Skip to main content

Posts

Showing posts from October, 2019

সহদেবের আশীর্বাদ

বৈঠকখানার ঢাউস মানুষ সমান জানালাটার শিকে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সহদেব৷ ঘরের বাতি নেভানো ছিল, তা'বলে অবশ্য ঘরের মধ্যে আলোর অভাব ছিল না৷ জানালার ও'পাশে বড় রাস্তা, এমনিতেই কলকাতায় রোশনাই আর হৈচৈয়ের অভাব নেই আর এই পুজোর দিনগুলোয় তো শহরের সমস্ত রাস্তাঘাট আলো আর অজস্র শব্দের ঢেউয়ে ভেসে যায় যেন৷ বছরের এই সময়টাতেই বাড়ির সকলে ঘুরতে বেরোয়; কোনোবার পাহাড়, কোনোবার সমুদ্র, কখনও জঙ্গল৷ তাঁরা ফিরে এলে সে'সব জায়গার চোখ ধাঁধানো সমস্ত ছবি দেখেন সহদেব; মনের ভিতর থেকে আপনা হতেই বেরিয়ে আসে "বাহ্, জব্বর"! গৃহকর্তা সুব্রতবাবু সহদেবকে সবিশেষ স্নেহ করেন, তাঁদের সম্পর্কটা ঠিক বাবু আর পরিচারকের নয়; সে'টা সহদেবও বুঝতে পারে৷ তাঁদের সম্পর্কটা তো আজকের নয়; একসময় সুব্রতবাবুর মা একসঙ্গে দু'জনকে হর্লিক্স গুলে খাইয়েছেন, সুব্রতবাবুর বাবা কম চেষ্টা করেননি সহদেবকে লেখা পড়া শেখাতে৷ কিন্তু স্বভাবে চটপটে হলেও লেখাপড়ার ব্যাপারটায় কোনোদিনই ঠিক সুবিধে করে উঠতে পারেননি সহদেব৷ সবার কি সব হয়? এই না হওয়াগুলো নিয়ে কোনো দু:খ পুষে রাখেননি তিনি৷ সুব্রতবাবু মাঝেমধ্যেই অবশ্য ইচ্ছে প্রকাশ করেন পুজোর ছ

পথের পাঁচালী

পথের পাঁচালীকে গো-টু-বই হিসেবে এতদিন কেন ব্যবহার করিনি কে জানে। এক বন্ধু (সম্ভবত উজান) বলেছিল বুক-ক্রিকেটের মত র‍্যান্ডম পাতা উলটে যে কোনো প্যারা পড়ে ফেললেও আরাম হয়। বিভূতিবাবুর ভাষায় বৃষ্টির গল্প পড়লে খটখটে আকাশে নিচেও গায়ে জলের ছিঁটে এসে লাগে। অমন গদ্য একবার পড়া শুরু করলে আমার মত কাব্য-গাম্বাট মানুষও কবিতা আত্মস্থ করার সাহস পায়। প্লটে চালাকি চলে, কিন্তু অনুভূতি প্রকাশে চালাকি ফলালে তা হয় মাতব্বরির দিকে গড়িয়ে যায় নয়ত ন্যাকাপনায় এসে থামে। সংবেদনশীলতা, স্নেহ আর স্মার্টনেসে; "প থের পাঁচালী" অনন্য। বার বার পড়েও এক ঘেয়ে ঠেক না, অপুদের জন্য মন কেমন এতটুকুও হ্রাস পায় না। বহুদিন পর এ বইয়ে ফেরত গেলাম। শেষ পড়েছিলাম ছেলেবেলায়; তখন অপুর দৃষ্টির বাইরে গিয়ে কোনো কিছু মাপতে পারার কথা নয়। পয়সা থাকলে অপু দিদির জন্য একটা রবারের বাঁদর কিনে দিত; এই সামান্য হাহাকার যে কী প্রবল ভালো লাগা আর মনখারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে সময়৷ আর রথের মেলার নাম করে বাপের থেকে পয়সা নিয়ে দুর্গা তা দিয়েছিল অপুকে; জিলিপি খাওয়ার জন্য। অমন মায়ের মত দিদির কথা ভেবেও যে কী ভালো লাগে, মনকেমন করে। বইয়ের কিছু কিছ

বিশ্বকর্মা

বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটায় অন্তত কলকাতা হতাশ করেনি। বাড়ি টু অফিস আর অফিস টু বাড়ি; যাতায়াতের মধ্যে যতগুলো প্যান্ডেল পেরিয়েছি, প্রত্যেকটাই ছিল নব্বুই দশকের রঙিন গানে ভরপুর। সবচেয়ে বড় কথা নেদু নেদু আলতো-মেজাজের শিউলি-রোম্যান্টিক গানগুলো নয়; কানে বারবার এসে ঠেকেছে 'জেহের হ্যায় কি পেয়ার হ্যায় তেরা চুম্মা'র মত মরমি সুর। বিশেষ কৃতজ্ঞতা পুজো কমিটিগুলোর প্রতি; তাদের মধ্যে বেশিরভাগই লাউডস্পীকার ভাড়া করেছেন জ নগণের কানের পর্দায় পেরেক ঠুকতে চেয়ে। স্পীকারের শব্দ যত খ্যানখ্যানে তত তার মোহময় আবেদন। একটা মনকেমনের ঢেউ বুকের মধ্যে অনুভব করেছিলাম দুপুর দেড়টা নাগাদ যখন অফিসের অনতিদূরের একটা প্যান্ডেল থেকে ভেসে এসেছিল "উফ কেয়া রাত আয়ি হ্যায়, মহব্বত রংগ লাই হ্যায়..ডম ডম ডুবা ডুবা ডুবা ডম ডম ডুবা ডুবা"। সে সুরের কী চমৎকার বাঁধুনি, কণ্ঠের সে কী মখমলে আশ্বাস। সেই গানের মায়াজালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়তে পড়তে এক্সেলশিটে একের পর এক ভুল করা আরম্ভ করলাম; তবে ঘাবড়ে যাইনি। ম্যাথেমেটিক্স হাতড়ে খোদ আইনস্টাইনই যখন তেমন কিছু করে উঠতে পারলেন না, আমি কোথাকার কে। বিকেলের দিকে কোনো পেছন-ভেস