Skip to main content

Posts

Showing posts from November, 2022

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু

বাটপার

- স্যার, সরি। ভেরি সরি। আর করব না এমনটা! মাইরি বলছি। ভদ্রকালীর দিব্যি...। - মন্টু, শোনো...শোনো...। - গড প্রমিস করছি স্যার। এ'বার ছেড়ে দিন। দিব্যি দিয়ে বলছি আমি আর জীবনে পকেট মারব না। আমি এ'পাড়াতেই আর আসব না। এক্কেবারে খোদার কসম স্যার। এইবারটি ছেড়ে দিন মাইরি। আমি বুঝতে পারিনি জাস্ট...। শুধু এ পাড়া কেন, এই ডিসট্রিক্টে যদি ফের আমায় দেখেন তা'হলে সোজা চাক্কু চালিয়ে দেবেন। কিচ্ছুটি বলব না...। - আহ মন্টু...। - প্লীজ ছেড়ে দিন স্যার...। - আমার পা ছাড়ো আগে...। - কিছুতেই না, মরে গেলেও আপনার পা ছাড়ব না। আমি ভগবান স্যার, আমি ছুঁচো। খামোখা একজন পকেটমারকে সাইড করে নিজের হাত গন্ধ করবেন কেন বলুন। প্লীজ দাদা...থুড়ি...স্যার...। ছেড়ে দিন না...আমি ছাই কী করে বুঝব বলুন, যে সাত জেলা কাঁপানো গুণ্ডা-শ্রেষ্ঠ বিধু হালদার অমনভাবে লোকাল ট্রেনে বসে সল্টেড বাদাম চিবুবে। আর সব দোষ আমার আঙুলের, আপনার ফতুয়ার আলগা পকেট পেয়ে সুট করে আঙুল এগিয়ে গেল মাইরি। তা তখনই আমায় দু'টো থাপ্পড় মেরে দিতে পারতেন তো। - তোমার ভুল হচ্ছে মন্টু...। - আচ্ছা বেশ, না হয় একটা ঠ্যাং ভেঙ্গে ছেড়ে দিতেন। আড়াই মাস লেংচে চলতাম। বেশ হত।

কলেজস্ট্রিট ও চলে যাওয়া

"দাদা, একটা ডিমরুটি৷ ডবল ডিম৷ একটু বাড়তি পেঁয়াজকুচি দেবেন প্লীজ?রুটির মাথাটা একটু বেশি বাদ দেবেন৷ হ্যাঁ, অতটাই৷ আর খুব কড়া ভাজবেন না, কেমন"? দু'পাশ দিয়ে তরতরিয়ে বয়ে চলছে শশব্যস্ত কলেজ স্ট্রীট৷ হাতে সদ্য কেনা সাতপুরনো বই খানতিনেক, সেই হলদ ঝুরঝুরে কাগজের গন্ধ আর দরদামের ক্লান্তি মিলেমিশে বিকেলটা বড় মায়ার৷ স্টিলের ছোট গেলাসে চামচ দিয়ে ডিম ফেটানোর শব্দ হুট করে বুকে এসে ঠেকে৷ যাহ্, এইবার চলে যাওয়া৷ অবশ্য খানিকটা গড়িমসি করাই যায়৷ ইউনিভার্সিটির দিক থেকে হাঁটা শুরু করে কফিহাউসের সামনে পৌঁছোলে একটা পছন্দসই লেবু সরবতওলা পাওয়া যাবে৷ সে সরবতের গেলাস হাতে আরও মিনিট দশেক আদায় করে নেওয়াই যায়। পুরনো পাড়ার গন্ধ, চেনা হইহট্টগোল, আর সে'সব ছাপিয়ে মনের মধ্যে "আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই" মার্কা বিহ্বলতা; মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে৷ লেবুর সরবতের গেলাসটা অত শক্ত করে না ধরলেও চলত বটে; কিন্তু ওই৷ ও'ভাবেই যদি অন্তত শেষের দশটি মিনিটকে টেনেহিঁচড়ে নিলডাউন করিয়ে রাখা যায়৷

দুই খোকা

মফস্বলি ওই কোণাটা নেহাতই জলাজঙ্গল। সাপখোপ, পোকামাকড়, ঝোপঝাড়, কাদাজল; কোনও কিছুরই অভাব নেই৷ তবে নরম রোদ্দুরের দুপুরে ও'দিকটায় গেলে আরামদায়ক ছায়া আর নদী ছুঁয়ে আসা তুরীয় ঠাণ্ডা হাওয়া জুটতে পারে। সে লোভেই ও'দিকটায় গেছিলাম। বসেছিলাম একটা গজিয়ে ওঠা ছোট্ট শিবমন্দিরের চাতাল ঘেঁষে। আচমকা, চার্চের পাঁচিল টপকে দুই স্কুল-টেক্কা দেওয়া ছোকরা এ'পাশে নেমে এলো৷ আমাকে খানিকক্ষণ সন্দিগ্ধ চোখে জরীপ করার পর বুঝল আমি স্পাই নই, বরং আমার চোখে বোধ হয় সামান্য প্রশ্রয়ই ছিল। এরপর ঝাড়া আধঘণ্টা সে দু'জন স্রেফ রকমারী বাঁদরামি করে কাটিয়ে দিলে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখে গেলাম৷ ব্যাটারা গাছ বেয়ে ওঠা নামা করলে৷ টারজানের মত হাঁক পাড়লে অকারণ৷ চেল্লামেল্লি করলে, হেসে গড়াগড়ি খেলে৷ শ্যাডো বোলিং করলে। একে অপরকে গাঁট্টাও কষালে বোধ হয়। আবার ঠিক আধঘণ্টার মাথায় আবার পাঁচিল টপকে সরেও পড়লে। ও'টুকু সময়ের মধ্যেই মনপ্রাণ আলো করে দিয়ে গেল নাম-না-জানা দু'টো ছেলে। বেঁচেবর্তে থাক বাপেরা, আনন্দে থাক। আরও বহুবছর যেন ওরা ও'ভাবেই অপ্রয়োজনে পাঁচিল টপকে এই নিরিবিলিতে এসে হুলস্থুল পাকাতে পারে৷ দু'দিন বইতো নয়৷ প

বাইজুবাওরা

বাইজুর দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা জানিয়েছেন তাঁরা মর্মাহত এতগুলো মানুষকে ছাঁটাই করতে হল বলে। আড়াই-হাজার মানুষকে বাদ দিতে হল নিতান্ত নিরুপায় হয়েই, "প্রফিটেবিলিটি টার্গেট" বাগে আনতে। ব্যাপারটা এই যুগে দাঁড়িয়ে খুব একটা অদ্ভুত নয়, এমনটা তো আকছারই হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা কিন্তু বাইজুপ্রধান যে মনভার করা "ওপেন লেটার"টি বাজারে ছেড়েছেন, সে'টিকে আলাদা করে স্যালুট না করে উপায় নেই। মুনাফা ম্যাক্সিমাইজ করতেই যুগেযুগে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, ব্যাপারটার এথিকাল দিকে যাওয়ার কোনও মানে হয়না। কিন্তু এমন বুক বাজিয়ে আহা-উঁহু দুঃখ প্রকাশ করে পি-আর পয়েন্ট আদায় করতে বুকের পাটা লাগে। বাইজুপ্রধান সত্যিই এর জন্যে প্রশংসার দাবী রাখেন। আড়াই হাজার মানুষের চাকরী গেল। আড়াই হাজার। ইংরেজিতে বলি, কানে তা'তে 'সুইটলি' বাজবে হয়ত; ট্যু অ্যান্ড আ হাফ থাউজ্যান্ড চাকরীজ; জাস্ট ফুড়ুৎ। সেই ঘ্যাচাং খবরটা মোলায়েমভাবে পেশ করে বাইজুপ্রধান চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছেন, "কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। আই অ্যাম সরি। কিন্তু কী করব বলুন, আমাদের এমন স্যাটাস্যাট গ্রোথ হবে সে'টা আগে থেকে ঠিক আঁচ করতে পারিনি। (যে

মামার রিভেঞ্জ ফর্মুলা

- মামা, লোকে বলছে সাকসেস ইজ দ্য বেস্ট রিভেঞ্জ। এমন সাকসেসফুল হতে হবে যাতে হাড়বজ্জাত লোকজন হিংসেয় জাস্ট জ্বলে-পুড়ে খতম হয়ে যায়। - বাহ্‌, তা'হলে আর চিন্তা কীসের। বদলার চিন্তা না করে, সাকসেসফুল হওয়ায় মন দে। - খাটাখাটনি করছি বটে, তবে সাকসেস-টাকসেস ঠিক গ্রিপে আসছে না। - তবে আর মরাল থিওরি কপচে হবেটা কী। যা গিয়ে দু'টো গাঁট্টা মেরে আয়। পারলে আড়াল থেকে ঢিল ছোঁড়। - মারধোর করলে বড় লাগে। গাঁট্টার বদলে চিমটির সিচুয়েশন এলেই আমি ক্র্যাশ করে যাবো। নার্ভ ধরে রাখতে পারব না। - গুণ্ডা লাগা। - গুণ্ডা? তুমি শকুনি না কংস? - সাকসেসফুল হয়ে লোকজনকে জেলাস করতে পারবি না। লাথি-ঘুষি চালাতে পারবি না। গসিপ ছড়াতে পারবি? - গসিপ? আড়ালে-আবডালে নিন্দে করতে হবে? - শুধু নিন্দে নয়। সে নিন্দে ডাহা মিথ্যে হতে হবে। স্ক্যান্ডাল তৈরি করতে হবে। ওটাই হচ্ছে কোল্ডেস্ট রিভেঞ্জ। - মামা, আইডিয়াটা ভালো। কিন্তু... - আবার কিন্তু? - মিথ্যে বলতে খারাপ লাগে না। কিন্তু আমি ঠিক গুছিয়ে বলতে পারিনা। ছড়িয়ে ফেলি। খেই রাখতে পারিনা। গুলগুলো ইনকসিস্টেন্ট হয়ে যায়। - নাহ, ওই নার্ভ নিয়ে গসিপ ছড়াতে যাসনা। - মামা, আমার আর রিভেঞ্জ নেওয়া হবে না? এত অ

বেলিয়াতোড়ের লালুর মালাই-চা

আজ বিকেলের দিকে যখন বেলিয়াতোড় মোড় ক্রস করছিলাম; তখন পেটে খিদে তেমন ছিলনা, তার আগে বিষ্ণুপুরের মোনালিসা হোটেলের লাঞ্চটা ভালোই হয়েছিল৷ কিন্তু অমন সারিসারি মিষ্টির দোকানে থরে থরে সাজানো ম্যাচার গ্র ‍ ্যাভিটেশনাল পুল ঠেকিয়ে রাখা গেল না৷ ম্যাচার প্রতি আমার তেমন টান নেই, কিন্তু জেনুইন হুজুগ ব্যাপারটাকে সমীহ না করে থাকা যায়না৷ "লালু মেচা" দোকানটার সামনে দাঁড়ালাম কারণ সে'খানে দেখলাম জনসমাগম অন্যান্য দোকানের তুলনায় বেশি৷ ম্যাচা খেলাম; ওই যে বললাম - আমার জিভে মন্দ ঠেকেনা, তবে তা নিয়ে পদ্য লেখাটা বাড়াবাড়ি৷ কিন্তু লালু মেচার দোকান জাস্ট জ্বালিয়ে দিল দু'টো আইটেমে; প্রথমত, চপ৷ দ্বিতীয়ত, মালাই চা৷ ইয়াব্বড় চপ, ভেজিটেবল তবে ট্র ‍ ্যাডিশনাল টেক্সচারের নয়৷ সে' চপের বেসনের পরতটা হাইক্লাস আলুর চপের মত৷ আর ভিতরের সবজির পুরটা বিটের লালে লাল নয়; পাঁচমেশালির হলুদ৷ স্বাদে সত্যিই অনন্য৷ দেদার বিটনুন ছড়িয়ে, শালপাতায় মুড়ে দোকানিদাদা এগিয়ে দিলে সেই ধোঁয়া ওঠা চপ। আমরা পত্রপাঠ উড়িয়ে দিয়ে দু'নম্বর চপখানা চেয়ে নিলাম৷ কিন্তু ওই চপের চেয়েও উচ্চমার্গের ব্যাপার হল গিয়ে ওই মালাই চা৷ আমি চা-প্রেমি আ

রামলীলা আর মেলা

নয়ডা স্টেডিয়াম লাগোয়া ময়দানে রামলীলার জবরদস্ত মেলা দেখে এলাম আজ৷ সে'খানে পৌঁছনো মাত্রই বেগুসরাইয়ে মেলা ঘোরার সুখস্মৃতি দিব্যি মনের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে গেল। হাইক্লাস মেলার সমস্ত রসদই ছিল। বিভিন্ন সাইজের নাগরদোলা, রকমারী খাবারদাবারের ঝলমলে সব স্টল, কচিকাঁচাদের হইহল্লা, আধবুড়োদের মাতব্বরি, খতরনাক মউত কা কুয়া, ছোটখাটো একটা সার্কাস, বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটানোর আয়োজন, জিলিপির দোকান; সাজসরঞ্জামের অভাব ছিলনা৷ যা বুঝলাম, নাগরদোলার টিকিটের দাম হুহু করে বেড়েছে৷ অবশ্য কোনও কিছুর দামই তো পড়তির দিকে নয়, নাগোরদোলাওলাদের আর কী দোষ। তবে খরচ বাড়লেও, তাতে মেলামুখো মানুষের আগ্রহ মিইয়ে যায়নি৷ আর যাই হোক, করোনায় দু'বছর দমবন্ধ করে বসে থাকার পর চলাফেরা জমায়েত হৈ-হুল্লোড় সবে শুরু হয়েছে যে। গোড়াতেই বলেছি। এ মেলা খানিকটা বিহারের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে৷ সেই উস্কানি পূর্ণতা পেল লিট্টির দোকানে এসে৷ লিট্টিদাদা ব্যস্ততাও চোখে পড়ার মত৷ ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজনের মেলায় লিট্টির এই সমাদর দেখে খানিকটা গর্বও হল বটে৷ বিহারের প্রতি আন্তরিক টানটা রয়ে গেছে দেখছি। আমাদের ও'দিকে মফস্বলের মেলায় রোলের দোকান