Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2017

মোম

*১* টুথপিককে ছুরির মত ব্যবহার করে একটা আস্ত মোমবাতি খুন করল দিবাকর। হাতের পত্রিকাটা ছুঁড়ে ফেলল আলনার ও'দিকে। অফিসের ফেলে রাখা কাজগুলোর কথা মনে করে মনকে অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রবল চেষ্টা করেও লাভ হল না। অজন্তার সস্তা ইলেক্ট্রনিক দেওয়াল ঘড়ির খটখটখটখট শব্দ যেন দিবাকরের মাথা খামচে ধরছিল। রাত একটা বেজে দশ। ঘরের মধ্যে দ্রুত কুড়ি রাউন্ড পায়চারি সেরে নিল সে। ধুস। কিস্যুতে কিস্যু হওয়ার নয়। মিনুর কথাগুলো কিছুতেই মাথা থেকে বেরোচ্ছে না। অবিশ্বাসের পাত্র দিবাকর নয়, কিছুতেই নয়। শুধু মিনু যদি একবার বোঝার চেষ্টা করত। একবার। *২* ব্যাপারটা ক্রমশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। যেদিনই দিবাকরের কথা মনে পড়বে সে'দিনই তার প্রিয় মোমবাতিটার গায়ে নতুন নতুন খোঁচা দেখতে পাবে মিনু। নাকি উল্টোটা? গোটারাত ঘুম আসবে না। ছটফট। ভুলতে চেয়েও সব গুলিয়ে যায় এই সব রাতগুলোয়। মিনুর বড় প্রিয় এই মোমবাতিটা। অসমের ডিগবই থেকে মেজমামা পাঠিয়েছিলেন দেড় বছর আগে। সে'খানকার বিশেষ রাইনো ব্র‍্যান্ডের ওয়্যাক্স থেকে তৈরি, সুগন্ধি সুবিশাল মোমবাতি। নিজের শোওয়ার ঘরে সাজিয়ে রেখেছে মিনু। শুধু মোমিবাতিটার গায়ে কী'ভাবে যেন কেউ ক্রম

ধোঁয়া

- শুনুন, এই যে ভাই, আপনাকে বলছি। - কী ব্যাপার? - সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে দিন প্লীজ। আপনার বন্ধুদেরও বলুন তাই করতে। - আপনি কে? - নীল আর্মস্ট্রং না হলে সিগারেট নেভানো যাবে না ভাইটি? - অত বাতিক থাকলে বাড়ির বাইরে বেরোন কেন? - আপনারা যে কারণে বেরিয়ে এসেছেন। এই প্রতিবাদ সমাবেশে সামিল হতে। এ'বারে সিগারেটটা ফেলুন প্লীজ। প্লীজ। - রাষ্ট্রের তুঘলকিপনার বিরুদ্ধে প্রটেস্ট চলছে, আমরা সবাই জান লড়িয়ে দিচ্ছি। আর এই আপনি পড়েছেন সিগারেট খাওয়া নিয়ে? সত্যজিৎ রায় পাইপ মুখে দাঁড়ালে তো গলে পড়তেন। ইস্যুতে ফোকাস রাখুন। - এতগুলো লোক ভাই। আমার মত বুড়োহাবড়াও কম নেই। অনিচ্ছুক লোকেদের ধোঁয়া গিলিয়ে কী লাভ বলুন! - কে বলুন তো আপনি? সরকারের এজেন্ট নাকি যে কাঠি করছেন? - ক্যান্সার অ্যাজমা গছানোর ফন্দিকে কাউন্টার করা মানে কাঠি করা? - দেখে তো মনে হচ্ছে বাংলা সিরিয়াল দেখা মাল। কফি হাউসে গিয়ে কোবরেজি খাওয়া ছাড়া কোনওদিন কিছু করেছেন? লিটল ম্যাগ উলটে পালটে দেখেছেন এ জীবনে? বার্গম্যানের নাম শুনেছেন? গ্রুপ থিয়েটার সম্বন্ধে কতটা ওয়াকিবহাল আপনি? নিকারাগুয়ায় কী ঘটেছিল সে সম্বন্ধে খবর রেখেছেন বাপের জন্মে? ইনি আবার এলেন ক্

সার্ভে

- কী চাই? - দু'মিনিট সময় হবে স্যার? - কলিংবেল ঠুসে আমার রবিবারের প্রি-স্নান ঘুম ভাঙিয়েছেন। আপনাকে দু'মিনিট সময় দেওয়া সমীচীন হবে কিনা ভাবছি। - দু'মিনিট। স্রেফ দু'মিনিটে আপনার থেকে চেয়ে নেব। - আপনি কি সেলসম্যান? ওয়াশিং পাউডার বিক্রি করতে এসেছেন? বা ম্যাজিক ক্লীনার? ননস্টিক কড়াই? লটারি? - না না! সে'সব কিছুই না। একটা সার্ভের জন্য এসেছি। - সার্ভে? কী ব্যাপারে? - আমি সুমিত ঘোষ। লাইফ বিয়ন্ড ডেথ ফাউন্ডেশন থেকে এসেছি। - লাইফ বিয়ন্ড ডেথ! মড়াদের সার্ভে? - না না। ঠিক তা নয়। মরে যাওয়ার তো বহুবিধ টাইপ রয়েছে স্যার। বায়োলজিক্যাল ডেথ ইজ ওনলি ওয়ান অফ দ্য দেম। আমাদের ফাউন্ডেশন রকমারি মৃত্যু নিয়ে রিসার্চ করে যাচ্ছে। আমি নিজেও গবেষণারত। - ও। জলের মত সহজ। - সার্ভে শুরু করি? - একটা প্রশ্ন। কত রকমের মৃত্যুর লেভেল রয়েছে ঘোষবাবু? - আড়াই হাজারেরও বেশি। - বলেন কী? - প্রমাণিত সত্য। অন্তত দেড়শো রিসার্চ পেপার ইতিমধ্যে প্রকাশিত। এই তো, গত সপ্তাহে গুটেনবার্গে প্রকাশিত জিমারম্যানের পেপার রীতিমত প্রমাণ কতে ছেড়েছে যে দুনিয়ার আশি শতাংশ মানুষই অন্তত বাইশ বার মারা গিয়েছে ইতিমধ্যে। - কাগজে

পোস্টকার্ড

১ দুপুরবেলা ঘরে খিল এঁটে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চিঠি লেখাটা নীলার অভ্যেস। ভাত খেয়ে এক খিলি পান মুখে দেওয়ার মত ব্যাপার। নিত্যনৈমিত্তিক। এ'দিকে নিজের মনের সমস্ত কথা তো আবার যার তার কাছে উপুড় করে দেওয়া যায় না। চিঠি দেওয়ার জন্য নিজের মনের মত একটা নাম বেছে নিয়েছে সে; অনুপ সামন্ত। নিজের মনের মত একটা ঠিকানাও তৈরি করেছে নীলা। বত্রিশের এ, নাড়ুগোপাল দত্ত লেন, বারাসাত। পোস্টকার্ডগুলো ডাকবাক্সেই বিসর্জন দেয় রোজ বিকেলে, টিউশন পড়িয়ে ফেরার পথে। ভুল ঠিকানার পোস্টকার্ড নিয়ে ডাকবিভাগ কী করে? ছিঁড়ে ফেলে? পুড়িয়ে ফেলে? ২ বৃষ্টি থামার পরে ছাদে উঠে গিয়ে হাওয়া চটি খুলে পায়চারি করেন অনুপবাবু। ভালোবাসেন রাতের শেষ মেনলাইন লোকালের জানালায় মিঠে ফুরফুর। আর মনে রাখেন পোস্টকার্ড প্রাপ্তি। গোটাগোটা অক্ষরে লেখা ঠিকানার মাথায় নিজের নাম। পোস্টকার্ডে পন্ডসের সুবাস। ৩ "এই হল বত্রিশের নাড়ুগোপাল দত্ত লেন, এ'খানে আমি থাকি, রাইট সমরবাবু"? "ঠিক"। "আপনি থাকেন তেত্রিশ নম্বরে। রাইট"? "ঠিক"। "আমরা গত বাইশ বছর ধরে প্রতিবেশী, রাইট"? "অবশ্যই স্বপনবাবু"

লেজুড়

কোনও কিছুর প্রতিবাদ করতে হলে একটা লম্বা লেজুড় দিতে হবে। প্রতিবাদ - অমুক তমুককে পিটিয়ে ঠিক করেনি। লেজুড়: ১. অমুক যখন তমুককের হাতে মার খেয়েছিল ১৯৫৬, ১৯৭৩, ১৯২৩, ১৭৬৩ আর ১৫৯৭য়ে, তখনও আমার খারাপ লেগেছিল। ২. অমুকের পিসেমশাই যখন ইথিওপিয়া, বারুইপুর বা প্যারিসে মারধোর খান , তখনও আমার বিশ্রী লাগে। ৩. তমুকের ব্যথায় এখন ১০০ শব্দে প্রতিবাদ করেছি। অমুকের সময় ৪২টা শব্দ খরচ করেছিলাম। কিন্তু কথা দিচ্ছি যে বাকি ৫৮টা শব্দও ছিল, শুধু বুকে থেকে ফেসবুকে নামানোর আগে ওয়ানডে ম্যাচ এসে গেছিল। রিয়েলি। ৪. আমি আসলে অকারণে বেধড়ক পেটানো ব্যাপারটায় বিরক্তি প্রকাশ করেছি। অমুক তমুক মূল বিষয় নয়, ইনফরমেশন মাত্র। তমুকের ওপর অমুকের অকারণ তম্বিকে গাল দেওয়া মানেই বাই ডিফল্ট   তমুকের অমুক পেটানোর প্রতি চোখ বুজে থাকা নয়। অকারণ বেধড়ক পিটুনিতে দু'পক্ষেরই খুব ব্যথা লাগে। এ'টুকু নিশ্চিত। Phew.

যদুবাবুর উকিল

- যদুবাবু! বিষের ইঞ্জেকশন চলবে? - বিষের ইঞ্জেকশন? - পিঁপড়ের কামড়ের মত অল্প খোঁচা! তার খানিক পর গোটা দেহ বিকল হয়ে চিত্তির। - কী জানো হে তুলসী, আমার দাদু রঞ্জি খেলেছেন, ডাক্তারি পাস করেছেন, দুর্দান্ত ছবি আঁকতেন। আর আসর মাতাতেন বিভিন্ন ম্যাজিক দেখিয়ে। এহেন ট্যালেন্টেড পারসোনালিটি মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে সন্ন্যাস নিয়ে গোমুখ যাত্রা করেন। তখন তাঁর দেহে দিব্যতেজ। তারপর ধরো আমার বাবা, থিয়েটার, কবিতা, রান্না; সর্বত্র তার রাজকীয় বিচরণ। এমন সব পূর্বপুরুষের রক্তকে বিষিয়ে দিয়ে মারা যাব ভাবতেই কেমন মন খারাপ করছে। আর মন খারাপ নিয়ে মরতে চাইছি না হে। - মারা যাবেন, তার আবার মন খারাপ আর ফুর্তি কীসের? - আমি কি আর দুঃখের চোটে মরতে এসেছি রে ভাই? গ্ল্যামারাস এগজিট চাইছি। রোগ ভোগ নয়, ট্রাকচাপা নয়। সাজানো গোছানো ছিমছাম। তাছাড়া আর কতদিন! সামনের আষাঢ়ে বিরানব্বুইয়ে পড়ব। এই বেলা ব্যবস্থা না করে ফেললে কবে খবর পাবে আমি বাথরুমে পা ফসকে কমোডে মাথা ঠুকে অক্কা পেয়েছি। কী শেমফুল হবে ব্যাপারটা ভেবেছ? - তা সাজানো গোছানো মৃত্যুবরণের জন্য কলকাতা কী দোষ করেছিল? দিব্যি নাকতলার সিলিং থেকে ঝুলে পড়তেন। খামোখা এই পাহাড়ি জঙ্গল

চুলের যত্ন

খুব মন দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলেন মনোময়বাবু। শালিমার আর চৌবাচ্চার জলে ভেজা চকচকে চুলকে প্রথমে পাট করে কপালের সামনে এনে জড়ো করা। তা'তে গেল দশ মিনিট। তারপর সিঁথিটা মাথার বাঁ দিকে ভালো করে কাল্পনিক রুলারে মেপে বসিয়ে নেওয়া, তা'তে আরও মিনিট পাঁচ। এরপর কপালের সামনের পাট করা চুল টেনে এনে শুইয়ে দেওয়া মাথার ডান দিকে। তা'তে আরও দশ মিনিট। তারপর দু'মিনিট মাথার বাঁদিক আঁচড়ে নেওয়া। শেষের মিনিট পাঁচ মাথার তালু থেকে ঘাড় পর্যন্ত  চিরুনি নেমে আসবে বারবার। আধ ঘণ্টা পেলেই চুল আঁচড়ানোটা মনমত হতে পারে। কিন্তু তার উপায় নেই। অফিস থেকে ফিরে স্নানটান করে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই খোকার হোমওয়ার্ক বুঝিয়ে দাও বলে ঘ্যানঘ্যান, গিন্নীর বাজারের ফর্দ নিয়ে বাতিকগ্রস্ত বকরবকর, প্রতিবেশী নির্মলবাবুর "শুনেছেন মশাই?"গোছের যত ঝামেলা এই সময়। মনোময়বাবুর মনঃসংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেজাজ তিতকুটে হয়ে আসে। জ্যামিতির হিসেবে চুল যখন এলোপাথাড়ি, তখনই রণে ভঙ্গ দিয়ে ড্রেসিং টেবিলে চিরুনি নামিয়ে রাখতে হয়। ** - কিছুতেই কিছু হল না ডাক্তার! আপনার ওষুধ সার্জারি সমস্ত ফেল। আমার আর কিছু হওয়ার নয়...। - অমন মিইয়ে গেলেন কেন মশ

কিছুনা

নিবিষ্টমনে ব্রীজের বাতিগুলোর টিমটিমের দিকে তাকিয়ে সল্টেড বাদাম চিবুলে বুকের মধ্যের চিনচিন কমে যায়। চোখের ফোকাস একটু আবছা হয় বটে তবে সন্ধ্যের লাগাম ফের হাতে ফিরে আসে। পুরনো টোটকা। অব্যর্থ। তিননম্বর বাদামের প্যাকেট ছিঁড়ে রেলিঙে ঝুঁকে দাঁড়াল দীপক। মুখে বুকে মেঘলা হাওয়ার ঝাপটা। কিছু হয়নি। সমস্ত ঠিক আছে। স্কেলে মেপে চলছে সমস্ত কিছু। যেমনটা হওয়ার কথা। আগামীকাল ফের আটটা সতেরোর ট্রেন ধরে অফিস। পেন্ডিং ফাইলগুলোর হিল্লে না করলে চলছে না, কাজেই ফিরতে রাত। বাড়ি ফেরার পথে মায়ের শুগারের ওষুধ, সে'টা আর্জেন্ট। ছাদের ঘরের প্লাস্টারটা নতুন করে করাতে হবে, দামোদর মিস্ত্রীকে রাতের দিকে ডাকতে হবে। সমস্ত ঠিক আছে। কিছু হয়নি। বুক পকেটের চিঠিটা আদতে কিছু না। কিছু না। "কিছু না কিছু না" বিড়বিড়টা ক্রমশ দলা পাকিয়ে উঠছিল বুকের ভিতর। কিছুনার গায়ে গন্ধরাজের সুবাস। ছোটবেলার বিকেলের আলো মাখানো কিছুনা। কিছুনা অঙ্কে ভালো। কিছুনা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে মনে হয় এইবারে কলকাতা ভেসে যাবে। হাওড়া ব্রীজ থেকে খাম না খোলা চিঠির দুলে দুলে নদীর বুকে নেমে যাওয়ায় কিছুনার ছটফট দেখতে পেলো দীপক। ** "টিকিট করুন জ