Monday, December 31, 2012

কসম নববর্ষের


নিউ ইয়ার ইজ হিয়ার। সামগ্রিক ভাবে উত্তেজিতনা, রাতে অফিস পার্টিতে মাগনা-মদের ফোয়ারা ছুটবে বলে নয়, রিসলিউশণের সময় চলে এসেছে বলেনতুন বছরে অমুক-পণ, তমুক-পণ করে নিজের কলজেটাকে চাঙ্গা রাখাটা বিশেষ জরুরীতাছাড়া আজকাল নিউ ইয়ার রিজলিউশন ব্যাপারটা বেশ চলতি, এক-দুটো বাজারে না ছাড়তে পারলে লোকে ভাববে উলুবেড়িয়া থেকে লুঙ্গি পড়ে এসেছে বোধ হয়

তবে ব্যাপারটা আমি বেশ সিরিয়াসলি নিচ্ছিস্পষ্ট একট লিষ্টি-সৃষ্টি করেছি; ২০১৩ জুড়ে কী করিবো; কী করিবো না :

মুলাকাত

সমুদ্দুরের ধারে বসেরাত সোয়া এগারোটাশেষ ডিসেম্বরছ্যাত করে ছুয়ে যাওয়া হাওয়াপুরোনো দীঘার সৈকত-চত্তর প্রায় সম্পুর্ন ফাঁকাশেষ চা-ওয়ালা এলুমিনিয়ামের বালতি বয়ে ওয়াপস চলে গেছে আধ ঘণ্টা আগে। এই ঠান্ডায় একটু চা পেলে মন্দ হতো না কিন্তু উপায় নেই; তার জন্যে হোটেলে ফিরতে হবে। কিন্তু বসে থাকতে থাকতে নেশা ধরে গেছিলো। উঠতে গভীর অনিচ্ছা। অগত্যা গায়ের শালটাকে আরও আঁকড়ে বসলাম।

অফিসের সঙ্গী-সাথীরা হোটেলে আড্ডায় মশগুল। ফেরত গেলে সেই গতানুগতিক আধো-অফিস-আড্ডা। ধুর সমুদ্রের ধারে এমন নিরবিলি খুঁজে পেলেই বাপ্টুদার সেই অমোঘ বাতেলাতা মনে পড়ে যায় ; “ সমুদ্রের বালি-জল-হাওয়া মেলানো পরিবেশের মত এমন ল্যাদানুকূল পরিবেশ আর হয় না। হুল্লোড় বিহিন সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকার চেয়ে স্বাস্থকর মেডিটেশন আর হয় না।

ছোটমামা বলেন; পুরীর সমুদ্র হচ্ছে সত্যজিত আর দীঘার সমুদ্র হচ্ছে সন্দীপ। অনস্বীকার্যতবে পুরোনো দীঘার সৈকতের এই বিশেষ নিরবিলি অঞ্চলটি আমার ভীষণ প্রিয়, খোঁজ দিয়েছিলো ছোটমামা'ই

আলু-থালু ভাবতে ভাবতে চোখে একটু ঝিম লেগে এসেছিলো এমন সময় অনুভব করলাম পিঠে কেউ হাত রেখেছে।

Sunday, December 30, 2012

খালাসীটোলা কী ভাবে মুছে যাবে

এদিকে
অনলাইন-সোস্যাল-বাজারি পরিবেশে, জনৈকার সাথে জনৈকয়ের অচানক আলাপআপনি-সম্বোধন ঝনাত করে সম-বয়স্কতা ও সম-মনস্কতা আবিষ্কার করে এবং  তুইতে নেমে আসা। ঈষত স্নেহ ও ডাকনাম বিনিময়। বন্ধু-সুলভ গদ্য কথা।

এমন সময় প্রশ্ন আসে পান-প্রীতির। বেবাক সাড়া দুজনেরই। দুটো সপাট খালাসিটোলা ভ্রমণের ইচ্ছে মুখোমুখি মিলিত হয়একে অপরের মন চাপড়ে নেয়। বাংলায় গান মেলে, চোলাই তালে।  

মন-ছন্দ মিলে দুজনে স্বীকার করে যে নেশা মদে নয়; সেবন-পরিবেশে লুকিয়ে রয়েছে। অতএব একে অপরকে আর একটু বুঝতে; চিনে নিতে হবে একে অপরের প্রিয় কোলকাতাইয়া-মাদক পরিবেশটিকে।
শুরু করলেন জনৈকা। নিজের প্রিয় মদ্য-ঠেকের লিস্টি;
সবেকিয়ানা-সিক্ত-ব্রডওয়ে হোটেল থেকে রুফ-টপ-রোম্যান্স-মাখা-ব্লু এন্ড বিয়ণ্ড থেকে সাহেবি-স্মার্ট-রুচি-রঞ্জিত-অলিপাব হয়ে অন্য মেজাজের সঙ্গীত-সহ নেশা ছড়ানো ট্রিন্কাস পর্যন্ত

Saturday, December 29, 2012

বিদায় পরিচিতা

এই ছিলুমএই হাপিস

বাবার চাকরি, বাবার ভোট, মার হাতের পরোটা, মার ভোট, দাদার ক্রিকেট, দাদার ভোট
আমার কলেজ, আমার সদ্য একুশ, আমার হরিণ মাংস, আমার ভোট
আমার বন্ধুরা, আমার বন্ধুটিআড্ডা-গপ্প-শয়তানীআমাদের এক রাশ ভোট

আমার বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন, সুইজারল্যান্ড বা সিংগাপুরআহ, আর আমার ভোটটি।

বাবা বলতেন, আমি পড়াশোনা শেষ করে নিজে চাকরি করে বিদেশ ঘুরে আসবো। বাবা-মাকেও ঘুরিয়ে আনবোতিনটি ভোট, সেজে-গুজে বিদেশ ঘুরে আসবে
মা বলতেন; আমার বর আমায় বিদেশ নিয়ে যাবে। অন্য একটি পরিবারঅন্য একগুচ্ছ ভোট
বন্ধুটি বলতো আমি তোমায় বিদেশ দেখাবো, দুর্দান্ত সব ল্যান্ডস্কেপ্স, মন মাতানো শহর; প্রযুক্তির বিস্ফোরণ। সমস্ত”। একটি অসহায় সহ-পড়ুয়া ভোটনাদান ভোট
সবাই জেনে গেছিলো যে এই বুদ্ধু লড়কী বিদেশ ঘুরতে যেতে চায়।

Wednesday, December 26, 2012

হাফ-সোয়েটারের ব্যাপার

“অল্প শীতে হাফ সোয়েটার এবং দড়াম শীতে ফুলভারী অপরূপ যুক্তিঅর্থাত্‍ অল্প শীত আমাদের হাত দুটো টের পায় না, শুধু বুক টের পায় এ দুই হাতের শীতানুভূতি কী ভীষণ ভাবে কম ? বাহা যুক্তি

শুধু হৃদয় বাঁচালেই হবে ? বাইসেপয়ে কী ইমোসন  নেই ? ট্রাইসেপ কী অভিমান-হীন  ?এমন সপাট কব্জির কী ঠান্ডায় ককিয়ে উঠতে নেই ? কনুই মানেই কী বেওয়ারিস আঁকশি ? বুক-পিঠ মুড়ে রেখে, হাতকে নভেম্বরের হাতে অসহায় ছেড়ে দিতে আমাদের একটুও বাঁধে না ? সেই কবে ডিসেম্বরে শীত কড়া হবে বাংলায়, তবে গিয়ে হাফ-সোয়েটারয়ের পালা চুকে ফুল-সোয়েটার এসে হাতের জান বাঁচাবে ।
নিজেকে জগন্নাথ করে রাখার এই মন-বৃত্তি আমাদের কাঁটিয়ে উঠতে হবে। বাঁচতে হবে। সোয়েটার হবে তো ফুল নয়তো হবে না। গ্রিটিংস কার্ডের মতই, হাফ-সোয়েটার একটি ফ্যাশন-ব্যবসার ইনডাষ্ট্রীয়াল ভাঁওতা মাত্র ”

-          -   শ্রী শ্রী ছোটমামা কথিত ( কেন তিনি হাফ-সোয়েটার পড়েন না; এ প্রশ্নের উত্তর দিতে। জন-স্বার্থে ব্লগে টুকে রাখা হলো )

Monday, December 24, 2012

নাগর - নাগরিক

অপূর্ব থেকে অপূর্বতর হয়ে চলি আমরা। স্নিগ্ধ থেকে স্নিগ্ধতর। সভ্যতার চুমুতে চুমুতে ঢেকে যাই ক্রমশ। ভারত আমার ভারতবর্ষ গান হয়ে ওঠে।

নাগর হয়ে উঠুন নাগরিকচমকিলা হয়ে উঠুনছলকে উঠুন মেজাজে।

ঢুকে যান খেলার মাঠেখেউড় করুনইট ছুড়ে ফাটিয়ে দেওয়া হোক খেলোয়ারের মাথাগ্যালারিতে আগুন জ্বেলে দিন। তবেই না খেলা মর্ম-স্পর্শী। তবেই না আপনি সাপোর্টার”।

ফুটপাথ নজরে পড়েছে নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে যানজলবিয়োগ সেরে নিন। জীবন সহজ হবেআসবে আমেজ। আর চিপিক করে রাস্তায় থুতু ফেলতে শিখুন বুক চিতিয়েএও এক ধরনের প্রাণায়াম।

টিকিটের জন্যে লাইনে দাঁড়িয়ে কী তাজ মহল হাঁকাবেন ফাঁক দেখে নিজেকে গুঁজে দিনআদায় করে নিন সুবিধে বাকীদের মাথায় কাঁঠাল ক্র্যাক করে।

Sunday, December 9, 2012

ট্যাক্সির টক্করে

উবের ওলার ঠেলায় কলকাতার ট্যাক্সি অ্যাডভেঞ্চার কমে আসছে। ইলেক্ট্রনিকালি সার্জ-সহ ভাড়া দিতে গায়ে লাগে না। টেকনোলজির কাঁঠাল কেউ মাথায় দমাদম ভাঙলেও গায়ে লাগে না। কিন্তু ওলা-উবেরের আগে ব্যাপারটা অন্য রকম ছিল। শুধু অন্য রকম নয়; রীতিমত অ্যাডভেঞ্চার।
আমি সেই সব দিনগুলোতে অ্যাডভেঞ্চারিস্ট ছিলাম । ট্রেকিংয়ে গিয়ে নয়, জঙ্গলে পথ হারিয়ে নয়; আমার যাবতীয় অ্যাডভেঞ্চার ছিল কলকাতায় ট্যাক্সি পাকড়াও করার গালগল্পে। সে এক জমজমাট উত্তেজনা, বুকে দমাদম হাতুড়ি।

কী রকম?

এই ধরুন রাত আটটা। পার্ক স্ট্রিট। ফাঁকা এক জোড়া ট্যাক্সি ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।
প্রথমটিকে ধরলাম; “বালিগঞ্জ ফাঁড়ি যাবে ভাই?”
-“বেহালা যাবেন দাদা?” সপাট উত্তর।
-“বেহালা? আরে আমি চাইছি বলিগঞ্জ যেতে....বালিগঞ্জ ফাঁড়ি”!
-“আমি বেহালা যাবো, ইচ্ছে হলে চলুন...নয়ত অন্য ট্যাক্সি দেখুন”।
-“ইয়ার্কি পেয়েছেন নাকি ? আমি বালিগঞ্জ যাব!”
-“পঞ্চাশ টাকা বেশি লাগবে, বলিগঞ্জ যেতে হলে...”।
-“কী ? জুলুম নাকি ?”।
-“গলা তুলে আওয়াজ দেবেন না স্যার, গায়ে পড়ে ইনসাল্ট সহ্য করবো না...”!
-“বটে?আপনি এমএলএ অনিল মিত্রকে চেনেন? আপনি জানেন সে আমার কে হয় ”?
-“ আপনি জানেন হাত কাটা কার্তিককে চেনেন? আপনি জানেন সে আমার কে হয়”?
_ “বটে? আপনার গাড়ির নম্বর আমি পুলিশে দেবো”!
-“বিধানসভায় দিন, কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করবেন না”!

ভীষ্ন জরুরী দরকার। ট্যাক্সি না পেলেই নয়। হুড়মুড় করে ছুটে গেলাম পাশেই দাঁড়িয়ে থাক দ্বিতীয় ট্যাক্সিটির কাছে। ভাবলাম এইবারে নিজেই ট্যাক্সির দরজা খুলে গ্যাঁট হয়ে বসে পড়ব। তবে দরজার হাতলে হাত দেওয়ার আগেই ড্রাইভারের প্রশ্ন: “দম করে দরজা খুলবেন না স্যার, যাবেন কোথায়”?

-“ যেখানেই যাই,আপনি নিয়ে যাবেন”, কড়া হতে চেষ্টা করলাম। গলা ইস্পাত কঠিন করতে চাইলাম কিন্তু কেমন একটা কুঁক শব্দ বেরিয়ে সব মাটি করল।
-“ট্যাক্সির ইঞ্জিন ডাউন হতে পারে”, নির্ভীক উত্তর।
-“ইঞ্জিন ডাউন হতে পারে? হতে পারে মানে কী? ইঞ্জিন ডাউন আছে না নেই”?
-“যাবেন কোথায়”?
-“সেটা শুনে বলবেন যে সত্যি ইঞ্জিন ডাউন কী না”?
-“অত কথার সময় নেই আমার”!
-“বালিগঞ্জ যাবো”!
_ “আশি টাকা বেশি লাগবে”।
-“হোয়াট ? আশি? মগের মুলুক নাকি?”
-“ইঞ্জিন ডাউন আছে, অন্য ট্যাক্সি দেখুন”।
-“পঞ্চাশ টাকা বেশি দিতে রাজি আছি”, সত্যিই ভীষণ জরুরী দরকার ছিলো।

-“উঠে বসুন”, পেছনের দরজা খুলে দিতে দিতে বললেন ড্রাইভার-দাদা।