Skip to main content

Posts

Showing posts from April, 2018

সোধি সাহাব

উত্তর বিহারের প্রত্যন্ত অঞ্চল, মাইল দুয়েকের মধ্যে কোনো বসতি নেই। অনতিদূরে কোশী নদীর মেজাজ মাঝেমধ্যেই বেয়াড়া হয়ে পড়লেও, গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চল বড় রুক্ষ। মে মাসের দুপুরে রোদের দাপটে পথ চলা দুষ্কর,  আর মাঝে মধ্যেই গরম হাওয়ার ঝাপটায় উড়ে আসে ধুলো। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে মাঝেমধ্যে দু'একটা সাইকেলআরোহী বা পথচারী দেখা যায়, তাদের সকলের নাকেমুখেই গামছা প্যাঁচানো। রাতের দিকে অবশ্য তাপ গলানো ফুরফুরে হাওয়া বয়। সে'খানে চলছিল রাস্তা তৈরির কাজ, ন্যাশনাল হাইওয়ে। বড় একটা কন্সট্রাকশন কোম্পানির ক্যাম্প সে'খানে। ক্যাম্পে অফিসঘর,  গুদামঘর ছাড়াও রয়েছে কর্মচারীদের জন্য থাকার জায়গা, মেসঘর আর খানকয়েক গেস্টরুম। আশেপাশে রুক্ষতার মধ্যে ক্যাম্পের ভিতরের পরিপাটি পরিবেশ যেমন বেমানান, তেমনই আরামদায়ক। আমাদের কোম্পানি সে'খানে ফার্নেস অয়েল, ডিজেল আর বিটুমেন সাপ্লাই দিত, সে সুবাদে যাতায়ত লেগেই থাকত। গেস্টরুমগুলো বাতানুকূল,  ছিমছাম; থাকতে কোনো অসুবিধেই ছিল না। তাছাড়া মেসের বিহারী ঠাকুর উমেশচন্দ্রের রান্নার হাতও ছিল সরেস। সূপল জেলার এক জনহীন প্রান্তে তৈরি সেই কন্সট্রাকশন কোম্পানির ক্যাম্পের মধ্যমণি ছিলেন সেনাবাহ

খুচরো দুই

১- ক্যালামিটি। অমিত রায়ের হাবেভাবে গায়ে পড়া ঘ্যানঘ্যান না থাকা, উত্তমের উৎপল-কণ্ঠী ওথেলোতে সুচিত্রার চোখ ছলছল না থাকা, আজহারের ব্যাটিং স্টান্সে গলার তাবিজের দুলুনি না থাকা, আনন্দের শায়রির ডায়েরিতে শুকনো ফুলের স্মৃতি-ফসিল না থাকা, 'বুঝলে ভায়া'র আরামে পাহাড়ি সান্যালিস্ট আশ্বাস না থাকা, আর রাতের ফ্রীজে ক্ষীরকদম না থাকা। *** ২- সজনে। সর্ষে পোস্ত দিয়ে জমাটি ভাবে রাঁধা সজনে চিবুতে পারায় রয়েছে স্বর্গসুখ। রাতে খেতে বসার আগে লেবু সাবানে স্নান করে, গায়ে পাউডার ছড়িয়ে, ফতুয়া চাপিয়ে তবে সজনের বাটি নিয়ে বসা উচিৎ। মনে থাকবে মৃদু গুনগুন; সজনা হ্যায় মুঝে সজনে কে লিয়ে, সজনা হ্যায় মুঝে সজনে কে লিয়ে।

জোড়া খুচরো

১- কর্পোরেট কনক্লেভ। - একটা কর্পোরেট কনক্লেভে আপনাকে ইনভাইট ছিল আপনার জন্য। আমরাই অর্গানাইজ করছি। - কনক্লেভ? কর্পোরেট? - হুজ হু অফ ইন্ডাস্ট্রি থাকবে। - থীমটা কী? - বিসনেস চ্যালেঞ্জেস ইন দি নিউ...। - ধুর, লাঞ্চে কী? কন্টিনেন্টাল? ইন্ডিয়ান? চাইনিজ? *** ২- খাবার অর্ডার - অর্ডার লিখে নিন। - বলুন। - মটন কষা এক প্লেট। মটন রোগনজোশ এক প্লেট। আটটা পরোটা। একটা থামস আপ এক লিটার। - পয়লার বাজার; দেরী করে ফেলেছেন। তবে চিন্তা নেই। চিকেন দোপেঁয়াজা আছে, চিকেন টিক্কা মশলা আছে, চিকেন ভর্তা...। - রিভিশন।  লিখে নিন। দু'টো ডিম তড়কা। এক্সট্রা ডিম। আটটা রুমালি। একটা ফ্যান্টা, এক লিটার। - আহ্, চিকেনে আরো আছে। হরিভরি মুর্গ, চিকেন লাবাবদার...। - পয়লাতে ব্রয়লার খেয়ে চোয়াল ইনজিওর করব, এমন গবেট নই। ক্যুইক স্যর, তড়কা-রুটি-ফ্যান্টা।

মিস্টার স্মিথ

বড় হওয়ার প্রসেসে একটা জব্বর 'বাগ' রয়েছে। মাঝেমধ্যেই মনে হয় 'অ্যাই যে, এইবারে বেশ দাঁড়িয়ে গেছি। দেওয়াল ঘড়ির ব্যাটারি পাল্টাবো। চালানি কাতলা চিনে ফেলে নাক সিঁটকবো। খোকাটি পেয়ে শুকনো বাঁধাকপি গছিয়ে দেবে, তেমন বান্দা আর কেউ থাকবে না চারপাশে'। তখন মনে হয় বুড়োদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলি; 'আরে আমি থাকতে তোমার সাতপাঁচ ভাবার আছেটা কী'?  ঠিক তখুনি দুম করে একটা 'ভুল' ঢুকে পড়বে; আর সমস্ত গুবলেট, গোটা ইকুইলিব্রিয়াম জলে। পায়ের তলার মাটি ঝুরঝুরে হয়ে পড়বে, চেনা মানুষগুলোর গা থেকে পাওয়া যাবে অন্য গ্যালাক্সির গন্ধ। কিছু হাত নরম 'আছি তো'র সুরে পিঠে নেমে আসে, কিন্তু তবু ধুকপুকানি বাড়তে থাকে। সমস্ত মাটি করে ফেলার অপরাধবোধ গলা টিপে ধরে। তখন এই দামড়ামোর খোলস ছেড়ে বেরোনো জন্য যে কী প্রাণান্তকর আইঢাই। আর এই দুর্বিষহ বয়স আর পাপ ঝেড়ে ফেলার একটাই জায়গা আছে বোধ হয়; মা-বাবা। ভুল স্বীকারের এমন নিশ্চিন্ত আশ্রয় আর নেই। কাঁধে বাপের হাতের মত সৎসাহস আর হয় না।  র‍্যান্ডি পশ্ বলেছিলে সরি বলার তিনটে ভাগ আছে; - দুঃখপ্রকাশ। - দোষ নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া। - দোষগুলো

গরম্য

এপ্রিল পেরোনোর আগেই কলকাতা তন্দুর সেঁকা হয়ে পড়বে। এ ভ্যাপসা গরম এমন বিটকেল যে প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরের সমস্ত ঘ্যাম ঘামে শুষে নেয়। হাতের পাঁচ বলতে মাঝেমধ্যে আইআরসিটিসিতে লগ ইন করে শেয়ালদা টু নিউজলপাইগুড়ির টিকিট দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য প্রাণ ঠাণ্ডা করা। গরম বাড়াবাড়ি রকমের দিকে গেলে অবশ্য উইকিপিডিয়ায় লাদাখের গল্প না পড়ে উপায় থাকে না। গুগল ইমেজেস আর ইউটিউবও যথেষ্ট কার্যকরী। গতবার আধঘণ্টা ধরে বরফে মোড়া কানাডায় ছবি ও ভিডিও দেখে সর্দি লেগে গেছিল। অবস্থা আরো সঙ্কটজনক হলে অবশ্য দু'চার পেগ গেলা ছাড়া উপায় থাকেনা; বরফলেবুজলের পাতিয়ালা পেগ যে কত চিড়বিড়ে দুঃখকে চাবকে সোজা করার ক্ষমতা রাখে। মূল সমস্যাটা শুরু হয় মে-মাসের মাঝামাঝি গিয়ে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের চোটে যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, ট্রাম্পবাবু আর বছর খানেক মন দিয়ে চেষ্টা করলেই নর্থ পোলের কোনো এক মোড়ে দাঁড়িয়ে দিব্যি ফতুয়া গায়ে ঘুগনি-ডিমসেদ্ধ খাওয়া যাবে। তা গতবছর বৌ বলল এই সময় ফ্লুইড ইনটেক না বাড়ালে সমস্যা হতে পারে। আমি মাথা নেড়ে সাজেশন দিয়েছিলাম এই হরেন্ডাস গরমের নিজেদের হাইড্রেটেড রাখতে কিছুদিন আমাদের উচিৎ এক বাটি মাংস প্রতি মিনিমাম দু'বাটি

বিনোদবাবুর অম্বল

- শুনুন। - আমায় ডাকছেন? - র‍্যান্ডম ফায়ার করেছিলাম। আপনি ঘাড় ঘুরিয়ে জানতে চাইলেন। তা'হলে আপনাকেই ডেকেছি। - ভিড় প্ল্যাটফর্মে ইয়ার্কি পেয়েছেন? - এই দমবন্ধ করা ভিড় আর ভ্যাপসা গরমে ইয়ার্কি? প্রাণে অত ফুর্তি থাকলে কবি হতাম যে মশাই। - মাফ করবেন, আপনি কবিদের চেনেন না। তারা দিব্যি নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতে পারে, দিনের পর দিন। - আপনি কবি? - পাগল নাকি! যাক গে, ডাকলেন কেন? - তিন নম্বরের দিকে যাচ্ছেন? - আপ কাটোয়া লোকাল তিনে দিয়েছে। অ্যানাউন্স করল তো। আপনার কি ওই লাইনেই? - আমি? না। আমি কুদঘাট টু হাওড়া, হাওড়া থেকে ওয়াপস। - হাওড়া? কুদঘাট থেকে? রেলের অফিসে চাকরী নাকি? - না না, আমি রোজ স্টেশনে ঘুরতে আসি। - স্টেশনে রোজ ঘুরতে আসেন? - রোজ। সব প্ল্যাটফর্মে ঘুরি। বড় ঘড়ির তলায় দাঁড়াই। মাঝেমধ্যে পুরিভাজির দোকানের ব্যস্ততা দেখি। ঘণ্টা তিনেক পর ফের মিনিবাসে করে ওয়াপস। - রোজ? - অবভিয়াসলি রোববারে নয়। ওইদিনটা রেস্ট। - আপনি তো নোবেলটোবেল পেয়ে যাবেন যে কোনো দিন। - সারকাজম রয়েসয়ে ব্যবহার করতে হয়। - গুল দিচ্ছেন না তো? - গা ছুঁয়ে প্রমিস করব? - অত বাড়াবাড়ির দরকার নেই। - আমি অবশ্য চাইলেও গা ছুঁতে পা

রবি আর আলো

- মোমবাতিটা কোথায় রেখেছ পটাদা? - ড্রয়ারে। পড়ার টেবিলের। - নেই। ভালো করে মনে করো দেখি। - তোমার সেই চার ব্যাটারির টর্চটা কী হল? - ফেলে এসেছি। তাসের আড্ডায়। - ভেবে কী হবে আর ভাই রবি। বাথরুমের রাস্তাটুকু মাপা। আর খানিক পরেই ভোর হল বলে। লোডশেডিংকে লাই দিয়ে মাথায় তুলতে নেই। শুয়ে পড়। - আলোর সোর্স হাতের কাছে নেই ভাবলে বড় অস্বস্তি হয় পটাদা। ঘুম আসতে চায়না। - মেসে নতুন তো, আর দু'চারমাসে আলোর বদ অভ্যাস কেটে যাবে। - মোমবাতিটা নিশ্চয়ই কোথাও..। - খুব ভয় লাগলে বোলো, সিগারেট ধরিয়ে নেব। লাইটার আমার বালিশের নীচেই আছে। লাইটারের ফস আর তারপর বেশ একদানা আলো বিউটি স্পটের মত ঘরের অন্ধকারে মিনিট তিনেক জ্বলবে। শুয়ে পড়ো, নতুন চাকরী; উঠতে দেরী হলে কেলেঙ্কারি হবে। সকালের বাথরুমের লাইন কেমন পড়ে তা তো দেখেইছ। আর চ্যাটার্জী মশাই একবার ঢুকলে হয়ে গেল। দশটার আগে শেয়ালদা পৌঁছতে পারবে না। - তোমার এই মেসে অনেকদিন হল, তাই না? - থার্ড ইয়ার থেকে। তারপর মাস্টার্স। তিন বছর চাকরী।  মেস ছেড়ে লম্বা ছুটিতে বের হলে বেশ হোমসিক ফীল করি। - পটাদা, লাইটারটা দেবে একবার? - আলোর জন্য? ভয়টয় পেলে নাকি হে? - না। এমনি। আচ্ছা থ

কোজাগর

- বাবু। - কিছু বলছিলে বাবা? - কেন এসেছিস? - মানে? - বাড়ি ফিরলি কেন? - উফ, একদিন মাত্র দেরী হয়েছে। তার জন্য এত চোপা করবে? রোজ দিব্যি ছ'টার মধ্যে ঢুকে যাই। - কেন ফিরলি? - কী হয়েছে তোমার? - কেন? ফিরলি কেন? - জেনে গেছ? - তোর অফিসের সুপ্রিয় ফোন করেছিল। ওকে পুলিশ জানিয়েছে। - বডিটা? - ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে এসে পৌঁছবে। - ওহ। - কেন এলি? - কোজাগর। উপন্যাসটা খান পঞ্চাশেক পাতা বাকি ছিল। ওরা আসার আগেই...। - আচ্ছা। *** - বাবা? - হুঁ? পড়া হল তোর? - একটু বেশি সময় লাগল। কী ইচ্ছে হল, মাধুকরীটা নামিয়ে কয়েক পাতা পড়লাম। কী সুন্দর শব্দটা, তাই না বাবা? - বটেই তো। তোর মায়ের খুব প্রিয় উপন্যাস ছিল। - হুঁ। যাক গে, এ'বার আমায় যেতে হবে। ওই, কলিংবেল বাজছে। সুপ্রিয়দারা এসে গেছে, তোমার নাম ধরে হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে। তুমি দরজাটা খোলো। আমি আসি, কেমন? - দরজা? দরজা খোলা হবে না যে। ওদের ভাঙতেই হবে। আমার বডিটা দোতলায়, টেলিফোনের ঘরেই পড়ে আছে। দরজা খুলবে কে?

কানমলা

- ব্রাদার, জব ডান।  - যাক। ক'টা খরচ হল? - তিনটে।  - সে কী! দু'টো মানুষের জন্য তিনটে।  - একটা বুলেট মাথার ডান দিক ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। ব্লিডিং যা হচ্ছিল তা'তে রিস্ক নেওয়াই যেত, তবে...। আইপিএলের ম্যাচ চলছিল। গেইল প্যাঁদাচ্ছিল। তাই আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছে হল না। দিলাম তিন নম্বর মাঠে নামিয়ে।  - অপচয় হে জুনিয়র, অপচয়। নাইনটি থ্রীর দুর্ভিক্ষ দেখনি তো, তাই এত মেজাজ। গেইলের ব্যাটিং দেখতে গুলি নষ্ট। অথচ নাইনটি থ্রীতে আমরা মার্ডার টার্গেটের ইন্টারভিউ নিতাম, সে গুলির জন্য কোয়ালিফাই করছে কিনা দেখতে। নয়ত স্রেফ বাঁশ-পেটা করে কাজ সারতে হত।  - ভয়ানক সময় তো। হিউমান রাইটস বলতে কিস্যু ছিল না ব্রাদার।  - আর এখন আমরা গেইলের ব্যাটিং দেখতে খরচ করছি বাড়তি গুলি।  - সরি ব্রাদার।  - যাক গে, এক্সেল শিট আপডেট করে দাও। এ মাসের ট্যালি কত দাঁড়াল? - বাহাত্তর জন। খরচ একাশি।  - ওয়েস্ট। ওয়েস্ট। তা এ'টা কি গেইলের এ মাসের ন'নম্বর সেঞ্চুরি ছিল? - তা কেন ব্রাদার। প্রেম করছি। তাড়া থাকে মাঝেমধ্যে।  - ফের সেই নাইনটি থ্রির মন্বন্তরের গল্পই করি। তখন তুমি হামা দিচ্ছ। আমি তখন ওই আকালেও টপাট

নব

- হ্যালো। - হুঁ। - বাবু! - হুঁ। - শুভ নববর্ষ। - ন্যাকা। - কেমন আছিস? - বহুত খুব। - পুরনো পাড়ায় যাস এখনও? - নাহ্। সময় কই। - ও। তা বটে। তুই কত ব্যস্ত। - খুব ব্যস্ত। বড্ড দৌড়ঝাঁপ। হুড়মুড়। - অফিসের খুব চাপ? - ওই। তুই কেমন আছিস? - দিব্যি। একটা নতুন অ্যাসাইনমেন্ট। বেশ ইন্টারেস্টিং জানিস। - বাহ্। - আমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না? - না। - রাখি? - রাখ। - রাখব না। - আচ্ছা। - পাড়ায় ফিরিস না কেন? - ওই যে। ব্যস্ত। - ন্যাকা। - ফোনটা রাখবি? - ফিজিক্স টিউশনের পর রোজ বাদাম খাওয়াতাম তোকে। ঘাটের পাশে। দু'বছর ধরে। প্রতি শনি আর বুধ। মাঝেমধ্যে বোনাস হিসেবে বিপিনকাকার ঘটিগরম। নিজের টিউশনির টাকায়। ভুলে গেলি? নেমকহারাম! রাস্কেল! - গাল পাড়তে ফোন করলি? - বেশ করব। যাস না কেন? পাড়ায়? - এমনি। - ঘাটের আশপাশটা বড় দেখতে ইচ্ছে করে বাবু। কদ্দিন দেখিনা। তোর মনে পড়ে? ওই কচুবন আর গঙ্গামাটি মেশানো গন্ধ? মনে পড়ে তোকে প্রবাবিলিটি শিখিয়েছিলাম? এই রকমই, সংক্রান্তির বিকেলে। - স্নব। তুই অঙ্ক স্নব। - তাই কথা বলিস না আমার সঙ্গে? - আমাদের কথা বলতে নেই। - তোর মুণ্ডু। - ফোন রাখবি এ'বার? আম

সুইসাইড নোট

নীল বিষের বড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাথায় কেমন ঝিম ধরে গেছিল। কী ভীষণ মায়া। কেমন ছায়াময় ভালো লাগা। তবু। যেতেই হবে। নিজেকে খতম না করতে পারলে এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে না। হতে পারে না। মারা যযাওয়ার আগে পিতা পইপই করে বলেছিলেন সে ভয়ঙ্কর জিনিসপাতি না ঘাঁটতে। এত্তটুকুন দানা, সে'টুকু বুকপকেটে রেখে জীবন কাটিয়ে চলে যাওয়া। পড়ে থাকত অন্তত অন্ধকার আর সেই দানাটা। কিন্তু ওই। একা থাকতে থাকতে বেয়াকুবের মত কাজটা করে ফেলেছিলেন তিনি। বুকপকেট থেকে দানাটা বের করে দু'আঙুলে চাপ দিতেই ঘটে গেছিল বিস্ফোরণ। সে এক চোখ ধাঁধানো মুহূর্ত। প্রথম আলো দেখেছিলেন তিনি, সে যে কী আনন্দ। সেই প্রথম আলো দেখেছিলেন তিনি, চোখ ধাঁধানো, মনপ্রাণ ভাসিয়ে নেওয়া; আলো। পদার্থ। তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠল আগামী; প্রাণ, সুর, কথা, গান, কবিতা, ভোট, ট্যাক্স। সমস্তটাই। ক্রমশ চোখের সামনে আগামীর সিস্টেম গড়ে উঠিতে শুরু করল। একবার মনে হল পিতা খামোখাই ভয় পাইয়েছিলেন। মন চনমন করে উঠেছিল। প্রাণের ফুরফুর, সুরের ঝরঝরানি, কথার কলকল, গানের ঝিরিঝিরি, কবিতার টুংটাং,  ভোটের ঠুকুরঠুক আর ট্যাক্সের ধুপুরধাপুড় মিলে সে এক মনোগ্র

বালিশের ওয়াড়

বালিশের ওয়াড় হবে আবছা গোলাপি, তা'তে লাল সুতোর ডিজাইন। ধবধবে সাদা বিছানার চাদর। গায়ে দেওয়ার সাদা কালো চেক ভাগলপুরী চাদর। বাটিক প্রিন্টের ওয়াড় দেওয়া পুষ্ট পাশবালিশ। খাটের মাথার কাছে টেবিল। সেই টেবিলে কাঁচের গেলাস ভরা জল, কাঠের কোস্টারে ঢাকা। পাশে পুরনো কাচের স্কোয়্যাশ বোতলে জল। জলের বোতলের পাশে এক শিশি মিষ্টি আমলকি। আর বালিশের পাশে পকেট রেডিওতে নজরুল।  আর বুকের ওপর সঞ্জীব। মাথার ভিতর সদ্য পড়া 'রাবণবধ'। হাতের নাগালে বেডস্যুইচ।

ভেবেটেবে

অনেক ভেবেটেবে দেখলাম। ভালোলাগা গানের শেষের ফুড়ুৎ করে বেরোনো 'আহা', হুড়মুড়ের মধ্যিখানে ফোনের ও'পাশে মায়ের 'খেয়েছিস?', পুজো আসছের মন ফুরফুরে 'এইব্বারে জমবে', জমাটি শীতের রাতে মনপসন্দ বইয়ের শেষে পাতায় পৌঁছনো 'আইব্বাস', পুরী যাওয়ার ওয়েটলিস্ট টিকিট কনফার্ম হওয়ার 'ইউরেকা', হাজারবার প্ল্যান করেও জমানো চিঠি ছিঁড়ে কুচিকুচি না করতে পারার 'ধ্যাত্তেরি', ছোটবেলার ইয়ারদোস্তের গায়ে পড়া 'আরে বল না বে কী হয়েছে', এ'গুলো কিছুতেই যাওয়ার নয়। অতএব, 'সিটিসি'র পায়ে দড়ি পরিয়ে 'ছোটিসি আশা'র বাঁশের খুঁটিতে বাঁধতে পারলেই নিশ্চিন্দি। (ইয়ে, 'বাঁশ'য়ের খুঁটির রেফারেন্স দিলাম কেন কে জানে)।

জ্ঞান দেব?

- জ্ঞান দেব? - না। - দিই? - না। - প্লীজ। - আহ্। দাদা! বললাম তো। এখন না। - প্লীজ। দু'একটা ভালো ভালো কথা। টুকটাক জেনারেল নলেজ। মাপা ইমোশন। হালকা হিউমর। আর এ সব কিছুর আড়ালে কিছু মেজর লার্নিং। - এখান থেকে যাবি এ'বার? - এত ইম্পেশেন্ট হচ্ছিস কেন বল তো? জ্ঞানে এত অনীহা কেন? - আমাকেই কলার টেনে জ্ঞান দিতে হবে কেন? - ওয়াইফাই চলছে না। ডেটা প্যাক শেষ। উপায় নেই ভাই। একটু শোন। পছন্দ না হলে 'লাইক' বলে উঠে যাস, কিছু মনে করব না। কেমন?

যিস কা কোই নহি

যার অঙ্কে লেটার নেই, তার কপালে মাঝরাত্তিরে গঙ্গার ধারে বসে  প্রবাবিলিটির মজা বুঝিয়ে দেওয়ার একজন দাদা গোছের মাস্টার থাকুক। যার ব্যাঙ্ক বোঝাই টাকা নেই, তার অন্তত একটা মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স থাকুক। যার যুক্তিতে ধার নেই, তার মনে মধ্যে গজলের ঘুরঘুর থাকুক। যার গল্প নেই, তার ভূতের ভয় থাকুক। যার পিঠে চাপড় দেওয়া "কুছ পরোয়া নহি" বন্ধু নেই, তার জন্য নিরিবিলি ছাতের  কোণার নিশ্চিন্দিটুকু থাকুক। যার কাছে "তুমি চিঠি লেখনা কেন?"র উত্তর নেই, তার বুকের মধ্যে পাহাড়িসান্যাল গোছের বোরোলিন গন্ধ থাকুক। যার বাড়ি ফেরার তাড়া নেই, তার জন্য মেঘলা সন্ধ্যের ভিড় মিনিবাসে জানালা রাখা থাকুক। যার কবিতা লেখার ক্ষমতা নেই, তার আচমকা মনখারাপে অচেনা ছোট স্টেশনে নেমে চা-ওলার খোঁজ করতে পারার দুঃসাহস থাকুক। যার 'মা কই মা কই' মনখারাপ ভাগ করে নেওয়ার কেউ নেই, তার বালিশে সাদা ওয়াড়ে সেলাই করা নীল ফুল থাকুক। আর থাক শিয়রের কাছের জানালা বেয়ে আসা চুল ওড়ানো হাওয়া। যার কেউ নেই, তার সঞ্জীব থাকুক।