Sunday, November 29, 2015

কচুরিয়




১।



- আপনার আনন্দবাজারটা। দিয়ে গেলাম। বুড়ি নিয়ে গেছিল, বৌদির থেকে।আমাদের তো আবার টাইমস। মেষের আন্ডারে কী বলছে একটু চেক করার ছিল। আজ একটা কনসাইনমেন্ট কনফার্ম হওয়ার কথা কী না।


- ও কনসাইনমেন্ট আপনার বাঁধা।

- বলছেন?

- অফ কোর্স। স্যাঙ্গুইন। আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় স্পষ্ট দেখতে পারছি। এ দিন আপনার খারাপ যেতেই পারে না।

- ফার্স্ট পেজে? 

- একদম


- মানে?


- মানে ছোলার ডালের ফোঁটাটা যে ভাবে প্রাইম মিনিস্টারের কপালে ল্যাণ্ড করেছে দেখছি, কচুরি বেশ হাপুসহুপুসেই সাবড়েছেন। এ দিন আপনার খারাপ যাওয়ার কোন চান্সই নেই।


২। 


- কোন এক হারিয়ে যাওয়া ভাষায় ক মানে নিশ্চই মন। ডেফিনিটলি।

- ক মানে মন?

- ডেফিনিটলি।

- হঠাৎ?

- হাউ এল্স ডু ইউ এক্সপ্লেইন দ্য ওয়ার্ড কচুরি?

সর্ষের মধ্যে

- আসুন। আসুন। ওয়েলকাম টু দ্য ল্যান্ড অফ ডেড।

- বাহ! দিব্যি অ্যারেঞ্জমেন্ট কিন্তু মশাই। ইয়ে আপনি...?

- অনিল সমাজপতি। এই অগস্টেই এসেছি। ব্রেনস্ট্রোক।

- আমি নির্মল রায়। আমার আবার ইয়ে, কার্ডিয়াক। তা, এখেনে সবকিছু এমন কালচে কেন বলুন দেখি?আর একটা ঝাঁজালো গন্ধও পাচ্ছি সেই এসে থেকে।

- সর্ষের মধ্যে প্রথম ক'দিন এমন লাগবে। পরে সয়ে যাবে। 

- সর্ষে?

- নয়তো আর বলছি কি। দেওয়াল সিলিং ছুঁয়ে দেখুন না মশায়। সর্ষে দানার ইন্টেরিয়র বিলক্ষণ ফিল করতে পারবেন।

- রিয়েলি! আর বাহ! তাই তো! মানে ইয়ে, এখানে বোধ হয় স্বর্গ নরকের ব্যাপারটা নেই। মানে যেমন গপ্পগাছা শোনা যায় আর কী! তাই না?

- স্বর্গ? নরক? অবভিয়াসলি আছে। খানিক পরেই ব্রশার আসছে। পড়লেই ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

- ব্রশার?

- মৃত্যুলোকের। 

- তা স্বর্গ বা নরক চিজ কেমন? সেসব এই সর্ষের মধ্যেই?

- আরে না না। এ তো বেসক্যাম্প। এখানে স্রেফ মাসখানেকের মামলা। তার মধ্যেই ফয়সালা আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

- ফয়সালা অফ স্বর্গ অর নরক?

- এগজ্যাক্টলি।

- তা নরক মানে তো শুনেছি অসম্ভব যন্ত্রণা। কড়াইয়ে চুবিয়ে বিশ্রী হ্যারাসমেন্ট।

- কড়াইয়ে চুবনিই আসলে স্বর্গের অ্যাফেয়ার।

- সে কী! সে তো যন্ত্রণা।

- অন দ্য কন্ট্রারি। প্লেজার অফ দ্য হাইয়েস্ট অর্ডার।

- হাউ?

- দেখুন,আপনার কপালে স্বর্গ থাকলে আপনি সর্ষেয় চেপে বাটা হয়ে স্ট্রেট যাচ্ছেন ইলিশে। আর নরকভোগ থাকলে আপনাকে সর্ষে সহ রগড়ে তেল বার করে পাঠানো হবে ডিসেম্বরের স্নানবাবুর নাকের ফোঁদলে।

- ম্যাগো।

- তাই বলছিলাম; কড়াইই স্বর্গ।

Friday, November 27, 2015

নিখুঁত প্রতিশোধ

- ডাক্তার। 

- কোথায় রাখলে?

- ওটিতে। 

- ভুল হয়নি তো?

- সেই লোক ডাক্তার। হান্ড্রেড পারসেন্ট। আলেক্স রডরিগেজ। আই কার্ড আর ছবি মিলিয়ে দেখেছি। কাট মার্ক অন দ্য নি। কটা চোখ। নির্ভুল।

- চোট?

- যেমন কথা তেমন কাজ। বিন্দুমাত্র নেই। শুধু গভীর ঘুমে। আটচল্লিশ ঘণ্টার আগে জ্ঞান ফিরবে না। 

- গুড। 

- ওটি তৈরি করি?

- কর। আমি সিগারেটটা শেষ করে আসছি।

- ডাক্তার। 

- বল।

- এই আপনার ...। 

- হুঁ।

- আপনি নিশ্চিত? 

- নিজের বাবা মা'র খুনিকে মনে রাখাটা বেশ সহজ কার্লোস।

- খুন তো সহজেই করতে পারতেন । সহজ প্রতিশোধ।

- যে প্রতিশোধ সহজে নেওয়া হয়, সে প্রতিশোধ দায়সারা। 

- যন্ত্রণাবিদ্ধ করে মারতে চান?

- যন্ত্রণাবিদ্ধ করতে চাই। তবে মারতে চাই না। সুস্থ ও জীবিত রাখতে চাই। 

- কী অপারেশন করতে চাইছেন ডাক্তার? 

- যে অপারেশনের জন্য আমার এই কুড়ি বছরের রিসার্চ। 

- গোপন রিসার্চ। 

- ঠিক। 

- কীসের অপারেশন ডাক্তার?

- দ্য মোস্ট কমপ্লেক্স ব্রেন সার্জারি ইন হিউম্যান হিস্ট্রি।

- কী'রকম?

- টেবিল তৈরি কর কার্লোস। 

- রাইট ডক্টর। 


**

- খোকা। 

- ইউ আর আ পিস অফ ডার্ট আলেক্স। আর আমায় খোকা বলে ডাকা বন্ধ কর। 

- আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলিস না। আমি জানি আমি আলেক্স কিন্তু তবু...। 

- কিন্তু তবু আমার জন্যে অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে। তাই না? আমায় খোকা বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে তাই 
না? আমার মা বাবাকে মেরেছ বলে পাগলের মত কষ্ট হচ্ছে, তাই না?

- এসব কী করলে ? হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান?

- তুমি আমার বাবা মাকে কেন খুন করেছিলে? 

- অবভিয়াসলি ওদের ফর্মুলা চুরি করতে। বাট আই ফিল টেরিব্‌ল নাউ। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। হোয়াই! কী এমন হল যে এমন ভীষণ অপরাধ বোধ...। 

- ফর্মুলা। মানুষের ইমোশনাল কনফিগারেশনের রেপ্লিকা তৈরি করার মেডিকাল ফর্মুলা। সেই রেপ্লিকাকে জমিয়ে রাখার ফর্মুলা। সেই ইমোশনাল কনফিগারেশনের রেপ্লিকাকে অন্যের ব্রেনে ইমপ্ল্যান্ট করতে পারার ক্ষমতা। কী হল খুন করে? এ ফর্মুলা তো পেলে না আলেক্স।

- আমায় ক্ষমা কর খোকা। যন্ত্রণা। বড্ড যন্ত্রণা। 

- স্টপ কলিং মি খোকা। গুলি করে ঘিলু ঘেঁটে দেব আলেক্স। অনেক দিন আমায় কষ্টে রেখেছ। আহ, চোখ বুঝলেই মা বাবার মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করার দৃশ্য মনে পড়ে।

- তোর হাতে ওটা রিভলভার খোকা? শুট মি। শুট মি নাউ। এ যন্ত্রণা বইতে পারব না আমি। 

- যন্ত্রণা তো সবে শুরু আলেক্স। 

- এমনটা কেন হচ্ছে ? কেন?

- সে ফর্মুলা কাজে লাগানোর বুদ্ধি তোমার ছিল না আলেক্স। তুমি মেডিকাল সায়েন্সের জগতের কলঙ্ক। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার আগে সেই ফর্মুলা সফল ভাবে টেস্ট করে গেছিলেন। অবিশ্যি পার্শিয়াল সাকসেস। 

- সাফল্য?

- আমার মায়ের ইমোশনাল কনফিগারেশনের রেপ্লিকা তৈরি করে যত্ন করে রেখে গিয়েছিলেন। সেই রেপ্লিকা আজ আমি তোমার ব্রেনে প্ল্যান্ট করেছি।

- খোকা! এ তুই কী করলি?

- যে যন্ত্রণা তুমি ভোগ করছ আলেক্স, তা হচ্ছে আমার মায়ের বুকের ব্যথা। নিজের স্বামীকে আততায়ীর গুলিতে ছটফট করে মরতে দেখার যন্ত্রণা। নিজের মৃত্যু দেখতে পাওয়ার আতঙ্ক। সে'সব যন্ত্রণাতেই ছটফট করে মরছ তুমি। ছটফট করে মরবেও। আজীবন। 

- খোকা! স্টপ ইট!

- ইট হ্যাজ জাস্ট স্টার্টেড। সবচেয়ে করুণ যন্ত্রণায় তোমায় দগ্ধে মারব আলেক্স। বাপ মায়ের খুনের যোগ্য বদলা নিয়ে যাব আমি। সন্তানহারা মায়ের দুঃখের আগুনে তোমায় সেঁকব আজীবন। 

- কী করছিস খোকা! সাবধান! 

***

ডাক্তারের নিথর দেহের ওপর লুটিয়ে পড়লেন নতুন মা ও সদ্য সন্তানহারা আলেক্স রডরিগেজ্‌। 

Wednesday, November 25, 2015

বোঝা আর মাখা সন্দেশ

- দাদা, সবাই সব বোঝে?

- না বোঝাটাই মঙ্গল। মাসলোর মগডালে বেশি লোকের ঘুরঘুর হলেই মুশকিল।

- তুই সব বুঝিস যেন?

- আমি মাসলোর পাদানিতে দোল্লা খাচ্ছি। আমার সব বুঝে কাজ কী? 

- তুই দাদা বড্ড বেশি আনন্দবাজার পড়ছিস। খালি বাতেলা।
- ভুল বিনু ভুল। আনন্দে আছি, বাজারে নেমেছি; সচ বাত। কিন্তু আনন্দবাজারে নেই। তা সবার বোঝা নিয়ে মেতেছিস কেন?
- কবিতা লিখছি।
- কেন?
- কেন মানে? কবিতা পাচ্ছে। তাই।
- প্রেম?
- সুস্মিতা। সেকেণ্ড ইয়ার। আর্টস। হিস্ট্রি বোধ হয়।
- এসব পেখম মেলা কাব্যি বস। মেটিং ডান্স। তোর ও লেখা কেউ পড়বে না।
- ছিঃ দাদা।
- চোপ। শুনে রাখ; সবাই বুঝবে না। গবেট মেজররিটির দুনিয়া। সবে প্রেমে পা চুবিয়েছিস। হাইয়ার ওয়েভলেন্থে ফ্লোট করছিস। কেউ বুঝবে না। ভাবিস না।
- সুস্মিতা বুঝবে?
- বুঝলেই মরলি। তবে যদি না বোঝে, সেদিন বুঝবি রিয়েল পোয়েট্রি কী!
- বুঝব? বিরহ? হার্টব্রেক? মদ ধরতে হবে?
- গবেট। হার্টব্রেক সারাই হয় গুপ্তিপাড়ার মাখাসন্দেশে।
- গুপ্তিপাড়া? মিনুপিসির বাড়ি?
- অফ কৌর্স। সুস্মিতা রিফিউজ করলে তোকে নিয়ে যাব। দু'দিনে দেড় কিলো পার হেড। ফাইনেস্ট ব্যথা ভোলানো কাব্যি। ক্লাসিয়েস্ট মাখা সন্দেশ। তদ্দিন বরং আগডুম বাগডুম লিখে সুস্মিতার লেজুড় হয়ে ঘুরে নে।

হ্যাশট্যাগ

- কী চাই?

- ঠকঠক করে কাঁপুনিটা বন্ধ করুন। ফার্স্ট ডিমান্ড।

- ন...নলের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁ...কাঁপুনিটা অটোমেটিক। ইনভলেন্টারি।

- বন্দুকে এত ভয়? নিউজপেপার তো নিশ্চিন্তে বগলদাবা করে ঘুরে বেড়ান। যত ভয় এই বন্দুকে?

- না মানে....। মানে...চাইছেনটা কী?
- হ্যাশট্যাগ আইডিয়া অফ রোম্যান্স।
- আ....আজ্ঞে?
- মানে রোম্যান্স সম্বন্ধে আপনার আইডিয়া কী?
- আ...আমার আইডিয়া?
- বলুন। না বললেই নয়।
- না বললেই বুঝি ঢি...ঢি...ঢি...।
- ঢিশুম? ইয়েস। ঢিশুম। এবার বলুন।
- রোম...রোম...।
- বেহালা কাঁধ থেকে নামান ভাই নিরো। হোয়াট ইজ ইওর আইডিয়া অফ রোম্যান্স?
- আমার?
- নয়তো কি ডালহৌসির?
- রোম্যান্স। রি...রিয়েল রোম্যান্স বলতে বিয়ে...।
- বিয়ে? একশোয় বারো।
- যে সে বিয়ে নয়। শীর্ষেন্দুর দিলদরিয়া চোরের সাথে শীর্ষেন্দুর মাই ডিয়ার পেত্নীর বিয়ে।
- রিয়েলি? একশোয় একশো।
- ঘোড়াটা সামলে স্যার।
- এই নিন। এই রিভলভার এখন আপনার। মাই জব ডান।
- মানে?
- মানে এই বন্দুক অন্য কারুর কপালে ঠেকিয়ে ‪#‎IdeaOfRomance‬ য়ের পরের কিস্তি আপনাকে আদায় করতে হবে। যে দেশে যে ইয়ে।
- মাইরি? এই বন্দুকটা আমার? এটা কোল্ট?
- না। কোল্ট তো ফেলুদার। এটা ফেসবুকের; এটা ট্যাগ।

Tuesday, November 24, 2015

শার্প

- বসুন। 
- আপনার বোধ হয় সিগারেট...।
- চলে না। তবে আপনি ধরাতেই পারেন।
- ধন্যবাদ।
- নার্ভাস লাগছে?
- একটু। আর শীতটাও বাড়াবাড়ি রকমের।
- বাইরে মাইনাস বারো। ব্র‍্যান্ডি দিতে বলেছি।
- আসলে জায়গাটা সুন্দর অথচ দম বন্ধ করা অন্ধকার...।
- এটা হিল স্টেশন নয়। আপনার কলকাতা তো নয়ই।
- জানি।
- জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে আসার কোন মানে হয়? আপনার ঝকঝকে সুন্দর জীবন। নরম, ভালবাসা মাখা। সেলিব্রেটি। আইকন। এই রুক্ষ খুনে পরিবেশে কেন এলেন? 
- ব্রুসের কাছেও তো সবই ছিল। হি ওয়াজ অলসো অন টপ।
- অন টপ? অন টপ? রিয়েলি? গথাম আর কলকাতা একই স্কেলে মাপছেন?
- আর্টিস্টের কাছে সিটি অফ জয় বলে কিস্যু নেই। সমস্তটাই খুনোখুনি। অ্যান্ড আই ওয়ান্ট টু গো ওভার অ্যান্ড অ্যাভব অল দ্য র‍্যাট রেস।
- আর তেমনটা কেমন ভাবে হতে চান?
- আরও ধারাল হয়ে।
- ধারালো? আপনি সুপারস্টার । আপনার হাজার ওয়াটের হাসি।  লেডি কিলার মেজাজ। মন ভোলানো ম্যানারিজমস। অগাধ পয়সাকড়ি। প্রতিপত্তি। 
- সমস্ত। সমস্তই আছে হে ঘুল। নেই শুধু সেই শার্পনেসটুকু। সেই এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া কথার দুলকি। সেই ক্ষুরধার দৃষ্টি।  সেই জাদু হিউমরের ছুরি।  ওগো বধু সুন্দরীর সেট থেকে এমনি এমনি পালিয়ে আসিনি। ডামি ডেডবডি এমনি এমনি ফেলে আসিনি।
- সূর্যের মত ধারলো হতে চান উত্তম?
- হে রাস আল ঘুল, আমি রবি ঘোষ হতে চাই।

Sunday, November 22, 2015

অবিচুয়ারি

চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে ব্যালকনিতে এলেন অনল। সানডে লেট মর্নিংটা হকের ব্যাপার। রোল পাকানো টাইমস অফ ইন্ডিয়াটা খুলে অভ্যাসবশত পাতাগুলো ফরফর করে একবার উল্টে গেলেন তিনি।


বারো নম্বর পাতায় এসে চোখ গেল আটকে। নিচের দিকে ডান কোণে রয়েছে ব্যাপারটা। অবিচুয়ারি। ইন দ্য লাভিং মেমরি অফ অনল সেন। বোঝ। সঙ্গে তার ছবি। 

-অনলবাবু ভেতরে আসুন প্লীজ। ভুল ব্যালকনিতে রয়েছেন আপনি। 

অনল অবাক হয়ে দেখলেন বেডরুমের ব্যালকনিতে এক অপরিচিত মুখ দাঁড়িয়ে। 

- আরে ভেতরে আসুন না অনলবাবু।

একরকম অনলের  হাত ধরে জোর করে ঘরের মধ্যে নিয়ে এলেন ভদ্রলোক।

- আরে আপনি কে মশাই? হু আর ইউ?
- দেখলেন তো অনলবাবু! কী গোলমালটাই না পাকিয়েছেন আপনি।
- বেরোন। বেরোন বলছি।
- যাব কোথায়? উপায় নেই তো। সব দোষ আপনার।
- মানে?
- মানে ওই ঘুমের চোখে ভুল দরজা খুলেই করলেন গণ্ডগোল। এখন বুঝুন ঠ্যালা।
- এর মানে কী? আপনি উন্মাদ। রাখহরি! এদিকে।
- আচ্ছা লোক মশাই আপনি। খুললেন গলত দরওয়াজা। এখন ডাকছেন রাখহরি। বলি সে এখানে আসবে কী করে?বোঝ ঠ্যালা। আরে আপনি তো ঘুমের চোখে দু'মাস পরের দরজা খুলে ফেলেছেন।
- ননসেন্স।
- কী মুশকিল। বিশ্বাস অবিশ্যি করবেনই বা কী করে। এই টাইম অ্যানোমালি এত রেয়ার। 
- দু'মাস পরের দরজা মানে? এটা আমার ব্যালকনির দরজা। 
- বোঝ। তাই তো বলছি। ওইটে আপনার দু'মাস পরের ব্যালকনি। এমন কেয়ারলেসলি দরজা খুললে এই হবে। বিশ্বাস না হয় খবরের কাগজের ডেটটা দেখুন।
- কী যাতা বলছেন।
- দেখুন না। তারিখটা।
- জ্যা....জ্যানুয়ারি।
- করেক্ট। 
- আর এটা নভেম্বর।
- এটাও জানুয়ারি। তবে আপনি নভেম্বরের। ভেবেছিলাম দরজা দিয়ে ফের ভেতর নিয়ে আসলে আপনি নভেম্বরের বেডরুমে ফেরত আসবেন। কিন্তু হল না।
- মাথ গুলিয়ে যাচ্ছে।
- ন্যাচুরালি। নস্যি নেবেন?
- না। থ্যাংকস।  আপনি কে?
- টাইম অ্যানোমালি ম্যানেজার। কম্পলেক্স ব্যাপার।
- আপনি মানুষ নন?
- ইট ইজ কম্পলিকেটেড। তবে হতেও পারি।
- আচ্ছা এখন বেরোলে কি আমি জানুয়ারির রাস্তায় বেরোব?
- পারবেন না। আপনার এখন সাস্পেন্ডেড স্টেট। এ ব্যালকনি আর বেডরুম জানুয়ারির। আপনি নভেম্বরের। সরি আপনি বেরোতে পারবেন না।
- আচ্ছা ওই অবিচুয়ারিটা। আমি কি ইয়ে, মারা যাব? 
- অবিচুয়ারি?
- আমার নামে। জানুয়ারির কাগজে। এইখেনে।
- বটে। কী সাংঘাতিক। এমনটা তো হওয়া উচিত নয়। হলে আপনি সেই ভূল দরজার নাগাল পেলেন কী করে?
- আমি না কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। কিচ্ছু না।
- এবার তো আমিও কনফিউজড। এটা আপনারই অবিচুয়ারি? আর ইউ শিওর?
- অফ কোর্স।
- যাচ্চলে। নিজের মৃত্যুর পরের টাইমলাইন তো টাচ করতে পারা উচিৎ নয়। সময় তৈরিতে এত বড় গলদ? যাঃ শালা।
- আমি জানুয়ারি বাইশের আগে মারা যাব?
- অবিচুয়ারি তো তাই বলছে। কিন্তু ইয়ে, সরি অনলবাবু। জানুয়ারিতে আপনার মরা হচ্ছে না। আপনার মরা তো আর টাইমের কনসেপ্টের চেয়ে বেশি জরুরী হতে পাতে না।
- আরে আমি নিজেও কি ছাই মরতে চাই নাকি? 
- আরে অমন দুম কর দরজা কেউ খোলে? কী ফ্যাসাদ। এখন সময়ের থিওরিকে বাঁচাতে আপনার মৃত্যুকে নিয়ে গোঁজামিল করতে হবে।


***
- ইন্সপেক্টর অনল...ইন্সপেক্টর অনল...ক্যান ইউ হিয়ার মি....।
- স্যার....।
- বল অনল। বল। 
- মি...মি...
- মিনি গুণ্ডা ধরা পড়েছে।
- আমি...গুলি....গুলি লেগেছে...।
- টু বুলেটস। বাট বি ব্রেভ। হস্পিটাল আর বেশিদূর নয়।
- টু মাচ ব্লিডিং...।
- হোল্ড অন অনল। বেস্ট ডক্টরস আর ওয়েটিং ফর ইউ।
- হোয়াট আই নিড...।
- কী চাও ইন্সপেক্টর,  জাস্ট টেল মি...।
- দেয়ার ইজ অনলি ওয়ান ওয়ে টু সেভ মি স্যার...।
- কী অনল, টেল মি।
- টা...টাইমস অফ ইন্ডিয়ায়...। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার কাল...কালকের এডিশনে...।
- কালকের এডিশনে...? কালকের এডিশনে কী ইন্সপেক্টর?
- আমার নামে একটা অবিচুয়ারি...প্লীজ।
- হোয়াট? হোল্ড অন টু ইওরসেল্ফ ইন্সপেক্টর।  তুমি বাঁচবে।
- দ্য অবিচুয়ারি...ইজ...ইজ দ্য অনলি ওয়ে টু সেভ মি...প্লীজ।
- কী বলছ?
- প্লীজ বস। প্লীজ।
- অনল...অনল...অনল!!!!

Thursday, November 19, 2015

উইলের ব্যাপার



- জুতিয়ে মুখ ভেঙে দেব।


- চাবকে পিঠের চামড়া তুলে নেব।

- পেটে বোম মারব।

- কান কেটে কুচি কুচি করে ডুবো তেলে ভাজব।

- তুমি তাহলে আমার কথা শুনবে না দাদা? এত দেমাক?

- তুই আমার কথা শুনছিস না। রাস্কেল ছেলে কোথাকার।

- বাবার উইল কে রিফিউজ করছ?

- বাবা ফাউল করেছে। মরার আগে চুপিচুপি উইল চেঞ্জ? বাবা গদ্দারি করেছে।

- নিজের বাপকে গদ্দার বলছ? এই তোমার কালচার?

- লুঙ্গি পরে ক্রিকেট খেলিস তোর কাছে কালচার
নিয়ে লেকচার শুনব? শুয়ার। 

- খবরদার। ভাষা সামলে। উইল তোমায় মানতে হবে।

- চোপ। জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব।

- ভুঁড়ি পাঙচার করে দেব।

- ওই উইলে আমি ইয়ে করি।

- দাদা বলে রেয়াত করব না। উইল তোমায় মানতেই হবে। 

- আনফেয়ার উইল। বাবার ভীমরতি হয়েছিল।

- বাবার ভীমরতি?  মানুষটা মারা গেছে দু'দিনও হয়নি। তুমি এমন ভাবে বলতে পারছ দাদা?

- ফ্যাক্ট ইজ ফ্যাক্ট। ওসব আনফেয়ার ডিলের তোয়াক্কা আমি করি না। এই বাড়ি তিন তলা। দেড় তলা আমার, দেড় তলা তোর।

- বাবা বলে গেছেন দু'তলা তোমার তো দু'তলা তোমার। একতলা শুধু আমার। এই বলে রাখলাম।

- অসম্ভব। বাবার অবর্তমানে আমি বড়দাদা হিসেবে তোর গার্জেন। দেড় তলা দেড় তলা। সিধে হিসেব। না মানলে ফোট।

- ওরে আমার গার্জেন রে। গোটা সিজন একটা ভালো ইলিশ আনতে পারলে না।

- ট্রেটর শালা। সতেরোই অগস্টের ইলিশটা ভুলে গেলি? আহাম্মক।

- লায়ার। তুমি একটা কনজেনিটাল গুলবাজ। ও মাছ বাবা বেছে এনেছিল।

- ব্যাগ আমি ক্যারি করেছিলাম। গন্ধমাদনের সঙ্গে আজও হনুমানের নাম অ্যাটাচড, ভুলিস না।

- বাহ, নিজেই যখন নিজেকে হনুমান বলে মেনে নিয়েছ তখন আর চিন্তা কি? যাও যাও, দুটো তলা তোমার। এক তলা আমার।

- ফের এক কথা? ডেঁপোর ডিম। দেড় তলা দেড় তলা।

- দাদা। দেখ। আমার ছেলে চাকরী করছে। ঝাড়া হাত পা। তোমার দুই মেয়ের বিয়ে বাকি।

- বাড়ির সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে বলছিস? 

- ওফ! তোমার সাথে কথা বলাই পাপ। আমি চললাম।

- ওরে। যাসনে। বাবার আত্মা এখনও বোধ হয় আশেপাশেই ফ্লোট করছে। একা থাকতে বুক ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে। যদি উঁকি মারে? এমনিতেই যা খিটখিটে মাল ছিল।

- নিজের বাবাকে কে মাল বলবি। বাপের উইল রিজেক্ট করবি। এই না হলে বড়ছেলে? বাবা বিচক্ষণ ছিল।

- আর তুই একটা বিষ। বাবার মতই দিনদিন খিটখিটে হচ্ছিস।

- দাদা, বাবাটা কী বদ না? কেমন আলগা ছেড়ে দিয়ে কেটে পড়ল।

- আর এটা হচ্ছে বদের বাসা। বদের বাসার দুই তলা আমায় দিস না।

- দাদা কাঁদছিস?

- তোকে দেখে বড় কষ্ট হচ্ছে রে ভাই। আহা রে, তোর বাপ নেই।

নিয়ার ডেথ্‌

-   নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স?

-   আজ্ঞে।

-   এখেনে বসলে?

-   এখানে বসে, এই কাঁচের টুপিটা মাথায় দিয়ে তারপর ওই নীল সুইচ্‌টা দাবিয়ে দিন।

-   তারপর?

-   তারপরেই সেই ম্যাগনিফিসেন্ট ব্যাপার।

-   ম্যাগনিফিসেন্ট? যন্ত্রণা নয়?

-   ফিজিকাল যন্ত্রণার ওপারে রয়েছে মৃত্যু বুঝলেন। যখন মৃত্যু ল্যান্ড করবে তখন সমস্ত পিসফুল।

-   পিসফুল। উদ্ভাসিত আলোয় তৈরি হবে ব্যাকগ্রাউন্ড। তারপর ভেসে আসবে সে।

-   সে? ডেথ?

-   সুবাস।

-   সুবাস?

-   একটা মনমোহিনী সৌরভ। সুবাস। সুবাতাস। বুক জুড়ে নেমে আসবে।

-   সেটা কেমন?

-   মৃত্যু আসলে গন্ধ...।

-   সুগন্ধ বলুন স্যার। আর আমার এই যন্ত্রে বসে, সেই অপরূপ সুগন্ধ আপনি চেখে আসতে পারবেন।

-   কীরকম সুগন্ধ মশাই ?

-   একেক জনের একেক রকম। আপনার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় গন্ধগুলো মণ্ড পাকিয়ে আসে। আবেশের ভার চাপিয়ে সরে পড়ে। মানুষ স্তিমিত হয়ে আসে।

-   উরিব্বাস।

-   গতকাল যে কাস্টোমার এলেন তিনি পেলেন ফুচকার জলে গন্ধরাজ লেবুর গন্ধ। ঘাস, মাটন, মা; কত কিছুর গন্ধ পায় লোকে।

-   কেউ ইয়ে...ওপারে চলে যায় না তো?

-   ফিজিক্যালি তো আপনি জ্যান্ত ও সুস্থ। এই যন্ত্র শুধু আপনাকে মৃত্যুর আগের মূহুর্তের অনুভূতিটুকুর স্পর্শ করায়। একটা সামান্য রিস্ক শুরুর এক্সপিরেমেন্টে ছিল। মরণ সৌরভে বিভোর হয়ে মানুষ মাঝে মাঝে কোমায় চলে যাচ্ছিলে।তারপর নতুন করে অ্যান্টিডোট দাওরে, শুশ্রূষা কর রে; হাজারো ঝক্কি।  তবে এ যন্ত্র এখন এতটাই অ্যাডভান্স্‌ড যে সে চিন্তা আর নেই। অটোকাট সিস্টেম রয়েছে। আপনার ব্রেন সম্পূর্ণ স্তিমিত হয়ে যাওয়ার আগেই যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে। আপনি ফিরে আসবেন সে অপার্থিব অনূভতি বহন করে।

-   ডাক্তার বাগচি, আপনি তো দুরন্ত কাজ করেছেন!

-   নিন, এই কাঁচের টুপিটা মাথায় দিন। আমি স্যুইচ অন করি।

**

-   নোবেল ইজ টু লিট্‌ল ফর ইউ ডক্টর বাগচি।

-   থ্যাঙ্ক ইউ প্রেসিডেন্ট।

-   টু লিট্‌ল।

-   আই নো।

-   মেশিন দ্যাট জেনারেট্‌স নিয়ার ডেথ ফিলিং। হাউ সেনসেশনালি ইনক্রেডিব্‌ল।

-   ইউ নো দ্যাট্‌স হোয়াট ইট এক্স্যাক্টলি ইজন্‌ট। ডোন্ট ইউ ডিয়ার প্রেসিডেন্ট?

-   আই নো। আই নো। কিন্তু পৃথিবীর নব্বুই ভাগ সমস্যার মিটে যাওয়া তো আপনার এই আবিষ্কারেই। যুদ্ধের দরকার পড়ছে না। খাদ্য সমস্যা প্রায় শেষ। পরিবেশের ওপর চাপ আর প্রায় নেই। ধর্মের প্রয়োজন শেষ। শান্তি ভরপুর। অল; থ্যাংকস টু ইওর নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স ইনডিউসিং মেশিন।

- সেটা যে সত্যি নয়...।

- ইউ উইল নেভার মেনশন দ্যাট এভার এগেইন ডাক্তার। নেভার। এটা যে মৃত্যু প্রেম জেনারেটিং মেশিন....দ্যাট শুড নেভার বি মেনশন্ড এগেইন...।

- সুইসাইড পারসুয়েডার প্রেসিডেন্ট। সুইসাইড পারসুয়েডার। সাকসেসফুল ইন ৯৯% অফ কেসেস।

বটুর অঙ্গীকার

ফুটপাথ জুড়ে হকার। কোনও মানে হয়? গিজগিজ করছে আচার বেচেনওলা থেকে সিডি বিক্রেতা থেকে চাওলা থেকে রোলের দোকান। পা ফেলা দায়। বিরক্তিতে সিগারেট ধরালেন অর্পণবাবু।

একে ঘেমে নেয়ে একাকার কাণ্ড তাইতে এই ফুটপাথের ছোটলোকামো। সরকারগুলো সব ভোট ভিখিরি হলে দেশের প্রোগ্রেস হবে কী করে? ঘেন্না ভরে দু'একটা ধোঁয়ার রিং হাওয়ায় ভাসালেন অর্পণবাবু।

ওদিকে মিহিরবাবুর মাথাটা আবার ধক করে গরম হয়ে গেল। এই ভীড়ে এই আদ্দামড়া ভদ্রলোক সিগারেট ধরালে; এই শালার সিভিক সেন্স? আবার রিং ভাসাচ্ছে? পাশেই রয়েছে বাচ্চা-বুড়োর দল। ব্যাটা নিজের ক্যান্সার নিয়ে নিজে মর, আর দশটা লোককে প্যাসিভ ইঞ্জুরি দেওয়ার কী মানে? অবিশ্যি আজকাল আবার পাবলিক প্লেসে সিভিক সেন্সের কথা বলাটাও পাপ, যার তার পকেটে চাক্কু।  রাগ আর ঘেন্নাটা গলা দিয়ে দলা পাকিয়ে ওঠায় মুখের পানটা ফুটপাথের এক কোণে থুঃ থুঃ করে ফেললেন তিনি।

এত সবের মাঝেই গড়িয়াহাটের ভীড় আলো করে মিচিকি হাসলেন বটু গোয়েন্দা। রিভার্স পকেটমারির স্কিলটা এসব ক্ষেত্রে বড় কাজে আসে। অর্পনবাবুর সিগারেটের ছাই ভরা ব্যাগি প্যান্টের হিপ পকেট আর আধ চেবানো পানের পিকে ভিজে যাওয়ার মিহিরবাবুর খদ্দর পাঞ্জাবীরর ঝোলা পকেট; দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির শেষে এটুকুই বটুর তৃপ্তিসাধন।

বটুর সাথে বিজুরীর আলাপ গতকাল। বীজুরির জন্ম গত বিস্যুদে, ফুটপাথেই। বটু তার বাপের কাছে পঞ্চাশ টাকা আর বিজুরীর কাছে একটা দৃঢ় অঙ্গীকার রেখে এসেছে।

রোম্যান্স বলতে

১। 

- লুচি সোম ডায়লুট করে জানিস?

- 'তুই' ডাক বিয়ের গ্র‍্যাভিটি ডায়লুট করে। জানো?

- তুই তুই ছাড়লি?

- তুই লুচি ছাড়তে পারবি? তুমিতে একটা ট্রাই দিলাম জাস্ট। সুখা পাউরুটি রে। বাদ দে।


২। 

দুপুর অফ শীত।

কোণা অফ ছাত।

পাটি অফ শীতল।

বালিশ অফ পাশ।

সঞ্জীব অফ রাবণবধ।

বাটি অফ চানাচুর।

অকেশনালি লাল ছাপার শাড়ি-কালো ব্লাউজ এলোমেলো চুলে খোসা ছাড়ানো কমলালেবুর কোয়া অফার করবে।

বন্ড ও সংস্কার

বুধবার। অফিস কাটা বুধবার, ইউনিভার্সিটি কাটা বুধবার; জোড়ায়।

ছাতা।
একটা ছাতা।

ছাতার ওপরে স্বল্প ঝিরঝির। তার ওপরে মেঘলা আকাশ।
নভেম্বরের বৃষ্টি কি না, তাই মৃদু শীত শীত ভাব।

ছাতার চারপাশে হাওয়ায়, গাছের পাতায় ফিসফিস। বেঞ্চের অনুমতি।
ছাতার নিচেও ঝাপসা মেঘ;
এলোমেলো চুল।
অফিস কাটতি ঠোঁটজোড়ার এবড়োখেবড়ো,
ইউনিভার্সিটি কাটতি ঠোঁটজোড়ায় হালকা লাল।
দু'জোড়ায় যুক্তি সাজাচ্ছে। যুদ্ধ, মিসাইল, ডায়রির ছেঁড়া পাতার তলোয়ার। মিলে মিশে ভিজে সপাট চুমুতে দুপুরের পেট এফোঁড় ওফোঁড় করে ছুরি।
ইউনিভার্সিটি কাটিয়ের চোখে জল। অফিস কাটিয়ের বুকে দমাদম ধুকপুক, ভার হয়ে আসা গলা।

**
সেন্সর জেম্‌স বন্ডের চুমুর দৈর্ঘ কেটে ছোট করেছে।
অত লম্বা চুমু ইজ এগেইন্সট আওয়ার কালচার।

আমরা ইজ এগেইন্সট আওয়ার কালচার।
কালচার ইজ এগেইন্সট আমরা।
উই আর এগেইন্সট আমরা।

পার্কের বেঞ্চি আর চিলেকোঠার অন্ধকার যেদিন ভোট দিতে শিখবে, সেদিন বাকিটুকুও যাবে।

রিটার্ন অফ ধর্ম



- আজ থেকে আমার কোনও ধর্ম রইল না। 

- সেটা আপনার মনে হচ্ছে। 

- হোয়াট ডু ইউ মিন মনে হচ্ছে? নেই তো নেই। পৈতে ছাড়ছি। নো ফেজটুপি। এমন কি বুদ্ধ-টুদ্ধও নয়।

- লেনিন?

- না না। সেটাও হিরো ওয়ারশিপ। ওয়ারশিপ ব্যাপারটাই বাদ। 

- আমি কেন ঈশ্বর বিশ্বাসী জানেন?

- তুমি মুখ্যু বলে। 

- হেহ!

- আচ্ছা বলো কেন। হোয়াই ডু ইউ বিলিভ ইন গড!। হুইচ ইজ জাস্ট বাতেলা। 

- কারণ ভদ্রলোক এমন ভাবেই ভিশিয়াস সাইকেলটা বেঁধেছেন ধর্মকে ছাড়তে আপনি পারবেন না। আর এই ধান্দাবাজির ক্রিয়েশনের পিছনে একটা ঘনাদা মার্কা ব্রেন থাকবে না সেটা হতেই পারে না। 

- ধর্মকে ছাড়তে পারব না মান? ছাড়লাম তো। মন্দির মসজিদ চার্চ বয়কট। নাথিং। কিচ্ছু রইল না। 

- নিজের নতুন ধর্মটা ঠাহর করতে পারছেন কি তাহলে?

** 


ঈশ্বর আজ দেরী করে ঘুম থেকে উঠবেন। সাড়ে দশটা থেকে অ্যলার্ম স্নুজ করে করে উঠতে উঠতে সাড়ে এগারোটা।
উঠেই এক গেলাস লেবু সরবত ; হ্যাংওভার কাটাতে। খবরের কাগজে চোখ বুলোতে বুলোতে দাঁত মাজা। তারপর শাওয়ারে ধুয়ে নেবেন সমস্ত ক্লান্তি।
তারপর বারান্দার মিঠে রোদে এসে গা এলিয়ে বসা। খানসামা এসে জানাবে"ব্রেকফাস্টে বড়বাবুর ফেভারিট চিজ রয়েছে; ডিমের ডেভিল"।
চুক চুক করে উঠবেন ঈশ্বর।
চিন্তিত খানসামা জানতে চাইবেন "সে কী? ডিমের ডেভিলে রুচি গেছে? গতকালের হুল্লোড় কি বড়বাবুকে এতটাই কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে?"।
ঈশ্বর মৃদু হাসবেন। সিগারেট ঠোঁটে ঝুলিয়ে আশ্বাস দেবেন "না না, আইটেম তো বঢিয়া। তবে ডিমের ডেভিল নামটা কেমন নিরামিষ। নতুন নাম দাও"।
"বড়বাবু যেমন কইবেন, তেমনই তো", গলে যেতেই হবে খানসামাকে। জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি বাড়িয়ে ধরিয়ে দেবেন বাবুর সিগারেট।
একবুক ধোঁয়া টেনে স্মিত হেসে ঈশ্বর নিদান দেবেন "ডিমের ডেভিল নয়, রিয়েল ঝাঁজ আনতে এ খানার নতুন নাম দাও হে। ডিমের গড। বোঝা গেল?"।