Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2021

বই কেনা ও পড়া

*নতুন বইয়ের খবর পাওয়া গেল* দু'সেকেন্ডের মাথায়ঃ গুডরীডস ঘেঁটে দেখা বইটা সম্বন্ধে কে কী বলছে। আড়াই মিনিটের মাথায়ঃ গুগলে অন্যান্য রিভিউয়ের খোঁজ৷ সতেরো মিনিটের মাথায়ঃ বন্ধুকে ফোনঃ ওই বইটা পড়েছিস ভাই? কেমন বল দেখি? অমুক বইটার তুলনায় কেমন? তমুক বইটার তুলনায়? তুই নিশ্চিত ভালো? মা কালীর দিব্যি? দ্যাখ! কিনে ফেলছি কিন্তু। বাইশ মিনিটের মাথায়ঃ অন্য বন্ধুকে ফোনঃ হ্যাঁ রে ভাই, ভটকাই বলছে বইটা বেশ ভালো৷ ওর কথা বিশ্বাস করাটা ঠিক হবে কি? অন্যের বোলিংয়ে ব্যাটা একদম মন দিয়ে ফিল্ডিং করত না কিনা..তুই বলছিস বইটা ভালো? সিরিয়াসলি?  তেত্রিশ মিনিটের মাথায়ঃ আমাজনে (বা অন্য কোথাও) অর্ডার।  দু'দিনের মাথায়ঃ আমাজনের প্যাকেটটা রাক্ষুসে ভাবে ছিঁড়ে ফেলে বইটা বের করে হুড়মুড় করে চার পাতা পড়ে,  তাকে সাজিয়ে রেখে; স্নান করতে যাওয়া/হাতের জরুরী কাজগা সেরে ফেলা/খেতে বসা।  আড়াই বছর পরঃ তাকে রাখা সে বইটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস; সামনের মাসের মধ্যে বইটা পড়ে না ফেললেই নয়৷

যোগসাধনা

বছর তিনেক আগে৷  অফিস থেকে বেরোনোর মুখে ব্রজদার ফোন৷ ভদ্রলোক আমার বাপের বয়সী৷ তবে কফিহাউস আলাপের ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে শুচিবাই চলেনা৷ ব্রজদা ব্যাচেলর দিলদরিয়া মানুষ৷ আড্ডায় সরেস, খাওয়াতে ভালোবাসেন৷ প্রচুর ঘুরে বেড়ান, তাই গল্পের স্টক অফুরন্ত৷ বদগুণ একটাই; বড্ড বেশি কবিতা লেখেন আর সে'সব মাঝেমধ্যে হাসি মুখে শুনতে হয়৷  কবিতা ব্যাপারটা ভালো লেখেন না খারাপ সে সম্বন্ধে আমার কোনও ধারণাই নেই৷ কবিতা ব্যাপারটাই গোলমেলে এবং সম্ভবত লোকঠকানো৷ কাজেই এ বিদঘুটে ব্যাপার আমি চিরকালই এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু ব্রজদার কবিতাগুলো অবশ্য হাসিমুখেই হজম করে থাকি, কারণ চপ-কাটলেট না খাইয়ে উনি কবিতার ডায়েরি নামান না৷  - ব্রাদার, একটি বারে জন্য যে আমার বাড়িতে আসতে হবে। এখুনি। - কী ব্যাপার ব্রজদা? - না এলেই নয়৷ চট করে চলে এসো দেখি৷ তারপর ডিটেলে বলছি৷ - শনিবার কফিহাউস থেকে বেরিয়ে না হয় আপনার ফ্ল্যাটে ঢুঁ মারব..আজ একটু..। - বড় দেরী হয়ে যাবে ভায়া৷ ইট ইজ অ্যান এমার্জেন্সি৷ স্পেশ্যাল মোগলাই পরোটা আর মাটন কষা অর্ডার করেছি৷  ক্যুইকলি চলে এসো৷  এরপর আর না বলা সম্ভব নয়৷ ** নেহাৎ বিভূতি রেস্টুরেন্টের হাইক্লাস মোগলাই আর জ

নিউনর্মাল বিরিয়ানি

- লাঞ্চে বাসি বিরিয়ানির জবাব নেই ভায়া৷ - ট্রু৷ তবে ইয়ে, থার্ড ওয়েভ ঠেকিয়ে রাখা যাবে বলে মনে হচ্ছে না৷ - মাংস হয়ত পাতে সামান্য কম রয়েছে, কিন্তু ওভারনাইট রেফ্রিজারেশনের ফলে ফ্লেভারে একটা অন্য ঘ্যাম চলে আসে, তাই নয় কী? - একদম৷ ইয়ে, এইমাত্র একটা গা-কাঁপানো আর্টিকল পড়লাম। বম্বেতে ইতিমধ্যেই নাকি তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে৷ অবশ্য ঠেকানোটা ওয়াজ নেভার অ্যান অপশন, শুধু ইম্প্যাক্টটাকে যদি একটু মিনিমাইজ করা যেত৷ আসল অস্ত্র হল পাইকারি ভ্যাক্সিনেশন৷ খোলামকুচির মত ছুঁচ গেঁথে যেতে হবে৷  - ডিম সেদ্ধটা অবভিয়াসলি টাটকা৷ বাসি বিরিয়ানির আলু আর তাজা ডিমসেদ্ধর কম্বিনেশনটা কিন্তু আউটস্ট্যান্ডিং।  - একদম তাই৷ আচ্ছা, মাস দেড়েক আগের সেকেন্ড ওয়েভের সেই ডিসাস্টার যেন গত জন্মের কাহিনী মনে হচ্ছে৷ তাই না? অথচ  দু'দণ্ড মন দিয়ে সে'সব কথা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। মেজপিসেমশাই চলে গেলেন৷ পাড়ার মন্টু মাত্র তিনদিন ভুগে...। অফিসেই তো অন্তত জনা চারেক..। অথচ আজ দেখো, সে'সব যেন অন্য জগতের ঘটনা মনে হচ্ছে৷  - আমার একটা পার্সোনাল থিওরি আছে জানো৷ টাটকা বিরিয়ানির স্কেলে সিরাজ সামান্য এগিয়ে৷ কিন্তু বাসিতে আরসালাম ফটোফিনিশে বেরিয়ে য

ডিভাইডেড আইল্যান্ড

কিছুদিন আগে ফ্যামিলি ম্যান -২ দেখলাম৷ টানটান, ঝকঝকে; ওই যাকে আমরা বলি "অ্যাকশন প্যাকড"৷ আর পাঁচজনের মত আমারও ভালো লাগল৷ সে'খানেই দাড়ি টেনে দিলে হত৷ কিন্তু সেই সিরিজের অন্যতম প্রধান চরিত্র রাজিকে ছুঁয়ে আগ্রহের নিশানা গিয়ে ঠেকল শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে৷ সে বিষয় নিয়ে একটা আলগা ধারণা যে ছিল না তা নয়৷ ওই তামিল ইলম, এলটিটিই, প্রভাকরণ ইত্যাদি৷ এলটিটিইকে দুরমুশ করে যুদ্ধে ইতি টানা হয়েছে, নিউজচ্যানেল এবং ইন্টারনেটের বদান্যতায় তাও খানিকটা জানা ছিল৷ অবশ্য শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের বাইরে সে'খানকার ইতিহাস সম্বন্ধে তেমন আগ্রহ এর আগে টের পাইনি৷ শেষে একটা ওটিটি থ্রিলার সে আগ্রহটা সামান্য উস্কে দিল৷ আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি, তাদের অফিসপাট রয়েছে শ্রীলঙ্কায়। কাজেই শ্রীলঙ্কায় কিছুদিন চাকরী করে আসা কিছু মানুষজনকে চিনি৷ কলোম্বোর জীবন সম্বন্ধে খানিক গল্পগুজবও জুড়েছি তাদের সঙ্গে কয়েকবার৷ তবে অফিস পরিসরে যা ঘটে, গল্প-আলোচনা গভীরে পৌঁছয় না৷  এই বইটার খোঁজ দিল আমার শ্রীলঙ্কা-বিশেষজ্ঞ বন্ধু সুহেল৷  বই জোগাড় হল। পড়াও হল৷  গোড়াতেই সহজ কথাটা বলে দেওয়া যেতে পারে। এ বই না পড়লেই নয়৷ শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে আগ্রহী

লোক পোক

স্বপ্নের সিকুয়েন্স। মেসবাড়ি। যেমন হয় আর কী। সাতপুরনো, জীর্ণ। তবে জমজমাট।  দেওয়ালে ঝোলানো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ মনের সুখে দাড়িতে কলপ লাগাচ্ছেন। আর গুনগুন করছেন; "রিমঝিম গিরে সাওয়ান"। পাশের চৌকিতে আধোশোয়া শিব্রাম সেই সুরের তালে ঠ্যাং নাচাচ্ছেন আর চোখ বুজে মনের মধ্যে ফাউল কাটলেটের ছবি আঁকছেন। ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে ঘনশ্যাম দাস একটা ভারিক্কি  ডায়েরি উল্টেপাল্টে দেখে বলছেন, "এ'সব ছাইপাঁশ পাবলিশ করার তাল করছেন নাকি রবিদা"? শিব্রামের উল্টোদিকের চৌকিতে ম্যাদা মেরে বসে আছেন এক গোবেচারা ভদ্রলোক। মুখে একরাশ বিরক্তি।  ঘনশ্যাম দাসের প্রশ্নের উত্তর এলো না। রবীন্দ্রনাথের গুনগুন থামল না। শিব্রামে ততক্ষণে কাটলেট ছেড়ে রাবড়িতে গিয়ে ঠেকেছেন, ঠ্যাং নাচানো অবশ্য থামেনি। এর পাশাপাশি  মান্ধাতা আমলের সিলিং ফ্যানের ক্যাঁচক্যাঁচর।  সে গোবেচারা মানুষটি এ'বার হুঠ করে উঠে দাঁড়ালেন। আচমকা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন; "তোমাদের মত ইরেস্পন্সিবল ইয়ারদোস্ত আমি আর দেখিনি। আমি এত বড় একটা কনসার্ন শেয়ার করলাম অথচ কারুর কোনও হেলদোল নেই। এর চেয়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকলে বরং বেশি লোকের দরদ পাওয়া

বোধদয়

স্যাঁতসেঁতে একটা ঘর৷  একটা দেওয়ালে পাশাপাশি দু'টো ক্যালেন্ডার, একটা বাংলা আর একটা ইংরেজি৷ মা তারা হার্ডওয়্যার স্টোর্সের বাংলা ক্যালেন্ডারটা চার বছর পুরনো, গ্রীনপ্লাইয়ের ইংরেজিটা বছর দুই আগের৷ টিউবের আলোতেও ঘরের ঘোলাটে ভাব কাটছে না। হলুদ দেওয়ালগুলো বেশ বিবর্ণ৷ যে দেওয়ালে ক্যালেন্ডার-জোড়া ঝুলছে, তার উলটো দিকের দেওয়ালে একটা অজন্তার দেওয়াল ঘড়ি৷ ঘড়িটা বন্ধ৷ তবে সময়টা সন্ধ্যের পরেই হবে।  সে ঘড়ির নীচেই ঘরের একমাত্র জানালা, সে'টা বন্ধ৷ জানালা ঘেঁষে রাখা একখানা টেবিল যার বয়স অন্তত আশি হওয়ার কথা৷ সে টেবিলের ওপর বইয়ের স্তুপ। আর একটা কলমদানি। আর একটা টেলিফোন। ঘরের আসবাব বলতে একটা চৌকি, আর দু'টো আলমারি৷ একটা আলমারি স্টিলের, অন্যটা কাঠের৷ কাঠের আলমারিটাও বইয়ে বোঝাই৷   সেই স্টাডি টেবিলের সামনে একটা চেয়ার৷ সে চেয়ারে বসে ঝিমোচ্ছেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক৷ মাথায় যে ক'গাছা চুল পড়ে রয়েছে তার অর্ধেকের বেশিই পাকা কিন্তু মুখ দেখলে মালুম হয় যে বয়স নিশ্চয়ই বাহান্নর বেশি নয়৷ পরণে হাফ শার্ট আর পাজামা৷  আচমকা৷  ঘরের দরজাটা ঘটাং শব্দে খুলে গেল আর ভদ্রলোকের ঝিমুনি গেল চটকে। ঘরে ঢুকল এক ছোকরা গোছের ছেলে,

মেটিয়াবুরুজের নবাব

বিরিয়ানির উল্লেখ ছাড়া ওয়াজিদ আলি শাহ, লখনৌ আর মেটিয়াবুরুজ একটা জবরদস্ত বই লিখেছেন শ্রীপান্থ। বিরিয়ানি ভক্ত হয়েও বলতে পারি সে'টা একটা প্লাস পয়েন্ট। কারণ একবার বিরিয়ানির আলোচনায় ঢুকে পড়লে বাঙালি পাঠকের ফোকাস ডকে ওঠার সম্ভাবনা। সে'সময়ের লখনৌয়ের আড়ম্বর, তেহজিব আর বাদশাহী রসবোধ সম্বন্ধেও ধারণাটা বেশ খানিকটা স্পষ্ট হল (বলা ভালো, মাথা ঘুরে গেল)। একের পর এক ট্রিভিয়া সাজিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে শ্রীপান্থর জুড়ি মেলা ভার, এ বই সে'দিক থেকে টানটান। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ওয়াজিদের চরিত্র যে কতটা ইন্ট্রিগিং, তা মালুম হল। তাঁর চরিত্রের বেশ কিছুদিক নিয়ে এর আগে তেমন মাথা ঘামাইনি কখনও; যেমন শাসক ওয়াজিদ আলি কেমন ছিলেন? সত্যিই কি অপদার্থ ছিলেন নাকি কোম্পানির বদমায়েশিটাই আদত ব্যাপার? এ বই পড়ে সে'সব বিষয়ে খানিকটা জ্ঞান অর্জন করা গেল বটে। আর তৈরি হল আগ্রহ; ওয়াজিদ আলির শাহয়ের ব্যাপারে আরও বিশদে খানিকটা না পড়লেই নয়। এ বই থেকে একটা ছোট্ট অংশ কোট করতে পারার লোভ সামলাতে পারলাম না। রইলঃ ** কোট ** ১৮৫৫ সালে কিছু মোল্লার নেতৃত্বে অযোধ্যায় হনুমান মন্দিরের কাছে একটি মসজিদ গড়ার জন্য আন্দোলন শুরু হয়৷ আন্দোলন

স্ক্রিউ

- কী ব্যাপার দত্ত, অমন ব্যাজার মুখে বসে যে। - ও কিছু না৷ - আরে ভায়া! বলো না৷ - বললাম তো মন্টুদা,  অল ইজ ওয়েল। - অল যদি ওয়েলই হবে তবে সামনে রাখা ডিমটোস্টটা ঠাণ্ডা করে কলমের মাথা চেবাচ্ছ কেন? দস্তুরের ফাইল খুলে রেখে ফ্যাফ্যা করে জানালার দিকে চেয়ে আছ কেন? বলে ফেলো ভায়া৷ কল্যিগ হিসেবে আমার একটা রেস্পন্সিবিলিটি আছে তো। বলেই ফেলো৷  - বেশ৷ বলেই ফেলি৷  - ডিমটোস্টটা ওয়েস্ট করা ঠিক হবে? - আপনিই খেয়ে নিন বরং৷ টাচ করিনি৷ মুখ বিস্বাদ হয়ে আছে৷  - বেশ৷ তা, বলো৷ হয়েছেটা কী। - বাপের ওপর বড় রাগ হচ্ছে মন্টুদা। -  সে কী! হঠাৎ? উনি তো বোধ হয় গত বছরই..। - গত হয়েছেন। রাইট৷ এবং বিদেয় নেওয়ার আগে আমার জন্য টাকার গদি বিছিয়ে যাননি৷ কলকাতার বুকে দু'টো বাড়ি তিনটে ফ্ল্যাট রেখে যাননি।  - ডিমটোস্টের কসম ভায়া৷ তোমার রাগের ডিরেকশনটা ঠিক ধরতে পারছি না..। - বাবা যদি টাকার গদিতে বসিয়ে যেতেন তা'হলে বড়সাহেবের জোরজুলুম এমন নিশ্চুপ ভাবে হজম করতে হত না৷ মুখের ওপর একটা কড়া রেসিগনেশন ছুঁড়ে ভ্যাকেশনে বেরিয়ে পড়তাম মন শান্ত করতে। কোনও হিমালয়ান রিট্রীটে বসে পাইপের ডাঁটি চিবুতে চিবুতে পিয়ানো শুনতাম আর বলতাম, "আই ডোন্ট গিভ