Showing posts with label খেজুরে বাঙালি. Show all posts
Showing posts with label খেজুরে বাঙালি. Show all posts

Sunday, June 1, 2025

কালের ধোনি

ধোনির ইনিংসগুলো ক্রমশ উৎসববাড়িতে কার্তিক-ব্র্যান্ডের দাদাদের মত হয়ে যাচ্ছে।

বিকেলে যখন গোটা বাড়ি কাজেকর্মে শশব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছে তখন দাদাভাইটি ফেসপ্যাক মেখে সেলুনে বসে আছেন। এ'দিকে থার্ড ব্যাচ যখন বসে গেছে, তখন এন্ট্রি নিয়ে সে কী গা-কাঁপানো হম্বিতম্বি:
"ওরে কে আছিস এ'দিকে আয় বাবা! কাজের সময় তোদের কাউকে পাওয়া যায় না। আরে ন'পিসের টেবিলে বেগুনিটা রিপীট করতে বলো। ক্যুইক"।

Sunday, March 16, 2025

সাহিত্য গুল

হাইকোয়ালিটি গুল আদতে সাহিত্য।

যে গুল যুক্তিতে কলুষিত নয়, বরং ফুর্তিরসে টইটম্বুর; সে'টাই আদর্শ।
তা'তে স্কেল বসানো হিসেবকিতেব থাকবে না, থাকবে আড্ডার পেট্রোলে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি ফেলার উস্কানি।

নিখুঁত গুল পাতে পড়া মাত্রই সবাই জানবে সে'টা গুল অথচ উড়িয়ে দিতে পারবে না।

গুণী গুলবাজদের আগলে রাখুন। চা-শিঙাড়া খাওয়ান। শুধু ভোট দেবেন না।

্জ্যাঠামশাই

- এই যে, বিশু। এদিকে এসো।
- আরে, জ্যাঠামশাই যে। পা ছুঁয়ে আজ প্রণাম ঠুকতে পারবো না যে...কোমরে খিঁচটান..।
- থাক থাক। কী অবস্থা হয়েছে...। তুমি আজকাল এইভাবে মাতলামো শুরু করেছ? এই ভরসন্ধেবেলা, পাড়ার মোড়ে...।
- মিছে কথা। ডাহা গুল। আমি মোটেও আজকাল মাতলামো শুরু করিনি জ্যাঠামশাই..এ আমার বহুদিনের অভ্যাস।
- ছিহ্ বিশু। কত বড় বংশের ছেলে তুমি...।
- বড়। বড় বংশ। ভল্যুম-ওয়াইজ বলছেন কি?
- তোমাকে ডাকাটাই আমার দোষ হয়েছে।
- দোষ করে স্বীকার করেছেন। ওই তা'তেই হবে। নিন, আপনাকে আমি ক্ষমা করলুম।
- তোমার বাবা আজ বেঁচে থাকলে..।
- বাবার থেকে ধার নেওয়া আড়াই হাজার টাকাটা শোধ করতেন? বাবা বেঁচে থাকলে..।
- টাকা?
- টাকা। মানি। টু অ্যান্ড আ হাফ থাউজ্যান্ড।
- আসলে কী জানিস বিশে, সব তো আর এক কথায় বোঝানো যায় না..।
- টাকাটা? জ্যেঠু?
- আরে ছোট থেকে তোর এই এক রোগ। কথায় কথায় খামোখা সিরিয়াস হয়ে যাওয়া। আরে দু'পাত্র আমিও চড়িয়েছি। তাই কী বলতে কী বলেছি...অত ধরতে নেই বিশে।
- এ'বার আসি জ্যাঠামশাই?
- আয়। আর শোন, একদিন বাড়িতে আসিস। তোদের জ্যেঠিমা নাড়ু বানিয়েছে।
- আসি জ্যাঠামশাই।

Thursday, November 21, 2024

ওষুধ

বাঙালির জরুরী ওষুধের ফর্দ:

১। বোরোলিন।
২। জোয়ানের আরক।
৩। জেলুসিল।
৪। গাঁট্টা।
৫। গড়িয়ে নেওয়া।
৬। ভাতেভাত।
৭। একটু হাওয়া খাওয়া।
৮। জুতোপেটা।

ই-ওয়ালেট



~~দিন ১~~

জেপ্টো: এই নে৷ একশো টাকা দিলাম। রেখে দে।
আমি: আরে না না৷ কী দরকার..।
জেপ্টো: আরে আমি দিলাম তো নাকি, রাখ না৷
আমি: আচ্ছা।
জেপ্টো: কত দিলাম বল দেখি..।
আমি: ওই যে, একশো।
জেপ্টো: সামলে রাখিস বাপ৷ কেমন? বাজারঘাটের যা অবস্থা, একশোটা টাকা নেহাৎ ফেলনা নয়..।

~~দিন ৬~~

জেপ্টো: হ্যাঁ রে, সে'দিন যে একশো টাকা দিলাম তোকে...৷
আমি: তাই তো৷ ও আছে ওয়ালেটে।
জেপ্টো: ওয়ালেটে থাকলে তো সে'টাকা ডিম পাড়বে না বাপধন৷ সেলিব্রেট কর৷ মোচ্ছব হোক।
আমি: একশোয় হবেটা কী..।
জেপ্টো: বড্ড বাতেলা দেখছি, একশো টাকা দিয়েছি এ'বার খরচ কর৷ ওড়া দুই হাতে৷ চটপট।
আমি: আহা, বেশ, হবে'খন।

~~দিন ১৭~~

জেপ্টো: এ কী, যাচ্ছিস কই থলে হাতে?
আমি: কেন? বাজারে!
জেপ্টো: ওয়েলেটে কড়কড়ে একশো টাকা ভুলে তুই বাজারে যাচ্ছিস রে রাস্কেল?
আমি: না মানে, অনেক কিছু কেনার আছে তো..।
জেপ্টো: উফ৷ জ্বালালে দেখছি৷ এই নে, আরও পঁচিশ টাকা দিলাম৷ আর ঘ্যানঘ্যান করিস না।
আমি: বাহ্‌। থ্যাঙ্কিউ।
জেপ্টো: এক মিনিট, একশো পঁচিশ ফেলে চললি কই? এই, অ্যাই, সাইকেল থামা..অ্যাই!

~~দিন ২২~~

জেপ্টো: এই শোন..।
আমি: কী ব্যাপার..।
জেপ্টো: আজ বিস্যুদ....।
আমি: বটে।
জেপ্টো: শনিবারের মধ্যে আমার দেওয়া টাকা খরচ না করলে কেটে নেব..। এক্কেবারে ঘ্যাচাং।
আমি: ওহ, তাই নাকি।
জেপ্টো: ভদ্রলোকের হুমকি৷ নড়নচড়ন হবে না।
আমি: বেশ।
জেপ্টো: কাজেই আর ত্যান্ডাইম্যান্ডাই নয়৷ ওয়েলেট থেকে একশো পঁচিশ বের করে অর্ডার।
আমি: বেশ।

~~দিন ২৩~~

জেপ্টো: কেটে দিলাম কিন্তু..এই কেটে দিলাম..।
আমি: ওহ হো।
জেপ্টো: রাত বারোটার পরেই দেখবি ট্রেজার হাওয়া।
আমি: অগত্যা৷ কী আর করি।
জেপ্টো: হাল ছাড়িস না। অর্ডার দে। বেসনের লাড্ডু আনা৷ দু'কিলো পেঁয়াজ আনা৷ অলআউট আনা, দ্যাখ চাদ্দিকে কত মশা।
আমি: ও দ্যাখা যাবে।

~~দিন ২৭~~

জেপ্টো: মন খারাপ লাগছে রে?
আমি: কেন? কী ব্যাপার?
জেপ্টো: ওই যে সে'দিন অতগুলো টাকা কেটে দিলাম। খারাপ পেলি?
আমি: ওহ, না না৷ ঠিক আছে তো।
জেপ্টো: ওই দ্যাখো৷ কী মারাত্মক অভিমান৷ আচ্ছা ঠিক আছে৷ ওয়ালেটে একবারটি দ্যাখ, দেড়শো টাকা রেখে এসেছি৷ তবে ইয়ে, আজকের মধ্যেই খরচ না করলে কিন্তু..এই..ও কী..আনইনস্টল করছিস কেন রে হতচ্ছাড়া..এই দাঁড়া..আমি কিন্তু ওয়ালেটে দু'শো রেখে দেবো এ'রকম করলে..এই..এই..যাহ্‌!

মহানায়ক


- সত্যিই অ্যাক্টর হতে চাও?


- হিরো হতে চাই।

- স্কিল তোমার আছে বটে৷ কলজে আছে কি?

- আছে।

- দাঁতে দাঁত চেপে লেগে থাকার ক্ষমতা আছে?

- পরখ করেই দেখুন না৷

- ফেলিওর হজম করতে পারবে?

- এইভাবে হাত পেতে দাঁড়ানোটা, দোরে দোরে ঘুরে বেড়ানো; এ'টা আর যাই হোক সাকসেস তো নয়।

- চিল-শকুনে ছিঁড়ে খেতে চাইবে।

- সে'সব সামলে নেব৷ আপাতত রোলটা আমায় দিচ্ছেন তো?

- আগামীকাল স্টুডিওতে এসো৷ সে'খানে বুলুদা-সমরদারা থাকবে, একটা ফয়সালা হবে'খন...। কাস্টিং ওরাই দেখছে কিনা..।

- এক মিনিট৷ সে'টা জানি তো৷ আপাতত সামনের রোলটার কথা বলছি। এই যে আপনি দু'টো এগরোল আনিয়ে সামনে রাখলেন। একটা নিজের হাতে তুলে নিলেন। অন্যটা ঠাণ্ডা হচ্ছে তো..। তাই বলছিলাম..। রোলটা এগিয়ে দেবেন প্লীজ?

রেলস্টেশনের অপেক্ষা



দূরপাল্লার ট্রেন ধরার ব্যাপারে এই আমার এক সমস্যা- ঘণ্টা দেড়-দুই আগে রেলস্টেশনে পৌঁছে গিয়ে অস্থির পায়চারি৷ এ'টা এক ধরণের প্যারানয়্যাই বটে৷ যদি স্টেশন যাওয়ার পথে ট্যাক্সি বা অটোর ইঞ্জিন বিগড়ে যায়? যদি অকারণ ট্র্যাফিক জ্যামে আধঘণ্টার পথ মরুতীর্থ হিংলাজে পরিণত হয়? যদি প্ল্যাটফর্ম গোঁসা করে হাফ কিলোমিটার দূরে সরে গিয়ে চুক্কি দেয়? সে কতরকমের দুশ্চিন্তা৷

তার চেয়ে এমন সময় পৌঁছনো ভালো যখন রেলের লাল কালো ডিজিটাল বোর্ডে সে ট্রেনের আসার ঘোষণাও দেখা যাচ্ছে না৷ তার আগে অন্তত একুশবার দেখে মোবাইল ব্রাউসারে দেখে নেওয়া সে ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসবে, কোচ পোজিশনের হিসেব কী, ইত্যাদি৷ দেখেশোনা হয়ে গেলে এক পরিচিতকে ফোন করে নিতে হবে সে সে সেই স্টেশনের হালহকিকত সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল।

- হ্যালো! হ্যাঁ রে, একটা আর্জেন্ট ব্যাপার। অমুক এক্সপ্রেসটা সাধারণত কত নম্বর থেকে ছাড়ে রে?
- দু'নম্বর।
- তুই শ্যিওর?
- জন্মিলে ঘোল খাইতে হবে, শ্যিওর কে কোথা কবে৷ দু'নম্বরই হওয়া উচিৎ৷ তবে চোখ কান খোলা রাখিস ভাই৷

লে হালুয়া, চোখ কান খোলা রাখতেই যদি হয় তবে গায়ে পড়ে ফোন করছি কেন৷ যা হোক, ইন্টারনেট বলছে দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম। পরিচিত কণ্ঠ বলছে সম্ভবত দু'নম্বর৷ কুলি বা চায়ের দোকানির কাছ থেকে আর এক প্রস্থ ঝালিয়ে নেওয়া গেল যে দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মেই যেতে হবে৷ এরপর রেলের শিডিউল বোর্ডের সামনে ধীরেসুস্থে অপেক্ষা; শেষ পর্যন্ত দুই নম্বরই থাকবে তো?

ঝাড়া চল্লিশ মিনিট পর বোর্ডে ভেসে উঠবে দু'নম্বর প্ল্যাটপফর্মের আশ্বাস৷ তখন নিজেই নিজেকে বলতে হবে, "যাক বাবা৷ দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম। তবে কিছুই বলা যায় না৷ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চোখকান খোলা রাখতে হবে৷ কখন কী পালটে যায়.."।

কিন্তু এত ভ্যানতারার পরেও যখন টের পেলাম যে ট্রেন আসতে এখনও প্রায় এক ঘণ্টা মিনিট দেরী, তখন মনে হয় রেলের কোনো কর্মীকে ডেকে বলি স্টেশনেও সিকিউরিটি চেকের ব্যবস্থা শুরু করতে আর বই-বাদে-আর-সব-ফাজিল-জিনিসপত্রের ব্যাপক স্টক-সমৃদ্ধ বুকশপ খুলতে। তা'তে যদি খানিকটা সময় কেতাদুরস্ত ভাবে জলে দেওয়া যায়৷


সে উপায় যখন নেই, তখন খাবারদাবারের দোকান জরীপ করে সময় কাটাতে হয়৷ সে'দিক থেকে ভাজাভুজির স্টলের বর্ণে-গন্ধে সুরাট রেলস্টেশনের লাগোয়া বাজার আর সে স্টেশনের দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম হতাশ করেনি। বিকেল আর সন্ধের মাঝামাঝি সময়, এ সময় প্রায় বেশির ভাগ দোকানেই তেলেভাজার নতুন লট কড়াইয়ে পড়ছে৷ ধোকলা-টোকলা আছে বটে, তবে এ'অঞ্চলে অন্তত দেখলাম হট কচুরিজের মত বিক্রি হচ্ছে হট কচুরিজ এবং হট শিঙাড়াজ (সামোসাজ বলা উচিৎ বোধ হয়)। এ'ছাড়া রয়েছে বড়াপাও পকোড়া গোছের জিনিসপত্র৷ ভাজাভুজির মনোরম গন্ধে ভেসে ভেসে দিব্যি কেটে গেলো মিনিট চল্লিশ৷ ট্রেন এ'বার আসবে৷ দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মের আশ্বাস টিকে আছে কিনা সে'টা এইবেলা আরেকবার যাচাই করে নেওয়া দরকার৷

কোলেস্টেরল ও বর্ষা



- কী বিশ্রী ওয়েদার দেখেছেন?

- বাইরে বেরোতে হলে বিরক্ত হতাম বটে৷ কিন্তু অফিসে বসে এ'সব গায়ে লাগে না৷

- এই বৃষ্টির জানালার পাশে বসে ফাইল ঠেলা যায়?

- ফাইল সময়মত ঠেলতে পারলে দেখবেন কফিতে ফোকাস করে আনন্দ পাচ্ছেন৷ আমি তো বলি, তিরিশ মিনিটের কাজ পঁচিশে সাফ করে পাঁচ মিনিট ধরে ক্যান্টিন-সম্রাট শ্রীকান্তর পকোড়া উপভোগ করুন৷ দেখবেন ওয়েদারকে বিউটিফুল মনে হবে৷

- কোলেস্টেরল রিপোর্ট দেখে মশাই এন্তার পকোড়া সাঁটানোর কথা ভাবতেও গা কাঁপছে৷

- কোলেস্টেরলে ঘায়েল মানুষের জীবনে বর্ষা বিষয়ক হুহুর স্থান নেই৷ বাজে গল্প বন্ধ করে এক্সেলে মন দিন৷

Tuesday, July 16, 2024

কে কে আর

করব।
(ভেবেচিন্তে৷ এই একটু চারপাশের হালচালটা বুঝেটুঝে নিয়ে। দিনকাল সুবিধের নয়, ঝাঁপিয়ে পড়লেই তো হলো না)

লড়ব।
(তবে একটু নরম করে, কেমন? বেশি দৌড়ঝাঁপ না হওয়াই ভালো। আর সামান্য দু'চারটে ব্রেনস্টর্মিং তেলেভাজা ব্রেক নিতে পারলে লড়াইতে বেশ আমেজ আসবে আর কী)

জিতব।
(না জিতলে অবশ্য দুনিয়াটা রসাতলে যাচ্ছে না৷ জীবন তো আর লিঙ্কডইনও নয়, জি-বাংলাও নয়)।

তবে ইয়ে।
সবার আগে দুপুরবেলাটা সামান্য গড়িয়ে নেব ভাবছি।

Wednesday, January 31, 2024

পিকনিক

বসার ঘরে জব্বর আড্ডা জমেছে। চা-য়ের কাপে দেদার চুমুকের পাশাপাশি তেলেভাজা চেবানোর কুচুরমুচুর সিম্ফনিতে সন্ধেটা ক্লাউড নাইনে চলে গেছে (মেজকাকার ভাষায়)।

মেজকাকা ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে।
বড়দা সোফায় টানটান হয়ে শুয়ে।
আমি সোফার পাশে মেঝেতে থেবড়ে বসে।


বড়দা: শীত শেষ হওয়ার আগে একটা হাইক্লাস পিকনিক করা দরকার৷

মেজকাকা: এই তোর এক বাজে বাতিক পিন্টু৷ কথায় কথায় পিকনিক বা ফিস্টি।

বড়দা: আর তোমার রোগ হলো যে কোনো ভালো প্ল্যান ফাঁদতে না ফাঁদতেই মুখ ভেটকে ফুট কাটা।

আমি: এই শুরু হলো।

বড়দা: তুই কি পিকনিকের ফরে না এগেন্সটে?

আমি: আমি খাওয়াদাওয়ার ফরে। অলওয়েজ।

মেজকাকা: খাওয়াদাওয়ার জন্য মাঠেঘাটের ধুলো খাওয়ার কী দরকার। সামনের রোববার আমি বাজার করব। তারপর কোমর বেঁধে হেঁসেলে ঢুকব, তোরা দু'জনে অ্যাসিস্ট করবি।

আমি: পয়েন্ট।

বড়দা: তুই থাম বিট্টু। ভারি এলে পয়েন্ট ধরে মাতব্বরি করতে। আচ্ছা মেজকা, একটা রোব্বার না হয় একটু বাইরে কাটালে। মনের জানালা খুলে দেবে, ফ্রেশ এয়ার এসে..।

মেজকা: ন্যাকা। মনের জানালা খোলার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ইউটিউব দেখা৷ পলিউটেড হাওয়ায় ব্যাডমিন্টন খেলে, দায়সারা রান্না করে হুজুগ সেলিব্রেট করার দলে আমি নেই।

বড়দা: কে দিব্যি দিয়েছে তোমায় ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য৷ তুমি না হয় সকাল থেকে কাঠের উনুনে মাঠে বসে রান্না কোরো৷। 

আমি: পিকনিক, ঘাস-ফুল-হাওয়া, খাওয়াদাওয়া খুবই ভালো ব্যাপার৷ কিন্তু ব্যাডমিন্টন আবার কেন৷ বড্ড ধকল৷

বড়দা: সাধে কী আর বলি ভোঁদাচন্দ্র। মেজকার সেক্রেটারি হওয়া ছাড়া তোর দ্বারা আর কিস্যু হবে না।

মেজকাকা: পিন্টু৷ তুই কি বিট্টুকে ইনসাল্ট করলি না আমাকে?

বড়দা: আমি একাই পিকনিকে যাবো।

মেজকাকা: সেই ভালো৷ রোববার তুই একা মাঠে বসে রান্নাবাটি খেল। আমি আর বিট্টু সকালে চাইনিজ চেকার খেলে দুপুরে রেঁধেবেড়ে মাংসভাত খাবো।

বড়দা: ডিসগ্রেসফুল!

মেজকাকা: আহা চটছিস কেন।

বড়দা: বিট্টুটা দুধের শিশু৷ তুমি বুড়োহাবড়া। মাঝখান থেকে তোমাদের পাল্লায় পড়ে পিকনিকহীন শীত কাটিয়ে আমার যৌবন নষ্ট হচ্ছে।

আমি: হ্যাঁ রে বড়দা, এইত্তো তুই ইয়ারদোস্তদের সঙ্গে দীঘা ঘুরে এলি। এসেই আবার পিকনিক?

বড়দা: জ্যাঠামো করিস না৷ একটা ফ্যামিলি পিকনিক ছাড়া শীত চলে যাওয়া ব্যাপারটা খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়৷

আমি: ও মেজকা৷ চলো না৷ এক রাউন্ড পিকনিক করেই আসি৷ বড়দা এত করে বলছে..।

বড়দা: মেজকাকি থাকলে তোমরা আমায় এমন একঘরে করতে পারতে না৷

মেজকাকা: ন্যাকা! মেজকাকি বাপের বাড়ি গেছে, টেঁসে যায়নি৷ আর বলছি তো..সামনের রোববার তোকে আমি মাংস-ভাত খাওয়াব।

বড়দা: ধুস৷ বাদ দাও।

আমি: বড়দা, আর এক রাউন্ড তেলেভাজা নিয়ে আসি?

বড়দা: নাহ্৷ অম্বল।

মেজকাকা: দু'প্লেট তেলেভাজা খেয়েই অম্বল? ওই যৌবন দিয়ে হবেটা কী? বুড়োদের লাফিং ক্লাব জয়েন কর।

বড়দা: অন্যায় করেছি আমি পিকনিকের কথা বলে। প্রতিজ্ঞা করছি, আর কোনোদিন যদি তোমাদের আমি পিকনিকের কথা বলেছি..।

আমি: বড়দা, এই প্রতিজ্ঞা তুই এর আগে অন্তত বার সাতেক করেছিস।

মেজকাকা: শোন পিন্টু, পিকনিকের প্ল্যান কষা আর সেই কষা প্ল্যানে জল ঢালা - মনে রাখিস, সে'টাই হলো হাইয়েস্ট ফর্ম অফ পিকনিক।

বড়দা: ডিসগাস্টিং। আমি আসি।

মেজকাকা: যাবি? কিন্তু আমি যে ময়দা মেখে রেখেছি। আর ময়না ডুমো ডুমো করে আলু কুচিয়ে রেখে গেছে৷ 

বড়দা: চট করে ভাজো দেখি৷ লুচি খাওয়ার পর এই কূপমণ্ডূকদের আড্ডায় আমি আর পাঁচ মিনিটও বসতে চাই না৷

Sunday, January 14, 2024

ভাজা মৌরির বাটি

রেস্টুরেন্টের লক্ষ্মী হলো ক্যাশকাউন্টারের সামনে কমলা রঙের প্লাস্টিকের বাটিতে বা স্টিলের চ্যাপ্টা দু'খোপের প্লেটে রাখা ভাজা মৌরি আর ডুমো মিছরি৷ তার ওপর অবশ্যই একটা ছোট্ট চামচ৷ ও জিনিসের মোহ ফুচকার ফাউ বা টিটুয়েন্টির সুপারওভারের চেয়েও বেশি৷ একটু কেতওলা রেস্টুরেন্ট মানেই ওয়েটাররা সস্তা নকল-চামড়ার জ্যাকেটে বিল আর মুখশুদ্ধির বাহারে বাটি নিয়ে টেবিলে রেখে যাবেন। তা'তে মৌরি-মিছরি খাবলে নেওয়া যায় বটে, কিন্তু ম্যাক্সিমাম তৃপ্তি নেই।

মজা হলো সে'সব খাওয়ার 'দোকানে' যে'খানে টেবিল থেকে উঠে গিয়ে, বেসিনে হাত ধুয়ে এগিয়ে যেতে হয় ক্যাশবাক্সের পিছনে বসে থাকা ম্যানেজারের দিকে। ম্যানেজার ব্যাজার মুখে হাঁক ভাসিয়ে দেবেন "বারো নম্বর টেবিলে কী কী ছিল"। জনসমুদ্র থেকে মায়াবী হিসেব ভেসে আসবে, "একটা মোগলাই স্পেশ্যাল৷ একটা ফিশফ্রাই৷ দু'টো থামস আপ"৷ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন লেখার স্টাইলে ম্যানেজার হলুদ বা গোলাপি কাগজে ঘসঘস করে ডটপেন চালাবেন৷ তারপর মুখ তুলে বলবেন, "দু'শো আশি"।

এরপর একটা পাঁচশোর নোট ম্যানেজারের দিকে এগিয়ে দিয়ে মৌরি-মিছরির বাটি কাছে টেনে নেওয়া৷ চামচ এমন ভাবে খেলাতে হবে যাতে মিছরি মৌরির রেশিও মনমত হয়৷ এরপর ফেরত টাকা মানিব্যাগে রাখতে রাখতে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে সামান্য ঘাড় দোলানো।

মুখ ভরা মৌরি, কাজেই কথা নয়৷ স্রেফ বডিল্যাঙ্গুয়েজের খেলে বুঝিয়ে দিতে হবে "ভালোই খেলাম আপনাদের দোকানে৷ ফার্স্টক্লাস! তা, আজ আসি, কেমন? আবার দেখা হবে"৷

মাঙ্কিটুপির তালুর ফুল

মাঙ্কিটুপির সবচেয়ে দামী অংশটা হলো মাথার তালুতে বোনা ওই ঝিরঝিরে ছোট্ট ফুল। ও'টার অস্তিত্ব অত্যন্ত জরুরী; মাঝেমধ্যে নিজের টিকি (হোক টুপির এক্সটেনশন, আছে তো আমার মাথায়) চুলকে নেওয়ার মধ্যে যে কী দারুণ তৃপ্তি রয়েছে৷

কল্পনায় সাজিয়ে নিন;
হিলস্টেশনের পড়ন্ত বিকেল৷
প্রবল শীতে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে আপনি এক ছোট্ট রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লেন৷
জীর্ণ কাঠের চেয়ারে গা এলিয়ে,
এক প্লেট থুকপা অর্ডার দিয়ে,
রাবড়ি-মিষ্ট মেজাজে, চোখ নরম করে বুজে- নিজের মাঙ্কিটুপির তালুর ফুলে আঙুল বুলিয়ে চলেছেন। অপূর্ব না? তবে এর চেয়েও হাইক্লাস ব্যাপার বোধ হয় প্রেমিকার মাঙ্কিটুপির তালুর ফুল ধরে টান দিয়ে বলা, "অ্যাই অ্যাই, ও'দিকে দ্যাখো...আকাশের রঙটা কী মার্ভেলাস"!

পুনশ্চ:
মনে রাখবেন৷ মাঙ্কিটুপিতে যদি ওই তালুর-ফুলখানা না থাকে তা'হলে জানবেন ও'টা মাঙ্কিটুপির পদ্য নয়৷ ও'টা কিডন্যাপার বা ব্যাঙ্কিডাকাতদের মুখঢাকার টুপি৷ 

Thursday, January 4, 2024

উপাসক



- ফুচকা-দা'ভাই৷ খাওয়ান দেখি। 

- ঝাল হবে?

- তা হবে। তবে ইয়ে, ফ্রেশ আলু মাখুন না৷ 

- আলুমাখা আছে তো৷

- আছে৷ তবে৷ যদি ফ্রেশ মাখা হয়, দারুণ লাগবে৷ জানেন। অনুরোধ৷ 

- দারুণ লাগবে? বেশ তবে মাখি।

- হে হে৷ থ্যাঙ্কিউ।

- একটু ভালো করে..একটু কষে মাখবেন দাদাভাই..ডুমো ডুমো আলুর টুকরো মুখে পড়লে ফুচকা চেবানোর ফ্লো নষ্ট হয়ে যায়৷ 

- আপনি বেশ সমঝদার মনে হচ্ছে।

- আপনাদের মত গুণীমানুষদের সমাদর করার চেষ্টা করি। এ'টুকুই। কিন্তু শুনুন..ছোলাসেদ্ধ দেবেন না প্লীজ৷ তা'তে আলুমাখার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে।

- আলুমাখার কীসের কী হবে?

- ওই৷ ছোলাসেদ্ধ দেবেন না দাদাভাই।

- পেঁয়াজকুচি? 

- বাহ্৷ দিব্যি কুচিয়েছেন দেখছি৷ মিহি, কনসিস্টেন্ট। দিন না, দিন৷ তবে অল্প।

- লঙ্কাকুচি?

- অবশ্যই। তবে লঙ্কাটা ফ্রেশ কেটে নেবেন? একটা লঙ্কা কুচিয়ে দিলেই হবে।

- হুম৷ বেশ৷ ঠিক আছে। এই যে।

- আসলে কাঁচালঙ্কা তো ঝালের জন্য নয়৷ তার জন্য রয়েছে লঙ্কাগুঁড়ো আর কাঁচালঙ্কা বাটা। সুবাসের জন্য কাঁচালঙ্কা; সে'টা টাটকা কুচোনো হলে যে তাজা গন্ধ..।

- আর কোনো ফরমায়েশ? 

- ফরমায়েশ বলবেন না দাদাভাই৷ এ'টা ওই, মিনতি করি পদে ধরণের সিচুয়েশন৷ মিনতিটা হলো; তেঁতুলজল সামান্য, আর অতি অল্প গন্ধরাজ৷

- সে তো থাকবেই।

- সেই তো৷ তবে, পরিমিত।  আপনি ঝালের ব্যাপারে বরং আর একটু চালিয়ে খেলতে পারেন৷ আর অল্প লঙ্কাবাটা..এই জাস্ট এক চিমটি..।

- এতটুকু?

- আর সামান্য কম..। না না..বেশি কমে গেল..।

- এ'বার?

- পার্ফেক্ট। আর ইয়ে৷ নুনটা সামান্য কম দিন৷ একটু বিটনুন পাঞ্চ করুন৷ বাটিতে আছে দেখছি তো।

- অল্প নুন আর অল্প বিটনুন?

- সবই ব্যালেন্সের খেল।

- এ'বার হয়েছে?

- আরে দাদাভাই আমি বলার কে। শিল্পী তো আপনি৷ আমি তো উপাসক।

- এ'বার তা'হলে দিই? ফুচকা?

- গোটা ব্যাপারটা আর এক রাউন্ড মেখে নেবেন? মারাত্মক স্মুদ হবে ব্যাপারটা৷ 

- শুনুন না দাদা৷ আপনি এ'দিকে আসুন৷ এই যে গামলা। নিজে মেখে নিন৷ তৃপ্তি পাবেন।

- গ্যালারিতে বসে "উই ওয়ান্ট সিক্সার" বলা হুজুগে মানুষকে ব্যাট হাতে পিচের দিকে ঠেলে দিতে নেই। খাওয়ান দাদা। খাইয়ে যান।

- মাইরি৷ আপনার মত দু'টো খদ্দের দিনে পেলে ফুচকার ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।

- ও দাদাভাই৷ আমায় দু'টো কটু কথা বলতে হয় বলুন৷ কিন্তু নিজেকে ফুচকা ব্যবসায়ী বলে গুণগ্রাহীদের ব্যথা দেবেন না৷ হেমন্তবাবু কি সঙ্গীত-ব্যবসায়ী ছিলেন? মাইকেল মধুসূদন কি পদ্য-ব্যবসায়ী?

- বাটি এগিয়ে দিন দাদা৷ আর দেরী নয়। প্লীজ।

Wednesday, December 13, 2023

চিনিছাড়া



-  কফি চলবে তো?

- অবশ্যই।

- চিনি?

- না না। চিনি ছাড়া। ওই জিনিসটা আজকাল অ্যাভয়েড করছি। বয়স তো আর কমছে না..কাজেই...হোয়াইট পয়জন থেকে যতটা দূরে থাকা যায় আর কী।

- সঙ্গে বিস্কুট চলবে?

- ক্রীম বিস্কুটটাই হোক৷ ওই চকোলেট ক্রীমেরটা৷ দু'পিস হলেই হবে। থ্যাঙ্কিউ।

Tuesday, December 5, 2023

ভালোর ভালো

ভালো।

ভালোর ওপরে দারুণ।

দারুণের ওপরে ঘ্যাম।

ঘ্যামের ওপরে হেব্বি।

হেব্বির ওপরে "কোনও কথা হবে না বস্"।

"কোনও কথা হবে না বস"য়ের ওপরে "তাই তো কবি বলেছেন.."।

Saturday, November 25, 2023

ক'টা জামা

- খোকা, এই যে। তোমার বাবা কই?

- বাবা, ভিতরের ঘরে। ডেকে দিচ্ছি।

- ডেকে দেবে না হয়। আগে তোমার সঙ্গে একটু আলাপ করে নিই বাবুসোনা। তা বলো দেখি, পুজোয় ক'টা জামা হলো?

- কার?

- তোমার, আবার কার? কী, ক'টা জামা হলো? কে কে দিলো?

- জামা? শার্ট না টিশার্ট কাকু?

- সব মিলিয়েই বলো না।

- সব মিলিয়ে দেব? শার্ট, টয়গান, ভিডিওগেম, পেস্ট্রি, নিকো পার্কের টিকিট?

- না না, এ কী। জামাকাপড় ক'টা পেলে পুজোয়।

- পুজোর তো এক মাস দেরি। পুজোয় কটা পাবো, সে'টা পুজোর পরে বলতে পারব।

- আরে! আমি বলছি পুজোয় পরার জন্য কে কে জামাপ্যান্ট দিয়েছে।

- কার পরার জন্য?

- ইয়ে, খোকা, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। তোমার বাবাকে চট করে একটু ডেকে দাও দেখি।

হবু গোয়েন্দা

- কিছু মনে করবেন না..আপনি গোয়েন্দা?

- আজ্ঞে?

- আপনি গোয়েন্দা?

- কই না তো। আমি বার্ন্স অ্যান্ড বার্টিতে অ্যাকাউন্টান্ট। অবশ্য..একটা প্রমোশনের সম্ভাবনা আছে সামনের মাসে..তা'হলে হব গিয়ে সিনিয়র অ্যাকাউন্টান্ট।

- সে রামায়ণ শুনে আমি কী করব বলুন তো?

- তা ঠিক৷ আমার চাকরীটা এত আলুনি৷ কিন্তু আপনি মানুষটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং৷ কেমন দুম করে ছুটির দুপুরে নিরিবিলি বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করে বসলেন সে গোয়েন্দা কিনা৷ মারাত্মক ব্যাপার।

- আপনার চাউনিতে একটা তীক্ষ্ণ ব্যাপার ছিল মনে হল৷ তার ওপর ইয়া লম্বা হাইট। ছিপছিপে চেহারা। ডান হাতে রিস্টওয়াচ। টুক করে মনে হল, আপনি হয়ত গোয়েন্দা।

- ডান হাতে রিস্টওয়াচে গোয়েন্দা?

- ও আপনি বুঝবেন না।

- তা, এ'রকম অদ্ভুত জিনিসপত্র কি মাঝেমধ্যেই আপনার মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়?

- আমার প্রফেশনটাই সে'রকম কিনা।

- কী'রকম?

- আমি সিনেমার গল্প লিখি।

- আরিব্বাস। তবে, আমি বলেছিলাম না আপনি মানুষটা ভারি জম্পেশ। যাকগে, আলাপট সেরে নিই৷ আমি অভিষেক দত্ত। আপনি?

- মুকুল রায়৷

- কতগুলো সিনেমা লিখেছেন আজ পর্যন্ত?

- মিনিমাম সত্তরটা।

- বলেন কী! আপনি তো মশাই ইন্ডাস্ট্রি।

- নিজের মুখে নিজের ব্যাপারে বেশি কিছু বলা উচিৎ হবে না।

- কতগুলো হিট হয়েছে? দু'চারটে নাম ছাড়ুন না মশাই। সিউডোনেমে লেখেনটেখেন না তো?

- সিনেমার গল্প লিখেছি খান সত্তর। রোম্যান্টিক, অ্যাকশন, থ্রিলার, পাঁচমেশালি স্বাদের..কিছুই বাদ যায়নি৷ কিন্তু ইয়ে, এখনও একটাও বিক্রি হয়নি।

- ওহ্। কিছু যদি মনে না করেন, একটা কথা বলি।

- কী?

- আমাদের অফিসে একটা ক্লার্কের পোজিশন খালি আছে৷ বড়সাহেবের সঙ্গে আমার একটা ভালো ইয়ে আছে। আমি যদি রেকোমেন্ড করি..।

- থামুন মশাই৷ আমি ক্রিয়েটিভ জগতের মানুষ, ও'সব চাকরিবাকরি থেকে শতহস্ত দূরে।

- তা, আপনি কি কোনও কারণে গোয়েন্দার খোঁজ করছেন মুকুলবাবু?

- একটা গোয়েন্দা গল্প না লিখলেই নয় এ'বার৷ কিন্তু ও'টাই আবার আমার একটু উইকস্পট বুঝলেন৷ দিস্তে দিস্তে ডিটেকটিভ নভেল পড়েও কিছু হচ্ছে না, এগোতে পারছি না৷ তাই একটা হাতেগরম কোনও ডিটেকটিভ পাকড়াও করতে পারলে তার লেজুড় হয়ে না হয়..।

- ওহ, আই সী।

- একটা আসল গোয়েন্দার তোপসে বা অজিত হয়ে ক'দিন ঘুরঘুর করতে পারলে একটা মারকাটারি গোয়েন্দা গল্পের প্লট নামানো যাবে৷ আর মার্কেটের যা অবস্থা, ও জিনিস একটু ওপর-নীচ হলেও চলে যাবে। প্রোডিউসাররা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে, নভেলে গোয়েন্দা শব্দটা বারদশেক থাকলেই সে' গপ্পকে স্যাট করে তুলে নিয়ে সিনেমা বানিয়ে ফেলবেন।

- বটে? মাইরি?

- মার্কেট তো তেমনই বলছে।

- বেশ। অল দ্য বেস্ট৷ ওই আমার বাস আসছে। অল দ্য বেস্ট মুকুলবাবু৷ চোখকান খোলা রাখুন, ডিটেক্টিভ নিশ্চয়ই জুটে যাবে।

- ইয়ে, অভিষেকবাবু। এমন চমৎকার গোয়েন্দাসুলভ চাউনি আপনার৷ একটু ডিটেকটিভগিরির চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?

- দেখব?

- আপনি চেষ্টা করলে বড় উপকার হয় আমার। অনেকদিন খুঁজে দেখলাম তো। গোয়েন্দা ব্যাপারটা বেশ সহজলভ্য নয় যা বুঝছি।

- উম..আপনি এমন মাই ডিয়ার ভাবে বলছেন যখন..একটা চেষ্টা করে দেখতে পারি৷ ওই তো, এক হাতে ক্লু, অন্য হাতে ডিডাকশন। তাই না? তবে চাকরিটা ছাড়তে পারব না মশাই। সামনের মাসে প্রমোশনটা হওয়ার হাই চান্স। বারো পার্সেন্ট ইনক্রিমেন্ট।

- ও মা। চাকরি ছাড়বেন কেন? লোকে দিনেরবেলা চাকরি করে সন্ধ্যেবেলা টিউশনি পড়ায় না বুঝি? আপনি গোয়েন্দাগিরি করবেন।

- বেশ। ওই কথাই রইল।

- তা'হলে আপনাদের অফিসের ওই ক্লার্কের পোজিশনটায় ঢুকে যাই? আপনাকে অবজার্ভ করতে সুবিধে হবে।

- আশা করি উচ্চমাধ্যমিকটা পাশ দেওয়া আছে?

- গ্র্যাজুয়েট। বিএ। অনার্স আছে।
- বাহ্। বাসে উঠে আসুন। কথাবার্তা এগিয়ে নেওয়া যাবে।