Skip to main content

Posts

Showing posts from April, 2022

আশিসবাবুর খাওয়াদাওয়া

অনেকের মতই আমিও প্রচুর খাওয়াদাওয়ার ভিডিও দেখি৷ এবং বাকিদের মতই বহু ধরণের খাওয়াদাওয়ার ভিডিও দেখে থাকি৷ কেউ জাম্বিয়ার রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ভালো মাংসের পদের খোঁজ করছেন, কেউ থাইল্যান্ডের কোনও গ্রামে বসে বিদঘুটে নামের কিছু চেখে দেখছেন, কেউ পাকিস্তানের গলিঘুপচি চষে দুর্দান্ত সব কাবাবে মনোনিবেশ করছেন। আবার কেউ হরিদ্বারের পুরি তরকারি সাজিয়ে গুডমর্নিং বলছেন বা বাঁকুড়ার আশেপাশের কোনও ছোট্ট ভাতের হোটেলের রুই মাছের ঝোল আর মোটা চালের ভাত খেয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন৷ অনেক ব্লগার নিজগুণে সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছেন, অনেকে তেমন 'পপুলার' না হয়েও মনের সুখে ভিডিও রেকর্ড করছেন আর আমাদের তৃপ্ত করছেন। এ'ছাড়া আছেন এমন অনেক সেলিব্রেটি যারা পথে নেমেছেন ভ্লগারের ভূমিকায়৷  আশিস বিদ্যার্থী ওই তৃতীয় ক্যাটেগরিতে পড়েন৷ এবং ইদানিং আমার বড় প্রিয় হয়ে উঠেছেন৷ ভদ্রলোকের সারল্যের তুলনা নেই৷ চেটেপুটে খাচ্ছেন, সাপটে প্লেট থালা সাফ করছেন, আর যে'খানে সে'খানে থেবড়ে বসে পড়ছেন৷ এ সমস্ত ভিডিও শ্যুট করার আগে নির্ঘাৎ খানিকটা আগাম পরিকল্পনা থাকেই। তবে ভদ্রলোক গোটা প্রসেসটা যে'ভাবে উপভোগ করেন, তা'তে ভালো না লাগার কোনও প্রশ

বুলডোজার রাখাল আর মায়ের হারমোনিয়াম

১।  - মিনিস্টার! একটা খবর ছিল..। - দিস ইজ আনপার্ডনেবল চীফ। - দেখুন মিনিস্টার, আমি যে কী বলব..। - আপনাদের লজ্জা করে না? এত বড় একটা স্ক্যান্ডাল, এত বড় একটা সিকিউরিটি থ্রেট তৈরি হয়েছে স্রেফ আপনাদের ক্যাবলাকান্ত সিস্টেমের জন্য৷ আর এখন আপনি ভেবে পাচ্ছেন না যে কী বলবেন? - আসলে গোটা ব্যাপারটাই এত মিস্টিরিয়াস..। - তবে আর কী! দেশ গোল্লায় যাক। আর আপনারা, সেনাবাহিনীর কর্তারা; ব্যাপারটাকে মিস্টিরিয়াস বলে ঝাড়া-হাত-পা হয়ে ফুর্তি করুন।  - দেখুন স্যার..। ব্যাপারটা সত্যিই ব্ল্যাক ম্যাজিকের মত..।  - মাই ডিয়ার আর্মি চীফ গোবর্ধন গলুই৷ আমাদের ন্যাশনাল আর্মির গর্ব, আপনাদের দ্য গ্রেট বুলডোজার রেজিমেন্টের সমস্ত বুলডোজার কোনও রকম হিউম্যান ইন্টারভেনশন ছাড়া, নিজেরাই ব্যারাক থেকে বেরিয়ে পড়েছে৷ শহর জুড়ে হাহাকার..অথচ আপনারা ক্লুলেস? - দেখুন মিনিস্টার, এই বুলডোজারগুলো অত্যাধুনিক৷ আপনি তো জানেন, গতবছরই এ'রকম বারোশো ইউনিট কেনা হল৷ সেল্ফ ড্রিভেন, রিমোট কন্ট্রোলড৷ কিন্তু তাই বলে তাদের তো আর নিজস্ব মগজ নেই৷ আমাদের কন্ট্রোলরুম থেকে হিউম্যান ইন্সট্রাকশন না গেলে তাদের এক ইঞ্চিও নড়ার কথা নয়। - বেশ৷ তাই যদি হবে তা'হলে

রবি ঘোষের বই

আত্মজীবনী লেখায় বাঙালিদের যে কেন এত অনীহা কে জানে৷ রবি ঘোষের মত মানুষ যদি নিজের ভাষায় নিজের কাজকর্মের গল্প বিশদে লিখে যেতেন, বাঙালি বর্তে যেত৷ ওঁর মত গুণী মানুষদের ক্ষেত্রে যে'টা সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ওঁদের কাজের ডিসিপ্লিন আর প্যাশন সম্বন্ধে পড়ে মুগ্ধ হওয়ার জন্য সিনেমার ছাত্র হওয়ার দরকার পড়েনা৷ বরং খানিকটা পড়েই মনে হয়; ইস, রবি ঘোষ যে'ভাবে অভিনয়ের গ্ল্যামারহীন দিকগুলোকেও অনুগত ছাত্রের চোখ দিয়ে দেখছেন, তেমন ভাবে আমিও যদি অফিসের পেন্ডিং ফাইলগুলো ঘাঁটতে পারতাম; তা'হলে রোজকার কাজটা কতটা উপভোগ্য হয়ে উঠত। তুলনাটা হয়ত বাড়াবাড়ি হল৷ তবে বক্তব্য হচ্ছে রবি ঘোষ স্তরের শিল্পীদের নির্বাণলাভের জন্য  গ্যালারি থেকে ভেসে আসা উচ্ছ্বাস আর হাততালিটাই শেষ কথা নয়৷ কাজের ডিসিপ্লিনে ডুবে থাকাটাই সম্ভবত তাঁদের মূল ইনসেন্টিভ৷ আমার মত মানুষ, যার শিল্প জগতের সঙ্গে এতটুকু সুতোর যোগই  নেই, যদি শিল্পীদের প্যাশন সম্বন্ধে একটা আইডিয়া পেতে চাই; তা'হলে রবি ঘোষের মত স্টলওয়ার্টদের লেখাই কুড়িয়ে-কাছিয়ে পড়তে হবে৷ কুড়িয়ে-কাছিয়ে ভদ্রলোকের খুচরো লেখাগুলো জড়ো করার দুরূহ কাজটা করা হয়েছে  "আপনমনে" বইটাতে৷ সম্প

বন্দুকবাজ বাঘ উত্তমকুমার

লালমোহন গাঙ্গুলির বোম্বাইয়ের বোম্বেটে উপন্যাস অবলম্বনে যে বলিউডি সিনেমা তৈরি হয়েছিল সে'টার নাম দাঁড়িয়েছিল 'জেট বাহাদুর'। নামের মধ্যে স্পীড, দুঃসাহস আর অ্যাডভেঞ্চার সবই ছিল৷ যাকে বলে থ্রিসিক্সটিডিগ্রি অ্যাপিল৷ পরিচালক পুলকবাবু নিশ্চিত ছিলেন যে দর্শক স্রেফ নামের জোরেই অর্ধেক ঘায়েল হবে৷  তা এদ্দিনে সেই জেট বাহাদুরকে টেক্কা দেওয়ার মত নাম চলে এসেছে বাজারে৷ অবশ্য সিনেমায় নয়, বইয়ে। তবে নামটা যে কী সাংঘাতিক সিনেম্যাটিক। সেই নামের মধ্যে কী নেই? সুপারহিরোর ঘ্যাম? আছে৷ রোম্যান্টিক আবেদন? আছে। ঢিশুম ঢিশকাঁও মার্কা অ্যাকশন? ইয়েস স্যার।  রূপকথা? তাও আছে৷ মানে যা যা আপনাকে আকৃষ্ট করতে পারে; সে সমস্ত উপাদান বইয়ের নামের মধ্যেই আছে। "উত্তমকুমারঃ এক বন্দুকবাজ বাঘের গল্প"।  এ'রকম রক্তারক্তি নাম দেওয়ার পর সেই থ্রিল গোটা গল্পে ধরে রাখা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু রোহণ কুদ্দুসের সাদামাটা ভালোমানুষ চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে মগনলালের প্রাইভেট সার্কাস মাত করে দেওয়া এক খতরো কা খিলাড়ি। সেই খিলাড়িপনা দিয়েই এই গল্প জেটবাহাদুরত্ব অর্জন করেছে। স্পয়লার দেওয়া অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস৷ তবে যে স্পয়লারে

লুচি ও লঙ্কা

ভালোবাসাবাসি নিয়ে শুধু সাহিত্যিকরাই উঁচু গলায় কথা বলবেন ও জলদগম্ভীর ভাষায় লিখবেন; তেমন মনোপলি বরদাস্ত করা যায়না৷  কেউ ভালোবাসবেন মোটা দাগে, অমিত-লাবণ্যের ডিসিপ্লিনে তাঁদের বাঁধা চলবে না৷ কেউ গদগদে হয়ে পড়বেন বিটকেল হ্যা-হ্যা হাসিতে, স্মিত ক্লাসিকাল হিসেবকিতেবে তাদের মন গলবে না৷  কারুর প্রেমে থাকবে শুধুই বিসর্জনের বেহিসেবি কোমর নাচানো ব্রেকড্যান্সে, হাইক্লাস ছন্দমিলে তারা কলুষিত হবেন না, কাব্যের নিয়মে তাদের ঘ্যাম বিঘ্নিত হবে না৷  তাদের হয়ে ভালোবাসার দু'টো জরুরী থাম্বরুল আপনার টাইমলাইনে গছিয়ে গেলাম৷ প্রেমে বিশ্বাস থাকলে এ নিয়মি দু'টোকে অবহেলা করবেন না৷ প্লীজ৷  প্রথমত, লুচি গুনতে নেই৷ পাত পেড়ে বসে লুচির হিসেব রাখতে নেই৷ লুচিকে অঙ্কে বেঁধে ফেললেই সর্বনাশ। দ্বিতীয়ত, ভাজাভুজি বা তরকারিতে ফালা করে দেওয়া লঙ্কাদের না চিবিয়ে সাইড করতে নেই৷ নেই৷ বিশ্বাস করুন৷ মাইরি।

১৫২৯

- শুভ নববর্ষ ভায়া৷  - উফ, এই তুমি পিলে চমকে দেওয়া বন্ধ কর মাইরি৷ আরে বাবা আত্মা বলে কি নক করতে নেই? মিনিমাম ভদ্রতা না জানলে চলবে কেন? দুম করে শোওয়ার ঘরের ইজিচেয়ারে এসে বসাটা জাস্ট অসভ্যতা নয়? - তুমি ভাই জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করো৷ মড়াটি হয়েও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছ, নলিহাড় চিবিয়ে ছাতু করছ, হপ্তায় তিনদিন রেস্টুরেন্ট ঘুরে ঘুরে প্রেম করছ; আর আমায় দ্যাখো৷ পয়লা বোশেখের দিনে ফ্যাফ্যা করে এ'দিক সে'দিক উড়ে বেড়াচ্ছি৷ - শরীর বয়ে বেড়ানোর ঝামেলা তো পোয়াতে হচ্ছেনা তোমায়৷ সংসার রোজগারের টেনশনও নেই৷ ফুড়ফুড়ুৎ করে উড়ে বেড়াও, গান গাও আর আমার কানের কাছে এসে টিপ্পনী ঝাড়ো। তোমারই তো সুখ ভাই৷ - আর কদ্দিন আমায় বাইরে ফেলে রাখবে বলো৷ তুমি তো আর অক্কা পাওনি৷ খামোখা আমায় সাইড করে এমন জম্বি হয়ে ঘুরে বেড়িয়ে কী লাভ৷  - এই শুরু হলো৷ বলি জ্ঞান দেওয়া শেষ হলে মানে মানে কেটে পড়ো৷ আমি লুচি তরকারি খাবো৷ শেষপাতে ক্ষীরকদম৷  - আমায় ফিরিয়ে নাও ভাই৷ আত্মা-লেস হয়ে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো৷ খাওয়াদাওয়া, মাইনে, দশ রকমের বারফাট্টাই; এ'সব করে আর কদ্দিন? ফ্রি উইল তো নেই৷ তুমি তো বাঁধা পড়ে আছো৷ কন্ট্রোলড বট! আমায় ফিরিয়ে নাও৷

শক্তিগড় অপটিমাইজেশন থিওরি

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে হুশহাশ বেরিয়ে গেলেই হল নাকি৷ শক্তিগড় এলে আপনাকে দাঁড়াতেই হবে৷ সঙ্গে জ্ঞানগর্ভ জ্যেঠু বা পিউরিটান পিসেমশাই থাকলে সেই পিটস্টপটা আরও মজাদার হয়ে উঠবে৷ তাঁরা হাইক্লাস ল্যাংচা সম্বন্ধে একটা ছোটখাটো লেকচার দিয়ে জানান দেবেন যে হাইওয়ের পাশের এইসব 'পেটি' দোকানের ল্যাংচাকে আদৌ পাত্তা দেওয়া উচিৎ নয়৷ তারপর আপনার অর্ডার দেওয়া  ল্যাংচাকে ক্রিটিসিজিমে ফালাফালা করতে করতে নির্দ্বিধায় উড়িয়ে দেবেন৷। এরা মিহিদানা সম্বন্ধেও তেমনই একটা চমকদার অ্যানালিসিস তুলে ধরবেন এবং বলাই বাহুল্য যে স্যাট করে মিহিদানার প্লেটটা সাফ করে আলাদা এক ডিবে প্যাকও করিয়ে নেবেন৷ আর তাঁরা এও জানাবেন যে সীতাভোগ ক্লাসিকাল মিষ্টির ব্র‍্যাকেটে পড়েইনা৷ আবারও আপনি অবাক হবেন দেখে যে সেই অখাদ্য সীতাভোগকে তাঁরা কী'ভাবে আলগোছে কাছে টেনে নিয়েছেন গল্পগুজবের আড়ালে৷  যাকগে৷ জ্যেঠু-পিসেমশাইদের বাদ দিয়ে বলি। শক্তিগড়ে হাইওয়ের পাশে না দাঁড়ানোটা অন্যায়৷ দেশে ডিসিপ্লিন বলে এখনও তো কিছু আছে, না কী! দেখবেন, গাড়ির ইঞ্জিন কেমন আপনা থেকেই ঢিমে হয়ে আসে শক্তিগড় পৌঁছনোর কয়েক মাইল আগে থেকে৷ আর বাসটাস হলে তো থামতেই হবে, পঞ্জ

প্রিয় রেস্টুরেন্ট

আমার অন্যতম প্রিয় 'রেস্তোরাঁ'; এই বহু ঘষটানো গাড়িখানা৷  দোকান থেকে খাবারদাবার নিয়ে এসে ধীরেসুস্থে সাজিয়ে বসা৷ ব্যাকগ্রাউন্ডে গাড়ির স্টিরিওতে নিজের প্রিয় প্লেলিস্টের গান (মোবাইলে ক্রিকেট চললে তো কথাই নেই)৷ আর হ্যাঁ, ভ্যাপসা গরম বা ধুলোর উপদ্রব না থাকলে আর একটা সুবিধে আছে; চাইলেই জানালার কাচ নামিয়ে 'ওপেন এয়ার অ্যাম্বিয়েন্স' ৷ এর ওপর ধরুন ঘ্যাম রেস্টুরেন্টের মতই নরম হলদেটে আলো৷ আর এমন আরামদায়ক সুপরিচিত চেয়ার অন্য কোথাও পাওয়া সহজ নয়, সীটে ঠ্যাং তুলে বসলেও কেউ হা-হা করে উঠবে না৷ সুড়ুৎ-সড়াৎ করে আঙুল চাটলেও কেউ বাঁকা চোখে তাকাবেনা, এটিকেটের খোঁটা দেবে না৷ মেজাজটাই আসল রাজা, মেজাজ খোলতাই হওয়াটাই তো ফাইন ডাইনিংয়ের মূলে৷  সবচেয়ে বড় কথা; এই রেস্টুরেন্টের একমাত্র ওয়েটার হিসেবে আমি নিজেকে দারুণ খাতিরযত্ন করে থাকি৷ সর্বক্ষণ মুখে হাসি, সর্বক্ষণ তৎপর। সময়মত নিজেকে টিস্যু পেপার এগিয়ে দেওয়া, চেবানো হাড় ফেলবার ঠোঙা এগিয়ে দেওয়া; সব ব্যাপারেই আমি অত্যন্ত চটপটে৷ আর হ্যাঁ, গাড়িতে মৌরিমিছরি গোছের মুখশুদ্ধিরও একটা স্টক মেন্টেন করা থাকে।  একসময় যখন সেলসের কাজে বিহারের গ্রামেগঞ্জে ঘোরাঘুরি করতাম,

মাধববাবু আর শনিবারের চা

দুপুরের মেনুতে মাংসভাত থাকার ফলে যা হওয়ার তাই হলো৷ ভাতঘুম হিসেবের বাইরে চলে গেল। সন্ধে সোয়া সাতটা নাগাদ চোখ কচলাতে কচলাতে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল বসালেন মাধব চ্যাটার্জী৷  সসপ্যানে জল ফুটছে। মাধববাবু দু'কলি কিশোরকুমার গুনগুন করতে শুরু করেছেন৷ দুনিয়াটা ভীষণ রঙিন৷  চায়ের কাপ তৈরি৷ আদা-চায়ের প্রাণকাড়া সুবাসে ঘর গুলজার। কিশোর ততক্ষণে মাধববাবুর গলা ছেড়ে বসার ঘরে রাখা ব্লুটুথ স্পীকারে গিয়ে সেঁধিয়েছে৷ এমন সময় কলিংবেলের ট্যাঙট্যাঙানিতে রোম্যান্সের সুতো গেলো কেটে৷ বিকেলের চায়ের সঙ্গে অযাচিত আলাপটালাপ ভদ্রলোকের নিতান্তই না-পসন্দ৷  দরজা খুলে একটা ছোটখাটো আর একটা বড়সড় বিষম খেলেন মাধববাবু৷ দু'জন সরকারি অফিসার কটমটিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে। তাদের বিটকেল নীল-সবুজ চেক জামা আর কালো চশমাতেই মালুম হয়৷ একজনের হাইট অন্তত সাড়ে ছ'ফিট৷ অন্যজন নির্ঘাত পাঁচের নীচে৷ ছোটখাটো লোকটাই নেতা গোছের, কথাবার্তা তার সঙ্গেই হল৷ - আমি এজেন্ট ভবেশ দাস৷ - আজ্ঞে, আমি মাধব চ্যাটার্জী।  - আমরা জানি৷ আপনার বয়স বাহান্ন৷ বিপত্নীক৷ নিঃসন্তান। পাইকারি বাজারে হালুয়ার ব্যবসা আছে আপনার৷ ট্যাক্সে ফাঁকি নেই৷ পুলিশের খাতায় কেস নেই৷ -

মিডিয়াম

হাইক্লাস মামলেট৷ তার বাইরেটা লালচে, অথচ ভিতরটা নরম। যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ কাঁচালঙ্কায় পরিপুষ্ট৷ মিডিয়াম? অবশ্যই সর্ষের তেল৷ আবারও বলছি৷ মনে রাখবেন, ইংরেজি বাংলা- এ'সমস্তই মায়া। সেরা মিডিয়াম একটাই; খাঁটি সর্ষের তেল৷

ভোগ ও ভোগান্তি

- দেখেছিস? - দেখছি। - ঢালবে৷ - নির্ঘাত। - ভোগান্তি। - হবেই। - জ্যাম। - কাদা। - প্যাচপ্যাচ। - ম্যাজম্যাজ। - তবে..। - তবে? - ভাল্লাগবে। - জলকাদা? - হাঁটব। - বৃষ্টিতে? - আলবাত। - জ্বরকাশি? - নেকু। - হাত? - ধরিস। - ইয়ে। - বাধা? - না। - তবে..। - ঠোঙা। - ঠোঙা? - হাতে। - কীসের? - চপের।

সর্বঘটে চিলি চিকেন

বরাবরই বলে আসছি চিলি চিকেনের মত ফ্লেক্সিবল ব্যাপার আর হয়না৷ এমন মজবুত আইটেমকে স্রেফ চাউমিনের সঙ্গতে ফেলে রাখাটা অনুচিত।  একসময় দুর্গাপুরে পরেশের ধাবার বিস্ফোরক ঝাল চিলি চিকেনের সঙ্গে অজস্র রুটি উড়িয়েছি৷ দিলখুসাতেও হাফ প্লেট চিলি চিকেনের সঙ্গে মিনিমাম ছ'খানা হাতরুটি অনায়াসে উড়ে যেত৷ শেয়ালদার কাছে অন্নপূর্ণা রেস্টুরেন্টে আবার চিলি চিকেন গ্রেভিতে ডুবিয়ে খেতাম রুমালি রুটি৷ বেগুসরাইতে একবার নেহাতই বিপদে পড়ে বাসি চিলিচিকেন আর তাজা পাউরুটি দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরেছি; অতি উপাদেয়। বলাই বাহুল্য যে সেদ্ধচালের ভাত চিলিচিকেনের ঝোল দিয়ে কষে মাখাটা অত্যন্ত সহজসরল আর স্বাভাবিক ব্যাপার; সে ঝোলভাতের পাশাপাশি সামান্য বিউলির ডালের বড়ার মুচমুচ অন্য ডাইমেনশন যোগ করে৷  তা দিল্লীর ইউনাইটেড কফিহাউস জবরদস্ত চিলিচিকেন বানায়, কলকাতার সঙ্গে দিব্যি টক্কর দেওয়ার মত। সে'খানে গতকাল খেলাম চিলিচিকেন পিজ্জা৷ দিব্যি জমজমাট।  সম্ভবত তাদের সিগনেচার ড্রাই চিলি চিকেনের টুকরোগুলো পিজ্জা ব্রেডের ওপর সাজিয়ে বেক করে দেওয়া৷ চমৎকার। বেজিং আর রোম যেন হাওড়া-ব্যান্ডেল মেনলাইনে পাশাপাশি দু'টো স্টেশন৷  এ'বার ভাবছি একদিন হাইক

বিরিয়ানির টেক-আনবক্সিং

টেক রিভিউয়াদের চ্যানেলে, তাঁদের মনোগ্রাহী একপেশে স্টাইলে; বিরিয়ানির আনবক্সিং ও রিভিউ দেখতে চাই৷  প্রথমে দেখানো হবে কনফিগারেশনঃ ৮ জিবি মাটন, অক্টাকোর আলু, কোয়াড এইচডি চাল, তেলতেলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, ইত্যাদি।  তারপরে পার্ফমেন্স টেস্টিং৷ দেখনাইয়ের রেজোলিউশন, ফাস্টচার্জিং সুবাস৷ বোকে মোডে নলিহাড়ের মায়া, হাইডেফিনিশন মশলার মাপা ম্যাজিক, সবশেষে ফাইনাল রেটিং; জিভে ক'লিটার জল বইবে। ট্যাঁক কতটা ধসবে।  আর, মনের গোরিলা গ্লাসে সে বিরিয়ানি কতটা দাগ ফেলবে৷ তবেই না রিভিউ৷  কবে পাবো আমরা বিরিয়ানির MKBHD বা "'মোস্ট-কাব্যিক-বিরিয়ানি-হাভাতে-ডিউড"কে?

নাগরদোলা

হুড়মুড়, হইহল্লা, আলো ঝলমল; মেলার সন্ধ্যে যেমনটা হয় আর কী৷ অঙ্ক টিউশনের গুমোট কাটিয়ে একদল ছেলেমেয়ে সেই মফস্বলি মেলা চষে বেড়াচ্ছে৷ ঢাউস খানতিনেক চপের দোকান, সে'খানে সবচেয়ে সস্তা এবং হাই-সেলিং আইটেম হল আলুর চপ৷ ছাত্রসমাজে আলুর চপের ভূমিকা নিয়ে রীতিমত এস্যে লিখতে পারে অনি৷ কিন্তু ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রেদের সে'সব জরুরী বিষয়ে ভাবতে শেখায়না সিলেবাস৷ হাওয়াই মিঠাইয়ের চিনিগোলা ব্যাপারটা অনির তেমন পছন্দ নয়, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে হাওয়াই মিঠাই হাতে খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি না করলে মেলা আলুনি হয়ে পড়ে৷ সে ব্যাপারটা প্রায় ডিসিপ্লিনের পর্যায় পড়ে৷ এ'ছাড়া রয়েছে বন্দুকবাজি, বেলুন ওড়ানোর হুল্লোড়৷ সস্তা মনকাড়া জিনিসপাতির দোকানও অজস্র, সে'গুলো ঘুরে দেখাটাও গুরুদায়িত্ব৷ তবে আলুর চপ আর বন্দুকে উজাড় হয়ে যাওয়ার পর আর টিউশনফেরত ছেলেমেয়েদের তেমন কিছু কেনাকাটির দম থাকে না৷ বড়জোর দু'একটা পোস্টার, সস্তা ম্যাজিকের রসদ৷ আর সামান্য কিছুটাকা বাঁচিয়ে না রাখলেই নয়; মেলার স্লগওভারঃ নাগরদোলা৷ টিউশনির ব্যাচের সকলেই নাগরদোলায় চড়বে৷ ঢাউস একখানা চাকায় খানকয়েক টিনের আলখাল্লা বাক্স ঝোলানো। দোলা ঘুরবে, বাক্সগুলো মচমচ

হুতোমবাবু ও দাদা

- দাদা, হয়ে গেছে। - হয়ে গেছে হুতোম? - ঘরদোর সাফসুতরো। বাসনপত্র মেজে রেখেছি৷ বাথরুমের চারটে বালতিতে জল ভরে রাখা আছে৷ তোমার ওষুধের স্টক রিফিলিড৷ ডিনারে আলু পটলের তরকারি আর মাগুরের ঝোল৷ ফ্রিজে রাখা আছে৷ - তুই প্রতিবারই বড্ড বেশি পরিমাণে রেঁধে যাস৷ শেষে দু'বেলা ধরে খেতে হয়৷ - এমন হাইক্লাস রেঁধেছি দাদা, কম পড়লে হাত কামড়াতে। - তোর তুলনা নেই হুতোম। তুই মার্ভেলাস। - দাদা, এ'বার আমি আসি? - বেরোবি? - বেরোব না? সাতাটা বাজে৷ ট্যাক্সি নিলেও ফিরতে ফিরতে সেই রাত ন'টা৷ টিভি সিরিয়াল মিস হয়ে যাবে দাদা। - শোন না হুতোম, আজ থেকেই যা না৷ - থেকে যাব? তা হয়না৷ - অদ্ভত গোঁয়ার গোবিন্দ তুই৷ - এ'টা গোঁয়ার্তুমি? যে বাড়ি থেকে বাবা আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে, সে বাড়িতে আমি রাত্রিবাস করব? নেভার৷ দ্যাখো দাদা, আমি আসি তোমার টানে৷ একা মানুষ, অসুস্থ৷ মায়ের পেটের ভাই না দেখলে আর দেখবেটা কে৷ কিন্তু তুমি আমায় রাত্রিবাস করতে বলবে না৷ খবরদার। - বাবা বুড়ো বয়সে অভিমানে কী না কী বলেছে, তার জন্য ভিটেমাটি ছেড়ে দিবি? - বুড়ো সাংঘাতিক ধান্দাবাজ ছিল৷ সবে হিসেব করে বলেছে৷ আমায় স্ক্যান্ডালকুমার আর গবেটগ্যাম্বলার বলে খোঁটা দে