Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2022

পাপাইদা আর বিশ্বাসঘাতক

সে'কদ্দিন আগের কথা। সে'দিন পাপাইদা বসেছিল মেঝের ওপর পাতা মাদুরে। পাশবালিশে হেলান দিয়ে। দু'বছরের মাথায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ওর রোয়াব খুব বেড়ে গেছিল। বকাবকি করার সময় ইয়াব্বড় সব ইংরেজি শব্দ আউড়াত। খবরের কাগজ ঘেঁটে পলিটিকাল নিউজ পড়ত। ওর মেজকার দামী জিলেটের রেজার চুরি করতে গিয়ে দু'বার গাঁট্টাও খেয়ে ফেলেছিল। ফুলটসে বোল্ড হওয়ার পর হাওয়ার ডিরেকশন আর টেনিসবলের 'টেকনিকাল গ্যাপ' নিয়ে গা-কাঁপানো লেকচার ঝাড়ত। মোটের ওপর, পাপাইদাকে একটু বাড়তি সমীহ করতে শুরু করেছিলাম। এই যেমন একদিন বাবার পকেট থেকে পড়ে যাওয়া পঞ্চাশ টাকার নোটটাকে খামোখা পকেটে ফেরত না দিয়ে সোজা চপের দোকানে গেলাম, কিন্তু পাপাইদার প্রতি প্রবল সমীহ ব্যাপারটা মাথায় রেখে আর ওকে বেগুনিতে ভাগ বসানোর জন্য ডাকলাম না। যা হোক, সেই দুপুরে পাপাইদার চিলেকোঠার চেম্বারে না এসে উপায় ছিল না। আমি একটা বেতের মোড়ায় লেতকে বসেছিলাম। আড়াই মিনিট পাপাইদা চুপচাপ সিলিংয়ের তাকিয়েছিল, মাঝেমধ্যে বলছিল "কোয়াইট ইনক্রেডিবল"। খানিকক্ষণ পর পাশবালিশ সরিয়ে রেখে সোজা হয়ে বসল পাপাইদা।  - ভুতো, আর ইউ শিওর? - আমি নিজের চোখে দেখে এলাম। - বিট্

রিল্যাক্সিং

- বুঝলে দত্ত, এ'বার পুজোটা ভাবছি টোটালি রিল্যাক্স করে কাটাব। - আপনি তো লাকি চ্যাপ দাদা, টানা পাঁচদিন ছুটি? তা, এ'বারেও কি দার্জিলিং? নাকি কেরলটেরল কিছু। - ঘোরাঘুরি যে কতটা ট্যাক্সিং...উফ। টিকিট বুক করো। প্যাকিং করো, আনপ্যাকিং করো, রিপ্যাকিং করো, রিআনপ্যাকিং করো। গাড়ি ভাড়া করো। সাইটসিয়িংয়ের ছক কষো। প্ল্যান এ, প্ল্যান ব, প্ল্যান সি। উফ, ভাবতেই পালসরেট বেড়ে যাচ্ছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। লেবুসরবত খেতে হবে এ'বার। - ও, তা'হলে এ'বার পুজোয় মণ্ডপ সাফারি। হ্যাঁ, সেই ভালো। হাঙ্গামা কম। ঠাকুর দ্যাখা, খাওয়াদাওয়া; হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফুর্তি।  - তুমি দুর্গাপুজো দেখেছ কোনোদিন দত্ত? হাবভাব দেখে তো মনে হয় তুমি বলিভিয়ার মানুষ। উইকিপিডিয়া পড়ে দুর্গাপুজোর কথা জেনেছ। - সে কী! - ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতে কী পরিমাণ স্ট্যামিনা দরকার হয়,সে'টা তুমি জানো না? পায়ের মাসল এক্কেবারে লোহার মত হতে হবে। রেস্টুরেন্টে আড়াইঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য দরকার অ্যালুমিনিয়ামের কোমর। আর ঘাম, ধুলো, ইত্যাদি হজম করার ইনফাইনাইট ক্যাপাসিটি।  ঠাকুর দেখে রিল্যাক্স করা আর ঘামাচিতে বিটনুন মালিশ করা একই ব্যাপার। - পুজোর

ডিয়ার বেহালা মেট্রো

আজ বেহালা মেট্রোর ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে৷ এ'খবরটা কী ভাবে আত্মস্থ করব সে'টা বুঝে উঠতে পারছিনা৷ গত বেশ কিছু বছর ধরে মনের মধ্যে মেট্রো-পিলারগুলো সম্বন্ধে একটা শ্যামনগরের মেজোপিসেমশাই গোছের রেস্পেক্ট তৈরি হয়েছিল। গোটা সন্ধ্যে ড্রয়িংরুমের সোফা আলো করে বসে থাকা আর মাঝেমধ্যে ঝিমোনা ছাড়া ছাড়া সে পিসের তেমন কোনও কাজ নেই। তাঁর নিশ্চুপ উপস্থিতিটাই সে ড্রয়িং রুমের লক্ষ্মীশ্রী৷    যা হোক, বেহালা মেট্রোপিলারের উপকারিতা সম্বন্ধে স্কুলের ছেলেমেয়েরা সবে এস্যে লিখতে শুরু করেছিল৷ বেহালায় যা ভীড়, সুট করে চাইলেই তো আর পিরামিড বানানো সম্ভব নয়৷ কাজেই একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল যে আজ থেকে হাজার বছর পর যখন অদরকারি পিলারই বিশ্বজুড়ে ট্রেন্ড করবে, তখন সবাই "বেহালা স্টাইল অফ আর্কিটেকচার" নিয়ে দুর্বোধ্য সব বইটই লিখে ফেলবে৷ তারপর ধরুন মেট্রো ট্রেন চালানোর মত অদরকারী ব্যাপার নিয়ে বিশেষ মাথা না ঘামিয়ে দিব্যি সে মেট্রোলাইনের তলে তলে বাগান তৈরি হচ্ছিল, হাইলি কালচারাল মুর্তিটুর্তি বসছিল৷ ট্র‍্যাফিক জ্যামে গলদঘর্ম হতে হতে সে'সব ডিজাইনার পিলারদের দিকে তাকিয়ে থাকার যে মেডিটেটিভ এফেক্ট; সে'টা সত্যিই

আমার খাবারদাবার

আমি (এবং আমরা অনেকে) খাবারদাবার নিয়েই লিখি এত লিখি কেন? কারণ আমি (এবং সম্ভবত আমরা অনেকে) লিখিয়ে নই। যা নিয়ে গালগল্প করি, যে ভাষায় হে-হে-হো-হো গুলতানি চালাই; সে'গুলো টুকেবুকে রাখা ছাড়া আমার গতি নেই। আর আমার বেশির ভাগ চিন্তাভাবনা-গপ্প জুড়েই খাওয়াদাওয়া। অথচ আমি আর যাই হোক, খাদ্য-বিশারদ নই। খাওয়ার ইতিহাস সম্বন্ধে আগ্রহ থাকলেও আমি আদৌ তেমন ওয়াকিবহাল নই। সবচেয়ে বড় কথা, আমার খাওয়াদাওয়ার রুটিন শুধু সাদামাটা নয়, রীতিমত একঘেয়ে। আমার ভালোবাসার ঘ্যানঘ্যান শুধুমাত্র ওই পাঁচ-সাতটা পদের মধ্যেই ঘুরপাক খায়। এই বিরিয়ানি নিয়ে আহ্লাদ আর ওই রোল নিয়ে লম্ফঝম্প, এই ইলিশের দাম নিয়ে হাহাকার আর  মাংস কষা নিয়ে রোমান্স। আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল; যা কিছু একবার ভালো লেগেছে, সে গণ্ডীর বাইরে আর পা রাখতে ইচ্ছে করে না। চাইনিজ দোকানে গেলে ওই চাউমিন আর চিলি চিকেনের বাইরে ভাবতে পারিনা। ঘ্যামস্য-ঘ্যাম জায়গার মোমো ম্যাটম্যাটে লাগে, এ'দিকে মনের মধ্যে শুধু ওই অল্পবয়সের রবীন্দ্রসদন মেট্রোর কাছে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের প্লেট-বাটিতে মোমো আর জোলো স্যুপের কথা ভেবে হাহাকার। সাহেবি-শখে কেনা কনভেকশন ওভেন-ফোভেন জলে পড়ে আছে; আমার শু