Showing posts with label খাবারদাবার. Show all posts
Showing posts with label খাবারদাবার. Show all posts

Sunday, June 1, 2025

কাবাববন্ধুর প্রতি



কাবাবওলার সঙ্গে গলায়-গলায় দোস্তি নির্মলবাবু্র। কাবাবের দোকানটা নির্মলবাবুর বাড়ি থেকে হেঁটে বড়জোর দেড়-মিনিট, রাস্তার ধারের ছোট্ট ঠেলা বই তো নয়। কিন্তু কাবাবদাদাটি বড় দরদী। আগুনে নির্মমভাবে মাংস পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে গাম্বাটপনা আছে, কাবাব শিল্প নেই; সে'কথাটা নির্মলবাবুকে আত্মস্থ করিয়েছেন এই কাবাবকবিই।

সন্ধে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সে ঠেলার চারপাশে বড্ড ভিড়। ব্যাচেলর মধ্যবয়স্ক নির্মল সাহা হপ্তায় অন্তত বার দুয়েক সে দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান তবে রাত এগারোটা নাগাদ। বাড়াবাড়ি ভিড়ে কাবাবের কদর করতে পারেন না ভদ্রলোক। নির্মলবাবু এমনিতে রাত আটটায় ডিনার সেরে নেন, তবে কাবাবের ম্যাজিক বুঝতে মোটাদাগের পেটের খিদে নয়, দরকার রসিক মনের চনমন। এ সত্যটাও কাবাবিস্ট-ভাইটির থেকেই শেখা।

আজ বাতাসে মৃদু বৃষ্টির আভাস ছিলো। মাঝেমাঝে দু'চার ফোঁটা গায়ে এসে পড়ছিলোও বটে। তা'তে আগুন নেভার নয়, তবে হাওয়ায় সামান্য ছ্যাঁত যোগ হচ্ছিল বটে। নির্মলবাবু একটা ফ্লাস্কে চা নিয়ে আসেন, দু'টো প্লাস্টিকের কাপ। এক কাপ কাবাবনবাবকে ধরিয়ে নিজে এক কাপ ঢেলে দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসেন। এ'টাই নিয়মে দাঁড়িয়েছে।

- নির্মলবাবু, আজ চায়ের পাতা নতুন মনে হচ্ছে?
- ঠিক ধরেছ হে। নিউমার্কেট থেকে নতুন আমদানি।
- ভারি মোলায়েম। বহুত খুব।
- আকাশ দেখেছ? আজ রাতে ঢালবে, জানো।
- গরমটা একটু কমবে বটে তা'তে। আপনার শিক দু'টো রেডি। এক মিনিট দিন, ফ্রেশ পেঁয়াজ কুচিয়ে দিই।

নির্মলবাবুর স্নেহ অনুভব করেন। পোড়া কয়লার উষ্ণতা গায়ে এসে ঠেকে। কানে আসে কাবাবক্যাপ্টেনের পেঁয়াজ কুচোনোর মিহি শব্দ। নির্মলবাবুর বিশ্বাস প্রতিবার কাবাবগুরু তাঁর জন্য একটু বাড়তি ভালোবাসা নিয়ে মাংস ঝলসান, পেঁয়াজ কুচোন, আর প্লেট সাজিয়ে দেন। আসল স্বাদটুকু বোধ হয় সে বিশ্বাসেই। নির্মলবাবু টের পান যে এই ঘিঞ্জি শহরে তিনি একা নন।

কাবাববন্ধুর প্রতি মনে মনে বিগলিত সেলাম ঠুকে এই শনিবারের শেষ চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিলেন নির্মলবাবু।

চরিত্র টনিক

মিনমিনে চানাচুর খেয়ে খেয়ে মানুষ ক্রমাগত মিইয়ে যাচ্ছে।

চরম ঝাল, জম্পেশ মিষ্টি, খানিকটা টক;
এই সব হাইভোল্টেজে এসে মিশলে তবে জানবেন সে চানাচুর আদত চানাচুরত্ব লাভ করেছে।

ভুলে গেলে চলবে না যে খাঁটি চানাচুর আদতে চরিত্র গঠনের টনিক।

নির্মলের নিশ্চিন্দি



বাড়িতে এক স্লাইস বাসি পাউরুটি পড়েছিল। আর ছিল ফ্রিজে রাখা একটা মাত্র ডিম। নির্মল ছুটির সকালকে যথাযথ ইজ্জত দেওয়ার জন্য একটুকরো ডিমটোস্ট ভেজে নিলে। কর্নফ্লেক্সের চেয়ে এই ভালো। ওই এক পিস টোস্ট যতটা সম্ভব যত্ন করে ভাজলে সে। মাপা তেল, ফোকাস নিয়ে ভাজা, যত্ন করে পরিষ্কার প্লেটে তুলে নিয়ে অঙ্ক মেনে গোলমরিচ ছড়িয়ে নেওয়া।

একা মানুষের সংসার, নিজের প্রতি এবং ঘরের প্রতি অযত্ন সহজেই চলে আসতে পারে। সেই অযত্নকে যতটা সম্ভব ঠেলে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করে নির্মল। অতএব শনিবার সকাল মানে জলখাবার সেরে বাজারে যাওয়া; এক হপ্তার হিসেবে মুর্গি, মাছ, ডিম, সবজি এনে ফ্রিজ বোঝাই করা। তারপর ঘরদোর সাফ করে সোজা রান্নাঘর। দুপুরের রান্না সেরে ডাস্টিং, বিছানার চাদরটাদর পাল্টে নেওয়া। এরপর টিভির সামনে ঠ্যাং ছড়িয়ে বসা। অথবা গল্পের বই।

মা পইপই করে বলে গেছে "ভালো থাকতে"। ঘরদোর যত্নে রাখা প্লাস একটা সচল সরগরম রান্নাঘর: ভালো থাকার এর চেয়ে জমজমাট ডেফিনিশন কিছু হয় কিনা সে'টা নির্মলের জানা নেই।
অপার তৃপ্তি নিয়ে ডিমটোস্টে কামড় দিলে নির্মল।

Sunday, March 16, 2025

ফুচকা ও প্রেম



আন্তর্জাতিক ফুচকা ফেডারেশন সম্প্রতি একটা রিপোর্টে জানিয়েছে ফুচকার পরিসরে সেরা প্রেমের লাইন কোনগুলো। সে রিপোর্ট আমার হাতে কী'ভাবে এলো তা জেনে আপনাদের কোনো কাজ নেই। লাইনগুলো কী কী সে'টা বরং জানিয়ে দিই।

"আর একটা খাও না, এই তো। আমার ফাউটা...নাও না। নাও বলছি তো"।

"দাদা! ও ঝাল কম খায়, ওর আলুমাখাতে যতটা ঝাল কম দেবেন ততটা আমারটায় বাড়িয়ে দেবেন। ব্যালান্স রাখতে হবে তো নাকি"।

"আহা, দু'টো বাটি নেওয়ার কী দরকার"।

"হ্যালো? হ্যাঁ। শুনছি। হ্যাঁ হ্যাঁ, আলুকাবলিটা প্যাক করাবো বলেই তো দাঁড়ালাম। কী? ফুচকা খাচ্ছি কিনা? ধুস। তোমায় ছাড়া ফুচকার মুচমুচ নেতিয়ে যায় যে"।

"গন্ধরাজ লেবুটা একটা জব্বর ডাইমেনশন যোগ করে না? ঠিক যেন আমাদের রিলশনশিপে তোমার ঘ্যানঘ্যানানি "।

"আমার উনি আবার ফুচকায় টকজল খান না, স্রেফ শুকনো ফুচকা। বলতে পারেন, উনি ফুচকা-ভিগান"।

ক্যাডবেরি



কুড়িটাকার যে ক্যাডবেরি ডেয়ারিমিল্ক; পরিমাণের দিক থেকে ও'টাই ভালো। খুব বেশি নয় যে "ওরে বাবা কতটা মিষ্টি খেলাম" বলে ন্যাকামো করতে হবে, আবার খুব কমও নয় যে স্বাদ বুঝে ওঠার আগে হাওয়া। তবে ইয়ে, ও প্যাকেট আবারও ভাগবাটোয়ারা করে খাওয়া চলে না। কখনওসখনও ডিনারের পর ওই এক প্যাকেট ঠুকরে ঠুকরে মিনিট পনেরো ধরে খেলে প্রাণে অনাবিল আরাম টের পাওয়া যায়।

আর স্বাদের দিক থেকে কত রথী-মহারথীদেরই তো দেখলাম। ডার্ক বা হোয়াইট, ড্রাইফ্রুট বা কমলার খোসা মেশানো, দিশি বা বিদেশি; কিন্তু এই ডেয়ারিমিল্কের জুড়ি আজ পর্যন্ত পেলাম না। গত তিরিশ বছরে বাটার জুতোর কোয়ালিটি এ'দিক ও'দিক হয়েছে, পুজোসংখ্যার প্রতি মোহ উবে গেছে, ইউটিউব মিউজিকের দুনিয়ায় রঙ্গোলি-চিত্রহার কন্সেপ্টটাই আর দাঁড়ায় না। শুধু এই একটা জিনিস ছেলেবেলাতেও যেমন মারকাটারি ছিল, এখনও অবিকল তাই। এ যেন জিভের বোরোলিন; সাধুভাষায় যাকে বলে "কুছ খাস হ্যায়"।

ডিসিপ্লিন



সন্ধেবেলা আমার গড়িয়ার ফ্ল্যাটে অভয়দা এসে হাজির। আপিস সিনিয়র, সদালাপী। আমার শ্রীহীন ব্যাচলরের ফ্রিজ আর দীনহীন কিচেন ঘেঁটে যা বেরোলো তা দিয়েই অভ্যর্থনা সারতে হলো। ঘণ্টাখানেক গল্পগুজব ভালোই হলো।
আড্ডার শেষ প্রান্তে ছানার পায়েস এক চামচ মুখে দিয়ে অভয়দা ঘোষণা করলেন, "শুগার ব্যাপারটাই পয়জন"।
বাধ্য হয়ে মাথা নাড়ত হলে। এমন নির্মম সত্যকে অগ্রাহ্য করা চলে না।
"এই যে আজ দু'চার চামচ ছানার পায়েস খাচ্ছি, এ'টা মেকআপ করতে অন্তত সাতদিন এক্সট্রা মাইল চারেক হাঁটতে হবে"।
কী আশ্চর্য, অভয়দা এই নিয়ে তিন নম্বর ছানার পায়েসের বাটি সাবাড় করতে চলেছেন। তবে সে'টা ধরিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। ভদ্রলোক 'মাই ডিয়ার' হলেও আমার অফিসের বস।
"চেষ্টা করবি চিনি ব্যাপারটাকে জাস্ট ছেড়ে দেওয়ার।ব্ল্যাক কফি, গ্রীন টী ইজ ইওর ফ্রেন্ড। আর হ্যাঁ, প্যাকেজড স্ন্যাক্স দেখলেই ল্যাজ গুটিয়ে পালাতে হবে। তা'হলেই দেখবি অটোমেটিকালি আয়ুতে অন্তত পনেরো বছর যোগ হয়ে যাবে"।

চমৎকৃত হতে হলো। অভয়দার সুতির পাঞ্জাবির বুকপকেটে এখনও এককুচি চিপ্স লেগে আছে। খানিকক্ষণ আগেই একবাটি চিপ্স আর একবাটি কুড়কুড়ে সামনের টেবিলে রেখেছিলাম। আর তার পাশে একটা ছোট থালায় ঘরে বানানো রোস্টেড মাখানা। অভয়দা নির্বিবাদে চিপ্স আর কুড়কুড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন, মাখানাদের গায়ে আঁচড়ও পড়েনি।

"সবচেয়ে ডেঞ্জারাস জিনিস কি জানিস"?
"কী অভয়দা"?
"কোল্ডড্রিঙ্কস। কার্বোনেটেড পটাশিয়াম সায়নাইড মাইরি। এক এক চুমুকে যা ক্যালরি আছে রে ভাই, ভেবেই গা কেঁপে ওঠে"। এই বলে একটা জোরদার ঢেঁকুর তুললেন অভয়দা। থামস আপের।
"তাই তো", বাধ্য ছাত্রের মত স্বীকার করে নিলাম। অভয়দা আচমকা সামনে রাখা কাচের গেলাসটার দিকে তাকালেন। সামান্য কেশে যোগ করলেন, "ভাবিস না আমি রোজ রোজ কোল্ডড্রিঙ্কস কনজিউম করি। আসলে একটা নতুন ট্রেডমিলে ইনভেস্ট করেছি কিনা। স্টেট অফ দ্য আর্ট এক্কেবারে। হাফ গেলাস থামসাপ আধঘণ্টার ভিগরাস ট্রেডমিল রানে সাফ করে দেব"।
"বটেই তো", অভয়দাকে অভয় দেওয়া ছাড়া গতি ছিল না, "বলছি ডিনারটা সেরেই যাবে নাকি? তা'হলে অর্ডার দিই কিছু..."।
"তা দিতে পারিস। তবে আমি তো আর তোদের মত ইয়াং টার্ক নই, সাদামাটা কিছু বলিস। নো ময়দা, মিনিমাম তেল। রিচ কিছু আর ম্যানেজ করতে পারি না। বয়সটা দেখতে হবে তো"।
"নো ময়দা। তেল কম। উম....চিকেন স্যালাড গোছের কিছু.."।
"সরি রে। সন্ধের পর আমি আবার স্যালাড খাই না। ডিসিপ্লিনের ব্যাপার। সিম্পল দেখে বিরিয়ানি আনিয়ে নে। আর তার পাশে হেভি কিছু না, জাস্ট কাবাব-টাবাব আনালেই হবে। ওকে"?
ফের মাথা নাড়লাম। "ওকে"।

উপভোগ



স্যুইগি করে আনা চিকেন চাউমিন একবারে সাবাড় করে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অল্প বাঁচিয়ে ফ্রিজে রাখুন। আজ রাত্রের রেখে দেওয়া চাউ কাল বিকেলে ফ্রিজ থেকে বের করে সেই ঠাণ্ডা কড়কড়ে অবস্থায় স্ট্রেট কড়াইয়ের গরম তেলে ফেলে দিন। একটু বাড়তি পেঁয়াজ, চিরে দেওয়া কাঁচালঙ্কা আর বাড়াবাড়ি পরিমাণে এক্সট্রা ডিম দিয়ে ভেজে নিন। ওহো, ও জিনিসে আবার সস-টস চলে না, কেমন?

তারপর নেটফ্লিক্সে বহুবার দেখা কোনো প্রিয় এপিসোডের প্রিয় অংশ চালিয়ে রিসাইকেলড বাসি চাউমিনের প্লেট হাতে বসে পড়ুন। ধীরেসুস্থে খান। সে'সময় কেউ গায়ে পড়ে গালগপ্প শুরু করলে ফর্কের ইশারায় সরে যেতে বলুন। ইনকামিং কল আসলে কেটে দিন। যমদূত ডাকতে আসলে "প্লীইজ ওয়েট। জাস্ট আ ফিউ মিনিটস" বলে ঠেকিয়ে রাখুন।

উপভোগ করুন বন্ধুরা। জীবন উপভোগ করুন।

সলজ্জ নিবেদন



"আরে অকারণে আবার এইসব কেন"

"কী দরকার ছিলো বলো এত হ্যাঙ্গামা করার"

"সামান্য ডালভাতেই হয়ে যেতো তো। খামোখা এত ঝকমারি..."

"মিলেট বিরিয়ানি হয় জানিস? সে'টা এ'রকম আনহেলদি নয়"

"আনিয়েছ যখন দু'চামচ খেয়ে নেব না হয়। এমনিতে রুটি-তরকারি হলেও সোনামুখ করে খেয়ে নিতাম"

ইলিশিস্ট


ইলিশের দাম অত্যন্ত চড়া। কাজেই চোয়াল শক্ত করে, নাছোড়বান্দা আশায় বুক বেঁধে ও জিনিস কিনতে হয়। মাছ বিক্রেতার সঙ্গে সুগভীর বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে ইলিশে ইনভেস্ট করার সাহসটা একটু বেড়ে যায় বইকি। বিশেষত এই নভেম্বর মাসে ভালো ইলিশ জোটানো চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সমস্ত কিছু খাপেখাপ পড়লে এ অমৃত অতুলনীয়।

গতকাল আন্ধেরির মাছদাদার দেওয়া আশ্বাসে ভর করে আনা ইলিশটা সাধুভাষায় বললে "জাস্ট মারাত্মক"। বারচারেক রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়ার বদলে এমন হাইকোয়ালিটি ইলিশ একবার এনে তিনবেলা খাওয়া ঢের বেশি ভালো; বলাই বাহুল্য যে এ থিওরি একান্তই ব্যক্তিগত।

কালোজিরে কাঁচালঙ্কার বেগুন দেওয়া ইলিশের ঝোল, ও জিনিস দিয়ে আমি রোজকার চেয়ে অন্তত আড়াইগুণ বেশি ভাত খাই। আর সে ঝোলের পাশাপাশি আমার ডাল-ভাজা-তরকারি কিস্যু রোচে না। তবে ইলিশ দিয়ে এক থালা ভাত সাপটে খাওয়ার পর একটা মিঠেপান জমে ভালো। ঈশ্বরের আশীর্বাদ মনের মত একটা পানদাদাও জুটিয়ে নিয়েছি যিনি গুলকন্দ দেওয়ায় বাড়াবাড়ি করেন না এবং অন্যান্য মশলাও চমৎকার ভাবে ব্যবহার করেন। মাসে এক-দুবার শৌখিন পান খাওয়া, তাতে কোনোরকম কম্প্রোমাইজ বরদাস্ত করা যায় না; বিশেষত যদি সে মিঠেপান পোস্ট-ইলিশ আমেজ শান দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।

Thursday, November 21, 2024

ইমোশনাল ম্যাচুরিটি কী?

মাছের সিংহভাগ শেষ পাতের জন্য ফেলে রেখে, থালার বেশিরভাগ ভাত মাছের অক্ষত টুকরোটির দিকে তাকিয়ে শুকনো ভাবে চিবিয়ে না যাওয়া।

পেট ভরে গেলে জিভের ধার কমে যায়।

খিদের চাড় থাকতে থাকতে ভাত-মাছের কম্বিনেশন সুন্দর মাপা পরিমাণে এবং সঠিক রেশিওতে মুখে চালান দেওয়াটাই ম্যাচুরিটি।

মহানায়ক


- সত্যিই অ্যাক্টর হতে চাও?


- হিরো হতে চাই।

- স্কিল তোমার আছে বটে৷ কলজে আছে কি?

- আছে।

- দাঁতে দাঁত চেপে লেগে থাকার ক্ষমতা আছে?

- পরখ করেই দেখুন না৷

- ফেলিওর হজম করতে পারবে?

- এইভাবে হাত পেতে দাঁড়ানোটা, দোরে দোরে ঘুরে বেড়ানো; এ'টা আর যাই হোক সাকসেস তো নয়।

- চিল-শকুনে ছিঁড়ে খেতে চাইবে।

- সে'সব সামলে নেব৷ আপাতত রোলটা আমায় দিচ্ছেন তো?

- আগামীকাল স্টুডিওতে এসো৷ সে'খানে বুলুদা-সমরদারা থাকবে, একটা ফয়সালা হবে'খন...। কাস্টিং ওরাই দেখছে কিনা..।

- এক মিনিট৷ সে'টা জানি তো৷ আপাতত সামনের রোলটার কথা বলছি। এই যে আপনি দু'টো এগরোল আনিয়ে সামনে রাখলেন। একটা নিজের হাতে তুলে নিলেন। অন্যটা ঠাণ্ডা হচ্ছে তো..। তাই বলছিলাম..। রোলটা এগিয়ে দেবেন প্লীজ?

ঢাকুরিয়া, ২০১২



ঢাকুরিয়া, ২০১২।

তখন যৌবন। যৌবন মানে নির্দ্বিধায় পর পর দু'টো ডাবল এগ চিকেন রোল খেয়ে সন্ধের টিফিন সেরে ফেলতে পারি। তখনকার আকাশ বেশি নীল ছিল কিনা জানি না, কিন্তু মেজাজের জেল্লা ছিল অন্য মাত্রায়।

এই রাস্তার অন্য প্রান্তেই বেদুইনের (গড়িয়াহাটেরটা নয়) রোলের দোকান। সে'খানে রোলের মধ্যে সামান্য আলু দেওয়ার চল ছিল। খুঁতখুঁত করলেও সে রোল জিভে মন্দ লাগত না৷ এ রাস্তা ধরে খানিকটা পিছিয়ে এলে দক্ষিণাপণ শপিং কম্পলেক্সের মেনগেট, তার সামনে যে ফুচকাদাদা-বৌদি; তাঁদের ভাঁড়ারে অমৃতসম আলুর দম। উল্টোদিকের এসবিআইয়ের ব্রাঞ্চের সামনে সন্ধেবেলা এক বৌদি মোমোর ডিবে নিয়ে দাঁড়াতেন; অতি-উপাদেয়৷ এই স্টলগুলোর সঙ্গে তখন আমার সুনিবিড় আত্মীয়তা, নিয়মিত যোগাযোগ, আত্মার আদানপ্রদান। সে আত্মীয়তাই আমার যৌবনের আস্ফালন, রণহুংকার।

রেলস্টেশনের অপেক্ষা



দূরপাল্লার ট্রেন ধরার ব্যাপারে এই আমার এক সমস্যা- ঘণ্টা দেড়-দুই আগে রেলস্টেশনে পৌঁছে গিয়ে অস্থির পায়চারি৷ এ'টা এক ধরণের প্যারানয়্যাই বটে৷ যদি স্টেশন যাওয়ার পথে ট্যাক্সি বা অটোর ইঞ্জিন বিগড়ে যায়? যদি অকারণ ট্র্যাফিক জ্যামে আধঘণ্টার পথ মরুতীর্থ হিংলাজে পরিণত হয়? যদি প্ল্যাটফর্ম গোঁসা করে হাফ কিলোমিটার দূরে সরে গিয়ে চুক্কি দেয়? সে কতরকমের দুশ্চিন্তা৷

তার চেয়ে এমন সময় পৌঁছনো ভালো যখন রেলের লাল কালো ডিজিটাল বোর্ডে সে ট্রেনের আসার ঘোষণাও দেখা যাচ্ছে না৷ তার আগে অন্তত একুশবার দেখে মোবাইল ব্রাউসারে দেখে নেওয়া সে ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসবে, কোচ পোজিশনের হিসেব কী, ইত্যাদি৷ দেখেশোনা হয়ে গেলে এক পরিচিতকে ফোন করে নিতে হবে সে সে সেই স্টেশনের হালহকিকত সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল।

- হ্যালো! হ্যাঁ রে, একটা আর্জেন্ট ব্যাপার। অমুক এক্সপ্রেসটা সাধারণত কত নম্বর থেকে ছাড়ে রে?
- দু'নম্বর।
- তুই শ্যিওর?
- জন্মিলে ঘোল খাইতে হবে, শ্যিওর কে কোথা কবে৷ দু'নম্বরই হওয়া উচিৎ৷ তবে চোখ কান খোলা রাখিস ভাই৷

লে হালুয়া, চোখ কান খোলা রাখতেই যদি হয় তবে গায়ে পড়ে ফোন করছি কেন৷ যা হোক, ইন্টারনেট বলছে দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম। পরিচিত কণ্ঠ বলছে সম্ভবত দু'নম্বর৷ কুলি বা চায়ের দোকানির কাছ থেকে আর এক প্রস্থ ঝালিয়ে নেওয়া গেল যে দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মেই যেতে হবে৷ এরপর রেলের শিডিউল বোর্ডের সামনে ধীরেসুস্থে অপেক্ষা; শেষ পর্যন্ত দুই নম্বরই থাকবে তো?

ঝাড়া চল্লিশ মিনিট পর বোর্ডে ভেসে উঠবে দু'নম্বর প্ল্যাটপফর্মের আশ্বাস৷ তখন নিজেই নিজেকে বলতে হবে, "যাক বাবা৷ দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম। তবে কিছুই বলা যায় না৷ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চোখকান খোলা রাখতে হবে৷ কখন কী পালটে যায়.."।

কিন্তু এত ভ্যানতারার পরেও যখন টের পেলাম যে ট্রেন আসতে এখনও প্রায় এক ঘণ্টা মিনিট দেরী, তখন মনে হয় রেলের কোনো কর্মীকে ডেকে বলি স্টেশনেও সিকিউরিটি চেকের ব্যবস্থা শুরু করতে আর বই-বাদে-আর-সব-ফাজিল-জিনিসপত্রের ব্যাপক স্টক-সমৃদ্ধ বুকশপ খুলতে। তা'তে যদি খানিকটা সময় কেতাদুরস্ত ভাবে জলে দেওয়া যায়৷


সে উপায় যখন নেই, তখন খাবারদাবারের দোকান জরীপ করে সময় কাটাতে হয়৷ সে'দিক থেকে ভাজাভুজির স্টলের বর্ণে-গন্ধে সুরাট রেলস্টেশনের লাগোয়া বাজার আর সে স্টেশনের দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম হতাশ করেনি। বিকেল আর সন্ধের মাঝামাঝি সময়, এ সময় প্রায় বেশির ভাগ দোকানেই তেলেভাজার নতুন লট কড়াইয়ে পড়ছে৷ ধোকলা-টোকলা আছে বটে, তবে এ'অঞ্চলে অন্তত দেখলাম হট কচুরিজের মত বিক্রি হচ্ছে হট কচুরিজ এবং হট শিঙাড়াজ (সামোসাজ বলা উচিৎ বোধ হয়)। এ'ছাড়া রয়েছে বড়াপাও পকোড়া গোছের জিনিসপত্র৷ ভাজাভুজির মনোরম গন্ধে ভেসে ভেসে দিব্যি কেটে গেলো মিনিট চল্লিশ৷ ট্রেন এ'বার আসবে৷ দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মের আশ্বাস টিকে আছে কিনা সে'টা এইবেলা আরেকবার যাচাই করে নেওয়া দরকার৷

হাফপ্লেট



বছর সাতেক পুরনো ছবি, কলকাতায় তোলা৷ কোন অঞ্চল সে'টা সঠিক মনে পড়ছে না, সম্ভবত যোধপুর পার্কের আশেপাশে৷

যা হোক, এই ফর্ম্যাটের রোল-চাউমিনের দোকান কলকাতার রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে৷ রোলের মধ্যে পাওয়া যাবে এগ, ডবল এগ, এগ চিকেন, ডবল এগ চিকেন আর ডবল এগ-ডবল চিকেন৷ মাটন রোল পাওয়া গেলে বুঝতে হবে এ দোকান একটু উঁচু স্তরের৷ চাউমিনের মধ্যে পাওয়া যাবে ভেজ, এগ, চিকেন আর এগ চিকেন৷ আবার এ'টা উঁচু স্তরের দোকান হলে ডিম-মুর্গির সঙ্গে কুচো চিংড়ি দেওয়া মিক্সড চাউমিনও পাওয়া যাবে। উপরি থাকবে কাচের শোকেস আলো করা চিকেন পকোড়া আর স্টিলের গামলায় রাখা চিলি চিকেন যে'টা পিস হিসেবে বিক্রি হয়।

এ'সব দোকানে আমার পছন্দ হলো গিয়ে চাউমিন; হাফপ্লেট কিন্তু ডবল ডিম দেওয়া৷ স্টিলের প্লেটে চাউমিনের ঢিপি ঘেঁষে দু'টো বিটনুন ছড়ানো চিকেন পকোড়া, যে'গুলো চাটুতে আর একবার সেঁকে তারপর প্লেটে দেওয়া হয়েছে৷ চাউমিনের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হবে চিলিসস, টমেটো সস আর পেঁয়াজ-লঙ্কাকুচি৷ আর সবার ওপরে পড়বে, স্পেশাল রিকুয়েস্টের মাধ্যমে আদায় করে নেওয়া চিলি চিকেনের গ্রেভি৷

এত রাত্রে এ'সব ভেবে জিভ জলে টইটম্বুর। বিস্কুট-চানাচুর ছাড়া আর কোনো গতি নেই৷ কাজেই মন-মেজাজ মারাত্মক উদাস হয়ে পড়েছে৷ ভয় হচ্ছে খসখস করে দু'চারটে কবিতাফবিতা না লিখে ফেলি।

Tuesday, July 16, 2024

শক্তিগড়ের ডিমপাউরুটি



এ'টা বছর আট-নয় আগে তোলা ছবি৷ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ওপর, শক্তিগড়ে৷ ল্যাংচার পীঠস্থান হলেও, ওই এলাকায় আমি গাড়ি দাঁড় করাতাম এক প্লেট ডিমরুটি আর কফির জন্য৷ অবশ্য মাঝেমধ্যে যে শিঙাড়া নেওয়া হত না তা নয়।

ডিম-পাউরুটি খাওয়ার সবচেয়ে উপাদেয় অংশটা হলো সে'টা বানাতে দেখা৷

১। ডিম ফাটিয়ে ছোট স্টিলের মগে নিয়ে নেওয়া।

২। তারপর পেঁয়াজকুচি লঙ্কাকুচি তুলে সেই গেলাসে ফেলে ঘুটঘুট করে নেড়া নেওয়া। এই পর্যায় অব্যর্থ ভাবে আমি একটু আব্দারের সুরে সামান্য বাড়তি পেঁয়াজকুচি দিতে বলব৷

৩। ও'দিকে বহু-ব্যবহারে খানিকটা জীর্ণ এবং সামান্য ত্যাড়াব্যাঁকা চাটুতে ততক্ষণে স্প্রাইটের বোতল থেকে ঢেলে নেওয়া সর্ষের তেল গরম হচ্ছে।

৪। তেল গরম হয়ে গেলেই ফেটানো ডিম ডাইরেক্ট চাটুতে পড়বে; সেই চড়চড়াৎ শব্দ যে কী মোহময়।
৫। এরপর হলুদ কাগজের মলাট খুলে বেরিয়ে আসবে লম্বাটে পাউরুটি৷ ছুরি দিয়ে মাথার দিকে কালো অংশটা ছেঁটে দেওয়া হবে৷

৬৷ তারপর দু'ফালি পাউরুটিকে চাটুতে ভাজা হতে থাকা ডিমের ওপর রাখা হবে৷

৭৷ মিনিট খানেক পর কাগজের প্লেটে সে ডিম পাউরুটি নামিয়ে নেওয়া হবে৷

৮। এরপর ছড়ানো হবে মশলা; এ'টা সাধারণত হত ওই চাটমশলা আর গোলমরিচ মেশানো একটা ব্যাপার।

৯। সবার শেষে একটা মারাত্মক স্ক্যান্ডালাস ব্যাপার ঘটবে। কুমড়ো গোলা লাল রঙ মেশানো সসকে টমেটো সস বলে চালানো হয়, সে কথা ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি৷ সে'টার স্বাদ আমার খুব একটা পছন্দসইও নয়৷ তবে কী অদ্ভুত ব্যাপার, ডিমপাউরুটির ওপর সেই সস ছড়িয়ে খেতে দিব্যি ভালো লাগে৷ ডিম পাউরুটির ওপর 'টমেটো সসে'র বোতল ঝাঁকিয়ে কয়েক ফোঁটা লাল ফেলে দেওয়া; মাস্টারস্ট্রোক।

১০। এরপর হাতের ওপর কাগজের প্লেটের উষ্ণতা অনুভব করা আর নাকে সর্ষের তেলে ভাজা ডিম আর সেঁকা পাউরুটির সুবাস৷

খাওয়া তো ছোটখাটো ব্যাপার, খাওয়ার আগের এই যে 'প্রসেস'; ও'টাই মূল উৎসব৷

ইতিহাস আর ডিমের বড়ার ঝোল



ইতিহাস ব্যাপারটা তো শুধু রাজা-রাজড়া, নেতা-নেত্রী, যুদ্ধ-বিগ্রহ বা কেল্লা-প্রাসাদে আটকে রাখলে চলবে না৷ আমাদের মত আতিপাতি মানুষের আশেপাশেই কত জরুরী ইতিহাসের মলিকিউল ভাসছে; অথচ সে'গুলোর ওপর মাইক্রোস্কোপ ধরার কেউ নেই।

এই যেমন ধরুন এই ডিমের বড়ার কষানো ঝোলের রেসিপি। এ জিনিস রান্না করে বহু খাইয়ে-মানুষের মন জয় করেছে মা৷ আমরাও মাঝেমধ্যেই আবদার করি মায়ের কাছে, "আজ ওই ডিমের বড়ার ঝোলটা রাঁধবে মা প্লীজ"?

এই রেসিপিটা মা আয়ত্ত করেছে দিদার থেকে। দিদার চার ছেলেমেয়ে, মা সবার বড় আর মায়ের তিন ভাই৷ দাদু অল্প মাইনের স্কুল-মাস্টার, অতএব ছেলেবেলায় মায়েরা দেখেছে নিদারুণ অভাব-অনটনের সংসার। দাদু স্কুলের কাজে গোটাদিন পরিশ্রম করছেন, সন্ধেবেলা গুটিকয় টিউশনি। ও'দিকে সংসারের যাবতীয় কাজকর্মের দায় ঠেলে চারজন পিঠোপিঠি ছেলেমেয়েকে সামাল দেওয়ার দায় সমস্তই দিদার কাঁধে৷ অতএব দিদার কাছে সময় ও অর্থ; দু'টোরই বিস্তর অভাব ছিল।

এ অবস্থায় এই ডিমের বড়ার কষানো ঝোল ছিল দিদার হেঁসেলের তুরুপের তাস। তিনটে ডিম ভেঙে, আলুসেদ্ধর সঙ্গে মিশিয়ে মেখে যে পরিমাণ বড়া ভাজা যেত; তা দিয়ে অনায়াসে ছ'জনের একবেলার খাওয়া হয়ে যেত৷ পাতে আমিষও পড়লো, আবার কষানো ঝোলের স্বাদের চোটে অনায়াসে থালা-থালা ভাতও উড়িয়ে দেওয়া গেল৷ সবচেয়ে বড় কথা, মাছের ঝোলের তুলনায় এ ঝোল রাঁধতে-বাড়তে সময়ও অনেক কম লাগে৷

দিদা নেই৷ অভাব-সামাল দেওয়ার ফর্মুলা হিসেবে এই রেসিপির পরিচয়টা আমাদের চোখে এখন ফিকে হয়ে গেছে৷ এ'টা এখন আমাদের খাওয়ার টেবিলে মাঝেমধ্যে উঁকি মারে 'ডেলিকেসি' হিসেবে। কিন্তু এই পদটার সুবাস রীতিমত এক টুকরো ইতিহাস; সে'খানে মধ্যবিত্তের গ্রাসাচ্ছদনের জন্য সংগ্রাম আছে, ষাটের দশকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির রেশ আছে। আর আছে আমার দিদা - আমার ঝাপসা ইতিহাস-বোধে যে মানুষটার গুরুত্ব কোনো দিগ্বিজয়ীর চেয়ে কম নয়৷

সহদেবের তৃপ্তি



- আলুর চপ৷ চারটে।

- দিচ্ছি।

- মুড়ি আছে?

- আছে৷ দেব পাঁচটাকার?

- দিন।

- লঙ্কা?

- না৷ গরম চপের সঙ্গে জিভে ঝাল সয় না৷

**

বেঞ্চিতে বসে চপে কামড় দিয়ে তৃপ্তিতে চোখ বুঝলেন সহদেব৷ নাহ্, চপদাদাটি ভালোই ভেজেছেন। কয়েকমুঠো মুড়ি পেটে যেতে বেশ খানিকটা স্বস্তি বোধ করলেন। সেই ভোরের দিকে একটা পেয়ারা জুটেছিল। গোটাদিন পর সন্ধেবেলা এসে এই চপমুড়ি, পেটে এক্কেবারে ছুঁচোয় ডন দিচ্ছিল।

তার হাঁকুপাঁকু অবস্থা আঁচ করতে পেরেই বোধহয় চপদাদা জিজ্ঞেস করলেন, "আর একটু মুড়ি দেব নাকি..না না..টাকা লাগবে না"। বিগলিত হাসি নিয়ে ঠোঙাটা এগিয়ে দিলেন সহদেব, চপদাদা বাড়তি এক দোনা মুড়ি ঠোঙায় ঢেলে দিলেন।

মুড়ি শেষ করে সবুজ প্লাস্টিকের জগ থেকে ঢকঢক করে অনেকটা জল খেয়ে নিলেন সহদেব৷ তারপর চপ-মুড়ির দাম মিটিয়ে পরম তৃপ্তি নিয়ে গুমটির সেই বেঞ্চে বসেই একটা বিড়ি ধরালেন।

"চা খাবেন"? চপদাদা শুধোলেন।

"খাওয়াবেন কি? আমার পকেটে আর চায়ের টাকাও নেই কিন্তু", সহদেবের মুখে তখন সরল হাসি।

"সে আমি বেশ আন্দাজ করেছি। চা আমি বিক্রি করি না৷ একটা সসপ্যান আছে সে'টা নিজের জন্যই৷ এখন আর কোনো খদ্দের নেই যখন...আপনি চাইলে না হয় আপনার জন্য আর এক কাপ.."।

"বেশ তো। এক কাপ চা পেলে ভালোই হয়"।

"লাল চা। দুধ নেই"।

"তোফা, চপের পর দুধ-চায়ে অম্বল হত"।

বিড়িতে একটা মোক্ষম টান দিয়ে গুমটির দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বুঝলেন সহদেব৷

সসপ্যানে চায়ের জল বসিয়ে বেঞ্চিতে হেলান দিয়ে বসা আগন্তুকটির দিকে মুগ্ধ হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন চপদাদা৷ বড় খিদে বয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল নির্ঘাৎ। চেহারা দেখেই মনে হয় গোটাদিন রোদ্দুরে টোটো করে ঘুরে বেরিয়েছে৷ চোখ-মুখ কেমন বসে গেছে। বাড়তি মুড়ি আর এক কাপ চা অফার করে বেশ তৃপ্তি বোধ করলেন চপদাদা৷ নাহ্, মন দিয়ে চা বানাতে হবে।

ও'দিকে সহদেব টের পাচ্ছিলেন যে পেটের আগুনটা নিভে যাওয়ায় একটা আরামদায়ক ঝিমুনি এসে দেহে দোলা দিয়েছে৷ চপদাদার চায়ের অফারটা ফিরিয়ে দেওয়া গেল না, সন্ধ্যেবেলা চপমুড়ির পর লাল-চা পেলে কী ভালোই না লাগে। একটা মৃদু অপরাধ বোধও সহদেবের মনের মধ্যে কুটকুট করছিল বটে, পাশাপাশি সামান্য একটু আনচান৷ চায়ের লোভে একটু রিস্ক নেওয়া হয়ে গেল৷ চোখটা সামান্য খুলে সহদেব দেখে নিলেন যে চপদাদাভাইয়ের যত মনযোগ চায়ের সসপ্যানের দিকে।

নাহ্, এই আলস্য আর চায়ের লোভ ত্যাগ করে হুড়মুড় করে বেরিয়ে যাওয়ার মানে হয় না। চপদাদাটি বড্ড ভালোমানুষ। সহদেব নিশ্চিত যে চা শেষ করে দোকান থেকে বেরিয়ে স্টেশন পৌঁছে না যাওয়া পর্যন্ত চপদাদা টের পাবেন না যে চপ ভাজার সময়ই সহদেব তার ক্যাশবাক্স সাফ করে দিয়েছে।

ডিসিপ্লিন



আমি মিষ্টির দোকানের কাচের শোকেসের সামনে রোজ সন্ধেবেলা দাঁড়াতে চাই; এই মিনিট পাঁচ-দশেকের জন্য৷ দাঁড়ালেই যে হামলে পড়ে মিষ্টি কিনতে হবে তা নয়৷ অত মিষ্টি রোজ পেটে ঢাললে এ ভেজালপুষ্ট শরীর অচিরেই ভেঙেচুরে পড়বে৷ তবে অমন সৌন্দর্য প্রাণভরে দেখলে আর মনভরে উপভোগ করলে শরীর ও মন দুয়েরই উপকার৷

কেউ ছোট কাগজের বাক্সে কুড়ি টাকার গুজিয়া নিয়ে সরে পড়ছে৷ কারুর হাতে দোকানি ঢাউস পাত্রে চল্লিশ পিস রসগোল্লা তুলে দিচ্ছেন৷ আবার কেউ এসে খোঁজ করছেন পরের লটে শিঙাড়া কখন ভাজা হবে; গরম গরম শিঙাড়া এক ডজন নেবেন তিনি৷

আমি সেই স্বপ্নের দুনিয়াটা রোজ একবার ছুঁয়ে আসতে চাই৷ ও'টা আমার মেগাসিরিয়াল দেখার বদঅভ্যাস হবে অথবা সন্ধ্যা-আহ্নিকের ডিসিপ্লিন৷