Skip to main content

Posts

Showing posts from November, 2016

বলরামবাবুর শখ

নিউ ক্যালক্যাটা হার্ডওয়্যারের দোকানটা থেকে উত্তরের দিকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলে একটা সরু গলি বাঁ দিক থেকে রাস্তায় এসে মেশে। গলিটার মুখেই একটা ল্যাম্পপোস্ট। শীত আর নিস্তব্ধতা মিলে ল্যাম্পপোস্টের বাতিটার নিভু নিভু আবেশে একটা ছন্দ এনে দিয়েছিল। সে'খানে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালেন বলরাম দত্ত। হাতঘড়িতে তখন রাত পৌনে বারোটা। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। মিনিট দশেকের মধ্যেই একটা রিক্সা এসে থামল তাঁর সামনে। রিকশাচালকের নরম সুরের"উঠে পড়ুন"য়ে ভর দিয়ে রিক্সায় উঠে বসলেন তিনি। নার্ভাসনেস, শীত আর রাত মিলে যে রিনরিন বলরামবাবু গা জুড়ে অনুভব করতে পারছিলেন, সে'টা স্তিমিত হতে মিনিট সাতেক সময় লাগল। রিক্সা ততক্ষণ অবশ্য থেমে থাকেনি। গলার শুকনো কাঠ ভাবটা কেটে যেতেই, হাওয়ার বরফ শীতলতায় মোচর দিতে কথা শুরু করলেন বলরামবাবু নিজেই। - আপনিই তবে...? - আজ্ঞে। - আমরা কোথায় যাচ্ছি? - ইলিশ জলের কত ফুট নিচে ডিম পাড়ে জানেন? - না। কেন? - আমরা কোথায় যাচ্ছি জেনে কী করবেন? আপনার কাজ হওয়া নিয়ে কথা। ** পাড়ার এত কাছে এত নিরিবিলি জংলা আছে, সে'টা বলরামবাবুর জানা ছিল না। রিক্সা থেকে যখন নামলেন তখন রাত

অনুপ

"মিউজিক"। একটা শব্দে বৃদ্ধ নুয়ে পড়েন। অনুপ সে'টা ভালো মতই জানে। রহিস বুড়োকে দেখভালের জন্য অবশ্য লোকের অভাব নেই। আয়া, পরিচারিকা, নার্স মিলে জনা চারেক সেবিকা চব্বিশঘণ্টা তাঁর সেবাশুশ্রূষায় মগ্ন। অনুপের কাজটা অবশ্য অন্য। তাঁকে সঙ্গ দেওয়া। বই পড়ে শোনানো। খবরের কাগজ পড়ে শোনানো। চিঠিপত্রের উত্তর দেওয়া। হুইলচেয়ারের সাথে সাথে বাগানে হাঁটতে বেরনো। ইত্যাদি। তবে অনুপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে "মিউজিক"। বৃদ্ধ আরথ্রাইটিসের ব্যথায় ককিয়ে ওঠেন মাঝেমাঝেই। সে কী অসহ্য যন্ত্রণা আর বৃদ্ধের সে কী আর্তি। যন্ত্রণা গাঢ়  হলেই বৃদ্ধ কাঁপা ঠোঁটে ফরমায়েশ করেন "মিউজিক"। অনুপ তখন রকমারি গান চালিয়ে বৃদ্ধের ব্যথা শান্ত করে। সঙ্গীত। মেঘ মেঘ, নীল নীল, তুলো তুলো স্বপ্নের মত। গলায় বুকে কানে দানা দানা তুষার কুচির মত আদর জমে থাকে; তা'তে যাবতীয় ব্যথা জব্দ হয়। ঝর্ণার ঝুরঝুরের মত শীতল হয়ে ওঠে বুকের ভিতরটা। অনুপ জানে। বৃদ্ধ সঙ্গীতে বেঁচে। ** - খোকা! - বলো বাবা। - বলছিলাম, অনুপকে কি হসপিটাল থেকে আজ রিলীজ করবে? - অনুপ? হসপিটাল? - অনুপ। আমার সেক্রেটারি। - উফ। তোমায় স্মার্টফো

থিওরি অফ চলে যাওয়া

- আবার। - আবার। - উফ। - ধুস। - তবে তুই বড় হয়ে গেছিস। আর নাকেরজলে চোখের জলে এক হওয়া নেই। - কোনওদিনও হইনি। - আচ্ছা। বেশ। হোসনি। - আমি তোর চেয়ে বড়। দু'দিনের। - দিব্যি। ডেঁপো। ভিতরে ঘোড়ার ডিম। - উফ। ফের মাতব্বরি। - সাবধানে থাকিস বাবু। - হুঁ। তুইও। - চোখের আড়াল হলেই সাপের পাঁচ পা দেখিস না। - হুঁ। - আর কথা বলবি না? - উঁহু। - ট্রেন। ছাড়লো বলে। - হুঁ। - ক্যুইক। কিছু বল। - উঁহু। - চলে যাওয়াদের ভয় পেতে নেই। তাই না? - হুঁ। - জামার ওপরের বোতাম খুলে রেখেছিস কেন? লায়েক হয়েছিস? - ভু..। ...লে। - উফফ! - সিগন্যাল। দিয়ে দিয়েছে। - জানালা ছাড়। - হুঁ। - ছাড়। ট্রেন..। - নড়ছে। - লায়েক হাবভাব নিয়েই ঘোর, তোর আর বড় হওয়া হল না। - ও কিছু না। শার্টের বোতাম খোলা ছিল। ঠাণ্ডাটা...আচমকা। বসে গেছে। - আসি। - আয়। ** সদ্য নড়তে শুরু করা প্ল্যাটফর্মটা ঝুকুর ঝুকুর শব্দে ট্রেনটাকে ফেলে রেখে এগিয়ে গেলো। লিলুয়া পেরোলেই ঝুকুরঝুকুর ছেড়ে ঝমঝমে গতি ধরে প্ল্যাটফর্মগুলো। ** এমন দড়াম করে ঘুম ভাঙাটা অ্যালবার্টের কাছে নতুন কিছু নয়। নতুন যে'টা সে'টা হচ্ছে ঘরের ডান দিকের জানালার সামনে রাখা ই

দীপু ও ডিফারেনসিয়েশন

সাইকেলটা ঘাটের বেঞ্চিটার কাছে দাঁড় করালো দীপু। দুপুরের এ সময় এ'দিকটা বিলকুল শুনশান। শীতের নরম রোদ, গাছগাছালির ছায়া আর নদীর ভেজা হাওয়া মিলে চারদিকে একটা ছ্যাঁতছ্যাঁতে ব্যাপার। ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে নেমে সাত নম্বর সিঁড়িতে বসে পিঠের ব্যাগটা নামিয়ে রাখলো। আর খান পাঁচেক সিঁড়ি ভাঙলেই জল। আকাশটা সামান্য ফ্যাকাশে,তবে মেঘলা নয়। ও'পাড়ের জুটমিলের ভেঁপুতে সামান্য বিরক্ত হলো সে। নদীর ধারে গাছের পাতার খসখস আর পটাদাদার ঘটিগরম বানানোর খচরমচর ছাড়া কোনও শব্দই মানায় না। হাতঘড়িতে দেখলে; পৌনে তিন। অর্থাৎ আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যের যে'কোনও একটা সময়। দম দেওয়া এইচ-এম-টি'টা মেজদাদুর; সময়ের সাথে বিশেষ তাল রাখতে পারে না। কিন্তু দীপুর সয়ে এসেছে। পছন্দের কাজ থাকলে মিনিট পনেরো আগে পৌঁছে যায়। আবার বিপ্লববাবুর টিউশনিতে নিয়ম করে পনেরো মিনিট দেরী করে যায়। ঘড়িটায় ভরসা না থাকলেও, একটা বেড়াল-গোছের মায়া পড়ে গেছে। খুব মন দিলে নদীর শান্ত স্রোতের শিরশির কানে আসে। পায়ের চটি খুলে বাবু হয় বসে বুকপকেট থেকে সল্টেড বাদামের প্যাকেট বের করে ছিঁড়লে সে। মিঠে হাওয়া আর বাদাম চিবুনো আরামে চোখের পাতা সামান্য ভার হয়ে এসেছিল। তখন

ভালোবাসার যে'টুকু

চারদিকে খচরখচর। প্রমোশনের জন্য এ ওর ঠ্যাং ধরে হকি খেলে চলেছে। বাসের সীটের জন্য এ ওর পা মাড়িয়ে চোয়াল কিড়মিড় করে চলেছে। দরদামের টানাটানিতে ক্রেতা বিক্রেতা দরদরিয়ে ঘেমে বিরক্তির দরিয়ায় বয়ে চলেছে। পলিটিকাল খিস্তিখেউরে, লাল-সবুজ মিলেমিশে উলুখাগড়াদের পিঠ ঘামাচিতে ভরে যাচ্ছে। বৌ ভাবছে বর মিচকে, বর ভাবছে বৌ বাতিকগ্রস্ত। বাপ ভাবছে ছেলে বখে যাচ্ছে, চাবকানো দরকার। ছেলে ভাবছে 'পুওর ওল্ড চ্যাপ, ইগনোর করো'। মা মেয়ের এসএমএস ইনবক্স ঘেঁটে বন্ড হতে চাইছেন। মেয়ে ভাবছে 'বেচারি টিন্ডারের স্পেলিং জানেনা'। টপাটপ যুদ্ধের জিগিরে মানুষ মৌরি-চমনবাহারের সুবাস পেয়ে চলেছে। মাথায় কাঁঠাল ভাঙার শব্দে বাতাস হুহু। এই গোলমালে। এই কানে মনে বুকে ব্লেড চালানো মাতব্বরির যুগে। এই ঝাপসায়। রাত পৌনে একটার হাওয়ার নভেম্বরি ফুরফুর বিছানা। তার পাশে রাখা ছোট্ট টেবল। সে টেবিলের ওপর রেডিও। ফিলিপ্সের। সাতপুরনো। এই মচরমচর যন্ত্রণায় বোরোলিন স্নেহ বুলিয়ে যান তিনি। এ' দগদগের যুগে নরম হয়ে ঝরে পড়েন। এ' দাউদাউয়ের যুগে মিঠে হয়ে গলে পড়েন। এ' মাতব্বরির যুগে বোতাম খোলা ফতুয়ার সাহসে ছাতে এসে দাঁড়ান।

শিশু দিবস

বন্দুকটার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে খোকা। কাঠের আলমারিতে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো। কালো চকচকে নল। কাঠের পালিশ করা বাট। ট্রিগারটা অল্প আলোতেও চকমক করে ওঠে। কার্তুজ ভরা নেই। বাবা যখন ছিল, তখন ও'তে কার্তুজ ভরা হত। দাদীর কাছে খোকা শুনেছে যে বাবা ওই বন্দুক হাতে লক্ষ্যভদে অব্যর্থ ছিল। বাবা। বাবা। যাদের বোমায় খোকাদের বাড়িঘর সে'বার জ্বলে ছাই হয়ে গেছিল, সাথে পুড়ে মরেছিল মা; তাদের শায়েস্তা করতে এ বন্দুক পিঠে মরুভূমি পেরিয়ে যুদ্ধে গেছিল বাবা। বন্দুকটার দিকে এক মনে তাকিয়ে থাকে খোকা। দাদী কাঁদে।  আলমারির অন্য কোনে মায়ের কাজলের ডিবে।  বন্দুকের পালিশে আর কাজলের ডিবের চকমকে খোকা বাবা-মা'কে মনে করা চেষ্টা করে। খোকার থেকে দু'হাত দূরে সে বন্দুক। তার থেকে পাঁচ হাতে ডাইনে গেলে দাদীর ছোট্ট ঘরের ভাঙাচোরা বারান্দা। সে বারান্দা পেরিয়ে আধ মাইল ধুলো মাখা পথ হাঁটলে ছোটা পাহাড়। সে পাহাড় খোকার বড় প্রিয়। স্কুল ভাঙার পর সে পাহাড়েই তার দুপুর কেটে যায়। ছোটা পাহাড়ের ও'পারে মরুভূমি। শুখা, খটখটে। মাইলের পর মাইল। সে মরুভূমির ও'পার থেকে কারা যেন উড়ে এসে বোমা ফেলে যায়। তারা শত্রু। শত্রু। খোকার ঠোঁ

এটিএম ও সিদ্ধার্থবাবু

বাবার ডেবিট কার্ড নিয়ে এটিএমের সামনে লাইনে দাঁড়য়েছিলেন সিদ্ধার্থ।  ইয়ং চ্যাপ। মুখে স্মিত হাসি। সম্প্রতি পাঁচশো হাজারের নোট বাতিল হওয়ায় লাইন একটু লম্বা তবে ঘাবড়ানোর কোনও কারণ নেই। মোবাইলে জিও কনেকশন ব্যবহার করে ইউটিউবে বেস্ট অফ হিমেশ রেশমিয়া চালিয়ে দিলেন তিনি। পনেরো নম্বর গানের মাথায় সিদ্ধার্থ টের পেলেন তাঁর সামনের ভদ্রলোক অসুস্থ বোধ করছেন। মাথা ঘোরা, বমি ভাব। ভিড় আর গ্লোবাল ওয়ার্মিং মাখানো নভেম্বর সহ্য করা চাট্টিখানি কথা নয়। বত্রিশ নম্বর গানের মাথায় লাইনে দাঁড়ানো এক ছোকরা জানালে যে গত তিনদিন ধরে অন্তত আড়াইশো এটিএমের সামনে সে হত্যে দিয়ে পড়েছে কিন্তু প্রত্যেক বারই তাঁর সুযোগ আসার আগেই এটিএম খাঁখাঁ হয়ে গেছে। এ ট্রমায় নাকি তাঁর মনের বয়স অন্তত চল্লিশ বছর বেড়ে গেছে, ডায়াবেটিস হাইপারটেনশন কলার টেনে ধরল বলে। বাড়তি ট্রমা এড়াতে লাইন ছেড়ে বেড়িয়ে গেল সে ছোকরা। প্লেলিস্টের বেয়াল্লিশ নম্বর গানের মাথায় লাইনে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোকের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ক্যাশ পাব কি পাব না; সে টেনশন সহ্য করা মামুলি নয়। চুরাশি নম্বর গানের মাথায় লাইন ত্যাগ করে যিনি বেরিয়ে গেলেন, সে ভদ্রলোকের

খোকার দায়িত্ব

- খোকা, শোন। সাবধানে। - হুঁ। - রাতে শোয়ার আগে বাড়ি দরজা জানালা বন্ধ হয়েছে কিনা ভালো করে দেখে নিস রোজ, কেমন? - হুঁ। - আর শোন, ছোট ভাইবোনগুলোকে দেখিস। এখন তুইই গার্জেন। - এমন ভাবে বোলো না বাবা। - মন শক্ত কর। বাপ মা এমনিতেই কি কারুর চিরকাল থাকে? খারাপ লাগছে এ বয়সেই তোকে ছেড়ে আমাদের দু'জনকেই চলে যেতে হচ্ছে। বড় গুরু দায়িত্ব তোর কাঁধে চাপিয়ে গেলাম বাপ। ব্যবসা, ঘরবাড়ি, বাজারঘাট; সমস্তই এখন তোর দায়িত্বে। অবশ্য তোদের জ্যাঠামশাই এসে পড়লেন বলে। কিন্তু যদ্দিন না আসছেন, তদ্দিন তোকেই ঠেলা সামলাতে হবে। হ্যাপা কিন্তু কম নয়। পারবি তো বড়খোকা? - আমি চেষ্টা করব। কিন্তু তুমি আর মা কি কোনওদিন...? - ফেরা হবে না রে। হুকুম তেমনই। বাবা, সাবধানে থাকিস। চারদিকে নজর রেখে, কেমন? ভুলে যাসনা একশো, তুই টাকা বংশের মাথা এখন। শক্ত হ, এ'টা ভেঙে পড়ার সময় নয়। আমরা আসি, কেমন?

ল্যাপটপ

- আসুন। আসুন মিস্টার হালদার। - ফাইলটা থ্রু হলো মিস্টার শাসমল? - আরে আগে বসুন। চা টা খান। - নষ্ট করার সময় আমার নেই শাসমল। ফাইল থ্রু হয়েছে কিনা কনফার্ম করুন। প্লীজ। - বসুন না। রামরতন, সাব কে লিয়ে চায়ে লাও। নো মিল্ক  নো শুগার। আউর মেরে লিয়ে এক গিলাস পানি। বসুন মিস্টার হালদার। - এবার বলুন। - সিগারেট? - ব্যাপারটা কী বলুন তো? কেঁচিয়েছেন? - আসুন। ধরিয়ে দিই। - থ্যাঙ্কস। এবার ঝেড়ে কাশুন দেখি। - ফাইল...সানরাইজ ইলেক্ট্রিকালসের ফাইলটা তো? - ঠাট্টা করছেন? আর কোন ফাইলের কথা হয়েছে আপনার সাথে? - অলমোস্ট কাজ হয়ে গেছে বুঝলেন...। - অলমোস্ট? - অলমোস্ট। - মিস্টার অরূপ শাসমল। দশ লাখ দিয়েছি আপনাকে। টেন ল্যাখস। আন্ডার দ্য টেবল। এ ফাইল যদি থ্রু না হয়..। - হুইসল ব্লো করবেন? - আঙুল বাঁকানোর অনেক বেটার টেকনিক আমার জানা আছে। - উফ। অকারণে উত্তেজিত হচ্ছেন আপনি। - অকারণ? অক্টোবরের মধ্যে ফাইল অ্যাপ্রুভ হওয়ার কথা। দিস ইজ নভেম্বর। লাখোটিয়া আমায় কী প্রেশারে রেখেছেন জানেন? - জানি জানি। কিন্তু কোটি কোটি মুনাফা লুটবেন, অথচ সবুর করবেন না, তা কি হয়? - সবুর? - সামান্য। ডেফিনিটলি বাই নেক্সট উইকেন্ড। বড় সাহ