Skip to main content

Posts

Showing posts from November, 2018

সঠিক দিকে

- এই যে, অ্যাস্ট্রনট দত্ত! কন্ট্রোলরুম থেকে বলছি৷ কদ্দূর পৌঁছলেন? - আর ভায়া কন্ট্রোলরুম, মহাকাশে সেঁধিয়ে তারপর টের পেলাম তালমিছরির ডিবেটা নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। কী কাণ্ড বলুন দেখি...। - আরে ধ্যার, যত অকাজের কথা। বলি যন্ত্রপাতি সব স্টেবল? - দিব্যি। কোনো অসুবিধে নেই৷ এই বেলা একটু গা এলিয়ে নেব ভাবছি। - সে কী! কাজ শুরু হয়নি? - কাজ? - উফফ! দত্তদা! ছবি তোলেননি? ফ্রম স্পেস? যে কাজের জন্য প্রাইমারি ভাবে আপনার যাওয়া! - আলবাত! আর এ'বারে যা পাওয়ারফুল ক্যামেরা দিয়েছেন৷ তা দিয়ে এখান থেকেই সব যা ছবি তুলছি না; আইফোনও হার মেনে যাবে। - আসল ছবিগুলো চটপট দিন। "মহাকাশ থেকে দেখা গেল ভারতের এই মেগা-আশ্চর্য"  গোছের হেডলাইন তৈয়ার। এ'বার আপনি ছবি দিলেই..। - তা অনেক ছবিই তো তুললাম, কোনটা দেব...। - আরে যে কোনো...দিন না মশাই...ক্যুইক। - এইটে দিই? সরকারি হাসপাতালের উঠোনে রুগীরা দলে দলে বেওয়ারিশ শুয়ে আছে? অনেকের হাতে স্যালাইনের বোতল? এই প্রথম মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতে তাদের দেখা যাচ্ছে! ইন্ট্রিগিং। - সে কী! সে'সব কে চায়! এই আপনার মাথাটা গেছে...আসল ছবি কই? - আসল ছবি! ওহ হো! ভাঙা ব্রিজট্

সুইসাইড পয়েন্ট

- সুইসাইডটা কি ঠিকঠাক হয়নি? - আজ্ঞে? - না মানে, স্পষ্ট ঝাঁপ দিলাম। ওভার ব্রীজ থেকে ডায়রেক্ট লাইনের ওপর। ট্রেন দেখেই ঝাঁপিয়েছি। টাইমিংয়েও ভুলচুক করিনি বলেই মনে হয়। অথচ...। - কচুকাটা হয়ে পড়ে থাকার বদলে এই অদ্ভুত এলাকায় কী করে এসে পড়লেন...সে'টাই ভাবছেন তো? - আজ্ঞে। ঠিক তাই। মানে, এতটা ভেবড়ে গেছি না..। আপনাকে দেখতে পেয়ে ভাবলাম জিজ্ঞেস করেই ফেলি। - মরেও মরেননি।  - সর্বনাশ! মরেছি? কিন্তু মরিনি? - বাহ্। বেশ চট করে বুঝে গেলেন দেখছি। - ও মা! না! এ কী! কিস্যু বুঝিনি। আর এই জায়গাটাই বা কোথায়..মাটি নীল, আকাশ নীল...এক্কেবারে বিতিকিচ্ছিরি। - প্রাহ্যাজামস্ক্বহ। - প্রাহ্যা...? - জামস্ক্বহ। - নরকটরক নাকি? - ধুর। সে'সব থ্রিলিং কিস্যু নয়। পাতি একটা গ্রহ। তাও পৃথিবীর চেয়ে বহু দূরের একটা গ্যালাক্সিতে। ভীষণ মোনোটনাস ব্যাপার। - এ'খানে কারা থাকে? - যারা থাকে তারা নিজেদের ভারি গালভরা নামে ডাকে।  বশ্রুজ্বক্বজ। - বশ্রু? - জ্বক্বজ। তবে নাম শুনে ঘাবড়াবেন না। ব্যাটারা আদতে বেঢপ বিটকেল সব বেড়াল। এক্কেবারে গায়েপড়ার দল। - বেড়াল! যাহশ্লা! বেড়াল? - বেড়াল। ল্যাজ গোঁফ মিউ সব আছে। অথচ বিটকেল। ভোট দেয়, সফটওয়্যার

গব্বরের কাঁপুনি

- ওহে গব্বর, একবার এ'দিকে এসো ভাইটি। - আ...আমি? - নাদুসনুদুস ভুঁড়ি। নোংরা চুলদাড়ি। কালচে দাঁত।  বিটকেল হাসি। তোমায় তো আর প্রসেনজিত বলে ভুল করা চলে না ভাই। এ'দিকে একটু এসো দেখি। - ইয়, স্যার। আমি কিছু..ভ...ভুল করে ফেলেছি নাকি?  - সর্দার মানুষ, তুমি কি আর ভুলচুক করতে পারো। তা শুনলাম নাকি তুমি কালিয়া আর আরো দু'জনকে উড়িয়ে দিয়েছ? - না মানে...কাজটা বোধ হয় ঠিক হয়নি। না? আসলে মাত্র দু'জন কচি ছোকরার হাতে ওরা এমন হেনস্থা হল...। - তা'তে তোমার ইজ্জতে চোট লাগল। বুঝি বুঝি। সর্দার মানুষ, অমন রাগধাপ তোমায় দিব্যি মানায়। - আপনি রেগে থাকবেন না স্যার। এই নাকে খত দিচ্ছি। আগামী সাতদিন আমি রামগড়ের রাস্তা থেকে পানের পিক আর ঘোড়ার ইয়ে সাফ করে প্রায়শ্চিত্ত করব। রেগে থাকবেন না প্লীজ। - তুমি কালিয়াকে মারো, সাম্ভার কানে সুড়সুড়ি দাও, ঠাকুরকে গীতাঞ্জলি পাঠাও; যা খুশি করো! আমার বয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে আমার নামের ডায়লগ নিজের নামে চালাবে? - আজ্ঞে? স্যার? - ন্যাকা! সো জা নহি তো গব্বর আ জায়েগা! এ'সব বলে ইয়ার্কি হচ্ছে?  - কান মলছি স্যার। ভুলে বলে ফেলেছি। আর হবে না। ও ডায়লগ দিয়ে আমার মা আমায় ঘুম পাড়া

লাইসেন্স

- কী নাম? - আজ্ঞে হরিসাধন দত্ত।  - বয়স?  - চুয়ান্ন। - পেশা? - বিজনেস। স্ক্র‍্যাপ কেনাবেচা, বুঝলেন..ওই শিপইয়ার্ড থেকে এজেন্সি নিয়ে...। - আহ, রামকাহিনী  ফাঁদতে বলিনি। ব্যবসা বললেই হবে। - বেশ। ব্যবসা। - ঠিকানা? - সত্তরের এ, কালীকৃষ্ণ লাহিড়ী স্ট্রীট। কলকাতা সাতাশ। - এ'বার বলুন। কী চাই..। - আজ্ঞে ওই, বাজিপোড়ানোর লাইসেন্স। - বাজিপোড়ানোর লাইসেন্স করানোর অফিসে কি আপনি জলভরা কিনতে আসবেন? বলি কী কী বাজি পোড়ানোর লাইসেন্স চাই? চটপট বলুন। - আজ্ঞে, এক বাক্স লারেলাপ্পা চকোলেট বোমা, হাফ ডজন জুবানকেশরি তুবড়ি, বাইশটা চুটকি চরকি আর সতেরোটা পিসেমশাই মার্কা মাল্টিকালার রংমশাল। - এই যুগে দাঁড়িয়ে এক বাক্স চকোলেট, ছটা তুবড়ি, বাইশটা চরকি, সতেরোটা রংমশাল। স্ক্র‍্যাপের ব্যবসা তো ভালোই দাঁড়িয়েছে মশাই। - হে হে। ওই, খেটে খাচ্ছি কোনোক্রমে। এ'বার ওই লাইসেন্সটা স্যার।  - এক বাক্স চকোলেট, ছটা তুবড়ি, বাইশটা চড়কি সতেরোটা রংমশাল। তিন মানুষ বাতাস। মানুষ এনেছেন? - তিন মানুষ? বলেন কী!  - এতগুলো বাজি! কতটা বাতাস খেয়ে নেবে, বাপ রে বাপ! কম্পিউটারের হিসেবে তিন মানুষ ফিজ আর এমন কী।  - আজ্ঞে আমি ভেবেছিলাম দু'মানুষ। তেম

হ্যাপা

- দারোগাবাবু, রসগোল্লা খাবেন? - স্পঞ্জ? - না না, অর্থোডক্স টেক্সচারের। মাঝারি মিষ্টি। - উঁ, খান চারেক আনাও তা'হলে। টেস্ট করে দেখি। যা বুঝছি, হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে। - তা আছে। গোডাউনের চাবি রাখা থাকে আমার বাড়ির দেরাজে। দিবাকর সাইকেল নিয়ে গেছে বটে, তবে তার হাঁটুতে যা ব্যথা। দু'মাইল যেতে অন্তত কুড়ি-পঁচিশ মিনিট। তারপর গিন্নীর থেকে চাবি নিতে পাঁচ দশ মিনিট। সব মিলে প্রায় ধরুন গিয়ে এক ঘণ্টা। বরং এক কাজ করি। সঙ্গে দু'টো নিমকি বলে দিই। বেশ খাস্তা করে। এই পাশেই দোকান। - আনাবে? - চট করে। আপনি আর আপনার দুই হাবিলদার,  সক্কলের চোখ মুখ বসে গেছে এক্কেবারে। বড্ড কাজের চাপ, তাই না দারোগাবাবু? - কী আর বলব মিত্তির। সর্ষের তেলের ব্যবসা নিয়ে থাকো, পুলিশের ঝামেলা আর কী বুঝবে। গোটা সকাল কাটলো জোড়াচোর বিধু নিধুকে ধাওয়া করে। জান কয়লা করে দিলো ছোকরা দু'টো। তারপর থানায় ফিরে কাতলার ঝোল, পোস্তর বড়া আর জলপাইয়ের চাটনি দিয়ে দু'মুঠো ভাত খেয়েছি কি খাইনি; সদর থেকে ইন্সট্রাকশন এলো তোমার গোডাউন রেড করার। এ'খানে তুমি নাকি গোলমেলে কিছু শুরু করেছে। - আমি? গোলমেলে? আমি? হরিহর মিত্র? প্রতি বছর ক

অপচয়

- হোয়াই শুড উই হায়্যার ইউ? - কারণ...কারণ আমি জানপ্রাণ লাগিয়ে কাজ করব স্যার৷ দেখবেন! যে কোনো কাজ! প্রয়োজনে দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে না খেয়ে...অনবরত কাজ করে যাব। ফ্যাক্টরি থেকে কোথাও বেরোব না....। - মিস্টার সেন। ফ্যাক্টরি ফ্লোরে প্রাণপাত করার জন্য ক্যান্ডিডেট কম পড়েনি। আপনার মত অন্তত হাজারখানেক মানুষের আবেদনপত্র জমা পড়েছে। চাকরীটা তাদেরও জন্যেও ততটাই দরকারী মিস্টার সেন। যাকগে, অন্য প্রশ্নে আসি। আগের চাকরীটা গেল কী করে? - বিশ্বাস করুন, দোষ আমার ছিল না৷ যন্ত্রটা আপনা থেকেই স্লো ডাউন করেছিল; আমার অপারেট করার ভুলে নয়। তা'তে প্রডাকশন গ্রোথ পয়েন্ট ফাইভ পার্সেন্ট কমে গেছিল চার মিনিটের জন্য। তবে জবাবদিহি করার কথা ছিল মেন্টেনেন্স টীমের, অপারেটর হিসেবে আমার কিছুই করার ছিল না। - আপনার এই ঘ্যানঘ্যান করার স্বভাবটা কি পুরনো? - স্যর, বিশ্বাস করুন...। - আজকের ইন্টারভিউতে যদি কিছু একটা করে না উঠতে পারেন মিস্টার সেন...। - আমার বেকারির তিরিশ দিন পূর্ণ হবে। আর তা'হলে কাল ভোরে ফায়্যারিং স্কোয়্যাড। সরকারী  মেমো এসে গেছে। - ভাবতে অবাক লাগে, একশো দশ কি বারো বছর আগেও আপনারই মত বেকার মানুষগুলোকে দিনের পর দি

ভবদুলালের ভোর

নভেম্বরের ভোরগুলোয় অমন একটু শীতশীত ভাব থাকেই। আর ছুটির ভোরগুলোতে ট্রেনও খালিখালি থাকবেই। ভোরের শীতশীত আমেজ আর ট্রেনের ফাঁকাফাঁকা ভাব; ভবদুলালের মনে হচ্ছিল যেন তার বুকের মধ্যে কেউ দু'ঘটি আনন্দ-শরবত ঢেলে দিয়েছে। আর মনের মধ্যে আনন্দ চাগাড় দিয়ে উঠলেই একটু গড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করে তাঁর। এমনিতেই চোখ ঢুলঢুল করছিল; সেই অন্ধকার থাকতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টেশনমুখো ছুটতে হয়েছে। কামরাটা দিব্যি ফাঁকা; কাজেই সীটের ওপরেই লম্বা হতে দ্বিধা করেনি ভবদুলাল। হাওয়ায় শিরশিরানি ভালোই আছে, তবু জানালার কাচ সামান্য তুলে রেখেছিল সে। ট্রেনের ঝুকুরঝুকুর শব্দ আর দুলুনিতে আমেজ জমাট বাঁধে বেশ। বিভিন্ন ঝকঝকে স্মৃতির টুকরো আপনা থেকেই বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে গেল। জানালা বেয়ে গড়িয়ে আসা হাওয়ার কনকনে যখন দু'চোখে ঘুম জড়িয়ে এলো; তখন সেই সে'দিনের কথা মনে ভাসতে লাগল; অফিসের বড়সাহেব বলছেন "কঙ্গ্রাচুলেশন ভবদুলাল, ইউ হ্যাভ বিন প্রমোটেড"। তড়াক করে ঘুমটা গেল কেটে। ঝুকুরঝুকুর শব্দ আর ট্রেনের দুলুনি সব গায়েব, সামনে একটা বিকট টেবিল। টেবিলের ও'পাশে বড়সাবেব; তার চোখজোড়া কটমটে; "তোমায় আমি প্রমোশনের খবর দিচ্ছি ভবদুলাল,

নো পার্কিং

হাইওয়ে ঘেঁষা ছোট্ট বসতি। এত রুক্ষ যে আর পাঁচটা বাংলার গাঁয়ের সঙ্গে তুলনা চলে না, আবার শহর যে নয় তা এ অঞ্চলের নিরিবিলিতেই মালুম হয়। খানকয়েক বাড়ি বেয়াড়া ভাবে দাঁড়িয়ে; মানুষজন কে আছে না আছে তা বাইরে থেকে দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়না। দু'চারজন লোক যাও বা দেখা যায়, তা ওই জরাজীর্ণ 'জনতা ধাবা'তেই। পথচলতি কিছু ট্রাক বা অন্যান্য গাড়ি চা জলখাবারের জন্য দাঁড়ায়।  মানুষজনের দেখা পাওয়াই দুস্কর, কাজেই ঝগড়াঝাটির শব্দ সচরাচর কানে ভেসে আসে না। কিন্তু আজ একটা ভালো রকমের তালগোল পাকিয়েছিল, যা শুনে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন অমর মিত্র। তাঁর বাড়ি থেকে দু'পা এগিয়েই একটা পাঁচিলের পাশে দাঁড়িয়ে নীল টিশার্ট পরা এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক রীতিমত হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়েছেন। আর ভদ্রলোক আঙুল নাচিয়ে যাকে ফালাফালা করতে ফেলতে চাইছেন, সে একজন বিকট জোব্বা পরিহিত ছোকরা; সে ভয়ে প্রায় কাঁদোকাঁদো, ঠকঠক করে কাঁপছে। তম্বি করা ভদ্রলোককে দেখে মনে হচ্ছে সামনের ছেলেটিকে যে কোনো মুহূর্তে চড়থাপ্পড়ে কষিয়ে দিতে পারেন। দ্রুত পায়ে নীল টিশার্টের ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে গেলেন অমর মিত্র।  - কিছু গোলমাল হয়েছে নাকি? - গোলমাল? রাহাজানি!

কুটুম্ব

- চা খাবেন? - না। - কফি? - উঁ...না থাক। - কোল্ডড্রিঙ্কস? - শুনুন না মলয়দা। চা-ঠা থাক বরং। - ও মা! সে কী বিধুদা! আপনি আমার শ্বশুরবাড়ির পাড়ার লোক। অদ্দূর থেকে আমার অফিসে এসেছেন৷ কিছু একটা না খেলে চলবে কী করে। আই ইনসিস্ট। আচ্ছা, লস্যি আনিয়ে দেব? আমাদের অফিসের নীচেই..। - ওই চা হলেই হবে। - গ্রীন টী দিতে বলি? - গ্রীন? না ওই নর্মাল চা হলেই হবে। - দুধ চা? - হ্যাঁ। - গুড। আমাদের নির্মল প্যান্ট্রি সামলায়। এ-ক্লাস চা বানায়। এ-ক্লাস। দাঁড়ান, হাঁক দিই। ওহে নির্মল, দু'টো চা দিয়ে যাও। একটা দুধচা। একটা লিকার। চিনি আলাদা করে। বিধুদা, সঙ্গে থিন অ্যারারুট না ক্রীমক্র‍্যাকার? - বিস্কুটের দরকার নেই। - না না, তা কী করে হয়। নির্মল! শুনতে পারছ তো? চায়ের সঙ্গে বরং একটু কাজু নিয়ে এসো। সল্টেড।  - মলয়দা, ব্যস্ত হবেন না প্লীজ..। - কী বলছেন। আপনি আমার শ্বশুরমশাইয়ের ছোটবেলার বন্ধুর ছেলের আপন শালা। এ'টুকু অফার করব না? ওহে নির্মল, কাজুর সঙ্গে একটু নিমকি দিও তো।  - বলছিলাম যে, দাদা! বড় বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি। - বিপদটিপদের কথা শুনব। তবে তার আগে আমাদের অফিসের এই স্পেশাল কুচো নিমকি খেয়ে দেখুন। মিনিমাম তেল, ম্য

রসম-এ-মহব্বত

যে যাই বলুক, ভালোমানুষ চারদিকে দিব্যি ছড়িয়ে আছে৷ কেউ আলপটকা উপকার করে বেড়াচ্ছে, তো কেউ ট্যাক্স ফাঁকির কথা শুনলেই আঁতকে উঠছে। কেউ কেউ আবার অন্যায় দেখলেই তেলেবেগুন মোডে চলে যাচ্ছে। কাজেই ভালোমানুষের খোঁজ পাওয়া তেমন বড় ব্যাপার নয়। তার চেয়ে বরং ভালো ডিম তড়কার সন্ধান পাওয়া ঢের কঠিন। ফোড়ন মশলা ঠিকঠাক পড়তে হবে, ঝালনুন খাপে খাপ হতে হবে, ডিমের পরিমাণ বেশি কম হবে না; হাজার রকম নক্সা মেনে চলার কথা। নেদু আলাভোলা মেজাজে তড়কা বানানো চলেনা। হাইওয়ের ওপর ট্রাক আসা যাওয়ার শোঁ শাঁ আর ঢাউস উনুনের ওপর চাটুতে পেঁয়াজ টমেটো লঙ্কাকুচি ছাড়ার চ্যাড়চ্যাড় শব্দ মিলে প্রিলিমিনারি সিম্ফনি তৈরি হবে। ধাবার ক্যাশিয়ারের থ্রুতে উনুনের ও'পাশে ইনস্ট্রাকশন যাবে "এক্সট্রা ঝাল হবে, ডাবল ডিম"।  নাকে আসবে রুটি সেঁকার গন্ধ আর পাশের টেবিল বা খাটিয়া থেকে ভেসে আসা চিকেন কষার সুবাস। স্টিলের গেলাসে ডিম ফ্যাটানোর ফটরফটর শব্দ কানে আসলেই জিভ তৈরি হবে; ওই এলো বুঝি।  স্টিলের থালার পাশে একবাটি তড়কা আর ধবধবে হাফফুলকো খানকয় রুটি। সঙ্গে ফালি করা কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা আর সামান্য আচার। অবশ্যই সে তড়কা প্যাকেট করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার

বনমালী কন্ডাক্টরের বাস

১। স্ট্রীট ল্যাম্পের ঘোলাটে হলুদ আলো ভেদ করে ডাবলডেকার বাসটা টুপ করে উদয় হল। প্রায় নিঃশব্দে। প্রথমে বিভূবাবু বিলকুল টের পাননি, তারপর হঠাৎ যেন বাসটা রাস্তা বেয়ে ভেসে উঠলো। তা'তে ঘাবড়ে যাননি বিভূবাবু; এ বাস এমনভাবেই আসে।  যাক, এ'বার অন্তত রাতভর বাসস্টপের বেঞ্চিতে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হবে না। অবশ্য বাসের অপেক্ষায় রাতভর বাসস্টপে পায়চারী করার অভিজ্ঞতা নতুন নয়;  অন্তত হাজার দেড়েক রাত এইভাবে কেটেছে।  সে হাজার দেড়েক রাতের মধ্যে বড় জোর বার চারেক এসেছে এই বাস। কাজেই রাতভর অপেক্ষা করার অভ্যেস তার নতুন নয়। ২। ফিস শব্দে সে বাস এসে দাঁড়ালো বিভূবাবুর সামনে। যথারীতি ড্রাইভারের সীট খালি; স্টিয়ারিংটা ট্যাওটুই করে এ'দিক সে'দিক পাক খাচ্ছে। এ'বাসে এমনটাই হয় বটে। আগেরবারগুলোর অভিজ্ঞতায় এ'সব হালচাল দিব্যি বুঝে গেছেন তিনি। তাও ভালো, হাজারখানেক রাতের চেষ্টায় অন্তত বারচারেক এ বাসে চড়ে হাওয়া খেয়ে বেরিয়েছেন তিনি।  বিভূবাবুর চেনাজানা প্রায় কেউই এ বাসের খোঁজ পাননি। এমন কী গিন্নীকেও এ বাসের খবর দিতে গিয়ে রীতিমত 'ছিটগ্রস্ত' বলে চোপা শুনতে হয়েছে। এদ্দিনে তিনি দিব্যি বুঝেছেন যে এ খবর

মা ও সাকরেদ

মামাবাড়ির লক্ষ্মীপুজোয় ইলিশ রান্না হয়। আমাদের বাড়িতে নেতিপেতি ফর্ম্যাটে নিরামিষ। তবে সে নিরামিষে থাকে মায়ের রান্না ভুনোখিচুড়ি। নারকোল কুচি, ভাজা বাদাম আর ফুলকপি দেওয়া; তার কোয়ালিটিতে ইলিশের অভাব তেমনটা বোধ হয়না। মা নিজে গোটাদিন উপোসী থাকে, তা'তে রান্নার ফোকাস বাড়ে কিনা কে জানে; কিন্তু লক্ষ্মীপুজোর দিন রাঁধা খিচুড়ির টেস্টের সঙ্গে অন্যদিনগুলোর তুলনা চলেনা। বাড়িতে শ'দেড়েক প্রতিবেশী ভোগ খেতে আসেন; খিচুড়ি, পাঁচমেশালি তরকারি, লম্বা করে কাটা বেগুনভাজা, গোল আলুভাজা, পায়েস, চাটনি আর মিষ্টি। সবার শেষে পুজোর ঘরে বাড়ির লোকেরা থালা নিয়ে বসে। আমি শুধু খিচুড়ি আর বেগুনভাজায় ফোকাস করি; থালাজুড়ে ইয়াব্বড় খিচুড়ির ঢিপি, তার পাশে লেতকে পড়তে থাকা ডাঁটাওলা বেগুনভাজা। পুজোর ঘরের ধুপধুনো ফলমূল প্রসাদের সুবাস অদৃশ্য দলা পাকিয়ে সে খিচুড়িতে এসে মেশে। দু'তিন গ্রাস মুখে দেওয়ার পরেই মনের মধ্যে ভক্তি ফ্লো করতে শুরু করে। দুধভাত না থাক; এমন খিচুড়ি যেন বছরে অন্তত একবার পাতে এসে পড়ে। পুজোর পরের দিন জলখাবারেও যে এই খিচুড়িই ঠাণ্ডা খাওয়া হবে, তা বলাই বাহুল্য।  মা এ'বার একজন অনুগত সাকরেদ পেয়েছে; সে মায়ের লেজুড়

সান্যালের দাওয়াই

অন্ধকার গলিটায় ঝুপ করে উদয় হলেন সুমন সান্যাল। জমাট নিস্তব্ধতা  ভেদ করে একটা ফস্ শব্দ; সিগারেট ধরালেন ভদ্রলোক। ইলেক্ট্রিক বাতি আর আকাশে চাঁদ সত্ত্বেও এ অন্ধকার বেশ সমীহ করার মত। হাতঘড়ির দিকে ঘনঘন তাকিয়েও লাভ হচ্ছে না, সময় চলছে কলকাতার ট্র‍্যাফিক জ্যামে পড়া মিনিবাসের গতিতে। রাত সোয়া দু'টো বাজতে এখনও মিনিট তিনেক দেরী। উফ। তর সইছে না। 'মিস্টার সানিয়াল'! ঘড়ঘড়ে কণ্ঠস্বরটা পরিচিত; রোবুনকেম্প। সেও যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে হুট করে, 'প্লীজ মিস্টার সানিয়াল, স্মোকিং ব্যানঢো ক্রুন'। রোবুনকেম্পের বাংলা বোঝা চাট্টিখানি কথা নয়, তবে সান্যালবাবু অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সদ্য জ্বালানো সিগারেটটা ফেলে দিয়ে রোবুনকম্পের হাত টেনে সামান্য ঝাঁকুনি দিলেন তিনি "ওয়েলকাম টু আর্থ রোবুনকেম্প মশাই, ওয়েলকাম"। - সানিয়াল, অনেক ডিন পরে দেকা হল। - তা অনেকদিনই বটে। অন্তত সাড়ে বাইশ বছর তো বটেই। - ঠুমি তো এখুনও জোয়ান ডেকচি। - জোয়ান ডেকচি? - ডুক্কিতো। তোমায় দেকে একুনও জোয়ান মনে হয়।। - আপনাদের সেই উন্নত গ্রহের ওষুধ। জোয়ান না থেকে উপায় আছে? অবশ্য জোয়ান থাকার চেয়েও বড় সুবিধে হল হুটহাট যে কোনো জায়গায় উড়

পুজোর রোল

যাদের কপালে বাড়ি ফেরার ছুটি জোটেনি, যাদের পুজো কাটবে এমএস-এক্সেলে মুখ গুঁজে গজরগজর করে। যাদের খোকাখুকুরা বাইরে বলে মনখারাপ, ঘনঘন পুরনো পুজোসংখ্যাগুলো হাতড়ে খোকার প্রিয় লেখাগুলো উল্টেপাল্টে পড়ে চলেছেন। পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত যে মানুষটার 'উৎসব' শুনলে মুখে তেতো স্বদ খেলে যায়, পুজোর ছুটি যার কাছে যন্ত্রণার মত। পুজোর বাতাস বুকে এলে যার পুরনো চিঠির কথা মনে পড়ে, 'কেমন আছিস' মার্কা ফোন করার সাহস আর অধিকার হারিয়েছে যে সাইকেল-সম্রাট। যার খুব মায়ের কথা মনে পড়ছে। বাবার আঙুল শক্ত করে ধরে রাখার নিশ্চিন্দি হাতড়ে চলেছে যে বেআক্কেলে।  পুজোয় তাদের সবার জন্য, কোথাও না কোথাও,নিশ্চয়ই একটা এগরোল ভাজা হচ্ছে। ভালোবাসার চাটুতে নেড়েচেড়ে, স্নেহের তেলে উল্টেপাল্টে। তাদের সবার কামড় সে রোলে এসে পড়ুক না পড়ুক, পুজোয় তারাও থাকুক।

শিউলি ও হামানদিস্তা

প্রেমে প্যানপ্যান ঘ্যানঘ্যান করলেই হবে? যে রোগে যেমন ওষুধ।  ছোটমামা দুম করে চলে আসায় চিলেকোঠার গোপন সাক্ষাৎ ভেস্তেছে? বুকের মধ্যে চড়া সুরের হাউহাউ? অ্যান্টিডোট একটাই; দু'প্যাকেট বাদামভাজা প্লাস লঙ্কা মেশানো বিটনুন। ঘণ্টাদুয়েক মণ্ডপে থেকেও নীলশাড়ি একবারটির জন্যেও ভলেন্টিয়ারগিরির প্রাণপাত করা দৌড়োদৌড়িটা খেয়াল করে বাহবা-হাসি ছুঁড়ে দেয়নি? সে মনভার উড়িয়ে দেওয়ার জন্য চট করে জোগাড় করে নিতে হবে মশলাদার মটরভাজার প্যাকেট। আবহাওয়া দপ্তরের অভয়বাণীর কানমলে নেমে আসা বৃষ্টিঝড়ে অষ্টমীর হাঁটতে যাওয়ায় প্ল্যান ডকে উঠেছে? কপালে রয়েছে বন্ধুদের বাঁকা আওয়াজ আর টুয়েন্টি নাইন? বুক বেয়ে ভসভসিয়ে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাসকে রুখতে দরকার কাঠিভাজার মিউজিকাল মুচমুচ। সাতপাতা লম্বা 'তোমায় ছাড়া বাঁঁচব না' মার্কা চিঠির জবাবে চাঁচাছোলা চিরকুট এসেছে? হেডস্যারকে বলে দেওয়ার ধমক? আদা লজেন্সকে সর্বিট্রেটের মত জিভের তলে ফেলে চুষতে হবে, যতক্ষণ না বুকের ধড়ফড় কমছে। ডায়েরীর সমস্ত কবিতা জলে গেছে? সে জানলো না পর্যন্ত? রাস্কেলচন্দ্র ফার্স্টবয়ের সঙ্গে সে প্যান্ডেল আলো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে? ঘুরে দাঁড়ানোর একটাই টোটকা; আড়াই প্যাকেট মৌরি

পাহাড়ি ও অতুলবাবু

পাহাড়ি সান্যাল মিস্টার সেনকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন৷ বেশ কিছুটা চিনেছিলেন। ভালোবেসেছিলেন অতুলদাকে। সেই স্মৃতিচারণ নিয়েই এই লেখা।  অতুলবাবু অবিকল তার গানের মত; অন্তত পাহাড়িবাবুর লেখায় তেমনটাই ফুটে ওঠে। সঙ্গীতের মত সুন্দর তার দুঃখের টুকরোগুলোকে গোপনে সাজিয়ে রাখার ক্ষমতা। একদিকে তিনি কর্মব্যস্ত, অন্যদিকে চট করে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরতে পারেন। পরোপকারি, বন্ধুবৎসল। উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি নেই, অথচ স্নেহে পরিপূর্ণ। সেই অতুলপ্রসাদের কথা বোধ হয় শুধু পাহাড়িবাবুই লিখতে পারতেন। পাহাড়িবাবুর ভাষায় সারল্য থাকলেও তা বাহুল্যবর্জিত নয়। কিন্তু কী ভীষণ অনেস্ট। ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে গতে বাঁধা 'পুরুষালি' এক্সপ্রেশনের ধার ধারেননি ভদ্রলোক। বিচ্ছেদে ক্ষতবিক্ষত অতুলপ্রসাদের পাশে থেকেই প্রেম চিনতে শিখেছিলেন তিনি। সে'টুকুর জন্যেই পড়ে ফেলা যায় এই লেখা। তা'ছাড়া লখনৌতে বড় হয়ে পাহাড়িবাবু যে 'তেহজিব' আয়ত্ত করেছিলেন, লেখায় তার ছাপও স্পষ্ট। এই দু'জনকে নিয়ে সঞ্জীব যদি গোটা একটা নভেল লিখতেন; কী ভালোই না হত।