Thursday, December 4, 2025

মুচকি হাসি


মাস ছয়েক বসে থাকার পর একটা ছোটোখাটো চাকরি পেয়ে আকাশের চাঁদ হাতে পেলে সঞ্জয়। বার্ড অ্যান্ড বার্কিন কোম্পানির আগের চাকরিটা স্টেটাস-মাইনে সব দিক থেকেই ভালো ছিলো, আচমকা সে'টা চলে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই সামান্য দমে গিয়েছিলো। নেহাৎ ব্যাচেলর মানুষ, তাই অকূলদরিয়ায় পড়ে নাকানিচোবানি অবস্থা ঠিক হয়নি। তবু খেটে খাওয়া সৎ কর্মীর বছর দশেক পুরনো চাকরিও যে এত ঠুনকো, সে'টা টের পেয়ে সঞ্জয়ের মনের ভিতরটা বড্ড তিতকুটে হয়ে গেছিল।

নটরাজন স মিলের ক্লার্ক হিসেবে শেষ পর্যন্ত চাকরি জোটাতে পেরে যে অনুভূতিটা প্রবল ভাবে হচ্ছে সে'টাকে ঠিক বাঁধভাঙ্গা আনন্দ বলা যায় না। বরং একটা প্রবল স্বস্তি বোধ টের পাচ্ছে সে। এ চাকরিও যে সহজেই চলে যেতে পারে, সে'টাও সে ধরে রেখেছে। তা'তে বেশ একটা বেপরোয়া মনোভাবও তৈরি হয়েছে।

সঞ্জয়ের একার সংসার তবে সে বেহিসেবী নয়। এসআইপি পিপিএফ মিলে তার সেভিংস ব্যাপারটা মোটের ওপর সুবিধেজনক জায়গায় আছে সে কথা বলাই যায়। ছ'মাস বসে খেয়েও সে জমানো টাকা তলানিতে এসে ঠেকেনি। নটরাজন মিলের ফোনটা পেয়ে আজ নিজেকে বেশ চ্যাম্পিয়ন মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা হাস্যকর কী? কে জানে। পিসতুতো দাদা অতুল বেশ নাক সিঁটকে বললে এ'সব পেটি জবে কোনো ফিউচার নেই। সঞ্জয় জানে যে তার বায়োডেটাতেও একটা বিশ্রী দাগ পড়ে গেছে।

পড়ুক গে। হোক পেটি জব। তবু তো একটা চাকরি। এসআইপিটা মাস ছয়েক বন্ধ ছিলো। আবার শুরু হবে। আগের চেয়ে অনেক কম টাকার হয়তো, হোক গে। ছ'মাস হন্যে হয়ে চাকরির জন্য দিবারাত্রি টইটই করে ঘুরেছে, ক্লান্তি গ্রাস করেছে, মনে হয়েছে গোটা শহরটাই যেন আস্ত একটা অন্ধকারের টুকরো। তবে সে অবস্থাতেও সঞ্জয়কে কারুর কাছে হাত পাততে হয়নি। ইলেক্ট্রিক বিল জলের বিল বাকি পড়েনি। ইলিশ বাদ গেছে কিন্তু তেলাপিয়া চারাপোনা পোল্ট্রির ডিম পাতে এসেছে নিয়মিত। অতুলদার ছেলের জন্মদিন ছিল গতমাসে; ভুতোকে চমৎকার কিছু বই কিনে দিয়েছিল সঞ্জয়। বইগুলো কিনে ভীষণ তৃপ্তি পেয়েছিল সে, ভুতোকে সে বেশ ভালোবাসে।

এই দুরমুশ হয় না যাওয়টা, সে'টা জিতে যাওয়া নয়?
এই ধান্দাবাজ অর্থনীতির চাকরিবাজারের অস্থিরতাকে নিজের জীবনের শেষ কথাটা বলতে না দেওয়াটা, সে'টা জিতে যাওয়া নয়?

সঞ্জয় আজ চেয়েছিলো এই ছোট্ট চাকরিটাকে সেলিব্রেট করতে। বহুদিন পর মাংসের দোকানে গেছিল। রান্নাঘরে অনেকক্ষণ সময়ও কাটালে আজ সকালে। এ'টা ঠিক বিজয়োল্লাস নয়, সঞ্জয়ের মতে আজকের খাওয়াদাওয়াটার শিরোনাম হলো "মুচকি হাসি"।

No comments: