Saturday, October 31, 2015

লাল নীল সবুজ

তেলচিটে হলুদ রান্নাঘরের দেওয়াল। এক ঘুপচি কোনে দেওয়াল ফুঁড়ে একটা লম্বা বেঁকানো পুরনো পরিচিত পেরেক। সে পেরেকের গায়ে রাবার ব্যান্ডের গোছা; সবুজ গার্ডার, নীল গার্ডার আর লাল গার্ডার। পেরেকের মুখের দিকে সবুজগুলো, মাঝে নীল আর পিছনের দিকে লালগুলো; যত্নে সাজানো। 

লাল, নীল আর সবুজ রঙেরই কেন? কারণ নিউ শ্রীকৃষ্ণ কুড়িটাকার মিষ্টির বাক্সের প্যাকেটে এই তিন রঙের গার্ডারই থাকে। সোম টু শনি ভদ্রলোকের অফিসের ঝোলার টুপি থেকে খরগোশের মত বেড়িয়ে আসে সেই মিষ্টির বাক্স; হয় ছানার জিলিপি নয়ত চন্দ্রপুলি। চার টাকার পাঁচ পিস্‌; তিন পিস ভদ্রলোকের, দুই পিস্‌ ভদ্রমহিলার। এক পিস্‌ এক পিস্‌ খাওয়ার পরে। দু'পিস্‌ এক পিস্‌ রাত দেড়টার গল্পের আসরে। ভদ্রলোক সঞ্জীব পাঁচালির ভক্তিতে পড়ে চলেন।  ভদ্রমহিলার চোখের ঘুমের ভার, ঠোঁটে ছানার মত নরম হাসি, আঁচলে ফ্যাসফ্যাসে অগোছালো আনন্দ। খোলা জানালার গোলাপি প্রিন্টের জানালা প্যাতপ্যাতিয়ে নড়াচড়া করে চলে। 

ভদ্রলোক  সঞ্জীব ছেড়ে নারায়ণ দেবনাথ ধরলে ভদ্রমহিলা তন্দ্রা ঝেড়ে ফাঁকা মিষ্টির বাক্স নিয়ে উঠে যান; কাগজের বাক্সটা নিপাত যায় - গার্ডার দু'টো যত্নে ঝুলিয়ে দেন পরিচিত পেরেকে; সবুজে সবুজ,  নীলে নীল, লালে লাল। 

ভদ্রলোকের অফিসের স্টিল-টিফিন বাক্স তিন তলার; এক তলায় ভাত, দোতলায় সবজি, তিন তলায় ঝোল। তিন ডিব্বাতেই  ঢাকনা আলগা, তাই বাড়তি বাঁধনে গার্ডার। ভাতের ডিব্বায় নীল গার্ডার, সবজির ডিব্বায় সবুজ আর ঝোলে লাল।

সেবার নতুন টিফিন এলো। সেবার রান্নাঘর রঙ হল গোলাপিতে। 
সেবার ভদ্রমহিলার চোখে জল; "আমায় দেখতে এলে মিষ্টির বাক্স নিয়ে আসতে হয় ?"।  
সেবার ভদ্রলোকের কাঁচুমাচু সারেন্ডার; "তোর বর মিষ্টি আনে? তুই গার্ডার জমিয়ে রাখিস?"।
ভদ্রমহিলা ছানার মত নরম হাসেন, "বৌয়ের কানে সঞ্জীব দিস? রেনল্ড পেনে ট্যাটু আঁকিস?"

সুকুমার

১।



২। 

- এই লেদার জ্যাকেটটা দেখেছ সোনা? সাড়ে তিন।

- শো?

- ধুর। হাজার। মাও বললে, আউটরাইট হ্যান্ডসাম লাগছে। পিসি বললে ক্লুনি।

- যতসব আবোলতাবোল।

- যা, শালা। 
- হ্যান্ডসাম বলতে আমি পাতি বাংলায় সুকুমার বুঝি। দ্যাট ইজ মাই ওপিনিওন, আমার রায়।


৩।

- মদনা! অ্যাই মদনা।
- স্যার! আসছি স্যার।
- কনসাইনমেন্ট রেডি?
- কন...কোন কনসাইনমেন্ট?
- যাব্বাবা...দেখ কাণ্ড, আজ বাজে কাল পৃথিবীর উদ্বোধন। মানুষ লঞ্চ করতে হবে। মানব মানবীকে প্রেমে চেজ্‌ করবে। আর তুই ব্যাটা বলছিস কোন কনসাইনমেন্ট? হারামজাদা! চাবকে সিধে করে দেব। বলি প্রেমের যন্ত্রপাতিগুলোর কনসাইনমেন্ট, তৈরি আছে তো? 
- ও প্রেমের টুলবক্সের কনসাইনমেন্ট? সে তো কব্বে থেকে রেডি। সে আপনি আজ্ঞা করলেই মর্তে ডেলিভার করে দেব।
- গুড। তা ইয়ে, সমস্ত জাতি উপজাতির প্রেমের টুল-বক্স কিন্তু আলাদা!
- তা আর বলতে কত্তা! তবে সবচেয়ে হিমশিম ওই বাঙালির প্রেমের টুলবক্স জড়ো করতে। যা ডিএনএ'র নমুনা দেখলাম; ঢ্যাঁটা জাত। প্রেম-ট্রেম ইনসার্ট করা মামুলি না এদের মধ্যে। সবকিছুতেই এদের ধানাইপানাই। 

- কই দেখি বাঙালির প্রেম টুলবাক্সে কী কী রেখেছিস!
- জিনিষ কী আর একটা কত্তা। পার্কের বেঞ্চি থেকে রেস্তোরাঁর কেবিন, কিছুই বাদ রাখিনি। নলবন দিয়েছি, ছাতা দিয়েছি... ।
- আরে হাইয়ার ফর্ম অফ প্রেমের জন্য কী কী দিয়েছিস।
- বসন্ত আছে। সঙ্গীত আছে। কবিতা আছে।
- তবু যেন হচ্ছে না রে মদনা। কিছু একটা কম পড়ছে।
- আজ্ঞে চিন্তা করবেন না মদনা থাকতে আপনার চিন্তা নেই। সবচেয়ে মোক্ষম দাওয়াইটাও দিয়ে রেখেছি।
- সেটা কী?
- শেষের কবিতা। যে কোন সিচুয়েশনে মাখনে ছুরি।
- হুঁ। মন্দ নয়। তবে তাও যদি ফেল করে?
- এক্সেপশনাল কেস্‌ স্যার। অত ফেউ সামলানো যাবে না। যে মানবী শেষের কবিতাতেও ঝুলে পড়বে না, মানবদের উচিৎ তাদের থেকে দূরেই থাকা। সোজা কথা।
- না না না। তা বললে কী হয়? এ জিনিষে চান্স নেওয়া যাবে না। দে আমার হোমিওপাতির বাক্সটা দে। একটা মিক্সচার বানিয়ে দিচ্ছি, টুলবক্সে সেটাও রেখে দে।
- এই নেন।

**দু'মিনিট পর**

- এই নে মদনা, এই মিক্সচার খালি বাঙালি প্রেমের টুল বক্সে রেখে দে। প্রেমিকের আর গাড্ডু খাওয়ার চান্স রইল না।
- এটা কীসের মিশেল কত্তা?
- আরে পার্বতী কে এই মিশেলেই...।
- আপনার স্টোরি শুনে কাজ নেই কত্তা, মিক্সচারে কী আছে সেটা বলেন।
- সিম্পল রে। এক দাগ বিকেল, দুই দাগ ছাদের কোণ, দেড় দাগ মন-কেমন আর চার দাগ হঠাৎ আবোলতাবোল। ম্যাজিক। নিশ্চিন্দি।



Friday, October 30, 2015

ভ্যাকেশন

পর্ব ১-

পুরনো লেটার প্যাডের ছেঁড়া পাতায় করা লিস্ট –
Gelusil. Check.
Torch. Check.
Hemonto Playlist. Check.
Uncle who cracks CPM-TMC jokes. Check.
Saptadipa Chanachur packet. Check.
Cards for Mind, Ludo for Soul. Check.
Sorsher Tel for emergency chest massage in case the Monkey cap under performs. Check.
Bibhutibhuson – Narayan Debnath cocktail. Check.
Old copies of Anondobajar for packing emergencies. Check.
যাত্রা শুরু।

পর্ব ২ –
-ঘুরতে বেরিয়েছি, গোলাপজাম রিফিউজ করব গো?
-ডায়াবেটিসটাও কি নিজের আক্কেলের সাথে কলকাতায় ফেলে এসেছ? আর তাছাড়া এদিকে কেউ গোলাপজাম বলে না। গুলাব জামুন। ভেতো কোথাকার।
-বটে? গোলাপজামকে এখানে গুলাবজামুন না বলাটা অপরাধ? বেশ। তুমি জানো ডায়াবেটিস কে ভ্যাকেশনের ভাষায় কী বলে?
-ভ্যাকেশনের ভাষা?
-আলবাত। ভ্যাকেশনের ভাষা। তাতে ডায়াবেটিস মানে হল “খিটখিটে উচ্ছে মুখো বৌয়ের থেকে দূরে থাকার প্রসেস”।
-সাপের পাঁচ পা দেখেছ, তাই না? বাড়ি চল তোমার হচ্ছে।


পর্ব ৩ –
-হ্যাঁ রে, মদের বোতল নিয়েছিস তো বাবু?
-স্কচ।
-বড়রা টের পায়নি তো?
-টেনশন নিস কেন এত রে বুম্বাদা? অল ইন কন্ট্রোল।
-চাখনা?
-সল্টেড বাদাম। স্পেশ্যাল প্রোটেক্টিভ প্যাকেজে হাঁসের ডিম; ভেজে অথবা সেদ্ধ। পোল্ট্রির ডিমকে ট্রাস্ট করব না। কচু ভাজার প্যাকেট। চালতার আচার। ঝাল চানাচুর। কুচো নিমকি, কালো জিরে দেওয়া। আর বাকিটা অকুস্থলে গিয়ে ম্যানেজ হবে।
-আরে, আর আসল দু’টো চাখনা? নিসনি?
-আবার কী?
-শিব্রাম সমগ্র আর মানবেন্দ্রর প্লেলিস্ট???

পর্ব ৪ –
-মশাই, এই ঢাউস ব্যাগটায় কী নিয়ে চলেছেন? তখন থেকে দেখছি আগলে রাখছেন।
-এইটেয়?
-হ্যাঁ, পার্সোনাল কিছু?
-ছুটি ইজ হোয়্যার দ্য ল্যাদ ইজ। ল্যাদ ইজ হোয়্যার দ্য পার্সোনাল পাশবালিশ ইজ। বৌ ছাড়া দু’একবার ঘুরতে গিয়েছি বটে। পাশবালিশ ছাড়া কহি নহি।

পর্ব ৫ –


পর্ব ৬ –
-মামা, ও মামা, ঘুমোলে নাকি?
-হুঁ? হুঁ? মিন্টো পার্ক এসে গেছে নাকি ?
-আরে তুমি মিনিবাসে অফিস যাচ্ছ না, ভলভোতে দিল্লী টু হিমাচল যাচ্ছ।
-অ। ওহো। বাসের দুলুনিতে চোখ লেগে গেছিল কিনা। জেনেটিক কন্ডিশনিংয়ের জন্য ঘুম ভাঙ্গতেই মনে হল বুঝি কন্ডাক্টর টিকিট দিতে এসেছে।

পর্ব ৭ –
-মর্নিং ওয়াক ছাড়া পাহাড়ে ঘুরতে আসা বৃথা। বুঝলেন?
-আমি বুঝি কোয়ালিটি চা ছাড়া মর্নিং ওয়াক বৃথা। চলুন, ওই যে চায়ের দোকান।
**
-দাদা, দু কাপ চায়ে দেনা। কম চিনি, দুধ জিয়াদা।
-সাহাব কলকত্তা সে আয়ে হ্যায়?
-আরিব্বাস। ক্যাইসে জান লিয়া?

**
-আসুন, এই আপনার কাপ।
-থ্যাংকস। চাওলার সঙ্গে আলাপ করে এলেন দেখলাম।
-নতুন জায়গায় এসে চাওয়ালার সাথে আলাপ না করে চা খাওয়া বৃথা। ইয়ে, বাঙালির ন্যাচুরাল অউরাটা কিন্তু ডিনাই করা যায় না।
-হঠাৎ অউরার কথা?
-আমায় দেখেই রেসপেক্টফুলি জিজ্ঞেস করলে আমি ক্যালক্যাটা থেকে এসেছি কিনা।
-ইয়ে মানে, আপনার অ্যাক্সেন্ট ইন্টারসেপ্ট করেনি তো?
-নো চান্স। এসবিআইয়ের হয়ে ফাইভ ইয়ার্স ইন লাখনৌ। স্পোকেন হিন্দি মে খুঁত নহি মিলেগা জনাব।


পর্ব – ৮
-পাহাড়। জঙ্গল। পাহাড়ি নদীর ঝুমঝুম। এমন ঝমঝমে বৃষ্টি। চারিদিকে এমন নিকষ অন্ধকার। ফরেস্ট রেস্টহাউসের এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশ। তোদের মধ্যে কেউ একটা জমাট ভূতের গল্প ফাঁদতে পারছিস না?
-আমি একটা বলি মামা?
-রোমহর্ষক হওয়া চাই।
-প্লটটা ভাবতেই আমার নিজের গায়েই কাঁটা দিচ্ছে। বলি?
-বল।
-হরিদাস, মানে এখানকার কেয়ারটেকারকে নিয়ে গেছিলাম আজ এখানকার হাটে। সেটা সবারই জানা। দেশী মুর্গী আনতে। আমার অবশ্য ব্রয়লারে আপত্তি নেই, নেহাত মামা ইনসিস্ট করলে পাহাড়ি মুর্গীর স্বাদ নাকি বহুগুন বেশি।
-অরিজিনাল প্লট? বানিয়ে বলছিস?
-বানিয়ে বলছি কী না ঠাহর করতে পারছি না।
-ইন্টারেস্টিং। গুড স্টার্ট। বলে যা।
-গেলাম হরিদাসের সাথে, কিন্তু ফিরলাম হরিদাসের লাশ নিয়ে।
-কাঁচা ট্যুইস্ট। যে দেশী মুর্গী নিলি তারও ডাকনাম হরিদাস। তাই তো রে?
-না মামা। হরিদাস জেনুইন দেশী মুর্গীর লোভ দেখিয়ে দেড় মাইল হাঁটালে। এই পাহাড়ি রাস্তার অদ্দুর হেঁটে গেলাম। গিয়ে দেখলাম লবডঙ্কা ; সমস্ত মুর্গী পাঠার দোকান বন্ধ। আজ এখানে কোন লোকাল পরব আছে; আমিষ খাওয়া হয়না। এদিকে হরিদাস মামাকে প্রমিস করে বেরিয়েছিল মুর্গীর রোস্টে মাতিয়ে দেবে। সম্ভবত মামার চেয়ে কিছু আগাম বখশিশও বাগিয়েছে। তাই তো মামা?
-একশো টাকা। আর দু’টো ফিল্টার উইলস।
-বখশিশের গুণে পরবের কথাটা ভুলে মেরে দিয়েছিল হরিদাস। তা সে যখন মুর্গী পেলেনা; তখন সে মরমে মরলে। হরিদাস মরমে মরা লাশ হয়ে রেস্টহাউসে ফিরে এলে। আর এদিকে তারপর থেকে; মামা তোমাকে দেখলেই ভূত দেখার মত কেঁপে উঠে গায়েব হয়ে যাচ্ছে সে। অর্থাৎ লাশ হরিদাসের অথচ ভূত তোমার।
-শুয়ার। তুই বলছিস রাতে নিরামিষ? হরিদাসের পেটে পেটে এত? আর তুই এতক্ষণে এই ক্যালামিটিক খবর দিচ্ছিস? ছিঃ! এটা ভূতের গল্প রে? তুই একটা মামদো।
-দেশী মুর্গীর বদলে দেশী ফুলকপি রয়েছে। আর রাজমার ঝোল। আজ যে ডিনারে নিরামিষ; সেটা একটু ড্র‍্যামাটিক ভাবে তোমায় বলব ভাবছিলাম। যাক গে, হরিদাস লজ্জায় মাটিতে মিশে আমায় রিকুয়েস্ট করেছিল যে তোমার থেকে আর একটা ফিল্টার উইলস যদি পাওয়া যায়।

পর্ব – ৯
হাতে ঢাউস ক্যামেরা। গায়ে রেনকোট, পায়ে গাম বুট আর কাঁধে ব্যাগ ফেলে ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেরোলে ছোটমামা।
-“বর্ষায় পাহাড়ি জঙ্গলে কত ভ্যারাইটির যে ফুল আছে, না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। ফুলের দিকে ন্যাক তো আমার আজকের নয়। ডুয়ার্স চষে সেবার বিভিন্ন জাঙ্গল ডেইসির স্যাম্পল কলেক্ট করে এলাম।এবার হিমাচলে যখন এসেই পড়েছি, ভাবছি এখান থেকেও জঙ্গলি ফুলের ছবি আর স্যাম্পল কলেক্ট করে নেব। তোদের চোখ নেই রে ফুল চেনার। গোলাপ, ডালিয়া, গাঁদার বাইরে তো আর কিস্যুই চিনলি না। আমি যখন ব্যাগ ভরে স্যাম্পল আনব, তোদের তাক লাগবেই সে সব দেখে। এখানে অ্যাট লিস্ট চল্লিশটা ইউনিক ভ্যারাইটি এক্সপেক্ট করছি। সঙ্গে স্যান্ডউইচ আছে। লাঞ্চে ফিরব না। চলি”।
মামার ফেরত এল লাঞ্চের আগেই। আমরা উন্মুখ হয়ে বসেছিলাম বিভিন্ন ফুলের স্যাম্পল দেখতে। মামার ব্যাগের পেট বেশ ফুলে রয়েছে দেখলাম।
-ফুল অফ ফুল নাকি মামা?
-ফুল অফ ফুল।
-তবে দেরী কেন? দেখাও।
-তোদের আর দেখে কাজ নেই। কেয়ারটেকার কে ডাক। তাকেই দিতে হবে এই ব্যাগ।
-সে কী। কেয়ারটেকার কেন? আমাদের দেখাবে না?
-আরে অন্য ফুল এক্সপ্লোর করার আগেই নজরে এল স্বর্গীয় পুষ্পরাশি। তা দিয়েই ব্যাগ ভরে ফিরলাম।
-কী ফুল?
-কুমড়োর ক্ষেত- এখান থেকে দেড় মাইল দূরে; জঙ্গল ঘেঁষে। চাষাকে সিগারেট খাওয়ালাম। সে ব্যাগ ভরে কুমড়ো ফুল অফার করলে। রিফিউজ করতে পারলাম না রে। ব্যাগে বেসন আর খাওয়ার সোডাও রয়েছে। কেয়ারটেকারকে জলদি ডেকে এই ব্যাগটা দে। লাঞ্চ আমিও করব।


পর্ব – ১০
-Civilizations are essentially about moving from one vacation to another with an intricate network of Economic pretensions filling up the gaps in between।

-বটে?
-বিলকুল।
-ছুটি শেষের মুখে এলেই তোমার অন্তরের ফিলসফির চুল্লিতে কেরোসিন পড়ে, তাই না?
-ছুটি শুরু করি পাহাড়ি সান্যাল হয়ে বুঝলি। মিহি দুরুস্ত মেজাজে গুনগুন করছি, সেন্স অফ হিউমর কে পালকের মত অন্যের গায়ে বুলিয়ে চলেছি; প্রতিটি মুহূর্ত যেন স্যুইট পিসেস অফ হেভেন। যেই ছুটি খতম হয়ে আসে, অমনি অফিসের চিন্তা মনের সমস্ত রস শুষে কমল মিত্র-ফাই করে দেয় রে।
-তুমি তাহলে বলতে চাইছ ছুটির শেষে ফুরফুরে মেজাজে থাকা চলবে না?
-বলতে চাইছি না, বলছি।

খতম পর্ব
টেবিল উপত্যকা জুড়ে ‘পেন্ডিং’ ফাইলের পাহাড়।
কুলুকুলু বয়ে চলেছে না পড়া ই-মেইলের নদী। নদী ঘেঁষা কালচে সবুজ রহস্য ঘেরা বস-জঙ্গল।
হিংস্র পশুদের গর্জন মাঝেমাঝেই ফালাফালা করে দিচ্ছে বুকের ভিতরের শীতল নৈঃশব্দ্য- “অমুক রিপোর্ট ভেজো, তমুক রিভিউয়ের জন্য পিপিটি বানাও”।
আলস্য ঝর্ণার মত বুক বেয়ে নেমে এসে কম্পিউটারে খোলা স্প্রেডশিটে ছড়িয়ে পড়ছে।
ইউ ক্যান টেক মি আউট অফ ছুটি, ইউ ক্যান নট টেক ছুটি আউট অফ মি। ইত্যাদি ইত্যাদি।

পকেটমার

স্বপন টার্গেট বেছে নেয় চেহারা দেখে। আজ কুড়ি বছর এই লাইনে রয়েছে সে। প্রথম কয়েক বছর গেছে হাত পাকাতে। তারপর থেকে সামান্য হোঁচটও খেতে হয়নি তাকে।

ভিড় বাসে উঠে পড়ে স্বপন বেছে নেয় টার্গেটকে। সরল আলাভোলা মুখ চিনতে তার ভুল হয় না। পরনের জামা কাপড় দেখে সহজেই বুঝে নিতে পারে যে টার্গেট মানিব্যাগের মিনিমাম ওজন কত হবে। আজ সে উঠেছে নাগেরবাজার লাইনের একটা মিনিবাসে; এ লাইনে রোজ রোজ বাসের লাইন পাল্টানোটা জরুরী। আজ বাসে উঠেই স্বপন অল্প জরীপেই বেছে নিলে ভদ্রলোককে। বেঁটে, গাল ফোলা, পাতলা গোঁফ, টাক মাথা, ফর্সা; কপালটা বিশেষ ভাবে চকচকে। ভিড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে দাঁড়িয়েও ভদ্রলোকের মুখে নিশ্চিন্ত হাসি। অমায়িক, সরল; এমন আদর্শ টার্গেট রোজ রোজ জোটে না। ভদ্রলোকের পরনের পোশাক নিপাট পরিষ্কার, ইস্তিরি করা- এর মানিব্যাগ হালকা হতেই পারে না। ভদ্রলোকের কাছে এগিয়ে এলে স্বপন। সুবিধে হচ্ছে ভদ্রলোক গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে, কাজ হাসিল করে সহজেই সরে পড়া যাবে।

ভদ্রলোকের মোবাইলে একটা কল এল, ফোনে কথা বলতে বলতেই ভদ্রলোক পকেট থেকে কলম চিরকুট বের করে ভিড় ম্যানেজ করে কিছু একটা লিখলেন। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে চিরকুটটা যত্ন করে রাখলেন ভদ্রলোক। মানিব্যাগের চেহারাটা আড়চোখে দেখে নিশ্চিন্ত হলে স্বপন; মাল ঠিকঠাকই আছে- টার্গেট বাছাইয়ে ভুল হয়নি।

হুড়মুড় করে দরজার দিকে এগিয়ে এলে স্বপন- ভদ্রলোকের গায়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে একটা সামান্য সরি বলে বাস থেকে নেমে গেল সে। কাজ হাসিল।

**

সদ্য পকেট সাফ হওয়া মানিব্যাগটা খুলতেই মাথা গরম হয়ে গেল স্বপনের। মানিব্যাগের চেহারা ঝকঝকে হলেও ভিতরটা এক্কেবারে ফাঁকা। একটা টাকাও নেই। এমনকি কোন আইকার্ডও নেই। শুধু সেই চিরকুট যেটা ভদ্রলোক রেখেছিলেন।

চিরকুটটা খুলে দেখলে স্বপন -

"ভাই রে,
পকেটমারের চোখে অমন লোভ থাকতে নেই। পাতি লোকজনের সামনে ভয় নেই, কিন্তু আমার মত বান্দার সামনে সহজে ধরা পড়ে যেতে হয়। আরে ওই ভাবে হ্যাংলার মত পকেট মাপতে আছে?
শুভাকাঙ্ক্ষী,

বটু গোয়েন্দা

পুনশ্চ : রিয়েল স্কিল দেখানোর লোভ সামলাতে পারলাম না। পকেটমারের পকেট মারা পুণ্যির ব্যাপার।"

**
উদ্ভ্রান্তের মত পকেট হাতড়েও নিজের মানিব্যাগটা খুঁজে পেলে না স্বপন।

Wednesday, October 28, 2015

রসগোল্লার রক্তে সিঁদুরের লজ্জা

(ছবিট দেখি ফেসবুকে শ্রী শুভদীপ সরকারের প্রোফাইলে, সেরা শিরোনামটির ব্যাকগ্রাউন্ড আন্দাজ করতে চাওয়ার এক ব্যর্থ চেষ্টা এইটা)  


- এ কেসে আর বিশেষ কিছু বোঝার নেই বটুবাবু! প্লেন কেস অফ হার্ট ফেলিওর।

- তাই নাকি ইন্সপেক্টর?

- আপনার সন্দেহ আছে?

- পোস্ট মর্টেম পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

- সেটা করাতেই হবে। বাট আই সি নো পয়েন্ট। 

- একবার লাশের বৌয়ের সাথে কথা বলা যায়?

- মিসেস্‌ সেন? ডেকে দিচ্ছি। তবে এ'সময়...বেশি চাপ যেন না হয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন। 

- অফ কোর্স।

**

- মিসেস্‌ সেন। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। 

- বড় ভালো মানুষ ছিলেন। আমার সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল...আমার এবার কী হবে বটুবাবু? 

- একটা প্রশ্ন ছিল মিসেস্‌ সেন।

- বড় ভালো মানুষ ছিলেন।

- মিস্টার সেন রসগোল্লার রস চিপে খেতেন?

- না। কেন বলুন তো?

- তেমনই ভেবে ছিলাম। সেন বাবুর লাশের মুখে যে অমায়িক হাসি লেগে আছে; রসগোল্লার রস চিপে খাওয়া লোকের মুখের সেই প্রশান্তির হাসি থাকতেই পারে না।  যাক গে, আপনি বুঝি ডায়াবেটিক? 

- না না, আমার সে'সব নেই।

- রসগোল্লা ভালো লাগে না বুঝি?

- সত্যি কথা বলতে কী রসগোল্লা আমার খুব প্রিয়। খুব। আমাদের দু;জনেরই খুব প্রিয় ছিল। 

- কাল খেয়েছিলেন? 

- ইয়ে...না...মানে কাল ঠিক...।

- খুন করে কী পেলেন?

- হোয়াট নন-সেন্স!

- অকাট্য প্রমাণ ছাড়া আমি কথা বলি না মিসেস্‌ সেন। আপনি খুলে বললে ব্যাপারটা সুবিধে হয়। 

- বটুবাবু...।

- খুলে বলুন মিসেস্‌ সেন। উই মাইট হেল্প।

- বটুবাবু আমায় বাঁচান। 

- বলুন।

- অনিল এটা আমায় বলেনি। এতটা নিচ প্ল্যান ও করবে আমি ভাবিনি।

- অনিল?

- মিস্টার সেনের বিজনেস পার্টনার। 

- আর আপনার...ইয়ে...তাই তো?

- বিশ্বাস করুন। মিস্টার সেন খুব একটা সহজ মানুষ ছিলেন না। বিশ্বাস করুন, তাই বলে এমনটা...এমনটা আমি ভাবিনি।

- রসগোল্লাগুলো কি অনিলবাবুর পাঠানো?

- পাঠিয়ে আমায় বলেছিল আমি যেন না খাই। ভুলেও যেন না খাই। 

**

- কী খেল দেখালেন বটুবাবু? মিসেস্‌ সেন এমন তরতর করে সব উগরে দিলেন...। 

- ওই। কিছুটা মেপে আর কিছুটা ঝড়ে বক খেললাম। লেগে গেল। 

- কীরকম?

- লাশের পকেটে রুমালটা দেখেছেন?

- না মানে, খেয়াল করিনি। 

- খেয়াল করলে দেখতেন রুমালটা শ্লেষ্মার মাখামাখি। অর্থাৎ বেশ ব্যবহার হয়েছে, ভদ্রলোক সর্দিগর্মিতে জেরবার হচ্ছিলেন। অথচ এত ব্যবহারেও রুমালের ভাঁজ এক্কেবারে নিখুঁত। কী বুঝলেন?

- গুছিয়ে চলা মানুষ।

- করেক্ট। এবার ওর পাঞ্জাবিটা ভালো করে খেয়াল করেছেন?

- সেখানেও কিছু...? ধস্তাধস্তির ছাপ?

- মোর দ্যান দ্যাট। পাঞ্জাবির হাতায় বুকে রসগোল্লার রসের দাগ। রস চিপে উনি খান না প্লাস সাঙ্ঘাতিক গুছিয়ে চলা মানুষ। পাঞ্জাবিতে রস আসার কথাই নয়। যদি না তিনি রসগোল্লা মুখে দিয়ে বেসামাল হয়ে পড়তেন।

- পয়েন্ট। কিন্তু ইয়ে বটুবাবু। রসগোল্লা মুখে দিয়ে হার্ট অ্যাটাকও তো হতে পারত?

- চান্স খুবই মিনিমাল। অমৃত মুখে মানুষ মারা যায়? অবিশ্যি রসগোল্লার রস চিপে খেলে অবিশ্যি হাই রিস্ক থাকেই; সে শুকনো মাল ইজ পয়জন ইন স্পিরিট। তবে সে চিন্তাও দূর হয়ে গেল লাশ যে ঘরে পড়েছিল , সে ঘরে রাখা লোকনাথ বাবার ফটোটা দেখে।
- লোকনাথ বাবার ফটো? সেখানেও ক্লু? 

- ওই, ক্লু বলতে লোকনাথ বাবার সামনে ছোট প্লেটে দেওয়া নকুলদানা। 

- তো?

- সেই নকুলদানাগুলো ঘিরে পিঁপড়েদের বিশ্বযুদ্ধটি নজরে এসেছে? দেড় হাজার পিঁপড়ের বেশি হলে আশ্চর্য হব না। অত পিঁপড়ে যেখানে, সেখানে মিস্টার সেনের লাশের রস মাখা পাঞ্জাবির ধারে কাছে একটি পিঁপড়েও ঘুরঘুর করছে না। এই থেকেই কি স্পষ্ট নয়?

- আইব্বাস! রসগোল্লার রসে বিষ!

- ইয়েস। রসগোল্লার রসেই নিশ্চুপে মিশে আছে সেনবাবুর রক্ত আর তাতেই মিসেস্‌ সেনের সিঁথির সিঁদুর লজ্জায় ধুয়ে গেল।  স্যাড। এবার ওই অনিলবাবুকে গ্রিপে আনলেই আপনাদের কাজ শেষ। 

- বটুবাবু, আপনার ইয়ের কোন ইয়ে হয় না মশাই।

Monday, October 26, 2015

লক্ষ্মী

- অদ্ভুত না? তোমাদের বংশে গত দুই জেনারেশনে কোন মেয়ে নেই?



- উঁ? হুঁ। শুতে আসার আগে একটু জল নিয়ে এসো মিতা।


- বল না গো! তোমার অদ্ভুত লাগে না? বনেদী বংশ তোমাদের, বাড়িতে কত লোক। তবু, গত চল্লিশ বছরে কোন মেয়ে হয়নি। অদ্ভুত লাগে না তোমার? আমার যেন মেয়ে হয় গো।


- কী দরকার? 


- মানে? তোমার বুঝি মেয়ে হলে দুঃখ হবে?


- না, তা কেন। মেয়েরা ঘরের লক্ষ্মী। দুঃখ হবে কেন?


- যাক বাবা, নিশ্চিন্ত হলাম জান। তোমাদের যা সেকেলে পরিবার, ভয় হত; মেয়ে হলে যদি দুঃখ পাও?


- বোকা! বললাম তো। মেয়েরা লক্ষ্মী। বাড়িতে লক্ষ্মী এলে দুঃখ কী আবার? কত আনন্দের কথা বরং। এ বংশে লক্ষ্মী এলে বিদেয় হয় না গো, সমাদরে থাকে। 


- সে কেমন কথা। লক্ষ্মী কে কেউ বিদেয় করে নাকী? আর সে'সব কথায় কী কাজ; তোমাদের বংশে তো মেয়েই হয়না।


- মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ ছাড়া বংশের সুখ টেকে কী করে? মায়ের আশীর্বাদ আমরা বেঁধে রাখি, জমিয়ে রাখি। অতবড় ধনলক্ষ্মীর মন্দির কি বাড়িতে এমনি রয়েছে গো? দেবীর বেদির নিচে গোপন ধন-কুঠুরি; মা নিজে বারবার এসে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন সেখেনে। বারে বারে মা লক্ষ্মী আসেন গো, বারেবারে অন্ধকার কুঠুরি আলো করে বসেন। বংশের সম্পত্তি রক্ষা তিনিই করেন। তাই বলি, মেয়ে হলে চিন্তা কীসের গো?

প্রপোজাল

- সো লেট মি গেট দিস, স্ট্রেট। আপনি আমায় খুন করেছেন।


- এগজ্যাক্টলি জয়িতা।


- ভোর পাঁচটায় বমি করতে করতে আমি উঠলাম। গা দিয়ে ভুরভুর করছে রামের গন্ধ। ভাঙ্গা পার্টির নোংরা সোফা। আপনি আমায় টিস্যু দিলেন মুখ মুছতে। আর এখন আপনি বলছেন আপনি আমায় খুন করেছেন। রাইট?


- রাইট। 


- জলের বোতলটা এগিয়ে দিন না, আপনার পাশেই আছে।


- এই যে। 


- থ্যাংকস। আচ্ছা মরে গিয়েও আমার পিপাসা পাচ্ছে কেন?


- কারণ আপনি খুন হয়েছেন। মারা যাননি।


- খুন হয়েছি, মারা যাইনি। বিউটিফুল। আপনি কবি? 


- মারা যাননি। কিন্তু যাবেন।


- হাউ? 


- ড্রিঙ্কে মেশানো ছিল। এক ধরনের কেমিক্যাল। আমাজনের জংলি ট্রাইবদের থেকে জোগাড় করা। সে লম্বা কাহিনী। টু কাট দ্য লং স্টোরি শর্ট, এই বিষ মাসখানেক ধরে আপনার শরীরে ছড়াবে মিস জয়িতা আর তারপর আচমকা মাল্টিপল অর্গান ফেলিওর। 


- মাসখানেকে মৃত্যু?


- অব্যর্থ খুন।


- তো। আপনি...ইয়ে...আপনার নামটা যেন কাল রাত্রে কী বলেছিলেন?


- অর্ণব। অর্ণব চৌধুরী।


- হুঁ মিস্টার অর্ণব, তো খুন করে এসব আপনি আমায় জানাচ্ছেন কেন। বাই দি ওয়ে এ'সমস্ত বাতেলা মনে হচ্ছে। 


- সেটাই তো বেস্ট পার্ট। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আপনার শরীরে কোন যন্ত্রণা থাকবে না। দুনিয়ার কোন ব্লাড টেস্ট আপনার রক্তের বিষ টের পাবে না। ইয়েট। শিওর ডেথ। 

- জোক।


- এগজ্যাক্টলি মাই পয়েন্ট। এই যে আমি আপনাকে খুন করে বলছি যে আমি আপনাকে খুন করেছি, আপনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। করতে পারবেন না। দ্যাট ইজ দ্য বিউটি। 


- আপনি আমায় কেন খুন করবেন অর্ণববাবু?


- আমি তো অর্ডার এক্সেকিউট করি জয়িতাদেবী। খুন করার প্ল্যান ছিল আপনার হাজব্যান্ড; অভীর। আপনাদের ডিভোর্সের ব্যাপারে উনি চিন্তিত। হেভি অ্যালিমনি, বিজনেসে শেয়ার এ'সব দাবী করবেন ভেবে ওনার ঘুম-টুম প্রায় গেছে।


- ও। তো নাউ দ্যাট ইউ আর টেলিং মি অল দিস, আমি কেন আগামীকাল আমার গুণ্ডা লাগিয়ে আপনাকে কিডন্যাপ করাব না? অভীকে শায়েস্তা করব না? যে মারা যাচ্ছে তার আবার পরোয়া কীসে? ভুলে যাবেন না অর্ণব; কন্ট্যাক্ট আমারও আছে।


- জানি। আই নো ইট ইজ আ রিস্ক। এই যে আমি আপনাকে এভাবে সমস্ত খুলে বলছি। তবে অভীর ব্যাপারে আপনি কিস্যু প্রুভ করতে পারবেন না। ওই যে বললাম। ম্যাজিক কেমিকাল। খান কয়েক কেমিস্ট্রির নোবেল খসাতে হবে এর রহস্য উদ্ধারে। 


- শার্প। তবে অ্যাট লিস্ট আপনার থ্রুতে...। 


- অভীকে পাবেন না। ইউ নো হিম। হি লিভ্‌স নো ট্রেসেস্‌।


- নাইস। বেশ। অন্তত আপনাকে শায়েস্তা করে যাব। গায়ের ঝাল মিটিয়ে নেওয়া যাবে। আর তো কিছুই করার নেই। আর এটা যে আমি করব সেটাই স্বাভাবিক। আপনার এমন খোলতাই ভাবে আমায় বলাটা কি বোকামি হল না?


- হল। রিস্ক নিলাম। 


- রিস্ক? কীসের রিস্ক?


- উইল ইউ ম্যারি মি জয়িতা?


- ওকে। এগেইন। লেট মি গেট দিস স্ট্রেট। আপনি আমায় খুন করেছেন। আমি মরিনি, কিন্তু অ্যাকর্ডিং টু ইউ শিওর খুন। অ্যান্ড নাউ ইউ আর আস্কিং মি টু ম্যারি ইউ?


- প্রিসাইস্‌লি।


- হোয়াই।


- ওই। কাল অসংলগ্ন অবস্থায় আপনি কোমল গান্ধারের কথা বলছিলেন। আমি আপনার পাশেই ছিলাম গোটা রাত। বাকি কারোরই তেমন হুঁশ ছিল না। আর ইয়ে, শুনেছিলাম যে প্রেমের পড়তে বিশেষ কোন কারণ লাগে না। 


- ওউ। খুন করলেন। তারপর প্রেমে পড়লেন। 


- এগজ্যাক্টলি। অবিশ্যি বিয়ের জন্য ইকুয়াল প্ল্যাটফর্ম দরকার। আপনাকে খোলসা করে সে'টা হল।


- হাউ?


- আপনি আমায় রিজেক্ট করলে নিজের গুণ্ডাদের দিয়ে খুন করাবেন। খুনের প্রতিশোধ। আর আপনি আমায় অ্যাক্সপেট করলে...মানে আমরা বিয়ে করলে অভীবাবুর অন্য লোক আমায় খুন করবে। অর্থাৎ আমরা দু'জনেই মারা যাচ্ছি। আমি আপনাকে খুন করেছি; ইয়েস। কিন্তু দেয়ারআফটার ভদ্রলোকের মত ভালোবেসেছি। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে খোলতাই ভাবে যখন বলছি, তখন সন্দেহের কোন মানে হয় না। 


- আপনি উন্মাদ অর্ণব। 


- দেখুন আপনার এক্স-হাজব্যান্ড আপনাকে জ্যান্ত রেখে যে মৃত্যুযন্ত্রণায় রেখেছিলেন...।


- স্কাউন্ড্রেলটার নাম নিও না।


- আমি আপনাকে খুন করেছি। ওকে। তবে দু'মাস রয়েছে। একটা রিয়েল বিয়ে আমি আপনাকে অফার করছি।পুরনো স্যাঁতস্যাঁতে ব্যালকনি, ব্যালকনিতে মোড়া, মোড়ায় লাল ছাপার শাড়ি কালো ব্লাউজে আপনি, আপনার পায়ে হেলান দিয়ে ঢলা পাজামায় আমি মেঝেতে লেপ্টে। আমার হাতে ১০১ জোক্‌সের বই। আপনি বাজে জোকে হাসতে পারেন জয়িতা?


- জাস্ট দু'মাস। আপনি-আজ্ঞেতে খরচ করবে অর্ণব?