Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2022

বাবা আর ফিশ

আট কার্ডের খেলাটাকে আমরা 'ফিশ' বলি৷ তিন কার্ডের 'রানিং লাইসেন্স'৷ আমরাই আমাদের বিসিসিআই, কাজেই ইচ্ছেমত ঘরোয়া ইনোভেশন জুড়ে দেওয়া যায়৷ এই যেমন লাইসেন্স না হলে 'জোকার' দেখা যাবেনা, ইত্যাদি৷ ফেসবুকে লিখে সে'সব 'নুয়ান্স' বোঝানো সম্ভব নয়৷ দশ দানের পর যার পয়েন্ট সবথেকে কম, সে জিতবে৷  খেলতে বসে রেগেটেগে লাভ নেই৷ তবে 'ব্যান্টার' টীকাটিপ্পনী ছাড়া 'ফিশ' খেলার থেকে সুইচ অফ করা টিভির দিকে তাকিয়ে থাকা ভালো৷ এই হচ্ছে আমাদের থিওরি৷ এ খেলায় একদানে একজনকে ম্যাক্সিমাম আশি পয়েন্ট খাওয়ানো যেতে পারে৷ কিন্তু সে ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি, খানিকটা ওই এক ওভারে ছত্রিশ রান করার মত৷ কিন্তু যতক্ষণ একটা 'ম্যাথেম্যাটিকাল পসিবিলিটি' আছে, কয়েক কিলো পয়েন্টে পিছিয়ে গেলেও বাবা হাল ছাড়বে না৷ লজিক একটাই, "বলা তো যায় না, হলেও হয়ে যেতে পারে৷ আর না হলেই বা ক্ষতি কী, দু'দান দেখি"৷  আর সামান্য একটু জমি পেলে যে কোনও জায়গাতেই খেলতে বসে যাওয়া যেতে পারে৷ ডাইনিং টেবিল, সোফা, ট্রেনের বার্থ, পার্কের বেঞ্চি৷ হয়ত সময় খুব কম আছে, দশ দান খেলা সম্ভব নয়৷ তখনও বাবার ওই সহজ ফর্

চালশে আর ফার্স্টইয়ারি

সুমনবাবুর চালশে গানটা প্রথম শুনেছি কৈশোরে৷ আমার অন্যতম প্রিয় 'সুমনের গান'। আজও এ গানটা আমার কৈশোরের গান। কলেজের গান৷ হাইস্কুলে থাকতে বাড়ির ফিলিপ্স টেপরেকর্ডারে এ গান বাজত। পরে কলকাতার মেসে বসে সস্তায় কেনা এফএম রেডিওতে সে গান মাঝেমধ্যেই শোনা যেত৷ সে বয়সে, গানটা গুনগুন শুরু করলেই আশেপাশের চালশেদের প্রতি অস্ফুট "আহা, উঁহু"-ভাব টের পেতাম৷ একটা প্রবল সিমপ্যাথি।  মনে হত, "আহা রে, কত গুঁতোগাঁতা খেয়ে এ বয়সে এসে পৌঁছেছেন৷ মাঝবয়সী খিটমিটগুলোয় না জানি তাদের কতশত স্ট্রাগল আড়াল হয়ে যাচ্ছে"।  ফার্স্টইয়ারি মেজাজের সিংহাসনে বসে ভাবতাম, "আফটার অল, এই বাবা-জ্যাঠা-কাকা-মামাদের তো ইয়ুথটাই গন৷ লোহা চিবিয়ে হজম করার দম আর নেই৷ বেনিয়মে বন্ধুদের হুল্লোড় নেই। সোমবার বিকেলের কলেজ স্কোয়্যারের ঘটিগরম নেই৷ প্রেমের চিঠি নিয়ে ফলাও করে মেস-বৈঠক বসানোর সুযোগ নেই৷ বাজে গল্পে রাতকাবার করার ধক নেই৷ পুজোয় লম্বা ছুটি নেই৷ এদের আর আছেটা কী। আহা রে, এ'দের জীবনটাই তো ফিনিশ হয়ে গেছে৷ পড়ে আছে শুধু গাদাগুচ্ছের রেস্পন্সিবিলিটি"। ব্যাস, এইসব ভাবনাকে আরও একটু উস্কে দিত সুমনের এই গান৷ এ'ব

তুচ্ছ ইতিহাস

আজকাল ইতিহাস সিলেবাসের ঠিক-ভুল উচিৎ-অনুচিত নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে। সে বিতর্কের মূলে রয়েছে রাজরাজড়াদের নিয়ে টানাটানি। কতটা মুসলমান বাদশাদের কথা পড়লাম, কতটা হিন্দু রাজরাজড়াদের ব্যাপারে জানলাম; সে রেশিও নিয়ে ধুন্ধুমার ব্যাপার। গুঁতোগুঁতি করে তর্ক করতে  আমাদের যতটা আগ্রহ, ততটা আগ্রহ অবশ্য ইতিহাসের বই উল্টেপাল্টে দেখায় নেই। সে'টা একদিক থেকে বাঁচোয়া, ইনফরমেশন আর অবজেক্টিভিটির জ্বালায় রসালো খিস্তিখেউর নিষ্প্রভ হয়ে যায় না। যাক গে। এ'সবের মাঝে একজন চমৎকার ইতিহাস প্রিয় চরিত্রের কথা মনে পড়ে গেল; বিভূতিভূষণের অপু। অপু আইএ পাশ করে আর কলেজে ভর্তি হল না। প্রফেসররা ডেকে অপুকে বোঝাতে চাইলেন যে অপুর অনার্স পড়া উচিৎ। কিন্তু সদ্য মাতৃহারা, সহায়-সম্বলহীন অপুর তখন ক্লাস করার আগ্রহ ছিল না। নিদারুণ অভাবের মধ্যে থাকার ফলে অবশ্য ভর্তি না হওয়ার সিদ্ধান্তটা আরও সহজ হয়ে গেছিল। কিন্তু অপুর অনাগ্রহ ছিল মূলত সেই স্ট্রাকচার্ড সিস্টেমটার প্রতি, জানার ইচ্ছেটুকু পুরো দমে তাকে ঠেলে নিয়ে বেড়াচ্ছিল। আর প্রচণ্ড মুখচোরা হওয়া সত্ত্বেও নিজের পড়াশোনার ফোকাস সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না অপুর। অপুর নিজের মনের ভাষায়; &q

অ-তিতকুটের আকুতি

কী হতে চাই না? তিতকুটে।  সবসময় খিটখিট করব না। যা অপছন্দ তাই পড়ে/দেখে/শুনে নিজের ভিতরটাকে মুগুরপেটা করব না।  এ'টা হল না, ও'টা হল না; এ'সব দুঃখ যাওয়ার নয়। তবে শুধু সেই দুঃখটা আমায় ডিফাইন করবে না। মোটাদাগের একঘেয়ে কাজগুলোকে 'বেফালতু' বলে গোঁসা করে বসে থাকব না। বরং কোনও আনন্দ ফর্মুলায় সে'গুলোকে বেঁধে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকব। "অমুক দাও, তমুক দাও" বলে হাজাররকমের ঘ্যানঘ্যান চালিয়ে যাচ্ছি, সে'সব এই বেলা কমিয়ে ফেলতে হবে।  মাল্টি-টাস্কিংয়ের ফাঁদে পা দেবনা।  ব্রেনের মধ্যে সার্কাসের তাঁবু বসানোর দরকার নেই। কলার টেনে জ্ঞান দেওয়ার লোভ ঠেকিয়ে রাখতেই হবে। আর কলার টানা যত জ্ঞান, সে'গুলোকে হেসে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সৎ সাহস তৈরি করতে হবে। আর?  আর, ভালো গল্প শোনার সুযোগ পেলেই ড্যাবড্যাবে চোখে বসে যাব। চেনা-মানুষদের মাঝেমধ্যে ফোন করব। অদরকারে ফোন করব। (এখন করি না)। কিছু ভালো লাগলে ভালো বলব। জোর গলায় বলব। আন্তরিকভাবে বলব।  পারলে লিখে জানাব। কিন্তু বাহবা জানানোর সুযোগ মিস করা চলবে না। রোজ কিছু সহজ টার্গেট খুঁজে নেব। একেবারে জলবৎ-লেভেলের। সে'টা দু'পাতা কমিক্স পড়ার হ

ডায়োজিনিস আর আলেকজান্ডার

বড় শখ জানেন। বড় সাধ।  একদিন, ডায়োজিনিসের মত ঘ্যাম নিয়ে আমি লেতকে পড়ে থাকব। চারদিকে বিস্তর হৈহল্লা, তুমুল ফুর্তি, আনন্দের বন্যা। এ ওকে জড়িয়ে ধরছে, ও একে হাই-ফাইভ অফার করছে, টেবিল কাঁপানো আড্ডা বসেছে। ও'দিকে ডায়োজিনিস-ঘ্যামে, আমি সোফায় হাত পা ছড়িয়ে আধশোয়া।  মুখে গুনগুন, তৃপ্তিতে বুজে আসা চোখ। যাবতীয় চিৎকার চ্যাঁচামেচি গলাগলি আবদার আমার গায়ে বাউন্স করে ফিরে যাচ্ছে। বন্ধুরা গপ্প ফাঁদতে আসবে, আমি বলব "রোককে ভায়া রোককে। মেডিটেশন মোডে রয়েছি"। পড়শিরা গসিপ করতে আসবে, আমি আঙুলের ইশারায় বলে দেব, "বাদ মে আইয়ে জনাব"। সবাই সেই ডায়োজিনিস-আমিকে দেখে বলবে "কী জিনিস রে ভাই"।  এমন সময় ঘ্যাম-শিরোমণি সম্রাট-শ্রেষ্ঠ শ্রী শ্রী আলেকজান্ডার উত্তমকুমারিও হাসি হেসে আমার সোফার দিকে এগিয়ে আসবেন। মেজপিসে যে মেজাজে বৃষ্টির দিনে ফুলুরি খাওয়ান, আলেকজান্ডারবাবু তার চেয়েও সহজে বখশিশ বিলিয়ে বেড়ানো মানুষ। রাজ্য চাইলে রাজ্য, রাজকন্যে চাইলে রাজকন্যে। তুষ্ট করতে পারলেই হল। আলেকজান্ডারবাবুকে এগিয়ে আসতে দেখে বন্ধুরা ভাববে, এ'বার এই ডায়োজিনিস ব্যাটার ঘ্যাম-ঘুম ভাঙবেই। প্রতিবেশীরা চিল্লিয়ে উ

বুলেট দস্তিদারের গ্রেপ্তারি

ভীষণ নার্ভাস লাগছে। ভীষণ। এমন একটা বিপদে যে পড়তে হবে সে'টা ভাবিনি। এখন বেলা সোয়া বারোটা। সকাল দশটা থেকে অন্তত বারো গেলাস জল খেয়েছি তবু তেষ্টা কমার নাম নেই। এ'দিকে পেট ফুলে ঢোল, গা গুলিয়ে উঠছে, অন্তত বার সাতেক বাথরুম ছুটতে হয়েছে। হাবিলদার গোলক বটব্যাল মাঝেমধ্যেই ক্রিকেট স্কোর ঘোষণা করে হাড় জ্বালাচ্ছে। আমি মরছি নিজের জ্বালায়, ও পড়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ফলোঅন নিয়ে, ধুরছাই।  তান্ত্রিক অনুপ দত্ত থানায় ঢুকলে বেলা পৌনে একটা নাগাদ। দাঁত বের করে বললে, "সরি দারোগাবাবু, ঘণ্টাখানেক দেরী হয়ে গেল। আসলে এর আগের অ্যাপয়েন্টমেন্টের আত্মাটা মহা ঢিট। খেলিয়ে কাজ ম্যানেজ করতে গিয়ে বেলা হয়ে গেল"।   মেজাজ চড়ে ছিল, দিলাম ধমক; "অনুপ, থানা থেকে আর্জেন্ট কাজে আপনাকে ডাকা হয়েছে। আপনি আমায় অন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেখাচ্ছেন? আপনি জানেন ব্যাপারটা কতটা সিরিয়াস"? অনুপ দত্তের হাসি মিইয়ে গেল না। চেয়ার টেনে বসে বললে, "তেনারা কি আর পুলিশ-দারোগাকে ডরায় বলুন। নিজেদের মর্জির মালিক। তাঁদের তো আর পদে পদে ওপরঅলাকে কৈফিয়ত দিতে হয় না। যাক গে, এত বেলা পর্যন্ত পেটে কিছু পড়েনি। দু'টো চা নিমকির ব্যবস্থা

গুড়ুম

১। খুব রাগ হলে ভাস্কর পায়চারি করেন। অফিসের কিউবিকল থেকে উঠে পায়চারী করাটা ঠিক শোভনীয় নয়, লোকে বাঁকা চোখে দেখবে। তা'ছাড়া বিস্তর কাজও বাকি আছে। কাজেই চেয়ারে বসেই একটা মৃদু দুলুনির  মাধ্যমে নিজের রাগটাকে ম্যানেজ দিতে হল। অবশ্য রেগে গেলে টাইপিং স্পীড বেড়ে যায় ভাস্করের। তা'বলে অ্যাকিউরেসি কমে না। সে'টা একটা ভালো জিনিস। আপাতত রাগটা হয়েছে অভীক সামন্তর ওপর; ভদ্রলোক ভাস্করের বস। বয়সে ভাস্করের চেয়ে বছর দশেক ছোটই হবে। ভাস্করের মতে অত্যন্ত স্মার্ট ছেলে, তার ওপর চনমনে। কর্পোরেট জগতে আলো করে থাকার সমস্ত গুণই আছে। কিন্তু বয়স কম, মাঝেমধ্যেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আর তখনই গোল পাকায়। এই যেমন খানিকক্ষণ আগে সে ভাস্করের ওপর বিস্তর চ্যাঁচামেচি করলে। রেগে গেলে আবার চোস্ত ইংরেজিতে ধমক কষায় অভীক। ভাস্করের তৈরি করা একটা রিপোর্টে সামান্য ভুল রয়ে গেছিল। ব্যাপারটা সামান্যই। অভীক মাথা ঠাণ্ডা রাখতেই পারত, এই ভুল সামাল দেওয়া কোনও বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু ওই, রগচটা মানুষ। যা নয় তাই বলে অন্তত মিনিট কুড়ি তম্বি করলে, আর পাঁচটা সহকর্মীর সামনেই। ভাস্কর একবার ভেবেছিলেন কড়া উত্তর দেবেন। সময়মত প্রমোশন পেলে এখন তাঁর অভীকের

সাইকেলজিক

শেষে এক জ্যাঠতুতো দাদা ঠেলেঠুলে কোনওক্রমে শিখিয়ে ছেড়েছিল৷ কিন্তু দাদা হলে যা হয় আর কী। সামান্য ফুর্তির সুযোগ না থাকলে সে মহৎ কাজ করবে কেন? দু'চাকার ওপর ব্যালেন্সটা সবে খানিকটা ধরেছি। খোলা মাঠে টলমলিয়ে সাইকেলসহ এগিয়ে গেছি খানিকটা৷ অমনি সে দাদা চেঁচিয়ে বললে,  "দারুণ, ব্রাভো৷ এক্কেবারে হিরোর মত চালাচ্ছিস৷ এ'বারে শোন ভাই, আসল মজা টের পেতে হলে হ্যান্ডেল থেকে দু'হাত সরিয়ে প্যাডেলের স্পীড বাড়িয়ে দে৷ তারপর চুলের মধ্যে আঙুল চালাতে চালাতে, স্টাইল মেরে শিস দিতে দিতে চালা৷ দ্যাখ ঘ্যাম কাকে বলে"। যদিও শিস দিতে পারতাম না (এখনও চেষ্টা করলে ওই পার্সেলমাউথ ফ্যাসফ্যাসের বেশি কিছু বেরোবে না)৷ কিন্তু আমার চেয়ে অনেক বড় সেই দাদা আমায় হিরো বলেছে৷ সে'টা কদর না করলে চলবে কেন? তখন যদিও মাথার চুলে কদমছাঁটে মুড়িয়ে কাটা৷ সে চুলে আঙুল চালানো অসম্ভব৷ তবু৷ অমন মোটরবাইক চালাতে পারা, সিগারেটের প্যাকেট পকেটে নিয়ে ঘোদা দাদা আমায় হিরো বলেছে৷ সে সম্মান তো ফেলনা নয়৷  কাজেই হিরোর মত ঘ্যামপ্রকাশ করতে হল। ইন্সট্রাকশন কানে আসা মাত্রই প্যাডেলে জোর দিয়ে হ্যান্ডেল থেকে হাত সরিয়ে নিলাম৷ আর সে অবাধ্য সাইকেল

গুপীর জামাইষষ্ঠী

সতেরো দিন পুরনো আনন্দবাজারটা ঘেঁটে নতুন খবর বের করার চেষ্টা করছিলেন মন্মথ হালদার। অকারণে রোজ রোজ কাগজ কিনে টাকা জলে দেওয়ার লোক তিনি নন। একবার কাগজ কিনে সে'টাই ধীরেসুস্থে হপ্তাতিনেক পড়ে থাকেন তিনি। জরুরী খবরগুলো বারচারেক পড়তে হয় রপ্ত করতে। ক্রসওয়ার্ড পাজলের ক্লুগুলো দিনে তিনটের বেশি নয়, নয়ত মগজকে অকারণ চাপ দেওয়া হয়। এমন সময় বিপিন এসে কনসেনট্রেশন দিল নষ্ট করে। সেই একই বাতিক ছেলেটার; নেই। আজ চিনি নেই। কাল তেল নেই। পরশু কাপড় কাচার সাবান নেই। শুধু নেই নেই আর নেই। মহাখচ্চর একটা কাজের লোক জুটেছে কপালে। কিন্তু বিপিনকে ছাড়া গতিই বা কী। মন্মথ হালদারের বাড়িতে বিপিন ছাড়া কেউ কোনোদিন টিকবে না, সে কথা মন্মথবাবু নিজেও জানেন। "টীব্যাগ শেষ", সদর্পে ঘোষণা করল বিপিন। খবরের কাগজটা সরিয়ে রেখে পকেটে রাখা নোটবইটা বের করে খানিকক্ষণ পাতা উলটেপালটে দেখলেন। মনে মনে খানিকক্ষণ হিসেব কষলেন। ভুরু কুঁচকে গেল ভদ্রলোকের, "বিপনে, হিসেব মত টীব্যাগের স্টক আরও আট দিন চলার কথা। শেষ হল কী করে সাততাড়াতাড়ি"? "দেখুন কাকা, ওই আপনার মত এক টীব্যাগ ডুবিয়ে দু'বার করে চা খেতে পারব না। এক কাপে একটা টীব

ভাণু সমগ্র

ভানুবাবুর লেখালিখিগুলো(ওঁর নিজের লেখালিখি আর ওঁর সম্বন্ধে অন্যদের লেখালিখি) জড়ো করে একটা দুর্দান্ত কাজ করেছে পত্রভারতী। এই ভানু সমগ্রের অর্ধেক জুড়ে রয়েছে ভদ্রলোকের একটা জমজমাট আত্মকথা, বইয়ের মূল আকর্ষণ সে'টাই। বড় শিল্পীদের আত্মকথা অনেকক্ষেত্রেই "গোস্ট রিটেন" হয়। তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়না বোধ হয়। কিন্তু ভানুবাবুর লেখার সোজাসাপটা স্টাইল,তাঁর কপিবুক ধারালো উইট এবং রসালো আড্ডার যে মেজাজ প্রায় প্রতিটি লাইনে রয়েছে; তা'তে মনে হয় এ জিনিস এক্কেবারে "রাইট আউট অফ হর্সেস মাউথ" না হলেই নয়। সাহিত্যের নিয়মকানুন রুচির তোয়াক্কা তেমন করেননি। গোটাটাই একটা দিলখোলা গপ্পগুজব, ওঁর সেই "একপেশে স্টাইলে"। পাঠক হিসেবে বরাবরই মনে হয়ে ভালো আত্মকথায় স্রেফ "আমি,আমি,আমি" থাকলে সমস্তটাই মাটি। আমার অমুক, আমার তমুকে আটকা পড়ে বহু সম্ভাবনাময় বায়োগ্রাফি ভেসে গেছে। ভারতীয় ক্রিকেট তারকাদের কিছু জীবনে সে ব্যাপারে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ভানুবাবুর এই ছোটখাটো লেখার ক্ষেত্রে আর যাই হোক সে অভিযোগ আনা যায় না। ভদ্রলোক নিজের জীবনের একটা ফ্লো দিব্যি সাজিয়েছেন বটে।

ভোলার দাওয়াই

বড় কঠিন সময়৷ মানে, এই চল্লিশ-হল-বলে বয়সটা। মানুষজনের প্রতি নিষ্ফল রাগ বেড়েছে অথচ রাগপ্রকাশ করার সাহস কমেছে৷ মিডলাইফ ক্রাইসিসের কেমিক্যাল ইকুয়েশন বোধ হয় এ'টাই। তবে মাঝেমধ্যে মনকে শান্ত করতে বিভিন্ন দুঃসাহসী সিচুয়েশন কল্পনায় সাজিয়ে নিই৷ এই যেমন কখনও ভাবি ব্রেনের সুইটস্পট থেকে স্মার্ট সারকাজম তুলে এনে কোনও বাটপারকে চুপ করিয়ে দিচ্ছি৷ (আদতে অবশ্য স্মিত হেসে মাথা নেড়ে কথার পিঠে তাল দিয়ে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না)। অথবা, হয়ত ভাবছি যে প্রচণ্ড ধারালো সব যুক্তি আর ইন্টলেকচুয়াল গাম্ভীর্য দিয়ে তর্কবাগীশদের জাস্ট শুইয়ে দিচ্ছি৷ তারপর রণেভঙ্গ দিয়ে সে'সব ডিবেট-ব্র ‍ ্যাডম্যানরা আমায় স্যালুট ঠুকছে৷ (আদতে হয়ত বলতে হচ্ছে, "মার্ভেলাস কথা বলেছেন মশাই৷ এক্কেবারে একঘর)৷ কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রিয় কাল্পনিক প্রত্যুত্তরে থাকে একটা ষাঁড়৷ সেই যমালয়ে জীবন্ত মানুষের ভোলা। যখন জ্ঞানগর্ভ কথার গদা দিয়ে কেউ এলোপাথাড়ি ঠোকাঠুকি করে চলে, মনে মনে ভাবি সেই ভোলা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ আর আমি আচমকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ষাঁড়টাকে ইন্সট্রাক্ট করছি, "গুঁতো ভোলা, গুঁতো"!

অমল দারোগা আর ফুল

"শুঁকে দ্যাখ", অমল দারোগা বেশ গম্ভীরভাবেই বললেন৷ আমি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে রিফিউজ করলাম। একজন নিষ্ঠাবান পকেটমার হয়ে দারোগার হাতের অচেনা ফুল শুঁকে দেখাটা সমীচীন হবে না৷ পুলিশের পেটে পেটে হাজার রকমের বদ মতলব ঘুরে বেড়ায়৷ গম্ভীর হয়ে বললাম, "আমার ফুলে অ্যালার্জি আছে"। "তোরই লোকসান", অমল দারোগা চুকচুক করে বললেন৷ "লোকসান কেন"? "এই ফুল আগে দেখেছিস"? " না দেখার কী আছে৷ ওই৷ গোলাপ জবা কুমড়ো কিছু একটা হবে"। "শাটাপ৷ পকেট মারছিস তার পাপ অল্পই৷ পলিটিক্সে তো নামিসনি৷ কিন্তু এই পিকিউলিয়ার ফুলকে তুই জবা বলছি? ধর্মে সইবে"? ভরদুপুরে বাইশ বাই বি বাস থেকে সাত নম্বর পকেট কাটার সময় ধরা পড়েছিলাম৷ কতবার বললাম পাবলিককে, এন্তার চড়থাপ্পড় কষিয়ে ছেড়ে দিন৷ আমার থানা পর্যন্ত যাওয়ার সময় নেই৷ খেটে খাওয়া মানুষ, থানায় এসে রিল্যাক্স করলে চলবে কেন? আগের দিনের মানুষ অত নেকু ছিল না, কথায় কথায় পুলিশ পুলিশ করে হন্যে হত না৷ হাতের সুখ করে একটা অন-দি-স্পট ফয়সালা করে মিটিয়ে নিত। কিন্তু ইয়ং জেনারেশন অত্যন্ত লালুভুলু৷ সোজা পুলিশের কাছে নিয়ে এলে৷ তাও এক্কেবারে অমল দারো