Saturday, February 25, 2023

কবিতা কাহারে বলে, গান কাহারে বলে



মগজ ব্যাপারটা যে কী ধুরন্ধর চিজ। আর আমার মত গাম্বাট মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের নিজেদের মাথাই যথেষ্ট।

আমার বুকশেলফে, কোনও অজানা কারণে কয়েকটা কবিতার বই আছে। কলকাতার কম্বলদের মতই, সে'সব বইদের সচরাচর ঘাঁটানো হয়না। আবার কলকাতার মানুষের মতই, আজ হঠাৎ উথলে ওঠা হুজুগের বশে সে'সব কম্বল...থুড়ি বইদের তাক থেকে নামালাম। উল্টেপাল্টে দেখেটেখে, ধুলোটুলো ঝেড়ে তাকের বই তাকে ফেরত যাবে, তেমনটাই হওয়ার কথা। কী মনে করে দু'একটা কবিতা পড়ার চেষ্টা করলাম। খানিকটা শক্তি, খানিকটা সুনীল, খানিকটা শঙ্খ। নিজের ওপর গর্ব হচ্ছিল, কবিতা পড়ছি ভেবে। আরে, কবিতা মানে গানই তো, সুরটাকে নিজের মত মনে মনে বসিয়ে নিলেই অ্যাপ্রিশিয়েশন ব্যাপারটা তরতরিয়ে বইবে। 

যা হোক, সে'সব কবিতার বইয়ের ফাঁকে একটা বই ছিল রবিস্যারের শ্রেষ্ঠ কবিতার। সে'গুলো বেছে নিয়েছেন সুনীল গাঙ্গুলি স্বয়ং। বইয়ের শুরুতে একটা চমৎকার মুখবন্ধ লিখেছেন সুনীল; শিরোনাম - "রবীন্দ্রনাথ এবং আধুনিক কবিতা"। কবিতা বুঝিনা, তায় আবার আধুনিক। রবীন্দ্রনাথ বুঝি, সে'কথা বলার দুঃসাহসও নেই। তবে বাংলা ভাষাটা যেহেতু খানিকটা বুঝি, তাই মুগ্ধ হয়ে পড়াটা ঠেকায় কে।

তা সেই বইয়ের দ্বিতীয় কবিতা একটা গান; সখী, ভাবনা কাহারে বলে। অনেকের মতই, এ গানটা আমার মুখস্থ; কমা, ফুলস্টপ, হাঁচি, বিষম সহ। আমার গলায় সুর নেই, প্রাণে কবিতা নেই; অথচ এ গান গাইতে গিয়ে হোঁচট খাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। কাজেই, কবিতা হিসেবে এই গানটা বইয়ের পাতায় ছাপা আছে দেখে প্রথমেই মনে হল; এ পড়ে হবেটা কী, পুরোটাই কণ্ঠস্থ তো। চোখ বুজলেই এ গান কানে-বুকে বেজে উঠবে; মায়ের গলায়, শ্রাবণী সেনের গলায়। সে গান আবার বইতে পড়তে যাব কেন?

তবু। মানুষ হয়ে জন্মেছি যখন, হিসেবের বাইরে পা না রাখলে চলবে কেন? শুরু করলাম পড়া। এ'খানেই সেই মগজের চমক। আমি যা লিখছি তা হয়ত গোটাটাই অযৌক্তিক; তবে যুক্তিবাজ হলে কী আর ব্লগ লিখে লিঙ্ক শেয়ার করে মানুষজনকে জ্বালিয়ে মারি। কাজেই লিখেই রাখি। কী অদ্ভুত, মুখস্থ একটা গান; সে'টাকে যখন সাদা কাগজের ওপর কালো ছাপা অক্ষরে পড়ছি; কানের বদলে চোখ অ্যাক্টিভেট হচ্ছে, চেনা সুর আবছা হয়ে একটা অন্য রিদম আবিষ্কার করছি এ লাইন থেকে ও লাইনে যাওয়ার সময়। এ গানের সুরের ম্যাজিক বর্ণনা করার দুঃসাহস আমার নেই। কিন্তু কবিতাটা পড়তে গিয়ে, সে সুর সরে গিয়ে যে'টা পড়ে রইল; সে'টাকেও একটা অন্য জাতের জাদু হিসেবে মগজ চিনে নিল। প্রতিটা শব্দই পূর্বপরিচিত, অথচ পড়তে গিয়ে দেখলাম তারা সক্কলে অন্য মেজাজে উঠে দাঁড়ালে। গানের মানে পালটে গেল না, তবু সে কবিতাটা গানের থেকে আলাদা হয়ে ধরে দিল যেন। সে লেখা সুরের সঙ্গে মিলে একটা জলতরঙ্গ সৃষ্টি করেছে বটে, কিন্তু কথাগুলো সুরের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে নেই। সুর বাদেও তাদের অস্তিত্ব জোরালো; জমজমাট।

একটা নতুন কবিতা পড়ে ফেলল মগজ। বহুবার শোনা গানটার সঙ্গে যাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না কিছুতেই। ভাগ্যিস সুনীলবাবু এ গানকে "রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কবিতা"র বইয়ের প্রথম দিকেই চালান করেছেন। নয়ত টের পেতাম কী করে সুরের পরিচয়টাই কবিতার জন্য শেষ কথা নয়? আর আমাদের মত গদ্য-গাম্বাটদেরও কবিতার জগতে স্থান আছে, সে'টাকেও ক্লেম করতে হবে তো।

Friday, February 24, 2023

ছোটবেলার স্মৃতি আর কয়েকটা বইয়ের টুকরো



বই পড়ার মধ্যে আর ডিসিপ্লিন আনা হলো না। এ বইয়ের দু'পাতা, ও বইয়ের চার পাতা, তার পাশাপাশি আর এক বইয়ের দু'প্যারাগ্রাফ৷ এইভাবেই খামচাখামচি করে ঢিকিরঢিকির করে এগোনো। কোনও বই হপ্তাখানেকে শেষ হয়, কোনও বই কয়েক মাস জুড়ে এগিয়ে চলে৷

অনেকগুলো বই পাশাপাশি বেহিসেবি স্টাইলে পড়াটা নির্ঘাৎ একটা "ব্যাড হ্যাবিট"৷ তবে সেই বদভ্যাসের মধ্যে একটা মজাও আছে; অনেক সময় সম্পূর্ণ আলাদা কয়েকটা বইয়ের মধ্যে খুব মনোগ্রাহী কিছু যোগসূত্র বেরিয়ে পড়ে৷ আর মনের লাটাইয়ে সেই যোগাযোগের সুতো জড়িয়ে চলায় যে কী প্রবল আরাম আর আনন্দ, আহা! 

এই যেমন অরুণাভ সিনহা কয়েকটা সহজ প্যারাগ্রাফের মধ্যে দিয়ে কী সুন্দরভাবে লিখেছেন ছেলেবেলায় মায়ের মুখ থেকে গল্প শোনার কথা৷ বলেছেন কী ভাবে মায়ের পড়া গল্পের রেশ ধরেই বাংলা ছোটগল্পের চমৎকার দুনিয়াটাকে আত্মস্থ করেছেন তিনি৷ সেই ছোট্ট পরিচ্ছেদে, উপন্যাসের আর ছোটগল্পের মধ্যে যে মৌলিক তফাৎ, তা নিয়েও চমৎকার কয়েকটা কথা বলেছেন। কিন্তু সেই সব অ্যানালিসিসের বাইরে গিয়ে যে'টা উজ্জ্বল সে'টা হল তার ছেলেবেলার স্মৃতির ঝলক।

আবার এর পাশাপাশি পড়ছি নাসিরুদ্দিন শাহর ছেলেবেলায় স্মৃতিচারণ৷ আত্মকথা বেশ কিছু পড়েছি৷ কিন্তু সততা ও গাম্ভীর্যের সঙ্গে রূপকথা বলার স্টাইল যে এমন নির্ভেজাল ভাবে মিশতে পারে, সে'টা আগে টের পাইনি। ভদ্রলোক আরও লেখেন না কেন? সিনেমা এবং অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হওয়ার নিয়ে লিখতে গিয়ে যেন কুয়াশাঢাকা কবিতার মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছেন ভদ্রলোক; ছেলেবেলাটা যেন কবিতা৷ ব্যথা, যন্ত্রণা, ট্রমা, হতাশা সত্ত্বেও সেই কবিতা সুমিষ্ট।

আর এর সঙ্গে পড়ছি (অডিওবুক, অতএব শুনছি) স্টিফেন ফ্রাই সাহেবের আত্মজীবনী৷ এই আর এক ভদ্রলোক। ঠোঁটকাটা অথচ কাটখোট্টা নন, সোজাসাপটা কথার মানুষ অথচ রূঢ় নন৷ তাঁর ভাষা যতটা সহজ, ততটাই গভীর; যতটা সরল, ততটাই স্মার্ট হিউমরে ঋদ্ধ। সেই প্রাণোচ্ছল ভাষা নিয়ে ফ্রাইবাবু নিজের ছেলেবেলায় ফিরে গেছেন৷ অঙ্কের হিসেবে সে শৈশবকে নিশ্চিন্তে অন্ধকারাচ্ছন্ন বলা যায়; ছোট্ট স্টিফেনের মধ্যে অকারণ মিথ্যে বলার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে, সে চুরি করছে, লোক ঠকাচ্ছে, নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে৷ সে'সব কথা সোজাসুজি সাজিয়েও দিচ্ছেন ফ্রাইবাবু, ইনিয়েবিনিয়ে নিজেকে অসহায় প্রতিপন্ন করতে চাইছেন না৷ অথচ কী আশ্চর্য; সেই স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও তাঁর ছোটবেলার গল্পগুলো তিতকুটে হয়ে উঠছে না৷ বরং চমৎকার নভেলের মত তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ 

ছোটবেলার স্মৃতির মধ্যে যে কী মায়া৷ সে স্মৃতিতে অঙ্কস্যারের মুখচোপার স্মৃতি ফিকে হয়ে যায় আর আলোয় আলোময় হয়ে ওঠে অঙ্কখাতার পাতায় নোট করা ক্রিকেট স্কোর। কমিক্স বইয়ের ছিঁড়ে যাওয়া মলাট মনে পড়ে, মেটে রঙের লক্ষ্মীর ঘটের গায়ে স্কেচপেনে আঁকা ডোনাল্ড ডাক মনে পড়ে। আর সে অদরকারী সমস্ত স্মৃতির টুকরোর মধ্যে মারাত্মক সব "লাইফ লেসন" মিশেছ,  মাঝবয়সে এসে এ'সব থিওরি কপচাতে কপচাতে নিজেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে; "নাহ্, আমি মানুষটা নেহাৎ ফেলনা নই"৷ ইচ্ছে করে, সে বয়সের আমিটার মাথায় যদি হাত বুলিয়ে বলি, "ভালোভাবে থেকো খোকা, কেমন"? আর সেই ইচ্ছেটাই আমার মত এলেবেলে পাঠককেও সহজেই জুড়ে দেয় অরুণাভ, নাসির বা স্টিফেনের সঙ্গে। 

(ছবি: দ্য সানি-সাইড-আপ, শিল্পী: বালিশেন্দ্র)

ইস্তফা



...উইথ রিগার্ডস
কমা
এন্টার
পঙ্কজ চ্যাটার্জী
ফুলস্টপ। 

ফুলস্টপটা টাইপ করার সময়ে কীবোর্ডে একটা খটাস শব্দ হল। ইমেলটা লিখে একটা সবিশেষ বেশ তৃপ্তি অনুভব করলেন পঙ্কজ। যাক, একটা জবরদস্ত জবাব দেওয়া গেছে। সত্যি কথা বলতে কী, সপাটে জুতো মারা গেছে। চেয়ারে গা-এলিয়ে দিয়ে, ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে বেশ কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি। ফন্ট এরিয়াল, সাইজ বারো; এই কম্বিনেশনটা ওঁর বেশ পছন্দের। নিজের আধো-অন্ধকার ড্রয়িংরুমটাকে যেন আচমকা বেশ উজ্জ্বল মনে হল। নিজের মুখে লেগে থাকা অনাবিল হাসিটার ওজন যেন নিজেই যেন অনুভব করতে পারছিলেন। বহুদিন পর এ'রকম ধারালো একটা ইমেল লিখতে পেরে নিজেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল তাঁর।

একটা নজরুলগীতি গুনগুন করতে করতে গিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল বসিয়ে দিলেন পঙ্কজ। ইমেলটা পড়ে নিশ্চয়ই জর্জের মাথা ঘুরে যাবে। নির্ঘাত অথৈ জলে পড়তে হবে ব্যাটাকে। এই ব্যস্ত সিজনে পঙ্কজের রেজিগনেশন ব্যাপারটা নিশ্চয়ই গোটা কোম্পানিকে কাঁপিয়ে দেবে। কোম্পানির প্রতি পঙ্কজের একটা মায়া আছে বটে। দশ-এগারো বছরের চাকরী, সময়টা নেহাত ফেলনা নয়। তবে জর্জের প্রতি কোনও সমবেদনা নেই তাঁর। আর থাকবেই বা কী করে। অমন একটা হাড়বজ্জাত লোক বিপদে পড়লে সে বেশ খুশিই হবে। পান থেকে চুন খসলেই কী বিশ্রী ভাবে ইনসাল্ট করতে শুরু করে জর্জ; আরে, বস হয়েছে বলে মাথা কিনে নিয়েছে নাকি! অনেক হয়েছে। আর নয়। 

এই ধারালো রেসিগনেশনটার ঠেলা সামলাক এবার জর্জ। এতদিনে তাঁকে বেশ উত্তম-মধ্যম দেওয়া গেছে। এই ইমেলের কথা জানাজানি হলে অফিসে বেশ একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে পঙ্কজ বেশ নিশ্চিত। তিনি এও জানেন যে আচমকা একজন ভালো 'সাপোর্ট' খোয়ানোর জন্য জর্জকে তাঁর ওপরওলাদের কাছে অনেক রকমের জবাবদিহিও করতে হবে। জর্জের অপ্রস্তুত মুখটা ভেবে পঙ্কজের তৃপ্তি বেশ কয়েকগুণ বেড়ে গেল।

নাহ্‌, আজ আর বেরসিক গ্রিনটি খেলে হবে না। পঙ্কজ ঠিক করলেন যে ভালো করে আদা দিয়ে এক কাপ চা করে সেলিব্রেট করতে হবে। 

***

জর্জের ফোন। চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখলেন পঙ্কজ।

- পঙ্কজ, রিপোর্টের স্টেটাস কী?

- আর দিন দুয়েকের মধ্যেই...।

- ওই রিপোর্ট আমার চার ঘণ্টার মধ্যেই চাই।

- কিন্তু...।

- ও'সব কিন্তুটিন্তু অন্য কাউকে বোলো। কেমন? দিস মাস্ট বি ডান। নো ফালতু এক্সকিউজেস।

- ওকে জর্জ।

রেসিগনেশন ইমেলটাকে 'রেসিগনেশন লেটার্স' ফোল্ডারে সেভ করে রাখলেন পঙ্কজ। এই নিয়ে সে ফোল্ডারে গত দশ বছরে মোট বাইশখানা ড্রাফট জমা হল। মিচকি হেসে রিপোর্টে মন দিলেন পঙ্কজ।

*** 

"...আই হোপ ইউ উইল আন্ডারস্ট্যান্ড মাই হেল্পলেসনেস। মাঝেমধ্যে আমার সত্যিই বড় অপরাধবোধ হয়, কিন্তু আমিও নিরুপায় পঙ্কজ। যাক গে, চলো একদিন দু'জনে বসে বিয়ার খাই গিয়ে। ওহ, তুমি তো আবার সে রসে বঞ্চিত। তা'হলে কফিই হোক"। 

হোয়্যাটস্যাপে একটা বিশাল মেসেজ টাইপ করে থমকালেন জর্জ। শেষ লাইনটা বারবার পড়লেন কিন্তু কিছুতেই মনে ধরছিল না। পঙ্কজ রিপোর্টটা চারঘণ্টার বদলে আড়াই ঘণ্টার মাথায় ইমেল করেছিল। নিখুঁত। ভীষণ ট্যালেন্টেড ছেলে, খুব খাটতে পারে। কিন্তু এই প্রোফাইলটা ঠিক ওঁর জন্য নয়। মাঝেমধ্যেই জর্জের মনে হয় যে পঙ্কজের উচিৎ আরও ভালো সুযোগের খোঁজ করা। কিন্তু বস হয়ে সে উপদেশ দেওয়াটা চলে না, কোম্পানির প্রতিও তাঁর একটা দায়িত্ব আছে। 

বছর সাতেক পঙ্কজ তাঁর সঙ্গে কাজ করছে। ছেলেটার ভুলভ্রান্তি হয় বটে, তবুও জর্জের মনে হয় ছেলেটার পিঠ আর একটু চাপড়ে দিলে ভালো হত। এই ধরণের হোয়্যাটস্যাপ মেসেজ বা ইমেল আগেও অনেকবার টাইপ করেছেন জর্জ। কিন্তু অন্যবারের মত, এ'বারেও থমকে যেতে হল। সেই মেসেজ ডিলিট করে দিয়ে ফের পঙ্কজের পাঠানো রিপোর্টে মন দিলেন জর্জ। রিপোর্ট সময়মত এগিয়ে না দেওয়া গেলে তাঁর নিজের মাথাটাই আস্ত থাকবে না; এ কথা জর্জ বেশ জানেন।

লুচি স্পেশ্যাল পিকআপ-লাইন সমগ্র



১। 'আর দুটো লুচি দিই'?

২। 'শেষ লুচিটা কিন্তু হাফ-হাফ দুজনে'।

৩। 'তুমি বেলবে আমি ভাজব না আমি বেলব তুমি ভাজবে'?

৪৷ 'লুচিতে তোমায় বেশ মানায় কিন্তু'।

৫। 'শুনেছি লুচির ফুলফর্ম নাকি L.ove U CHI.rokal? তাই কি'?

৬। 'আমায় একবার বলো, লুচিকুমার'।

কবি নাকি?



"কবিতা লিখেই কবি হয়ে যাবি ভেবেছিস ভাই? কাঁচকলা!

কবি হওয়া কি অতই সহজ রে? নো স্যর, নো। নো।


পারবি? পারবি মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে শ্যামসঙ্গীতের তালে দুলতে দুলতে ডবল ডিমের অমলেট ভাজতে?


পারবি লীভ অ্যাপ্লিকেশনের ইমেলে 'আনেওয়ালা পল জানেওয়ালা হ্যায়' গানটার এমিপিথ্রি ফাইল অ্যাটাচ করতে?


পারবি নিজের বেসুরো হেঁড়ে গলার গানে বাথরুম কাঁপিয়ে, শাওয়ার খুলে, মনে মনে ভাবতে; "আমিও তা'হলে মেঘমল্লারফল্লার ম্যানেজ করতে পারি"!


পারবি টাটকা খবরের কাগজ কিনে, সে'টার একটা শব্দও না পড়ে, তার ওপর লুচি-বেগুনভাজা সার্ভ করতে?


বল না! পারবি কি?


এ'গুলো যদি না পারিস; তবে খামোখা নিজেকে কবি বলে পরিচয় দিয়ে লোক হাসাস না৷


কেমন?"

Sunday, February 19, 2023

ফিরোজ শাহ কোটলায় ক্রিকেট-হুজুগিস্ট



আমরা যারা ক্রিকেট-হুজুগিস্ট, তাদের চোখ দিয়ে খেলাটাকে বিশ্লেষণ করতে চাওয়া আর শালপাতার দোনায় ইলিশের ঝোলভাত খাওয়া একই ব্যাপার। আমাদের ক্রিকেট-আড্ডায় ক্রিকেটটাই ভেসে যায় বিকট হ্যা-হ্যা-হো-হো অথবা অযথা গলাবাজিতে; তবে সেই ভেসে যাওয়াটা বোধ হয় নেহাৎ অক্রিকেটিয় নয়৷ ক্রিকেট গ্যালারির 'লক্ষ্মী' হল এই হুজুগিস্টরাই (নিজেদের গান নিজেরাই গাইব, তা'তে আর আশ্চর্য কী)। তাদের পাগলামিতেই মেক্সিকান ওয়েভ উত্তাল হয়, স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে শস্তা জার্সির হাজারে হাজারে বিক্রি হয়, আধমাইল দূরে দাঁড়ানো প্লেয়ারদের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে চেল্লামেল্লি জুড়ে দেওয়া হয় যেন সে কোহলি-রোহিত নয়; পাড়ার বাপ্পাদা, আমাদের ডাক শুনলেই এগিয়ে এসে সিগারেটের কাউন্টার দেবে বা চা-মামলেট কিনে খাওয়াবে৷

যা হোক, সেই ক্রিকেট-হুজুগিস্ট-অ্যাসোসিশিয়েনের অন্যতম সভ্য হিসেবে আজ গেছিলাম ফিরোজ শাহ কোটলায়, ভারত-অস্ট্রেলিয়া সেকেন্ড টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা দেখতে৷ একটামাত্র টিকিট জুটেছিল, কাজেই পরিব্রাজকের মত একাই সক্কাল-সক্কাল পৌঁছে গেলাম৷ কোভিডের পর এই প্রথম মাঠে যাওয়ার সুযোগ, একা-দোকা ভাবলে চলবে কেন? তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢোকার কথা। ঢোকার মুখে প্রতিবার যা করি, এ'বারও করলাম৷ জার্সি দরদাম; কখনও কিনি, কখনও কিনি না৷ কিন্তু জার্সি বিক্রিবাটা যে'খানে হচ্ছে, সে'খানে গিয়ে খানিকক্ষণ না দাঁড়ালেই নয়৷ আজ খানিক্ষণ বেশ কয়েকটা জার্সি কেনাকাটির জটলায় দাঁড়িয়ে মনে হল কোহলির পর, সবচেয়ে বেশি চাহিদা হল সূর্যকুমারের জার্সির। তারপর রোহিত এবং ধোনি৷ যা হোক, আমি খোকার জন্য সুভ্যেনির হিসেবে একটা জার্সি কিনে নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়লাম।

ভিটামিন-ডি-য়ের হয়ে বেশ জোরালো সওয়াল রাখে ফিরোজ শাহ কাটলা৷ বেশির ভাগ দর্শকদের মাথার ওপর ছাত নেই৷ তবে আমি যে অঞ্চলে ছিলাম, সে'খান থেকে পিচের ভ্যিউ চমৎকার। কাজেই খুঁতখুঁত ছিল না মনে৷ ইনিংস শুরুর মিনিট কুড়ি আগেই পৌঁছে গেছি৷ এ মাঠে এই আমার প্রথমবার, তাই সবার আগে টয়লেটের খোঁজটা নিয়ে রাখা দরকার। ইডেনের মতই; সে ব্যবস্থা আর যাই হোক, ঝাঁচকচকে নয়৷ তবে ব্যবহারযোগ্য৷ এরপর গেলাম খাওয়ার জলের ব্যবস্থা দেখতে৷ দুর্ভাগা দেশের ক্রিকেট দর্শক আমরা, ব্যাগ-জলের বোতল ইত্যাদি নিয়ে ঢোকা বারণ (সে দায়ভার অবশ্য আমাদেরই)৷ কাজেই স্টেডিয়ামের ভিতর জলের ব্যবস্থাটা ভালো মত জেনে না রাখলে সমস্যার পড়তে হবে।  আমি যে'খানে ছিলাম, সে'খানে কাগজের গেলাসে জল বিক্রি হচ্ছিল, দশ টাকার এক গেলাস৷ ইয়ে, এক বিক্রেতা অবশ্য আধো-গোপন ব্যবস্থাপনায় জলের বোতলও বিক্রি করছিলেন, কুড়ি টাকার বোতল পঞ্চাশে৷ কিন্তু বার বার সীট ছেড়ে উঠে গিয়ে এক গেলাস জল কিনে খেতে হলে ক্রিকেটটা জলে যাবে৷ অগত্যা সেই বোতলই কিনতে হল। খাবারদাবারের মধ্যে আমাদের এলাকায় ছিল তেল চুপচুপে ঠাণ্ডা কচুরি ও শিঙাড়া, রাজমা বা ছোলেসহ ভাত, রকমারি চিপ্স, পপকর্ন, আর কোল্ডড্রিঙ্কস৷ খান চারেক স্টল, তারা মোটামুটি হিমশিম খাচ্ছে। ও'সব বিস্বাদ আইটেমগুলোরও যে কী চাহিদা মাঠের মধ্যে; ক্যাপ্টিভ অডিয়েন্স, তাদের পেটে খিদে, গলায় তেষ্টা, প্রাণে ক্রিকেট৷ এই অদরকারী ক্যাপ্টিভ অডিয়েন্সের জন্য বিসিসিআই যদি একটু মায়াদয়া বাড়াত, তবে বর্তে যেত কত হাজার হাজার ক্রিকেট হুজুগিস্ট৷ তারা সকলে ক্রিকেট বোদ্ধা নয়, অথচ এই অব্যবস্থা অগ্রাহ্য করে দিনের পর দিন তারা মাঠ ভরিয়ে দিচ্ছে, "ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া" বলে চিল্লিয়ে কানঝালাপালা করে দিচ্ছে৷ ভালোবাসার যে কী টান।  সামান্য পানীয় জলের আশ্বাস, পরিষ্কার খাবারদাবারের ব্যবস্থা, সাফসুতরো বাথরুম আর ছ'সাত ঘণ্টা বসার জন্য আরামদায়ক ব্যবস্থা; এগুলো ব্যবস্থা করা কি খুবই কষ্টকর? কে জানে! হয়ত আমাদেরই দাবীর শেষ নেই। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড যেহেতু ব্যবসাটা ভালো বোঝে (এ'টা তীর্যক মন্তব্য নয়, আন্তরিক সেলুট), কাস্টোমার ডিলাইট নিয়ে তাদের কি কোনও মাথাব্যথা থাকবে না? বিশেষত, যখন হোর্ডিংয়ের কদর্যতায় স্টেডিয়ামগুলো দুর্গাপুজোয় কলকাতার রাস্তাঘাটকেও দশ গোল দেবে। না হয় আরও দু'চারটে ব্যানার-ফেস্টুন বাড়লো, কিন্তু দু'দণ্ড আয়েস করে যেন মানুষ খেলাটাকে উপভোগ করতে পারে৷

যা হোক, এ'সব অদরকারী গপ্প থাক৷ হুজুগে ফেরত আসি৷ তবে ইয়ে, ক্রিকেট নিয়ে লিখতে বসিনি৷ গ্যালারির হয়েই লিখছি৷ টিভির ক্রিকেট টেলিকাস্ট দুরন্ত (এবং অপরিহার্য) কারণ ক্রিকেটে অ্যানালিটিকাল অ্যাপ্রিশিয়েশনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে, আর আর সে'টার আইডিয়াল মিডিয়াম হচ্ছে টেলিভিশন (বা যে কোনও স্ক্রিন)। তা'হলে মাঠের ম্যাজিক কোথায়? শুধুই গ্যালারির আবেদনে? হই-হল্লা ফুর্তিতে? হুজুগের চোখ দিয়েই বলি, ক্রিকেটও আছে তো৷ ব্যাটার যখন নিখুঁত টাইমিংয়ে মিডঅনের দিকে বল ঠেলে দিয়ে এক রান নিচ্ছেন, টেলিভিশনের অত্যাধুনিক টেকনলোজিও কিন্তু দর্শকের কাছে মাঠে-শুনতে পাওয়া বল-ব্যাটে-পড়ার ঠকাস্ জাদু-শব্দের ইকো পৌঁছে দিতে পারছে না৷ অর্থাৎ বাড়ির সোফায় বসা 'আমি'র কাছে যে'টা স্রেফ 'রোহিত এক রান নিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করল' মার্কা নিরামিষ একটা ব্যাপার, মাঠে বসা 'আমি'টি কিন্তু প্রায় লাফিয়ে উঠছি "কী মারাত্মক কন্ট্রোল রেখে খেললো, কী মাপা টাইমিং" বলে৷ আমার পাশের হাজার হাজার মানুষও প্রতিটা ছোটখাটো ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, সেই উচ্ছ্বাস আমায় স্পর্শ করছে, উজ্জীবিত করছে, ইন্সপায়্যার করছে। আবারও বলি, মাঠে বসে ব্যাট-বলের (বা স্টাম্পে-বলের) যে খটাস শব্দ, সে ম্যাজিক টিভিতে ট্রান্সফার করা বোধ হয় সম্ভব নয়৷ 




আর একটা ব্যাপার৷ রান জমে ওঠার ব্যাপারটা মাঠে বসে যেন আরও একটু গভীর ভাবে অনুভব করা যায়৷ সে'খানে বিজ্ঞাপন বিরতি নেই, পাশের ঘর থেকে হেঁটে আসা নেই, চ্যানেল পালটানো নেই, রেগে টিভি বন্ধ করে দেওয়াও নেই। আছে শুধু ক্রিকেটের অমোঘ সব সংখ্যা। কয়েক হাজার মানুষ সেই সংখ্যাগুলোকে এস্কেপ করতে পারছেন না৷ এই যেমন আজ। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের রান ২৬৩৷ আজ গোটা দিন এই সংখ্যাটাই মনের মধ্যে ঘুরপাক খেয়েছে৷ একটানা হিসেব করে চলেছি 'ডেফিসিট' আর কত৷ বাড়িতে খেলা দেখতে বসেও তাইই করি, কিন্তু মাঠের উত্তাপের সঙ্গে তুলনা চলে না৷ আজ খেলা দেখে এলাম, আগামী হপ্তাখানেক মনের মধ্যে এই ২৬৩ সংখ্যাটা ভাইব্রেট করে চলবে। এখানে ওভার শেষে বিজ্ঞাপন হচ্ছে না, আছে শুধু ঢাউস স্কোরবোর্ড। মেক্সিকান ওয়েভের ভিড় থেকে উঁকি মেরে দেখছি; স্কোরবোর্ড৷ লাঞ্চ কেনার সময়ও চোখ চলে যাচ্ছে স্কোরবোর্ডের দিকে। প্রতিটা রান যেন ইলিশের দামে কেনা হচ্ছে, বিশেষত কোহলি আউট হওয়ার পর থেকে। প্রায় প্রতিটা রান, প্রতিটা উইকেট এক একটা গল্পের মত মনের মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছে। হাতের ফিটনেস ওয়াচ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে যে হার্টরেট এক্কেবারে চালিয়ে খেলছে, বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে এই ম্যাচটাই যদি দেখতাম, ধুকপুকানিটা এমন জমাট বাঁধত না৷ অশ্বিন আর অক্ষরের (অক্সর লিখব?) পার্টনারশিপ যখন একশো ছুঁল, মনে হল গোটা দিন বাগানের মাটি কোপানোর পর এ'বার চারাগাছ লাগানোর সময় এসেছে৷ কাজেই হা-হা শব্দে লাফালাফি যে শুরু করবই, এ'তে আর আশ্চর্য কী। কারণ স্টেডিয়ামে থাকা মানে, আমিও যে ওই স্কোরবোর্ডেরই অংশ। স্কোরবোর্ডে গ্যালারির উপস্থিতি নামহীন হতে পারে, তবে অদরকারী নয় কোনও মতেই। তা, এই গ্যালারির খ্যাপাটে মানুষজনদের কথা কি বিসিসিআই আর একটু দরদ দিয়ে ভাববে না? ভাবলে তেমন ক্ষতি হবে না কিন্তু, মাইরি।

Thursday, February 16, 2023

শিঙাড়া থেরাপি



অফিস টেবিলে কাগজপত্তর আর ফাইলের স্তুপ? সে'দিকে তাকালেই বুক-হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে পড়ছে? জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েও মেমো-প্রপোজাল-হিজবিজবিজের গুরুভার লাঘব হচ্ছে না?একটা ফাইল ক্লীয়ার করলে চারটে আপদ এসে জুটছে? এই ক্রাইসিস চলতে দেওয়া যায়না৷
টেবিলের চেহারা যদি ভয়াবহ হয়, তবে বুকের ধুকপুকও বাড়তে থাকে। তা'তে মেজাজের ক্ষতি, মনের ক্ষয়। মনের রাখবেন, অফিস-টেবিলকে পোষ মানাতে না পারলে দুনিয়ার সমস্ত মোটিভেশনাল বই আর সুড়সুড়ি দেওয়া পাওয়ারপয়েন্ট জলে৷
তা, আপিসের টেবিলের পেন্ডিং-পাহাড় পাশ কাটিয়ে ভোরের নরম রোদ্দুর এনে ফেলবেন কী করে? ডাঁই করা ফাইলের ঘুপচি অন্ধকার সাফ করে প্রাণের তুলসীমঞ্চে প্রদীপ জ্বালবেন কী করে? খানিকক্ষণের জন্য যাবতীয় ডেডলাইনের ঝড়-ঝঞ্ঝা ভুলে টেবিলে বসন্ত টেনে আনবেন কী করে?
শুনুন, মন দিয়ে৷ পারলে টুকে রাখুন৷
একটা শিঙাড়াকে হীরের যত্নে টেবিলের ওপর রাখতে হবে৷ রেখেই তার ওপর হামলে পড়বেন না যেন; তা'তে উত্তম-হাসিতে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের "ব্লিস্টারিং বার্নাকলস" মিশিয়ে দেওয়া হবে৷ অপেক্ষা করুন। সে দৃশ্য উপভোগ করুন৷ সে সুবাসকে টেবিলের চারপাশের বাতাসে মিশে যেতে দিন৷ সেই অপার্থিব দৃশ্যকল্প আর জাদু-সুবাসের মেট্রিক্স খানিকটা সময় জুড়ে স্টেডি না হলে চারপাশের নেগেটেভিটি শুষে নেওয়া হবে কী করে?
সেই হাইক্লাস সিচুয়েশনটাকে স্টেডি হতে দিন৷ মেডিটেট করুন, কীবোর্ডের খটখটটুকু মন দিয়ে শুনুন, আঙুলের ডগায় প্রতিটা কীবোর্ড-স্পর্শ যত্ন করে অনুভব করুন৷ শিঙাড়ার দিকে তাকিয়ে শ্বাস নিন, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে শ্বাস ছাড়ুন৷ ব্রীদ ইন, ব্রীদ আউট৷ ব্রীদ ইন, ব্রীদ আউট৷ খানিকক্ষণের মধ্যেই দেখবেন মনের মধ্যে ফুরফুরে হাওয়া, কুঁচকে থাকা ভুরু নেতিয়ে পড়েছে, খিঁচিয়ে থাকা মুখে "সদ্য কবিতা লিখেছি" মার্কা হাসি৷
এরপর মিনিট পাঁচেকের জন্য স্ক্রিন স্লীপ-মোডে রেখে, কীবোর্ড সরিয়ে দিয়ে, ফোকাস করুন শিঙাড়ার ওপর৷ শিঙাড়া উড়িয়ে দিয়ে, স্ফুলিঙ্গের মত, বিপ্লবীর মেজাজে; ফিরে আসুন কাগজপত্রের দেশে৷ খুনে-অফিসটেবিল ততক্ষণে আপনার নেকুপুষুসুন্টুনিমুন্টুনি স্যুইটহার্টটি৷ গ্যারেন্টি রইল।

ইউফোরিয়া



~~খিলখিলাতি হ্যায় উয়ো নদীয়া, নদীয়া মে হ্যায় এক নইয়া~~

জমজমাট সূর্যকুণ্ডের মেলা (সুরজকুণ্ড্‌ বলা উচিৎ নাকি?)। অফিসের পর সন্ধেবেলা বিস্তর ট্র্যাফিক ঠেলে সে মেলায় গেছি রকমারি জিনিসপত্র দেখতে, খাবারদাবারের দোকানগুলোয় পেট ভরাতে, আর সর্বোপরি ভিড়ে নাকানিচোবানি খেতে। মেলায় গিয়ে মানুষে যা করে আর কী। ও মা, গিয়ে শুনি সে'খানে পলাশ সেন গান গাইবেন, ইউফোরিয়ার শো শুরু হবে খোলা অ্যাম্পিথিয়েটারে, অবাধ প্রবেশ। "ধুম পিচক ধুম" ফেনোমেনাটা একসময় মজ্জায় এসে মিশেছিল। নিজেকে সঙ্গীত-বোদ্ধা বলে লোক হাসানোর মানে হয়না। তবে গানের প্রতি ভালোবাসায় খানিকটা অবুঝ না হলেও চলে না বোধ হয়। আমার ডানা গজানোর বয়সে সেই গান আবিষ্কার করি। এখনও মনে আছে, আমাদের স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে আমার কিছু ক্লাসমেট সে গান গেয়ে আসর জমিয়ে দিয়েছিল। সে বয়সে প্রথম প্রেমের হুহু, সেই হুহুর সঙ্গে যে'সব গান এসে মিশে গেছিল, তাদের মধ্যে এই ধুম-পিচক-ধুম অন্যতম। এ অভিজ্ঞতা আদৌ অভিনব নয়, আমার বয়সী অনেকেই এ ব্যাপারটা ধরতে পারবেন। চন্দননগরের অলিগলি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি দুই বন্ধু, আর দু'জনে বিশ্রী বেসুরো গলায় চিল্লিয়ে গাইছি 'মায়েরি' বা 'ক্যায়সে ভুলেগি মেরা নাম'। স্বস্তির ব্যাপার হল যে নিজের বেসুর নিজের কানে বাজে না। যা হোক, এহেন ইউফোরিয়ার গানের আসর, সে নিশির ডাক উপেক্ষা করি কী করে। কাজেই আমরা দ্যাবা-দেবী সেই খোলা মঞ্চের সামনে চলে গেলাম। ভিড় সত্ত্বেও জায়গা বাগিয়ে নিতে অসুবিধে হল না।




~~কেহতা হ্যায় যো কহে জমানা, তেরা মেরা পেয়ার পুরানা~~

আমাদের আশেপাশে যারা বসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়সই মনে হল আমাদের চেয়ে হয়ে বেশি খানিকটা কম অথবা বেশ খানিকটা বেশি। মোদ্দা কথা টীম 'নাইনটিজ'কে মাইনরিটিই মনে হল। যা হোক, একসময় স্টেজে একটা স্ফুলিঙ্গের মত উদয় হলেন পলাশ সেন, অকারণ সময় নষ্ট না করে গান ধরলেন। অমনি সেই ছোটবেলার গন্ধ-দৃশ্যগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠল। তেমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল। ওই সূরজকুণ্ডের হৈহল্লার মধ্যে কেউ বাংলার মফস্বলের বিকেল আর টিউশনি-ফেরত সাইকেলের ক্যাঁচরম্যাচর মিশিয়ে দিল যেন। আমরাও দিব্যি গালে হাত রাখে শুনতে আরম্ভ করেছিলাম। আচমকা মেজাজের সুতো ছিঁড়ে দিলেন পলাশ সেন নিজেই, বললেন "এই যে দাদা-বোনেরা, আপনারা কি গা এলিয়ে শুয়ে বসে গান শুনতে এসেছেন নাকি? রামোহ্‌ রামোহ্‌! আরে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ান দিকি। লম্ফঝম্প করতে হবে তো। আমি তো আর ভজন-গজল গাইতে আসিনি, চেল্লাতে এসেছি। কাজেই নেহাত আর্থ্রাইটিসের ঝামেলা না থাকলে, দাঁড়িয়ে পড়ুন, গর্জে উঠুন"। কী বলি, আমি ছাই গানটান বুঝি না। আমার ছেলেবেলার হিরো আওয়াজ দিচ্ছে, আমি সেলাম ঠুকবো; আমার কাছে ও'টাই হল গিয়ে মূল এন্টারটেইনমেন্ট। কাজেই ডাক্তার সেনের দাবীমত নির্দ্বিধায় সেই বাঁধানো সিমেন্টের বসার জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে টের পেলাম, ইতিউতি দু'চারজন দাঁড়িয়েছেন বড়জোর, পাবলিকের গড়িমসি তখনও কাটেনি। মনেমনে চিৎকার করে উঠলাম, "এ কী! ক্লাসরুমের মধ্যে স্যার দাঁড়াতে বলেছেন! এর পরেও বসে থাকাটা কেমন বেয়াদপি"! যাকগে, সে বেরসিকদের পাত্তা না দিয়ে বেখাপ্পা ভাবে পলাশবাবুর গানের তালে ড্যাংড্যাং করে দু'হাত হাওয়ায় ছুঁড়তে শুরু করলাম।




~~যতন করে রাখিব তোরে মোর বুকের মধ্যে মাঝি রে~~

পলাশ সেন ধরলেন "ধুম পিচক ধুম"। আমরা যারা 'নব্বুইয়ের মাল' সে এলাকায় ছিলাম, তাঁরা সবাই খ্যাপা বাউলের মত দুলে চলেছি। আমরা সংখ্যালঘু হতে পারি, মধ্যবয়সী ভারে সামান্য ন্যুব্জ হতে পারি। তা বলে ইউফোরিয়ার গানে বিসর্জন-নাচের মোডে ঢুকে যাব না? আরে! পলাশ সেন চেঁচিয়ে বলছেন "আ রে মেরি ধড়কন আ রে"। এ ডাক শুনে কে না লাফিয়ে থাকতে পারে? অবাক হয়ে দেখলাম অনেকেই পারেন। পলাশ সেনও মহাঢিঁট মানুষ দেখলাম। বেশিরভাগ জনতা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াবেন না, পলাশবাবুও তাঁদের স্বস্তি দেবেন না। খুব হিসেব কষে, 'ধুম পিচক ধুম' গানের শেষে সামান্য ব্যাকফুটে গেলেন পলাশবাবু। ততক্ষণে ভদ্রলোকের রোখ চেপে গেছিল বোধ হয়। আচমকা একের পর এক নতুন হিট গান গাওয়া শুরু করলেন, ধরলেন হিট সব পাঞ্জাবি গান; এমন কি "কালা চশমা"ও বাদ গেল না। মাইরি, অমন মারাত্মক লাফঝাঁপ করে গেয়ে যাচ্ছিলেন ভদ্রলোক, অথচ গলায় ক্লান্তি নেই, সুরে দুলকির অভাব নেই। এই অ-ইউফোরিও ডিস্কোঝড়ে গলল পাথর। জমে উঠল আসর, মানুষজন সত্যিই মেতে উঠল, জমে উঠল গানের মেলা।


~~ Crescendo /krɪˈʃɛndəʊ/
the highest point reached in a progressive increase of intensity ~~

এরপরেই তুরুপের তাসটা বের করে আনলেন পলাশবাবু; ধারালো জাদুতে শ'পাঁচেক মানুষের পায়ের তলা থেকে কার্পেট উড়িয়ে দিলেন। গাইতে শুরু করলেন "মায়েরি"। আর এমন গাইলেন, যে স্রেফ ওই একটা গান শোনার জন্য শ'খানেক মাইল পথ হেঁটে যাওয়াই যায়। আর সে গানটাই গোটা সন্ধেটাকে অন্য স্তরে নিয়ে চলে গেল, সে'খান থেকে আর ফিরে তাকানোর উপায় নেই। গা ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। পরের একটা ঘণ্টা পলাশবাবু যদি খবরের কাগজ পড়েও শোনাতেন, তা'হলে সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনে যেত। সবচেয়ে বড় কথা, ঠিক ওই মায়েরি পার্ফর্ম্যান্স থেকে নব্বুই-অনব্বুইয়ের তফাৎটা ধুয়ে-মুছে গেল। দর্শকাসনের প্রতিটা মানুষ তখন ইউফোরিয়ার সামনে নতজানু, এবং খানিকটা 'ইউফোরিক'ও বটে। আর সে গান শুনলে যেমনটা হওয়ার কথা আর কী, পলাশবাবুর গলার দাপট আর সে সুরের মায়া টেনে নিয়ে গেল কৈশোরের প্রেমে। এবং ভেবে অবাক হলাম, সেই ছেলেবেলার প্রেম আর ভালোবাসার মানুষে আটকে নেই। পাড়ার চেনা গলির ল্যাম্পপোস্টের গায়ে হেলান দেওয়া হিরো ইম্প্যাক্ট সাইকেল, চেনা চায়ের দোকানের বেঞ্চি, পিঠে ঝোলানো পড়ার বইয়ের ব্যাগের মধ্যে রাখা টেনিসবল; সমস্তই বড় অনাবিলভাবে ফেরত এলো। পলাশ সেন ততক্ষণে শ্রোতাদের মনঃপ্রাণ দখল করে ফেলেছেন। আর নব্বুই ব্র্যান্ডের আমরা যেক'টি প্রডাক্ট ইতিউতি ছড়িয়ে ছিলাম, তাঁরা সবাই অন্যান্য মুগ্ধ শ্রোতাদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে চলেছি, "কেমন দিলাম"? আসলে, আমরাই তো তখন ইউফোরিয়া।

Tuesday, February 14, 2023

ভ্যালেন্টাইন বিরিয়ানি




ডিয়ার বিরিয়ানি,

আশা একটাই, যেন প্রাণপণ ভালোবাসতে পারি।

দেখো, যেন নাক উঁচু তর্কাতর্কিতে আটকে না পড়ি। কলকাতাইয়া -মোরাদাবাদি জাতপাত নিয়ে বেফালতু খামচা-খামচি শুরু না করি।
যেন, স্রেফ ভালোবাসায় "এইত্তো আমি" বলে আত্মসমর্পণ করার সৎ সাহসটুকু রাখতে পারি। বাতেলায় ভেসে না গিয়ে কবজি ডুবিয়ে কেল্লা ফতে করতে পারি।

পার্থিব গল্প-আড্ডা-গুলতানিতে আটকে পড়ে যেন তোমায় ঠাণ্ডা না করে ফেলি। ইয়ারদোস্ত আর তাঁদের খাওয়ার পাতের খেজুরালাপ; ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু বিরিয়ানি চাল-মাংস থেকে উঠে আসে ধোঁয়া যদি সময়মত জিভে-নাকে চালান না করতে পারি, তা'হলে ব্যর্থ আমার সঞ্জীব পড়ে চোখ-ছলছল, ব্যর্থ আমার সমুদ্র বা পাহাড় দেখে অস্ফুটে বলা; "আহা"।

তোমার প্লেটের পাশে খিটখিটে মুখে এসে যেন কোনোদিনও না বসি। যেন মনে রাখতে পারি যে সাচ্চা কমরেডের মত; তুমি সবসময়ই ছিলে, আছো, থাকবে।

আর হ্যাঁ, যেন তোমার প্লেটের ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়ি, হামলে না পড়ি। প্রেম-ভালোবাসায় গাম্বাটপনা যেন মিশিয়ে না ফেলি। ধীরে-সুস্থে, স্মিত হেসে, যেন গা ঘেঁষে বসতে পারি। দু'দিন বইতো নয়। 

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে, বিরিয়ানি। ভালো থেকো।

ইতি, বংপেন। 

Sunday, February 12, 2023

এঁটো-হাতের আড্ডা



রোববারের লাঞ্চটা ধীরেসুস্থে সেরে ফেলাই মঙ্গল, নবেন্দু সান্যালের ফোকাসটা সে'দিকেই৷ গুরুপাক হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই, বরং তা'তে খেতে বসে গল্পটা জমে ভালো৷ মাংসের হাড়ে, মাছের কাঁটায় কনসেনট্রেট করতে গিয়ে রোব্বারিয়ান আড্ডার ফ্লো নষ্ট-হয়না৷

তবে সে ক্ষেত্রে আলুভাজাটা দরকারি, সে'টা ব্যবহার হবে ডাল-ভাত সাফ হয়ে যাওয়ার পর৷ থালা-টেবিলের বাহার যেমনই হোক, নবেন্দুবাবু নিজের আলুভাজাকে সাতপুরনো অল্প তোবড়ানো স্টিলের বাটিতেই পছন্দ করেন৷ খানিকটা কন্ডিশনিং বোধ হয়; আলুভাজাকে বাহারি চীনামাটির প্লেটে দেখলেই মনটা সামান্য আড়ষ্ট হয়ে পড়ে৷ সর্বোপরি, নবেন্দুবাবু আলুগুলো খানিকটা মোটাদাগে কুচিয়ে নরম করে ভাজতে পছন্দ করেন; বিশেষত শেষ পাতে খাওয়ার জন্য৷

ডাল-ভাত সাপটে খেয়ে, চেয়ারে গা এলিয়ে, আলুভাজার বাটিটা টেনে নেওয়া৷ তারপর অতি ধীরেসুস্থে, একটা একটা আলুভাজার টুকরো টেনে নিয়ে, ছোটখাটো কামড়ে এগিয়ে যাওয়া৷ পাশে বসা মানুষজনের সঙ্গে গল্প জমে উঠবে৷ আঙুলে লেগে থাকা ডাল শুকিয়ে যত খটখটে হয়ে উঠবে, আড্ডা তত জমাট হবে। গোটা হপ্তা জিভ-পেটের দেখভাল হয় বটে, তবে মনের চুলে বিলি এই রোব্বারের লাঞ্চ শেষের এঁটো হাতের আড্ডায়৷

**

- নবেন্দুদা! কী হল, এ'বার উঠতে হবে তো।

- তিনটে বেজে গেছে নাকি পটা?

- সাড়ে তিনটে। ম্যানেজার চিল্লিয়ে উঠলো বলে৷ চারটে বাজলেই তো ভিড় বাড়বে আবার।

- আহ্৷ আড্ডার মেজাজটা সবে দানা বাঁধছিল রে..।

- চলো নবেন্দুদা, সামনের হপ্তায় ঘুরেই আসি দু'দিন। আমি আর তুমি৷ মায়াপুর বা পুরুলিয়া। সে'খানে দুপুরের খাওয়ার পর এঁটো হাতে দু'জনে বসে এক্কেরে সন্ধ্যে পর্যন্ত গল্প করব৷ এই মহাদেব হোটেলের রাঁধুনি হয়ে আর রোব্বারে খাওয়ার পাতের আড্ডা জমবে না৷

- চ' চ'। খদ্দেরদের হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে৷ সুকুমার একা হেঁসেল ম্যানেজ করতে পারবে না৷

তাপসবাবুর জর্দাপান



রাতের খাওয়া সেরে হাঁটতে বেরোনোটা তাপসবাবুর পুরনো অভ্যাস৷ সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে, গলি ধরে আধমাইল এগোলেই চৌরাস্তার মোড়৷ সে'খানে নির্মলের পানের দোকান। নির্মলকে একটা ইশারা ভাসিয়ে দিয়ে এগিয়ে যাবেন রেলের মাঠের দিকে৷ সে ইশারাটা একশো-কুড়ি জর্দা পান বানানোর সিগন্যাল৷
**
ঘাড় ঘুরিয়ে দোকানের পিছনের দেওয়ালে রাখা অজন্তা ঘড়িটার দিকে তাকালো নির্মল; সোয়া এগারোটা৷ তাপসদার আসার সময় হচ্ছে৷ সামনে দাঁড়ানো খদ্দেরকে ফ্লেক দিয়ে পানের পাতায় চুন মাখাতে শুরু করলে সে৷
**
রেলের মাঠটা এ সময় ফাঁকাই থাকে, চারপাশটা নিশ্চুপ। শুধু মাঝেমধ্যে রেলকলোনির ওয়াচম্যান সমরের হুইসল শোনা যায়৷ নিস্তব্ধতা চিরে ফেলা সেই কর্কশ হুইসেলের শব্দটা তাপসবাবুর কানে সয়ে গেছে। মাঠটা দু'বার চক্কর দিয়ে ফের বাড়িমুখো হন তাপসবাবু৷
**
একশো-কুড়ি জর্দা পানটা সেজে শালপাতায় মুড়ে দোকানের টিনের ছাতে রেখে দিল নির্মল৷ তারপর দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে তালা দিলে৷ রেলকলোনি থেকে সমরদার হুইসলের শব্দ ভেসে এলো৷ এ'বার যেতে হবে স্টেশনের দিকে, লাস্ট ট্রেনে বাড়ি ফেরা৷
**
কত বছর হয়ে গেল, নেহাৎ বড়সড় কোনও গোলমাল না হলে তাপসবাবুর এই হাঁটাহাঁটির নিয়মের এ'দিক-ও'দিক নেই৷ বৃষ্টিটৃষ্টি নামলে ছাতা মাথায় বেরিয়ে পড়েন, কিন্তু ডিসিপ্লিনে ফাঁকিটা বরদাস্ত করতে পারেন না তিনি। নির্মলের সাজা জর্দাপানটাও সেই ডিসিপ্লিনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
**
শিফট হ্যান্ডওভার করে ছুট্টে প্ল্যাটফর্মে এসে হাজির হয় সমর৷ নির্মলের সঙ্গে একই ট্রেনে তাঁর বাড়ি ফেরা৷ দু'জনেই ইঞ্জিনের দিক থেকে তিন নম্বর কামরাটায় ওঠে৷ কামরা বিলকুল ফাঁকা থাকে, কাজেই নির্দ্বিধায় বিড়ি ধরায় নির্মল, সমর কাউন্টারে ধরে।
- নির্মলদা, এই ব্যাপারটা বড্ড বেশিদিন টানা হচ্ছে না?
- কোন ব্যাপারটা।
- ওই যে, তাপস দত্তর জন্য তোমার রোজ জর্দাপান বানানো।
- ডিসিপ্লিনে নড়চড় ব্যাপারটা তাপসদা সইতে পারবে ভেবেছিস? কী রোয়াবটাই না ছিল ভদ্রলোকের।
- সইতে পারা না পারার প্রশ্ন আসছে কেন..।
- না হয় গতবছর খামোখা ট্রেনে কাটাই পড়ল। তা বলে কী সব শেষ ভেবেছিস? জাস্ট মরে গেছে বলে ওই ডিসিপ্লিন-পাগলা মানুষ হাঁটার রুটিন সহজে ছেড়ে দেবে ভেবেছিস?
- তুমি নিশ্চিত? ভদ্রলোক এখনও রাতের হাঁটা ছাড়েননি?
- আলবাত৷ নয়ত আমার দোকানের ছাতে রাখা পান রোজ রাত্রে গায়েব হয়ে যায় কেন?
- গোলমেলে ব্যাপারই বটে। কী জানো, শিফটের শেষ কয়েকটা হুইসল দেওয়ার সময় গায়ে কাঁটা দেয় বটে৷
***
নির্মল আর একটা বিড়ি ধরিয়ে জানালার শিকে মাথা ঠেকিয়ে কিশোরকুমারের গান ধরে৷ তাঁর সরল মুখের দিকে তাকিয়ে একটা চিনচিনে অপরাধবোধ টের পায় সমর৷ সামান্য একটা একশো-কুড়ি জর্দাপান রোজ বিনেপয়সায় খাওয়ার লোভ এমন পেয়ে বসেছে৷
শুধু একটা খটকা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনা রেলকলোনির ওয়াচম্যান সমর সাহা৷ নির্মল কেন বলে যে রোজ রাতে তার দোকানের ছাতে রাখা জর্দাপান গায়েব হয়ে যায়? সমরের ছুটি বা কামাইয়ের দিনগুলোতে সে পান গায়েব হবে কেন?
গায়ের কাঁপুনিটা পাত্তা না দিয়ে নির্মলের থেকে বিড়ির কাউন্টার চায় সমর।

অফিসঝড়, ইয়ারদোস্ত ও উপেন্দ্রকিশোর



হপ্তা দুই ঝড়ের মত গেল৷ অফিসের কাজে বিস্তর ছোটাছুটি, শহর ছেড়ে কিছুদিন দেশের অন্যপ্রান্তে পড়ে থাকতে হল; 'অফিস টীম' সে'খানে তাঁবু খাটিয়ে পড়ে রইলে৷ চাকুরেদের জীবনে যা আকচারই হচ্ছে৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে সে প্রজেক্ট-প্রজেক্ট হাওয়া ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে পড়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব৷ গেরিলা সৈন্যদলের মত 'টাইমলাইন'রা ফস্কে যেতে চাইবে; চাকুরেদের দায় সে'সব মিসড-ডেডলাইনের ল্যান্ডমাইন পাশ কাটিয়ে কাজ হাসিল করা৷
এই হুড়মুড়ের মধ্যে একটা জবরদস্ত ব্যাপার; বিদেশবিভুঁইয়ে সহকর্মীদের মধ্যে ইয়ারদোস্ত খুঁজে পাওয়া৷ যে সহকর্মীর সঙ্গে বহুবছরের "ইয়েস, নো, ওকে, ফাইন, গুডমর্নিং, গুডনাইট" সম্পর্ক, পরিচিত কিউবিকলগুলোর বাইরে এসে সে মানুষটাই রাতবিরেতে "আর ভায়া, আমি আছি তো" বলে কাজের ভার লাঘব করে দিচ্ছে৷ যে 'সিনিয়র' বাবুটিকে চিরকালই চিরতা-পিসেমশাই বলে দেখে এসেছি, সেই হয়ত সবার নার্ভাসনেস কাটাতে তস্য খাজা চুটকি বলে নিজেই নিজের তলপেট খামচে বিকট হাসির সুরে গড়াগড়ি খেয়ে চলেছে৷ যে মানুষটাকে চিরকাল স্প্রেডশিট উইজার্ড ছাড়া অন্য কোনো ভাবে চিনিনি, সে হোটেল-রুমের সরঞ্জাম ব্যবহার করে যে কফি তৈরি করছে সে'টাকে অনায়াসে জাদুপানীয় বলা যেতে পারে। মোদ্দা কথা হল, অফিসের সাদাকালো টীমগুলোই যখম হাড়জ্বালানে প্রজেক্টের পাল্লায় অফিসের বাইরে গিয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে পাড়ার-ক্লাব-আলো-করা ইয়ারদোস্তদের ফ্লেভার এসে পড়ে৷ লিঙ্কডইন যাই বলুক, সে ফ্লেভারের গুণেই কেঠো কাজের জন্যও প্রাণপাত করা যায়, ক্লান্ত হয়েও শ্যামল মিত্র গুনগুন করা যায়৷
তা, যাবতীয় হুড়মুড় সামাল দিয়ে, হাড়গোড় খোলনলচে ড্রাইওয়াশ হয়ে; ঘরের ছেলেমেয়েদের ঘরে ফেরত আসা। এমন ইস্তিরি-চালানো লম্বা অফিস-ট্যুরের পর বাড়ি ফিরে দরকার মন-মেজাজে মালিশ আর আত্মায় পালিশ৷ তার জন্য রয়েছেন উপেনজ্যেঠু, শনিবার সকালটা ভদ্রলোকের কোচিংয়ে প্রাণায়াম করে কেটেছে। দুপুরটা কাটবে টেস্টম্যাচ দেখে৷ শনিবার সন্ধ্যের মধ্যেই নিজেকে মনডে-ফিট ঘোষণা করতে পারব; এমনটাই আশা।

বংপেন-৭৫-য়ে ছিলেন যারা



আজ থেকে ছ'বছর আগে আমার কিছু লেখা নিয়ে একটা বই বেরোয়, পত্রভারতী থেকে। ত্রিদিববাবু একটা ব্লগারের লেখায় চট করে ওরকম 'কনফিডেন্স' দেখাবেন, সে'টা প্রথমে ভাবতে পারিনি। গোটা ব্যাপারটার জন্য বী-বুকসের এষাকে থ্যাঙ্কিউ বলতেই হয়। ত্রিদিববাবু কিশোরভারতীর সম্পাদক, পত্রভারতীর কর্ণধার; তার কাছে আমি "হে হে, স্যার, আমি ব্লগ লিখি" বলে বংপেন-ডট-নেটের লেখাপত্তর নিয়ে হাজির হব? মামারবাড়ি নাকি সূর্য মোদকের মিষ্টির দোকান? মোটের ওপর এষার জন্যই ব্যাপারটা ঘটেছিল। খানকয়েক লেখা পড়ে ত্রিদিববাবু বলেছিলেন, "ছাপব"। আমি মনে মনে বলেছিলাম, "যাচ্চলে, মাইরি"? ভদ্রলোক আমার লেখা পড়ে স্টাইল আর ভাষা নিয়ে দু'একটা জরুরী কথাও বলেছিলেন। আমার ধারণা সেই টিপসগুলো আমি ভুলে মেরে দিইনি।
রেয়া আহমেদ চমৎকার কিছু মোটিফ এঁকেছিল বইটার জন্য; ওঁর ব্যাপারে আগে সবিশেষ কিছু লিখেছি কিনা মনে নেই। তবে যে'টা মনে আছে, সে'টা বলি। আঁকার ব্যাপারে কিছু বলার আমি আর কে, ও যা এঁকেছিল, তা আমার দিব্যি লেগেছিল। তবে আঁকারও বাইরে, ওঁর প্রফেশনালিজমে মুগ্ধ হয়েছিলাম (বংপেনের জন্য ওর আঁকা একটা ছবি কমেন্টে রইল)। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছিল রিম্বিক, সে'টা অবশ্য বই ছাপা হয়ে বেরোনোর পর আমি জানতে পারি। আমার ছবি আর কেউ অত যত্ন করে কোনোদিন আঁকেনি। আমার মারাত্মক ভালো লেগেছিল; বাড়তি মেদ ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেছে, উড়ুউড়ু শ্যাম্পু করা চুল আছে, কোলগেট হাসি; সব মিলে তোফা। ও জিনিস আমি মাঝেমধ্যেই প্রোফাইল ফটো হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। তবে পরে অনেকবার মনে হয়েছে প্রচ্ছদের সাবজেক্ট হিসেবে অন্য কিছু থাকলেই ভালো হত। মানে বইটা কিছুতেই হাসির কাণ্ডকারখানা গোছের কিছু নয়; কিন্তু প্রচ্ছদ দেখে সে ভুল ধারণা হওয়ার একটা সুযোগ আছে বইকি। আর ইয়ে, শেষ ধুতি পরেছিলাম সম্ভবত বিয়েতে। পরেরবার রিম্বিককে বলতে হবে হাফ শার্ট, পাজামা পরিয়ে, হাতে ওই সাবেকী কলমের বদলে একটা রেনল্ডসের পেন ধরিয়ে দিতে।
আর বইতে অভিষেকদা (ক্রিকেট লিখিয়ে অভিষেক মুখার্জী) মুখবন্ধ লিখে দিয়েছিল, ওঁকে অবশ্য থ্যাঙ্কিউ বলার মানেই হয়না।
বইটায় গল্প রয়েছে, বিভিন্ন রকমের। প্রেম, মনকেমন, কলকাতা, খাওয়াদাওয়া, প্যারালাল পৃথিবী, আর ইয়ে, খুনখারাপি। আমি তো ব্লগার, গল্প কেন লিখি? ব্লগের তো জার্নাল হওয়ার কথা ছিল। অন্তত আমি ব্লগ শুরু করেছিলাম সে'কথা মাথায় রেখেই। ফার্স্ট পার্সনে যে একদম লিখিনা তা নয়, তবে একটা সময় দেখলাম আমার দরকার হয়ে পড়ল রকমারি চরিত্রের। আমি যেহেতু লেখক নই; পাঠকের ডিমান্ড মাথায় রেখে চরিত্র তৈরি করার ক্ষমতা বা সাহস - আমার কোনটাই নেই। আমি চরিত্র তৈরি করেছি নিজের স্বার্থে। কখনও হয়ত এমন একটা ফিচেল কথা মনে এলো, যে'টা স্মার্টলি সাজিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তন্ময় মুখুজ্জের নেই। এমন একটা অবজার্ভেশন শেয়ার করার ইচ্ছে হল যে'টা আমার মত ন'টা-সাতটা চাকরীর মানুষের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খায়না। অথবা এমন একটা মতামত ব্যক্ত করতে চাইছি যে'টায় বিশ্বাস করতে মন চাইছে কিন্তু টেবিল চাপড়ে সেই ওপিনিওনটাকে ফলাও করে বলার কনফিডেন্স বংপেনের নেই। তাই দরকার পরে বিভিন্ন চরিত্রের; যারা আমার হয়ে সে কথাগুলো সপাটে বলতে পারবে। তাঁদের দিয়ে সে কথাগুলো বলিয়ে নেওয়ার মধ্যেই অসীম তৃপ্তি। আমার হিউমর বোধ কি আদৌ সরেস? নিশ্চিত নই। তাই আমার এমন ধারালো মানুষ আর মজাদার সিচুয়েশন তৈরি করে হিউমর দাঁড় করাতে হয়। এমন কী, মাঝেমধ্যে ভূত, পকেটমার, ক্রিমিনাল, ফচকে রোবট; সবার হয়েই দু'কথা বলে দিতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, আমার আশেপাশে দেখা কিছু মানুষকে মিলিয়ে-মিশিয়ে একটা নতুন চরিত্র তৈরি করে আড্ডা দিতে। সেই চরিত্র সৃষ্টির ইচ্ছে থেকেই গল্প। তাই হয়ত আমার লেখায় বেশিরভাগটা জুড়েই কথোপকথন। আমার গল্পগুলো বায়োগ্রাফিকাল না হয়েও এক ধরণের জার্নাল।
সে'সব কিছু গল্প বাছাই করেই ছাপা হয় বংপেন ৭৫। ছাপার পরে যে
দু'চারজন শুভানুধ্যায়ী যে সে বই কিনেও ফেলবেন, সে'টাও ভাবতে পারিনি। যারা আস্কারা দিয়েছেন, মাঝেমধ্যে পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন, বানান বা অন্যান্য ভুল বারবার শুধরে দিয়েছেন; তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আর ইয়ে, এ'বারেও বইমেলায় পত্রভারতীর স্টলে থাকবে বইটা।

কমলা সুইটসের ভেজিটেবল চপ



টেস্টবাডঃ বুইলে ভাইটি, একটা ম্যাজিক টের পাচ্চি।
মনঃ কী রকম?
টেস্টবাডঃ মনে হচ্চে যেন নতুন ডানা পেইচি। উড়চি উড়চি উড়চি, উড়েই চলিচি।
মনঃ সে তো ভালো কথা!
টেস্টবাডঃ সিক্রেটটা জানতে চাইবেনা?
মনঃ নোলা ছুকছুকে আবার সিক্রেট কীসে৷ কী সাঁটালে?
টেস্টবাডঃ অমন গাম্বাট স্টাইলে ডায়লগ ছুঁড়বে না; কতবার এ'কথা বলিচি৷ নোলা চুকচুক, সাঁটানো; এ'সব আবার কী ধরণের ল্যাঙ্গুয়েজ? তুমি কি এমএলএ'র পোষা মাস্তান? শোনো, এই প্রবাসে মারাত্মক ভালো ভেজটেবল চপ পেইচি।
মনঃ এ'দিককার ভেজটেবল চপ? তা'তে কি আর সেই বাংলার ওম আছে?
টেস্টবাডঃ আরে আচে রে বাওয়া, ওম আচে, ওম পুরি আচে। হরি ওম আচে। চিত্তরঞ্জন পার্কের কমলা স্যুইটস থেকে খেলাম দু'পিস। অবিকল সেই ফেলে আসা পাড়ার চপের দোকান থেকে কেনা চপের স্বাদ ভাইটি। এক নম্বর৷ ছেলেবেলার সন্ধ্যে মনে পড়ে গেল৷ টিউশনি-স্যারের গাঁট্টা আর অঙ্কে গোল্লা মনে পড়ে গেল; এত অথেন্টিক সে চপের স্বাদ।
মনঃ পাড়া মনে পড়ে গেল? ছেলেবেলাও? এমন ধারালো সে চপের স্বাদ?
টেস্টবাডঃ নয়ত আর বলচি কেন..ও জিনিসে কামড় দিতে পারলে অহল্যাকে আর রামচন্দরের অপেক্কা করতে হতনা।
মনঃ কামড় শুধু চপেই পড়েনি দা'ভাই। পকেটেও পড়েছে।
টেস্টবাডঃ পকেটে কামড় পড়েচে? কী'রকম?.
মনঃ সাতাশ টাকার চপ।
টেস্টবাডঃ সাতাশ টাকায় এক জোড়া ভেজটেবল চপ খেলাম নাকি? ভায়া?
মনঃ সাতাশ টাকা জোড়া নয়, সাতাশটাকা পিস! চুয়ান্ন টাকায় দু'পিস চপ খেয়ে এলে দা'ভাই।
টেস্টবাডঃ ডানা ছাঁটা গেল। স্বাদে ভাটা পড়ল। কেমন দমে গেলাম৷ রোলটির দামে চপটি খেলাম ভাই?
মনঃ দমে যাওয়ার কী৷ বিদেশবিভুঁইয়ে থেকে, চপে ম্যাজিক কামড় দিয়ে ছেলেবেলার পাড়ায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ, ট্যাক্স দেবে না?
টেস্টবাডঃ নাহ্, ভেবে লাভ কী। বরং একটা বাউল ধরচি৷

বইমেলা ২০২৩ ও বংপেন



ছুটে চলেছি। 
ছুটে চলেছি৷
স্পীড বেড়েই চলেছে। অল্প আগে গ্যালপিং বর্ধমান লোকালকে চুক্কি দিয়ে মেনলাইন কাঁপিয়ে এগিয়ে গেলাম। এই স্ট্যামিনা ধরে রাখতে পারলে অলিম্পিক মেডেলের স্বপ্ন দেখাই যায়৷ কিন্তু ও'সব স্বপ্ন দেখার সময় কই?

আমি ছুটছি। ছুটছি৷ ছুটছি! ক্লান্তি বাড়ছে কিন্তু গতি কমছে না৷ এ'টাকেই কি লিঙ্কডইনদাদাদিদিরা এক্সেলেন্স বলে? 

তবে আমার থামার উপায়ও নেই। একদল মানুষ আমায় তাড়া করছেন৷ তাঁদের প্রবল তেলেবেগুন অবস্থা, খেপচুরিয়াস-মেজাজের পেট্রোল পেটে তারা ছুটে আসছেন৷ কারুর হাতে খাদিমের সাতপুরনো চটি, কারুর হাতে পচা ডিম, কেউ আবার আঙুল মুড়িয়ে ধেয়ে আসছেন; পেলেই গাঁট্টা মারার আশায়৷

এদের এত রাগ কেন? কারণ আমি জীবনে প্রথমবার একটা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করার চেষ্টা করেছিলাম। রীতিমতো মাইক লাগিয়ে, আবেগঘন স্টাইলে ডেলিভার করছিলাম৷ তারপর যা হয় আর কী, এ যুগে শিল্পী ও শিল্পীর কদর তো আর নেই। যাক গে। ওই খুনে বেরসিকদের প্রসঙ্গ থাক। ছুটতে ছুটতে আপনাদের বরং সেই ইন্সপায়ারিং পোয়েট্রিটা শুনিয়ে যাই:

"বইমেলায় পত্রভারতীর স্টল নম্বর 
একশো পঁচাত্তর

তা'তে আছে তা'তে আছে তা'তে আছে;
বংপেন পঁচাত্তর।

আরও আছে আরও আছে আরও আছে; বংপেন আরও পঁচাত্তর"।