Wednesday, December 31, 2025

হোমবাউন্ড



বয়স বাড়ার সব চাইতে তিতিবিরক্তিকর দিক হলে সব ব্যাপারে তিতিবিরক্তির কারণ খুঁজে পাওয়া, বিশেষত নিজের ও নিজেদের ব্যাপারে। হোমবাউন্ড বড় সুন্দর, গায়ে ছুরি চালানো সত্যিতে ঠাসা সিনেমা, গালে দু'চারটে চড়থাপ্পড় অনুভূত হওয়ার সিনেমাও বটে। আমি যেহেতু সিনেমা বুঝি না, কাজেই সিনেমা সম্বন্ধে কোনো কথা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না। সিনেমাটা আদতে সত্যিই 'ভালো সিনেমা' হয়েছে কিনা, অভিনয়টা জোরালো হলো কিনা, সে'সব হলফ করে বলার দম আমার নেই। তবে আমার যে খুব ভালো লেগেছে সে সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত। কিন্তু 'সিনেমাটা ভালো তাই দেখুন' এ কথা বলার মানে হয় না; আপরুচি খানার মতই আপরুচি নেটফ্লিক্স। তিতিবিরক্তির কথা বলছিলাম, সে'টাই বলি। সবটাই আমার মনের নেগেটিভিটিও হতে পারে, আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মনে হয়।

গরীব, অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু; এর যে'কোনো খোপে থাকাটাই বড় দূর্ভাগ্যের ব্যাপার। এর ওপর যদি গরীব সেটের সঙ্গে বাকি লেবেলগুলোর ওভারল্যাপ পাওয়া যায়, সে যন্ত্রণা বড় নির্মম। হোমবাউন্ড সে নির্মমতার গল্প। জমাট রিসার্চ আর খাটনির মাধ্যমে এই ধরণের সিনেমা তৈরি সম্ভব। অথচ এই পোড়া নেগেটিভ মনের মধ্যে কী বিশ্রী জ্বালাতন, বারবার মনে হচ্ছে এই সিনেমা যারা তৈরি করেছেন, কলাকুশলী অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রোডিউসার-ডিরেক্টর সবাই মিলে; তাঁদের রিসার্চ লাজওয়াব, অধ্যাবসায় নিখুঁত কিন্তু সে নির্মম জীবনের থেকে তারা বহুদূরে অবস্থিত।  সিনেমাটা যারা দেখছেন, উপভোগ করছেন, দেখে যাদের চোখ ছলছল করে উঠছে; এই যেমন আমি ও আরো অনেকে; তাঁদের অ্যাপ্রিশিয়েশনে সামান্যতম খাদ নেই কিন্তু আমাদের জীবনও সে অন্ধকার থেকে বহু মাইল দূরে। নির্মমতার নিউক্লিয়াসের মধ্যে থেকে যারা এ মুহূর্তে শ্বাস নিচ্ছেন, তাঁদের কাছে খুব সম্ভবত এ সিনেমা পৌঁছবে না। আমরা আমাদের সাজানো বুদবুদের মধ্যে বসে এ'রকম সিনেমা তৈরি করবো, কনসিউম করবো, অ্যাওয়ার্ড দেবো কিংবা মুণ্ডুপাত করবো।

অবশ্য এই তিতিবিরক্তি শুধু এই সিনেমা নিয়েই নয়, আর্টের ইন্সপিরেশন আর কনসাম্পশন; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই দু'টো উল্টো খাতে বয়। তেমনটাই হয়ে আসছে হয়তো চিরকাল। এ নিয়ে হঠাৎ "ধুত্তোর" বলার কিছু নেই। মোদ্দা কথা হলো সিনেমাটা আমার খুব ভালো লেগেছে।

No comments: