Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2018

মিতাউলি নদী

সাইড লোয়ার থেকে স্পষ্ট শুনতে পেলেন সুবিমল দত্ত। কান তার বরাবরই ধারালো। ফিসফিস কথার আওয়াজ ভেসে আসছিল উলটো দিকের আপার বার্থ থেকে। এমনিতেই কিছুটা সাসপিশাস মনে হয়েছিল, সেই নিয়ামৎপুর স্টেশনে উঠে থেকে দেখেছেন ওই বার্থের  ভদ্রলোক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে। এইসব গোপন ট্রিপে আরো সতর্ক থাকতে হয়; কম্পিটিটর কেউ জানতে পারলেই প্ল্যান পণ্ড করার জন্য লোক লেলিয়ে দিতে পারে। গুণ্ডা খপ্পরে পড়াও আশ্চর্যজনক নয়। মনোহরগড়ের প্লটটা হাতানোর একটা জব্বর সুযোগ এসেছে, ডীলটা ফিক্সও হয়েছে গোপনে। মনোহরগড়ের পাহাড় ঘেঁষা অঞ্চল মেহেরপুর; সে'খানের মিতাউলি নদীর পাশে চমৎকার প্লট; একবার হাতাতে পারলে রিসর্টওলাদের কাছে বড় দাঁও মারা যাবে। গোপনে বিক্রির প্রপোজালটা গতকাল রাত্রে পেয়েছেন সুবিমলবাবু, চুপিসারে প্রস্তুতি সেরে আজকের ট্রেনেই রওনা। ডিসট্রেস সেল, জলের দরে পাওয়া যাচ্ছে। এমন মওকা হাতছাড়া করলে হাত কামড়ে ছিঁড়ে ফেলতে হবে। সবচেয়ে বড় চিন্তা ও প্লটের দিকে আলুওয়ালিয়ার নজর আছে, দু'একবার খুনের হুমকিও দিয়েছে তারা; যাতে ওই প্লটের লোভ সুবিমলবাবু ত্যাগ করেন। কিন্তু আলুওয়ালিয়ার ব্যাটা জানে না সুবমিল দত্তর দৌড়। ও'সব হুমকিতে মচকে যাও

করব লড়ব। আর ইয়ে। জিতব।

~~করব~~ ১। হপ্তায় একটা করে বই শেষ করব। নেহাত কাজের হুড়মুড় গেলে একটা টিনটিন ফিরতি পড়ে নেওয়া। ২। পার্ফেক্টলি লুচি বেলতে পারা; নিখুঁত, সম্ভাবনায় টইটুম্বুর। ৩। প্রতিটা বোমারু ঝগড়ার শেষে থাকবে "বেশ বেশ, এ'বার দু'জনায় লেবুজল খাই চলো"। ৪। অজস্র প্রেমের চিঠি লিখে ছিঁড়ে ফেলে শ্যামল মিত্তিরে শেল্টার। ৫। গল্প শোনা, মন দিয়ে। কারুর দুরন্ত দরদামে ঝিঙের দাম কমানোর গল্প, কারুর বাবার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলে ঘুষ দিয়ে নিজের জন্য একটা ছোটখাটো চাকরী জোগাড় করার গল্প, কারোর তোষকের নীচে চাপা দেওয়া মনখারাপের গল্প। গল্প, গুজব নয়। গল্প। ~~লড়ব~~ ১। "ভয় পাস না, আমি আছি"গুলোকে চিনব। চিনবই। আর চেনাগুলোকে আঁকড়ে থাকব। ২। আব্রাকাডাব্রাকে 'মা, মা গো'র ক্যামোফ্লাজে ব্যবহার করে মুঠো শক্ত করব; বার বার। ৩। সঞ্জীবের বোরোলিনে ভিতরটা সুরভিত রাখব। রাখবই। ৪। ট্রেনের জানালার ব্যাপারে জমি ছাড়ব না কাউকে। নাহ্, পেয়াসার ওয়াহিদা রেহমানকেও নয়। ৫। নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা প্র‍্যাক্টিস করব। টুথপিক নিয়ে আয়নায় খোঁচা দেব। জলবেলুন ছুঁড়ে মারব চৌবাচ্চায় ভেসে ওঠা ছায়ায়। ~~জিতব~~ ১। বালিশের তলে থাক

সাধক আত্মারাম

- আপনি ভূত? - আজ্ঞে। - প্রপার? - সাড়ে তিন বছর হল। - অপঘাত? - ন্যাচুরালি। - নাম? - জেমস বন্ড। - য্যাহ্। - রিয়েলি। - সাহেব ভূত? - বাঙালি। বজবজ। - অথচ নাম জেমস বন্ড? - নিজে দিয়েছি। ভূতের নাম বাদল চক্রবর্তী হলে মানায়? - ও। আমি তান্ত্রিক। বহুদিন ধরে চেষ্টা করছি; আত্মা নামানোর। - এই এক অদ্ভুত রোগ মানুষের। খালি ভূতের ন্যাজ ধরে টানা। - লেজ? - রেটোরিকাল। আপনি সত্যিই তান্ত্রিক? - আজ্ঞে। সাধক আত্মারাম। - মেটা নাম। তবে তান্ত্রিকটান্ত্রিকে আমার বিশ্বাস নেই। - সে কী। ভূত হয়ে তান্ত্রিকে বিশ্বাস করেন না? - ও'সব বুজরুকি মশাই। - আপনি তো কম্পলিকেটেড ভূত দেখছি। - খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তো? চট করে বশীকরণ, অর্শরোগ সারানোর মাদুলি; এ'সব অফার করেন নিশ্চয়ই? - না করলে চলবে কেন? - ওই কাগুজে বুজরুকি আমার ভালো লাগে না। - বুজরুকি?  ইয়ার্কি হচ্ছে? বুজরুকি হলে আপনার মত বজবজে ভূতকে আমার এই ড্রয়িং রুমে টেনে আনলাম কী করে? এ'টা অবশ্য ঠিক যে এত বছরে আপনাকেই প্রথম নামাতে পারলাম। - নামালেন মানে? - আমি। আপনাকে নামালাম। বহুদিনের সাধনার ফল। - ধ্যুত। যত ন্যাকামো। আমি নিজে নেমে এসেছ

পোস্ট-ভোট

প্রশ্ন এক। কেমন দাঁড়ালো ব্যাপারটা? প্রশ্ন দুই। এরপর কোনদিকে যাবেন কিছু ভেবেছেন? ~~তৃণমূল~~ উত্তর এক। এক্সট্রীম শান্তি মশাই। চতুর্দিক শান্তিপূর্ণ।  শান্তি ছাড়া আর কিস্যু নজরে পড়ছে না। থ্রিসিক্সটি ডিগ্রী শান্তি। উত্তর দুই। আরো শান্তি। গোলমাল দেখলেই শান্তি এনে দেব, ট্যাঁফোঁ করতে দেব না। ট্রাক ট্রাক শান্তি ডেলিভারি হবে। দেখবেন, শান্তির ইন্ডাস্ট্রি কাকে বলে। ~~বিজেপি~~ উত্তর এক। ওয়ার্ম আপ চলছে বুঝলেন। ত্রিশূলট্রিশূল মোটের ওপর স্যানিটাইজ করে রাখা গেছে। অবিকল মহাভারত গোছের একটা অনুভূতি হচ্ছে। এমন কী আমাদের পুরুষ সমর্থকদের স্যান্ডো গেঞ্জির বদলে কবচ পরার একটা টেন্ডেন্সি দেখা যাচ্ছে। উত্তর দুই। আরো ত্রিশূল মিট। আসছে রামনবমীতে মুলো বিরিয়ানির ট্রেন্ডটা পুশ করা হবে, স্বয়ংসেবকরা প্রস্তুত। ~~সিপিএম~~ উত্তর এক। আ..আমায় জিজ্ঞেস করলেন? অ। তা জানেন স্যাট্ করে প্রশ্ন করলে ডাইজেশনে অসুবিধে হয়? লেনিন পড়েননি? উত্তর দুই। ভাবছি...ভাবছি...একটা পনেরো মিনিটের বন্ধ ডাকব। সাত মিনিটের মাথায় এক মিনিটের স্ট্র‍্যাটেজিক টাইম আউট।একটু লেবুজল খেয়ে, তারপর প্রবল প্রতিবাদের বাকি সাত মিনিট। একবার হয়েছে কী,

অনেকদিন পর

- এই যে বাহাত্তর নম্বর। তোমার রুটের। চলে এসেছে। - পরের বাসটা নিই? - সে কী। এই যে বলছিলে তাড়া আছে? - আছেই তো। তবু। পরেরটা নেব। কেমন? - আমি বেকার মানুষ। তুমি যদি বলো রাতভর এই বাসস্ট্যান্ডে পড়ে থাকতে, তাও পারব। তোমারই তাড়া। গোটা দিন অফিসের তাড়া। সন্ধের পর বাড়ি ফেরার তাড়া। ফিরে সংসারের কাজকর্মের হুড়মুড়। - হিংসে করছ অভিরূপ? - খানিকটা। ভালোই করেছ বাসটা ছেড়ে দিয়ে। বাদুড়ঝোলা অবস্থা। - পরেরটাও একই রকম থাকবে। - তা’হলে পরের বাসটা নিও। - ওমা না। তাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে। বুবুনের কাল উইকলি টেস্ট। আমার কাছে ছাড়া সে রিভাইজ করতে বসবে না। - বুবুন। কোন ক্লাসে উঠল? - সিক্স। - বড় হয় গেছে। শেষ যখন দেখেছিলাম তখন সে কোলের শিশু। - তোমার মনে আছে? সূর্য সেন স্ট্রিট? বীণা রেস্টুরেন্ট? - বিলকুল। কত বছর কেটে গেছে। তুমি আগের চেয়েও রোগা হয়ে গেছ মিতুল। - সে’টা তো কমপ্লিমেন্ট। - যাক। - তুমি কিন্তু বললে না। কী করছ আজকাল। - বাহ্‌। বললাম যে। সুইট নাথিং। একা মানুষ। ব্যাঙ্কে বাবার রেখে যাওয়া দু’চার পয়সা যদ্দিন আছে খাওয়াপরাটা চলে যাচ্ছে। শেষ হলে ভাবা যাবে’খন। - ও তোমার এড়িয়ে যাওয়া কথা। - তুমি বুঝি আমায় খ

দিবাকরের ইস্তফা

- রেসিগনেশন লেটার? - হ্যাঁ। - তুমি কি পাগল হয়ে গেলে দিবাকরদা? - হয়ত। কিন্তু তাই বলে ভাবিস না আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাবে। - সে'টা হতে পারে না। - বাজে তর্কের সময় আমার নেই। আমার ইমেলটা অ্যাকনোলেজ করে দে। - তুমি জানো এ'টা সম্ভব নয়। এই বেফালতু মেলোড্রামার কোনো মানেই হয় না। - তুই আমার রেসিগনেশন অ্যাক্সেপ্ট করবি না? - তুমি খামোখা রাগ করছ। তুমি রিজাইন করতে পারো না। সে'টা সম্ভব নয়। - শোন মৈনাক, তুই এই পার্টিতে আছিস দশ বছর। আমি কাজ করছি গত বাইশ বছর ধরে। তুই ডেজিগনেশনে আমার সিনিয়র হতে পারিস কিন্তু এই পার্টিতে আমি একজন ভেটেরান, ইয়াং টার্ক আর নই। উল্টোপাল্টা কথা বলে আমায় নিরস্ত করতে পারবি না। - শান্ত হও দিবাকরদা। মাথা গরম করার সময় এ'টা নয়। তোমার যা যা অসুবিধে আছে সেগুলো বলো, আমি নোট করে রাখছি। মলয়দা এলে ওকে আমি বলব, সমাধানের চেষ্টা ও নিশ্চয়ই করবে। - থাক থাক, মলয় দত্তর দৌড় আমার বোঝা হয়ে গেছে। গুণ্ডাদের জোরে ইলেকশন জিতে অত রোয়াব ভালো নয়, ওকে বলে দিস। এখনও সময় আছে, শুধরে নিলে ওর নিজের মঙ্গল, পার্টির মঙ্গল। - সে'সব ভাবার কাজ তোমার নয় দিবাকরদা। রেসিগনেশন রিজেক্ট করা হবে। মলয়

পারভার্ট

"পারভার্ট"। কথাটা কানে বারবার গোঁত্তা খাচ্ছিল বিমলেন্দুর। শিউরে উঠছিলেন। কিন্তু তবু সাহস করে হাতের চিরকুটটা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলতে পারছিলেন না। চিরকুটে সেই গোপন ফোন নম্বর লেখা। অনেকবার সেই নম্বর মোবাইলে টাইপ করেছেন, কিন্তু ডায়াল করা হয়নি। অথচ সহজে বেআইনি কিছু করে ফেলার মানুষ  বিমলেন্দু নন। আর মৌমাকে তিনি বড় ভালোবাসেন, তাকে ঠকাচ্ছেন এ'টা ভেবেও পেটের মধ্যে কেমন অস্বস্তিকর গুড়গুড় হচ্ছে। চারিদিকে মে মাসের রোদের অসহ্য তাপ। বাড়ি থেকে বেরোনোর মুখেই গুগল হোম অ্যাসিস্ট্যান্ট বলে দিয়েছিল ; "লায়েক হয়েছ, নিজের ডিসিশন নিজে নিচ্ছ; আমার কিছু বলার নেই। তবে জেনে রেখো আজ তাপমাত্রা ষাট ডিগ্রী পেরোবে। নবরত্ন বডিকুল্যান্ট কাজ করবে না। শেষে নিজের মুখে নিজে ঝামা ঘষে ফিরতে হবে"। অ্যাসিস্ট্যান্টটাও ক্রমশ তিতকুটে মেজাজের হয়ে পড়ছে; ব্যাটাকে কমল মিত্র মোডে কনফিগার করাটা ভুল হয়েছে। অবশ্য একটু মায়াও পড়ে গেছে; যখন দুম করে সে বলে ওঠে 'ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা জল বের করেই অমন ঢকঢক করে খেয়ে ফেললে? ডাইজেস্টিভ সিস্টেম আর টনসিলে কী ম্যাসিভ ইম্প্যাক্ট পড়ল তা তুমি জানো রাস্কেল?", তখন খারাপ লাগে