Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2017

ফেরত

- এই যে। - এই! এ কী! দিদিইইইই...। - অত ভয় পেলে চলে অপুবাবু?  আর কথায় কথায় দিদিকে ডাকা যে ভালো শোনায় না। - কিন্তু তাই বলে...। - তাই বলে কী? আমি স্টীমইঞ্জিন বলে কি আমার কথা বলা বারণ? সারাক্ষণ শুধু ভোঁসভোঁস করতে হবে? - কথা বলা ইঞ্জিন? - শুধু কথা বলাটাই দেখলে? রেললাইন ছেড়ে কাশবনে নেমে এসে দুদ্দাড় ছুটতে শুরু করলাম, সে'টা বুঝি কিছু নয়? - কী মুশকিল, কী ভয়ানক। - বাহ্, পাহাড় মহম্মদের কাছে ছুটে এলেই মুশকিল? - রেললাইন থেকে নামলেন কেন? - ফেরত দেওয়ার ছিল। - ফেরত? - হাতের শক্ত মুঠো। - দিদি? - দিদি আর কদ্দিন তোমায় মুঠোয় ধরে রাখবে অপুবাবু? এ'বার নিজের মুঠো শক্ত করো। খোকাকে  নিয়ে এসো। আমি বেঢপ কয়লা কালো ইঞ্জিন হতে পারি কিন্তু সে খোকার কাজল কালো টলটলে চোখ। এক কাশবন ছুটোছুটি পড়ে রয়েছে, ফেরত নিয়ে এসো। কালকেই চলে যাও। - কাজল আসবে? - নয়তো ফেরত দিতে এ'লাম কেন? - আর দিদি? - সেই তো আমায় টানতে টানতে রেললাইন ছাড়িয়ে নিয়ে এলো, অপুকে দেখাতে। এখন আসি, কেমন?

বরিশাল

বরিশাল। স্বাধীনতার খানিক আগেই হবে হয়ত। দাদু তখন স্কুলে, আন্দাজ করতে পারি ক্লাস সেভেন কী এইট। শহরজুড়ে উত্তেজনা। হিন্দু মুসলিম। মার দাঙ্গা। তার ওপর শুরু হল ভয়াবহ কলেরার প্রকোপ। মোদ্দা কথা হল মরে যাওয়াটা খুব একটা তাবড় ব্যাপার নয় সেই সময়। মাঝেমধ্যেই খবর আসে। খুব সুপরিচিত কেউ; গতকাল হয়ত ছিলেন- আজ নেই। ওই মৃত্যুর পরিবেশে দাদু অঙ্ককে আঁকড়ে ধরতে শিখেছিলেন। পরিচিত কেউ মারা যাওয়ার রাতগুলো দাদু রাতভর অঙ্ক প্র‍্যাক্টিস করে কাটিয়ে দিতেন। অঙ্ক। রাতভোর হওয়া পর্যন্ত। যতক্ষণ না মগজ নুয়ে পড়ে অবশ হয়ে। ভয়বাহ ব্যাপার হল অনুশীলনী কম পড়তে শুরু করেছিল। "দাদা, যাস না। যাস না। নতুন ক্লাসের নতুন বই আসুক, তখন না হয় অন্য বাহানা খুঁজে নিস"। একান্নবর্তী পরিবার, মানুষজন বড় কম ছিল না। অঙ্ক দাদুকে বিট্রে করেনি কখনও। দাদু অঙ্কের মধ্যে বাড়ির গন্ধ পেত হয়ত। চন্দননগরের প্রাইভেট নার্সিংহোমে শুয়ে দাদুর শেষ দিনের গল্পের বেশ কিছুটা জুড়ে ছিল ক্রিকেট, বরিশাল, অঙ্ক আর সলিচিউড অফ আলেক্স্যান্ডার সেলকার্ক। "অঙ্ক বইয়ের অনুশীলনী শেষ হয়ে আসছে, সে যে কী ভয় ভাই। অঙ্কের বাইরে কোথায় যাব? বরিশাল। জ্যাঠাইমা।  জ্যাঠতু

তাঁদের

ভালোবাসা শব্দটা অবহেলায় ব্যবহার করতে নেই। তবে যাদের মানিব্যাগের চোরাইখাপে টুথপিক থাকে, যারা বিরিঞ্চিবাবা কোট করে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়ে থাকেন, যারা ক্রমাগত আইআরসিটিসিতে লগ ইন করে বাড়ি ফেরার সুবাস পান, যাদের চোয়াল সাপলুডোয় হেরে শক্ত হয়, যারা কবিতা লেখেন পরাশর বর্মা হতে চেয়ে, যাদের রাগের লোহা পোস্টকার্ডের সুতোয় কাটে, তাঁদের একটুআধটু বাসতে হয়। হয়।

এক্সকিউজ মি

- দাদা, এক্সকিউজ মি। - কিছু বলবেন? - একটা মাইনর ব্যাপার ছিল। - টুক করে বলে ফেলুন। - বলছিলাম যে, ইয়ে, আপনার বাঁ পা আমার ডান পায়ের ওপর রয়েছে। - আপনার বাঁ পা কি মাটিতে রয়েছে? - জুতোর সোল মোটা, তাই ঠিক টের পাচ্ছি না। - আপনার জুতোর সোলের ওজন আপনার বাঁ'দিকের ভদ্রলোকের ডান পা ঠিক টের পাচ্ছে। আমার ডান পায়ের ওপর যেমন পাশের বৌদির ছুঁচলো হিল। জুতো নয়, চটি। কাজেই ব্যথার ডিগ্রীটা আশা করি বুঝতে পারছেন। - ওহ। সরি। - ইট ইস ওকে। - লাইনটা মুভ করছে না কেন বলুন তো? - আপনি বোধ হয় ক্যালক্যাটার নন, তাই না? - উখড়া,  আসানসোলের দিকে। - বুঝেছি। প্যান্ডেল হপিংয়ের জন্য জীনকে মিউটেট করাতে পারেননি। স্পীড কমফর্ট কমনসেন্সের মত অদ্ভুত সব জিনিস এক্সপেক্ট করছেন। - সরি। - ইট ইস ওকে।

রিভিউ

- হ্যালো, খোকা! - হুঁ। বলো। - এ'বারেও ছুটি পাবি না রে? - সব জানোই তো মা। - জানি। তবু, ইচ্ছে হয় জিজ্ঞেস করতে। - বেশ করেছ জিজ্ঞেস করে। - তোর বস তো বেশ ভালোমানুষ,  দেখ না একবার বলে কয়ে যদি..। - ওই সময় রিভিউ আছে মা। না থাকলে আমারই ক্ষতি। - জানি। জানি। তবু। বলে ফেলি। - বেশ করো বলে ফেলো। - খোকা জানিস, দত্ত বাড়ির ছোট মেয়ে পাড়ায় এসেছে..পুজো পর্যন্ত থাকবে। ওর ছেলেটা যে কী মিষ্টি হয়েছে..। আজ বাড়িতে এসেছিল। গিন্নীবান্নি হয়ে গেছে সে এখন। ছেলেটা সবার কোলে যায়...। - মা। - তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল। - আমি তো তোমায় এত কথা জিজ্ঞেস করিনি মা। - বলে ফেলি। - আচ্ছা। বেশ করো বলে ফেলো। - আসবি? খোকা? কদ্দিন পুজোয় বাড়ি ফিরিস না। উৎসব পার্বনের দিনে ঘরটা একদম...। - রিভিউ। প্রমোশন। কত কিছু! *** - তুই কলেজ ফাঁকি দিয়ে চলে এলি? - আমার দ্বারা পেল্লায় কেরিয়ার টেরিয়ার হবে না রে। একটা বেশ পোস্ট অফিসে ক্লার্কের হব। দশটা পাঁচটা। তুই হবি কোনও হেডমিস্ট্রেস। - বাবু, তুই এমন কেন রে? সেমেস্টার পরীক্ষা বাদ দিয়ে কেউ পুজোয় বাড়ি ফেরে? - পুজোয় কেউ কেরিয়ার ভাবে? *** "পুজোয় কেউ কেরিয়ার ভাবে"? নবমী সকা

গানের খাতা

- ডাক্তার। - আরে দত্তবাবু যে,কী ব্যাপার? এই শেষ বেলায় কী মনে করে? - চিন্তায় ছিলাম এত রাত্রে তোমার চেম্বার খোলা পাব কী না। - বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তা কী ব্যাপার? হাঁটুটা বেশি ট্রাবল দিচ্ছে? - হাঁটু যেমন তেমন আছে হে ডাক্তার, সমস্যা অন্য। - কী সমস্যা? - জ্বর জ্বর ভাবটা কমছে না। টেম্পারেচার তেমন নেই, কিন্তু ভিতর ভিতর একটা যে ইয়ে রয়েই গেছে। - দেখি, পালস দেখি দত্তবাবু। - মড়ার আবার পালস কী হে? - তাও তো বটে। আমারই মাথাটা গেছে। - জিভ দেখি। - মুখ দু'দিন ধরে এত তিতকুটে হয়েছিল...জিভটা খুলে রেখেছি। ভেবেছিলাম আজ বেরোনোর আগে পরে বেরোব কিন্তু মনে ছিল না। আসলে স্ট্রেস কমাতে কয়েক জিবি মেমোরি ব্রেন থেকে সরিয়ে আলমারিতে রেখে দিয়েছি কিনা, তা'তেই সমস্যা। সঠিক সময়ে সঠিক কথা কিছুতেই মনে পড়ছে না। - পালস নেই, জিভ নেই। খানিকটা মেমোরিও মিসিং। মুশকিল হল তো। - তোমার এদ্দিনের এক্সপিরিয়েন্স, দিয়ে দাও না দু'দাগ যা হয় কিছু। - জ্বর জ্বর ভাব? - প্রচণ্ড রকমের ম্যাজম্যাজ। গায়ে অল্প ব্যথা। একটা ভূত-বেল্যেডোনা গোছের কোনও বড়ি যদি...। - নাহ্, এ যা দেখছি ওঝাও-হোমিওপ্যাথিতে কাজ হবে না...। - স

গোপন বোতল

- হ্যাঁ রে গুপে..একটা কথা অনেস্টলি বলবি আমায়? - কী ব্যাপার মামা? তুমি এত সিরিয়াস টোনে কথা বলছ কেন? - কারণ সাব্জেক্টটা সিরিয়াস তাই। - কী ব্যাপার? - তুই মদ খাস? - ছিহ্! মদ? রামোহ্! মাকে প্রমিস করেছি ও'সব ছোঁব না। - রিয়েলি? দিদিকে প্রমিস করেছিস? র‍্যামোহ্? বটে? - তোমায় ছুঁয়ে বলব? - পাগল নাকি রে! ডাক্তার এমনিতেই বলেছে কোলেস্টেরল অ্যালার্মিং ডায়রেকশনে বয়ে চলেছে। - মাইরি গো। সে'বার অফিস পিকনিকে এক চুমুক বিয়ার খেয়ে কী বিশ্রী লেগেছিল। তারপর থেকে পার্টিফার্টিতেও বড় জোর লাইম সোডা, তাও আবার স্যুইট। - গুড বয় গুপে। - থ্যাঙ্ক ইউ মামা। - ইয়ে, তোর ওই দেরাজে কেউ ভুলে একটা জনি ওয়াকারের বোতল ফেলে গেছিল। - দেরাজ? আমার? মাইরি? - নট টু ওয়ারি। ও আমি সরিয়ে নিয়েছি। এই ব্যাগে রেখেছি। যাওয়ার পথে কোনও ঝোপঝাড় দেখে ফেলে দেব। - মামা, আমি থাকতে তুমি কেন কষ্ট করবে? - কষ্ট কী? নাথিং। নাথিং। ঝোপঝাড় কত চারদিকে। - কী দরকার। তুমি নিজে কোনও দিন মদের বোতল ছুঁয়ে দেখোনি, এই সেদিনই তুমি দিদার সামনে গল্প করছিলে। - তা অবশ্য ঠিক। মদের বোতল মানে নরকের আধার কার্ড। - তা বোতলটা রেখেই যাও। - কী ভাবে এলো বল ত

নতুন গান

এই যে বেঁচেবর্তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এই যে চায়ের কাপে নিজের পছন্দ মত পরিমাণে চিনি মিশিয়ে নিচ্ছি। খবরের কাগজের পাতা উলটে  চুকচুক করে চলেছি। বসের মুখ গোমড়া হলেই মাথা চুলকে হদ্দ হচ্ছি। এই যে প্রতিবেশীর পর্দার রঙ ক্যাটক্যাটে বলে মনখারাপ করছি। এই যে সভ্যতায় গা এলিয়ে মৌজ করতে পারা। টেবিল চাপড়ে রেগে উঠতে পারা। এই যে মনের মধ্যে হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড়ে তৈরি হলে শীতের রাতের মিয়ানো বেড়ালের মত কাঠের পেটির আস্তানা খোঁজা। সন্ধে সাতটা পঞ্চাশের আপ ব্যান্ডেল লোকালের জানালার প্রতি এই যে প্রপঞ্চময় মায়া। সব মিলে ইংরেজিতে যাকে বলে 'মাচ্ কভেটেড' এই মানবজীবন। এই মানবজীবনের কচুপাতায় চকমকে মুক্তোর দানার মত যদি কোনও পাওনা থাকে তবে তা হল একটা নতুন গানকে দুম করে ভালোবাসতে পারা। সুর মানেই প্রশান্ত মহাসাগর এ থিওরি আদ্যোপান্ত বাতেলা। আবার অমুক সুরে দুনিয়া মজছে বলেই আমিও ভেসে বেড়াবো তেমন নিউটনি আইনও খাটে না। একটা নতুন গানকে আচমকা 'প্রিয়' বলে চিনতে পারা, এ'টাই সুপারপাওয়ার, এতেই নির্বাণ। একদম অচেনা অজানা কোনও সুর; প্রথম শোনা এক ঝাঁক কথার সিঁড়ি বেয়ে ছাতে উঠে পায়চারী করতে করতে গান হয়েছে। তার সামনে এসে ঝ

দেবু আর ব্লু-হোয়েল কিউরেটর

- দেবু...। - এক্সকিউজ মি? - আমি ব্রাউনজিব্রা। - ওহ্‌, স্যর...। - বসো বসো...দাঁড়ালে কেন? আমি তোমার ক্লাসটীচার নই। বসো। - থ্যাঙ্ক ইউ। - কেমন আছ? - আছি স্যর। - টেন্স? - ওই। না মানে...ঠিক টেন্স না...এক্সাইটেড। - তুমি ক্লাস নাইনে পড়ো, তাই না? - ক্লাস নাইন। হ্যাঁ স্যর। - বাড়িতে বাবা মা আর ছোট বোন। তাই তো? - আছে তিন জন। -  হুঁ। কোল্ড কফি অর্ডার করি? - আচ্ছা। - ওয়েটার, দু’টো কোল্ড কফি। এ’বার বলো। - আমি ভেবেছিলাম...। - কী ভেবেছিলে দেবু? - আমি ভেবেছিলাম ব্রাউনজিব্রা বাংলা বলতে পারে না। - হেহ্‌। দেবু, সাবজেক্টে যে ভাষায় স্বপ্ন দেখে আর চিন্তা করে; সে ভাষা ভালো ভাবে জানা না থাকলে কিউরেটর হওয়া যায় না। - ওহ্‌। হ্যাঁ। তা বটে। - ইউ লুক টায়ার্ড। - একটু। - ঘুমোনোর সুযোগ হচ্ছে? - রাতে নয়। দিনেদুপুরে কখনও সখনও। এই, ঘণ্টা দুয়েক করে। - হুম। - কেমন লাগছে? - টানছে। - কী’রকম দেবু? -  আমি আরও কষ্ট সহ্য করতে পারি। এ’গুলো জাস্ট কিছুই না। বিশ্বাস করুন। -  জানি। - আমার সবসময় বড্ড পিপাসা পাচ্ছে। মনে হচ্ছে ছুটে যাই। বুকের ভিতর ধড়ফড়। সব সময়। অথচ কথা বলতে ইচ্ছে করছে না অন্য কারুর সঙ্গে। গ

উইন - উইন

- কত চাই? - কী কত? - চেকবই সঙ্গে এনেছি। - কেন? - তোমায় আমার কাজটা করে দিতে হবে সমীর। - আপনি ভাবলেন কী করে মিস্টার সেন যে টাকার বিনিময়ে আমি মোহনদাকে খুন করব? - কারণ সে'টাই তোমার পেশা! - কিন্তু শিকার পছন্দসই না হলে আমি খুনখারাপি করি না। আপনি জানেন আমার রক্ত দেখলে গা গুলোয়? নেহাত পেটের দায়ে...। - মোহন সিংকে খুন করতে তোমার আপত্তিটা কোথায়? সে তো নিজেও একটা মার্ডারার! - লাইনের লোকে কী বলে জানেন? মোহন সিং হল আচরেকর, আর সমীর হল তেণ্ডুলকর। - মহাভারতে যুধিষ্ঠির দ্রোণকে শায়েস্তা করেনি? - দ্রোণ কাঠি করছিল। উপায় ছিল না। - আর এ ক্ষেত্রে মোহন সিং তোমার মার্কেট শেয়ার নষ্ট করছে। - আপনার জ্বালার কারণ আমার মার্কেট শেয়ার নয় মিস্টার সেন। আপনি জ্বলছেন কারণ মোহন সিং আপনার বিজনেস রাইভাল দত্তর হয়ে কাজ করছে। - অবভিয়াসলি সে'টাই আমার কনসার্ন। কিন্তু সমীর, সিচুয়েশনটা উইন উইন। এ কাজ হয় তুমি করবে নয়তো অন্য কেউ...মাঝখান থেকে তোমার রেভেনিউ কমে যাবে। - কেন বাতেলা ঝাড়ছেন স্যার? মোহন সিংকে আমি ছাড়া কেউ ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না। - দশ পাবে। পুরোটা অ্যাডভান্স। - আপনি আজ আসুন মিস্টার সেন। - ফিফটিন। সম