Skip to main content

Posts

Showing posts from April, 2020

পেন্টাগনের চোখে

- আরে! এ'টা কী? - একটা সাধারণ রিমোট চিনতে অসুবিধে হচ্ছে হে? - না মানে, আপনার ঘরে তো টিভি বা রিমোটচালিত কিছুই নজরে পড়ছে না..। - রিমোট বলতেই টিভি মনে পড়ে। এই না হলে নাইনটিজ কিড। নাহ্, তোমাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া মানে চানাচুর জলে ভিজিয়ে খাওয়া।  - বলুন না, কীসের রিমোট এ'টা? - ও'টা দিয়ে আমি সেল্ফি তুলি। - সেল্ফি? কিন্তু আপনার মোবাইল...। - আমি মোবাইলে সেল্ফি তুলব? আমি? হাসালে।  - তবে? তা'হলে এই রিমোট দিয়ে..? - ওই রিমোট দিয়ে আমি ড্রোন ওড়াচ্ছি। সে ড্রোন গোটা দুনিয়া অবজার্ভ করে চলেছে আর আমায় খবর পাঠিয়ে চলেছে। ঘোরাঘুরির বয়স তো আর নেই, সে ড্রোনের দেওয়া খবরাখবরের ওপর নির্ভর করেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বাতলে দিতে হয় আজকাল। তা সেই খবর দেওয়ার কাজটা সে ড্রোন বাবাজী বেশির ভাগ সময় আড়াল থেকেই করে। আর মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মোলায়েম অ্যাঙ্গেল থেকে আমার ছবি তুলে  আমায় পাঠাচ্ছে। আমার ছবি তোলার সময় অবশ্য সে ড্রোনকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতে হয়।  - কিন্তু মেসের কেউ তো সে ড্রোন..। - দেখেনি। জানি। তোমরা দেখতে পাওনি, সে'টাই তো স্বাভাবিক। ঘনশ্যাম দাসের ড্রোন তো আর ছেলেমানুষ

গুরু আর হিমালয়

- পটা। অ্যাই পটা। আরে অ্যাই পটা! - গুরু, অত চেঁচিও না। যোগব্যায়ামের ফোকাস নষ্ট হচ্ছে। - নেকুচন্দর খাসনবীশ, যোগব্যায়ামের ফোকাস নষ্ট। বলি মান্থ এন্ডের রেভিনিউ স্টেটমেন্ট কই। - কী হবে ও'সব দিয়ে বলো গুরু৷ তার চেয়ে বরং চলো; স্টকের আমতেল দিয়ে কষে মুড়ি মাখি। দু'জনে মিলে চিবুতে চিবুতে গপ্পগুজব করব, চারটে ইলিশ শ্যামল মিত্তিরের গান গাইব; ব্যাস, আজকের সন্ধ্যেটা আলগোছে কেটে যাবে। - তোকে পিটিয়ে তক্তা করে দিতে পারলে তবে আমার শান্তি হয়। মাসের শেষ, ব্যবসার হিসেবকিতেব না করে হারমোনিয়াম বাজাব? মা লক্ষ্মী জুতোপেটা করবে যে। - লকডাউন চলছে গুরু। খামোখা চাপ নিতে যেও না, এ করোনার বাজারে মা লক্ষ্মীও স্যাটাস্যাট নেমে আসতে পারবেন না৷ তা বলছিলাম, মুড়িতে কিন্তু অল্প কাঁচালঙ্কা কুচি না দিলে আমার চলবে না। - শাটাপ পটা। শাটাপ। আমরা এ'দিকে মুড়িমাখা গিলি আর ও'দিকে দয়ালগুণ্ডার সিন্ডিকেট আমার মার্কেট ক্যাপচার করে নিক আর কী। - আরে ধ্যাত্তেরি। কীসের মার্কেট ক্যাপচার করবে? কিডন্যাপিংয়ের বাজারে ঘুঘু চড়ছে। কেউ ছাই বাড়ি থেকেই বেরোচ্ছে না তায় তাদের কিডন্যাপিং।  আবার ছেলেরাও কিডন্যাপফিডন্যাপ করতে চাইছে

নিতাইদার আত্মজীবনী

- নিতাইদা গো..।  - সিগারেট চেয়ে লাভ নেই ভাইটি। বাক্স খালি। এই দ্যাখ। - আহ, ধান্দা ছাড়া কি তোমায় মাইডিয়ার টোনে ডাকতে নেই গো? কত রেস্পেক্ট করি তোমায়। - মদে রেস্পেক্ট-ভালোবাসার পরিমাণ সামান্য বাড়ে বটে। - পেটে দু'পেগ রাম পড়েছে বলে বলছিনা নিতাইদা। এই যে ছ'সাত মাস অন্তর কলকাতা আর সংসার ছেড়ে তোমার এই মগরার ব্যাচেলর প্যাডে দু'রাত কাটিয়ে যাই, তার মূলে কিন্তু ওই; ডীপ অ্যান্ড সিনসিয়ার রেস্পেক্ট। আর অন টপ অফ দ্যাট..আ বুক ফুল অফ ভালোবাসা।  - বুঝলি পলাশ, তোর মত ছেলেবেলার চ্যালাচামুণ্ডাদের আনাগোনা আছে বলেই...আমার এই একার গেরস্থালীও গুলজার রয়েছে। - নিতাইদা, তুমি এই স্কুলমাস্টারি নিয়ে পাড়া ছাড়ার পর থেকে গোটা পাড়াটাই কেমন ম্যাদা মেরে গেল। দলের ছেলেপিলেরাও সবাই চাকরীবাকরি নিয়ে এমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল..। - পাড়ার কথা আমারও খুব মনে পড়ে রে। - তা'হলে আর আসো না কেন? - বাপ-মা নেই। তোরা এখনও ভুলিসনি, এখানে মাঝেমধ্যেই ঘুরে যাস। আর ফিরব কী জন্য বল। - তোমার মনে পড়ে নিতাইদা? তোমার ক্যাপ্টেনসি আর অফস্পিনে ভর দিয়ে আমরা টানা তিন বছর টুর্নামেন্ট জিতেছিলাম?  - ওই সেই ভবতারণ সমাদ্দার স্মৃতি ট্রফি

ট্র‍্যায়ো

কে যেন বললে যে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে একটানা দশ মিনিট কমল মিত্রর ডায়লগ শুনলে নাকি "ইমিউনিটি বাড়ে"। *** "সামনের ছুটিতে পাহাড়ে যাব" ইস কুল। অবশ্যই। নিঃসন্দেহে।  তবে। তবে।  "একটা গোটা দিন পাহাড়ি সান্যালের পান্তুয়া মেজাজের অভিনয় দেখে কাটিয়ে দেব" ইস কুলার৷ *** গলায় তরোয়ালের কোপ পড়লে ছবি। ও'দিকে আল্ট্রা-ধারালো সারকাজমের কোপ পড়লে ছবি বিশ্বাস।

বৃষ্টি ও মাদুর

হুড়মুড় করে ঘরের উত্তর দিকের জানালাটা বন্ধ করার আগেই বিছানার অর্ধেকটা ভিজে গেল বৃষ্টির ঝাপটায়। কয়েক সেকেন্ডের বৃষ্টিতেই বালিশ তোষক সব সপসপে। একরাশ বিরক্তি চেপে ধরেছিল অমিয়কে। একে অফিসের কাজের চাপে জেরবার অবস্থা, তারপর রোজ ফেরার পথে অটোর লাইনে হয়রানি, বাসের ভিড়ে ধ্বস্তাধস্তি আর বাড়ি ফিরে হাত পুড়িয়ে ভাতেভাত রান্না করা। শরীরে এতটাই ক্লান্তি নিয়মিত জমা হয় যে রাত্রে খাওয়া সেরে ফেলার পর টেলিভিশন বা গল্পের বইতে মন বসানোও দায় হয়ে পড়ে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতে পারলেই যেন শান্তি। অথচ কয়েক মুহূর্তের অবহেলায় বিছানাটাই ভিজেটিজে মাটি হল। ধুত্তোর।  এই এক কামরার ঘর, ওই খাট আর মায়ের রেখে যাওয়া আলমারিটা বাদে আসবাব বলতে আর কিস্যুই নেই; সামান্য সোফাও নেই যে সে'খানে লম্বা হয়ে অমিয় রাতটা কাটিয়ে দেবে। ক্লান্তি, ঘুম আর জিভে লেগে থাকা নিজের হাতে পোড়ানো ভাতের স্বাদ; সব মিলে অমিয়র যে কী বিশ্রী লাগছিল। কোনও রকমে মেঝেতে একটা চাদর পেতে শুয়ে পড়লে সে।  নাইট ল্যাম্পের আবছা আলোয় দেওয়ালে টাঙানো মায়ের ছবিটার দিকে চোখ যেতেই বুকের ভিতর কেমন একটা চিনচিনে ভাব দলা পাকিয়ে উঠল অমিয়র। যদ্দিন মা ছিল, তদ্দিন এ সংসারে

গুরুপদর সাপ্লাই

- নিশিকান্ত নাকি? - আজ্ঞে। - তুমি আবার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কেন। ভিতরে এসো, এসো। - আজ্ঞে। - ওই মোড়াটা টেনে বসো দেখি।  - আজ্ঞে...বসব? - ও। তোমার তো আবার দাঁড়ানোও যা, বসাও তাই৷  - আজ্ঞে। - তা শরীরটরীর ভালো তো? - আজ্ঞে? শরীর? - আহা তাই তো। তোমার আবার শরীর। বয়স হয়েছে তো৷ মাথাটাথা গুলিয়ে যায় মাঝেমধ্যেই। - আজ্ঞে...বিরানব্বুই আর এমন কী..। - বাতের ব্যথাটা এমন বাড়াবাড়ি শুরু করেছে আজকাল...বুঝলে বাবা নিশিকান্ত...। - আজ্ঞে..দেব নাকি পা টিপে? - গলা টেপার বদলে মানুষের পা টিপবে ভাই নিশি? ধর্মে সইবে? - কী যে বলেন..আজ্ঞে। যবে থেকে আপনার শ্রীচরণে ঠাঁই পেয়েছি...ও'সব শয়তানি ছেড়ে দিয়েছি। - তা দিয়েছ বটে। শোন বাবা নিশিকান্ত, এসেছই যখন...কুকারে একটু চাল আর আলু চাপিয়ে দিয়ে যেও। ভয় নেই, আগুন জ্বালতে আমি এখনই বলব না। তুমি তৈরি হওনি এখনও। তুমি শুধু চাপিয়ে দিয়ে যেও। আমি উনুন জ্বেলে নেব'খন। - আজ্ঞে। আসলে...আগুনের ভয়টা এখনও ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারিনি৷  - অঙ্কে প্র‍্যাক্টিস আর তন্ত্রে সাধনা...এই দুইয়ে ফাঁকি দিলে চলবে না।  - আজ্ঞে...ফাঁকি ঠিক দিইনি। সাধনায় কাঠখড়ও কিছু কম পোড়াচ্ছিনে। কত দিন চেষ্টা করার প

দ্য গ্রেট পয়লা বৈশাখ

ভাই বংপেন, শুভ নববর্ষ।  পয়লা বৈশাখটা দিব্যি কাটল। জলখাবারে ওই...খান পাঁচেক লুচিই খেলাম। সঙ্গে বেগুনভাজা, মাখা সন্দেশ আর বোঁদে। দুপুরের ব্যাপারটাও মোটের ওপর ছিমছামই ছিল; কষা মাংস, মৌরলার ঝাল আর মেজজ্যেঠিমার রেসিপিতে বানানো প্লাস্টিকের চাটনি। সন্ধ্যেবেলা নারকোল দিয়ে মুড়িমাখাটা বেশ মাখোমাখো হয়েছিল কিন্তু। নয়ত একবাটির বদলে আলগোছে সোয়া দুইবাটি সাবাড় হয়ে যায়? ডিনারে জনা কয়েক বন্ধুর আবির্ভাব ঘটবে, তাই সাহস করে বিরিয়ানিটা বাড়িতেই বানিয়ে ফেললাম। থামস আপের বোতল আর রসগোল্লার হাঁড়ি অবিশ্যি বন্ধুরাই আনছে।  তা বন্ধুরা এসে পড়ার আগে ভাবলাম তোমায় দু'কলম লিখেই ফেলি। বয়সে যেহেতু আমি তোমার চেয়ে পাক্কা এক বছর বড়, তাই গায়ে পড়ে একটা উপদেশ দিয়ে এ চিঠি শেষ করি; গত পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যেবেলায় সাহস করে খোলা ম্যাগির সেই শেষ প্যাকেট, তার ঋণ কোনওদিনও ভুলো না। কেমন? আশীর্বাদ নিও। ইতি বংপেন। পয়লা বৈশাখ,  ১৪২৮।

প্রধানজী

কোন গানের সুর যে কখন কীভাবে মনে ধরে। কোন বাতেলা যে কখন ইন্সপিরেশন বলে মনে  ঠেকে।  কোন ক্লিশে যে কখন "আরে, এইত্তো আমরা" বলে পিঠে হাত রাখে। কোন সাদামাটা সিনেমার দৃশ্য থেকে কখন কী'ভাবে যে স্কুল-ছুটির দুপুরে পড়া গল্পের বইয়ের পাতার গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। কোন অগোছালো খটখটে সম্পর্কের গায়ে আচমকা কীভাবে যে ইয়ারদোস্তির উষ্ণতা এসে স্পর্শ করে।  কে যে কখন কোন বেনিয়মের আবডালে সংসার খুঁজে পায়; অঙ্ক কষে সে'সব বিটকেল হিসেবের তল পাওয়া যাবে ভেবেছেন?

নেকুচাঁদের বৌ

- এহ্ হে। - আবার কী হল? - ফের একই কেস রে বউ। দিয়েছি একখাবলা নুন বেশি।  - ও ঠিক খেয়ে নেব'খন। - কতবার বলি, এ লাপসি তুইই রান্না কর। আমায় বরং ঘর মুছতে দে। এ'বার খা নুনের ঝোল উইথ আ হিন্ট অফ চালডাল। - আমার অত নোলা নেই। আমি দিব্যি সাপটে খেয়ে নেব। - ভারী তো রোজ রাজভোগ খাচ্ছি। তায় আবার নোলা। মেনুর কী বহর; দিনের পর দিন দুপুরে খিচুড়ি, রাতে ফেনাভাত। উফ! আর উইকেন্ড রাত্রির বুফেতে আবার বোনাসঃ এক চামচ করে ঘি।  - ঘি? তাও এ'বার ফুরোবে।  - কী ভাইরাস ছড়ালো রে বউ, খাওয়াদাওয়াটা এক্কেরে গেঁজে গেল। তাই না রে? - আর ক'দিন পর এই রাজভোগও জুটবে না। - আশ্চর্য কী। একের পর এক হপ্তা যায় অথচ ভাইরাস বাবাজীর তাণ্ডব আর থামে না৷ ছ'মাস হতে চলল গোটা দেশ গৃহবন্দী। এ'দিকে বাজারে আর আলু পেঁয়াজও নেই। সরকারের রেশন আছে, তাই দু'হাতা করে খিচুরি ফেনাভাত পাতে পড়ছে৷ সত্যিই, আর ক'দিন পর হয়ত...।  - হরিমটর। আমি আর তুই তখন ব্যালকনিতে জড়াজড়ি করে বসে বিরিয়ানির কথা ভাবব, কেমন? - একটা টেরিফিক আইডিয়া এসেছে মাথায়!  - আবার কী! - বুঝলি বৌ, ওই যখন কিস্যু থাকবে না... আমরা তখন প্ল্যানচেটে বিরিয়ানির গন্ধকে

অগ্নীশ্বর ও সিনেমায় মৃত্যু

সিরিজে ট্যুইট করা। ট্যুইটই রইল; সাতটা পরপর সাজানো। *** সিনেমায় দেখা কোন মৃত্যু মনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে? দিনদুয়েক ধরে সেই মর্মে একটা পোস্টার 'কোট' করে অনেকেই নিজেদের সিনেমা স্মৃতি ঘেঁটে ট্যুইট করছেন।  আমি গতকাল লিখেছিলামঃ ডাক্তার অগ্নীশ্বর মুখুজ্জ্যে। হঠাৎ মনে হল, ব্যাপারটা এক কথা সেরে ফেলার সুযোগ তেমন নেই। (১) "অগ্নীশ্বর" সিনেমায় অজস্র ভুলচুক নিশ্চয়ই আছে। ক্ষেত্র বিশেষে "বাড়াবাড়ি" ও কম নেই তবে সে বিশ্লেষণ করবেন সিনেমার ছাত্ররা। আমাদের কাজ নিজের ভালো লাগাগুলকে আঁকড়ে রাখার। একমুঠো শিউলি হাতে মৃত্যুর আগে ডাক্তারের বলা কথাগুলো বড় নাড়া দিয়েছিল। (২)  অগ্নীশ্বর নিজের ডাক্তারি জীবন কাটিয়েছেন মানুষের সেবায়। একদিকে তাঁর ধারালো ব্যক্তিত্বের নিরেট বর্মে বহু মানুষের কোমলতা ধাক্কা খেয়ে ফিরে গেছে আবার অন্যদিকে দেশের মানুষের গোঁড়ামি, ভণ্ডামি, যুক্তিহীনতা ও কুংস্কারে বারে বারে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন তিনি নিজে। (৩)  কিন্তু হাজার ক্ষতবিক্ষত হয়েও, পাহাড়প্রমাণ বিরক্তি নিয়ে ঘর ছেড়েও; মারা যাওয়ার ঠিক আগে অগ্নীশ্বর স্বীকার করে যাচ্ছেন যে ফের জন

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন -১২

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১২ *** আজ গোটাদিন লুঙ্গির ওপরে ফর্মাল জামা, ভারিক্কি টাই আর রিভিউমিটিং মার্কা-মেজাজ চাপিয়ে ঘরময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অনিরুদ্ধবাবু।  সকালবেলার দিকে বাসন ধুতে গিয়ে মনের ভুলে  নিজের টাইয়ের ডগাটা ভিম-বারে রগড়ে দু'টো কড়াই মেজে ফেললেন।   দুপুরের লাঞ্চ থালায় নয়, বেড়ে নিলে অফিসের সুবাস মাখানো হলুদ টিফিন বাক্সটায়।  টিভির রিমোটটা কোথায় আছে জানতে চেয়ে বাবাকে একটা কড়া মেমোও পাঠিয়ে ফেললেন। মাছের ঝোলটা কেমন হয়েছে জানতে চাওয়ায় বৌকে "দিস ইজ টু সার্টিফাই" বলে একটা চমৎকার টেস্টিমোনিয়াল লিখে দেওয়ার ব্যাপারেও পিছপা হলেন না। *** ট্রেনে-বাসে ভিড় সমেত একটা সুস্থ সোমবার এ'বার না এলেই নয়।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১০

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১০ অফিসের উল্টো দিকে চায়ের দোকানের বেঞ্চিটায় বসে ফের একদিন ডিমপাউরুটি খাব।  ডবল ডিম, নরম ভাবে ভাজা, বাড়তি কাঁচা লঙ্কা কুচি।  এক কামড়ে দিয়েই দোকানি-দাদার দিকে তাকিয়ে বলব "পার্ফেক্ট হয়েছে কিন্তু"। দাদা স্মিত হেসে বলবেন; "আপনার তো আবার চায়ের অভ্যেস নেই"।  ওঠার মুখে সামান্য মিষ্টিমুখ না হলেই নয়, কাজেই দু'টো প্রজাপতি বিস্কুট নেওয়া যাবে'খন। একটা আমার, আর অন্যটা বেঞ্চির পাশে গা-এলানো নেড়িকুমারের।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১১

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১১ ছুঁচোর ডন মার্কা খিদেয় পেটের আনচান অবস্থায় আবার একদিন চোখে পড়বে একটা ছোট্ট ধাবা।হঠাৎ করেই। ছোট্ট কিন্তু অপরিষ্কার নয়, ঘিঞ্জি অথচ দম বন্ধ করা নয়। উনুনের ধোঁয়া আর ডালঝোল মেশানো গন্ধে বাতাস ভারী।  একটা টেবিল বেছে নিয়ে বসতেই ক্যাশবাক্সের পিছনে বসা গম্ভীর ম্যানেজারকাকা এক হাসিখুশি ছোকরাকে তলব করবে "কোণের টেবিলটা থেকে অর্ডার নিয়ে আয়"। ব্যস্ত চনমনে মেজাজের ছোকরাটি টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেই গড়গড় করে বলে যাব; "দু'টো করে রুটি আর জবরদস্ত দু'প্লেট ডিম তড়কা দিও তো ভাই। ঝাল কড়া হবে তবে শুকনো লঙ্কার বাড়াবাড়ি নয়,  কাঁচালঙ্কা৷ আর একটু ক্যুইক, কেমন"? ছোকরা মাথা নাড়বে। আর হেসে শুধোবে;   "আর থামসআপ? থামসআপ দেব না"?

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৯

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৯ কত পুরনো অভ্যেস এ'বারে সত্যিই আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলতে হবে।  ফেলতেই হবে। জিলিপি, সন্দেশ নিয়ে আপাতত ভাবনাচিন্তা না করতে হলেও, লারেলাপ্পা বোলচালগুলো এ'বার ছাড়তেই হবে। "মনডে ব্লুজ" বিষয়ক শৌখিন সস্তা ঠাট্টাগুলোও এ'বার বাদ না পড়লেই নয়। হাল না ছাড়ার গানটা ভাগ্যিস থেকে যাবে। ভাগ্যিস।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৮

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৮ - কাণ্ডটা দেখেছেন ফেলুবাবু? এক বাবাজী করোনা আটকাতে মেডিটেশন টিপ্স অফার করছে। হাতটাত ধোয়া আর আইসোলেশন তো অনেক হল, তুকতাকটাও ট্রাই করব নাকি মশাই? বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকুই বা জানি বলুন। - তবে আর কী, এ'বার উটের জন্য ম্যাগনিফায়িং গ্লাস বিক্রি করার ব্যবসাটাও চালু করে ফেলুন। - উ....উটের? ম্যা...ম্যাগনিফায়িং গ্লাস? কে....কেন? - কাঁটা বেছে খেতে সুবিধে হবে।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৭

- একটা জব্বর গান শুনবে? - প্লীজ না! ঘর থেকে যে হুট করে বেরিয়ে যাব তারও উপায় নেই। আইসোলেশনে এ যন্ত্রণা সইবে না। - একটা চমৎকার বাউল ধরব ভেবেছিলাম কিন্তু।  - তার চেয়ে বরং মুড়ি মাখো। - তা, সে অবশ্য মাখাতেও একটা মিউজিকাল ইয়ে আছে বটে। আঙুলে ছন্দ না থাকলে মাখায় মাখোমাখোনেস আসে না। - সবার সুর কি কণ্ঠে? - আমার সুরের দৌড় ওই চানাচুরমুড়ি তক? - হেহ। আচ্ছা, বাউলটা হোক। তারপর মুড়ি। - জোর করছ যখন, ধরি। কেমন?  - আমি জোর করেছি? - মুখের কথাটাই কি সব গো? তোমার মনের ইচ্ছের কি কোনও দাম নেই? রেখেছ বাউল করে, গেরস্ত করোনি। - ন্যাকাপনা!

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৬

- হবে গো হবে। - কী হবে? - নিজের স্যানিটাইজড হাতে স্পষ্ট দেখতে পারছি। - কী আছে? - পাহাড়। এ' ভাইরাস ব্যাটাচ্ছেলের মাস্তানিটাই শেষ কথা নয়। - সঙ্গে আছি। ইন সিকনেস অ্যান্ড ট্র‍্যাভেল। - প্লীজ,কাঠের বাড়িতে থাকব। - সে'খানে ছবির মত ব্যালকনি! - লাঞ্চের পর রোদ পিঠে বসব সেখানে; সঙ্গে তালমিছরির ডিবে।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৫

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৫ - হবে গো হবে। - কী হবে? - নিজের স্যানিটাইজড হাতে স্পষ্ট দেখতে পারছি। - কী আছে? - পাহাড়। এ' ভাইরাস ব্যাটাচ্ছেলের মাস্তানিটাই শেষ কথা নয়। - সঙ্গে আছি। ইন সিকনেস অ্যান্ড ট্র‍্যাভেল। - প্লীজ,কাঠের বাড়িতে থাকব। - সে'খানে ছবির মত ব্যালকনি! - লাঞ্চের পর রোদ পিঠে বসব সেখানে; সঙ্গে তালমিছরির ডিবে।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৪

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৪ - সব চুকেবুকে যাক! তারপর কেল্লায় গিয়ে রাজারাজড়ার মত তম্বি করে আসব। - কেল্লাফতে প্ল্যান করলেই হবে? দুজনে মিউচুয়ালফান্ডে যা রেখেছিলাম, সব ডকে। কপালে সেই ব্যান্ডেল চার্চ। - সিংহকে নটেশাক দেখিও না তো! করোনা কাটলেই কেল্লা চলো। -কানের দুল বরং পরের বছর। - আমার কোটও। - চলো কেল্লা।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ২

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ২ - এসব কেটে গেলে একদিন পাহাড়ে যাবো, কেমন? - জরুর। জরুর।  - খুব শিগগিরি এসব কেটে যাবে, তাই না? - জরুর। জরুর।  - তারপর স্বস্তি। ট্রেনের আপার বার্থে শুয়ে বই পড়তে পড়তে শিলিগুড়ি।  - অথবা দিল্লী।  - তারপর দার্জলিং।  - অথবা লাদাখ।  - কেটে যাবে এসব, তাই না? - জরুর। জরুর।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৩

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৩ -এমন একটা বেঞ্চি খুঁজে বের করতে হবে বুঝলে।  -সঙ্গে ফ্লাস্কে একটু কফি।  -মন্দ নয়।  -চীজ স্যান্ডউইচ।  -তোমার আবার বাড়াবাড়ি।  -আইসোলেশনে টানা ফেনাভাতে রয়েছি,একটু ভাবতে দাও।  -বেশ স্যান্ডউইচ। আর বাঁটুল সমগ্র।  -চুমু। চুমু। -সব সামলে উঠব আমরা, কী বল? -আলবাত। চুমুর দিব্যি।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১ *** মহামারীর মধ্যে দাঁড়িয়ে টের পাচ্ছি নিজেদের মধ্যে কৃতজ্ঞতা-বোধের কী নিদারুণ অভাব এদ্দিন জমেছিল। এই দুর্দিনে বাড়ির জলের ফিল্টার বিগড়লো। ফোন করতেই অ্যাকুয়াগার্ডের কর্মী রাণাবাবু এসে পড়লেন চটজলদি, মুখে মাস্ক পিঠে ভারী ব্যাগ। চাকরীর দায়। কৃতজ্ঞতায় নুয়ে না পড়ে উপায় আছে? *** হাত ধুয়ে ধুয়ে যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, আর ক'দিন এ'ভাবে চললে বাড়ির সাবানগুলো নিজের হাত দিয়ে ঘষে সাফ করে দিতে পারব। *** একটা জরুরী ওষুধ সংগ্রহের জন্য বেরিয়েছিলাম। তড়িঘড়ি ফেরার পথে দেখলাম মিষ্টির দোকানে ভীড়, রোল-চাউমিনের জন্য হুড়মুড়, এমন কী মোবাইলের দোকানে ক্রেতাদের ব্যস্ততা।  জানি ব্যবসা বন্ধ মানে কত মানুষের পেটে   টান পড়বে। সব বুঝি। কিন্তু এই ভীড় দেখে গা শিউরে উঠছে। *** বিভ্রান্ত হব না। হাত ধোব। বাতেলা ঝাড়ার স্বার্থে নিয়ম/সতর্কতা অমান্য করব না। হাত ধোব। গাঁজাখুরির বানান 'সায়েন্স' নয়, সে'টা মাথায় রাখব। হাত ধোব। খেজুরে দরকারে বাড়ির বাইরে পা রাখব না। হাত ধোব। হেল্পলাইনগুলো সম্বন্ধে সচেতন থাকব। হাত ধোব। কন্সপিরেসি থিওরি কপচাব না। হাত ধোব। *** সাবান যে কা

আলমারি

চারুশিলা আজ আনন্দে ডগমগ; তিনি সকাল থেকে কিছুতেই স্থির হয়ে বসতে পর্যন্ত পারছেন না। একবার ছুটে ঝুল-বারান্দায় গিয়ে নীচে রাস্তার দিকে উঁকি মারছেন তো পরক্ষণেই আবার হেঁসেলে ঢুকে কমলার মাকে রান্নার  খুঁটিনাটি টেনে হাজারটা প্রশ্ন করে অস্থির করে তুলছেন৷ ঘরের সমস্ত আসবাব নিজের হাতে বারবার পুছেও যেন ঠিক তৃপ্ত হতে পারছেন না।  মাঝেমধ্যেই দেওয়াল ঘড়ির দিকে  উদগ্রীব হয়ে তাকাচ্ছেন তিনি; অথচ কাঁটা যেন এগোতেই চায় না ছাই। এই সোয়া বারোটা, এই বারোটা সাতাশ, এই বারোটা বত্রিশ৷ কখন যে পৌনে পাঁচটা বাজবে, তখন খোকার ট্রেন ঢুকবে স্টেশনে৷ রেলস্টেশন থেকে  বাড়ি পৌঁছতে খোকার আরও মিনিট চল্লিশেক সময় লাগবে।  কতদিন পর। কতদিন পর খোকা ফিরছে৷ প্রায় বছর খানেক পর বাড়ি ফিরছে খোকা কিন্তু মায়ের মনের ভিতর এমন তোলপাড়; যেন কত যুগ পর ফের খোকাকে দেখবেন তিনি। নতুন চাকরীর এমনই চাপ যে বছরখানেক বাড়িমুখো হতে পারেনি খোকা; এদ্দিন পর কয়েকদিনের ছুটি পেতেই সে ফিরছে। খোকার ঘর, বিছানাপত্র সব নিজের হাতে সাজিয়েগুছিয়ে বিকেল চারটে নাগাদ নিজের শোওয়ার ঘরে গেলেন চারুশিলা। আলমারি বোঝাই শাড়ি অথচ খোকা না থাকলে তার সে'সব ছুঁয়েও দেখতে ইচ্ছে কর

সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং

- মিস্টার চৌধুরী...হ্যালো...মিস্টার চৌধুরী...ক্যান ইউ হিয়ার মি? মিস্টার চৌধুরী...হ্যালো...হ্যালো..। - হ্যালো..অভিষেক নাকি...। - যাক...আধঘণ্টা ধরে হাঁকডাক করেও আপনার সাড়া না পেয়ে খুব নার্ভাস হয়ে গেছিলাম...। - আমার এদিকের স্ক্রিনটা হ্যাং করে গেছিল। তার বেশি কিছু নয়...। তা তুমি কী ভাবলে..বুড়ো অক্কা পেয়েছে বোধ হয়..তাই না? - ছি ছি, ও কথা মুখে আনবেন না প্লীজ। - মুখে না আনলে কি ভবিতব্য আটকে থাকবে হে? মেঘে মেঘে বেলা তো কম হল না৷ সামনের শনিবার একশো দুইয়ে পড়ব। আর কদ্দিন বলো। - বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রনেতারা আপনার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন, এ তো আপনার অজানা নয় মিস্টার চৌধুরী। আধুনিক মেডিকাল সায়েন্স দুনিয়া ওলটপালট করে দিচ্ছে আপনার জন্য...। - তোমার রাষ্ট্রনেতাদের বোলো যে আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ কিন্তু বয়সের ভারে এ'ভাবে ন্যুব্জ হয়ে একাকী আর দিন কাটেনা। আমার এ'বার মুক্তির প্রয়োজন হে। - এমন বলছেন কেন মিস্টার চৌধুরী...গোটা পৃথিবী জুড়ে আপনার যে সমাদর...দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ আপনাকে এত ভালোবাসে...। আপনি তো আমাদের কাছে ঈশ্বরতুল্য। - কিন্তু এই বন্দীদশা যে আর সহ্য হয় না অভিষেক।  এত খ্যাতি,