Showing posts with label ভালো থাকার টোটকা. Show all posts
Showing posts with label ভালো থাকার টোটকা. Show all posts

Sunday, March 16, 2025

এমার্জেন্সি ফান্ড



সুমন্তবাবুর ঘুম ভাঙলো সকাল সোয়া সাতটা নাগাদ। অফিসের জন্য রোজ সাড়ে ছ'টায় না উঠলে চলে না কিন্তু আজ রোব্বার, এই দিনটায় বাড়তি গড়িমসি চলতেই পারে। নীলা আর বুবুন হয়তো আরো মিনিট পনেরো-কুড়ি পরে উঠবে। ততক্ষণে সুমন্তবাবু ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে সোফায় এসে বসছেন। খবরের কাগজের ওপিনিওন সেকশনটার প্রতিই তাঁর যাবতীয় আগ্রহ। সে'খানে খানদুই প্রবন্ধ পড়ে-টড়ে চার্জার সরিয়ে মোবাইল হাতে নিলেন।

অনিল আর চন্দন ব্রাঞ্চ খাওয়ার জন্য ডেকেছে; জমজমাট আড্ডা হবে। কোস্টাল স্পাইস বলে একটা রুফটপ রেস্টুরেন্ট খুলেছে, সীফুড সে'খানকার স্পেশ্যালিটি, বিয়ার-টিয়ারও পাওয়া যায়। আড্ডাটা ভালোই জমবে, কিন্তু রেস্টুরেন্টের মেনুটা জোম্যাটোয় দেখে নিজের মাথা চুলকে মৃদু হাসলেন সুমন্ত। ঝটকা মেরে খরচ করাই যায়, কিন্তু সুমন্ত জানেন যে মাথার মধ্যে একটানা হিসেব চললে আড্ডা আর ব্রাঞ্চ কোনোটাই জমবে না। এর চেয়ে বরং পরের হপ্তায় দু'জনকে বাড়ি ডেকে নেওয়া যাক। কফি-পকোড়ার সঙ্গেও দিব্যি আড্ডা জমানো যায়। তা'ছাড়া ওল্ডমঙ্কের ব্যবস্থাও করা যাবে। পত্রপাঠ হোয়্যাটস্যাপে অনিল আর চন্দনকে বলে দিলেন যে আজ হচ্ছে না, পরের শনিবারের নেমন্তন্নও জুড়ে দিলেন। সুমন্ত জানেন যে মার্চের পর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের চাপ একটু কমবে। তখন না হয়ে একটা হঠকারী ব্রাঞ্চ সেরে ফেলা যাবে অনিল আর চন্দনের সঙ্গে।

এরপর পায়ে কেডস গলিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সুমন্তবাবু। ঘাম ঝরানো দ্রুততায় পাঁচ কিলোমিটার হন্টন। শেষ জানুয়ারির সকাল, রোদ্দুরে তেজ নেই, হাওয়ায় অল্প শীত। হাঁটা শেষ করে সবজি-বাজার ঘুরে যখন বাড়ি ফিরলেন ততক্ষণে বুবুনের ব্রেকফাস্ট হয়ে গেছে। বাপ-ব্যাটার একটা রবিবাসরীয় অঙ্কক্লাস বসে। থ্রি-তে পড়া বুবুন এখন ফ্র্যাকশন আর পার্সেন্টেজ নিয়ে ধ্বস্তাধস্তি শুরু করেছে, সুমন্ত বুবুনের অঙ্ক-কুস্তির কোচ। অঙ্ক করা শেষ হলে বুবুন গেল খেলতে আর সুমন্তবাবু বসলেন গল্পের বই নিয়ে।

নীলা বেলার দিকে এক কাপ চা খায়। নীলার চায়ে চুমুক, সুমন্তর গল্প পড়া আর দু'জনের খোশগল্প একই সঙ্গে এগিয়ে যায়। সেই গল্পে একটা জবরদস্ত ইভিনিং আউটিংয়ের প্ল্যান হলো। সিনেমা, থিয়েটারের পপকর্ন আর নাচোস, ফেরার পথে পিজ্জা আর ঘরে ঢোকার মুখে ডার্ক চকোলেট আইসক্রিম। দু'জনে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলো প্ল্যানটা আর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নিয়ে খুব একচোট হাসাহাসি করে সে প্ল্যান বানচাল করলে। নীলা সুমন্ত দু'জনেই জানে এ'টা অভাব নয়, এ নিয়ে গলা শুকোনো অন্যায়। তবে পপকর্ন পিজ্জাকে টেক্কা দিতে প্ল্যান হলো বিকেলে পেঁয়াজি ভাজার, ওই জিনিসটা বুবুনের সবিশেষ প্রিয়। ডিনারে মুর্গির ঝোল না করে সুমন্তত স্পেশ্যাল চিলি চিকেন আর নীলার সেই দুনিয়াজয় করা এগ-সেজওয়ান ফ্রায়েড রাইস। অবশ্য একটা 'লাক্সারি' রাত্রের নতুন প্ল্যানে ঢুকেই পড়লো। ডিনারের পর স্কুটারে চেপে মিষ্টি পান খেতে যাওয়া। সুমন্তবাবু নিশ্চিত যে মার্চের পর যখন ফিনান্সিয়াল সিচুয়েশনটা একটু বাগে আসবে, তখন এই সিনেমা-নাচোস-পপকর্ন-পিজ্জা-আইসক্রিম প্ল্যানটা একদিন দিব্যি এক্সেকিউট করা যাবে। সুমন্তর মাথায় সে অঙ্কটা স্পষ্ট ছকে রাখা আছে।

দুপুরে অবশ্য শনিবারের রান্না ট্যাংরার ঝালই ক্যারি ফরওয়ার্ড হয়েছিল। তার সঙ্গে 'উম্ফ-ফ্যাক্টর' হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল আলু ফুলকপি ভাজা আর ডিমের মামলেট। খাওয়া শেষ করে ফের সুমন্তর গল্পের বইয়ে ডাইভ, এইসময়টায় আর কোনো গল্প নয়। এই ঘণ্টাখানেক গল্পের বইতে ডুবে থাকাটাই সুমন্তর যোগনিদ্রা। দুপুর তিনটে নাগাদ অফিসের কিছু খুচরো কাজ নিকেশ করার জন্য ল্যাপটপ খোলা, বড়জোর একঘণ্টা কিন্তু এতে সোমবারের সকালটা একটু কম হুড়মুড়িয়ে কাটে। কাজ শেষ হলে আমাজনে ঢুকে কার্টটা দেখলেন। নীলা বেশ কিছু পছন্দের জিনিস কার্টে সাজিয়ে রেখেছে; বুবুনের জন্য কিছু দামী বই, ঘর-সাজানোর জিনিস, এইসব। মার্চের পর এগুলো আনানো যাবে'খন।

বিকেলের কফি-পেঁয়াজি খেয়ে আর এক রাউন্ড হাঁটতে বেরোনো, ফের পাঁচ কিলোমিটার মত, তবে এ'বার দুলকি চালে। কানে ইয়ারফোনে একের পর এক গজল। ফিরলেন যখন তখন সন্ধে সাতটা। নীলার মুখে সামান্য চিন্তা, সে'টা সহজেই আঁচ করতে পারেন সুমন্ত। নীলা জানালে দীপক ফোন করেছিল, নীলার পিসতুতো দাদা। সে একটা বিশ্রী বিপদে পড়েছে, বেশ কিছুটা টাকার দরকার। নীলার আর সুমন্ত মুখোমুখি বসে বেশ খানিকটা হিসেব করলেন। দীপকের বিপদটা সাজানো নয়, সত্যিই টাকার দরকার। নীলা-সুমন্তর একটা এমার্জেন্সি ফান্ড আছে, সে'টা দিয়েই এ যাত্রা দীপককে উতরে দেওয়া যাবে।

নীলা শুধু একবার মৃদুস্বরে প্রশ্ন করলো, "তুমি শিওর তো"? সুমন্ত উত্তমকুমারের স্টাইলে হাসার চেষ্টা করলে যে'টা করলে তাঁকে দেখে যে কেউ হেসে ফেলবেই, নীলাও হেসে ফেললো। সুমন্ত বুঝলেন যে অনিল-চন্দনের সঙ্গে ব্রাঞ্চ, সিনেমা-পিজ্জা আর আমাজনের কার্ট পরিষ্কার এই মার্চেও হচ্ছে না। অঙ্ক বলছে আগামী জুলাইয়ের আগে সে'দিকে বিশেষ সুবিধে করা যাবে না। তবে এর চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, বুবুনের অঙ্কের ভয় আর সুমন্তর বাড়তি ওজনটা ক্রমশ কম চলেছে। হেমন্তের একটা সুপারহিট গান গুনগুন করতে করতে রান্নাঘরে ঢুকলেন সুমন্ত; হাইক্লাস চিলি চিকেন বানাতে হবে তো।

ফুলসুতলি


- ও পিসে। চলো, সবাই বাসে বসে পড়েছে যে। এখুনি রওনা না দিলে ফুলসুতলি ফলসের ওদিককার ফ্যান্টাস্টিক সানসেট মিস করে ফেলব যে।
- তোরা এগো। আমি এ'খানে আছি।
- যাচ্চলে। তা হয় নাকি। ওঠো এ'বার।
- হব না কেন? বুড়ো দামড়া মানুষ একজন বলছে যে সে যাব না। তা না হওয়ার কি আছে?
- এদ্দূর এসে তুমি ফুলসুতলির সানসেট দেখবে না? বাবা বলে সে'টা নাকি এথিরিয়াল।
- আমি ভোলা টী স্টলের বেঞ্চিতে শুয়ে ওই গাছের পাতার দুলুনি দেখব। ভোলা বাবাজি বলেছে সে আমায় অনবরত ডিম ভেজে দেবে। কফির ব্যবস্থা নেই তবে হাইক্লাস লিকার চায়ের সাপ্লাই দেবে। তোরা বিদেয় হলে বাঁচি।
- কোথায় ফুলসুতলি আর কোথায়..।
- ফুলসুতলি ভোরবেলা পৌঁছতে হয়। ও'খানে হুজুই নামের একটা অবস্কিওর নদী আছে। তার পাশে মাদুর পেতে বসে কলা-মাখনটোস্ট-ডিমসেদ্ধ খেতে হয়। ফুলসুতলির পিছন দিকে মাতালমাথা শালবনে হাঁটাহাঁটি করতে হয়। বেলা বাড়লে ফুলসুতলিতে স্নান। দুপুরে চাট্টি ভাতেভাতের ব্যবস্থা করতে হবে। কাঠের আগুনের ওপর মাটির হাঁড়ি, চাল সেদ্ধ হতে হতে প্রায় বিকেল। সে সেদ্ধভাত খেয়ে ফুলসুতলির পাশ ঘেঁষা টিলা দিয়ে সাবধানে উঠে যেতে হবে। তারপর আসবে একটা ভ্যিউপয়েন্ট, যৌবনে এসে সে জায়গার নাম আমি দিয়ে গেছি। আলোগান পয়েন্ট। সূর্য ডুববে, অল্প শীত। শরীরে ক্লান্তি থাকবে না অথচ একটা মিষ্টি অবসন্ন ভাব।
- সর্বনাশ করছে মামা। ফুলসুতলি ফলসে আধঘণ্টা কাটিয়েই এগোতে হবে। রাত হওয়ার আগে হোটেল না ফিরলেই নয়। মেজকাকু আগে থেকে পকোড়া অর্ডার করে রেখেছে। জ্যেঠিমার হটওয়াটার ব্যাগে রিফিল দরকার। বুল্টিদি হোটেল লনে অন্তাক্ষরী খেলার ব্যবস্থা করে রেখেছে।
- চোখের সামনে থেকে দূর হয় যা ভটকাই।আমার ভোলার পবিত্র মন তোদের মত ধান্দাবাজ টুরিস্টদের পাল্লায় পড়ে যেন বিষিয়ে না যায়। যা যা! তোদের বাস বিদেয় না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার ট্র্যাভেল এঞ্জয় করতে পারছি না।

ল অফ সন্ধে


ল অফ সন্ধে।
যে কোনো শহর, তার যে কোনো প্রান্তে,
সন্ধে মানেই তাতে বাড়িফেরার গন্ধ মিশে থাকবে।
ট্রেনেবাসে বাদুড়ঝোলা মানুষ,
অফিসটাইমের পথেঘাটে জেরবার মানুষ;
কে কোথায় নিজের বাড়ি ফেলে রেখে এসেছে তার ঠিকঠিকানা নেই, তাদের সহায়সম্বল বলতে শুধুই একটা কেজো বাসা। তবে তাতে বাড়ি ফেরার গন্ধ উবে যায় না। ছোটবেলার পাড়ার অলিগলি, ইয়ারবন্ধুদের গল্পগুজব, মাঠের ঘাসের ওপর পাতা হাওয়াই চটি, চৌবাচ্চার পাশের পিছল মেঝেতে হাত-পা ধোয়া; এরকম আরও কয়েকশো টুকরোর জিগস পাজল অফিস সন্ধের প্ল্যানচেটে ফেরত আসে।
ভূত সত্যি নয় বলে যেমন মিথ্যে হয়ে যায় না, রোজ সে ছোটবেলার বাড়ির ছবি মনের মধ্যে ভেসে না উঠলেও বাড়িফেরার গন্ধটুকু তো মিথ্যে নয়। প্রত্যেক সন্ধেবেলা সে গন্ধের ভূত আমাদের চারপাশে ঘুরঘুর করে। ভিড়ে, হুল্লোড়ে পাশে থাকে। সে গন্ধই ক্রমশ ছাপোষা মানুষকে তার শ্রেষ্ঠ রণহুংকার চিনিয়ে দেয়; "একদিন ঠিক বাড়ি ফিরব"।

Thursday, November 21, 2024

ফুলবাবু ফুলবিবি



ফুলদাদা,
ফুলপিসি,
ফুলকাকু,
ফুলমামি;
ডাকের মানুষদের কর্তব্য ছোটদের লাই দিয়ে মাথায় তোলা৷ এরা গরমের দুপুরে কাঠি-আইসক্রিম স্মাগল করে বাড়িতে আনবেন। তারপর বিকেলবেলা সর্দিজ্বরের দাওয়াই হিসেবে মারাকাটারি ঝাল ফুচকা খাওয়াবেন৷ এগরোলে পেটখারাপ সারে এ আশ্বাস যোগাবেন। বাবা-মায়ের বকুনি থেকে আড়াল করে অরণ্যদেব পড়াবেন৷ পরীক্ষার দিন দুই আগে ছাতে ফিস্টির প্ল্যান করে বাড়ি মাথায় তুলবেন। প্রেম ভাঙার গল্প শুনে "আহা উঁহু" করবেন৷ ভালোবাসবেন, গোল পাকাবেন। ছোটদের খানিকটা বখিয়ে দিয়ে মজবুত করবেন।

ফুলবাবু-বিবিরা তাই অত্যন্ত জরুরী।

ঘোরা



"এইবেলা ঘুরতে বেরোন৷ আজই, এখুনি! বিদেশবিভুঁইয়ে পাহাড়ে সমুদ্রসৈকতে মরুভূমিতে নিজের পদচিহ্ন রেখে আসুন৷ টাকাপয়সা আজ গেলে কাল ফিরে আসবে কিন্তু নষ্ট-সময় আর ফিরবে না"৷
কিঞ্চিৎ সন্দেহ হচ্ছে যে কথাটা ডাহা গুল।

'টাকাপয়সা আজ গেলে কাল আসবে' স্লোগানটার থেকে বোধ হয় গা বাঁচিয়ে চলাই ভালো৷ শ্রী শ্রী টাকাপয়সা মারাত্মক চালিয়াত; "এই দু'মিনিটে আসছি" বলে বিশ বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকা চিজ তিনি। কাজেই বয়সকালে কমা মেডিক্লেমের ব্যথা গুলমার্গের বরফের স্মৃতি ঘেঁটে কমবে বলে মনে হয় না৷

ঘুরতে বেরোনো অতি চমৎকার ব্যাপার। জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ যে তা'তে হয় সে'কথা অনস্বীকার্য। গল্পের ভাঁড়ার স্ফীত হয়। মন চওড়া হয়৷ সবচেয়ে বড় কথা; বন্ধু জোটে৷ তবে ভাবগতিক যা বুঝছি, তার জন্য সামান্য হিসেব কষে আর বাজেট মেপে এগোনোই ভালো।

সময় চলে যাচ্ছে অথচ অরোরা বোরিয়ালিস দেখা হলো না বা কলোম্বোয় বসে চিংড়ি চেবানো হলো না বলে ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে এসআইপি ডকে তুলব, সে রোম্যান্টিক ফাঁদে পা না দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছি৷ বিশেষত গো-লিভ-ইওর-লাইফ এক্সপিরিয়েন্স দাদা-দিদিদের ফিলোসোফি টিউশনি থেকে তফাতে থাকছি।

এক পিস গ্র্যান্ড ভ্যাকেশনিও পোলাও-মাংসের লোভ যেন ইচ্ছমত পুরী-ভ্রমণের দুধ-ভাতকে ভুলিয়ে না দিতে পারে - এই হলো মনের কথা৷

Tuesday, July 16, 2024

তিনপান



- তিনটে মিঠে পান। বিউটিফুলি বানিয়ে দিন দেখি।

- মুড়ে দেব তো?

- না না৷ খাবো।

- আপনি তো একা।

- আমায় দেখে একা মনে হয়৷

- আদতে একা নন?

- এই ইয়ারফোন দেখেছেন তো? হ্যারি পটারের অডিওবুক শুনছি৷ হ্যাগ্রিডের আস্তানায় হ্যারি আর রন বসে খেজুর করছে, হাইক্লাস আড্ডা। মুখে মিনিমাম তিনটে পান না থাকলে সে জমায়েতে ঠিক পার্টিসিপেট করতে পারব না।

- কিছুই বুঝলাম না৷ অবশ্য বুঝে কাজও নেই৷ তবে একসঙ্গে তিনটে পান, মুখে আটবে?

- মাগলদের মুখে ধরবে না৷ কিন্তু আমার ব্যাপারটা আলাদা৷

- দাদা, আপনার পানগুলো একটু বাড়তি যত্ন নিয়ে বানাবো। খেয়ে দেখবেন, মাখন এক্কেবারে৷

- আলবাত। "একটু বাড়তি যত্ন"; ম্যাজিকের আসল রহস্য তো ও'টুকুই। হোক ভায়া, হোক।

Sunday, January 14, 2024

ব্যাটম্যান



ছাতা হাতে নয়৷
ব্যাগ পিঠে নয়৷
এমন কী ছড়ি হাতেও নয়৷
ভদ্রলোক একটা আস্ত ব্যাট নিয়ে বাড়ি-অফিস-বাড়ি যাতায়াত করেন, নিয়মিত। 

ব্যাট নিয়ে যাতায়াত করার রকমারি সুবিধে।

১। বাসস্টপের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাঝেমধ্যে মাথা ঝুঁকিয়ে একমনে রাস্তার পিচ ঠুকঠাক করর নেওয়া যায়৷ সে'ভাবেই তিনি মনের রাশ টেনে রাখেন৷

২। অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে দু'একটা শ্যাডো শট খেলা যায়; বেশি মারকুটে কিছু নয়, ব্যাট স্যুইং বেশি হলে আশেপাশের মানুষজনের অসুবিধে।  এইসব শ্যাডো ডিফেন্স বা নিখুঁত লেগ-গ্লান্সে মেজাজের চনমন বজায় রাখা যায়৷

৩। ট্রেনের দরজার কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ানোর সময় ব্যাটটা কাঁধে গদার মত নিয়ে দাঁড়াতে পারলে বুকে বাড়তি বল পাওয়া যায়৷ ব্যাটের সুইটস্পট বুকের যত কাছে, ততটাই দাপট নিয়ে চোয়াল শক্ত রাখা যায়৷

৪। সব চেয়ে বড় কথা বাড়ি ঢোকার সময় পায়ের আগেও চৌকাঠ পেরোয় ভদ্রলোকের ব্যাট৷

শুধু ব্যাট তুলে স্টেডিয়ামের অভিবাদনে সাড়া দেওয়ার ভঙ্গীমায় বাড়ি ফিরে ব্যাট তুলে "আমি ফিরে গেছি" বলাটাকে গিন্নী "বাড়াবাড়ি কোরো না" বলায় সামান্য চেপে যেতে হয়।

**

(ছবিটা এক লহমার। কিন্তু সে ছবিতে ভর দিয়ে নিজের কল্পনায় এমন একটা রূপকথার মানুষকে গড়ে নিতে বেশ লাগে)।

Sunday, December 31, 2023

ভোলার হিল্লে



- উফ! এদ্দিন কম ভোগাওনি মাইরি..। তিন হপ্তা ধরে চুক্কি দিয়ে কেটে পড়ছো। এ'বারে পেয়েছি! খেল খতম...পয়সা হজম..।
- ট্রিগার সত্যিই টেনে দিবি ভোলা?
- অ্যাডভান্স দশ লাখ পকেটে। বাকি দশ তোমার লাশের ছবি হোয়্যটাস্যাপ করার পর আমার বাড়ি পৌঁছে যাবে।
- দ্যাখ ভোলা, ফিনান্সিয়াল ডিটেলস চট করে অমন খুলে বলতে নেই।
- শাটাপ!
- আর তুই সত্যিই দশলাখ পকেটে নিয়ে ঘুরছিস? ও'টা পকেট না থলে?
- আরে "পকেটে টাকা" তো কথার কথা৷ মালকড়ি হাতে পেয়ে গেছি৷ এই আর কী৷
- আমার যে বড় ইচ্ছে ছিল অনেকদিন বাঁচব।
- অমন ইচ্ছে সবারই থাকে৷ তবু কত লোকে টুপটাপ বাসচাপা পড়ছে, দু'দিনের জ্বরে টেঁসে যাচ্ছে..।
- তা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা ভোলা, আমি তো বিসনেসম্যান৷ আমি তোকে যদি কুড়ির বদলে তিরিশ লাখ দিই?
- এ লাইনে একবার টাকা নিয়ে কথার খেলাপ করলে আর দেখতে হবে না..।
- তা অবশ্য ঠিক৷ সেল্ফ রেস্পেক্ট আর বিসনেস এথিক্স জলাঞ্জলি দেওয়া চলে না৷
- চালিয়ে দিই বসন্তদা?
- চালাবি? দাঁড়া৷ একটা সিগারেট দে না তার আগে। ক্যান্সারের ভয়ে ওই নেশাটা বছরখানেক হল ছেড়ে দিয়েছিলাম৷ এখন অবশ্য সে ভয়টা অযৌক্তিক।
- বিড়ি চলবে?
- লাখ লাখ টাকা পকেটে রেখে বিড়ি ধরাস? শেম অন ইউ ভোলা৷ তুই যে এমন হাড়কিপটে সে'টা জানতাম না।
- দু'মিনিট দাঁড়াবে? এক প্যাকেট নিয়ে আসি।
- আনবি? আন।
- আচ্ছা। ইয়ে, এ'ভাবে বলতে চাইছি না। তবে লাইনের কাজ তো, বলতে হচ্ছে৷ তুমি আবার এই অন্ধকার গলি ছেড়ে সরে পড়ো না যেন৷ তা'হলে সোজা গিয়ে তোমার ফ্যামিলির ওপর হামলে পড়তে হবে আমায়..।
- তুই আমার জন্য সিগারেট আনতে যাবি, আর আমি ফাঁকি দেব ভোলা? চাপে পড়ে আমায় খুন করবি, তা'বলে এদ্দিনের পরিচয়ের কোনও মূল্য নেই? এই চিনলি তুই আমায়?
- কোন ব্র্যান্ড বসন্তদা?
- গোল্ডফ্লেক আন। আর দু'টো চ্যুয়িংগাম।
- সিগারেটের পরেই তো ঢিশুম৷ চ্যুয়িংগাম আবার কেন!
- প্লীজ ভোলা৷ সুমি যদি লাশের মুখে সিগারেটের গন্ধ পায় খুব রাগ করবে।
- বেশ৷ তিন মিনিটে আসছি।

***

- ভোলা৷ সুখটানের জন্য থ্যাঙ্কিউ। আর সেন্টরফ্রেশের জন্যও৷ স্ট্রবেরি ফ্লেভারটা ভারী সুন্দর। তৃপ্ত হয়ে চোয়াল চালিয়ে যাব৷
- সরি বসন্তদা।
- এ'টা তোর প্রফেশন তো। অত ভাবিস না।
- এইবারে৷ এই যে কপালে নল চাপলাম..এ'বারে চোখ বোজো..।
- আমাকে ভীতু ভেবেছিস?
- ইয়ে মানে..।
- ঠিক ভেবেছিস। ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ দেখলে ভির্মি খাই রে। এই নে, চোখ বুজলাম। বেয়ারা, চালাও ফোয়ারা।

***

- কাজ শেষ৷ এ'বার চ' বাড়ি যাই।
- এ..এ..এ..।
- সিগারেট খাওয়ানোটাই তোর কাল হল রে ভোলা। নেশার ঋণ নিয়ে মরেছি, তাই তোকে হুট করে ছাড়তে পারছি না৷ যাক, ক'দিন না হয় তোর সঙ্গে ঘুরঘুর করব।
- যাচ্চলে। রাম রাম রাম..।
- আরে ও'সব গল্প কথা৷ রামনামে মোটেও ভয় করছে না৷ প্রমাণ দেব? শোন৷ সুর করে গাইছি কিন্তু। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে। কী, হোঁচট খেলাম? নার্ভাস হলাম? কাঁচকলা৷ বরং গেয়ে ভালোই লাগছে। আর ভক্তি ব্যাপারটা মানুষ ভূত সবার জন্যই উপকারী। আত্মা ইন এনি ফর্ম ইজ ভগবানের দাস৷ হরি হে দীনবন্ধু...হরি হরি।
- এ তো মহাবিপদে পড়া গেল৷ তোমার হয়ে পিণ্ডিফিণ্ডি দিতে হবে নাকি? গয়া যেতে হবে?
- মহানেকু তো তুই৷ আমি কী এমন ক্ষতি করছি তোর। শোন, আমি বিসনেসম্যান৷ কুড়িলাখ নিয়ে কী করবি সে'প্ল্যান ভাঁজতে হবে৷ নে, চট করে মোড়ের দিকে চ'৷ টোটো ধরে বাড়ি। অনেক ছক কষার আছে তারপর৷
- ভূতের আবার টোটো কীসের দরকার?
- তোর দরকার৷ এদ্দূর হেঁটে ফিরবি নাকি? কম ধকল যায়নি এই ক'হপ্তা। চোখ-মুখ বসে গেছে।
- এই তো মরলে বসন্তদা। বাড়ি যাবে না? বৌদি, ছেলেমেয়ে; তারা টানছে না?
- নাহ্৷ নিজেকে বেশ সন্ন্যাসীজসন্ন্যাসী মনে হচ্ছে। আপাতত তোর সঙ্গেই ঘোরাঘুরি করব কিছুদিন৷ তোর একটা হিল্লে হয়ে গেলে ভাবা যাবে অন্য কিছু।
- আমার হিল্লে?
- এ'খানে দাঁড়িয়েই তোর এত গল্প করতে হবে? গুলির যা আওয়াজ হল..বাপ রে বাপ৷ কানে এখনও তালা লেগে আছে মনে হচ্ছে৷ পুলিশ এলো বলে। ক্যুইক ক্যুইক।
- আগে বলো, আমার হিল্লে মানেটা কি?
- দিনরাত তো ক্রাইম করছিস আর টাকা কামাচ্ছিস। আর সে'সব গাদাগুচ্ছের টাকা বাড়ির আলমারিতে জমিয়ে রেখে পচাচ্ছিস৷ এই ইরেস্পন্সিবিলিটি সহ্য করা যায় না।
- তুমি কী করে জানলে আমার সব টাকা আলমারিতে?
- আলমারির নীচের মেঝে৷ সে'টা ফাঁপা। তার নীচে আর এক গোপন আলমারি। সে'খানে বান্ডিল বান্ডিল টাকা৷
- তুমি এ'সব জানি কী করে? কী সর্বনাশ।
- মরার আগে পর্যন্ত জানতাম না৷ মরে ওঠার পর দেখছি ত্রিকালদর্শী হয়ে উঠেছি৷ তাই বলছি, তোর আমার কাউন্সেলিং সবিশেষ দরকার। কিলো কিলো কালো টাকা জমিয়ে করবি কি? বিপদে আপদে ফ্যামিলি তো ভেসেই যাবে৷ মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স আছে?
- মে..মেডিকাল? না।
- টার্ম ইন্স্যুরেন্স?
- কী?
- এসআইপি?
- না।
- কী আশ্চর্য গাম্বাট দ্যাখো৷ সে'টাও নেই? ছেলেমেয়ের এডুকেশন ফান্ড?
- কিস্যু নেই।
- ওহ মাই গড৷ এত হাই ইনকাম তোর, অথচ কী ইরেস্পন্সিবল। বাড়ি চ'৷ অনেক প্ল্যানিং সামনে। আগে কালো টাকা সাদা। তারপর একে একে ইনভেস্টমেন্ট৷ চিন্তা নেই,আমি সামলে নেব। ইউ আর ইন সেফ হ্যান্ডস।
- মানে আমার সঙ্গেই থাকবে?
- ওই যে বললাম, যদ্দিন না তোর একটা হিল্লে হচ্ছে। সিগারেটের ঋণ ভাইটি। চ' চ'।
- তুমি সঙ্গে আছো যখন, তখন টোটোর বদলে ট্যাক্সিই হোক।
- অমন বাটপারি খরচের কী দরকার? ওরে আমার লর্ড ক্লাইভ এলেন হে, দু মাইল রাস্তা যাবেন ট্যাক্সি নিয়ে৷ নাহ্, তোকে টাকা আর ওয়েলথের তফাৎ না বোঝালেই নয়৷ এ'বার পা চালিয়ে এগো দেখি।

ভজা-পঞ্চার সিনেমাদর্শন



- দ্যাখ পঞ্চা। দ্যাখ। ভালো করে দ্যাখ।

- কী দেখব ভজাদা?

- সিনেমা।

- সিনেমা?

- সিনেমা। এই যে, আমাদের চোখের সামনে..।

- ধুর৷ রাস্তা-ঘাট-লোকজন। ম্যাড়মেড়ে যত্তসব।

- রাস্তাটা তো সেট৷ হাইক্লাস প্রোডাকশন কোয়ালিটি। তার ওপর আবার আর্ট ফিল্ম; উঁচু দরের। আর গড়গড়িয়ে সিন এগোচ্ছে; এক শটে সব্বার ফাইনাল টেক।

- ছাতার মাথা, কোনও ডায়লগ কানে আসছে না।

- কিন্তু কী রিয়েলিস্টিক অভিনয় দ্যাখ৷ কী মারাত্মক ন্যাচুরাল এক্সপ্রেশন সবার।

- পথচলতি মানুষ যত; সবাই তো এক্সট্রা। হিরো কই? হিরোইন কই? ভিলেন কই?

- হয়ত ওই নীল হাফশার্ট নায়ক৷

- ওই পানদোকানের খদ্দের? তিরিশ সেকেন্ডের স্ক্রিন প্রেজেন্স?

- আরে হল কাঁপাতে ওই তিরিশ সেকেন্ডই যথেষ্ট। কেতটা দ্যাখ৷ কী হেলাফেলা-মার-দিয়া-কেল্লা স্টাইলে সিগারেট জ্বালালে৷

- কী গোবেচারা চেহারা দেখেছ? ও'দিয়ে দর্শকদের ঘায়েল করবে? তা'হলেই হয়েছে।

- আদত কেত থাকলে..বুঝলি পঞ্চা..ওই জিমে যাওয়া-মেকআপ নেওয়া দ্যাখনাইয়ের দরকার পরে না৷ আর আমার কী মনে হয় জানিস?

- কী মনে হয় ভজাদা?

- ওই ফুচকার দোকানের সামনে যে পিসিমা দাঁড়িয়ে...নির্ঘাৎ একজন ভিলেন৷ এক্কেবারে গব্বর সিংকে ডান হাতে কিনে বাঁ হাতে বেচে দেওয়া মানুষ৷

- মাইরি। তোমার মাথাটা জাস্ট গ্যাছে৷ অমন "এসো-বসো-লুচি-ভেজে-দিই" চেহারার রাঙাপিসিকে ভিলেন করে দেখছ..। ধুর..।

- অমন ভালোমানুষ চেহারাটাই তো পার্ফেক্ট ডিসগাইস। মোহনলাল ফুচকাওলা ওই স্পিডে খদ্দেরদের খাওয়াচ্ছে, অথচ পিসির কোনো হেলদোল নেই৷ ঠায় দাঁড়িয়ে কিন্তু ফুচকার দিকে ঘেঁষছে না৷ ব্যাপারটা কী মারাত্মক সাসপিশাস, সে'টা ভেবে দেখেছিস? নাহ্, মোগাম্বো ও পিসির পাল্লায় পড়লে জলমুড়ি খেয়ে ঘুমোতে যেত।

- বেশ৷ সামনের রাস্তাঘাট না হয় সিনেমাই হল। আমাদের এই স্ট্যান্ড করা স্কুটার না হয় সিনেমা হলের রিক্লাইনার সীটই হল৷ কিন্তু পপকর্ন? সে'টা ছাড়া চলবে কেন?

- শহরের বাতাসে যা ধুলোবালি মিশে আছে পঞ্চা, ইয়াব্বড় সিনেমা হলের ডাকাতে দামের পপকর্নের মতই গুরুপাক এ জিনিস। নিশ্চিন্তে হাওয়ার পপকর্ন চিবুতে চিবুতে সিনেমা এঞ্জয় কর। ভজহরি ফিল্মসের নিবেদন, "আজকের সন্ধ্যে"৷ আর কথা নয়, কেমন? সিনেমা দেখতে বসে বকবক আমি মোটেও বরদাস্ত করতে পারি না। 

Wednesday, December 6, 2023

এজেন্ট বাহাত্তরের টালবাহানা



- হ্যালো। এজেন্ট বাহাত্তর বলছি।

- রিপোর্ট?

- টার্গেট স্পটেড অ্যাট নাইন ও সেভেন।

- গুড।

- টার্গেট লকড অ্যাট নাইন টুয়েন্টি সেভেন।  ওয়ান স্নাইপ অ্যাওয়ে।

- ভেরি গুড। ন'টা বত্রিশে ঢিশুম, তাই তো?

- তেমনটাই তো কথা ছিল।

- কাজ হাসিল হলে, সুটকেস পৌঁছে যাবে যথাস্থানে। 

- সুটকেস? হুম।

- তোমার হুমটা বড্ড সাসপিশাস শোনাচ্ছে এজেন্ট বাহাত্তর।

- ভাবছি আজ ন'টা বত্রিশের ব্যাপারটা তোলা থাক।

- হোয়াট ননসেন্স৷ হঠাৎ এমন দুর্মতি কেন?

- আজ শহরের ওয়েদারটা দেখেছেন? অসময়ের দু'পশলা বৃষ্টিতে এমন বিউটিফুল একটা ইয়ে তৈরি হয়েছে, আহা। প্লাস বাতাসে মারাত্মক মিঠে আমেজ..এর মধ্যে রক্তারক্তির দিকে যেতে মন সরছে না..।

- ভাড়াটে খুনির আবার অত টালবাহানা কীসের হে?

- এক্সকিউজ মি স্যার। এজেন্ট বাহাত্তর বলুন। সার্ভিস প্রোভাইড করছি বলে আপনি আমার মাথা কিনে নেননি।

- আমি তোমায় ওয়ার্নিং দিচ্ছি এজেন্ট, ন'টা বত্রিশের মধ্যে টার্গেট উড়ে না গেলে..উড়ে না গেলে...।

- দেখুন মশাই। টার্গেট বাবাজীবন এই অসময়ের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় করে এক গাল হাসি নিয়ে, সবজি বাজার করতে বেরিয়েছেন৷ এমন রোম্যান্টিক মানুষকে আজকের দিনে নিকেশ করাটা অ্যান্টি-পোয়েট্রি হবে।

- অ্যাই! আমি তোমায় ওয়ার্নিং দিচ্ছি..হ্যালো..হ্যালো..এই এজেন্ট...তবে রে ব্যাটাচ্ছেলে বাহাত্তর.. তবে রে..এই..যাহ..দিল ফোন কেটে..।

Saturday, November 25, 2023

বেলজুঁই



- সিগারেট আছে রে?

- নেই।

- নেই?

- আমার কাছে থাকবেই বা কেন?

- ওহ্।

- এক মিনিট, তুই আজকাল সিগারেট ধরেছিস?

- তা ধরিনি। তবে কিনা আচমকা মনে হচ্ছে যে আঙুলের ফাঁকে সে জিনিস থাকলে একটা মজবুত ইয়ে তৈরি হত।

- ইয়ে?

- মেজাজ।

- অ। মেজাজ।

- মেজাজটাই তো আসল রাজা।

- তা ঠিক৷ তবে, হঠাৎ এই সিগারেটিস্ট মেজাজের দরকার পড়ল কেন?

- আজ তার চিঠি পেয়েছি। হাতে হাত চালান করেছে৷ তা'তে হুহু নেই, হাউহাউ আছে৷ ঢলে পড়া নেই, কানমলা আছে৷ সে ভারি বুকভাঙা চিঠি। এই গোলমেলে সময়ে একটা শাঁসালো নেশা না বাগানোটা বেআইনি বোধ হয়৷

- ব্যাপারটা সিরিয়াস।

- ব্লাডশেড।

- এই সিচুয়েশন তো তা'লে সিগারেট দিয়ে ম্যানেজ হবে না ব্রাদার। ইউ-বোটের দলকে নিরস্ত করতে জলবেলুন দাগলে চলবে কেন ভায়া চার্চিল?

- তবে? উপায়?

- বিড়ি বাদ দে। বেলজুঁইয়ের নেশা ধর।