Skip to main content

Posts

Showing posts from October, 2015

লাল নীল সবুজ

তেলচিটে হলুদ রান্নাঘরের দেওয়াল। এক ঘুপচি কোনে দেওয়াল ফুঁড়ে একটা লম্বা বেঁকানো পুরনো পরিচিত পেরেক। সে পেরেকের গায়ে রাবার ব্যান্ডের গোছা; সবুজ গার্ডার, নীল গার্ডার আর লাল গার্ডার। পেরেকের মুখের দিকে সবুজগুলো, মাঝে নীল আর পিছনের দিকে লালগুলো; যত্নে সাজানো।  লাল, নীল আর সবুজ রঙেরই কেন? কারণ নিউ শ্রীকৃষ্ণ কুড়িটাকার মিষ্টির বাক্সের প্যাকেটে এই তিন রঙের গার্ডারই থাকে। সোম টু শনি ভদ্রলোকের অফিসের ঝোলার টুপি থেকে খরগোশের মত বেড়িয়ে আসে সেই মিষ্টির বাক্স; হয় ছানার জিলিপি নয়ত চন্দ্রপুলি। চার টাকার পাঁচ পিস্‌; তিন পিস ভদ্রলোকের, দুই পিস্‌ ভদ্রমহিলার। এক পিস্‌ এক পিস্‌ খাওয়ার পরে। দু'পিস্‌ এক পিস্‌ রাত দেড়টার গল্পের আসরে। ভদ্রলোক সঞ্জীব পাঁচালির ভক্তিতে পড়ে চলেন।  ভদ্রমহিলার চোখের ঘুমের ভার, ঠোঁটে ছানার মত নরম হাসি, আঁচলে ফ্যাসফ্যাসে অগোছালো আনন্দ। খোলা জানালার গোলাপি প্রিন্টের জানালা প্যাতপ্যাতিয়ে নড়াচড়া করে চলে।  ভদ্রলোক  সঞ্জীব ছেড়ে নারায়ণ দেবনাথ ধরলে ভদ্রমহিলা তন্দ্রা ঝেড়ে ফাঁকা মিষ্টির বাক্স নিয়ে উঠে যান; কাগজের বাক্সটা নিপাত যায় - গার্ডার দু'টো যত্নে ঝুলিয়ে দেন পরিচিত পেরেকে;

সুকুমার

১। ২।  - এই লেদার জ্যাকেটটা দেখেছ সোনা? সাড়ে তিন। - শো? - ধুর। হাজার। মাও বললে, আউটরাইট হ্যান্ডসাম লাগছে। পিসি বললে ক্লুনি। - যতসব আবোলতাবোল। - যা, শালা।  - হ্যান্ডসাম বলতে আমি পাতি বাংলায় সুকুমার বুঝি। দ্যাট ইজ মাই ওপিনিওন, আমার রায়। ৩। - মদনা! অ্যাই মদনা। - স্যার! আসছি স্যার। - কনসাইনমেন্ট রেডি? - কন...কোন কনসাইনমেন্ট? - যাব্বাবা...দেখ কাণ্ড, আজ বাজে কাল পৃথিবীর উদ্বোধন। মানুষ লঞ্চ করতে হবে। মানব মানবীকে প্রেমে চেজ্‌ করবে। আর তুই ব্যাটা বলছিস কোন কনসাইনমেন্ট? হারামজাদা! চাবকে সিধে করে দেব। বলি প্রেমের যন্ত্রপাতিগুলোর কনসাইনমেন্ট, তৈরি আছে তো?  - ও প্রেমের টুলবক্সের কনসাইনমেন্ট? সে তো কব্বে থেকে রেডি। সে আপনি আজ্ঞা করলেই মর্তে ডেলিভার করে দেব। - গুড। তা ইয়ে, সমস্ত জাতি উপজাতির প্রেমের টুল-বক্স কিন্তু আলাদা! - তা আর বলতে কত্তা! তবে সবচেয়ে হিমশিম ওই বাঙালির প্রেমের টুলবক্স জড়ো করতে। যা ডিএনএ'র নমুনা  দেখলাম; ঢ্যাঁটা জাত। প্রেম-ট্রেম ইনসার্ট করা মামুলি না এদের মধ্যে। সবকিছুতেই এদের ধানাইপানাই।   - কই দেখি বাঙালির প্রেম টুলবাক্সে ক

ভ্যাকেশন

পর্ব ১- পুরনো লেটার প্যাডের ছেঁড়া পাতায় করা লিস্ট – Gelusil. Check. Torch. Check. Hemonto Playlist. Check. Uncle who cracks CPM-TMC jokes. Check. Saptadipa Chanachur packet. Check. Cards for Mind, Ludo for Soul. Check. Sorsher Tel for emergency chest massage in case the Monkey cap under performs. Check. Bibhutibhuson – Narayan Debnath cocktail. Check. Old copies of Anondobajar for packing emergencies. Check. যাত্রা শুরু। পর্ব ২ – -ঘুরতে বেরিয়েছি, গোলাপজাম রিফিউজ করব গো? -ডায়াবেটিসটাও কি নিজের আক্কেলের সাথে কলকাতায় ফেলে এসেছ? আর তাছাড়া এদিকে কেউ গোলাপজাম বলে না। গুলাব জামুন। ভেতো কোথাকার। -বটে? গোলাপজামকে এখানে গুলাবজামুন না বলাটা অপরাধ? বেশ। তুমি জানো ডায়াবেটিস কে ভ্যাকেশনের ভাষায় কী বলে? -ভ্যাকেশনের ভাষা? -আলবাত। ভ্যাকেশনের ভাষা। তাতে ডায়াবেটিস মানে হল “খিটখিটে উচ্ছে মুখো বৌয়ের থেকে দূরে থাকার প্রসেস”। -সাপের পাঁচ পা দেখেছ, তাই না? বাড়ি চল তোমার হচ্ছে। পর্ব ৩ – -হ্যাঁ রে, মদের বোতল নিয়েছিস তো বাবু? -স্কচ। -বড়রা টের পায়নি তো? -

পকেটমার

স্বপন টার্গেট বেছে নেয় চেহারা দেখে। আজ কুড়ি বছর এই লাইনে রয়েছে সে। প্রথম কয়েক বছর গেছে হাত পাকাতে। তারপর থেকে সামান্য হোঁচটও খেতে হয়নি তাকে। ভিড় বাসে উঠে পড়ে স্বপন বেছে নেয় টার্গেটকে। সরল আলাভোলা মুখ চিনতে তার ভুল হয় না। পরনের জামা কাপড় দেখে সহজেই বুঝে নিতে পারে যে টার্গেট মানিব্যাগের মিনিমাম ওজন কত হবে। আজ সে উঠেছে নাগেরবাজার লাইনের একটা মিনিবাসে; এ লাইনে রোজ রোজ বাসের লাইন পাল্টানোটা জরুরী। আজ বাসে উঠেই স্বপন অল্প জরীপেই বেছে নিলে ভদ্রলোককে। বেঁটে, গাল ফোলা, পাতলা গোঁফ, টাক মাথা, ফর্সা; কপালটা বিশেষ ভাবে চকচকে। ভিড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে দাঁড়িয়েও ভদ্রলোকের মুখে নিশ্চিন্ত হাসি। অমায়িক, সরল; এমন আদর্শ টার্গেট রোজ রোজ জোটে না। ভদ্রলোকের পরনের পোশাক নিপাট পরিষ্কার, ইস্তিরি করা- এর মানিব্যাগ হালকা হতেই পারে না। ভদ্রলোকের কাছে এগিয়ে এলে স্বপন। সুবিধে হচ্ছে ভদ্রলোক গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে, কাজ হাসিল করে সহজেই সরে পড়া যাবে। ভদ্রলোকের মোবাইলে একটা কল এল, ফোনে কথা বলতে বলতেই ভদ্রলোক পকেট থেকে কলম চিরকুট বের করে ভিড় ম্যানেজ করে কিছু একটা লিখলেন। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে চিরকুটটা যত্ন করে র

রসগোল্লার রক্তে সিঁদুরের লজ্জা

(ছবিট দেখি ফেসবুকে  শ্রী শুভদীপ সরকারের প্রোফাইলে, সেরা শিরোনামটির ব্যাকগ্রাউন্ড আন্দাজ করতে চাওয়ার এক ব্যর্থ চেষ্টা এইটা)   - এ কেসে আর বিশেষ কিছু বোঝার নেই বটুবাবু! প্লেন কেস অফ হার্ট ফেলিওর। - তাই নাকি ইন্সপেক্টর? - আপনার সন্দেহ আছে? - পোস্ট মর্টেম পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। - সেটা করাতেই হবে। বাট আই সি নো পয়েন্ট।  - একবার লাশের বৌয়ের সাথে কথা বলা যায়? - মিসেস্‌ সেন? ডেকে দিচ্ছি। তবে এ'সময়...বেশি চাপ যেন না হয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন।  - অফ কোর্স। ** - মিসেস্‌ সেন। আই অ্যাম রিয়েলি সরি।  - বড় ভালো মানুষ ছিলেন। আমার সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল...আমার এবার কী হবে বটুবাবু?  - একটা প্রশ্ন ছিল মিসেস্‌ সেন। - বড় ভালো মানুষ ছিলেন। - মিস্টার সেন রসগোল্লার রস চিপে খেতেন? - না। কেন বলুন তো? - তেমনই ভেবে ছিলাম। সেন বাবুর লাশের মুখে যে অমায়িক হাসি লেগে আছে; রসগোল্লার রস চিপে খাওয়া লোকের মুখের সেই প্রশান্তির হাসি থাকতেই পারে না।  যাক গে, আপনি বুঝি ডায়াবেটিক?  - না না, আমার সে'সব নেই। - রসগোল্লা ভালো লাগে না বুঝি? -

লক্ষ্মী

- অদ্ভুত না? তোমাদের বংশে গত দুই জেনারেশনে কোন মেয়ে নেই? - উঁ? হুঁ। শুতে আসার আগে একটু জল নিয়ে এসো মিতা। - বল না গো! তোমার অদ্ভুত লাগে না? বনেদী বংশ তোমাদের, বাড়িতে কত লোক। তবু, গত চল্লিশ বছরে কোন মেয়ে হয়নি। অদ্ভুত লাগে না তোমার? আমার যেন মেয়ে হয় গো। - কী দরকার?   - মানে? তোমার বুঝি মেয়ে হলে দুঃখ হবে? - না, তা কেন। মেয়েরা ঘরের লক্ষ্মী। দুঃখ হবে কেন? - যাক বাবা, নিশ্চিন্ত হলাম জান। তোমাদের যা সেকেলে পরিবার, ভয় হত; মেয়ে হলে যদি দুঃখ পাও? - বোকা! বললাম তো। মেয়েরা লক্ষ্মী। বাড়িতে লক্ষ্মী এলে দুঃখ কী আবার? কত আনন্দের কথা বরং। এ বংশে লক্ষ্মী এলে বিদেয় হয় না গো, সমাদরে থাকে।   - সে কেমন কথা। লক্ষ্মী কে কেউ বিদেয় করে নাকী? আর সে'সব কথায় কী কাজ; তোমাদের বংশে তো মেয়েই হয়না। - মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ ছাড়া বংশের সুখ টেকে কী করে? মায়ের আশীর্বাদ আমরা বেঁধে রাখি, জমিয়ে রাখি। অতবড় ধনলক্ষ্মীর মন্দির কি বাড়িতে এমনি রয়েছে গো? দেবীর বেদির নিচে গোপন ধন-কুঠুরি; মা নিজে বারবার এসে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন সেখেনে। বারে বারে মা লক্ষ্মী আসেন

প্রপোজাল

- সো লেট মি গেট দিস, স্ট্রেট। আপনি আমায় খুন করেছেন। - এগজ্যাক্টলি জয়িতা। - ভোর পাঁচটায় বমি করতে করতে আমি উঠলাম। গা দিয়ে ভুরভুর করছে রামের গন্ধ। ভাঙ্গা পার্টির নোংরা সোফা। আপনি আমায় টিস্যু দিলেন মুখ মুছতে। আর এখন আপনি বলছেন আপনি আমায় খুন করেছেন। রাইট? - রাইট।   - জলের বোতলটা এগিয়ে দিন না, আপনার পাশেই আছে। - এই যে।   - থ্যাংকস। আচ্ছা মরে গিয়েও আমার পিপাসা পাচ্ছে কেন? - কারণ আপনি খুন হয়েছেন। মারা যাননি। - খুন হয়েছি, মারা যাইনি। বিউটিফুল। আপনি কবি?   - মারা যাননি। কিন্তু যাবেন। - হাউ?   - ড্রিঙ্কে মেশানো ছিল। এক ধরনের কেমিক্যাল। আমাজনের জংলি ট্রাইবদের থেকে জোগাড় করা। সে লম্বা কাহিনী। টু কাট দ্য লং স্টোরি শর্ট, এই বিষ মাসখানেক ধরে আপনার শরীরে ছড়াবে মিস জয়িতা আর তারপর আচমকা মাল্টিপল অর্গান ফেলিওর।   - মাসখানেকে মৃত্যু? - অব্যর্থ খুন। - তো। আপনি...ইয়ে...আপনার নামটা যেন কাল রাত্রে কী বলেছিলেন? - অর্ণব। অর্ণব চৌধুরী। - হুঁ মিস্টার অর্ণব, তো খুন করে এসব আপনি আমায় জানা