Skip to main content

Posts

Showing posts from 2022

মুদীখানার অ্যাপয়েন্টমেন্ট

( পুরনো গল্পের পরের কিস্তি)  -  কী ব্যাপার? কী চাই ? তখন থেকে দাঁড়িয়ে আছেন অথচ কী চাই কিছু বলছেন না। দোকানের ভ্যিউ ব্লক করে কাস্টোমার টার্নওভার কমিয়ে দিন, আর কী! - ইয়ে, চৌধুরীবাবুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। - অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে? - অ্যাপয়েন্টমেন্ট? মুদীখানার দোকানে অ্যাপয়েন্টমেন্ট? - কী বিশ্রী ক্লাসিস্ট মেন্টালিটি আপনার ভাবুন। উইলিয়ামসন, হজেস অ্যান্ড কোম্পানিতে ঢুকে একজন ক্লার্কের দর্শনের আশায় দশটা টেবিল ঘুরে ঘুরে তদ্বির করা বাঙালি, সে মুদীর দোকানে এসে বাঘের বাচ্চা। - আহ, এ'সব কড়া কড়া কথার কী দরকার ভাইটি। - ভাই? ভাইটি? বাহ বাহ্‌! মুদীর দোকানের কাউন্টারের অন্যদিকে দাঁড়িয়ে গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে আড়াইশো মুগডাল ওজন করছি বলে আমি আপনার ভাইটি? আর রাস্তায় আপনার মোটরবাইক দাঁড় করানো কনস্টেবলকে ইয়েস স্যার, রাইট স্যার, নো স্যার? আপনি জানেন আমার পলিটিকাল সায়েন্সে অনার্স আছে? - বয়সে তো তুমি ছোটই, তাই ভাই বলে ফেলেছিলাম আর কী।  - থামুন মশাই। পাড়ার h  বয়সে আপনার থেকে বছর পাঁচেক ছোট হলে তাকে ভাইটু বলে হাত নাড়তেন? করলে বুঝতেন কত ধানে কত চাল। - সরি স্যার। ইয়ে, আপনি কি দোকানে নতুন? - ইন্টার্নশিপ করছি। ক

দলিল

- কী রে, কাল রাত থেকে কিছু খেয়েছিস? - হুঁ? - এই ঠোঙায় দু'স্লাইস বাটার টোস্ট আছে৷ খা। - রাখ৷ খেয়ে নেব খানিক পরে। - জ্যেঠু এখন কেমন আছেন অনি? - কেমন আছে বলতে পারব না৷ তবে জেনারেল ওয়ার্ড থেকে আইসিইউ তে সরানো খুব দরকার। - ডাক্তার কী বলছে? - আর পাঁচটা সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার যা বলে। ভ্যাকেন্সি নেই, লিখে দিচ্ছি; প্রাইভেট নার্সিংহোমে নিয়ে যান। - চেষ্টা করবি না? - আমার অবস্থা তো জানিস মিনু। - যদি আমি কিছু..। - চেষ্টা করছি৷ একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে কালকের মধ্যে আশা করি৷ তারপর না হয়..। - দেরী হয়ে যাবে না? - তুই দুম করে চলে এলি..স্কুল ছুটি? - স্কুল পালিয়ে এসেছি। - দিদিমণিরাও স্কুল কাটে তা'হলে। - অনি। টাকাটা আমি দিই না৷ কাল-পরশু সুরাহা হলে না হয়..। - কই, দে দেখি মাখন-রুটির ঠোঙাটা। খিদেটা চাগাড় দিয়েছে। - অনি, আমার থেকে টাকা নিতে না চাইলে তোর কাকার কাছে যা। প্লীজ, কথা বলে দেখ অন্তত। - গতকাল রাত্রে ফোন করলাম কাকাকে, বাবাকে ভর্তি করতে হয়েছে বলে। তারপর থেকে একবারও খোঁজ নিলনা। - দরকারটা তোর অনি। বাবা তোর। - আমি একটা ইউসলেস। - বেশ। এ'বার আগে খেয়ে নে। ** - হ্যালো। - মিনু, ব্যবস্থা হয়ে গেছে। বা

দুই-চার-চার দাদা

- এ'টা কি ট্যু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন? - হ্যাঁ। ঠিকই। কাকে চাই? - দিন না ডেকে বেলাকে একটিবার। - একটু হোল্ড করুন...। - মিটার যাচ্ছে বেড়ে...। - এই সেরেছে...ডাকছি তো...একটু ধরুন...। - এই পাবলিক টেলিফোনে...। - আরে হ্যাঁ, ডাকছি তো...। - জরুরী খুব জরুরী দরকার...। - সে তো বুঝলাম, কিন্তু গানটা না থামালে...। - হ্যাল্যোওওও...ট্যু ফোর ফোর...? - যাচ্চলে, আরে আগে ডাকতে দেবেন তো নাকি...। - ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন! - লে হালুয়া। - বেলা বোস তুমি পারছ কি শুনতে! - আরে বেলাকে ডাকতে পারলাম কই যে ফোন ধরে শুনবে! - দশবারোবার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমায় পেয়েছি...। - কাঁচকলা পেয়েছেন মশাই। গানের আবেগে বেলা কে হাঁক দেওয়ার সুযোগটুকুও দিচ্ছেন না তো। আগের ওই দশবারোবার রং নম্বরগুলোতেও জলসা বসিয়েছিলেন নাকি? টেলিফোন বুথের তো পোয়াবারো! - দেব না কিছুতেই আর হারাতে...। - আরে ছাই হারাবেন! আগে পেলে তারপর তো হারাবেন! বাপ রে বাপ! গানের কী ঠেলা! - হ্যালোওওওওওও ট্যু ফোর ফোর ওয়ান...। - বয়ে গেছে আমার কাউকে ডাকতে...। - ...ওয়ান থ্রি নাইন...! - রং নাম্বার! *খটাস*

তোমার প্রিয় ঋতু বর্ষা তাই

আমি উপলবাবু মানুষটাকে আদৌ চিনিনা৷ তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় শুধুই তাঁর গানের মাধ্যমে। গানের সঙ্গে জুড়ে যায় তাঁর কিছু আঁকাআঁকি আর খুচরো লেখালিখি। কোনও কারণে আমার ধারণা হয়েছে যে ভদ্রলোক মুখচোরা৷ এ যুগে (বা হয়ত সব যুগেই) মুখচোরা মানুষদের নিয়ে মারাত্মক সমস্যা; গোলমেলে হইচইয়ের মধ্যে তাঁদের দামী মিনমিনগুলো অক্লেশে হারিয়ে যায়, এবং সে হারিয়ে যাওয়াতে তাঁদের কোনও হেলদোল থাকে না৷ সেই উপলবাবুর একটা জরুরী মিনমিন, অর্থাৎ একটা নতুন গান (আমি প্রথম শুনলাম, সে অর্থে নতুন), স্রেফ বরাতজোরে এই দু'দিন আগে হুট করে কানে এলো৷ একটা অন্যায় হল, গানটা (এবং গানের অ্যালবামটা) উপলবাবুর একার নয়; তাঁর সঙ্গে জম্পেশভাবে রয়েছেন নীলাঞ্জনবাবু৷ ইউটিউব মিউজিক যে'ভাবে এ'গান থেকে ও'গান বেয়ে আপনা থেকেই তরতরিয়ে এগিয়ে চলে, তেমনই যাচ্ছিল৷ পরপর পুরনো বাংলা ব্যান্ডের গান বাজছিল। আমি ঘাড়-মাথা দুলিয়ে আহা-বাহা করে যাচ্ছিলাম৷ এমন সময় সুট করে এই "তোমার প্রিয় ঋতু বর্ষা তাই" গানটা প্লেলিস্টে ঢুকে পড়ল৷ সরলসিধে নির্ভেজাল প্রেমের গান; সে গানের সুরে মনে হয় কলজেকে কলেজে ফেরত পাঠাই৷ সে গানের কথায় মনে হয় সেই সরল বয়সে ফিরে যা

বাহ্‌

কলকাতায় আমরা মাঝেমধ্যে গভীর রাতের দিকে ঘুরতে বেরোতাম। অকারণে বেরোনো বলে সে ঘুরতে যাওয়ায় প্ল্যানিংয়ের ধকল থাকত না৷ ধাবার চা, বা কোনও আধ-চেনা দোকানের ম্যাগি; এ'সব দু'একটা স্টপেজ ছাড়া গোটাটাই শুধু ঢিমেতালে ড্রাইভ৷ ডিসেম্বরের কোনও একটা সময়, মাঝরাতের পর হুট করে পার্ক স্ট্রিটের দিকে ঢুকে পড়ে টের পেতাম; এইত্তো, ক্রিসমাসের আলো লেগে গেছে৷ কয়েকটা অস্ফুট "বাহ্" বেরিয়ে আসত৷ প্রতিবার। আরে, অজস্র টুনির ঝলমলে যদি "বাহ্"টুকু নাই বলতে পারি, তা'হলে আর এ জীবনে রইলটা কী। সেই মিঠে "বাহ্" টুকু সামান্য মিস করছি বটে।

শান্তনু চৌধুরী হালহকিকত

- চাউড্রি, ওয়েল ডান। - থ্যাঙ্কিউ স্যর। - এত ডিটেলড প্রেজেন্টেশন আমি খুবই কম দেখেছি। ডিরেক্টরস ওয়্যার ভেরি প্লীজড। - যাক, খাটাখাটনি সার্থক। - ইউ লুক একটু টায়ার্ড। কী ব্যাপার? রিল্যাক্স মাই বয়। আজ সন্ধেবেলা তোমায় এমন জ্যাপনিজ স্কচ খাওয়াব যে...। - আসলে স্যর, ঠিক ভাল লাগছে না...। - সে কী! আন্ডার দ্য ওয়েদার? - ইয়ে মানে, শরীর ঠিকই আছে...আসলে...। - ক্লান্তিটা অবশ্য ন্যাচরাল, স্ট্রেস তো কম গেল না। তবে এই উইকেন্ডটা একটু রিল্যাক্স করো, দেখবে এভ্রিথিং উইল বি ফাইন। ঈট ওয়েল। গো অন আ লং ড্রাইভ। আর লেটস সি...ইকিগাই বইটা পড়েছ? বড্ড সুদিং। লাইফের পার্স্পেক্টিভ এমন ভাবে পালটে দেবে...। - হুম, দেখি। - কিন্তু আজ সন্ধের গেট-টুগেদারটা ভুলো না। ডায়রেক্টরসরা থাকবে। ওদের সঙ্গে একটু গল্প আড্ডা না জুড়লে চলবে কেন? - আসলে...। মনটা না কেমন যেন...। - ইউ আর অ্যান অ্যাসেট চাউড্রি। রিল্যাক্স...। তোমার একটু ফুর্তি দরকার...। - ফুর্তি দরকার...তাই না? - ঠিক তাই। সন্ধেবেলার পার্টিটা ভুলো না। ওউক্কে? - ওকে। *** - হ্যালো! বলো। - বলছিলাম কী সুমি...। - তোমার প্রেজেন্টেশন কেমন গেল? - এক্সেলেন্ট। এক্সেলেন্ট। সবাই খুব প্রশংসা করলে