Skip to main content

Posts

Showing posts from July, 2013

মেজাজ ও স্নান

নিজের ওজন বুঝে নেওয়া উচিৎ সকলের। সরি স্যার। ওজন বলতে ভুঁড়ি বা মানিব্যাগের পরিধি মাপতে বলছি না। মেজাজের গভীরতা দিকে নজর দিচ্ছি। গুরুজনেরা বলে গেছেন যে মেজাজটাই আসল রাজা। মেজাজ গড়বড়ে হলে, পকেটে টু পাইস্‌ থাকলেও আপনার ইচ্ছে করবে এইবেলা এলুমিনিয়ামের বাটি হাতে খানিক ভিক্ষে করে আসি। কাজেই মেজাজকে খোকার হাতের মোয়া করে রাখার বিশেষ প্রয়োজন। মুস্কিল হচ্ছে, মেজাজ মাপার যন্ত্র বলতে কিছু নেই। নিজের মেজাজটা যে রাজকীয় না এলেবেলে;সেটা না বুঝলে চলবে কেন। তবে, ইয়ে...উপায় আছে। মেজাজকে আঁক মেপে চিনে নেওয়ার উপায় আছে। কি ভাবে ? তা বলতেই এ পোস্টের পাঁয়তারা। মেজাজ মাপার একটা জলবৎ-তরলং উপায় হল  অতি সহজ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া – “ আপনার এখন কি ভাবে স্নান করতে ইচ্ছে করছে ?

দু'জন

কসবা থেকে গরিয়াহাট যাব। একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি। নেচে-কুঁদে কোনোক্রমে একটা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে উঠতে যাব অমনি দেখি এক বৃদ্ধ এসে হামলে পড়লেন আমার গায়ে। বৃদ্ধ বলছি কারন মাথার চুল ধবধবে সাদা। পোশাক ধোপ-দুরুস্ত, পরনের টিশার্ট’টি কেতাবাজ বললে ভুল হবে না। -       “ ইয়ে মানে আমিই ট্যাক্সি দাঁড় করালাম কি না, আপনার কি বিশেষ প্রয়োজন ?” বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করতেই হল। -       “ ঢাকুরিয়া যাব। আই হোপ দ্যাট ইউ ক্যান গিভ দিস্‌ ওল্ড ফুল আ লিফ্‌ট। “ সম্মতি সূচক হাসি দিতেই হল। দুজনেই উঠে বসলাম ট্যাক্সিতে।

চিরঞ্জিত যদি

চিরঞ্জিত আমায় যদি একবার “ এই ভাই” বলে ডাকতেন

দিবাকর এবং হাওড়া ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজের একটা ডাকনাম দিলেন দিবাকর।   একটা চটের থলিতে  ছয় কিলো গেঞ্জি-কাপড় বয়ে দৈনিক বড়বাজার টু হাওড়া হেঁটে আসেন তিনি। একটা বাস ধরতেই পারেন কিন্তু অফিস টাইমের দম বন্ধ করা ভিড়কে ভীষণ ভয় পান দিবাকর। তবে তার চেয়েও বড় কারণ হচ্ছে হাওড়া ব্রিজের মায়া। সেই সতের বছর বয়স থেকে বড়বাজার থেকে গেঞ্জি কাপড় কিনে রিষড়া ’ র একটা আধ-কানা কারখানায় সাপ্লাই করে চলেছেন দিবাকর। বয়স এখন চুয়াল্লিশ। দিবাকর ভেবে দেখেছেন যে সময়মত বিয়ে হলে তাঁর ছেলে নান্টু এখন ক্লাস এইটে পড়তো আর মেয়ে নিপা ক্লাস ফাইভে। এটাও ভাবা আছে যে তাঁর একটা এলো-আই-সি আর দুটো ফিক্সড্‌ ডিপোজিট হতে পারত এ বয়েসে। বুদ্ধি করে চললে সান্যালদের এক কাঠা জমি কিনে একটা ছোট পুঁচকে বাড়ি হাঁকানো কি মহা-অসম্ভব কিছু কিস্‌সা হত ? মুস্কিল হল , বিয়ে-থা আর করা হয়ে ওঠেনি দিবাকরের। গেঞ্জির কাপড় সাপ্লাই দিয়ে যে দু পয়সা আসে তাতে তাঁর আর পিসিমার সংসার প্রায় চলে না বললেই হয়। তাও ভাগ্যি পিসেমশাই আধ-ভাঙ্গা বাড়িটা রেখে গত হয়েছেন। নয়ত পিসিমা ’ র সাথে ষ্টেশনের বস্তিতে গিয়ে থাকতে হত। এলো-আই-সি ’ র গুড়ে বালি , দিবাকরের নিজের কো

কেউ কেউ

এক দল লোক কবিতা লিখে লিখে ফতুর হয়ে গেলেন। অনেকে বিপ্লব-বিপ্লব করে করে গেঁজে গেলেন। কেউ হুট-হাট ক্যামেরায় খচ্‌খচ্‌ করে চলেন। কেউ হারমোনিয়ামে মেজাজি তাজমহল। কেউ আপিসে ছুট্টে যান, ফাইল ঘাটেন, বস পোষেন, ওয়াপস আসেন। কয়েকজন বলেন ভুতের গল্প মোমবাতিতে আর তেলেভাজায়। কেউ বা বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে “গ্লব-ট্রট্‌” করেন। কেউ যেন চুমু বিশারদ। আর কেউ কেউ ছেলেবেলার ফেলে আসা এঁদো গলির গন্ধ মনে করে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠেন মাত্র।  

সরলীকরণ

রাজনীতির সরলীকরণ হতেই পারে। এবং এই সরলীকরণের ভারি প্রয়োজন রয়েছে। তাতে আখেরে আমাদের প্রচুর লাভ। আহঃ, এই আখের শব্দটিতে কি সুফিয়ানা মেজাজ রয়েছে; আখের রসের মত মিষ্টি বাহার রয়েছে। তবে আখেরের কথা অন্যদিন। আজ কথা রাজনৈতিক সরলীকরণের। বর্তমানের হিসেব-কিতেব ভারি জটিল। এবং কুটিল।  ভোট দিয়ে নেতা ঠিক করা। তারপর সেই নেতাদের হাতে নিজেদের সঁপে দেওয়া। নিজেদের ভবিষ্যতকে তাদের দায়িত্বশীল হাতে অর্পণ করা। নিজেদের ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে রাজনৈতিক মাঞ্জায় ধারালো করে নেওয়া। সরকার-বাহাদুর আমাদের আখের গুছিয়ে দেবেন এমন সব মেজাজি অঙ্কে সামিল হওয়া।  কি অব্যর্থ রোমান্টিসিজ্‌ম। অথচ কি জটিল।

রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা

রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা কাকে বলে ? ব্যাসন মাখা পাতলা-লম্বাটে বেগুনের টুকরোকে; টগবগে গরম তেলে ছেঁকে, কড়াই থেকে তুলে নেওয়ায় যে প্রস্তুতি।তাকে। চীনেবাদামের ঠোঙা থেকে শেষ বাদাম টুকরোটি তুলে; শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে নিজের জিভের ডগা দিয়ে লুফে নেওয়ার যে দেড় সেকন্ড। তাকে। আতপের ধোঁয়া ওঠা সেদ্ধ ভাতে ঘি'য়ের ফোঁটা মিশে যাওয়ার যে সুবাস। তাকে। দাস কেবিনের রঙ চটা টেবিলের এক কোনে বসে, প্লাস্টিকের নুন-দানি নিয়ে খেলতে খেলতে ফিশ-কবিরাজির জন্য যে অপেক্ষা। তাকে। বেদম গরমের রোদ মাখা জুন-দুপুরে- রাস্তার মোরের লেবু-জলের প্রথম চুমুকের গলা বেয়ে নেমে আসা। তাকে।

এক রেল অন্য রেল

রেলগাড়ি শব্দটার মধ্যে কি গড়িমসি স্নেহ । কাঠের হাতলের দুলুনি , বাদাম - ওয়ালার হাঁক , ঘটরঘটর ছন্দ । “ একটু চেপে বসবেন দাদা ” র জুলুম - হীন আবদার । ভাঁড়ে চা । শীতের দুপুরের রোদ ; অসময়ে বৃষ্টির ছাঁট ; ট্রেন জানলায় । কলেজ - ফেরতা পথে রেলগাড়ির ফাঁকা সীটগুলোকে অবজ্ঞা করে দরজায় দাঁড়ানো ; সদ্য আবিষ্কৃত প্রেমিকার আঙুলের ডগায় গোপন নিষ্পাপ ছোঁয়া ।    ভিড় মেখে বন্ধুদের সাথে অক্লান্ত সব গল্পগুলো ।   কাঠের সীটের কোনায় কোনক্রমে বসে আনন্দবাজারি শব্দছক্ ‌ নিয়ে নাড়াচাড়া । ট্রেন শব্দটার মধ্যে বড় কঠোর ভাবে একটা কারখানা রয়েছে

তস্য তস্য ঈশ্বর

তেমন কিছু নয়। একটি পোকা। কালচে, পুচকে, বিশ্রী; যেমন তারা হয়। আঙুলের ডগায় কেতরে পরে আছে। চলৎশক্তি-হীন বলেই বোধ হয়। অকিঞ্চিৎকর হুল’টির ইতিউতি নড়াচড়ায় বোঝা যায় যে বেঁচে রয়েছে। আয়তনে একটি বাঁশকাঠি চালের দানার চেয়ে দেড়গুনের বেশি  বড় নয়। মুদির দোকান থেকে বয়ে আনা ডালের প্যাকেট থেকে বের হওয়া প্রাণী। দোকানিকে যে রগড়ানি দিতে হবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এই পোকাটাকে টুসকি মেরে উড়িয়ে দিতে মন চাইলো না। অতি চমৎকার দেবতা দেবতা ভাব মনে। চটকে দিতে পারি, ক্যারমের স্ট্রাইকার চালানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিতে পারি, আলতো চাপে ভবলীলা সাঙ্গ  করে ঝাড় দিয়ে সটকে দিতে পারি। আমি এই পোকাটির ঈশ্বর; আমি রাখলে থাকবে-আমি মারলে মরবে। আমার মুখের সামনে এই মুহূর্তে কেউ আয়না ধরলে  নিজের স্মিত হাসিটুকু দেখতে পারতাম।