Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2022

পুজোবার্ষিকী আর আইপিএল

বছর কুড়ি আগে আচমকা পুজোসংখ্যায় আগ্রহ কমে গেছিল। বছরভর অপেক্ষা করে থাকা, তারপর খান পাঁচেক বিভিন্ন পুজোসংখ্যা সংগ্রহ করে ধীরসুস্থে পড়ে ফেলা। মাস দুয়েক ধরে রসিয়ে প্রতিটা গল্প উপন্যাস কমিক্স উপভোগ করা। বেশ মনোগ্রাহী একটা প্রসেস ছিল সেই ছেলেবেলায়৷ প্রায় একটা বাৎসরিক উৎসব। কিন্তু হুট করে আগ্রহ কমে গেল৷ ভ্যাকিউম তৈরি হল। এরপর এলো আইপিএল। এক্কেবারে জমজমাট প্যাকেজ, বছর বছর দিস্তেদিস্তে পুজোর লেখা পড়ার মতই একগাদা ক্রিকেট ম্যাচ, পরপর-প্রতিদিন, মাস দুয়েকের কার্নিভাল।  খেলার মাঠ থেকে ফিরে আনন্দমেলা, শুকতারা, কিশোরভারতীর ওপর উপুড় হয়ে পড়ার মতই রোজ অফিস ফেরতা ক্রিকেট দেখতে বসা।  এই সাত-আট হপ্তায় খানিকটা ঘোর মিশে থাকে। কোন দল কেমন খেলছে; কারা চমকে দিচ্ছে, কারা ধ্যাড়াচ্ছে। ফ্যান্টাসি টীমে কাকে রেখে কাকে ভুলতে হবে। টুক করে অফিসের আড্ডায় তর্ক, বাসে-ট্রামে স্কোর আদানপ্রদান। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ মিস করা যাবে না, কাজেই দু'একটা সন্ধ্যের কাজ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য মজবুত কাল্পনিক কৈফিয়ৎ তৈরি করে রাখা৷ আর দু'একটা হোয়্যাটস্যাপ গ্রুপে ঠিক এই মাসখানেক ধরে দেখা যায় 'হাইভোল্টেজ স্পার্ক''। আইপিএলের একটা ম

গুলচন্দ্র গোলন্দাজ বনাম গুলশাহেনশাহ গুলগুলি

'অন্দাজ অপনা অপনা'র সেই অনাবিল দৃশ্য।  অমর আর প্রেম দু'জনেই এন্তার গুল দিচ্ছে, প্রাণপণে যাতা বলে চলেছে৷ গুলের গণ্ডার মরে কাঠ আর বাতলের ভাণ্ডার সাফসুতরো৷ সবচেয়ে বড় কথা দু'জনেই বুঝতে পারছে যে দু'জনেই গুলবাজ; "আমি যেমন গুলচন্দ্র গোলন্দাজ, অন্যজনটিও গুলশাহেনশাহ গুলগুলি"৷ সেই সিনেমারই ভাষায় বলতে গেলে, দু'জনের মনের মধ্যেই ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে এক কাব্যিক উপলব্ধিঃ; "শালা! ম্যায় ভি ফেকু অউর ইয়ে ভি ফেকু"। কিন্তু কেউই পিছু হটছে না৷ ক্লান্ত হচ্ছে না৷ লজ্জায় পিছিয়ে আসছে না৷ বরং গুলের তেজ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে৷ ও'দিকে গল্পের গরু ইউক্যালিপটাস গাছ পেরিয়ে মনুমেন্টের ডগায় পৌঁছে জর্দা পান চিবোয়৷ এ'রকম পরিস্থিতি শুধু বলিউডি কমেডিতেই থাকে ভেবেছেন? আদৌ নয়৷  অফিস মিটিংয়ে ভোম্বলদার বস তার টীমমেম্বারদের মোটিভেট করতে চেয়ে ফস করে একটা খটমট জার্গন বলে ফেললেন। বলে ফেলেই মনে মনে জিভ কাটলেন এই ভেবে যে একটা ফালতু কথা বেরিয়ে গেল যার না আছে মাথা, না আছে মুণ্ডু৷ কিন্তু রণেভঙ্গ দেওয়া অ্যাটিচিউড নিয়ে টীমলীডার হওয়া যায়না৷ অতএব জান লড়িয়ে দিলেন বস, নিজের গুল-জারগনকে নব-জাগরণে

বংপেনের পনেরো বছর

পনেরো বছর আগে, ঠিক আজকের দিনে (১৯শে মে, ২০০৭) বংপেনের প্রথম 'পোস্ট' 'পাবলিশ' হয়েছিল৷ লেখালিখির মানুষ নই আদৌ, আগ্রহ ছিল ব্লগ ব্যাপারটাকে বোঝার৷ অমন টপ করে নিজের ওয়েবসাইট খুলে বসা যায়৷ যা খুশি লেখা যায়, ছবি আপলোড করা যায়৷ ব্যাপারটা রীতিমতো থ্রিলিং মনে হয়েছিল৷ তখন আমি সামার ইনটার্নশিপ করতে কলকাতায়৷ মাস দুয়েকের জন্য সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের পুরনো মেসবাড়িতে ফিরে গেছি৷ সেই সময়ই এই আগ্রহটা দানা বাঁধে আর সূর্য সেন স্ট্রিটের একটা সাইবার ক্যাফেতে বসে ব্লগারে রেজিস্টার করি৷ প্রথমে ভেবেছিলাম ইংরেজিতে লিখব৷ পরীক্ষার খাতার বাইরে একদমই বাংলায় লেখার অভ্যাস ছিল না৷ ওই যে বললাম, উদ্দেশ্য ছিল ব্লগ ব্যাপারটাকে বোঝার৷ ব্লগের বিষয় কী হবে, সে'খানে কী থাকবে; সে'সব ভাবনা নেহাতই অপ্রয়োজনীয় ছিল৷  বাংলা ব্লগের সংখ্যা তখন নেহাতই হাতে গোনা৷ কিন্তু তদ্দিনে অনেকেই ইংরেজিতে ব্লগ লিখতে শুরু করেছেন৷ আর সে'সব লেখা খুঁজেপেতে পড়তে বেশ লাগছিল৷ মিডিয়ামটা যে ছাপার থেকে একটু স্বতন্ত্র, পাঠক হিসেবে সে'টা বুঝতে অসুবিধে হয়নি৷  তখনও আমরা ফেসবুক ট্যুইটার দেখিনি, ছিল সবেধন নীলমণি অর্কুট। অর্কুটের স্ক্র‍্

সোনপাপড়ি পিউরিটানের ব্যথা

ওর ওপর ভীষণ বিরক্ত বোধ করছিলাম৷ একটা পেল্লায় বাক্স সোনপাপড়ি এনেছে, ভালো কথা৷ সোনপাপড়ি খুবই ভালো জিনিস৷ অনায়াসে আইপিএলের চার-ছয়-উইকেটের তালে তালে উড়িয়ে দেওয়া যায়৷ কাজেই সে জিনিস এনে ভুল করেনি৷ ভুল করেছে একটা বিশ্রী ফ্লেভার নিয়ে এসে৷ এলাচ ফ্লেভারের সোনপাপড়ি! এর কোনও মানে হয়?  প্রথম কামড় দিয়েই টের পেলাম গোলমালটা৷ ফুরফুরে সোনপাপড়ির সেই পিওরিটিটাই নেই৷ আরে সবকিছুতে রিমিক্স রিমেক ঝঙ্কার বিটস বা আনপ্লাগড ব্যাপারস্যাপার আনলেই হল নাকি? এক কামড়েই জিভটা কেমন যেন হয়ে গেল৷ ধুস৷ গোটা চার পিস খাওয়ার পর টের পেলাম যে মেজাজটাই গেছে ছাই খিঁচড়ে৷ অগত্যা ঢকঢক করে খানিকটা জল খেতে হল জিভের নিউট্রালিটি ফেরত আনতে৷ খানিকটা গাভাস্কারের আইপিএল কমেন্ট্রিও শুনতে হল, মন থেকে এলাচ-সোনপাপড়ির ইনফ্লুয়েন্স দূর করতে৷  এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল৷ অল্প গোলমাল হয়ে গেল যখন টের পেলাম জল-গাভাসকারের কম্বিনেশনেও জিভের একদিকটা চ্যাটচ্যাটে হয়েই আছে৷ সে'টা একটা অস্বস্তি৷ এলাচ সোনপাপড়ির বাক্সটা তখনও বন্ধ করা হয়নি। ভাবলাম চ্যাটচ্যাটে ব্যাপারটা জিভে ইউনিফর্মলি ডিস্ট্রিবিউট করে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ৷ অতএব আরও কয়েক পিস সোনপাপড়ি খরচ হয়ে গেল

চাংবুমজার মোড়ল

- তা'হলে এই তোমাদের ধর্ম, মোড়ল? - আমরা তো তোমাদের থেকে ধর্ম-অধর্ম বুঝব না ইঞ্জিনিয়ার সাহেব৷ বারবার তোমাদের বলা হয়েছে, এ গাঁ পর্যন্ত পুল বানাতে পারবে না তোমরা৷ নিয়মিত তোমাদের নেতা-আমলা সক্কলকে বারণ করা হয়৷ তা সত্ত্বেও এই বজ্জাতির কী মানে? - চাংবুমজা গাঁয়ের মানুষের পক্ষে যে'টা মঙ্গল, তা'তে তোমাদের এত আপত্তি কীসের? পাহাড়ের আর পাঁচটা গাঁয়ে ব্রিজ পৌঁছোয়নি? সে'খানে পিচের রাস্তাঘাট তৈরি হয়নি? হাসপাতাল বসেনি? তা'তে মানুষের উপকার হয়েছে৷ তারা সুযোগসুবিধা পেয়েছে, আগের চেয়ে ভালো আছে৷  - ব্রিজ৷ রাস্তা৷ স্কুল৷ হাসপাতাল৷ বটেই তো৷ সে'সব গাঁয়ে না আনলে মানুষের মধ্যে শয়তানি, রোগ, আর হাজার রকমের পাপ বয়ে আনবে কী করে! শোনো ইঞ্জিনয়ার, দেওতার আশীর্বাদে আমাদের গাঁয়ের আশি বছরের বুড়োরাও দিনরাত মেহেনত করে, আমাদের কাচ্চাবাচ্চারা সৎপথে আনন্দে বড় হয়৷  - তোমার নাতিই গতবছর দু'দিনের জ্বরে মারা গেল না? একটা হাসপাতাল থাকলে, নিদেনপক্ষে ব্রিজটা থাকলে, শিশুটাকে বাঁচানো যেত৷ স্রেফ নিজের জেদের বশে গোটা গাঁয়ের মানুষের ক্ষতি করছ তুমি মোড়ল।  - আমার জেদ নয় ইঞ্জিনিয়ার সাহেব৷ দেওতার নিদান৷ ও পুল যেই তৈর

এজেন্ট বর্ধমান

- আপনি তো ক্যালকেশিয়ান দেখছি৷ - বর্ধমান৷ - ওই হল৷ হিমাচলে বসে পুরো বেঙ্গলটাই তো ক্যালক্যাটা৷ - আপনি প্লুটোতে বসে থাকলেও সে ধারণাটা ভুল৷ - প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড৷ আপনি কি এ'খানে উইথ ফ্যামিলি? - না৷ একাই৷ একটা জরুরী কাজে৷ - ও মা। হিলস্টেশনে আবার জরুরী কাজ কীসের মশাই৷ তবে আমিও একাই এসেছি৷ গত বাইশ বছর ধরে সোলো ট্র‍্যাভেল করছি বুঝলেন৷ গ্র‍্যাজুয়েশনের পর নিজের জমানো যৎসামান্য পকেটমানি নিয়ে গোপালপুর গেছিলাম৷ অবভিয়াসলি একাই৷ সেই শুরু৷ বিয়েথাও হল না৷ আমার সংসার বলতে এই ট্র‍্যাভেলিং৷  - বাহ্৷ ভালো কথা।  - তা, আপনার কেসটা কী? তিনদিন ধরে দেখছি এই ম্যালে এসে বসছেন৷ বই পড়ছেন৷ অফিসের ব্যস্ততা নিশ্চয়ই নেই৷ ইয়ে, প্লীজ ফরগিভ মাই কিউরিওসিটি৷  - আসলে কী জানেন,  আমার কাজের নেচারটা একটু গোলমেলে৷ অসীম ধৈর্য ছাড়া আমার গতি নেই৷ তবে হ্যাঁ, আমি ছুটি কাটাতে আসিনি৷ এই বেঞ্চিতে বসে দিনের পর দিন কাটাচ্ছি বটে। ওয়েল অবজার্ভড৷ তবে মোটেও ঝাড়াহাতপা নই।  - আপনি স্পেশ্যাল এজেন্টটেজেন্ট নাকি? ডিটেকটিভ? - খানিকটা দু'টোই। আমার কাজে ডিটেকশনের একটা আলগা ভূমিকা আছেই৷ ভিড়ের মধ্যে থেকে সঠিক মানুষ চিনে বের করা৷ তার গতিবিধি মেপে

ইজ্জৎ

- কাকা, দু'জন দেখা করতে এসেছে৷ - কী চায়, টাকাপয়সা? খুচরো দু'চারটাকা দিয়ে বিদেয় কর৷ উঠোনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দিসনি৷ - না না, টাকা নয়..। - এই সেরেছে৷ উপকার করতে বলবে না তো? দেখিস বাবা৷ মিষ্টি কথায় বুঝিয়ে বল পরশু দুপুরে আসতে, উপকার রেডি রাখব৷ - ও মা! কাল থেকে তো তুমি একমাস নেই কাকা৷ তীর্থফীর্থ কোথায় যাবে না? - আহ্! সে জন্যই তো পরশু আসতে বলছি৷  - অ৷ কিন্তু তারা উপকার চাইতে আসেনি তো। - সর্বনাশ৷ আলাপ জমাতে এসেছে? কেমন-আছেন-আমি-ভালো-আছি মার্কা হাড়জ্বালানের দল? শোন, ও'দের দু'চারদানা নকুলদানা আর আধগেলাস জল দিয়ে কাটিয়ে দে। যত আপদ। - আরে না গো কাকা! সে'সব নয়৷ - তবে? ওদের মতলবটা কী? - ওরা সম্মান চাইতে এসেছে। - কী চাইতে এসেছে? - সম্মান৷ ইজ্জৎ।  রেস্পেক্ট। - বাঁশপেটা কর ওদের৷ এখুনি৷ ওরে কে কোথায় আছিস! আন, কাটারি আন৷ বঁটি আন৷ জুতো, লাঠি, মুগুর, সেফটিপিন, গীতবিতান; হাতের কাছে যা পাবি নিয়ে আয়৷ রাস্কেলদের সাহস দেখো, সম্মান চাইতে এসেছে৷ এদের চামড়া গুটিয়ে দে, সম্মান আদায়ের শখ যেন পুরোপুরি মিটে যায়৷ বুঝেছিস?

সানডে অপটিমিস্ট

- ভাইটি। - ফ্লেক? - আজ নয়৷  - কেন কাকা? সিগারেট কমাচ্ছেন? - তা নয়৷ তবে এ'সন্ধেয় ফ্লেকবাজি চলবে না হে।  - এ সন্ধেটা কী'রকম? - আজ সন্ধেবেলায়, বুঝলে হে; একটা পিকিউলিয়ার মনকেমন অনুভব করছি৷ - কী'রকম মনখারাপ কাকা? হজমে গোলমাল?  - আরে না না৷ ডাইজেস্টিভ ট্র‍্যাকের বাইরেও জীবন আছে৷ এই মনকেমনের নেচারটা স্পিরিচুয়াল৷ - বুঝিয়েই বলুন না। - আজ সন্ধে থেকেই, বুঝলে.."আগামীকাল বৃষ্টি হবে" টাইপের মনকেমন৷  - যাচ্চলে৷ কাল নামবে নাকি? - গুগল বলছে কাঁচকলা৷ কিন্তু মন বলছে সোমবারটা জাস্ট ধুইয়ে দেবে৷ তবে ঝেঁপে নামবে দুপুরের দিকে৷ ফাইলের ঢিপির ও'পারের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখব ঝাপসা কাচ৷ অফিস থেকে বেরোনোর আগেই অবশ্য ধরে যাবে। ফেরার সময় বাতাসে শুধুই মিঠে আমেজ৷ অটোর সাইডে বসলে মনে হবে ফ্লাইং কার্পেট৷ রোলের দোকানের সামনে দাঁড়ালে মনে হবে চিৎকার করে বলি; তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার জোড়া রোলই চাই।  - তা কাকা, সোমবারের বৃষ্টিতে রোব্বারে মনখারাপ কেন? - আরে ধের ছাই কাঁচকলা৷ মনখারাপ আর মনকেমন এক নয়৷ মনখারাপ চিমটি, মনকেমন সুড়সুড়ি৷ মনখারাপ খবরের কাগজ, মনকেমন আবোলতাবোল৷ মনখারাপ "ভোট দিন ভোট দিন&quo