Wednesday, September 24, 2014

প্রেম করবি?


প্রথম পর্ব

-প্রেম করবি ?
-একটা থাপ্পড় মারবো।
-ওকে ছাড়...ঘুগনি খাওয়াবি?
-হোয়াট দ্য...!! ঘুগনি খাওয়ালে তোর আর আমার প্রেমের দরকার হবে না?
-মদ খাই না। আমি ঘুগনি-দেবদাস।

দ্বিতীয় পর্ব

-প্রেম করবি ?
-এবার কিন্তু সত্যিই মেজদাকে বলে দেব।
-ছাড়। বরং এগরোল খাইয়ে দিস।
-তাহলেই তুই খুশি?
-অন্তত এগরোলে লংকাটা অপশনাল

Tuesday, September 16, 2014

বানান

অনিমেষ বুঝতে পারছিলেন যে ক্লান্তি একেই বলে। টানা দু'ঘণ্টা ফুটবল পিটিয়েও এমন ক্লান্তি কখনও শরীর জুড়ে আসেনি। তর্ক সাধতে তার জুড়ি নেই, দুর্বার তর্কের ঝড়ও তাকে কোনদিন এমন শ্রান্ত করে দেয়নি। সাংবাদিকতার পেশায় প্রায় জীবনভর কাটিয়েও এমন অসহায় ভাবে ঢলে পড়তে হয়নি কখনো তাকে। তবে এ ঠিক ক্লান্তি নয়; অবসাদ বলা ভালো – বেদনামাখা অবসাদ ঠিক বলা চলে না অবশ্য। বুকের ব্যথাটা বরং আদৌ টের পাচ্ছিলেন না যেন। তবে বুঝতে পারছিলেন হিসেব মোটামুটি গুটিয়ে আনা গেছে। বিরানব্বুই। আর কত!

-   “বিনি আছিস?”, অনিমেষ বালিশ থেকে মাথা তুলবার চেষ্টা করলেন, পারলেন না।
-   “কিছু বলবে বাবা?”
-   “তমাল এসেছিল না?”
-   “তমাল কাকু তোমার পাশেই বসে তো”
-   “ওহ, তমাল না কি ওদিকে?”
-   “ অফ কোর্স, ঠাহর করতে পারছ না? বয়েস হয়ে গেল তোমার”
-   “বিনি, একটু অন্য ঘরে যাবি? তমাল-কাকুর সাথে কিছু...”
-   “বেশি কথা বোল না বাবা...”
-   “প্লিজ বিনি”
-   “আমি আসছি, কাকু দেখো বাবা যেন বেশি...”
-   “তুই যা। আমি আছি। চেহারার অবস্থা তো বেশ ঘোড়েল বানিয়েছ অনিমেষ-দা, কি ব্যাপার বল তো। সেঞ্চুরির ইচ্ছে নেই?”
-   “তোর ইচ্ছে নেই ? সেঞ্চুরির?”
-   “ছিল। তবে লিভারের আর হার্টের যা অবস্থা, নব্বুই ছুঁতে পারব না বোধ হয়। মেরেকেটে আর বছর তিন। কি কথা বলতে ডেকে আনলে বল এবার”

Monday, September 15, 2014

পিতা, পুত্র, পুজো

-বাবা,ওটা কি?

-ত্রিশূল


-ত্রিশূল কেন বলে?


-তিনটে ফলা আছে বলে


-ওটা দিয়ে কি হয়?

Wednesday, September 10, 2014

মেন্টর


-   তুমিই সেই ছেলে ?

-   হ্যাঁ

-   বাঃ, মুখের আদল খানা তো বেশ। তা তুমি এখানে কেন এসেছ জানো ?

-   দিদি পাঠালে। আপনার সাথে দেখা করতে।

-   তোমার দিদি তোমায় আমার কাছে কেন পাঠিয়েছে সেটা তোমার জানা আছে?

-   হ্যাঁ

-   কি কারণে, বল দেখি।

-   দিদি চায় আমি আপনার মত হই। আদব-কায়দায়।

-   হুম। তুমি চাও না ?

-   জানি না।

-   হুম। এই টিউটোরিয়াল কিন্তু বড় কঠিন। আদব-কায়দা, বা যাকে আমরা বলি এটিকেট, রপ্ত করা নেহাত সহজ নয়।

-   দিদির ভীষণ ইচ্ছে...

-   তোমার ইচ্ছে আছে কি ?

ইউজ অ্যান্ড থ্রো

- বাবা সত্যেন, একটু আমার কেসটা...

-
মধুময়বাবু, শুনুন। আপনি না হয় রিটায়ার করেছেন- ঝাড়া হাত পা। কিন্তু আমাদের তো আর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালে চলে না। অফিসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করতে হচ্ছে...আপনি যদি দুদিন অন্তর এসে এমন ঘ্যানঘ্যান করেন, তাহলেই তো মুশকিল...

-
আসলে বাবা, আমার পেনসনের টাকাটা গত দু মাস ব্যাঙ্কে আসেনি...

-
শুনুন, কোম্পানি থেকে হাজার গণ্ডা পেমেন্ট রোজ ব্যাঙ্কে যাচ্ছে। দু একটা শালটিং কেস থাকেই। আজ গণ্ডগোল কাল ম্যানেজ। কাল না হলে পরশু। কিন্তু আপনি মাইরি এমন হুজ্জুতি করছেন যেন আপনার কাছা খুলে গেছে। দু মাস না হয়ে পেনসন পাননি। পেয়ে যাবেন। কোম্পানি কি আপনার টাকা মেরে দেবে নাকি ? আর আপনার ছেলে তো বড় অফিসার। এত গলা শুকনো কেন আপনার মশাই

-
এই কোম্পানিতে ঊনচল্লিশ বছর কাজ করেছি বাবা। সিক্সটি সেভেনে যখন জয়েন করি তখন এই নয় তলা বাড়ি ছিল না। দু কামরার ছোট্ট সওদাগরী আপিস ছিল। ঘাম, রক্ত সমস্তই দিয়েছি। আমি হুজ্জুতি করতে আসিনি। 

-
আলবাত করছেন হুজ্জুতি। বড় সায়েবের কানে লাগাননি আপনার পেনশনের কথা ? যতসব। এবার আসুন দেখি। আপনার মত চিজ কত দেখলাম। 

-
সত্যেন, তোমায় আমি হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছি...আর তুমি...

-
বাদ দিন মশাই, ধান্দা ছাড়া কেউ কিছু করে না। আসুন দেখি এবারে মধুময়বাবু। অনেক কাজ রয়েছে।

Tuesday, September 9, 2014

যুদ্ধ-জয়


-          মা তুই কাঁদছিস ?

-          আমি যে অভাগী বাবা, না কেঁদে উপায় কী ?

-          ধুর পাগলী। তুই হলি আমার লক্ষ্মী।

-          লক্ষ্মী না ছাই। আমার ভালোবাসার মানুষটিকে খেলাম। তার রাজ্যকে খেলাম। তার পরিবারটাকেও বাদ দিলাম না।এবার তোমাকে খাব। আমার চেয়ে বড় অভাগী আর কে আছে?


-          মামণি। মা রে। অমন করে না। তুই ইন্দ্রকে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিস। ইন্দ্রও তোর জন্যে জান কবুল করেছে। ইন্দ্র যে ভাবে শেষ শ্বাসটুকু পর্যন্ত তোর জন্যে বুক চিতিয়ে লড়ে গেছে, আমার ভাবতে গর্ব হয় যে সে আমার ছেলে। এ বুড়োর বুক ভরে আসে এই ভেবে যে আমি অমন এক ভালোবাসার ছেলেকে লালন করেছিলাম। মনে রাখিস মা, সে শুধু তোর জন্যে এই অসহায় যুদ্ধে যুঝতে যায়নি, সে লড়েছে সমস্ত নারী জাতির সম্মানের জন্যে।

-          আমার বুকে যে কি পাথর জমাট হয়ে আছে কী বলি। আমার বাবার কথা মত রাক্ষুসে ধনী সে রাজপুত্রকে বিয়ে করলেই সমস্ত ঝামেলা মিটে যেত। কেন যে ইন্দ্র আর আমার ভালোবাসার জন্যে তুমি এত বিপদের সম্ভাবনা কাছে টেনে নিলে! কেন সমস্ত আশঙ্কা সত্ত্বেও আমায় সে অন্ধকার দেশ থেকে নিয়ে এলে বাবা ? কেন আমায় এত আগলে রাখলে ? কেন এত স্নেহে বাঁধলে নিজেকে? তুমি এতটা না করলে হয়তো ইন্দ্র কষ্ট পেত। কিন্তু তোমার এ সোনার রাজ্য এমন ছারখার হয়ে যেত না।

Saturday, September 6, 2014

বিনোদবাবুর প্ল্যান


বিনোদবাবুর মোবাইলে ব্যাঙ্ক থেকে এস – এম – এস এলো ঠিক বিকেল চারটেয়। একলাখ তিরিশ হাজার ক্রেডিট হয়ে গেছে। প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে টাকা তোলার রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন একসপ্তাহ আগে; প্রসেস হয়ে ব্যাঙ্কে এলো আজ। ক্যানিংয়ের দেড় কাঠা জমি বেচা দুলাখ টাকা আগেই ঢুকে গেছে।
ডালহৌসির পাশে অকল্যান্ড রোডের কোনের এক সরকারি অফিসের জুনিয়র ক্লার্ক বিনোদবাবু; এত টাকা এক সাথে আগে কখনও দেখেননি তিনি। গলা শুকিয়ে আসছিল। আনন্দে। ঘরে রয়েছে কড়কড়ে আরও চুয়াত্তর হাজার টাকা; ক্যাশ; দেরাজে। মায়ের শেষ স্মৃতিটুকু হাওয়া; কেয়ার অফ কর্মকার জুয়েলারি।
***
- ব্রেজিল? বলেন কি মশায়?
- আমি অবিশ্যি ব্রাজিলই বলি
- না মানে রে নিজেতো...
- রে নয় রায়।
- যাকগে, স্ট্রেট টু সাও পাওলো ? আপনার ট্যাঁকের জোর আছে মশাই। যদিও আপনাকে দেখে ঠিক তেমন মনে হয় না। নয়তো এই ভর-দুপুরে মিনিবাসে...
- ঠিকই ধরেছেন। ট্যাঁকের জোর নেই। সখের জোর আছে। প্যাশন আছে।
- নিজে খেলতেন নাকি কখনও ?
- মেদিনীপুরকে রিপ্রেজেন্ট করেছি।
- ট্যুর প্ল্যান কিরকম ?
- নয় দিন থাকা।
- নয় দিন?
- অ্যাট রামকৃষ্ণ মিশন। কন্ট্যাক্ট ছিল। মিনিমাল খাওয়া - দাওয়া। ডর্মিটরিতে থাকা। ফ্রিতে। এক প্রতিবেশীর বেলুড় মঠে একটু ইয়ে আছে। তিনি ম্যানেজ করে দিয়েছেন। আমার খরচ বলতে প্লেনের টিকিট আর ম্যাচের টিকিট। যদিও সামান্য গ্রুপ ম্যাচ। তাও হোম-টিমের নয়। তবু বেজায় খরচ। আমার সমস্ত সেভিংস্ই... নেহাত সংসারে একলা মানুষ...

Monday, September 1, 2014

রবীন্দ্রনাথের কাণ্ডকারখানা

১।
ট্রেনের জানালার বাইরে উদাস হয়ে তাকিয়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ফুরফুরে বসন্তের হাওয়া। আহা। মনে কেমন করে ওঠে গো। কিন্তু এই ভালো লাগার মধ্যেই আচমকা দাড়িতে অস্বস্তিকর চুলকানি শুরু হল; ট্রেনের জানালার পাশে বসবার এই এক ঝামেলা। এত কয়লা মাখা ধুলো ওড়ে; যাচ্ছেতাই এক্কেবারে। এদিকে আজিমগঞ্জ ঢুকতে এখনও আধ ঘণ্টাজল সাবান দিয়ে ভালো করে মুখ না ধোয়া পর্যন্ত সোয়াস্তি নেই। গুনগুন করে একটা চলতি গানের কলি ভেজে নিজের মনকে নিজের দাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলেন রবীন্দ্রনাথ।

২।
-   “ আমি কোথায় ?”
-   “ বোলপুরে”
-   “ কিন্তু আজিমগঞ্জ যাচ্ছিলাম যে...”
-   “ আমাদের ভারি ইচ্ছে হল তোমায়  এখানে রেখে দুদিন একটু সেবা যত্ন করি”