Skip to main content

Posts

Showing posts from March, 2018

পিহু আর ঠগি

- আয়। এ'দিকে আয়। - তুমি ভালো লোক? - হ্যাঁ। বিলকুল। - তোমার নাম? - হরেন। হরেন জ্যেঠু। - আমার নাম পিহু। - পিহু। - হ্যাঁ। পিহু। - তা, তুমি জেলখানায় কেন? - বাহ্, তুমি জান না? - না। এত্তটুকুন বাচ্চা তুমি, জেলে এলে কেন? - জানি না। - বাহ্ বাহ্। জানো না। দিব্যি। তা তোমার বাড়িতে কে কে আছে? - কেউ নেই। - সে কী! - ছিল। মরে গেছে। - সর্বনাশ। - রাজার পেয়াদারা পুড়িয়ে মেরেছে। সবাইকে। বাবা, মা, দাদা। আমার বুড়ি পিসিমা। সবাই। মরে গেছে। - তুমি বাঁচলে কী করে? - আমি বাইরে খেলতে গেছিলাম যে। বিরুমিনের সঙ্গে। - বিরুমিন? তোমার বন্ধু? - সবচেয়ে ভালো বন্ধু। - তা জেলে এলে কেন? - আমি রাজপেয়াদাদের ধাওয়া করে গিয়ে ঢিল ছুঁড়েছিলাম। - ওহ হো। - মা জানলে কিন্তু খুব রাগ করত। কাউকে মারতে নেই যে। মা মরে গেছে, তাই বকবে না। তুমি জেলে এলে কেন হরেন জ্যেঠু? তুমিও পেয়াদাদের মেরেছিলে? - না। আমি ঠগি। তাই জেলে রয়েছি। - ঠগি মানে ডাকাত। আমার বাবা ছোটবেলায় ঠগি দেখেছিল। বাবা কত বলত, কত মজার গল্প। কতরকম দেশ, কতরকম মানুষ। বাবা মরে গেছে, তাই আর গল্প বলবে না। - পিহু, রুটি খাবে? - খাবো। খুব খিদে। - খাও। - আর তু

কড়াই ও মুগুর

- আসুন। আসুন মিস্টার। - ধুর ছাই। ম্যানেজারবাবু, হপ্তায় একবার করে আপনি অফিসে ডেকে পাঠান। অথচ ফেরত পাঠানোর কোনো কংক্রিট প্ল্যান আজও শুনলাম না। - মরলে জন্মাতে হবে, চিরভূত কে কোথা কবে? - ধ্যাত্তেরি। সেই কবে থেকে এক কথা। মরেছি বছর দশেক তো হল। আর কদ্দিন? - দাঁড়ান। আপনার আত্মার জন্য সুইটেবল প্রোফাইল না পেলে বাজারে ছাড়ি কী করে বলুন তো। এই যেমন  গেল বার, পকেটমার আত্মা নেমে হল দারোগা। শেষে সে কয়েদীদের পকেট মারার চেষ্টা শুরু করলে, ভেবেছেন কাণ্ডটা? - পৃথিবীতে তো টপাটপ মানুষ মরছে। হাজার রকমের প্রোফাইল,  টুয়েন্টি ফোর সেভেন নতুন ভ্যাকেন্সি তৈরি হচ্ছে। দশ বছরে আমার জন্য সুটেবল কিছু পেলেন না? - ও মা! অত সহজ নাকি। ক্রস-ফাংশনাল ম্যাচিং আছে। ওয়েটিং লাইন আছে। দুম করে কিছু করে দিলেই হল? আরে মশাই গরম তেলের কড়াইয়ের কম্ফর্টে শুয়ে অনেকে বাতেলা ঝাড়তে পারে। কিন্তু আমার কাজের প্রেশার যদি বুঝতেন। - দিনে তিন ঘণ্টা করে আমায় গরম তেলে ডীপ ফ্রাই করা হয়, সে'টা মামুলি ব্যাপার নাকি? - অত ইম্পেশেন্ট হবেন না মিস্টার। ভূত হয়ে তেলের কড়াইতে যত চুবনি খাবেন, জন্মের পর আপনার হিউম্যান স্কিন তত গ্লো করবে, মিলিয়ে নেবেন।

মুকাবলা

- গুরুদেব! - আবার কী হল বাবা অর্জুন। - এই দেখুন না গুরুদেব, একলব্যটা ফের বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। - ওই ব্যাটাচ্ছেলে লোয়ার ক্লাস ছেলেটা? - আজ্ঞে। আমায় কী ইনসাল্টটাই না করলে। - তোমার মত এলিটকে ইনসাল্ট করেছে? - রীতিমত। - কী'ভাবে? সমস্ত রিসোর্স তো আমি তোমার দিকেই ডাইভার্টেড রেখেছি। সে ব্যাটা ইনসাল্ট করার সুযোগ পায় কী করে? - হস্তিনাপুর আপনাকে যে সিটিসি অফার করেছে, সে টাকা দিয়ে আমায় খান কুড়ি গেমিং কনসোল কিনে দিলে ল্যাঠা চুকে যেত। - আহ চটছ কেন বাবু। খুলে বলই না! একলব্য তোমায় কীভাবে কাঠি করেছে? - কাঠি? গদার গুঁতো মেরেছে পিছনে। - আহ্। অর্জুন। ল্যাঙ্গুয়েজ সামলে। আমি গুরুজন। - ধ্যাত্তেরি। গুরুজনে নিকুচি করেছি। একলব্যর বদমায়েসির চোটে আমার রয়্যাল এলিট শরীর ঘিনঘিন করছে। - করেছেটা কী? - চাকরবাকর মানুষ, লোহালক্কড় অস্ত্রটস্ত্র আমার চেয়ে না হয় একটু ভালো চালায়। তাই বলে আমার টিপ সামান্য এ'দিক ও'দিক হয়েছে বলে আমায় মিডল ফিঙ্গার দেখাবে? - সর্বনাশ! বলো কী! - কী অপমান। ছি ছি। আদিবাসীর পো কিনা রাজপুত্রকে মিডল ফিঙ্গার দেখায়? - বেশ। ওকে শায়েস্তা আমি করব। অড নাম্বারের মিডল হয়, ইভেন নাম্বার

সোমালিয়া আর ঘটিদা

- পোয়েট্রি ছাড়া সমস্তই অন্ধকার, বুঝলি রে..। - আমায় বলছ ঘটিদা? - এ ঘরে মেসমালিকের বাপের ছবি আর তুই ছাড়া আর কে আছে রে গবেট বিশে? - গত পরশু দুপুরে তুমি ওই ফ্রেমে বাঁধানো উমাপদ দত্তের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কত কিছু তো বললে। তাই ভাবলাম...। - চুপ কর। যত বাজে কথা। ও'টা রিহার্স করছিলাম। - রিহার্সাল? কলেজের নাটকে চান্স পেয়েছ বুঝি? - ধুস। ও'সব পেটি লেভেলে আমি থাকিনা। নেহাত মৃণাল জ্যেঠু আর সিনেমা বানাচ্ছেন না। কোনো কমা জায়গায় স্টেজে নামতে চাওয়ার মত কাঙাল আমি নই। - বিনুদা বলছিল তোমায় নাকি বাদ দিয়েছে...। - বিনু বলেছে? হুক আর পুলে তফাৎ গুলিয়ে ফেলা ছেলের কথা তুই বিশ্বাস করলি?  - তা মেসদাদুর ছবির সামনে কী রিহার্সাল করছিলে শুনি? - সে সব বড় জটিল ব্যাপার। সামান্য ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে হয়ে আমাদের সেকেন্ড ইয়ারের সমস্যাগুলো গ্রাস্প করবি কী করে? - বেশ বলতে হবে না। - বড্ড অভিমান তোর। ইনসিস্ট করছিস যখন বলি। সোমাকে প্রপোজ করার ব্যাপারটা অনেকদিন ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। আমায় দেখলেই বেচারির চোখে এক ধরণের আকুতি বেশ কিছুদিন ধরেই ফুটে উঠছিল। মেয়ে তো, বড্ড নরম মন। ও'দের বুক ফাটে তবু মুখ ফ

হেস্

রুডল্ফ হেস্ নাজি পার্টির ডেপুটি ফুয়েরার পদে থাকাকালীন হিটলারের নজর এড়িয়ে একটা যুদ্ধবিমান নিয়ে জার্মানি থেকে স্কটল্যান্ড উড়ে গেছিলেন; একা। তখন যুদ্ধ তুঙ্গে, হিটলার লন্ডনে বোমাটোমা ফেলতে শুরু করেছেন। ফ্রান্স নাজিদের পকেটে। সোভিয়েত আক্রমণের  প্রস্তুতি চলছে। হেস্ বুঝেছিলেন যে জার্মানির পক্ষে দু'দিক সামাল দিয়ে বেশিদিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মুশকিল। ল্যান্ডিংয়ের সময়ে আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় জীবনে প্রথম প্যারাশুটে ঝাঁপ দিতে হয় তাঁকে। হেস্ ভেবেছিলেন চার্চিলের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বোঝাবেন জার্মানির সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য; ব্রিটেন নিজের এলাকা আর নিজের উপনিবেশগুলো নিয়ে সুখে থাকুক। জার্মানি নিজের এলাকাটুকু বুঝে নেবে। চার্চিল নরম হলে জার্মানির আখেরে মঙ্গল, হেস্ তেমনটাই আঁচ করেছিলেন। পরের দিন হেস্-য়ের পাগলামোর খবর পেয়ে হিটলার রাগের চোটে আশাপাশের মানুষজনকে চিবিয়ে খাওয়ার উপক্রম করেছিলেন। গোয়েবল দেশময় রটিয়ে দিয়েছিলেন "ও পাগল! আপদ বিদেয় হয়েছে, ভালো হয়েছে"। এ'দিকে ব্রিটেনও ব্যাপারটাকে স্রেফ ফিচলেমো মনে করে উড়িয়ে দিল। হেস্ বন্দী হলেন। তাঁর চার্চিলের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে উবে যেতে বেশিদ

বিউলির বিশ্বাস

বিউলির চোখে ঘুম নেই। আজ তিন দিন ধরে দু'চোখের পাতা এক হয়নি। বালিশে মাথা ঠেকালে মাথার ভিতর চিড়বিড় করে উঠছে। অথচ শরীর মন অবশ করা ক্লান্তি তাকে গিলে খাচ্ছে যেন। শাশুড়ি মা অবশ্য মাঝেমধ্যেই গায়ে মাথায় হায় বুলিয়ে তাকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু সে বেচারির নিজের দুঃখই বা কম কীসে? যে মায়ের জোয়ান ছেলে মাত্র তিন দিনের জ্বরে মরতে বসেছে, তাঁর বুকের ভিতরে কি রক্তগঙ্গা বয়ে চলছে না? বুড়ি বিউলিকে চোখে হারায়। ক'মাসের মাত্র বিয়ে, তবু এরই মধ্যে নিজের স্বামীকে বেশ মায়া মায়া সুরে ভালোবেসেছে ফেলেছে বিউলি। জানালা বেয়ে চুইয়ে নামা জ্যোৎস্নায় হারুর চিবুক ভেসে যেতে দেখে বিউলি। মায়া হয়। বড় মায়া। বুক ধড়ফড়ানো মায়া। এই মানুষটাকে এখন দিব্যি ছোঁয়া যায়। চাইলেই চুলে বিলি কেটে দেওয়া যায়। 'বুকে কষ্ট হচ্চে গো" বলে বুকে মাথা রাখা যায়। সে থাকবে না? বর না থাকলে বুক মুচড়ে মুচড়ে ওঠে; বাপের বাড়ির পাড়ার শিউলিপিসি অন্তত তাই বলতেন। হারু থাকবে না? সন্ধেবেলা মেলা থেকে ফেরার পথে অসভ্য সুরে 'অ্যাই বৌ, ইদিকে ঘেঁষে আয়' বলে চিমটি কাটবে না আর সে? বিউলির গলায় রামপ্রসাদী শুনে হারুর চোখ ছলছল হয়ে আস

মূর্তিভাঙার গল্প

- নমস্কার খাসনবীসবাবু।  - আরে দত্ত? হঠাৎ আমার অফিসে? পথ ভুল করে নাকি? - আপনার অফিস? হে হে।  - আরও অন্তত দু'দিন। পরশু সন্ধেবেলা গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ইস্তফা দেব। তদ্দিন এ অফিস আমারই। তারপরের দিন থেকে না হয় এ'টাকে নিজের অফিস করে নিও।  - হে হে হে। তবে, মার্জিনটার জন্য খারাপ লাগছে খাসনবীসবাবু। এদ্দিনের নেতা আপনি। এদ্দিনের পার্টি। এ'ভাবে গোহারান হেরে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। মাইরি বলছি, আপনার দুঃখে নিজের এমন ল্যান্ডস্লাইড ভিক্ট্রি নিয়েও ঠিক আহ্লাদ করতে পারছি না।  - দুঃখের আর এ কী দেখলে হে দত্ত। দু'বছর যেতে দাও। তারপর দেখো মিডিয়া আর পাবলিক কী খতরনাক চিজ। সে যাক গে, তা এই হেরো অপোজিশনের কাছে কী মনে করে? গোলমেলে ফাইলটাইল সব জ্বালিয়ে দিয়েছি ভায়া। কিস্যু পাবে না।  - কী যে বলেন খাসনবীসবাবু। আপনি খাস হতে পারেন, আমি নভিস হতে পারি; তবে ঘটে এ'টুকু বুদ্ধি আছে। সে'সব ফাইলটাইল নিয়ে আপনার কোনও চিন্তা নেই। র‍্যালিট্যালিতে একটু চমকাতে হয়, তাই বলে কি ও'সব নিয়ে পড়ে থাকলে আমার চলবে? ও নিয়ে আপনি ভাববেন না। আমি এসেছিলাম অন্য একটা রিকুয়েস্ট নিয়ে।  - রিকুয়েস্

বালিশবাবুর অফিসে - ৬

- এ যে দেখছি অনেক জল! - অনেক বালিশবাবু! অনেক। - কতটা?  - সে কি আর মাপার উপায় আছে? - যা মাপা যায় না তাকেই বুঝি 'অনেক' বলে মিস্টার মুখার্জী? - বাবা ডাক থাকতে আবার মিস্টার মুখার্জী কেন? - গোটা বালিশেন্দ্র থাকতে আবার বালিশ কেন? - এ'সব কোনও প্রশ্ন হল? - এ'সব কোনও উত্তর হল? - ধুত। - কতটা? - কী কতটা? - আমাদের সামনের এই বিশাল চৌবাচ্চাটায় কতটা জল? আন্দাজ? কয়েক লাখ ফীডিং বোতল ভরে ফেলা যাবে?  - চৌবাচ্চা? এ'টা বে অফ বেঙ্গল বালিশেন্দ্রবাবু। সমুদ্র! - চৌবাচ্চার তুলনায় সমুদ্রে কতটা বেশি জল থাকে বাবাবাবু? - সমুদ্র যদি মাইনের পাওয়ার দিন সন্ধেবেলায় কলজের সাইজ হয়, তা'হলে চৌবাচ্চা হচ্ছে মান্থএন্ডের হঠাৎ ক্রেডিট কার্ডের বিল দেখা কলজে। - উপমা দেওয়ার ক্ষমতা তুলি চালানোর মত সুক্ষ বাবাবাবু, আপনার দৌড় পেরেকে হাতুড়ি চালানো পর্যন্ত।  - মোদ্দা কথা হল সমুদ্রে ইনফাইনাইট পরিমাণে জল আছে। চৌবাচ্চায় কয়েক লিটার। - যা যা আপনি বা আপনারা মাপতে পারেন না, সে'টাই ইনফাইনাইট? - মাপা সম্ভব নয়।  - সম্ভাবনার লিমিট আপনি? - মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। - ইনফ

এ'বারের পুরী

১। ভিড় মিনিবাসের হঠাৎ জানালা পাওয়ার যে শিউলি সুবাস, ঘাটের নিরিবিলিতে আঙুলে আঙুল আড্ডার শেষে টিউশনি পড়তে গিয়ে ফতুয়ার বুক পকেটে পড়ে পাওয়া দু'টো খোসা ছাড়ানো বাদামের যে স্বাদ, কপালে ঠেকে থাকা রিভলভারের ইস্পাত শীতল নল আচমকা সরে যাওয়ার যে স্বস্তি, ঘি, তেল, শুকনো লঙ্কা ভাজা দিয়ে মাখা আলুসেদ্ধর গা বেয়ে ওঠা মুসুরির ডালের ঢেউয়ে যে ওম, কয়েক হাজার অফিসের বকলসি ফোন-কলেরর ফাঁকে টুক করে সেঁধিয়ে যাওয়া "শালা বেঁচে আছিস না ফোটফ্রেমে দোল খাচ্ছিস" মার্কা ক্রিংক্রিংক্রিংয়ের যে আশ্বাস, সাতপুরনো সঞ্জীব উপন্যাস সমগ্রের মধ্যে পোস্ট না করা গোপন প্রাগৈতিহাসিক পোস্টপকার্ডের যে হাড়হিম করা উঁকি,  ছোটবেলার পড়ার ফাঁকে বাবার অফিস ফেরতা স্কুটারি ঘর্ঘর শুনতে পাওয়ার যে লজেন্স-নিমকি মার্কা উচ্ছ্বাস; সেই সমস্ত "আরিব্বাস"য়ের টুকরো মিলেমিশে পুরী এক্সপ্রেসের সাইড আপারে টিকিট কনফার্ম হয়। অমনি পাতি মানুষের কলজের কয়েক টুকরো ফানুষ হয়ে উড়ে যায়, সে উড়ে যাওয়াগুলো প্রেমিকাদের ছাড়া কারুর চোখে পড়তে নেই। ২।  নিজেকে কাস্টোমার সার্ভিস এক্সেকিউটিভ মনে করলেই মন্টুবাবুর যাবতীয়

খোকা ও বই

- খোকা, এই হল বই। *খোকার বই হাতে নেওয়া* - বইয়ের চেয়ে বড় বন্ধু আর দু'টি নেই। *খোকার বইয়ে প্রথম কামড়* - না না, কামড় নয়। বই আর বন্ধুদের কামড়াতে নেই খোকা। *খোকার মলাট চেবানোর চেষ্টা* - মনে রেখো। ইউ উইল বি নোন বাই দ্য কোম্পানি ইউ কীপ অ্যান্ড দ্য বুকস ইউ চিউ। থুড়ি। রীড। *খক খক হাসিতে খোকার মাথা নাড়া আর আরও দাপুটে কামড়* - আহ্‌। কী হচ্ছে কী। তুমি দেখছি বইয়ের অযোগ্য। যাও, হাওয়াই চটি নিয়ে খেলো গে। *খোকার মলাট চেটে বিরক্তি-লাভ* - খেতে ভালো লাগেনি বুঝি? শরদিন্দুতে বিশেষ স্বাদ নেই? শীর্ষেন্দু চলবে? *দাপটের সঙ্গে আধ-চেবানো বই ছুঁড়ে মেঝেতে ফেললে খোকা* - সর্বনাশ! সরস্বতী কে ইনসাল্ট! অঙ্কে ফেল রুখবে কে এ'বার? *বইয়ের ওপর খোকার ডান পায়ের পাতার মচরমচ* - মনে রেখো। তোমার ফ্যামিলি সরস্বতী বিশ্বাসী কম্যুনিস্ট। * খোকার দ্বিতীয় পা মুখ থুবড়ে পড়া বইয়ের পিঠে* - গোস্তাখি! ব্যাটাচ্ছেলে এই বয়স থেকে সহবতের মাথায় লাথি মারতে শিখেছে? বাপের চোখ রাঙানিকে কাঁচকলা? * পাশের ঘরের টিভি থেকে ভেসে আসা ফুর্তি মার্কা হিন্দি গান, খোকার কোমর দুলুনি* - আইকনোক্লাস্ট? শরদিন্দুর ঘাড়ে চে

চিঠি ও পদ্য

গত তিনদিনে এই নিয়ে বাহাত্তর নম্বর চিঠি এলো। উড়ো। এ'তেও বক্তব্য মোটামুটি একই রকম। অবশ্য বক্তব্য না বলে হুমকি বলা ভালো। বিয়ে না করলে সে মেয়ে নাকি আত্মহত্যা করবে। কিন্তু কী মুশকিল। সে যে নিজের নাম ঠিকানা কিছুই লেখেনি। অবশ্য তাঁর পরিচয় কিছুটা হলেও আঁচ করেছেন মনোহর। নিজে থেকে তাঁর একটা নাম দেওয়া হয়ে গেছে ভাবতে একটু লজ্জাই লাগে মনোহরের; সুলিয়া। খামে অল্প গন্ধরাজের সুবাস। আর চিঠির ভাষায় এই যে সামান্য অনুযোগ মেশানো হুমকি, তা'তে মায়া আরও তরতর করে বেড়ে চলে। পরিচয় পেলে বিয়েটা সেরে ফেলতে খুব আপত্তি করতেন না মনোহর। সুলিয়াকে নিয়ে সে'সবই সাতপাঁচ ভাবছিলেন  তিনি। ভেবে ভেবে উপায়ন্তর না দেখে নীল ডায়েরীটা টেনে নিয়ে বাহাত্তর নম্বর পদ্যটা লিখে ফেললেন মনোহর। আর তখনই চড়ুইপাখির ডানঝাপটানো সুরে জানালা বেয়ে তিয়াত্তর নম্বর চিঠিটা এলো। *** - চিঠি? - তাই তো বলে ডাক্তারবাবু। - আপনি দেখেছেন সে চিঠি? - চিঠি না হাতি। - আরে! কী মুশকিল। এই যে বললেন আপনার দাদার চিঠি পাওয়া বাতিক হয়েছে? - বাতিক না। ব্যামো। আর আদতে কিস্যু আসে না। সে জন্যেই তো আপনার কাছে আসা ডাক্তারবাবু। - নার্ভটার্ভ ফেল করেছে নাকি? -