Showing posts with label রোববার. Show all posts
Showing posts with label রোববার. Show all posts

Thursday, November 21, 2024

পড্‌

অনিন্দ্য দিব্যি রোব্বারের মেজাজে সোফায় বসেছিলেন। সামনের দেওয়ালের মিউট রাখা টিভিতে এক আধুনিক গাইয়ে অত্যাধুনিক ভাবভঙ্গি করে গাইবার চেষ্টা করছিলন। সেন্টার টেবিলের ওপর রাখা প্লেটটা সাফ হয়ে গেছে, তবে লুচি-বেগুনভাজার এঁটো চিনতে অসুবিধে হয় না।

এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো।
-হ্যালো!
- অনিন্দ্যবাবু! কেমন আছেন?
- আপনি কে? আমি...আমি কোথায়..।
- হে হে। আমি অফিস অ্যালার্ম। আপনার ড্রিমপডের দশ মিনিট কোটা শেষ। এ'বারে যে কাজে ফিরতে হয়।
- ওহ। তাই তো। যাচ্চলে। লুচির গন্ধটা এখনও আঙুলের ডগায় যে।
- এই না হলে সুপার পাওয়ার ন্যাপ। এ'বারে চটপট টেবিল গিয়ে বর্গিন অ্যান্ড বার্ক্সের ফাইলটা প্রসেস করে ফেলুন। বস অপেক্ষা করছেন।

Tuesday, July 16, 2024

রবিনিয়ম



প্রতি রোববার আর ঠিক হয়ে ওঠে না৷ তবে দু'হপ্তায় অন্তত একটা রোববার বাবা সেই মার্কামারা থলি হাতে মাংসের দোকানে যাবেই৷ সে রুটিনে এখন আমিও অভ্যস্ত, ওই 'মাংসের থলি' এখন আমারও রোব্বারের ওয়েপন অফ চয়েস (সব রবিবার নয়, যেমনটা বললাম আর কী)৷

সাধারণত মাংসের বাটির পাশে সাদা ভাতই চলে৷ সঙ্গে বড়জোর লেবু আর কাঁচালঙ্কা৷ কিন্তু মাসে-দেড় মাসে একবার মায়ের রান্না বাসন্তী পোলাও পাতে পড়ে৷ মায়ের রান্না শ্রেষ্ঠ, বলাই বাহুল্য আমার এক্সিট পোলে সে হিসেবই থাকবে৷ তবে বাসন্তী পোলাওতে মিষ্টির পরিমাণ আর চাল কতটা সেদ্ধ হল; এই দু'টো হলো যাকে বলে 'ক্রিটিকাল ফ্যাক্টর্স'৷ আর এই দু'টো ব্যাপারেই মায়ের রান্না পোলাও আমার জিভে নিখুঁত হয়ে বসে আর কী৷

সেই রোব্বারে-রোব্বারে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মাংস আনার থলি আর মায়ের রান্না বাসন্তী পোলাওয়ের মিষ্টত্ব; ওই দু'টোই আমার আইডেন্টিটির পর্যায় পড়ে৷

Sunday, December 10, 2023

চড়ুইভাতি



বম্বেতে শীত নেই, তবে রোদ্দুর সামান্য নরম হয়েছে বটে। অথবা হয়তো মাসটা ডিসেম্বর বলে আমার কল্পনায় রোদ্দুরের তেজ অল্পবিস্তর কমে এসেছে।

গুণীজনেরা বলেছেন ডিসেম্বরের রোদ্দুর মাংসভাতের ওপর এসে পড়লেই সে'টা চড়ুইভাতি। দল বেঁধে 'পিকনিক স্পটে' গিয়ে উনুন ধরানো, ব্যাডমিন্টন খেলা আর যাবতীয় হইহই; ও'গুলো বাড়তি সাজসজ্জা মাত্র। সে অর্থে আজ দুপুরের খাওয়াদাওয়াটা একটা জবরদস্ত পিকনিকই ছিল বটে৷ জয় শীত৷

Wednesday, December 6, 2023

স্বস্তি ও আরামের থালা



মিঠে হাওয়া গায়ে লাগিয়ে ছাতে মাদুর পেতে গল্প করাটা উপমা হিসেবে ব্যবহার করতে চাই৷ আজকাল এই গ্লোবালওয়ার্মিং আর পলিউশনের যুগে শহরের বুকে ছাতে মাদুর পাতায় আর যাই হোক পদ্য নেই৷ কিন্তু একটা সবুজে সবুজ দুনিয়া আর শীতকালের দুপুরের কথা ভাবতে তো ক্ষতি নেই।

গায়ে পাতলা চাদর, সম্ভবত মায়ের। 
পিঠে নরম রোদ্দুর, তা'তে ওম আছে তাপ নেই।
মাদুরে গা এলিয়ে থেবড়ে শুয়ে।
একা অথচ একলা নয়।
পাশের ছাত থেকে রেডিওয় চেনা গান ভেসে আসছে৷ ছাতের এককোণ উজ্জ্বল হয়ে আছে ডালিয়ার অজস্র টবে। তাড়া নেই, মনের মধ্যে তোলপাড় নেই। হাতে অনন্ত সময়, চারপাশে প্রশান্তি। 

সেই যে নিরিবিলি মুহূর্ত,
সেই যে স্বস্তি,
সেই যে আরাম,
তার আমেজ খানিকটা ছিল রোববার দুপুরের মন-বুক ঠাণ্ডা করা খাবারে:

১। গরম ভাত,
২। পেঁয়াজ পোস্ত আর
৩। মামলেট৷

ব্যাস, ও'টুকুই।
ও'তেই পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন , আর ও'তেই পান্নালালের শ্যামাসঙ্গীত।

রোব্বারের কফি


যে ব্যাপারগুলোর ওপর রোব্বারের সকালের কফির স্বাদ নির্ভর করে।

১। বিস্কুটের বহর।
হাইকোয়ালিটি মুচমুচ বড্ড দরকারি। ঠিক যেমন দরকার স্ট্র‍্যান্ড রোডের ঠাসাঠাসি ভিড় পেরোনোর পর হাওড়া ব্রিজে উঠে মিনিবাসের হুসহাস স্পীড তোলা৷ পাশাপাশি জিভের দাঁড়িপাল্লায় দু'দিকেই সমান ওজন ফেলতে হবে; কিলোয় নয়, গ্রামে; সামান্য নোনতা, অল্প মিষ্টি।

২। মিউজিক সিস্টেমে বাজতে থাকা প্লেলিস্ট।
সমস্ত গান সুপরিচিত হওয়াটা জরুরী; মনের মধ্যে ছেলেবেলার ক্রেয়নে আঁকা যে মাটির ঘর, তার দাওয়ায় হেলান দিয়ে বসে যেন পলাতক আঙটি চাটুজ্জ্যের ভাই মনের সুখে সে'সব গান গুনগুন করে যেতে পারে।

৩। বিছানার চাদরের বাহার।
গুণীজন বলেছেন 'পর রুচি আড্ডা, আপ রুচি বিছানা'৷ সে প্রসঙ্গে বলি, শনিবার রাত্রে নিজের সবচেয়ে পেয়ারের চাদর পেতে লম্বা হওয়াটাই ধর্ম। কারণ রোব্বারের সকালের কফির কাপ-প্লেট ধারণ করবে সেই চাদরই৷ তুকতাকে বিশ্বাস নাই করতে পারেন,  কিন্তু রোববার সকালে নিজের প্রিয় চাদরে হাইক্লাস কফির কাপ নিয়ে এসে বসলে শুনেছি ম্যাজিক কার্পেটের হাবভাব বিছানায় সেঁধিয়ে যায়। সে এক অদ্ভুত মায়াজাল। মাইরি, ইয়ার্কি করছি না৷

Sunday, July 2, 2023

লেড়োত্ব



স্রেফ হাফডজন লেড়োর লোভে ছুটির বিকেলে কফি নিয়ে বসি৷

লেড়ো এমনই গভীর ব্যাপার যে তার সঙ্গে জোলো ব্ল্যাককফি অচল৷ ঘন দুধে বানানো কড়া কফি, তাতেই চুবিয়েই লেড়োর উত্তরণ। সে চুবনিটাও মাপা হিসেবের বাইরে গেলেই সর্বনাশ।

সর্বোপরি, লেড়োপ্রেমি মাত্রই জানেন যে লেড়ো-চেবানো মুচুরমুচুরে তাড়াহুড়ো মিশলেই সমস্তটা মাটি৷ স্নেহ-মিশ্রিত আলস্য না পেলে লেড়োর লেড়োত্বটাই নষ্ট।

Saturday, July 1, 2023

রোব্বারের ডিসিপ্লিন

প্রতি রোব্বার সকালবেলা আমি একটা ওজনমাপার যন্ত্রের ওপর গিয়ে দাঁড়াই। ওই দাঁড়ানোটাই আমার ডিসিপ্লিন। এক প্রকার হুঙ্কারও বলা যেতে পারে; এই দ্যাখো। আমি নেহাৎ ন্যালাখ্যাপা নই। জাতে হাভাতে কিন্তু তালে "হেল্থ অ্যাওয়ারনেস" আছে।
সক্কাল সক্কাল ওজন মেপেই মনে হয় " নাহ্, মনের মধ্যে একটা ফোকাস দানা বাঁধছে"৷ ওজন বাড়তি না কমতি সে'সব বাজে প্রশ্নে নিজেকে বেঁধে ফেলার মানে হয়না৷ এই যে ওজন মাপছি, সে'টা ভেবেই নিজের প্রতি মারাত্মক রেস্পেক্ট তৈরি হয়৷ এ'বার একটা চাবুক সিস্টেমে নিজেকে ফেলতে পারলেই হল৷ আর সে'দিক থেকে রোব্বারের জবাব নেই৷ সকাল সাড়ে ন'টায় ঘুম ভাঙার পর এমনিতেই নিজেকে ভারী মজবুত বলে মনে হয়৷ সেই মজবুত মনোভাবটা লুচি-তরকারি চিবোতে চিবোতে বাড়তে থাকে৷
কিন্তু হুজুগে ঝাঁপ দিলেই তো চলে না৷ কাজেই সোফায় লম্বা হয়ে একটু মেডিটেট করতে হয়। এই যে একটা প্রবল ডিসিপ্লিন-বোধ, সে'টা একটা ইস্পাতের ফলা৷ সাবধানে ব্যবহার করলে প্রডাক্টিভ, নয়ত কচুকাটা হওয়ার সম্ভাবনা৷ তা সে'টাকে আমি ঠিক কী'ভাবে ব্যবহার করব, সে'টা নিয়ে একটু মাথা ঘামানোর প্রয়োজন। এ'খানে বলি, আমার একটা মারত্মক লেবু-সরবতের ফর্মুলা আছে৷ একটু বাড়তি মিষ্টি, সামান্য সোডা সহযোগে সে এক মারকাটারি জিনিস৷ ওই মুকুজ্জে-স্পেশাল-লেমোনেডে চুমুক দিলে মেডিটেশন জমে ভালো। এ'বার থেকে তবে দিনে বারো হাজার স্টেপ্স? ডিনারে জিরো কার্ব? হপ্তায় একদিন ফ্রুট ডিটক্স? এ'সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দুর্দান্ত সব স্পার্ক তৈরি হয়ে শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ে৷
সমস্যা হল, পোস্ট লুচি আর প্রি-মাংস মানসিক স্তরে একটা খুব রোমান্টিক ঝিমুনি আসে৷ ঘুম নয়, ঘুম নয়৷ বেশি ঘুম ভালো নয়। ও'টা একটা আলগা আমেজ বলা যেতে পারে৷ যে আমেজে যাবতীয় শব্দপ্রবাহ স্তিমিত হয়ে আসে, চারপাশের মানুষজন ঝাপসা হয়ে পড়ে। ইংরেজিতে যাকে বলে "ট্রান্স"। সে সমাধি ভাঙতে ভাঙতে স্বাস্থ্য-তপস্যা কিঞ্চিৎ বিঘ্নিত হয় বটে৷ কিন্তু এ অনাবিল জীবনে তো আর রোব্বারের অভাব নেই৷ এ রোব্বার হল না, পরের রোব্বার হবে'খন৷ দুনিয়া তো গোল্লায় যাচ্ছে না৷ এ'টা ভেবে একটা প্রবল তৃপ্তি অনুভব করি, আহ্ - সামনের রোববার থেকে দুনিয়াটা পালটে যাবে, ডিসিপ্লিনের গঙ্গায় মছলিবাবা স্টাইলে ডুবসাঁতার দিয়ে ঘুরে বেড়াব৷
স্নান করতে যাওয়ার আগে কী খেয়াল হল, খানিকক্ষণ বসে বাংলা খবরের চ্যানেল চালিয়ে দিলাম৷ রোব্বার তো, একটু ডেয়ারডেভিল কিছু করা দরকার৷ তিনটে পার্টির তিনজন মানুষ নাগাড়ে চিল্লিয়ে চলেছেন। অজস্র মিথ্যে খুনে-কনফিডেন্স নিয়ে বলছেন, যুক্তিফুক্তির মত ফালতু ব্যাপারকে তোয়াক্কা করছেন না৷ ওই, টিআরপির জগতে রাজনৈতিক আলোচনা যেমন হওয়া উচিৎ আর কী৷
বাইশ মিনিট শুনলাম। ব্রেনের ভিতর স্টিলের গেলাসে ডিম ফেটানোর খটরখটর শব্দ শুনতে পাওয়া মাত্র টিভি বন্ধ করতে হল৷ টের পেলাম, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে৷ গলা শুকিয়ে এসেছে৷ স্মার্টঘড়ি বলছে রেস্টিং হার্ট রেট স্যাট করে বেড়ে গেছে৷ ইন্টেরেস্টিং৷ সুট করে গিয়ে ফের ওজন মাপার যন্ত্রে দাঁড়ালাম৷ সকালের তুলনায় একশো গ্রাম কম।
ব্রাভো! ব্রাভো! ব্রাভো! আজ লাঞ্চে দু'পিস বাড়তি মাটন খাওয়া যাবে৷

Sunday, March 12, 2023

সেদ্ধয় সিদ্ধ



- বুঝলে প্রশান্ত, বুকের ধড়ফড়টা কিছুতেই কমছে না।
- জামাইবাবু, আপনি বড্ড নেদু হয়ে পড়ছেন!
- তাই কি? ওভাররিয়্যাক্ট করছি বলছ?
- আবার কী। ভাইটালস সব ঠিকঠাক। রিপোর্টটিপোর্ট যাই এসেছে সব খাপেখাপ। কখন থেকে বলছি চলুন দু'বোর্ড ক্যারম খেলি। অথচ আপনি সেই থেকে বুক ধড়ফড় নিয়ে পড়ে আছেন।
- জেনুইন ধড়ফড় ভাই প্রশান্ত। আরে, নাড়ি ধরে কি সব ধড়ফড় ডিকোড করতে পারবে? ডাক্তারি কি অতটাই মুখস্থবিদ্যের জিনিস? আরে, মনের আনচানটাকে ইগনোর করলে তো চলবে না।
- নাহ্‌! আপনার বয়স হচ্ছে।
- সেভেন্টি ফোর। এক্কেবারে কচি তো আর নই।
- আপনার মধ্যে রীতিমত ভীমরতি জেনারেট হচ্ছে।
- আহ্‌, কদ্দিন পর ভীমরতি কথাটা শুনলাম ভাই। তোমার দিদি থাকতে কথায় কথায় শুনতে হত বটে।
- দিদিরও বলিহারি। আপনাকে মারাত্মক প্যাম্পার করে মার্কেটে একা ছেড়ে চলে গেল। আর এখন প্রতি হপ্তায় দু'বার আমি আপনার গুপি-দেওয়া-বুক-ধড়ফড়ের খবর শুনে ছুটে আসি। আমার প্র্যাকটিস-ট্র্যাকটিস তো লাটে উঠবে এ'বার।
- কথায় কথায় প্র্যাকটিস দেখিও না প্রশান্ত। প্র্যাকটিস দেখিও না। আরে, হিপোক্রেটিক ওথ নিয়ে পথে নেমেছ। ডাকলে আসবে না মানেটা কী!
- আপনাকে কতবার বলেছি জামাইবাবু। আমি বলেছি, সুমি বারবার বলেছে। এ'বারে চলুন আমাদের নাকতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকবেন। আমাদেরও গার্জেন হল, আপনার বুক ধড়ফড়েরও একটা পার্মানেন্ট হিল্লে হল।
- তুমি শালা একটা ইউজলেস। বাজে কথায় সময় নষ্ট না করে এই আনচানটার কিছু একটা করো ভাই। একটা স্ট্রেঞ্জ ধরণের নার্ভাসনেস বুঝলে। এই মনে হচ্ছে পায়চারি করি, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে বিছানায় শুয়ে সিলিঙের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে খানিকটা রিলীফ পাওয়া যাবে। এই মনে হচ্ছে বই পড়ি, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে যাই ক্লাবে গিয়ে আড্ডা মারি। এই মনে হচ্ছে চা বানাই, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে আমার দরকার আসলে আলু-ভাজা। এই মনে হচ্ছে...।
- থাক থাক...আর সিম্পটম সাজাতে হবে না। আপনি এ'বার আর একটা বিয়ে করুন।
- তুমি কি ডাক্তারি টুকে পাশ দিয়েছ প্রশান্ত?
- উফ। মহাঝ্যামেলা।
- ট্রিটমেন্ট বাতলাও।
- আপনি বললে শুনবেন?
- তুমি ডাক্তার। যা প্রেসক্রাইব করবে, লেটার অ্যান্ড স্পিরিটে ফলো করব।
- আপনার দরকার মেডিটেশন।
- তুমি দূর হও প্রশান্ত। আর পারলে অ্যালোপ্যাথি ছেড়ে দাও।
- এই মাইরি। শুনুন না জামাইবাবু। জপতপ করতে বলছি না। হাইক্লাস টেকনিক, বেনিফিট গ্যারেন্টেড।
- এরপর আবার শেকড়বাকড় ধারণ করতে বলবে না তো?
- আরে না। শুনুন না।
- শুনি।
- আজ দুপুরের মেনুতে কী রেখেছেন?
- মুর্গি-কষা। পাবদার ঝাল। সজনের চচ্চড়ি। বেগুন ভাজা। নারকোল দেওয়া মুগের ডাল। রিভার্স অর্ডারে খাবো, অফ কোর্স।
- না না, এ'সব আনচান-ধড়ফড়ের দিনে ও'সব গুরুপাক সইবে না।
- মেডিটেশনটা কী?
- সবার আগে মেনু পাল্টাতে হবে। আর সে'খানেই খেল।
- হেঁয়ালি না করে স্পষ্ট করে বলো।
- শুনুন। সবার আগে - আলু, ডিম, ডাল; সেদ্ধ করে নেওয়া যাক। কেমন?
- শুনছি। এরপর?
- এরপরেই হল আসল থেরাপি। মিউজিক প্লেয়ারে মনের মত গান চালিয়ে...।
- রফি।
- রফি? রফি। অবশ্যই রফি। চালিয়ে দিন। লো ভল্যুমে। কেমন? তারপর, সর্ষের তেল, লঙ্কাকুচি আর হোয়াটএভার-ফ্লোটস-ইওর-বোট মালমসলা মিশিয়ে, মাখতে শুরু করুন। দায়সারা মাখা নয়। অনুভব করতে হবে জামাইবাবু। আলু বা ডিম ভাঙলেন, আঙুলের ডগায় যে নরম স্পর্শ; সে'টাকে গোটা শরীর দিয়ে অ্যাবসর্ব করে নিতে হবে। এইবারে কনসেন্ট্রেশনকে পুরোপুরি এনে ফেলুন চটকানিতে। আলু বা ডিম নরম হয়ে আসবে, ডুমোডুমো ভাব হারিয়ে গিয়ে মোলায়েম টেক্সচার আপনার হাতে ছড়িয়ে পড়বে। প্রসেসটা কল্পনা করুন...। চোখ বুজে ব্যাপারটাকে ফীল করুন...।
- উম...টোটালি কল্পনা করতে পারছি। আলুমাখা নরম তুলতুলে হয়ে আসছে, ডিমসেদ্ধর আলট্রা-স্মুদ পেস্ট আমার হাতে...একদম ফীল করতে পারছি ভাই প্রশান্ত...।
- ব্রাভো জামাইবাবু। এ'টাই তো চাই। এইবারে কনসেন্ট্রেশনটা ম্যাক্সিমাম পর্যায়ে পৌঁছবে। আপনার সম্পূর্ণ ফোকাস আলু-ডিম চটকানিতে, কান থেকে রফি হারিয়ে গেছেন; আপনার ফোকাস এতটাই ইন্টেন্স।
- নিজেকে লামা মনে হচ্ছে যেন।
- লাভলি। এরপর একইভাবে মনঃসংযোগ করুন ডালসেদ্ধ, ঘি, সর্ষেরতেল দিয়ে ভাত মাখতে। একদম পার্ফেক্টলি স্মুদ আউটপুট না হওয়া পর্যন্ত আপনি থামছেন না। আপনাকে রোখা যাচ্ছে না, জামাইবাবু। আপনাকে রোখা যাবে না!
- আজ মুর্গি, পাবদা, সজনে ক্যান্সেল। শুধুই থেরাপি।
- এ'টাই তো চাই। চলুন রান্নাঘরে।
- তোমার এলেম আছে প্রশান্ত।
- ফিজ হিসেবে মুর্গি আর পাবদাটা নিজের পাতে টেনে নিলে আশা করি খুব একটা মাইন্ড করবেন না?

Sunday, February 12, 2023

এঁটো-হাতের আড্ডা



রোববারের লাঞ্চটা ধীরেসুস্থে সেরে ফেলাই মঙ্গল, নবেন্দু সান্যালের ফোকাসটা সে'দিকেই৷ গুরুপাক হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই, বরং তা'তে খেতে বসে গল্পটা জমে ভালো৷ মাংসের হাড়ে, মাছের কাঁটায় কনসেনট্রেট করতে গিয়ে রোব্বারিয়ান আড্ডার ফ্লো নষ্ট-হয়না৷

তবে সে ক্ষেত্রে আলুভাজাটা দরকারি, সে'টা ব্যবহার হবে ডাল-ভাত সাফ হয়ে যাওয়ার পর৷ থালা-টেবিলের বাহার যেমনই হোক, নবেন্দুবাবু নিজের আলুভাজাকে সাতপুরনো অল্প তোবড়ানো স্টিলের বাটিতেই পছন্দ করেন৷ খানিকটা কন্ডিশনিং বোধ হয়; আলুভাজাকে বাহারি চীনামাটির প্লেটে দেখলেই মনটা সামান্য আড়ষ্ট হয়ে পড়ে৷ সর্বোপরি, নবেন্দুবাবু আলুগুলো খানিকটা মোটাদাগে কুচিয়ে নরম করে ভাজতে পছন্দ করেন; বিশেষত শেষ পাতে খাওয়ার জন্য৷

ডাল-ভাত সাপটে খেয়ে, চেয়ারে গা এলিয়ে, আলুভাজার বাটিটা টেনে নেওয়া৷ তারপর অতি ধীরেসুস্থে, একটা একটা আলুভাজার টুকরো টেনে নিয়ে, ছোটখাটো কামড়ে এগিয়ে যাওয়া৷ পাশে বসা মানুষজনের সঙ্গে গল্প জমে উঠবে৷ আঙুলে লেগে থাকা ডাল শুকিয়ে যত খটখটে হয়ে উঠবে, আড্ডা তত জমাট হবে। গোটা হপ্তা জিভ-পেটের দেখভাল হয় বটে, তবে মনের চুলে বিলি এই রোব্বারের লাঞ্চ শেষের এঁটো হাতের আড্ডায়৷

**

- নবেন্দুদা! কী হল, এ'বার উঠতে হবে তো।

- তিনটে বেজে গেছে নাকি পটা?

- সাড়ে তিনটে। ম্যানেজার চিল্লিয়ে উঠলো বলে৷ চারটে বাজলেই তো ভিড় বাড়বে আবার।

- আহ্৷ আড্ডার মেজাজটা সবে দানা বাঁধছিল রে..।

- চলো নবেন্দুদা, সামনের হপ্তায় ঘুরেই আসি দু'দিন। আমি আর তুমি৷ মায়াপুর বা পুরুলিয়া। সে'খানে দুপুরের খাওয়ার পর এঁটো হাতে দু'জনে বসে এক্কেরে সন্ধ্যে পর্যন্ত গল্প করব৷ এই মহাদেব হোটেলের রাঁধুনি হয়ে আর রোব্বারে খাওয়ার পাতের আড্ডা জমবে না৷

- চ' চ'। খদ্দেরদের হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে৷ সুকুমার একা হেঁসেল ম্যানেজ করতে পারবে না৷

Monday, October 4, 2021

রোব্বারের বই

প্রশ্নঃ
রোব্বারে কী ধরণের বই পড়ে সময় কাটাতে আপনার ভালো লাগে?

উত্তরঃ
রোব্বারে? দেখুন, সকালের দিকে, মাংস যখন ম্যারিনেট হচ্ছে, তখন সঞ্জীবই আইডিয়াল৷ একদিকে মাংস রসালো হয়ে উঠছে, পাশাপাশি ধৈর্য, স্নেহ আর ভালোবাসার মশলায় নিজের মনকে নরম করে নেওয়া যাচ্ছে৷ গোটা হপ্তার হাড়জ্বালানে দৌড়ঝাঁপ ধুয়েমুছে সাফ করার এ'টাই আদর্শ সময়৷
এরপর বেলা গড়ালে, রান্নার শেষ ধাপে যখন মাংস সেদ্ধ হচ্ছে, তখন অবশ্যই কয়েক পাতা শিব্রাম৷ পড়তে পড়তে নির্লজ্জ খ্যাকখ্যাক হাসি আর শিব্রামের জিনিয়াসকে ক্রমাগত বাহবা জানাতে থাকা প্রেশার কুকারের সিটি।
দুপুরবেলা, মাংস-ভাত চেটেপুটে সাফ করার পর অবশ্য বিভূতিভূষণ আর সাদার-ওপর-ছোট ছোট -নীল ফুল-প্রিন্ট ওয়াড় পরানো পাশবালিশের কম্বিনেশন ছাড়া দুনিয়া অন্ধকার৷

Sunday, May 23, 2021

রোব্বারের ডিমকষা



ডিমের ট্যালট্যালে ঝোলও যথেষ্ট সুস্বাদু হতে পারে৷ ভাতের মধ্যে কাঁচলঙ্কা ডলে,সে ঝোলে মেখে দিব্যি লাঞ্চ সেরে নেওয়া যায়। তবে রোব্বারের ডিমের ঝোল না কষালে মুশকিল, ঝোলের ট্যালট্যালেমো আগামী হপ্তার মেজাজকে ডায়লুট করে দিতে পারে৷ মায়ের রান্না রোব্বারের ডিম তাই ঝোল নয়, কষা। এবং রগরগে৷ 

ডিমের কষা প্রসঙ্গে বিহারের এক ছোট্ট ভাতের হোটেলের কথা মনে পড়ে গেল। কটিহার আর পূর্ণিয়া শহরের মাঝামাঝি, হাইওয়ের ওপর একটা দোকান৷ দু'হাজার দশ থেকে বারোর মধ্যে সে রাস্তা দিয়ে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল; অফিসের কাজে৷ আমার ড্রাইভার ও খাসদোস্ত ধর্মেন্দ্র মাঝেমধ্যেই সে দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে লাঞ্চ সেরে নেওয়ার জন্য৷  ঝুপড়ি বললে সে দোকানের ওজন স্পষ্ট ভাবে বোঝানো যায়৷ সে'খানে চাল মোটা। অবশ্য মোটা চালে একটা আলাদা স্বাদ থাকে, তা আমিষ ঝোলে মেখে খেতে লাগেও দিব্যি, কিন্তু ওই দোকানের সে চাল বড় বিস্বাদ ঠেকত, কিছুতেই রোচেনি৷ তাই সে'খানে নিতাম রুটি, আলুভাজা আর হাঁসের জোড়া ডিমের কষা৷ 

যে স্টিলের বাটিতে ডিমে দেওয়া হত, তার গায়ে এক ফোঁটা ঝোলও লেগে থাকত না। শুধু মাখোমাখো কালচে ভাজা পেঁয়াজ। আর থাকত রগরগে ঝাল। আবার সেই জিভ-কাঁপানো ঝালের পাশাপাশি থাকত একটা চমৎকার টক-মিষ্টি 'আন্ডারকারেন্ট'; সবমিলে সে স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়৷ আমি আর ধর্মেন্দ্র সে ডিমকষার ঝালে হাপুসহুপুস হয়েও যে কত রুটি উড়িয়েছি তার ইয়ত্তা নেই৷ তিন চার গ্রাস রুটি-ডিম মুখে পোরার পর অল্প আলুভাজা মুখে দিতাম জিভ নিউট্রালাইজ করতে, তারপর ফের সেই হাইক্লাস কষায় ডাইভ৷ 

একবার আমরা সে দোকানের পাশ দিয়ে যখন পেরোলাম তখন বিকেল৷ কিষাণগঞ্জ থেকে দিব্যি ভরপেট ভাত খেয়ে বেরিয়েছি, আর লাঞ্চের জন্য দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না৷ দোকান ছাড়িয়ে আধমাইল মত চলেও গেছি, আচমকা বুক বেয়ে এক দীর্ঘশ্বাস উঠে এসেছিল;

"ধর্মেন্দ্রজী, ওই ডিমের কষা আজ আর খাওয়া হল না"।

উত্তরে ধর্মেন্দ্র পালটা দীর্ঘশ্বাস ভাসিয়ে দিয়েছিল। তার মনও যে একই হাহাকারের নৌকায় ভাসছে তা দিব্যি বুঝতে পারলাম।

"ইউটার্ন লেকে ওয়াপস জানেমে জ্যাদা টাইম তো নহি লগেগা ধর্মেন্দ্রজী, তাই না"? জিভের লকলক ততক্ষণে বুকের ধুকুপুকে নেমে এসেছে।

"তুরন্ত পহুচ জায়েঙ্গে জী", বুঝলাম যে ধর্মেন্দ্রও যে নিশির ডাক অগ্রাহ্য করতে পারছে না।

"তবে ভাত তো খাওয়া হয়েই গেছে কিনা, তাই ভাবছিলাম..এখন কি আর রুটি খেতে ইচ্ছে করবে"?

ধর্মেন্দ্রর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল 
" লাঞ্চ তো হো গয়া৷ লেকিন শাম কা নাস্তা কর লেতে হ্যায়৷ গাড়ি মে বিরেড (পাউরুটি) হ্যায়৷ বস উয়ো অন্ডা উঠানা হ্যায়"।

তার আধঘণ্টার মাথায় পাউরুটি সহযোগে সে হাইক্লাস ডিমকষায় ফিরে গেছিলাম আমি আর ধর্মেন্দ্র৷

Sunday, January 24, 2021

অন্য কেমিস্ট্রি

- কী হে ভায়া৷ রোব্বারের সকালে এমন ম্যাদা মরে বসে আছ যে৷
- ঝাড়া পঁচিশ মিনিট খবরেরকাগজ পড়লাম গো দাদা৷
- তা' হালচাল কী বুঝছ?
- ডেমোনস্ট্রেট করে বোঝাব? ডেমোন্সট্রেশনের প্রপ সমস্ত রেডি রেখেছি।
- হোক৷ হোক।
- এই যে৷ এ'টা কী?
- আদা।
- আর এইটা?
- কাঁচকলা। অবভিয়াসলি৷
- ভেরিগুড। এ'বারে এ'দুটো যদি মিশিয়ে যদি দিই?
- আরে, আদা অ্যান্ড কাঁচকলা যে৷ মেশাবে কেন? আর এ দু'টো জিনিস মিশবেই বা কেন? তা'হলে তো প্রবাদটাই মাটি৷
- করেক্ট৷ মোক্ষম বলেছেন৷ এ'বার এই আদার টুকরোটা ফের মন দিয়ে দেখুন। উইথ ফুল কনসেনট্রেশন।
- দেখছি৷ টোটাল ফোকাস৷
- এই আদার টুকরোটা হচ্ছে ইডিওলজি। কেমন?
- বেশ। তবে আদা হল ইডিওলজি। তা'হলে ওই কাঁচকলার প্যারালালটা?
- কাঁচকলা ইস অবভিয়াসলি ইকুয়াল টু পলিটিক্স৷
- অবভিয়াসলি৷ অবভিয়াসলি৷

Monday, October 5, 2020

দ্য পুজো পুজো রোব্বারস


দিব্যি কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খটরখটর কী-বোর্ড চালিয়ে যাচ্ছিল অনিন্দ্য৷ দিব্যি।

সাতটা এক্সেল শিট আর আর তিনটে ওয়ার্ড ফাইল চোখের সামনে খোলা। কনসেন্ট্রেশন তুঙ্গে, কাপের কফি আধঘণ্টা আগেই ফুরিয়েছে অথচ মাঝেমধ্যে সেই খালি কাপেই চুমুক দিচ্ছিল সে। 

এমন সময় হল কী...কম্পিউটারটা আপনা থেকেই রিস্টার্ট হল৷ সমস্ত খোলা ফাইলকে না পাত্তা না দিয়ে সে ব্যাটার স্ক্রিন দুম করে বন্ধ হয়ে আবার জ্বলে উঠলো৷ অনিন্দ্যর মেজাজটাও গেল বিগড়ে। আচমকা সে টের পেল কফির কাপটা ফাঁকা। তারপর খেয়াল হল আশেপাশের কিউবিকেলগুলোও ফাঁকা। কেউ কোত্থাও নেই। অনিন্দ্যর মনে পড়ল আজ রোব্বার। অন্য কারুর অফিসে আসার কথা নয়৷ কিন্তু তাকে প্রায়ই ছুটির দিনে আসতে হয়৷ প্রায়ই তাকে রোব্বারি-তলব পাঠান বড়সাহেব৷ বড়সাহেবের রোব্বারি ডাক সবাই এগিয়ে গেলেও অনিন্দ্য পাশ কাটাতে পারেনা। সে জন্য অবিশ্যি বড়সাহেব তাকে বিশেষ পছন্দ করেন। 

যা হোক। কম্পিউটার রিস্টার্ট হওয়ার সময় কনসেন্ট্রেশনটা গেল গুলিয়ে। আর সে'টাই হল কাল। মুহূর্তের অসাবধানতায় অনিন্দ্যর চোখ গিয়ে পড়ল জানালার ও'পাশে, আকাশের দিকে। এক্সেল, ওয়ার্ড ডক, আউটলুক ইনবক্স সব কেমন ঝাপসা হয়ে পড়ল। কেমন একটা অস্বস্তিকর ঝকঝকে নীল৷ বারো ঘণ্টা অফিস, বাড়ি ফিরে একার সংসারে সামান্য রান্নাবান্না আর রাতের দিকে টিভির পাশাপাশি ল্যাপটপে অফিসের দু'একটা খুচরো কাজ দেখতে দেখতে গা এলিয়ে দেওয়া৷ 

এ'সব কিছুর মধ্যিখানে আকাশের দিকে চোখ যাওয়ার কথা নয়, দৈবক্রমে আজ গেল। রিস্টার্ট হওয়া কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছুতেই আর চোখ আটকে রাখা যাচ্ছেনা৷ অথচ ওই হতচ্ছাড়া আকাশের দিকে তাকানোরও সাহস হচ্ছে না৷ মিনিট সতেরো ছটফট করার পর বড়সাহেবকে একটা ফোনই করে বসল অনিন্দ্য।

- হ্যালো। বলো অনিন্দ্য। 

- হ্যালো স্যার।

- গুপ্তার ফাইলটা কম্পলিট হল? খুব আর্জেন্ট কিন্তু। রাত হলেও ক্ষতি নেই কিন্তু ফাইলটা কম্পলিট করা চাই। অবশ্য, তোমার কাছে তো এ'সব জলভাত।

- হ্যাঁ। স্যার, ওই ফাইলটার ব্যাপারেই একটা কথা বলার ছিল।

- বলো না।

- ফাইলটা আর আজ প্রসেস হবে না।

- সে কী। এনিথিং রং?

- নীল।

- হোয়াট?

- আকাশের রঙটা৷ কেমন একটু অস্বস্তিকর নীল৷ আপনি দেখেছেন?

- আর ইউ ওকে অনিন্দ্য?

- ফাইলটা আজ আর হবে না৷ 

- বাট ইট ইস ভেরি আর্জেন্ট।

- কাঁচকলা। 

- হোয়াট কাইন্ড অফ ল্যাঙ্গুয়েজ ইস দিস?

- গুপ্তাদের ফাইলটা তিনদিন পরে করলেও ক্ষতি নেই। আমি শিডউল চেক করেছি।

- বাট উই মাস্ট স্টে আহেড অফ দ্য শিডিউল।

- ইউ মাস্ট। আমার মাস্ট তো স্রেফ আপনার মাস্টে তালে মিলিয়ে চলা। 

- ব্যাপারটা কী বলো তো? 

- ফাইলটা আজ আর হবে না। আগামীকাল আর পরশু আমি ছুটি নিচ্ছি৷ ক্যাসুয়াল লীভগুলো খামোখা প্রতি বছর নষ্ট হয়। বুধবারের মধ্যে বরং আপনি ফাইলটা পেলেও পেতে পারেন।

- ক্যাসুয়াল লীভগুলো নষ্ট হয় বলেই ইউ আর আ ফাস্ট রাইজার। সে'টা ভুলে যেওনা।

- কেরিয়ারে ফাস্ট রাইজ করব বলে ক্যাসুয়াল লীভ নিই না, আপনা এই ধারণা ভুল৷ ছুটি চাইতে বুক কাঁপে, ঘাড়ে চাপানো আজেবাজে কাজ কেন করব সে লজিকাল প্রশ্ন করতে ভয় পাই। এক্সেলেন্সে মন নেই, কম্পলায়ান্স কম্পল্যায়ান্স করেই ফতুর হচ্ছি৷ প্রমোশনের লোভ আমার নেই স্যার। কিন্তু চাকরীতে এ'দিক ও'দিক কিছু হলে লিলুয়ার মেজপিসি চিমটি কেটে কী বলবে তা ভেবে কেঁপে উঠি। রিয়েলি। "ইয়েস স্যার ইয়েস স্যার" যে আউড়ে চলি তা কিন্তু স্রেফ ভয়ে। অ্যাম্বিশনে নয়। 

- বটে? এ'সব ফিলোসফিকাল বাতেলা আমায় শোনাতে এসো না। মনে রেখো, সামনেই রিভিউ..।

- আর সামনেই পুজো। জানেন, কিছুক্ষণ আগেই খেয়াল পড়ল। বছর কুড়ি আগে কেনা কয়েকটা পুজোসংখ্যা আমার  পুরনো বইয়ের ট্রাঙ্কে এখনও রাখা আছে। পড়া হয়নি৷ তখন পরীক্ষার নম্বর কমলে মধ্যবিত্ত বাপ-মায়ের মধ্যবিত্ত স্বপ্নভঙ্গ হবে, সে ভয় ছিল। এখন বাপ-মা আর নেই বটে। তবে ভয় বয়ে বেড়ানোর অভ্যাসটা রয়ে গেছে স্যার। কিছু একটা না করলেই নেই।

- য়বাজে বকার সময় আমার নেই। কম্পলিটেড ফাইলটা আমার রাতের মধ্যে চাই।

- আজ রাতের মধ্যে কুড়ি বছর পুরনো শারদীয়া শুকতারার রিভিউ পেতে পারেন। আগামীকাল রাতের মধ্যে সাতপুরনো পুজোবার্ষিকী আনন্দমেলার রিভিউ।  পরশু রাত্রের মধ্যে পাবেন পুরনো কিশোরভারতী পুজোসংখ্যার রিভিউ। তারপরের দিন বোধ হয় এই ফাইলটা পেলেও পেতে পারেন।

- ইউ ইডিয়ট!

- আই এগ্রী স্যার। এমন পুজো পুজো রোব্বারের দুপুরে কোথায় কড়াইতে মটন কষাবো! তা নয়। আমি অফিসে বসে ভিলুকআপ চালিয়ে হদ্দ হচ্ছি। আলবাত আমি ইডিয়ট৷ যাকগে, এখন আসি বরং।

Sunday, August 23, 2020

রবিবারের হিসেবকিতেব


সকাল।

লুচি বেগুনভাজা মুখে দিয়ে শ্যামল মিত্রের গান, 
আর পাশাপাশি কয়েক পাতা শীর্ষেন্দু, অদ্ভুতুড়ে সিরিজ। 
জলখাবার শেষে জিলিপি চিবুতে চিবুতে নারায়ণ দেবনাথ।
আকাশের সিচুয়েশন যাই থাক, আদত রোদ্দুর জেনারেট করতে হবে মনের মধ্যে। এবং সে রোদ্দুর হতে হবে 'ও মন কখন শুরু কখন যে শেষ' মার্কা সুপার-মিঠে। 

***

প্রি-দুপুর।

রান্না চলাকালীন স্টিলের বাটিতে দু'পিস মাংস এক পিস আলু নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা। তখন আবার কানের ইয়ারফোনে মান্নাবাবুর 'ও আমার মন যমুনার' সুর ফ্লো করবে। স্নানের আগে মনটাকে একটু মাটন-মান্না রোম্যান্সে ম্যারিনেট না করলেই নয়।

***

দুপুর।

খেতে বসে তাড়া নেই। খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার হুড়োহুড়ি নেই। আড্ডা আছে, এঁটো হাত শুকিয়ে যাওয়া আছে। নিজের রান্নার অ্যানালিসিস আর অন্যের রান্নার প্রশংসা আছে। আর আছে লাঞ্চ সেরে খাটে ফ্ল্যাট হয়ে হেমন্তবাবুর হাতে নিজেকে সঁপে দেওয়া। প্রো-টিপঃ ব্যাকগ্রাউন্ডে লো ভল্যুমে জীবনপুরের পথিক আর চোখের সামনে ক্যালভিন অ্যান্ড হবসের কমিক্স বই দিব্যি খাপেখাপ মিলে যায়। 

ভাতঘুম শব্দটায় তুলসীবাবু রয়েছেন,সিয়েস্টায় রয়েছেন ছবি বিশ্বাস। গান আর কমিক্সের মিশেলে কোনও রবিবার হয়ত চোখ ভার করে নেমে আসবেন তুলসীবাবু। আবার অন্য কোনও রবিবার দুপুরে ঘুমের আয়েশে থাকবেন ছবি বিশ্বাস। 

***

সন্ধ্যে।

রোব্বার সন্ধ্যেয় ছাতে মাদুর পেতে বসতে পারায় শুনেছি গঙ্গাস্নানের পুণ্য। মুড়িমাখা আর লেবু-চায়ের কম্বিনেশনকে খোলা আকাশের নীচে না আনতে পারলে নাকি সমস্ত মাটি।

সোমবারের ব্যস্ততা শুরুর আগে, এমন ছাতসন্ধ্যে বেশ টনিকের কাজ করে। পাশে আধো-মনখারাপ আর স্নেহ মিলিয়েমিশিয়ে কিশোরবাবু গাইবেন পাখিদের না ফেরার গান।

***

রাত।

ইলিশের রোয়াব যে থাকতেই হবে তার কোনও মানে নেই। ট্যাংরার গরম গরম ঝোলে বা মৌরলার ঝালেও এস্পারওস্পার সম্ভব। বিয়ের আগের প্রেম জমে নন্দন চত্বরে বা মিলেনিয়াম পার্কে; এ কথা নেহাৎ ফেলনা নয়৷ তবে বিয়ের পরে প্রেম খোলতাই হয় পোস্ট-ডিনার একসঙ্গে বাসন মাজায়। এর হাতে কড়াই, ওর হাতে সসপ্যান; কিচেন সিঙ্কের সামনে গা-ঘেঁষাঘেঁষি গল্পগুজব। 

হাতে ভিম-ভারের ফেনা, মুখে হাসি, সস্তা ঠাট্টা-তামাশা আর ব্লুটুথ স্পীকারে সাতপুরনো যত হিন্দি গান; এর সামনে উত্তমবাবুর মোটরবাইক আর সুচিত্রাদেবীর 'তুমি বলো' ফেল পড়তে বাধ্য৷

Wednesday, October 3, 2018

নবা ও জগা

- নবা রে। আর এক পিস রোববার। গন্।
- এই আবার শুরু হল। এখনও দুপুরের খাওয়াটাও তো হয়নি। রোববার রীতিমত জলজ্যান্ত। স্নান করতে যাও জগাদা।
- লাঞ্চ। তারপর ঘণ্টাখানেক গড়িয়ে নেওয়া। তারপরেই বুকের মধ্যে ধড়ফড়। সকালের অ্যালার্ম লাগাও রে। জামা ইস্তিরি করো রে। জুতো পালিশ করো রে৷ মেসের এই জলডাল আর চালানি রুইয়ের ঝোলে মাখা ভাত গেলা। তারপর মিনিবাসের চটকানি। অটোর বিষাক্ত লাইন। বসের খ্যাচরম্যাচর। ফাইলের চালাচালি। ধুর।
- স্নান করতে যাবে না আমি যাব?
- ও মা। তুই যাবি কী রে। গতকাল বাথরুমে তুই আগে গেলি। আজকে যে রস্টারে আমার নাম।
- তা'হলে যাও না। খামোখা ঘ্যানঘ্যান করে সময় নষ্ট করছ কেন?
- তুই একটা পাষাণ রে নবা। রোব্বারের চানে কাউকে তাড়া দিতে আছে? পরের জন্মে নিরামিষভোজী হয়ে জন্মাতে হবে যে।
- ও মা। তা'তে ক্ষতি কী? দিব্যি ছানার ডালনা আর আলুপোস্ত দিয়ে হাপুসহুপুস করে খাব'খন। শেষ পাতে টমেটো আমসত্ত্বের চাটনি। প্লাস ওয়ান পিস রসগোল্লা। ওয়ান? না। দু'টো।
- নেহাত অবজেকশনেবল কিছু বলিসনি। তবে অবলা পাঁঠাগুলোকে মাঝেমধ্যে মুক্তি না দিলে যে এই পাপের দুনিয়ায় তাদের অন্তরাত্মা পচে মরবে।
- জগাদা। লেনিন তোমার ভাষায় কমিউনিজম বোঝালে আর কোনো বাঙালির মধ্যে ঈশ্বরবিশ্বাস পড়ে থাকত না। এ'বারে একটু মাদুর ছেড়ে ওঠো দেখি।
- হ্যাঁ রে নবা, ঠাকুর আজ ফের ব্রয়লার রেঁধেছে?
- বাতাসে তো তেমনই গন্ধ ভাসছে।
- এ মেস আমি ছেড়ে দেব। যে মেস রবিবারগুলোকে ব্রয়লায় খাইয়ে মার্ডার করে সে'খানে পড়ে থেকে পাপের বোঝা বাড়ানোর কোনো মানে হয়না।
- জগাদা৷ চলো আজ আমি আর তুমি রাতের ডিনারটা বাইরে কোথাও...।
- কষানো পাঁঠা?
- সঙ্গে ছোটমাছের চচ্চড়ি যা পাই। শম্ভুদার হোটেলের নতুন ঠাকুরটার এলেম আছে। এ'বার যাও দেখি স্নান করতে?
- কিন্তু মাসের শেষ দিন রে, এতগুলো টাকা...।
- আহ্। আমার কাছে কিছু পড়ে আছে। দু'জনের হয়ে যাবে'খন।
- তুই খাওয়াবি? গা ছুঁয়ে বল?
- মাইরি।
- বামুনকে খাওয়াচ্ছিস। খরচের একটা টাকাও জলে যাবে না। কালকের মধ্যে চিঠি পাবি। ওগো হ্যাঁগো করে। কী, তার জন্যেই তো কিঞ্চিৎ মনমরা কাল থেকে। তাই না?
- মুরাকামি না অরুণ গোভিল কে একটা বলেছেন; ইলিশের পেটিতে মন দাও, ইলিশের বায়োডেটা চেয়ে সময় নষ্ট কোরো না।
- তা হ্যাঁ রে, পুজোয় তার জন্যে একটা শৌখিন কিছু কিনবি ভেবেছিলিস যে।
- শৌখিন কিছুই কিনব। আজই। জগা বামুনের থালাসাফ করা ঢেঁকুর। তবে তার জন্য নয়। নিজের জন্য। তোমায় তৃপ্তি করে খেতে দেখা ইস আ বিউটিফুল সাইট।
- সে কী! তার জন্য কিছু কিনবি না?
- আমার গত তিনটে চিঠি আমার কাছেই ফেরত এসেছে। কুচিকুচি হয়ে। সঙ্গে চিরকুট ; খবরদার যেন আর চিঠি না লিখি।
- এ'টা সে লিখেছে? তবে রে! বামুনের অভিশাপ যদি ফোকাস করে ঝাড়া হয় তা'হলে তা ফলবেই। সে পরের জন্ম নিরামিষভোজী হয় জন্মাবে অ্যালং উইথ ছানা আর পোস্তয় অ্যালার্জি।
- আহ, জগাদা।
- বড্ড কড়া হয়ে গেল না রে। যাকগে, শোন। তুই স্নান করতে যা আগে। আর আগামী হপ্তা পুরোটাই তোর বাথরুম প্রায়োরিটি প্রিভিলেজ রইল, কেমন? যা যা, দেরী করিস না। দুপুরের খাওয়াটা তাড়াতাড়ি না সেরে ফেললে রাতের খাওয়াটা ঠিক গ্রিপ করা যাবে না। ক্যুইক।

Sunday, July 16, 2017

রোব্বার

রবিবার বিকেল নাগাদ অল্প জ্বরজ্বর বোধ করেন অনিল মুন্সী। চোখের সামনে গল্পের বইয়ের তাকটা আবছা হতে শুরু করে। সন্ধেবেলা কফির স্বাদ পানসে হয়ে যায়। মনের মধ্যে থেকে ম্যা হু ঝুম ঝুম ঝুমরুর গুনগুন মিলিয়ে গিয়ে অমুক কোটেশন’ ‘তমুক ফাইলভাসতে শুরু করে।
অল্প অম্বল বুকের কাছে ভাসতে থাকে। এমপিথ্রিতে নির্মলা মিশ্রের এমন একটা ঝিনুকশুনে মনে হয় বড়বাবু শুধচ্ছেন স্টেটমেন্টগুলো তৈরি হয়নি এখনও”?
রবিবার সন্ধে হলেই ভাজাপোড়া খাওয়ার ইচ্ছেটা বিলকুল গায়েব হয়ে যায়। ইচ্ছে করে শুধু ছাতুর সরবত খেতে, তাও পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি ছাড়া। জোর করে বিট্টুর থেকে ধার করে চাচা চৌধুরীর কমিক্স পড়ার চেষ্টা করেও লাভ হয় না, ক্রমশ মনে হয় গ্র্যাভিটি বেড়ে চলেছে। বিপুল জ্যেঠুর শ্রাদ্ধে একটা পকেট গীতা পেয়েছিলেন বছর তিনেক আগে। রবিবার রাত এলেই সেই পকেট গীতা উলটেপালটে দেখে সময় কাটান অনিলবাবু। 

দিকে তখন ব্যালকনিতে হুড়মুড়িয়ে পায়চারি করে চলেছেন বিশ্বনাথ মল্লিক। একের পর এক সিগারেট নিকেশ হয়ে ফিল্টারগুলো জমা হচ্ছে ব্যালকনিতে রাখা আধমরা পাতাবাহার গাছের টবে। কাল সান্যালেরই একদিন কী তাঁরই একদিন।
সেদিনের ছোকরা তাঁকে বিজনেস শেখাবে? আগামীকালের অকশনেই বোঝা যাবে কত ধানে কত চাল। অনিল মুন্সীর থেকে গতবছরের স্টেটমেন্টগুলো ভালো করে বুঝে নিয়েই কাল ছুটতে হবে অকশনে।
রবিবার দিনটা একটা নষ্টের দিন। কত কাজ করে ফেলা যেত সকাল থেকে। কত হিসেবেকিতেব সেরে ফেলা যেত। তা নয়, কথায় কথায় মানুষের ছুটি চাই। ছুটি মানেই অকাজ। হপ্তায় সাত সাতটা দিন অথচ মানুষ স্রেফ ছদিন টাকা কামিয়ে সন্তুষ্ট। কী জঘন্য অপচয়। রবিবারের অযৌক্তিক ছুটির জন্যেই সান্যালের ব্যাটার মুখে ঝামা ঘষতে একদিন দেরী হয়ে গেল। ইশ, ভাবলেই গা চিড়বিড় করে উঠছে। এখন সবে রাত দশটা, আরও অন্তত দশ ঘণ্টার আগে অফিস যাওয়া যাবে না।
খাবারে স্বাদ নেই, বিছানার নরম গদি যেন ঘামাচির কারখানা। উফ, কখন যে সকাল ছটার অ্যালার্মটা বাজবে। কখন যে সুখলাল গাড়ি গ্যারেজ থেকে বের করে গেটের সামনে এসে হর্ন বাজাবে।
তারপর সান্যালেরই একদিন কী তাঁরই একদিন।
দিকে তখন সুখলাল বাড়ির ছোট্ট বারান্দায় মাদুর পেতে শুয়ে। বস্তিতে লোডশেডিং,ঘরের ভিতর অসহ্য গুমোট ভাব। বারান্দায় মশারি টাঙিয়ে শুলে সামান্য স্বস্তি। ছোট মেয়েটাকে নিয়ে তাই বাইরে এসে শুয়েছে সুখলাল।
রবিবারটা বড় ভালো লাগে সুখলালের। বউয়ের সঙ্গে বসে ঠোঙা বানানো যায় গোটাদিন, দুজনে বানালে ডবল ঠোঙা; ডবল টাকা। ছেলেমেয়ে দুটো আশেপাশে ঘুরঘুর করে। দুপুরে এক সঙ্গে খাওয়া। বিকেলে ঠোঙার বস্তা কাঁধে বউকে যেতে হয় না বনিয়ার কাছে, সে নিজেই নিয়ে যায়। এটা শুধু রবিবারই হয়।
এত ভালো কাটে সপ্তাহের এই দিনটা। গোটাদিন পুষ্পা পাশে থাকে। খবরের কাগজ, আঠা আর বউয়ের মাথায় দেওয়া নারকোল তেল মেশানো সুবাস সুখলালকে ঘিরে থাকে। তবে ড্রাইভারির কাজে পয়সা বেশি। দুজনে মিলে গোটা মাস জুড়ে ঠোঙা বানালেও ড্রাইভারির মত টাকা নেই।
রবিবার শেষ হলেই মনে হয় পুষ্পা যেন আবার এক হপ্তা দূরে চলে গেল, পাশের রেললাইন থেকে মালগাড়ির ঝুপুরঝুপুর বুকের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। পরের মুহূর্তেই আবার মনে পড়ে মল্লিকবাবুর দেওয়া বাড়তি মাইনে। পুজোর বখশিশ। বছরে তিন সেট জামা প্যান্ট। বিপদের সময় দেওয়া ধারের টাকা। ছেলেমেয়েগুলোর স্কুল। পুষ্পার সোনার কানের দুলের শখ।
রোববারের মড়া ঘুম হয়ে নেমে আসে সুখলালের চোখে।   

Sunday, March 6, 2016

রোববারের সোফা আর খেলার পাতা


- "খেলার পাতাটা দেবেন?", সোফার পিছনে বেঢপ কণ্ঠস্বর শুনে ঘুরে তাকালেন সুমনবাবু। দেখলেন একটা পাঁঠা বসে। সোফার পিছনে। বসে মানে ঠিক পাঁঠাসুলভ ভাবে বসে নয়। দিব্যি দেওয়ালে হেলান দিয়ে। পাঁঠাকে বাবু হয়ে বসতে বড় একটা দেখেননি সুমনবাবু। তবে অনেক কিছুই দেখেননি তিনি। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, পরিষ্কার বাঙলায় খেলার পাতা চাওয়া পাঁঠা ইত্যাদি। 

- "কী ব্যাপার? আপনি কে? এখানে কী ভাবে? আপনি কি সত্যিই পাঁঠা?"। 
- "সামান্য খবরের কাগজ চেয়ে কী ঝামেলা হল বলুন। আমার বায়োডাটা চেয়ে বসলেন। বায়োডাটা অবিশ্যি ছিল না তা নয়, তবে খেয়ে নিয়েছি গতকাল"। 
- "যাক গে, তাহলে ধরে নেওয়া যাক আপনি পাঁঠা। তা সোফার পিছনে এলেন কী করে?"। 
- "ভূতের আবার বাছবিচার। সোফার পিছন, পিরামিডের ভিতরে পাতা তোষক, গোলপার্ক; সব সমান"। 
- "আপনি ভূত?"। 
- "নিজের পেট কে জিজ্ঞেস করুন। কড়াইটা এখনও ধোয়া হয়নি। সে'টা শুঁকে আসুন"। 
- "অহ। সরি"। 
- "সরির কী আছে?  আজ রোববার তো"। 
- "না মানে। আমি তো আনলাম দেড় কিলো মাত্র"। 
- "তবু আপনার সোফার পিছনেই কেন এলাম, তাই তো? আপনি পাঁজরাটা আনলেন কিনা"। 
- "রিয়েলি সরি"। 
- "আবার বলে সরি। আরে এটাই তো সিস্টেম। ও নিয়ে ভাববেন না। অন দ্য ব্রাইটার সাইড, পাঁঠা ভূতের ভাষা যে বাংলা সে'টা আজ জানতে পারলাম"। 
- "হ্যাঁ। সে'টা একটা চমৎকার ব্যাপার"। 
- "যাক। তা দেবেন এবার? খেলার পাতাটা?"। 
- "ক্রিকেট ফাইনালের ব্যাপার খোঁজ-টোজ নেবেন নাকি?"। 
- "আরে না না। বাংলা খবরের কাগজ পড়ে ক্রিকেটের খবর নেব? তাহলেই হয়েছে। চিবিয়ে দেখতাম। ভূত হয়ে অ্যাপেটাইটটা ঠিক কী অবস্থায় আছে। আপনার কাগজের খেলার পাতাটারাও এক হিল্লে হত"। 
- "ম্যাচ রিভিউটাই পড়ছিলাম। আর পাঁচ মিনিট দেবেন?"। 
- "ওই কোপটার আগে পাঁচ মিনিট পেলে কার্ডবোর্ড বাক্সটা ভালো করে চিবিয়ে আসতে পারতাম"। 
- "থাক থাক আর বলতে হবে না। এই যে। খেলার পাতা"।