Skip to main content

Posts

Showing posts from February, 2023

কবিতা কাহারে বলে, গান কাহারে বলে

মগজ ব্যাপারটা যে কী ধুরন্ধর চিজ। আর আমার মত গাম্বাট মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের নিজেদের মাথাই যথেষ্ট। আমার বুকশেলফে, কোনও অজানা কারণে কয়েকটা কবিতার বই আছে। কলকাতার কম্বলদের মতই, সে'সব বইদের সচরাচর ঘাঁটানো হয়না। আবার কলকাতার মানুষের মতই, আজ হঠাৎ উথলে ওঠা হুজুগের বশে সে'সব কম্বল...থুড়ি বইদের তাক থেকে নামালাম। উল্টেপাল্টে দেখেটেখে, ধুলোটুলো ঝেড়ে তাকের বই তাকে ফেরত যাবে, তেমনটাই হওয়ার কথা। কী মনে করে দু'একটা কবিতা পড়ার চেষ্টা করলাম। খানিকটা শক্তি, খানিকটা সুনীল, খানিকটা শঙ্খ। নিজের ওপর গর্ব হচ্ছিল, কবিতা পড়ছি ভেবে। আরে, কবিতা মানে গানই তো, সুরটাকে নিজের মত মনে মনে বসিয়ে নিলেই অ্যাপ্রিশিয়েশন ব্যাপারটা তরতরিয়ে বইবে।  যা হোক, সে'সব কবিতার বইয়ের ফাঁকে একটা বই ছিল রবিস্যারের শ্রেষ্ঠ কবিতার। সে'গুলো বেছে নিয়েছেন সুনীল গাঙ্গুলি স্বয়ং। বইয়ের শুরুতে একটা চমৎকার মুখবন্ধ লিখেছেন সুনীল; শিরোনাম - "রবীন্দ্রনাথ এবং আধুনিক কবিতা"। কবিতা বুঝিনা, তায় আবার আধুনিক। রবীন্দ্রনাথ বুঝি, সে'কথা বলার দুঃসাহসও নেই। তবে বাংলা ভাষাটা যেহেতু খানিকটা বুঝি, তাই মুগ্ধ হয়ে পড়াট

ছোটবেলার স্মৃতি আর কয়েকটা বইয়ের টুকরো

বই পড়ার মধ্যে আর ডিসিপ্লিন আনা হলো না। এ বইয়ের দু'পাতা, ও বইয়ের চার পাতা, তার পাশাপাশি আর এক বইয়ের দু'প্যারাগ্রাফ৷ এইভাবেই খামচাখামচি করে ঢিকিরঢিকির করে এগোনো। কোনও বই হপ্তাখানেকে শেষ হয়, কোনও বই কয়েক মাস জুড়ে এগিয়ে চলে৷ অনেকগুলো বই পাশাপাশি বেহিসেবি স্টাইলে পড়াটা নির্ঘাৎ একটা "ব্যাড হ্যাবিট"৷ তবে সেই বদভ্যাসের মধ্যে একটা মজাও আছে; অনেক সময় সম্পূর্ণ আলাদা কয়েকটা বইয়ের মধ্যে খুব মনোগ্রাহী কিছু যোগসূত্র বেরিয়ে পড়ে৷ আর মনের লাটাইয়ে সেই যোগাযোগের সুতো জড়িয়ে চলায় যে কী প্রবল আরাম আর আনন্দ, আহা!  এই যেমন অরুণাভ সিনহা কয়েকটা সহজ প্যারাগ্রাফের মধ্যে দিয়ে কী সুন্দরভাবে লিখেছেন ছেলেবেলায় মায়ের মুখ থেকে গল্প শোনার কথা৷ বলেছেন কী ভাবে মায়ের পড়া গল্পের রেশ ধরেই বাংলা ছোটগল্পের চমৎকার দুনিয়াটাকে আত্মস্থ করেছেন তিনি৷ সেই ছোট্ট পরিচ্ছেদে, উপন্যাসের আর ছোটগল্পের মধ্যে যে মৌলিক তফাৎ, তা নিয়েও চমৎকার কয়েকটা কথা বলেছেন। কিন্তু সেই সব অ্যানালিসিসের বাইরে গিয়ে যে'টা উজ্জ্বল সে'টা হল তার ছেলেবেলার স্মৃতির ঝলক। আবার এর পাশাপাশি পড়ছি নাসিরুদ্দিন শাহর ছেলেবেলায় স্মৃতিচারণ৷ আত্মকথা বেশ

ইস্তফা

...উইথ রিগার্ডস কমা এন্টার পঙ্কজ চ্যাটার্জী ফুলস্টপ।  ফুলস্টপটা টাইপ করার সময়ে কীবোর্ডে একটা খটাস শব্দ হল। ইমেলটা লিখে একটা সবিশেষ বেশ তৃপ্তি অনুভব করলেন পঙ্কজ। যাক, একটা জবরদস্ত জবাব দেওয়া গেছে। সত্যি কথা বলতে কী, সপাটে জুতো মারা গেছে। চেয়ারে গা-এলিয়ে দিয়ে, ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে বেশ কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি। ফন্ট এরিয়াল, সাইজ বারো; এই কম্বিনেশনটা ওঁর বেশ পছন্দের। নিজের আধো-অন্ধকার ড্রয়িংরুমটাকে যেন আচমকা বেশ উজ্জ্বল মনে হল। নিজের মুখে লেগে থাকা অনাবিল হাসিটার ওজন যেন নিজেই যেন অনুভব করতে পারছিলেন। বহুদিন পর এ'রকম ধারালো একটা ইমেল লিখতে পেরে নিজেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল তাঁর। একটা নজরুলগীতি গুনগুন করতে করতে গিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল বসিয়ে দিলেন পঙ্কজ। ইমেলটা পড়ে নিশ্চয়ই জর্জের মাথা ঘুরে যাবে। নির্ঘাত অথৈ জলে পড়তে হবে ব্যাটাকে। এই ব্যস্ত সিজনে পঙ্কজের রেজিগনেশন ব্যাপারটা নিশ্চয়ই গোটা কোম্পানিকে কাঁপিয়ে দেবে। কোম্পানির প্রতি পঙ্কজের একটা মায়া আছে বটে। দশ-এগারো বছরের চাকরী, সময়টা নেহাত ফেলনা নয়। তবে জর্জের প্রতি কোনও সমবেদনা নেই তাঁর। আর থাকবেই বা কী করে। অমন একটা হ

লুচি স্পেশ্যাল পিকআপ-লাইন সমগ্র

১। 'আর দুটো লুচি দিই'? ২। 'শেষ লুচিটা কিন্তু হাফ-হাফ দুজনে'। ৩। 'তুমি বেলবে আমি ভাজব না আমি বেলব তুমি ভাজবে'? ৪৷ 'লুচিতে তোমায় বেশ মানায় কিন্তু'। ৫। 'শুনেছি লুচির ফুলফর্ম নাকি L.ove U CHI.rokal? তাই কি'? ৬। 'আমায় একবার বলো, লুচিকুমার'।

কবি নাকি?

"কবিতা লিখেই কবি হয়ে যাবি ভেবেছিস ভাই? কাঁচকলা! কবি হওয়া কি অতই সহজ রে? নো স্যর, নো। নো। পারবি? পারবি মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে শ্যামসঙ্গীতের তালে দুলতে দুলতে ডবল ডিমের অমলেট ভাজতে? পারবি লীভ অ্যাপ্লিকেশনের ইমেলে 'আনেওয়ালা পল জানেওয়ালা হ্যায়' গানটার এমিপিথ্রি ফাইল অ্যাটাচ করতে? পারবি নিজের বেসুরো হেঁড়ে গলার গানে বাথরুম কাঁপিয়ে, শাওয়ার খুলে, মনে মনে ভাবতে; "আমিও তা'হলে মেঘমল্লারফল্লার ম্যানেজ করতে পারি"! পারবি টাটকা খবরের কাগজ কিনে, সে'টার একটা শব্দও না পড়ে, তার ওপর লুচি-বেগুনভাজা সার্ভ করতে? বল না! পারবি কি? এ'গুলো যদি না পারিস; তবে খামোখা নিজেকে কবি বলে পরিচয় দিয়ে লোক হাসাস না৷ কেমন?"

ফিরোজ শাহ কোটলায় ক্রিকেট-হুজুগিস্ট

আমরা যারা ক্রিকেট-হুজুগিস্ট, তাদের চোখ দিয়ে খেলাটাকে বিশ্লেষণ করতে চাওয়া আর শালপাতার দোনায় ইলিশের ঝোলভাত খাওয়া একই ব্যাপার। আমাদের ক্রিকেট-আড্ডায় ক্রিকেটটাই ভেসে যায় বিকট হ্যা-হ্যা-হো-হো অথবা অযথা গলাবাজিতে; তবে সেই ভেসে যাওয়াটা বোধ হয় নেহাৎ অক্রিকেটিয় নয়৷ ক্রিকেট গ্যালারির 'লক্ষ্মী' হল এই হুজুগিস্টরাই (নিজেদের গান নিজেরাই গাইব, তা'তে আর আশ্চর্য কী)। তাদের পাগলামিতেই মেক্সিকান ওয়েভ উত্তাল হয়, স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে শস্তা জার্সির হাজারে হাজারে বিক্রি হয়, আধমাইল দূরে দাঁড়ানো প্লেয়ারদের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে চেল্লামেল্লি জুড়ে দেওয়া হয় যেন সে কোহলি-রোহিত নয়; পাড়ার বাপ্পাদা, আমাদের ডাক শুনলেই এগিয়ে এসে সিগারেটের কাউন্টার দেবে বা চা-মামলেট কিনে খাওয়াবে৷ যা হোক, সেই ক্রিকেট-হুজুগিস্ট-অ্যাসোসিশিয়েনের অন্যতম সভ্য হিসেবে আজ গেছিলাম ফিরোজ শাহ কোটলায়, ভারত-অস্ট্রেলিয়া সেকেন্ড টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা দেখতে৷ একটামাত্র টিকিট জুটেছিল, কাজেই পরিব্রাজকের মত একাই সক্কাল-সক্কাল পৌঁছে গেলাম৷ কোভিডের পর এই প্রথম মাঠে যাওয়ার সুযোগ, একা-দোকা ভাবলে চলবে কেন? তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢোকার কথা। ঢোকার মু

শিঙাড়া থেরাপি

অফিস টেবিলে কাগজপত্তর আর ফাইলের স্তুপ? সে'দিকে তাকালেই বুক-হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে পড়ছে? জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েও মেমো-প্রপোজাল-হিজবিজবিজের গুরুভার লাঘব হচ্ছে না?একটা ফাইল ক্লীয়ার করলে চারটে আপদ এসে জুটছে? এই ক্রাইসিস চলতে দেওয়া যায়না৷ টেবিলের চেহারা যদি ভয়াবহ হয়, তবে বুকের ধুকপুকও বাড়তে থাকে। তা'তে মেজাজের ক্ষতি, মনের ক্ষয়। মনের রাখবেন, অফিস-টেবিলকে পোষ মানাতে না পারলে দুনিয়ার সমস্ত মোটিভেশনাল বই আর সুড়সুড়ি দেওয়া পাওয়ারপয়েন্ট জলে৷ তা, আপিসের টেবিলের পেন্ডিং-পাহাড় পাশ কাটিয়ে ভোরের নরম রোদ্দুর এনে ফেলবেন কী করে? ডাঁই করা ফাইলের ঘুপচি অন্ধকার সাফ করে প্রাণের তুলসীমঞ্চে প্রদীপ জ্বালবেন কী করে? খানিকক্ষণের জন্য যাবতীয় ডেডলাইনের ঝড়-ঝঞ্ঝা ভুলে টেবিলে বসন্ত টেনে আনবেন কী করে? শুনুন, মন দিয়ে৷ পারলে টুকে রাখুন৷ একটা শিঙাড়াকে হীরের যত্নে টেবিলের ওপর রাখতে হবে৷ রেখেই তার ওপর হামলে পড়বেন না যেন; তা'তে উত্তম-হাসিতে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের "ব্লিস্টারিং বার্নাকলস" মিশিয়ে দেওয়া হবে৷ অপেক্ষা করুন। সে দৃশ্য উপভোগ করুন৷ সে সুবাসকে টেবিলের চারপাশের বাতাসে মিশে যেতে দিন৷ সেই অপার্থিব দৃশ্যকল্প আর জ

ইউফোরিয়া

~~খিলখিলাতি হ্যায় উয়ো নদীয়া, নদীয়া মে হ্যায় এক নইয়া~~ জমজমাট সূর্যকুণ্ডের মেলা (সুরজকুণ্ড্‌ বলা উচিৎ নাকি?)। অফিসের পর সন্ধেবেলা বিস্তর ট্র্যাফিক ঠেলে সে মেলায় গেছি রকমারি জিনিসপত্র দেখতে, খাবারদাবারের দোকানগুলোয় পেট ভরাতে, আর সর্বোপরি ভিড়ে নাকানিচোবানি খেতে। মেলায় গিয়ে মানুষে যা করে আর কী। ও মা, গিয়ে শুনি সে'খানে পলাশ সেন গান গাইবেন, ইউফোরিয়ার শো শুরু হবে খোলা অ্যাম্পিথিয়েটারে, অবাধ প্রবেশ। "ধুম পিচক ধুম" ফেনোমেনাটা একসময় মজ্জায় এসে মিশেছিল। নিজেকে সঙ্গীত-বোদ্ধা বলে লোক হাসানোর মানে হয়না। তবে গানের প্রতি ভালোবাসায় খানিকটা অবুঝ না হলেও চলে না বোধ হয়। আমার ডানা গজানোর বয়সে সেই গান আবিষ্কার করি। এখনও মনে আছে, আমাদের স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে আমার কিছু ক্লাসমেট সে গান গেয়ে আসর জমিয়ে দিয়েছিল। সে বয়সে প্রথম প্রেমের হুহু, সেই হুহুর সঙ্গে যে'সব গান এসে মিশে গেছিল, তাদের মধ্যে এই ধুম-পিচক-ধুম অন্যতম। এ অভিজ্ঞতা আদৌ অভিনব নয়, আমার বয়সী অনেকেই এ ব্যাপারটা ধরতে পারবেন। চন্দননগরের অলিগলি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি দুই বন্ধু, আর দু'জনে বিশ্রী বেসুরো গলায় চিল্লিয়ে গাইছি 'মায়েরি

ভ্যালেন্টাইন বিরিয়ানি

ডিয়ার বিরিয়ানি, আশা একটাই, যেন প্রাণপণ ভালোবাসতে পারি। দেখো, যেন নাক উঁচু তর্কাতর্কিতে আটকে না পড়ি। কলকাতাইয়া -মোরাদাবাদি জাতপাত নিয়ে বেফালতু খামচা-খামচি শুরু না করি। যেন, স্রেফ ভালোবাসায় "এইত্তো আমি" বলে আত্মসমর্পণ করার সৎ সাহসটুকু রাখতে পারি। বাতেলায় ভেসে না গিয়ে কবজি ডুবিয়ে কেল্লা ফতে করতে পারি। পার্থিব গল্প-আড্ডা-গুলতানিতে আটকে পড়ে যেন তোমায় ঠাণ্ডা না করে ফেলি। ইয়ারদোস্ত আর তাঁদের খাওয়ার পাতের খেজুরালাপ; ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু বিরিয়ানি চাল-মাংস থেকে উঠে আসে ধোঁয়া যদি সময়মত জিভে-নাকে চালান না করতে পারি, তা'হলে ব্যর্থ আমার সঞ্জীব পড়ে চোখ-ছলছল, ব্যর্থ আমার সমুদ্র বা পাহাড় দেখে অস্ফুটে বলা; "আহা"। তোমার প্লেটের পাশে খিটখিটে মুখে এসে যেন কোনোদিনও না বসি। যেন মনে রাখতে পারি যে সাচ্চা কমরেডের মত; তুমি সবসময়ই ছিলে, আছো, থাকবে। আর হ্যাঁ, যেন তোমার প্লেটের ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়ি, হামলে না পড়ি। প্রেম-ভালোবাসায় গাম্বাটপনা যেন মিশিয়ে না ফেলি। ধীরে-সুস্থে, স্মিত হেসে, যেন গা ঘেঁষে বসতে পারি। দু'দিন বইতো নয়।  হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে, বিরিয়ানি। ভালো থেকো। ইতি, বংপেন। 

এঁটো-হাতের আড্ডা

রোববারের লাঞ্চটা ধীরেসুস্থে সেরে ফেলাই মঙ্গল, নবেন্দু সান্যালের ফোকাসটা সে'দিকেই৷ গুরুপাক হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই, বরং তা'তে খেতে বসে গল্পটা জমে ভালো৷ মাংসের হাড়ে, মাছের কাঁটায় কনসেনট্রেট করতে গিয়ে রোব্বারিয়ান আড্ডার ফ্লো নষ্ট-হয়না৷ তবে সে ক্ষেত্রে আলুভাজাটা দরকারি, সে'টা ব্যবহার হবে ডাল-ভাত সাফ হয়ে যাওয়ার পর৷ থালা-টেবিলের বাহার যেমনই হোক, নবেন্দুবাবু নিজের আলুভাজাকে সাতপুরনো অল্প তোবড়ানো স্টিলের বাটিতেই পছন্দ করেন৷ খানিকটা কন্ডিশনিং বোধ হয়; আলুভাজাকে বাহারি চীনামাটির প্লেটে দেখলেই মনটা সামান্য আড়ষ্ট হয়ে পড়ে৷ সর্বোপরি, নবেন্দুবাবু আলুগুলো খানিকটা মোটাদাগে কুচিয়ে নরম করে ভাজতে পছন্দ করেন; বিশেষত শেষ পাতে খাওয়ার জন্য৷ ডাল-ভাত সাপটে খেয়ে, চেয়ারে গা এলিয়ে, আলুভাজার বাটিটা টেনে নেওয়া৷ তারপর অতি ধীরেসুস্থে, একটা একটা আলুভাজার টুকরো টেনে নিয়ে, ছোটখাটো কামড়ে এগিয়ে যাওয়া৷ পাশে বসা মানুষজনের সঙ্গে গল্প জমে উঠবে৷ আঙুলে লেগে থাকা ডাল শুকিয়ে যত খটখটে হয়ে উঠবে, আড্ডা তত জমাট হবে। গোটা হপ্তা জিভ-পেটের দেখভাল হয় বটে, তবে মনের চুলে বিলি এই রোব্বারের লাঞ্চ শেষের এঁটো হাতের আড্ডায়৷ ** - ন

তাপসবাবুর জর্দাপান

রাতের খাওয়া সেরে হাঁটতে বেরোনোটা তাপসবাবুর পুরনো অভ্যাস৷ সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে, গলি ধরে আধমাইল এগোলেই চৌরাস্তার মোড়৷ সে'খানে নির্মলের পানের দোকান। নির্মলকে একটা ইশারা ভাসিয়ে দিয়ে এগিয়ে যাবেন রেলের মাঠের দিকে৷ সে ইশারাটা একশো-কুড়ি জর্দা পান বানানোর সিগন্যাল৷ ** ঘাড় ঘুরিয়ে দোকানের পিছনের দেওয়ালে রাখা অজন্তা ঘড়িটার দিকে তাকালো নির্মল; সোয়া এগারোটা৷ তাপসদার আসার সময় হচ্ছে৷ সামনে দাঁড়ানো খদ্দেরকে ফ্লেক দিয়ে পানের পাতায় চুন মাখাতে শুরু করলে সে৷ ** রেলের মাঠটা এ সময় ফাঁকাই থাকে, চারপাশটা নিশ্চুপ। শুধু মাঝেমধ্যে রেলকলোনির ওয়াচম্যান সমরের হুইসল শোনা যায়৷ নিস্তব্ধতা চিরে ফেলা সেই কর্কশ হুইসেলের শব্দটা তাপসবাবুর কানে সয়ে গেছে। মাঠটা দু'বার চক্কর দিয়ে ফের বাড়িমুখো হন তাপসবাবু৷ ** একশো-কুড়ি জর্দা পানটা সেজে শালপাতায় মুড়ে দোকানের টিনের ছাতে রেখে দিল নির্মল৷ তারপর দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে তালা দিলে৷ রেলকলোনি থেকে সমরদার হুইসলের শব্দ ভেসে এলো৷ এ'বার যেতে হবে স্টেশনের দিকে, লাস্ট ট্রেনে বাড়ি ফেরা৷ ** কত বছর হয়ে গেল, নেহাৎ বড়সড় কোনও গোলমাল না হলে তাপসবাবুর এই হাঁটাহাঁটির নিয়মের এ'দিক-ও'দ

অফিসঝড়, ইয়ারদোস্ত ও উপেন্দ্রকিশোর

হপ্তা দুই ঝড়ের মত গেল৷ অফিসের কাজে বিস্তর ছোটাছুটি, শহর ছেড়ে কিছুদিন দেশের অন্যপ্রান্তে পড়ে থাকতে হল; 'অফিস টীম' সে'খানে তাঁবু খাটিয়ে পড়ে রইলে৷ চাকুরেদের জীবনে যা আকচারই হচ্ছে৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে সে প্রজেক্ট-প্রজেক্ট হাওয়া ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে পড়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব৷ গেরিলা সৈন্যদলের মত 'টাইমলাইন'রা ফস্কে যেতে চাইবে; চাকুরেদের দায় সে'সব মিসড-ডেডলাইনের ল্যান্ডমাইন পাশ কাটিয়ে কাজ হাসিল করা৷ এই হুড়মুড়ের মধ্যে একটা জবরদস্ত ব্যাপার; বিদেশবিভুঁইয়ে সহকর্মীদের মধ্যে ইয়ারদোস্ত খুঁজে পাওয়া৷ যে সহকর্মীর সঙ্গে বহুবছরের "ইয়েস, নো, ওকে, ফাইন, গুডমর্নিং, গুডনাইট" সম্পর্ক, পরিচিত কিউবিকলগুলোর বাইরে এসে সে মানুষটাই রাতবিরেতে "আর ভায়া, আমি আছি তো" বলে কাজের ভার লাঘব করে দিচ্ছে৷ যে 'সিনিয়র' বাবুটিকে চিরকালই চিরতা-পিসেমশাই বলে দেখে এসেছি, সেই হয়ত সবার নার্ভাসনেস কাটাতে তস্য খাজা চুটকি বলে নিজেই নিজের তলপেট খামচে বিকট হাসির সুরে গড়াগড়ি খেয়ে চলেছে৷ যে মানুষটাকে চিরকাল স্প্রেডশিট উইজার্ড ছাড়া অন্য কোনো ভাবে চিনিনি, সে হোটেল-রুমের সরঞ্জাম ব্যবহার করে যে কফি তৈরি কর

বংপেন-৭৫-য়ে ছিলেন যারা

আজ থেকে ছ'বছর আগে আমার কিছু লেখা নিয়ে একটা বই বেরোয়, পত্রভারতী থেকে। ত্রিদিববাবু একটা ব্লগারের লেখায় চট করে ওরকম 'কনফিডেন্স' দেখাবেন, সে'টা প্রথমে ভাবতে পারিনি। গোটা ব্যাপারটার জন্য বী-বুকসের এষাকে থ্যাঙ্কিউ বলতেই হয়। ত্রিদিববাবু কিশোরভারতীর সম্পাদক, পত্রভারতীর কর্ণধার; তার কাছে আমি "হে হে, স্যার, আমি ব্লগ লিখি" বলে বংপেন-ডট-নেটের লেখাপত্তর নিয়ে হাজির হব? মামারবাড়ি নাকি সূর্য মোদকের মিষ্টির দোকান? মোটের ওপর এষার জন্যই ব্যাপারটা ঘটেছিল। খানকয়েক লেখা পড়ে ত্রিদিববাবু বলেছিলেন, "ছাপব"। আমি মনে মনে বলেছিলাম, "যাচ্চলে, মাইরি"? ভদ্রলোক আমার লেখা পড়ে স্টাইল আর ভাষা নিয়ে দু'একটা জরুরী কথাও বলেছিলেন। আমার ধারণা সেই টিপসগুলো আমি ভুলে মেরে দিইনি। রেয়া আহমেদ চমৎকার কিছু মোটিফ এঁকেছিল বইটার জন্য; ওঁর ব্যাপারে আগে সবিশেষ কিছু লিখেছি কিনা মনে নেই। তবে যে'টা মনে আছে, সে'টা বলি। আঁকার ব্যাপারে কিছু বলার আমি আর কে, ও যা এঁকেছিল, তা আমার দিব্যি লেগেছিল। তবে আঁকারও বাইরে, ওঁর প্রফেশনালিজমে মুগ্ধ হয়েছিলাম (বংপেনের জন্য ওর আঁকা একটা ছবি কমেন্টে রইল)।

কমলা সুইটসের ভেজিটেবল চপ

টেস্টবাডঃ বুইলে ভাইটি, একটা ম্যাজিক টের পাচ্চি। মনঃ কী রকম? টেস্টবাডঃ মনে হচ্চে যেন নতুন ডানা পেইচি। উড়চি উড়চি উড়চি, উড়েই চলিচি। মনঃ সে তো ভালো কথা! টেস্টবাডঃ সিক্রেটটা জানতে চাইবেনা? মনঃ নোলা ছুকছুকে আবার সিক্রেট কীসে৷ কী সাঁটালে? টেস্টবাডঃ অমন গাম্বাট স্টাইলে ডায়লগ ছুঁড়বে না; কতবার এ'কথা বলিচি৷ নোলা চুকচুক, সাঁটানো; এ'সব আবার কী ধরণের ল্যাঙ্গুয়েজ? তুমি কি এমএলএ'র পোষা মাস্তান? শোনো, এই প্রবাসে মারাত্মক ভালো ভেজটেবল চপ পেইচি। মনঃ এ'দিককার ভেজটেবল চপ? তা'তে কি আর সেই বাংলার ওম আছে? টেস্টবাডঃ আরে আচে রে বাওয়া, ওম আচে, ওম পুরি আচে। হরি ওম আচে। চিত্তরঞ্জন পার্কের কমলা স্যুইটস থেকে খেলাম দু'পিস। অবিকল সেই ফেলে আসা পাড়ার চপের দোকান থেকে কেনা চপের স্বাদ ভাইটি। এক নম্বর৷ ছেলেবেলার সন্ধ্যে মনে পড়ে গেল৷ টিউশনি-স্যারের গাঁট্টা আর অঙ্কে গোল্লা মনে পড়ে গেল; এত অথেন্টিক সে চপের স্বাদ। মনঃ পাড়া মনে পড়ে গেল? ছেলেবেলাও? এমন ধারালো সে চপের স্বাদ? টেস্টবাডঃ নয়ত আর বলচি কেন..ও জিনিসে কামড় দিতে পারলে অহল্যাকে আর রামচন্দরের অপেক্কা করতে হতনা। মনঃ কামড় শুধু চপেই পড়েনি দা'ভাই। পক

বইমেলা ২০২৩ ও বংপেন

ছুটে চলেছি।  ছুটে চলেছি৷ স্পীড বেড়েই চলেছে। অল্প আগে গ্যালপিং বর্ধমান লোকালকে চুক্কি দিয়ে মেনলাইন কাঁপিয়ে এগিয়ে গেলাম। এই স্ট্যামিনা ধরে রাখতে পারলে অলিম্পিক মেডেলের স্বপ্ন দেখাই যায়৷ কিন্তু ও'সব স্বপ্ন দেখার সময় কই? আমি ছুটছি। ছুটছি৷ ছুটছি! ক্লান্তি বাড়ছে কিন্তু গতি কমছে না৷ এ'টাকেই কি লিঙ্কডইনদাদাদিদিরা এক্সেলেন্স বলে?  তবে আমার থামার উপায়ও নেই। একদল মানুষ আমায় তাড়া করছেন৷ তাঁদের প্রবল তেলেবেগুন অবস্থা, খেপচুরিয়াস-মেজাজের পেট্রোল পেটে তারা ছুটে আসছেন৷ কারুর হাতে খাদিমের সাতপুরনো চটি, কারুর হাতে পচা ডিম, কেউ আবার আঙুল মুড়িয়ে ধেয়ে আসছেন; পেলেই গাঁট্টা মারার আশায়৷ এদের এত রাগ কেন? কারণ আমি জীবনে প্রথমবার একটা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করার চেষ্টা করেছিলাম। রীতিমতো মাইক লাগিয়ে, আবেগঘন স্টাইলে ডেলিভার করছিলাম৷ তারপর যা হয় আর কী, এ যুগে শিল্পী ও শিল্পীর কদর তো আর নেই। যাক গে। ওই খুনে বেরসিকদের প্রসঙ্গ থাক। ছুটতে ছুটতে আপনাদের বরং সেই ইন্সপায়ারিং পোয়েট্রিটা শুনিয়ে যাই: "বইমেলায় পত্রভারতীর স্টল নম্বর  একশো পঁচাত্তর তা'তে আছে তা'তে আছে তা'তে আছে; বংপেন পঁচাত্তর। আরও আছে আ