Skip to main content

Posts

Showing posts from January, 2016

ঢিপঢিপ

গরম। চিটচিটে গরম। জানুয়ারি বখে গেছে একদম। বইমেলা ঘুরতে এখন আর হাফ সোয়েটার গায়ে চাপাতে হয় না; দুপুরের দিকে তো নয়ই।  অনুপ একাই এসেছিল। বইমেলা একা ঘুরলেই স্বস্তি। এ তো আর পাঁপড় ভাজা নাগরদোলা চড়ার মেলা নয় যে হইহইরইরই করে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দেওয়া। এখানে প্রত্যেকের নিজস্ব গতিতে বিচরণ করাটা জরুরী। জরুরী। প্রেমিকা, বন্ধুবান্ধবে ছিটকে না গিয়ে মেলায় তাই একা আসে অনুপ।  রবিবারে ভিড় হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ একটু বাড়াবাড়ি রকমের ঠ্যালাঠেলি হয়েছে। মিত্র-ঘোষের স্টলও উপচে পড়ছে, দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। স্বস্তিতে নতুন বই উলটে পাল্টে দেখারও জো  নেই। বিরক্তিটা লাগামছাড়া লেভেলের দিকে পৌঁছচ্ছিল; ঠিক তখনই  মেয়েটার দিকে চোখ গেল অনুপের।   আলগা শ্রী ছিল একটা মেয়েটার মুখে, আর মোটা কালো ফ্রেমের চশমার প্রতি অনুপের একটা পুরনো দুর্বলতা রয়েইছে। তবে অনুপের নজর মেয়েটিতে আটকায়নি; আটকে ছিল মেয়েটার টিশার্টে। সাদা টিশার্ট, জিন্সের ওপর পরা। যেমন হয়। কিন্তু ব্যাপারটা ছিল টিশার্টের বুকে আকা স্কেচটাতে; স্কেচটা ছিল ঘনাদার।  এই কম্বিনেশনটা বড় ভালো লাগায় চুবিয়ে দিল অনুপকে। যে মেয়ে ঘনাদাকে টিশার্টে নিয়ে ঘোরে, তাকে অবহ

গান ও স্মৃতি - ২

কিছু গান ফ্রেমে বাঁধাই হয়ে থাকে কথায় নয়, সুরে নয়, এমনকি গায়কীতেও নয়। চলকে ওঠা মুহূর্তে আটকে থাকে কিছু গান; কাঁচা নীল রঙে আটক পড়া ছোট্ট সবুজ পোকাটা যেমন। তেমন। তখন বোধ হয় ক্লাস ফাইভ। বা সিক্স। সহজে বলতে গেলে হাফপ্যান্টই তখন নিয়ম। মামাবাড়ি। সন্ধ্যাবেলা।   হাত পা ধুয়ে এসে বসেছি টিভির ঘরে। দাদু আনন্দবাজারের শব্দ-ছক কষছেন। দিদা ঘরে ঢুকলেন, হাতে স্টিলের ঢাউস বাটি। বাটি ভরা দুধ; তাতে মুড়ি আর আম। পাশেই ঠাকুরঘর থেকে ভেসে আসা ধূপের গন্ধ আর হিমসাগর মিলে মন ভারী করা ব্যাপার। টিভিতে তখন বাংলা সিনেমা। সাগরিকা। গানের সিকুয়েন্স। উত্তম অত্যন্ত কাঁচা ভাবে পিয়ানো বাজানোর চেষ্টা করে চলেছেন। পিয়ানোর ওপরে ফুলদানি; উত্তমের মুখে তার চেয়েও দৃষ্টিকটু ভাবে সাজানো হাসি। “সেই রূপকথারই দেশে, যে রং আমি কুড়িয়ে পেলেম প্রাণে; সুর হয়ে তাই ঝরে আমার গানে তাই খুশির সীমা নাই, বাতাসে সে তার মধুর ছোঁয়া পাই জানি না আজ হৃদয় কোথায় হারাই বারে বারে   সাত সাগরের পাড়ে আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে”। ঠিক সেই সময়। ঠিক সেই সময়। পাশের বাড়ি থেকে স্বাতীদি এসেছিলে দিদার কাছে ছুঁচ চাইতে। ছুঁচ। ডেফিনিটলি মনে

গান ও স্মৃতি - ১

কলেজ স্ট্রিটের শেষ ট্রামের ঘরঘর গায়ে মেখে রাত চুইয়ে নামছে মেসের সরু চৌকি বেয়ে। মাথার নিচে নরম হয়ে আসা পেট পাতলা বালিশ, মাথার পাশে ফিলিপ্সের ছোট রেডিও। রাতের মিশমিশে মিশে যাওয়া ভালো লাগা জানুয়ারির রাত জুড়ে। জানুয়ারিই হবে। বা ডিসেম্বর। কারণ লেপ ছিল। আর পেতলের পুরনো কলের মুণ্ডু ঘুরিয়ে টেনে আনা তিরতিরে জলের দাগের মত; রেডিও থেকে রিমঝিমে আদর হয়ে ভেসে এসে ছিলেন কবীর সুমন স্বয়ং। চেনা গান সেদিন অচেনা হয়ে ভালোবাসা হয়েছিল, অথবা ধুলো ঝাড়া প্রিয় বই যেমন। প্রিয় বন্ধুর  নাম লেখা লেবেল আঁটা স্কুলের নোটবই যেমন।  লেপ আরও মখমলে মেজাজে চেপে ধরেছিল। “বড় বেরঙিন আজকাল কাছাকাছি; কোন রং পাই না তাই; দিতে পারি না কিছু”। সুমন গানে নয়, স্মৃতিতে বিঁধেছিলেন। নোনতা অব্যক্ত রক্তে ভিজেছিল বালিশ। না দেওয়া’দের দল সেজেগুজে শাড়ি পরে দরজার সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছিল। ভূতগ্রস্ত আমি বিড়বিড়ে মন্ত্র পাঠ করেছিলাম “এই মলিন আর এ ধূসর পথ চাওয়া এ চাওয়ার রং নাও তুমি না পাওয়ার রং নাও তুমি আগামীর রং দাও তুমি”। গানটা শামিয়ানা হয়ে দুনিয়া ঢেকে দিয়েছিল। রাত বাধ্য বেড়ালের মত লেজ নেড়ে খাটের তলে এসে বসেছ

ফিস্টি আর মাথা ঝিমঝিম

পিকনিক বড় কপিবুক। সাজানো, গোছানো। যাত্রাপথে ডিম পাউরুটি কলার ব্রেকফাস্ট। বাগানবাড়ি বা গঙ্গার ধারের সবুজ। লাঞ্চের সাজানো মেনু। ব্যাডমিন্টন। হাউসি। অন্তাক্ষরী। স্টেপ আউট করলে আড়াল মাপা দু পেগ। শিশু বৃদ্ধ সম্বলিত মিহি নরম পরিবেশ। -"পিকনিক রুহআফজা, বুঝলি?", মাটির ভাঁড়ে ব্লেন্ডার্স প্রাইড ঢালতে ঢালতে বোঝাচ্ছিলেন বাপ্পাদা, "আসলি চিজ হচ্ছে ফিস্টি"। - "তফাৎ আবার কী?", দীপু বাপ্পাদার ভক্ত। দীপু ফিজিক্সে নব্বুই চায়না। বাপ্পাদার মত ইনস্যুইং করতে চায়। বাপ্পাদার মত টপাটপ ক্যুইজ জিততে চায়। বাপ্পাদার মত গল্প লিখতে চায়। দীপু বাপ্পাদা হতে চায়। - "তফাৎ!  পিকনিক স্পটের শৌখিনতা নেই; ছাদের নিভৃতে মেজাজ ফারমেন্ট হয়। ফিস্টি বন্ধুদের চক্রব্যূহ বস, ন্যাকামির অর্জুনপুত্র এন্ট্রি নিয়েছে কী অনস্পট কচুকাটা। অন্তাক্ষরী নয় টুয়েন্টি নাইন। জানিস খেলতে?" - " অল্প, কল-ব্রে'টা জানি"। - "আজ শিখিয়ে দেব"। - "শেখাবে?"। - " আলবাত শেখাব। আমার একটা রেস্পন্সিবিলিটি আছে না। মিঠে, আজ ট্যুয়েন্টিনাইনে দীপু আমার পার্টনার"। - "আমি তোমার পা

দীপক চ্যাটার্জীর বিকেল

বিকেলটা বড় হতে হতে কমলা হলুদে আকাশ ঢেকে ফেলেছিল। হাওয়ায় অল্প ধুলো,  ভিড়ের গন্ধ, মরা শীত আর মিঠে হইহইয়ের ঘুঙুর। দীপক চ্যাটার্জীর একটা হাফ লিটারের জলের বোতলে চুমুক দিলেন। শীতটা চলেই গেল। বিকেল দানা বাঁধার সাথে সাথে মেলায় লোক বাড়ছে। বইয়ের বড় স্টলগুলোর ধারে কাছে ঘেঁষা মুশকিল হয়ে উঠছে। ঘড়ি দেখলেন দীপক, এই নিয়ে গত তিন মিনিটে অন্তত সতেরোবার। লিটল ম্যাগাজিনের ওদিকে একবার যাওয়া দরকার; কোন ছোট প্রকাশক অমূল্যদার একটা কবিতার বই ছেপেছে। কোন এক টেবিলের কোন এক কোণে সে বই রাখা; কেনা দরকার। কবিতার জন্য নয়, অমূল্য বসুর জন্য। বেনফিশে একবার যাওয়া কর্তব্য। সাতটা নাগাদ সুমনরা আসবে। তার আগে যেটুকু সময়। দীপকের অবশ্য মেলাটেলা ভালো লাগে না, উনি কলেজ স্ট্রিটের ভক্ত। কিন্তু যার ভালো লাগে সে এখনও এলো না। কুন্তলিকা বিরক্ত হয় দীপকের বইমেলার প্রতি অবজ্ঞায়। কুন্তলিকা সেন জোর দিয়ে বলে থাকেন বইমেলার স্নেহ যে আবিষ্কার করেনি সে হয় অলস বা নয়তো সে বইয়ের চরিত্র সম্যক বোঝে না। সে বলে; গাদাগাদা বই পড়লেই বইকে বেশি ভালোবাসা যায় না; যুক্তি দিয়ে সে বলে গান্ধারীর গায়ে কি যশোদার চেয়ে বেশি মা-মা গন্ধ?  দীপক এ'সব শুন

অনুভব দাসগুপ্তর স্বপ্ন

- ডাক্তারবাবু, একটা ছোট ব্যাপার।  - হ্যাঁ বলুন।  - না বলছিলাম। আপনার সেক্রেটারি স্লিপে আমার নাম লিখেছে অনুভব দাসগুপ্ত।  - আপনি তো অনুভব দাসগুপ্তই অনুভববাবু।  - না মানে, একটা স্পেস আছে। দাস আর গুপ্তের মাঝে। দাস স্পেস গুপ্ত আর দাসগুপ্ত টেকনিক্যালি ঠিক এক বলা যায় না...।  - আচ্ছা পিয়াকে বলে দেব পরের বার ঠিক করে লিখতে।  - না মানে। এবারে ঠিক করা যায় না? - এটা তো মিনিংলেস্‌ একটা স্লিপ...। এইত্তো। আপনি চলে গেলে এটা ফেলে দেওয়া হবে।  - তবু। ডাস্টবিনে সামান্য ভুল পড়ে থাকার চেয়ে না হয় ঠিক কিছু পড়ে থাকবে।  - অ। এই যে। এই নিন স্লিপ। ঠিক করে নিন।  -  কেটে ঠিক করব? - অবভিয়াসলি।  - বলছিলাম ডাক্তারবাবু, আপনার পেনটা কি কালো কালির?  - কেন? - না মানে, আমার পেনটা নীল। আর আপনার সেক্রেটারি কালো কালিতে এই স্লিপে লিখেছিলেন।  - এই যে কালো পেন।  - থ্যাংকস। এই নিন। স্লিপটা ঠিক করে দিয়েছি।  - আর ইউ অ্যাট ইজ্‌ নাউ মিস্টার দাস স্পেস গুপ্তা? - ইজ্‌? ইজেই তো নেই। সে জন্যেই তো আপনার কাছে আসা।  - রাইট। ঠিক। বেশ। বলুন তাহলে। শুরু থেকে বলুন। অসুবিধেটা কী, কেন আপনি ট্রাব্‌লড হচ্ছেন। ম

...ভূত তো নয়

এত ওপর থেকে বাইনোকুলারে চোখ রেখেও কেঁপে উঠতে হয়। ওই যে। এক্কেবারে নিচে। দৈত্যটা একটা মাদুর পেতে শুয়ে। এতটা নিচে যে তাকাতেই পেটের ভিতরটা কেমন গুলিয়ে আসে। কিন্তু উপায় নেই। দৈত্যটার কাছে পৌঁছতেই হবে। এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে মনটাকে গুছিয়ে নিলাম। ঝাঁপ দেওয়া ছাড়া গতি নেই। সাবধানে নামতে হবে দৈত্যটার পাশে। এমন ভাবে নামতে হবে যাতে খুব একটা চোট না লাগে। এত উপর থেকে ঝাঁপানো, চাট্টিখানি কথা? এমনটা তো নয় যে আমার পিঠে প্যারাশুট বাঁধা, ঝাঁপ দেবো আর টপাৎ করে তা খুলে যাবে আমি পালকের মত ভাসতে ভাসতে নেমে আসব। এ এক্কেবারে ডাইরেক্ট ঝাঁপ, শোঁশোঁ করে নেমে আসা আর তারপর দুম ধপাৎ। কিন্তু উপায় নেই। নেই উপায়। জয় মা বলে দিলাম ঝাঁপ। আহহ। ছড়েছে অল্পবিস্তর। পিঠে কিছুটা মোচড়। তবে আহামরি নয়। টিকে যাব। সোজা গিয়ে ঠেলা দিলাম দৈত্যটাকে। - "ভায়া শুনছেন?", নরম করে ডাকলাম। - "আ...আ...", অমন দশাসই চেহারা নিয়ে কেউ অমন করে ঘাবড়ে যাবে ভাবিনি। - "আ আ কী করছেন"। - "বই...বই..."। - "আহ! বইই তো। ভূত তো নয়", অভয় দিতেই হল। - "বই কথা..কথা বলছে...&qu

চশমার খোঁজ

চশমাটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় মুশকিল হল। পড়ার টেবিল থেকে বাথরুমের তাক থেকে মাথার উপর, খুঁজতে কসুর করিনি। কিন্তু কোথাও নেই। ভুলুকে জিজ্ঞেস করলাম যদি সে চশমা কমোডের ভিতরে রেখে এসে থাকে, সে বোধ হয় ল্যাজ নেড়ে জানালে তেমন কিছু ঘটেনি। শ্রীতমার মোবাইলে ফোন করলাম। খেইমেই করে উঠলে। বারো বছর আগে দূরে গেছে বলে এখনকার চশমার খবর রাখবে না? এ কি মনুপ্রণীত বিধান? মহামুশকিল। সিগারেট জ্বালবার চেষ্টা করলাম। বুঝলাম চশমা চোখে না থাকলে সিগারেটের স্বাদ পালটে যায় আর ফিল্টারের মাথায় দেশলাই লাগানো র কোনও মানে হয় না। চশমা আর কোথায় থাকতে পারে? কী মনে হওয়ায় চট করে একটু ফ্রীজের ভিতর হাতড়ে দেখে এলাম। নেই। আর ফ্রীজে মেয়োনিজের বদলে ময়শ্চারাইজিং ক্রীম রয়েছে। সেটা এক প্রকার অনভিপ্রেত ভাবে জানলাম। জিভের তো চশমা লাগে না। ফিরে এসে ড্রেসিংটেবিল থেকে ময়শ্চারাইজিং ক্রীমের ডিবেটা তুলে আবর্জনার বাক্সে ফেলে দিলাম। চিন্তা বাড়ছে।  এখনও বিকেলের মরা আলো রয়েছে। অবশ্য ভেবে দেখলে টিউবলাইটও রয়েছে। কীসের ভাবনা? আলো কম বলেই হয়তো নজরে পড়ছে না। লাফ দিয়ে উঠে টিউবলাইটের স্যুইচ দিলাম। বনবনে ফ্যানে ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করল। ফিরে গ

মই বেলা

- বইমেলা ইজ দ্য ফাইনেস্ট টাইম অফ দ্য ইয়ার। - অবশ্যই। অবশ্যই। বইমেলার মেজাজটাই আলাদা। পড়ন্ত বিকেলে নাক-মন জুড়ে নতুন বই মেশানো গন্ধ। জমজমাট আড্ডা আর ফিশফ্রাই। স্বর্গ এখানেই। এখানেই। এখানেই। - না না। সে'জন্য বলছি না। - তবে? বইমেলায় প্রেম? হ্যাঁ সেটাও একটা...। - না বস। সে'সবের জন্য না। - ওহ। লিট্‌ল ম্যাগাজিন। কবিতা নিয়ে আড্ডা। - না না। সেস'ব ব্যাপার নয়। - দেন হাউ ইজ বইমেলা দ্য ফাইনেস্ট টাইম অফ দ্য ইয়ার? - কারণ এই সময়টা কলেজ স্ট্রিটের বেফালতু ভিড়টা একটু কমে। রিয়েল প্লেজ্যান্ট অ্যাফেয়ার।

মদন মিহির

বিড়িটা নিভিয়ে পকেটে রাখলেন মদন। আরও দু'টান দেওয়া যাবে। তবে এখন সময় নেই। মিহির দত্ত পান চিবুতে চিবুতে বেরোলেন এইমাত্র; রাতের খাওয়ার শেষে হাঁটতে বেরোনোর অভ্যেস তার পুরোনো। আজ এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করা যাবে না মিহিরবাবুকে। মধু মল্লিক লেন পেরিয়ে সর্দার স্ট্রিটের অন্য প্রান্তে বিনোদের পানের দোকান। সেখান থেকে একটা গোল্ডফ্লেক নিয়ে বিনোদের সাথে সামান্য গুলতানি চলে তার। তারপর হেঁটে ফেরা। মদনের মুখস্ত। বিনোদের দোকান থেকে বেরিয়ে ধিমে গতিতে ফিরতি হাঁটা শুরু করেন মিহির দত্ত। রোজকার মত। পিছু পিছু মদন, বেড়ালের মত। মিহিরবাবু অনুভব করতে পারেন; সময় হয়ে এসেছে। সে এসেছে। নাড়ির টান। যাবে কোথায়? ** সুমিতার চিন্তা কমে না। স্বামী মিহিরবাবুকে যমের মত ভয় পান তিনি, তাকে প্রশ্নটা করা যায় না। আবার অন্য কাউকে শুধোলেও কী না কী ভেবে বসবে। অথচ সুমিতা নিশ্চিত। একদম নিশ্চিত। মিহিরবাবু গোপনে মন্ত্রপূত বিড়ি খান। আগেই সন্দেহ হত, কিন্তু এখন নিশ্চিত। গোল্ডফ্লেক সিগারেট খাওয়া মিহিরবাবুর বহুদিনের অভ্যেস। অথচ প্রত্যেক ছ'সাত হপ্তা অন্তর তার পকেট থেকে আধ খাওয়া বিড়ির টুকরো আবিষ্কার করেন সুমিতা। গত ছ

শিঙ্গাড়া পায়েস

রাতের গঙ্গার একটা থমথমে ভূতভূত ব্যাপার আছে। স্ট্র্যান্ড ঘাটে অন্ধকার স্তূপ হয়ে পড়ে আছে। রাস্তার বাতিগুলো নিভে গেছে।  রাস্তা, ফুটপাথ, ঘাটের বেঞ্চিগুলো কালোয় মিশে গেছে। গঙ্গার রং ম্যাটম্যাটে কালো। খান তিনেক নৌকা ঘাটে লাগানো, তার একটার বুকে হ্যারিকেন; অন্ধকারের মেজাজে সামান্য আবছা হলুদ মিশিয়ে দিচ্ছে।  ঠাণ্ডায় কামড় রয়েছে। জানুয়ারির রাত বলে কথা। সোয়েটারের ওপরের কান মাথা মোড়ানো শাল। অন্ধকার হাতড়ে একটা বেঞ্চি খুঁজে বসলে অর্ধেন্দু। শিশিরে ভেজা বেঞ্চির কাঠ। ছ্যাঁত লাগে। একটা সিগারেট ধরিয়ে মিহি সুরে গান ধরতে হল।  " দিন ঢল যায়ে হায়, রাত না যায়ে; তু তো না আয়ে তেরি ইয়াদ সতায়ে"। দ্বিতীয় সিগারেট ধরাতে যাবে এমন সময় কাঁধে হাতের চাপ টের পেলে অর্ধেন্দু। পৃথা এসেছে।  - এত দেরী হল?  - কোথায় দেরী! দেড়টায় আসার কথা ছিল তো। এখন সবে একটা তেত্রিশ। - বস। - হাত ধরে টানাটানি করবি না।  - কবে করেছি? - আজ যদি করিস? - আজ কেন করব? -  এত রাত। আমি একা মেয়ে।  - ধুস। বস।  - এনেছিস? - ইয়ে লো। তুই এনেছিস? - ইয়ে লো। মুচুর মুচুর খানিকক্ষণ খাওয়াদাওয়া চলল। অর্ধেন্দু হাপুস হুপুস করে গুড়ের পায়েস খেলে। পৃথা খেলে নিউ মোদক স

সায়ামিজ ট্যুইন

- কাল ফিজিক্স প্র‍্যাক্টিক্যাল। বেসিকস ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। এই বেলা। - অবশ্যই। তবে কিচি ফোন করেনি। ফোন ধরেনি।   - সামন্তবাবু রাগ পুষে রেখেছেন। ইন্টার স্কুল সেমিফাইনালে তোমার অকারণ লাল কার্ড দেখাটা উনি মাফ করেননি। কোচ হিসেবে সেটা স্বাভাবিক। আর ফিজিক্সের মাস্টার হিসেবে কাল তোমায় রগড়াবেন সেটাও স্বাভাবিক। পড়তে বসো চাঁদু। - হ্যাঁ। সামন্তবাবু কাল অন ফায়ার থাকবেন। এ বেলা পড়তে বসাটা দরকারি। কিন্তু কিচি চিরকুটও পেয়েছি কিনা বোঝা যাচ্ছে না। - ফিজিক্সে ধ্যারালে সামন্তবাবু আর কিচি দু'জনে চা বকাবে। ফিগারেটিভলি। - অতিশয় চিন্তার ব্যাপার। এই বেলা বই খোলা উচিত। কিন্তু কিচি গতকাল বিকেলে কাটকাট উত্তর দিয়েছে। - ফাইন্যালে নম্বর যোগ হবে বস। আর ফিজিক্সে ফোঁটা ফোঁটা নম্বর সোনা গলানো জল। - হ্যাঁ। ক্রিটিকাল। ক্রিটিকাল। ঝপাৎ করে নোটগুলো রিভাইজ করা দরকার। কিন্তু কিচিদের ল্যান্ডলাইনেও শুধু কাকু ফোন ধরছেন। যদিও কিচি জানে এ সময় একমাত্র কল করনেওলা বান্দা কে। - ফিজিক্স। বস। ফিজিক্স। - অফ কোর্স। কিন্তু। বস। কিচি ফোন ধরছে না। নতুন অঙ্কের মাস্টার রেখেছে কিচির মা। - সো? - সো কিছু না। মানে ইঞ্জি

সুর

জানালা খুলতেই হুহু বেগে হাড়কাঁপানো দমকা হাওয়া এসে নড়িয়ে দিল সুলেমানকে। সর্দি লাগলে কুছ পরোয়া নেই। কিন্তু এমন কনকনে হাওয়ার ঝাপটাই আজ মন কেমন করে দিচ্ছে। কাঁপাচ্ছে কাঁপাক। খালি গা, তার ওপর বাতাসে আলতো বরফ কুচি উড়ছে। ভেবে নাও সুলেমানের কেমনটি লাগছে। তবু সুলেমান জানালা বন্ধ করলে না। এ দুনিয়ার বরফ বাওয়া হাওয়া; এমন মন ভাসানো হাওয়া আর তো জুটবে না। কাল ফাঁসি। কোমরে আর পায়ের লোহার শিকল কনকনে ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে। কুছ পরোয়া নহি। হাওয়াটুকু আসুক। হাওয়া। মায়ের গন্ধ মাখা হাওয়া। বাবার নিজের হাতে ভুট্টা ফলানো আদরে চষা রুক্ষ মাটি ছোঁয়া হাওয়া। রাবেয়ার নীল স্কার্ফে আঙুল বোলানো হাওয়া। কদ্দিন এই অন্ধকার ঘরে আটকে সুলেমান। কতদিন। কতদিন। সেই আট বছর বয়স থেকে। "রাজরানী কী বাজে সুরে গান গায় গো" বলে ফেলেছিলে সে। সে কথা শুনেছিলেন বিদূষক। বিদূষক জানান মন্ত্রীকে। মন্ত্রী জানান মহামন্ত্রীকে। মহামন্ত্রী রাজার কানে দেন সে খবর। রাজা পেয়াদা তলব করে ফাটকে পোরেন আট বছরের সুলেমানকে। "হারামজাদা বলে কী না রানীর গলায় সুর নেই!", কান থেকে তুলোর টুকরো বার করতে করতে বলেন রাজা, &q

অনেকদিন পর

১ - ওই তারাটা কী? - নীলচে ওইটে? - হুঁ। - ওটা তারা নয়। গ্রহ। - ওহ। ওটাকে তারা ভেবে গান লিখে ফেললাম গো দাদা। - পছন্দ? - কী? - গ্রহটা পছন্দ? যাবি? - যাওয়া যায়? - প্রাণ আছে তো সেখানে। - তাই নাকি? - তুই বড় ভুলো বোধি। কতবার তুই ঘুরে এসেছিস ওখান থেকে। - ওহ। তাই বুঝি এই টানটা অনুভব হচ্ছে? - একদম। যাবি আবার ওখানে? - কাল গোটা রাত ও'দিকে তাকিয়েই কেটে গেল। ইচ্ছে হচ্ছে। পাঠিয়ে দাও। - যদি বিরক্তি আসে? - আসুক। ক'দিন তবু বেঁচে আসি। - বেশ। ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তা হ্যাঁ রে বোধি, গানটা কী লিখলি বললি না...? - গেয়ে শোনাই? - হোক। - সারারাত জ্বলেছে নিবিড়....। ২ -জয়েনিং ডে'তে রেসিগনেশন? আর ইউ আউট অফ ইওর মাইন্ড ইয়ংম্যান? -ফোন ধরে যে বেলা নয়; বেলার মা দাঁড়িয়ে ছিলেন চুপচাপ, সেটা ঠাহর করতে পারিনি। - মানে? - মানে বুঝে কাজ নেই স্যার। এক কপি রিসিভ করে দিয়ে দিন। আজ রাতের ট্রেনে দেওঘর যাচ্ছি। পার্মানেন্টলি।

খুকুর ভয়

- এই যে আমি ভূত, আমায় ভয় লাগে না? - ভয় কেন লাগবে? - আমি ভূত বলে। - তাতে আমার কী? - তুমি বাচ্চা। তোমার ভূতে ভয় করবে। নিয়ম। - সে কী?  - তাই তো। ভয় করছে না? - এ কী কথা খুকু। তোমার আপব্রিঙ্গিং এমন বেকায়দা হচ্ছে কেন? বাপ মা তোমায় ভূতের কথা বলেনি কিছু? - বলে তো। রোজ বলে।  - তবু ভয় পাচ্ছ না? এত খ্যাকখোকখুক করছি, তাও ভয়ে আসছে না?  - না। ভূতেরা তো ভালো। তাঁদের ভয় কীসের?  - ভূতেরা ভালো? কোন রূপকথার গপ্প শোনায় তোমায় বাবা মা? - ওই যে তাকের ওপর বই। ওই বই থেকে বাবা মা ভূতের গল্প পড়ে শোনায়। আমি কী না ছোট। আমি কী না পড়তে শিখিনি এখনও। তাই বাবা মা বই থেকে পড়ে।  - ওই বইতে ভূত আছে? - আছে তো। কত ভূত।  - বেশ। তাহলে তোমায় বলেই দিই। আমি ভূত নই। আমি চোর। চুরি করতে এসেছি তোমাদের বাড়িতে। তোমার বাবা-মা টের পায়নি। কিন্তু তোমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছি।  - ও। তবে তুমি ভূত না? চোর? - হ্যাঁ। তবে? আমি চোর। কী! এবার ভয় করছে তো? হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে? - বা রে। ভয়ের কী আছে। চোরেরা তো ভালো। মজার।  - চোরেরা ভালো? মজার? - খুব মজার। আর চোরেদের মত ভালো লোক হয় না।  - এই তোমার বাপ মা শিখিয়েছে? - হ্যাঁ, গল্প ব