Tuesday, December 31, 2013

একটি চুরির ঘটনা




অনিন্দ্য নিজেকে গোয়েন্দা বলতে বেশ লজ্জাই পায়। মাসে যে ক'টা কেস তার কাছে আসে, তা প্রায় সবই বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী সম্বন্ধে গোপনে খোঁজখবর নেওয়ার জন্যে – পাত্রর মাইনে-কড়ি ঠিক কত, পাত্রীর কোনও গোপন প্রেম রয়েছে কি না ইত্যাদি। তার তোপসে নেই, আছে শুধু তার ঘরের ও অফিসের কাজের লোক কমল। তার কাছে যে এমন কেস কিভাবে এলো। ভাবতে ভালো যতটা না লাগছে, তার চেয়ে বেশি লাগছে ভয়। দশ বছর হল এ লাইনে কাজ করছে অনিন্দ্য। তার এই সুপার শার্প ডিটেকটিভ এজেন্সি পাত্রপাত্রী খবরাখবর জোগাড়ে বেশ নাম করেছে শহরে। কিন্তু তাই বলে এমন জটিল কেস ? ডাইরেক্ট মূল্যবান সম্পদ চুরি ? এমন মক্কেল তার অফিসে আসলে কি চায়ের সঙ্গে সামান্য টা’য়ের ব্যবস্থা রাখা উচিৎ ? কমলের সঙ্গে কনসাল্ট করতে হবে।

দীপক মিত্র’র চেহারা দেখে বয়স চল্লিশের বেশি মনে হয় না। চেহারা ভারি ডাক-সাইটে, হীরের ব্যবসায়ীর চেহারা এমনটাই হওয়া উচিৎ। গলার স্বর ঠিক বাজখাঁই নয়, তবে দম আছে। অনিন্দ্যর বেশ নার্ভাস লাগছিল। কিন্তু দীপকবাবু যখন জানালেন যে চুরি হচ্ছে ‘কলকাতার শীত’, তখন অনিন্দ্যর মালুম হল যে ভদ্রলোকের মাথায় ছিট রয়েছে। মানে মানে বিদেয় করতে হবে, এই ভেবে কমলকে সে ইশারা করলে যে চায়ের সাথে ফুলুরি ভাজার দরকার নেই।

Saturday, December 21, 2013

স্যান্টার সারপ্রাইজ




মন বিলকুল  ভালো নেই। ডিসেম্বর এসে গেল তবু ধোপার ব্যাটা পশমের ওভার কোট আর প্যান্টালুন ফেরত দিলে না। লাগসই টুপিখানা সেই যে গত ফেব্রুয়ারি থেকে হাওয়া, এখনও খুঁজে পাওয়া গেল না । নতুন এক খানা টুপি জোগাড় করে নেওয়া যায় বটে, তবে পুরনোটার মায়া ত্যাগ করা কি অতই মামুলি ? ওদিকে স্লেজ খানার মধ্যে রাজ্যের উচ্চিংড়ের বাস। সাফ করতে জান কয়লা হয়ে যাবে। রেইন-ডিয়ার গুলো রাম আলসে হয়ে উঠছে, দিনরাত শুধু গাণ্ডেপিণ্ডে গিলবে আর মেদ বাগাবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপদ অন্য জায়গায়। গিন্নী বেজায় জেদ ধরেছেন ডায়েট করে রোগা হতে হবে। এমন তাবড় ভুঁড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ালে নাকি গিন্নীর ইজ্জত ফ্র্যাকচার হয়ে যায়। গত দু'মাস যাবত খাওয়া-দাওয়ায় জোর করে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাটাচ্ছেলে ভুঁড়িও গিন্নীর সাথে তাল মিলিয়ে ইঞ্চি চারেক কমে গেছে ইতিমধ্যেই ।  লাও ঠ্যালা। রস ছাড়া যেমন রসগোল্লা হয় না, তেমনি ভুঁড়ি ছাড়া কি স্যন্টা ক্লজ্‌ হয় ? চিমসে চেহারার কাউকে দুনিয়ার কোন বাচ্চা কি স্যান্টা ক্লজ্‌ বলে কদর করবে ?
এই সব সাত পাঁচ ভেবে ভেবে স্যান্টার রাতের ঘুম হাওয়া। গতবারে ইকুয়েডোরের এক খুকির উপহার শ্যামনগরের এক মিচকে খোকার উপহারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার পর থেকেই মনটা খচ্‌খচ্‌ করছিল। ঠিক গড়বড় হল এইবার। আর হপ্তা খানেকের মধ্যে উপহারের ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পরার কথা, অথচ এদিকে না আছে ধড়াচুড়ো, না বাহন তৈয়ার। অন্য দিকে ভুঁড়ি বাবাজি বেজায় চুপসে রয়েছে। কোটপ্যান্ট পড়ে ফিটফাট বাবুটি সেজে যদি ট্রামে, বাসে করে মর্তলোকে ঘুরতে হয়ে তবে ইজ্জতের কোপ্তা হতে বাধ্য।

বিছানায় শুয়ে এমন সব বিদঘুটে সব চিন্তা করতে করতে সবে স্যান্টার চোখে একটু তন্দ্রা এসেছে- এমন সময় এক মিষ্টি কণ্ঠস্বরে স্যান্টার তন্দ্রা ভাঙল:
-   “ স্যান্টা, ও স্যান্টা, ঘুমিয়ে পড়লে ?”
স্যান্টা দেখলেন বছর ছয়েকের একটি ফুটফুটে মেয়ে। মিষ্টি সাদা ফ্রক পোশাকে। তার শিয়রে দাঁড়িয়ে। সম্ভবত জাপানী।

Sunday, December 15, 2013

শীত Of কোলকাতা - The Essential Elements

ডিসেম্বর জুড়ে বসছে শহরে। সন্ধ্যের মুখে হাফ সোয়েটারটি আর বেমানান মনে হচ্ছে না। কলকাতাইয়া হাওয়াতেও চামড়ায় ছ্যাঁত হচ্ছে। সেন মহাশয় নলেন গুড়ের সন্দেশে বাজার মাতাচ্ছেন।
তা বাঙালির শীত পিকাসিও হয় কি প্রকারে ? বহুবিধ আবেদনময় পৌষ-মাঘি সৌখিনতার হাত ধরে। রবীন্দ্রনাথ বিনে বাঙালি হয়তো বা বাঙালি হলেও হতে পারতে; তবে পৌষ ম্যাজিক বিনে বাঙালিজ্‌ম বলে কিছু থাকতো কিনা সে বিষয়ে সবিশেষ সন্দেহ আছে।
বঙ্গ-শীতের সেরা মশলাগুলো কি কি ? অগোছালো ভাবে সাজিয়ে দেওয়া যাক Essential Elements of Kolkata Winter ----



চড়ুইভাতি। অর্থাৎ পিকনিক (ফ্যামিলির সাথে) বা ফিস্টী (পাড়ার বন্ধুদের সাথে)। 
The mandatory Picnic

   


সিঙ্গারায়

Wednesday, December 11, 2013

অফিসার

জীবনে রয়েছে শুধু অফিস, মাছের বাজার আর মাস কাবারি। এর বাইরে সব ফাঁকি। যেদিন অফিস ফুরোবে; রেসিডিউ হিসেবে পড়ে রইবে শুধু ডায়াবেটিস আর ব্লাড প্রেশার। বউ, খোকা, বাবা, মা এ সবই ট্রান্সিটরি ব্যাপার। লাইফের নিউক্লিয়াস হচ্ছে অফিস। দিনে আট ঘণ্টা ঘুম, হাতে রইলে ১৬ ঘণ্টা। বাসে-ট্রেনে-বাথরুমে-বাজারে ৪ ঘণ্টা। হাতে রইলে বারো ঘণ্টা। এই ব্যবহারিক বারো ঘণ্টার মধ্যে বেবাক দশ ঘণ্টাই হজম করে নেয় অফিস। আর দু ঘণ্টা পরিবার- পরিজন – আত্মীয়স্বজন নিয়ে হাহাকার করে কি হবে ? অফিসই রামকৃষ্ণ।

বস’ও খেপচুরিয়াস, বউ’ও ডাইনোসরিও। বউ কে তোল্লাই দেব আর বস কে দেব পেল্লায় খিস্তি-সব, এ কেমন কথা ? ভেবে দেখলাম বউ কে যেমন ভাবে সামাল দিই, ঠিক একই ভাবে বস কে ম্যানেজ করতে পারলেই ল্যাঠা চুকে যায়।  

বস সেদিন বললে “ তোমার মার্কেট শেয়ার গোল্লায় যাচ্ছে হে, এমন গদাই –লস্করি করে চললে তোমার মুণ্ডুটি আস্ত থাকবে ভেবেছ ?” মনে মনে বস’কে বললাম- “ রেগে যেও না মাইরি, নেক্সট পুজোয় একটা বালুচরি। প্রমিস”।  ব্যাস অমনি রাগ গলে জল; বসের রাগ নয়,  আমার রাগ গলে জল।