুরু। অল ইন্ডিয়া পারমিটের। তার মধ্যে সাড়ে একত্রিশ বছর তোমার পায়ের কাছে বসে "ডাইনে লেও বাঁয়ে লেও" করে গেছি। তুমি হ বলতে আমি হরিদাসের ধাবার ডিম তড়কা বুঝি গুরু। ডবল ঝাল। -  হ'য়ে হরিদাসের ধাবার তড়কা। আহা। তোর এ জীবনে কবি হওয়ার কথা ছিল রে। ট্রাক ধুয়ে আর মুন্নি বদনামে উজাড় হয়ে গেলি। একটু যদি কেউ তোকে বিভূতিভূষণে ঠেলে দিত। সময়মত। তবে। তবে আমিও তো ঠেলিনি। তোর

অন্য গাল

গান্ধী – কেউ এক গালে থাবড়া মারলে আর এক গাল এগিয়ে দাও। অপর পক্ষের রাগ ডায়লুট হতে বাধ্য। রাবণ – অন্য গাল এগিয়ে দিলে দুশমনের রাগ পড়বে বলছেন? গান্ধী – আলবাত! রাবণ – রাগ পড়লে ভালো, না পড়লেও অন্তত নরম হয়ে আসবে। তাই তো? গান্ধী – নিশ্চিত। রাবণ – দু’নম্বর গাল এগিয়ে দেওয়ায় রাগ একটু নরম হয়েছে দেখলেই তিন নম্বর গাল এগিয়ে দেব। কেমন হবে? আফটার অল গালের তো অভাব পড়েনি। গান্ধী – গুড। তুমি বুঝেছ। ও’তেই হবে। রাবণ – ও’তে হলেই বা হতে দিচ্ছে কে? রাগ গলে জল না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত গাল ফায়ার করে যাব! তিনের পরে চার, চারের পরে পাঁচ। গান্ধী – হয়েছে। হয়েছে। সমঝদার ছেলে তুমি। তবে ওই, কোনও কিছুতেই বাড়াবাড়ি ভালো নয়! রাবণ- রাগের শেষ দেখে ছাড়াটাই কর্তব্য...। অতএব পাঁচের গালে থাপ্পড় শুষে নিয়ে ছয় নম্বর গাল এগিয়ে দেব! ছয়ে পরে সাত...! গান্ধী – বোঝ কাণ্ড! রাবণ - সাতের পরে আট, আটের পরে নয়...! গান্ধী – অন আ সেকেন্ড থট, থাপ্পড়ের রেসপন্সে বেশি মেনিমুখো না হওয়াই বোধ হয় ভালো...। রাবণ – নয়ের পরে দশ নম্বর গাল। দশের পরে এগারো!

বড়

হাওড়া ব্রীজটাকে লম্বায় বড় জোর একফুট মনে হচ্ছিল অনিন্দ্যর। এই যে হুগলীর জলে পা ডুবিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে তার গোড়ালিটুকুই ভিজেছে বড় জোর। তার পায়ের পাতার সামান্য নড়চাড়াতেই জলোচ্ছ্বাস স্ট্র‍্যান্ড রোড ভাসিয়ে দিচ্ছিল। ইতিমধ্যে অন্তত খানকুড়ি বাস ট্যাক্সি ভেসে গেছে। তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়েছিল অনিন্দ্য। এত উপর থেকে সমস্ত মানুষকে খুদে খুদে পোকার মত মনে হচ্ছে, এ'দিক ও'দিক বেপরোয়া পা ফেলেলেই শয়ে শয়ে মরবে। দূর থেকে পুলিশের ফায়ারিংগুলো হাঁটুর আশেপাশে চোরকাঁটার মত বিঁধছে। অর্ধেক কলকাতাটা দিব্যি দেখতে পারছিল অনিন্দ্য। তবে এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার মানে হয় না। কয়েক পা ফেলে সে এগিয়ে গেল লেকটাউনের দিকে। অতিসাবধানে পা ফেলেও দু'একটা ফ্লাইওভার আর খান দশেক ফ্ল্যাটবাড়ির ধসে যাওয়া আটকাতে পারলে না সে। মিতালি দাঁড়িয়েছিল বাড়ির ছাদে। খুদে, এই এত্তটুকু। আঙুলের ডগায় পিঁপড়ের মত নিয়ে নেওয়া যায় ওকে। অত নিচে কিছুই ভালো করে দেখা যায় না, তবে অনিন্দ্য বেশ বুঝতে পারছিলো যে মিতালির চোখে জল। অনিন্দ্যর মাথায় একটা প্লেন গোঁত্তা খেয়ে টলে পড়লো। ভাগ্যিস প্লেনটা মিতালিদের বাড়ির থেকে দূরে গিয়ে ধসে পড়েছিল। মিতালি বোধ

একটা সোমবার ও সাহাবাবু

*** সোমবার, সকাল পৌনে ন'টা। *** - একটু শুনুন! প্লীজ। - আমায় বলছেন? - আজ্ঞে। এই কলমটা আপনার? আপনার সীটের পাশে পড়েছিল। দেখুন, রেনল্ডসের ডট। - না। - ও। আচ্ছা, এই স্টেটসম্যানটা আপনার? - না। এ'টাও আমার সীটের পাশে পড়েছিল? - আজ্ঞে। আর এই পাঁচটাকার কয়েনটা? এ'টাও ওই। সীটের পাশে। - বাসের এ সীটের পাশে চাইলে রবীন্দ্রনাথের দাড়িও পাবেন বোধ হয়। ফাজলামো থামান তো মশাই। রুবি আসতে এখনও আধ ঘণ্টা। ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবেন না।  *** সোমবার দুপুর একটা পনেরো *** - স্যার, এ'খানে একটা সিগনেচার করে দিন প্লীজ। - আমার পেনটা আবার ফাউন্টেন। লীক করছে। আপনার কাছে ডট আছে সাহাবাবু? - সরি স্যার। - ধ্যুত। কিছু চাইলেই সরি স্যার। আপনাদের মত ওল্ডটাইমারদের এই এক সমস্যা। নড়তেচড়তে আঠারো মাস। এই যদি অফিসের কোনও ইয়ং টার্ক, যেমন দত্তর কাছে ডটপেন চাইতাম সে ফস করে বের করে দিতো। বসকে দিয়ে কাগজ সই করাতে এসেছেন অথচ সঙ্গে পেন নিয়ে আসেননি? *** সোমবার দুপুর সোয়া তিনটে *** - সাহাবাবু! - আজ্ঞে স্যার? - আজকের স্টেটসম্যানে একটা জরুরী বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে সাতের পাতায়। জোগাড় করুন দেখি। - স্টে...! - স্টেটসম্যান! 

মন্টুবাবু ও গুজিয়া

গুজিয়া নিয়ে ব্যাগ ব্যাগ সাহিত্য হয় না। ঠিক যেমন বালুচরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার রোম্যান্স নিয়ে একজন ছাড়া তেমন কেউই বিশেষ রকমের লাগসই কথা বলে যেতে পারেননি। ছোট্ট বাক্সে আট পিস। বাক্সের গায়ে নীলে লেখা কল্পতরু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, দু'টো গার্ডার। দিব্যি এ'টে যায় মন্টুবাবুর পাঞ্জাবির পকেটে। মন্টুবাবু ভিজিটিং কার্ড, লেটার প্যাড বা ওই ধরণের জিনিসপত্র ছাপান। এ অফিস থেকে সে অফিস ঘুরে অর্ডার নেন এবং সাপ্লাই করেন। মন্টুবাবু রোজ নতুন গুজিয়ার বাক্স পকেটে গুঁজে দিন শুরু করেন। চারটে নিজে খান। দু'টো লাঞ্চের পরে, আর দু'টো অন্য যে কোন সময়; মনখারাপে, ক্লান্তিতে, আনন্দে, ফুরসতে। জিভে গুজিয়া ঠেকলেই চনমনিয়ে ওঠেন ভদ্রলোক, এ কথা তিনি নিজেই বলেন। আর বাকি চারটে তিনি অন্যদের অফার করেন। অটোচালক আগ বাড়িয়ে খুচরো দিলো, মন্টুবাবু গলে গিয়ে গুজিয়া অফার করলেন। বাসে কেউ টেস্ট জেতার খবর শোনালো, মন্টুবাবু শুধোলেন "গুজিয়া খাবেন? অমায়িক ফ্লেভার। মিষ্টি কড়া নয়"। কোনও অফিসে গিয়ে দেখলেন পরিচিত কেউ ঝামেলায় জর্জরিত, তিনি বাক্স এগিয়ে বললেন "আসুন সেনসাহেব, আসুন! ফাইলপত্তর তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না, মেজ

হেঁসেল

- রান্নাঘরটা জব্বর হবে বুঝলে ম্যাডাম! - মডিউলার? - ফুহ্! ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স দেখা? - তব? - রান্নাঘরের দেওয়ালে ক্যালভিন আর হবসের নাচুনির ছবি। - রান্নাঘরের দেওয়ালে ক্যালভিন? হব্স? - স্বাদের দানাগুলো জিভে ক্যালভিনের মত ছটরফটর করে যাবে। রান্নার সুবাসের বাঘ সে দানাগুলোর সাথে মিলেমিশে হল্লা করবে। এ পোস্টার সিম্বলিক। - আর? - তুমি স্কিলড আমি আনস্কিল্ড। তুমি ঝুরি আলু কুচোবে, নরম আঁচে পেঁয়াজ ভাজবে।  আমি স্কচব্রাইট ভিমবার আর এঁটো ডেকচি নিয়ে সিঙ্কের নিচে থেবড়ে বসে শ্যামল মিত্র গাইব। - তুমি শ্যামল মিত্র? হয়েছে! - খুন্তি কড়াইয়ের খনখনকে নূপুরে চুড়িতে নিউট্রালাইজ করতে হবে, পারবে? - যো হুকুম। - মাংস মাছ আমি ধোব। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্র‍্যাক্টিস। মাংস ধোয়ার সময় পঙ্কজ উদাস জমে ভালো। জিয়ে তো জিয়ে ক্যায়সে, বিন আপ কে। - রান্নাঘরের দেওয়াল নরম সবুজ। - আমি হলুদ ইম্যাজিন করেছিলাম। - সবুজ। নরম। - জী। - কী হল? - প্রশ্ন। - কী? - আমি বুঝি হব্স? আমার বুঝি আদতে থাকতে নেই? - আমি কি না ক্যালভিন। আমার আনন্দে নয়, ইউফোরিয়ায় বাঁচার কথা। - কেয়া হুয়া ক্যালভিনওয়া? ইমোসান? - উয়ো কুড ভি রান্নাঘর মে, তুম

টুকরো গল্প

- কে ওখানে? - আমি। পরেশ। - ইয়ার্কি হচ্ছে? - মানে? - পরেশকে বলা হচ্ছে আমি পরেশ? আলোয় আয় ব্যাটা। - ইয়ে...আমি পরেশ চ্যাটার্জি। - আরে দরজার ওপাশের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কেন রে? আলোয় আয়! দেখা যাবে রিয়েল পরেশ চ্যাটার্জি কে। - আপনিও? পরেশ চ্যাটার্জি? কী আশ্চর্য!  তবে আমি কিন্তু আদতে এ পাড়ার নই। বেলিয়াতোড়ে আদত বাড়ি। বাপ মাও সেখানেই। - তবে রে হারামজাদা? বাপ মা বেলিয়াতোড় তুলে লেগ পুল? আজ তোরই একদিন কি আমার! - বলছিলাম একের বারো মধু মল্লিক লেন ঠিক কোনদিকে বলতে পারেন? - এ'টা। এ'টাই একের বারো মধু মল্লিক লেন। আর আজ এখানেই তোকে পুঁতবো। ঠিক তখুনি মেঝে ফুঁড়ে রাত কাঁপিয়ে ভেসে এলো কণ্ঠস্বরটা ; "রোজ রাত্তিরে এই এক ঝ্যামেলা! গজরগজরগজর! আরে আর ক'বার পোঁতা হবে? ডায়রেক্ট পুঁতে দিলেই পারত। না, তা নয়! তার আগে কুচিকুচি করে কাটা চাই। আর কী কুক্ষণেই না দু'টুকরো বাইরে পড়ে গেছিল। আহাম্মক ইনএফিশিয়েন্ট মার্ডারার্স"!

স্পা

শুভ্রশঙ্খ মাস শুরু করে স্পা দিয়ে। শরীর মন ঝরঝরে হয়ে যায়। শিউলি বছরভর শহরে না থাক, অন্তত সে সুবাস মনের মধ্যে হুহু করে। জ্যান্ত লাফানো কইয়ের মত স্ফুর্তি থাকে বুকে। আসল বিউটি ট্রিটমেন্ট তো মনকে মালিশ করেই শুরু, আর সে থিওরি মেনেই মাসের প্রথম রোববার সকাল সকাল নিউ সানফ্লাওয়ার সেলুনের বেঞ্চিতে এসে বসে সে। স্পা স্রেফ ফেল কড়ি মাখো তেল কিস্সা নয়। হুড়মুড়ে মেজাজে অফিসটাইমে মিনিবাস ধরা যায়, স্পাতে তা চলে না। সানফ্লাওয়ার সেলুনের বেঞ্চিতে বসার আগেই মনোকে ইশারায় নিজের উপস্থিতি জানান দেয় শুভ্রশঙ্খ। মনো, মানে মনোরঞ্জন মাইতি। কাঁচির কাইজার, মালিশ মারাঠা ইত্যাদি নানা উপাধি মনোরঞ্জনের পাওনা বলে শুভ্রশঙ্খর বিশ্বাস। কিন্তু বাঙালি যোগ্যতার দাম দিতে শেখেনি, তাই আজও মনোকে পুজোর বখশিশ চাইতে হয়। বেঞ্চির সামনে রাখা নিচু কাঠের টেবিলে স্তুপ করে রাখা আনন্দলোক। আনন্দলোক হচ্ছে প্রি-স্পা রিল্যাক্সেশন টূল, শুভ্রশঙ্খ সে সম্বন্ধে অবগত। টুকরো টলিউডি গসিপ, ক্লাসিকাল যুগের উত্তম যোগ ব্যায়াম করছেন গোছের কিছু ছবি, কিছু চটুলরচনা, কিছু মনোগ্রাহী ছবি; এ'সবে নার্ভ আরামদায়ক ভাবে শীতল হয়ে আসে। খান চারেক আনন্দলোকের পাতা ফরফর

অমরবাবুর রাত

"বাতি নিভিয়ে শুতে এসো"। প্রত্যুত্তরে আচ্ছা বলাটাই ভদ্রতা। তেমনটাই বললেন অমরবাবু। "আচ্ছা"। বাতি নেভালেন। দু'কলি "হরি দিন তো গেলো গাইলেন"। "আর কতক্ষণ গো? রাত দু'টো বাজতে চললো যে! অতিশয়োক্তি। অমরবাবু জানেন। এখন সবে সোয়া একটা। এ'সব আবদারে ডাক। তবু। কানে দিব্যি লাগে এ ডাকের মায়াটুকু। তারপরই খাটের বাঁ পাশ ঘেঁষে গা এলিয়ে দিলেন তিনি। "এখন এতরাত্রে আর জ্বালিও না বাপু। ঘুমোও। কাল ভোর থেকে মেলা কাজ পড়ে"। খাটের ডান দিক থেকে ভেসে আসে কণ্ঠস্বর। নরম, মিঠে। কী প্রবলভাবে আদুরে। মৃদু বিরক্তির "ত্যুত্ " শব্দে ভাসিয়ে দিয়ে অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন তিনি। অন্যপাশে ফিরে নিজের পাশবালিশটা বুকে জড়িয়ে চোখ বুজলেন ভেন্ট্রিলোক্যুইস্ট অমর সমাদ্দার।

পাঁচ কুড়ি

১ - কোড বলুন। - কোড..হ্যাঁ..ইয়ে..ইশ...এইমাত্তর মনে ছিল..। - নেক্সট স্পার্মসেল প্লীজ। - মিস এগ! মনে পড়েছে। "বাঁশঝাড়"। - শর্টলিস্টেড। রিক্রুটমেন্ট ক্লোজড। ২ - আসুন। - আজ্ঞে? - আসুন। - কিন্তু..। - আসুন। উপায় নেই। - শিওর? - ট্রাক পিষেছে আপনাকে। - তাই বলে নরক? - ভেজ বিরিয়ানির প্যাকেট ছিল আপনার হাতে। ৩ - জনাব! - জনাবিয়ে বেগমজান। - অর্জ কিয়া হ্যায়। - অর্জাইয়ে। - বোলিয়ে ইরশাদ। - আচ্ছা। ইরশাদিয়ে। - রাতে মাটন কষা। হ্যাশট্যাগ তিন শব্দের শায়রি। - চুমু। - চুমাইয়ে। ৪ "মানুষের গল্প" পাঠ করা। হাজার ঝামেলা! ঢোক গিললেন অনাদিবাবু। বাতি জ্বালো রে, দেরাজ থেকে মাথা বের করে চশমায় আঁটো রে...। ৫ মানিব্যাগের দরজা খুলতেই অনিকেতকে ইশারায় ডেকে নিলেন একশোটাকারনোটবাবু। পাঁচশোটাকাজ্যেঠু বারবার বলেছিলেন "ক'দিন জিরিয়ে নে"। একশোটাকারনোটবাবুর একটাই উত্তর; "টাইম ইজ পিপল"।

চিয়ার্স

- ধরুন...। - হুঁ! - ধরুন পৃথিবীতে আর কোনও মন্দ রইলো না...। - ইউটোপিয়া? - ইউফোরিক ব্যাপার। কেউ কারুর মাথায় কাঁঠাল ভাঙছে না। কেউ এগরোলে সস দিচ্ছে না। কেউ লোভে হন্যে হচ্ছে না। উইকেন্ডে সবাই কাহারবা নয় বলে মৃদু দুলছে কিন্তু কমোডে মুখ গুঁজে ওয়াক তুলছে না। - অফিস টাইমের লোকালে ভিড় থাকছে না। প্রেমের চিঠিতে বানান ভুল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তো? - আজ্ঞে! ধরুন তেমনটাই। দুনিয়াটা। - তাতে কী? - যদি তেমন হত মশাই...। - তেমন হলে? - তেমন হলে আয়না থেকে আপনার দিকে গেলাস তাক করে চিয়ার্স বলতে হত না।