Skip to main content

Posts

Showing posts from April, 2019

ওয়ার্নবাবুর বই

ফিল নাইটের ব্যাপারে আগে তেমন কিছু জানতাম না, যতটুকু জেনেছি ও চিনেছি; সে'টা ভদ্রলোকের চমৎকার আত্মজীবনীটা পড়ে। সে তুলনায় শেন ওয়ার্ন স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কিছুটা পরিচিত। এবং পরিচিত বলেই তেমন কেউ রেকমেন্ড না করলেও বইটা পড়ে ফেলার আগে বেশি ভাবতে হয়নি। ফিল নাইটের আত্মজীবনী খুব ভালো লেগেছিল কারণ নাইট নিজের কথা বলতে গিয়ে ফোকাস করেছেন তাঁর চারপাশের মানুষের ওপর; সে'সব মানুষের চরিত্র যত ফুটে উঠেছে, পাঠকের কাছে তত স্পষ্ট হয়েছে নাইটের জীবন। এ'দিকে ওয়ার্নের বায়োগ্রাফি জুড়ে ওয়ার্ন দ্য রকস্টার, ওয়ার্ন দ্য ফাইটার, ওয়ার্ন দ্য ট্র্যাজিক হিরো এবং সর্বোপরি ওয়ার্ন দ্য অজি। ওয়ার্নের ক্রিকেট জীবনের অন্যতম গোলমেলে অধ্যায় বুকির থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনাটা। সে সম্বন্ধে ওয়ার্ন বেশ কিছু স্পষ্ট ইনফরমেশন দিয়েছেন বটে কিন্তু নিজের পক্ষে যে যুক্তিগুলো সাজিয়েছেন তা আমার অন্তত বেশ কাঁচা মনে হয়েছে। আর বই জুড়ে মাঝেমধ্যেই উঁকি মেরেছে তাঁর ধারালো নাক উঁচু মেজাজ; বিশেষত ড্যারিল কালিনান প্রসঙ্গে (অপ্রাসঙ্গিক ভাবেও তাঁকে কম খোঁচা মারেননি ওয়ার্ন)। তবুও, এই বই আমি এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি এবং সবচেয়ে বড় কথা; স্বীকার ক

গিন্নী

- নরেন। নরেন! - আরে দাসবাবু। এই ভরদুপুরে? - বুড়োদের কি দুপুরবেলা বেরোতে নেই? তোমার ভাতঘুমে ব্যাঘাত ঘটালাম দেখছি। তা দোকান খুলে না ঝিমিয়ে,  দুপুরবেলা দোকান বন্ধ করে নাক ডাকলেই পারো তো। - পুরনো অভ্যাস। অবশ্য মুদির দোকানে বিক্রিবাটা আজকাল কমের দিকেই। আর দুপুরে তো প্রায় কেউই..আপনাকে কী দেব? - চা পাতা রাখো? ভালো কোয়ালিটির কিছু? বড় দোকান ছাড়া আমার প্রেফার্ড কোয়ালিটি পাওয়া দায়, কিন্তু বাড়ির কৌটো নিঃশেষ, আর্জেন্টলি কিছু না নিলে...। - আমার কাছে আড়াইশো হাফকিলোর প্যাকেট কিছু আছে। তবে কোয়ালিটি আপনার কেমন লাগবে বলতে পারিনা। হাফডাস্ট, তেমন দামী নয়। - আড়াইশোর একটা প্যাকেট দিও, যা ভালো মনে হয়। আর দু'শো গ্রাম গুড়ের বাতাসা। - দিচ্ছি। - আর শোনো, চানাচুর আছে? কড়া ঝাল কিছু? - প্যাকেট করা না লুজ? - ঝাল কোনটায় বেশি? - লুজটায়। ওই যে, আপনার সামনেই যে'টা বয়ামে রাখা আছে। - বেশ। ও'টা আধকিলো মত দিয়ে দাও। - দাসবাবু, আজ আপনি নিজে বেরিয়েছেন জিনিসপত্র নিতে; আপনার সাগরেদটি কই? - হরি? রাস্কেলটার নাম নিও না। ওর মুখ দেখলে আমার আজকাল জুতোপেটা করতে ইচ্ছে করছে। - সে কিছু গোলমাল ক

কে হবে সেরা!

বিচারক ১ - আসর মাতিয়ে দিলি রে ভাই৷ কী বুকনি! কী বাতেলা! আর বাজে কথা বলার কী কনফিডেন্স। প্রতিযোগী (নতশির, বুকে হাত) - থ্যাঙ্কিউ স্যার, থ্যাঙ্কিউ। বিচারক ১ - তিরিশ মিনিটের বক্তৃতায় তুই অন্তত বেয়াল্লিশখানা মিথ্যে বলেছিস। আমি গুনেছি।  কিন্তু একবারের জন্যেও তোর গলা কাঁপেনি। শুনতে শুনতে আমার গায়ে কাঁটা দিয়েছে ভাই। উফফফ্। সঞ্চালক - গায়ে কাঁটা?  কই দেখি গাঁজাদা! বিচারক ১ (হাতের জামা গুটিয়ে) - এই দ্যাখো। আমি থ্রিলড। আমি আপ্লুত। ও এত জেনুইনলি সব মিথ্যে প্রতিশ্রুতিগুলো পাবলিককে ছুঁড়ে মারছিল যে আমার ইচ্ছে করছিল ওকে ভাষণের মধ্যেই জড়িয়ে ধরি। সঞ্চালক - তা'হলে তোমার তরফ থেকে দশে দশ? বিচারক - দশে সোয়া দশ দেওয়া গেলে তৃপ্তি পেতাম। তবে অঙ্ক ব্যাপারটা এমন ত্যাঁদড়..। ওই দশই থাক। প্রতিযোগী (নতশির, বুকে হাত) - থ্যাঙ্কিউ স্যার, থ্যাঙ্কিউ। সঞ্চালক - একটা সানসেট চব্যনপ্রাশ মার্কা জোরে হাততালি হয়ে যাক। প্রতিযোগী (নতশির, বুকে হাত, ক্যামেরা জুম করলে দেখা যাবে চোখের চিকচিক) - থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ। সঞ্চালক - এ'বার চলে যাব পরের বিচারক গুলতানিদিদির কাছে। বিচারক ২ - ও যখন ভাষণের সময় মাইক্র

দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ থার্ড রাইখ প্রসঙ্গে

রাইজ অ্যান্ড ফল অফ থার্ড রাইখ। সাতান্ন ঘণ্টার অডিও বই, শুনলাম প্রায় দেড় মাস সময় নিয়ে। ভাবনাচিন্তা রসদ প্রচুর জুটেছে , কিন্তু সে'সব গুছিয়ে যত্ন করে লিখতে পারলে হয়। এ বইয়ের ব্যাপারে রিভিউ-মূলক কিছু বলার ক্ষমতা (বা পড়াশুনো) আমার নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপারে আমার আগ্রহ বহুদিনের; আর এই বইটা পড়ার আগে এ বিষয়ে আমার যাবতীয় জ্ঞানের উৎস মূলত ছিল নেটফ্লিক্স, ইউটিউবে দেখা বেশ কিছু ডকুমেন্টারি এবং ইন্টারনেটের পড়াশোনা (সে পড়াশোনা পুরোটা আনতাবড়ি নয়, বেশ কিছুটা হিসেব করেই পড়া)। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির মত কিছু বই অথবা শিন্ডলার্স লিস্টের  মত হলোকস্ট বিষয়ক বেশি কিছু সিনেমা আমরা অনেকেই পড়েছি/দেখেছি তবে সে’গুলো সামগ্রিক ভাবে ‘ইনফরমেশন-রিচ্‌’ নয়।  আগে এই বইয়ের ব্যাপারে দু’চারটে কথা বলি।  ১। বইয়ের দৈর্ঘ্য ঘাবড়ে দেওয়ার মত, কিন্তু বইয়ের ভিতরে ঢুকে যেতে পারলে পাঠক বুঝতে পারবেন যে থার্ড রাইখকে সম্যকভাবে বুঝতে গেলে অসীম ধৈর্যের কোনও বিকল্প নেই। দুম করে একজন ক্যারিসম্যাটিক খুনে মানুষ গোটা জাতকে হিপনোটাইজ করে ক্ষমতা দখল করলে এবং গোটা ইউরোপকে সর্বনাশের মুখে ঠেলে দিল; ইতিহাস ততটা স্কেল-বসিয়ে-পে

আলুসেদ্ধ-রাইখ

- বুঝলে ভায়া রুমমেট, শুকনোলঙ্কা ভাজা দিয়ে আলুসেদ্ধ মাখব আজ। - রাজভোগ বলতে তো ওই মন্টুদা। যেদিনই রান্নাঘরে ঢুকবে সে'দিনই কপালে শুধু ডাল, ওমলেট। ঝোলভাত খেতে হলে সেই আমাকেই কড়াই ঠেলতে হবে। - অমন নেগেটিভলি প্যানপ্যান কোরো না তো। এ আলুসেদ্ধর গন্ধ অমরাবতীতে পৌঁছলে ইন্দ্র সাদাহাতি হাঁকিয়ে নেমে আসত। তুলতুলে মাখা, ঘি আর সর্ষের তেল মিশিয়ে। আর তারপর ভাজা শুকনো লঙ্কার পাঞ্চ। এক খাবলা লালচে হলুদ রঙের ড্যালা থালার পাশে থাকলে রুইমাছের দিকেও তাকাতে ইচ্ছে করবে না। - আমার তো কাঁচালঙ্কা পেঁয়াজ দিয়ে মাখা আলুসেদ্ধই ভালো লাগে। অত শুকনো লঙ্কার ঝাল হজম হয়না। - আইপিএল দেখে দেখে তোমার কলজে উইক হয়ে গেছে ভাই। রমেশ সিপ্পির সিনেমা দ্যাখো, ঝাল অ্যাবসর্ব করার ক্যাপাসিটি বাড়বে। - অন্তত ডিমের ঝোল করো না মন্টুদা। প্লীজ। মনের সুখে দু'টো ভাত মেখে খাওয়া যাবে। - প্র‍্যাক্টিসিং ব্র‍্যাহ্মিন আমি। পাঁঠা ছাড়া ঝোল রাঁধব? বলো কী! তেন্ডুলকারকে দিয়ে লুডো খেলাবে ভাই? - তুমি পলিটিক্সে নামো, বুঝলে। - আমি নামলে হে, সব্বাইকে শায়েস্তা করব ফেলতাম। ব্রিগেডে সভা ডাকতাম, বুঝলে? ব্রিগেডে। ভীড়ের প্রত্যেকের জন্য ইয়াব

এপ্রিল ফুল

জয়ন্ত সমাদ্দার লোকটা যে সুবিধের নয় তা আমি আগেই আঁচ করেছিলাম। বছর দুয়েক আগে সে আমাদের অফিসে জয়েন করেছিল। আমার চেয়ে বয়সে বছর খানেক ছোটই হবে, এখনও চল্লিশে ছুঁয়েছে বলে মনে হয়না। এমনিতে হাসিখুশি আর চটপটে; আড্ডা জমাতেও ওর জুড়ি নেই। আর তার নেশা বলতে হিন্দি সিনেমা আর জর্দা পান। সবসময় জাবর কেটে চলেছে; আড্ডায় বসলে নিজের পকেট থেকে পান বিলি করে লোকের মন জয় করতেও ওর জুড়ি নেই। তবে যে ব্যাপারটা আমার বিরক্তিকর ঠেকে তা হল ওর অকারণে ফাজলামোর অভ্যাসটা। লাঞ্চ-টাইমে লোক-ঠকানো বাজে গল্প যা কিছু ফেঁদে বসে তা নিতান্ত নিরস অবশ্য নয়, কিন্তু গত বছর পয়লা এপ্রিল সে আমার সঙ্গে যা করেছিল তা ক্ষমার অযোগ্য। সে’দিন সকালে অফিস পৌঁছেই দেখি টেবিলের ওপর বড়সাহেবের চিঠি; তা পড়ে তো আমার চক্ষু-চড়কগাছ। আমি নাকি একটা জরুরী ফাইলে বড়সড় ভুল করে ফেলেছি, তা’তে কোম্পানির লাখ-খানেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। সে কারণে আমার একমাসের মাইনে কাটা হবে। তার ওপর আমায় শো’কজও করা হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে সদুত্তর দিতে না পারলে সাসপেনশন; বরখাস্তও হতে পারি। কথা নেই বার্তা নেই; এমন আকস্মিক খবরে স্বাভাবিক ভাবেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। হার্ট-অ্যাটাক যে হয়নি