Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2018

বিকেলের গল্প।

- দীপকদা, বড়সাহেব ডাকছেন। - আমায়? - নয়তো খামোখা আপনাকে বলতে যাবো কেন বলুন? - রেনবো ওয়েল্ডার্সের ফাইল নিয়ে কিছু কি? - ওঁর পেটে কী আছে তার হদিস আমার মত হরিদাস পালের কাছে থাকবে কী করে দীপুদা? আর্জেন্ট। তাড়াতাড়ি যাও। *** - দীপু! ক্যুইক! - কী হল রে? - মান্তুদা ডেকেছে। রেলেরমাঠে। ক্যুইক। - এই ভরদুপুরে! - রেলকলোনির ছেলেদের চ্যালেঞ্জ করেছে মান্তুদা। আজ পালটা ম্যাচ। - ও। তা আমায় ডেকেছে কেন? গত ম্যাচের পর তো বলল আমার মুখদর্শন করবে না আর। - আহ্। তুই অমন লোপ্পা ক্যাচ ফেললি বলে..। - মান্তুদা নিজে রানআউট মিস করেনি? - মাঠে গিয়ে ঝগড়া করিস ভাই। এখন চ'। - আমার টিউশনি আছে। ট্রিগোনোমেট্রি। বিভূতিবাবু এমনিতেই খাপ্পা, বাবার কাছে কমপ্লেন করেছেন। আমার হবে না। - সে কী রে। আজ বাদে কাল মহালয়া! আর এ'দিকে তুই টিউশানি দ্যাখাচ্ছিস? - কেটে পড়। মান্তুদাকে বলে দিস আমি আসতে পারব না..। - মান্তুদা তোকে ওয়ান ডাউন খেলাবে বলেছে। - ওয়ান ডাউন? - ওয়ান ডউন। - মান্তুদা বলেছে? - মায়ের দিব্বি।  গা ছুঁয়ে বলতে বলেছে মান্তুদা। - কিন্তু, বিভূতিবাবু যদি চটে যান..এ'বারে মনে হচ্ছে অঙ্কতে ডোবাবো রে...কিছু

ইলেক্ট্রনিক্যালামিটি

যতই লজিকটজিক নিয়ে বাতেলা ঝাড়ি, ইলেকট্রনিক যন্ত্র কেনার সময় মন নরম হয় আসে। বারবার মনে হয় এ'সব জিনিস রাশিফল দেখে আর পঞ্জিকা কনসাল্ট করে কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দু'টো জিনিস ঘটছে; এক, আত্মবিশ্বাসটিশ্বাস কমে টাকা-টু-ডলারে এসে ঠেকেছে আসে আর দুই, ইলেক্ট্রনিকের ভাগ্য ক্রমশ ফিক্সডিপোজিটের ইন্টারেস্ট হয়ে উঠছে। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় বাবা ফিলিপ্সের স্টিরিও টেপ রেকর্ডার কিনেছিলেন। সে'টার ব্যবহার তদ্দিন চলেছে যদ্দিন না ক্যাসেট ব্যাপারটা বাজার থেকে গায়েব হয়েছে। আর অন্যদিকে আমি। শৌখিন ইলেকট্রনিক কিছু কেনামাত্রই মনে হয় টাকার গায়ে চুন-খয়ের-চমনবাহার লাগিয়ে জলে দিলাম। আকাশে মেঘ দেখলে পলিথিনের প্যাকেট জোগাড় করে মোবাইল মুড়ে রাখি। ইয়ারফোন কানে কম থাকে, বেশির ভাগ সময় কাটে তারের জট ছাড়িয়ে। ঢাকুরিয়ায় মেঘ ডাকলে বেহালায় বৌকে ফোন করি টিভির প্লাগ খুলে ফেলতে। কিন্তু তবু অতর্কিতে ঘটে যায় গোলমাল। রিভিউয়াররা বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর আনবক্সিং করে থাকেন, আর আমি খুঁজে বের করি আউট অফ দ্য বক্স যত সমস্যা। সাধারণত মোবাইল ফোনের স্ক্রিনট্রিন ভাঙে, আমার অতিসাবধানে রাখা ফোন বিতিকিচ্ছিরি

বিখ্যাত

- নমস্কার। - হুঁ। নমস্কার। উঁহ্। - বিরক্ত মনে হচ্ছে আপনাকে? - বিরক্তি। বোরডম। হাড়জ্বলুনি। - উম...এমন ভাবে বোধহয় আপনাকে প্রায়ই ডেকে নেওয়া হয়, তাই না? - প্রতি হপ্তায় অন্তত বারদুয়েক। গত আশ্বিনে এক হপ্তায় সাতবার ডাক পড়েছিল। এ হপ্তায় অবশ্য আপনিই প্রথম। - এত প্ল্যানচেট করার মানুষ আছে? - আছেই তো। আর অর্ধেকের বেশি তো গাধাগবেটের দল। ডাকতে চায় একজনকে আর টেনে নামায় অন্য কাউকে। আরে মশাই প্ল্যানচেট কি আর যেমনতেমন ব্যাপার? ধৈর্য লাগে, অধ্যাবসায় লাগে,  ফোকাস লাগে। প্যারিসের এক বৃদ্ধের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বছর সতেরো আগে; কী জ্ঞানের পরিধি,  কী বিনয়। তার প্ল্যানচেটে নামতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছিলাম। - খুব ভালো লাগল আপনার সঙ্গে আলাপ করে। - উম। সেই। বোরিং, বুঝলেন। কিছু মনে করবেন না যেন। - আচ্ছা, এখন শুধু আপনার কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি; তা, আকার ধারণ করতে পারবেন কি? - নির্ভর করছে আপনার প্ল্যানচেট স্কিলের ওপর৷ ধুরন্ধর ভূত-ট্র‍্যাপাররা অনেকসময় রীতিমত অবয়ব সৃষ্টি করতে পারেন। আপনিও বোধ হয় পারবেন। আর একটু কনসেন্ট্রেট করুন। - কেমন আছেন আপনি বিমলবাবু? - যাক, আমায় তা'হলে আনতাবড়ি নামিয়ে ফেলেননি৷ ইম্প

দার্জিলিংয়ের ফ্রেম

- দাঁড়িয়ে কেন? বসুন। - না, থাক স্যার। - বসুন। বসুন। কাঁপছেন যে। - আমার টাকাটা দিয়ে দেবেন প্লীজ? - রেডি রেখেছি। এই এনভেলপে। এই যে...। - ধন্যবাদ। - আরে। গুনে দেখুন মন্টুবাবু। - না না, কী দরকার। ঠিকই আছে। - আমি লোকটা যে ভালো নই; সে খবর তো আর কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে না। - না...তা কেন। - যে মানুষ টাকা দিয়ে খুন করাতে পারে, সে সামান্য টাকা মেরে দিতে পারবে না? তাই বলছি অমন দুম করে বিশ্বাস করবেন না। দিনকাল বড্ড ডেঞ্জারাস। নিন বসুন। আর গুনুন। পাক্কা চল্লিশটা নোট থাকার কথা। - আচ্ছা...তা'হলে গুনি? - অফকোর্স। - এক, দুই, তিন....চল্লিশ! ঠিকই আছে। - চা খাবেন মন্টুবাবু? - না। একটু জল বরং...গলাটা শুকিয়ে গেছে। - এই নিন...। - এ'টা আপনার গেলাস তো...। - এঁটো নয়...। - আহা, তার জন্য নয়। আচ্ছা, থ্যাঙ্ক ইউ। - এখনও কেঁপে চলেছেন। আহা। - আসলে...আসলে...দাসবাবু খুব ছটফট করছিলেন জানেন...খুব। কী চিৎকার! কানের মধ্যে এখনও ঝনঝন করে বাজছে। কী অসহায় ভাবে ছটফট করছিলেন। আর...। - আর? - আর রক্ত। ওর অফিসের মেঝে ভেসে যাচ্ছিল। একবার মনে হয়েছিল...। - কী মনে হয়েছিল? - যে অ্যাম্বুলেন্স ডাকি! য

জমিদারবাড়ির ইজ্জত

- (অনিল চ্যাটার্জী কণ্ঠ) আমায় ডেকেছিলেন বাবা? - (ছবি বিশ্বাস কণ্ঠ) হুঁ। নায়েবমশাইকে ডাক দাও। - আজ্ঞে, এত রাত্রে? - বলেছি যখন, নিশ্চয়ই প্রয়োজন আছে। - বেশ, কিন্তু...। - নায়েবমশাইকে বলো সিন্দুক খুলতে। - সে কী, কোনো বিপদ হল নাকি বাবা? - বিপদ নয়, প্রয়োজন। বাড়ির দলিলটা বের করে আনতে বলো। - দলিল! - আশা করি ভির্মি খাচ্ছ না। - এত রাত্রে বাড়ির দলিল নিয়ে কী করবেন বাবা? - উকিলমশাই এসে পড়লেন বলে। - উকিলমশাই? দলিল? হচ্ছেটা কী? - বয়স তো কম হল না। দুয়ে'দুয়ে চার করতে শিখবে কবে? এ বাড়ির অর্ধেকটা আমি বিক্রি করে দিচ্ছি। আজ রাত্রেই সে দলিল নিয়ে উকিলবাবু শহরের দিকে রওনা হচ্ছেন, খদ্দেরপক্ষ অপেক্ষায় রয়েছে। - কিন্তু হঠাৎ বাড়ির বিক্রির প্রয়োজন হল কেন জানতে পারি বাবা? - চোখকান খোলা রাখলেই নিজে থেকেই টের পেতে। বাড়ি বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এখন মুখের সামনে সঙের মত দাঁড়িয়ে না থেকে নায়েব মশাইকে ডেকে আনো। - বাবা, আপনার বড়ছেলে হিসেবে আমার জানার অধিকার রয়েছে! এ বাড়ি আপনি বিক্রি করছেন কেন? - বড়ছেলে?  বড়ছেলে হয়ে বাপের মান সম্মান সম্বন্ধে কতটুকু ওয়াকিবহাল তুমি? কই, চুপ করে দাঁড়িয়ে কেন? বলো! -

ঘৌলমন্ডির গোলমাল -১

**ঘৌলমন্ডির গোলমাল** প্রথম পরিচ্ছেদ - এলেম নতুন দেশে ....... কানের মধ্যের ঝমঝম আওয়াজটা কমে এসেছে। গা হাত পায়ের অসহ্য ব্যথাটাও দেখছি কম। চোখের দৃষ্টিটা সামান্য ঘোলাটে কিন্তু গোলমেলে অন্ধকারটা ক্রমশ কেটে যাচ্ছে। বুকের মধ্যের হ্যাঁচড়প্যাঁচড়টাও বেশ কমে এসেছে।  একবার চোখ বুজে আবার খুললাম; ড্যাবড্যাব করে দেখার চেষ্টা করলাম। সামনের দেওয়ালটা নীল। আমি একটা সাদা চাদর পাতা বিছানায় শুয়ে। নির্ঘাৎ হাসপাতালের বেড। দেওয়ালে একটা ঘড়ি, চোখ কুঁচকে সময়টা দেখার চেষ্টা করলাম; ও মা! ঘড়ির দু'টো কাটাই সমান সাইজের। আটটা দশ, একটো চল্লিশ যা কিছু একটা হতে পারে। কী আহাম্মকে ঘড়িরে বাবা। বিরক্ত হয়ে চোখ বুজে ফেললাম। নিজের পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করলাম। আমি যাচ্ছিলাম উলুবেড়িয়ায় মেজপিসির বাড়ি। অবিশ্যি মেজপিসি আর নেই, এমনকী মেজপিসেও মারা গিয়েছেন বছর সাতেক হল। মেজপিসির মেজছেলে বাপনদাদার সঙ্গে আমার খুব দহরম। মহরমের ছুটি পেয়েছি আর অমনি সকাল বেলা সরভাজার বাক্স নিয়ে বাস ধরে সোজা উলুবেড়ে। গোটাদিন শুধু তাস পেটানো আর বাপনবৌদির হাতের বাটিচচ্চড়ি আর মাছের ঝোল। আহ..এই আমার এক রোগ। কী ভাবার কথা আর কী ভেবে চলেছি। প্রশ্ন