Skip to main content

Posts

Showing posts from February, 2019

চিলেকোঠা কনভেনশন

- তুই পারলি কী করে রে বিলু? তোর পিসির ছাদে রাখা বয়াম থেকে চালতার আচার চুরি করতে গিয়ে নন্তু ধরা পড়ল। তুইই পাকড়াও করলি। তা বেশ করেছিস, গীতায় বলেছে ছাদের আচার রক্ষা করতে গিয়ে বন্ধুদের শায়েস্তা করা যেতেই পারে। নিজের পিসির আচার প্রটেক্ট করেছিস, আপত্তির কিছু নয়। সে অধিকার তোর আছে। কিন্তু তাই বলে যে'টুকু আচার নন্তু হাতে খাবলে নিয়েছিল, সে'টাও ওকে ফেরত দিতে বাধ্য করলি? আচার আক্রমণ করতে গিয়ে বন্দী হয়েছে, তাই বলে এমন ইনসাল্ট? আর তার চেয়েও বড় কথা..সে খবরটা তুই নন্তুর মেজকার কানে তুলতে গেলি রে? - আমার কোনো উপায় ছিল না পুলুদা। পিসি এমন কড়া সুরে বললে...। - শাট আপ! অক্টোবরে চিলেকোঠা কনভেনশনে স্পষ্ট বলা আছে আচার এবং আম চুরি অভিযানে কেউ বন্দী হলে তাকে অকুস্থল থেকে বের করে দেওয়া হবে ঠিকই কিন্তু তার হাত থেকে আচার বা আম কেড়ে নেওয়া কিছুতেই চলবে না। আর গার্জেনের কাছে কম্পলেইন তো নৈবচ। চিলেকোঠা কনভেনশনের কাগজে পাড়ার আরো চুয়ান্নটা ছেলের সঙ্গে তুই সই করিসনি? সেই চিলেকোঠা কনভেনশনের ডেক্লারেশনের প্রিয়াম্বেলে কি স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল না যে পাড়ার সীমানার মধ্যে কেউ সেই ডেক্লারেশনের বেয়াল্লিশটা ক্লজের

যুদ্ধটুদ্ধ

কিছু বই শুরু করে ফাঁপরে পড়তে হয়। এই যেমন উইলিয়াম শিরার সাহেবের লেখা দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ থার্ড রাইখ; আ হিস্ট্রি অফ নাজি জার্মানি। এ মলাট থেকে ও মলাটের মধ্যে অর্ধেক রাশিয়া ঢুকে যায়; এমন সাইজ সে বইয়ের। বইয়ের এক-চতুর্থাংশই পড়া হয়েছে, কাজেই এ বই সম্বন্ধে বিশদভাবে লেখা মুশকিল। শিরার সাহেবের একটা গোলমেলে দিক হচ্ছে তিনি বেশ সোজাসুজি ভাবে হোমোসেক্সুয়ালিটির বিরুদ্ধে; তাঁর লেখায় সে বায়াসের আভাস মাঝেমধ্যে ফুটে উঠেছে। তবে বইয়ের গুরুত্ব অন্য জায়গায়, নাৎসি জার্মানীর শুরুর দিনগুলো থেকে  দুর্দান্ত ডিটেলে লেখা হয়েছে, কোট করা হয়েছে প্রচুর জরুরী দলিল দস্তাবেজ এবং কাগজপত্র। আগ্রহীদের জন্য এ বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। যতটুকু পড়েছি, তা'তে দু'টো ব্যাপার বেশ ইন্টারেস্টিং। এক নম্বর। যুদ্ধ থেকে যেনতেন প্রকারেণ গা বাঁচাতে গিয়ে অনেক সময় অনেক দেশ এবং নেতা আরো ভয়াবহ বিপদ এবং খুনোখুনির অন্ধকার ডেকে এনেছেন। ভার্সেই চুক্তিকে হেলায় পাশ কাটিয়ে যখন নাৎসিবাহিনী রাইনল্যান্ডে ঢুকে পড়ে, তখন নাকি জার্মানি কিছুতেই পালটা আঘাত হজম করার পরিস্থিতিতে ছিল না। কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহের ঝামেলা থেকে গা বাঁচাতে চুপটি করে বসে র

বটু গোয়েন্দার বিশ্বাসঘাতকতা

- কী ব্যাপার? আপনি জেল পর্যন্ত ছুটে এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে? এখন বোধ হয় কাটা ঘায়ে নুন ছড়াতে এসেছেন। তাই না বটুবাবু? - না সামন্তবাবু। - আমি আপনার সঙ্গে আর দেখা করতে চাইনা। আপনি আসুন। - আমাদের আরো মিনিট পাঁচেক সময় আছে। থাকুন না, তারপর না হয়ে সেলে যাবেন। দু'টো কথা ছিল। দারোগাবাবুকে অনেক রিকুয়েস্ট করে আপনার সঙ্গে দেখা করতে হয়েছে। - আপনি একজন অপদার্থ বটু গোয়েন্দা! আপনি একটা কাগুজে বাঘ। আপনাকে ভরসা করে যে আমি কী ভুল করেছি...। - আই অ্যাম সরি মিস্টার সামন্ত। - সরি? সরি বলে কী হবে? দেখুন, এই যে। আমার হাতে হাতকড়া।  আমি নিজের ছেলের খুনের দায়ে জেলে এসেছি। নিজের অসহায় হুইলচেয়ারে আটক ছেলেটা চোখের সামনে  মরে গেল, ট্রাকটা ওকে পিষে দিল...আর সবাই ভাবল আমিই...। ছিঃ! জেলে পচতে কষ্ট নেই, কিন্তু এ ভার নিয়ে বাঁচব কী করে বটুবাবু? আর আমার দুরাশা দেখুন। আমি আপনার ওপর ভরসা করেছিলাম। - আমি জানি যারা আপনাকে হুইলচেয়ারকে ট্রাকের সামনে ঠেলতে দেখেছিল তাঁরা ভুল বলছিল। আমি জানি সামন্তবাবু। - থামুন! আপনার জানায় আমার লাভটা কী হল? প্রমাণ করতে পারলেন না। অথচ আপনি নাকি ধন্বন্তরি! আপনি একটা ভণ্ড বাতে

অস্ত্র

- মহারাজ! - সঙের মত দাঁড়িয়ে না থেকে খবরটা বলো! - ওদের অ্যান্টিডোট...। - তা'তে কী? সে অ্যান্টিডোটে কী হয়েছে মন্ত্রী? - আমাদের যন্তরমন্তর ঘরের জাদুর প্রভাব কাটিয়ে দেওয়া যাচ্ছে তা'তে! - বটে? - আজ্ঞে! - এ তোমার মনের ভুল নয়ত? - হাজার হাজার শ্রমিক চাষি গরীব প্রজা জটলা পাকাচ্ছে মহারাজ। এক দু'দিনের মধ্যেই হয়ত কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে...। সেনাবাহিনীর মধ্যেও অসন্তোষ।  কাজেই...। - বৈজ্ঞানিক কী বলছে? - সে পালিয়েছে! - তার ব্যবস্থা আমি করব। তার চামড়া তুলে গোলমরিচ গুঁড়ো ছড়িয়ে ভাজাভাজা না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। কিন্তু তার আগে বজ্জাত প্রজাগুলোর একটা ব্যবস্থা করতেই হয়। - যন্তরমন্তর ঘরই যখন বিকল তখন আর উপায় কী! - থামো! যত ন্যাকাচন্দ্রের দল জুটেছে মন্ত্রীসভায়। প্রজাদের ওপর আদত অস্ত্র প্রয়োগ করার সময় এসেছে। - আজ্ঞে? - নেকু সেজে থেকো না। আদত অস্ত্র। যার কাছে যন্তরমন্তর ফিকে। - আদত অস্ত্র! - বুঝেছ তা'হলে। - মহারাজ! এ যে যন্তরমন্তরের চেয়েও পাশবিক।  মহারাজ, একটিবার ভেবে দেখুন...। - তুমি চাও আমি তোমায় কোতল করি? - মাফ করুন রাজন, কিন্তু..। - ক

কাশ্মীরি পরোটা

প্রবল দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। আর মাঝেমধ্যেই মাথার মধ্যে ভাবনাচিন্তা উঁকি দিচ্ছে, সে’ ব্যাপারটা মোটে অভিপ্রেত নয়। অফিস যাওয়া, বাড়ি ফেরা, খাওয়াদাওয়া, হ্যাহ্যা, নেটফ্লিক্স, সোফা, বই; এর বাইরে কোনো চিন্তা মগজে ঘোরাফেরা করলেই ভয় হয়; বখে যাচ্ছি না তো? এই যেমন সকালে পরোটা আর আলুচচ্চড়ি চেবানোর সময় মোবাইলে দেখলাম সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম কাশ্মীরীদের বয়কট করার দাবীতে। কোথাও আবার তাদের ওপর আক্রমণের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এগুলো কি গুজব? হতে পারে; আজকাল অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে সুপ্রিম কোর্ট বা মা মাথায় গাঁট্টা মেরে না বললে কোনো কিছুই মেনে নিতে মন সরে না। তবে এর সামান্য অংশও যদি সত্যি হয় তা’হলে ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে খুব গোলমেলে; অন্যায়ও বটে। এতটুকু ভেবেই পরোটা চেবানো থামালাম। মাথায় একটা চিন্তা এসেছে; কাজেই টুক করে সে’টা সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি না লিখি তবে সে চিন্তা ভূত হয়ে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাবে।  সাতপাঁচ ভেবেই একটা হোয়্যাটস্যাপ গ্রুপে লিখেছিলাম; খামোখা কাউকে পেটানো বা কেউ অমুক এলাকার মানুষ বলেই তাকে বয়কট করব – ব্যাপারটা নেহাত সরেস নয়। আমি বাঙালি বলেই কেউ যখন আমায় আলসে বলে তখন গায়ে একটু চিড়বিড় করে ব

ভবিষ্যতের ভূতের তান্ত্রিক

- কী ব্যাপার বলুন তো দাদা, বাসে উঠে থেকে দেখছি আপনি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন। - দেখুন মশাই, দৃষ্টিতে যে কাম নেই, সে'টা আশা করি বুঝতে পারছেন। - তাই বলে জানা নেই, আলাপ নেই; অমন বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে থাকবেন? - কচু দেখে শুয়োর থমকে দাঁড়াবে না? - কী? কী বললেন? আমি কচু? - ওহ, মন্দ লাগল? বেশ,  হিরের ঝিলিক দেখে জহুরির ড্যাবড্যাবে চাউনিটা স্বাভাবিক। - আপনার মতলবটা কী বলুন দেখি? - বলছি, তার আগে নিজের পরিচয় দিই। আমি অঘোর দাসমুন্সি। - আমার নাম..। - আপনার নামে আমার তেমন দরকার নেই। - আজ্ঞে? - আপনার নাম তো এই নশ্বর দেহ আর এই জাগতিক পরিচিতির।  ও দিয়ে কী হবে। বরং আপনার আত্মারামটিকে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। ভেরি ইম্প্রেসড। আপনার আত্মার মধ্যে জেনুইন কোয়ালিটি আছে। - বাপ থেকে বস আজ পর্যন্ত কেউ একবারও বললে না আমার মধ্যে কোয়ালিটি আছে। আর আপনি দেখছি এক্কেবারে আত্মায় ঢুকে পড়লেন। আপনি কি তান্ত্রিকটান্ত্রিক নাকি? - করেক্ট। উনচল্লিশ বছর ধরে সাধনা করছি। আর জমানোর  শখ অবশ্য গত বাইশ বছরের। নেপালের জঙ্গলে এক কাপালিকের চ্যালা হয়ে তিন বছর ছিলাম। তাঁর আশীর্বাদেই যে'টুকু যা রপ্ত

শেষ চিঠি

হাসান সাহেব, এই আমায় শেষ চিঠি। চমকে উঠলেন? বাবুর্চি ইকবালকে আপনি আপনার ছেলের যাত্রাপথের সঙ্গী করে পাঠালেন তাঁর দেখভালের জন্য; হামদা শহরে এক হপ্তার কাটিয়ে, আপনার নয়নের মণি সরফরাজকে নিয়ে আমার ফিরে আসার কথা। অথচ এখন এই শেষ চিঠির বিশ্রী নাটক..কোনো মানে হয়? হাসানসাহেব, মিথ্যেটুকু এইবেলা সাফ করে নেওয়াই ভালো। আমার হাতে সময় বড্ড কম; কাজেই বাহারে ভাষায় আটকে থাকলে হবে না। আমার আদত নাম ইকবাল নয়, আমি আরিফ আনসারি। আমার আদিবাড়িও নেয়ামতপুরে নয়, আমার কাগজপত্রগুলো ভুঁয়ো ছিল। হ্যাঁ, আমি আপনাদের ঠকিয়ে এই বাবুর্চির চাকরীটা নিয়েছিলাম; গত দু'বছর ধরে আপনার বিশ্বাস অর্জন করেছি প্রাণপণে খেটে। লোকঠকানোর মত বিশ্রী পাপ আর হয়না, কিন্তু বিশ্বাস করুন; এ ছাড়া কোনো পথ আর আমার সামনে খোলা ছিল না। আপনাদের পাগলামোর জন্য আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, জানেন হাসান সাহেব? আপনি আর আপনার ছেলে সরফরাজ, আপনারা যে কত গরীব মানুষের সর্বনাশ করেছেন তাদের মাথায় ধর্মের নামে পাগলানো পুরে দিয়ে,  তার ইয়ত্তা নেই। গোটা দেশ ধ্বংস না করলে আপনাদের শান্তি নেই। আপনাদের জঙ্গি সংগঠন ফুলেফেঁপে উঠছে আর বিপ্লবের ঝুটো জিগির তুলে মুনাফা লুঠ

ভ্যালেন্টাইন

- অ্যালগো,ও  অ্যালগো। - শুনি অনুপবাবু, শুনি। - সুতপার সঙ্গে তা'হলে..। - দেখা করতে যাবেন না। - কিন্তু অ্যালগো...। যদি আমরা...। - বাইশ হাজার দু'শো বত্রিশটা 'কিন্তু' আর তেরো হাজার সাতশো উনিশটা 'যদি' পেরিয়ে স্প্রেডশিট এ সিদ্ধান্ত এসেছে। উপায় নেই। - কিন্তু অ্যালগো, সুতপার সে হাসি যে ভুলে যাওয়ার নয়। ওর নরম চাউনি। মনটাও কলাপাতা সবুজের মত সরল। - কাব্যিক রেফারেন্স। ইলজিকাল কম্পারিসন নোটেড, লাভ রেসিডিউ স্পটেড।  তবে সিম্পটম যে গোলমেলে তা স্পষ্ট। দু'জনেই দীর্ঘদিন একা থেকে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছেন। কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে। গভর্নমেন্ট বায়োমেট্রিক সার্ভার থেকে আপনাদের দু'জনের হরোমনাল আর সাইকোমেট্রিক রিপোর্ট কম্পেয়ার করে দেখে নিয়েছি। এই ডেট ভালোই লাগবে আপনাদের দু'জনের। - তবে এত গোলমাল পাকাচ্ছ কেন? - এই প্রেমে সাত নম্বর ডেট পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা বিরানব্বুই শতাংশ।   বিয়ের সম্ভাবনা তেতাল্লিশ শতাংশ। বিয়ে হলে বিয়ের সাত বছরের মাথায় রোম্যান্স শেষ হয়ে যাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট; একাশি শতাংশ সম্ভাবনা।  ঝগড়াঝাঁটি,  বিশ্রী ডিভোর্স। জেনেটিক ম্যাপিং বলছে সুপার ইন্টেলিজে

দুই প্রেমিক

প্রেমিকের স্পেক্ট্রামের একদিকে 'আনেওয়ালা পলে'র অমল পালেকর। অন্যদিকে 'তুম আ গয়ে হো নূর আ গয়া হ্যায়'র সঞ্জীবকুমার। এক হাতের তর্জনীর ডগায় চাবির রিং চরকি কাটতে কাটতে অমল অন্য হাতে টেনে নেবেন প্রেমিকার হাত। বলবেন; "এ হপ্তায় ঘুরে আসি চলো; সমুদ্র চাইলে তাজপুর। পাহাড়ে রয়েছে পুরুলিয়া। না শুনছি না। আর নীল শাড়িটা আনা চাই, নয়ত নতুন ক্যামেরাটা জলে"। বুক খোলা সোয়াটারের হাত গুটিয়ে সঞ্জীব জানাবেন " ছাত থাকতে শুশুনিয়া ঠেঙিয়ে যাওয়া কেন। ব্যালকনিতে বেতের চেয়ার থাকতে দীঘার বাসের টিকিট স্রেফ হাঙ্গামা"। অমল বলবেন "দেলখোশার কেবিন"। সঞ্জীব বলবেন "চেট্টিনাড মামলেট চেখে দেখেছ কখনও? আমার নিজের ইম্প্রোভাইজড রেসিপি"।

বংপেন৭৫য়ের বিজ্ঞাপন

কৃষ্ণ মন দিয়ে রথ চালাচ্ছিলেন। ফুরফুরে হাওয়া বইছে কুরুক্ষেত্র জুড়ে, বেশ একটা 'দে গাঁট্টা' মেজাজে গা ভাসিয়ে দেওয়া গেছে। একটু মৌজ করে কেষ্টদা বললেন "বুঝলে ভায়া অর্জুন, প্রচুর চিটকোড এনেছি। কৌরব ঠেঙিয়ে আজ একটু ফুর্তি করা যাবে"। ও মা! ব্যাকসিটে অর্জুন স্পিকটি-নট। আর ঘাড় ঘুরিয়ে কেষ্ট যা দেখলেন তাতে তাঁর মাথা গেল ঘুরে। অর্জুন ব্যাটাচ্ছেলে কানে ইয়ারফোন গুঁজে মগ্ন, মাঝেমাঝে দুলে দুলে উঠছে আর গুনগুন করছে " উ লাল্লা উ লাল্লা পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে উ লাল্লা উ লাল্লা রে"। যশোদানন্দন অমনি পাশে রাখা বইটা হাতে তুলে নিলেন; বংপেন৭৫। বইটার মধ্যে সুদর্শন চক্রটা পেজমার্ক হিসেবে রাখা ছিল; সে'টা সাবধানে বের করে পাশে সরিয়ে রাখলেন। তারপর অর্জুনের গবেট মাথা তাক করে ছুঁড়ে মারলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র; পত্রভারতী প্রকাশিত বংপেন৭৫। দেড় মিনিটের মাথায়, কপালে আইসপ্যাক ঘষতে ঘষতে আর"সরি গুরু, রিয়েলি সরি" বলতে বলতে; উঠে দাঁড়ালেন মহারথী অর্জুন, টেনে নিলেন গাণ্ডিব। "যত্তসব লেজি বাফুন" বলে বংপেন৭৫টা তুলে ঝেড়েঝুড়ে নিজের কাছে রাখলেন কেষ্ট। রথ এগিয়ে নেওয়ার আগে অ

সিরিয়ার গল্পগুলো

দেশের এবং দশের ইতিহাস বলতে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই এসে পড়বে সমষ্টিগত চাওয়া, পাওয়া এবং হারানোর গল্প। সে'খানে নেতৃস্থানীয় মানুষদের (তা রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক, সামরিক হোক বা অসামরিক, ভালোর দলে হোক বা মন্দের) কথাও অবশ্যই বলতে হবে। কিন্তু ইতিহাসের গল্পে সচরাচর ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া সাধারণ মানুষের পার্স্পেক্টিভ উঠে আসে না। বা কখনও উঠে এলেও তা স্রেফ অলঙ্কার হয়েই থাকে; শুধুই সে সব গড়পড়তা মানুষের অভিজ্ঞতায় ভর দিয়ে ইতিহাস রচনা করা চলে না। এ'টা কোনো ক্ষোভ থেকে বলা নয়, বরং এ'টাই বাস্তব। স্বাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাস লিখতে গেলে যেমন আমাদের ফোকাস পড়তেই পারে ১৯৪৮য়ের তিরিশে জানুয়ারির ওপর। আর সেই দিনটার ব্যাপারে দরকারি কিছু লিখতে হলে স্বাভাবিক ভাবেই আমি জানতে চাইব সে'দিন সকালটা মোহনদাস কী ভাবে কাটিয়েছিলেন বা গডসে কী ভাবছিলেন বা দেশভাগের আগুন রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কী ভাবছিলেন। কিন্তু সেই ১৯৪৮য়ের তিরিশে জানুয়ারি বুঝতে গিয়ে কি আমি সে'দিনটা একজন করোলবাগের ফলবিক্রেতার জন্য কেমন কেটেছিল; সে'টা জানতে চাইব? বা নবদ্বীপের এক মুদীখানার মালিক সে'দিন বিকেলে কী করেছিলেন; তা জানতে

ইন অর্ডার টু লিভ

পৃথিবীটা সত্যিই ছোট। কিছুদিন আগেই পড়েছিলাম সুদানের লোপেজ লোমংয়ের দুর্ধর্ষ লড়াইয়ের কথা। অকথ্য অত্যাচারের কবল থেকে কোনোক্রমে পালিয়ে বেঁচেছিলেন; গিয়ে পড়েছিলেন কিনিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরের ভয়াবহ অভাব ও চরম অব্যবস্থায়। তবে সমস্ত বাধাবিঘ্ন জয় করে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলেন লোপেজ; নতুন দেশ খুঁজে পেয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সে'খানে নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তুলেছিলেন।তিনি। লোপেজের জীবনের উজ্জ্বলতম অধ্যায়  ২০০৮য়ের চীন অলিম্পিক; যে'খানে আমেরিকার পতাকাবাহক ছিলেন তিনি। আর ঠিক সেই অলিম্পিকের সময়ই চীনের সরকার সচেষ্ট হয়ে উঠেছিল সে দেশের নারী-ব্যবসা রুখতে। যে ব্যবসার মূলে ছিল উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা উদ্বাস্তু মেয়েরা, যারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল বাঁচতে। সে মেয়েদের তখন ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমির অবস্থা; হয় কুচক্রে পেষাই হওয়া আর নয়তো চীনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে উত্তর কোরিয়ায় ফেরত যাওয়া যা নিশ্চিত মৃত্যুর সামিল। সেই সব দুর্ভাগা মেয়েদের একজন য়েওনমি পার্ক। যে অলিম্পিক লোপেজের জীবনে এনে দিয়েছিল আলোর স্পর্শ, সে সময়টার অন্ধকারেই হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল য়েওনমির। য়েওনমির জন্ম ১৯৯৩ সালে, আমার চেয়ে কত ছো

আশ্চর্য প্রদীপ

বিপিন সান্যাল একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে মৌরির কণা বের করার চেষ্টা করছিলেন। চোখ বুজে, গা এলিয়ে; যতটা মন দিয়ে করা সম্ভব আর কী। মানকরের মত ছোট্ট শহর হলে যা হয় আর কী; দুপুরের সময়টা দোকানে খদ্দেরদের আসা-যাওয়া তেমন থাকে না, ক্যাশকাউন্টারে বসে একটু গা এলিয়ে নেওয়ার এ'টাই প্রশস্ত সময়। দাঁত খোঁচানোয় বিঘ্ন ঘটল 'আপনিই বিপিনবাবু? এই সান্যাল মেটাল ট্রেডার্সের মালিক?" ডাকে। জলদগম্ভীর পুরুষকণ্ঠ। নাম ধরে ডেকেছে কাজেই খদ্দের সম্ভবত নয়। বিপিনবাবু চোখ মেলতে দেখলেন গেরুয়া আলখাল্লা পরা একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক, দাড়িগোঁফে মুখ ঢাকা। সন্ন্যাসী গোছের কেউ, তবে ভিখিরি নিশ্চয়ই নয়; বাঁ হাতের কবজিতে যে ঘড়ি তার ব্যান্ড দেখে মনে হয় বেশ দামী। - আপনিই বিপিনবাবু? - আমিই। কী ব্যাপার? - আজ্ঞে আমার নাম স্বরূপানন্দ।আমি জসিডি থেকে আসছি। - জসিডি থেকে এসেছেন আমার সঙ্গে দেখা করতে? - আজ্ঞে হ্যাঁ। বসতে পারি? - বসুন। তা, আমার এই লোহালক্কড়ের দোকানে কী মনে করে স্বরূপানন্দজী? - হ্যাঁ, সোজা সে ব্যাপারটা নিয়েই বলি। গত পরশু জসিডি থেকে এক ট্রাক লোহালক্কড়  আপনার কাছে এসে পৌঁছয়। - লোহালক্ক

নিউজ চ্যানেল

- খোকা! স্যাট স্যাট করে টিভির সামনে এসে না পড়লেই নয়? - আহ! টিভি না পেরিয়ে ফ্রিজ পর্যন্ত পৌঁছব কী করে? আর ফ্রিজেই তো ছানার জিলিপির বাক্স। - ছানার জিলিপি? দেশ গোল্লায় যাচ্ছে আর উনি ছানার জিলিপির জন্য আমার কনসেন্ট্রেশনে ফিনাইল ঢালছেন। - দেখছ তো নিউজ চ্যানেল, তার আবার কনসেন্ট্রেশন কীসে। - দেশের পলিটিকাল ক্রাইসিস সম্বন্ধে খবর রাখার প্রয়োজন বোধ করিস? - ক্রাইসিস? ও তোমার এই খবরের চ্যানেলগুলোর বাড়াবাড়ি। - বাড়াবাড়ি? বটে? অ্যাডাম স্মিথ সামান্য দু'পাতা উলটে দেখলে বুঝতিস। দেশের পলিটিকাল হিস্ট্রি একটু দরদ দিয়ে পড়লে টের পেতিস যে কী ভোলাটাইল সিচুয়েশনে আমরা বাস করছি। য়ুরোপের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলেই জানতে পারবি যে...। - মাইরি বাবা। দেখছ তো নিউজচ্যানেলের গাঁজা চিৎকার চ্যাঁচামেচি, এ'দিকে কোট করবে মার্ক্স স্মিথ অরবিন্দ। এক পিস জিলিপি খাবে? - একটা গোটা জেনারেশন নেরোর মত জিলিপির বেহালা হাতে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছে। তোদের দেখে খুব চিন্তা হয় রে খোকা। - দু'টো জিলিপিই পড়ে আছে বোধ হয়। - ফের জিলিপি? এ'দিকে দেশের মধ্যে ক্রাইসিস...ফের যদি টিভির সামনে এসেছিস...। - এর চেয়ে সিরিয়াল দ

ধারালো প্রপোজাল

প্রপোজ করতেই হলে ধারালো তরবারি হয়ে ফালাফালা করে দিতে হবে। এস্পারওস্পার চাই, নেকু হ্যাঁগোওগোভালোবাসিগো দিয়ে বেশিদিন কাজ চলবে না। বাঙালির প্রপোজাগুলো টেম্পলেটগুলো আপগ্রেড করে রাখা দরকার। ১৷ আউট- তোমাকেই ভালোবাসি। ইন - ভীড় মিনিবাসে তোমার জন্য জানলা ছেড়ে দেব। ২। আউট - তোমায় ছাড়া বাঁচবা না। ইন - তুমি না থাকলে যে আমায় বিউলির ডালে রসগোল্লা চুবিয়ে খেতে হবে! ৩। আউট - যা তোমারে দিয়েছিনু তা তোমারই দান। ইন - এক প্লেটে পাঁচটা ফিশফিঙ্গার দেখছি, আমি দু'টো তুমি তিনটে। না বললে হবে না। ৪। আউট - ভালোবাসা মানে আর্চিস গ্যালারি। ইন - রোজ মশারি আমি টাঙাবো, প্রমিস। ৫। আউট - তুমি আমার চিরদিনের..। ইন- দু'জনের ফোনেই দেখছি টাইপ সি চার্জার। সুবিধে হল কিন্তু...। ৬। আউট - এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই পাওয়া...। ইন - ও মা! আপনার গাদার পিস ভালো লাগে? আমি আবার পেটি ভক্ত। কম্বোটা কতটা খাপেখাপ সে'টা ভেবে দেখেছেন কি? ৭। আউট - আমায় বিয়ে করবে? ইন - যা বুঝছি, দু'জনের একটা আমাজন প্রাইম অ্যাকাউন্টেই চলে যাওয়া উচিৎ। ৮। আউট - এসো এসো আমার ঘরে এসো, বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ

সকল দেশের সেরা

- হ্যান্ডস আপ! - কাটা গেছে স্যর, দু'টোই। তবু কল্পনায় দু'হাত তুলে ধরলাম..ফায়্যার করবেন না প্লীজ। পেটে বড্ড খিদে, এত খিদে নিয়ে ফস করে মরে গেলে যদি অম্বল হয়? - বাজে ঠাট্টা একদম নয়! একদম নয়। নেতার হুকুম, বাজে ঠাট্টা শুনলেই ঢিশকাঁও! - সৈনিকদাদা, বন্দুক আপনার হাতে। আমার হাত জোড়াই বরং গায়েব। আমি ঠাট্টা করি কোন মুখে? - তা এত রাত্রে কাঁটাতারের তল দিয়ে সটকাবার তাল  করেছ ব্যাটাচ্ছেলে? তোমার তো সাহস কম নয়! - কাঁটাতারের তল দিয়ে...ও মা! আমি কি পাগল না আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় নেতার ফর্সা নাকের ডগায় বসা বেয়াদপ মশা? আমি কাঁটাতার পেরোব? আমি কি জানিনা যে ও'পারে শত্রুদেশ? - বাজে কথা বলবে না! বাজে কথা বলবে না! পেরোতে না চাইলে এই অসময়ে কাঁটাতারের আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলে কেন? - আজ্ঞে সৈনিকদাদা, থুতু ফেলতে এসেছিলাম। কাঁটাতারের ও'পারে। হারামজাদাদের দেশের মাটিতে থুতু ছিটিয়েও শান্তি। তাই না? - চোপ! ধরা পড়লে সবাই ও'সব বড় বড় কথা বলে। - না গো না, আমাদের নেতামশাই কত ভালোবাসা দিয়ে এই দেশ গড়েছেন। আমাদের এ স্বপ্নের দেশে কত দেশাত্মবোধক গান, কত দেশ গড়ার বই, আমাদের সেনা কত মজবুত,

বাপনের ওয়েক-আপ কল

- উঠে পড়ো বাপনবাবু। ক্যুইক। আর শুয়ে থাকা চলবে না। - দাদু, টূ আর্লি। আর একটু পরে উঠব। - নো বাপন। অন্তত আজকের দিনটা তোমায় সময় মত উঠতেই হবে...। কাম অন। - ওহ, আজ সাতই ফেব্রুয়ারি। - হ্যাপি বার্থডে দাদুসোনা। - থ্যাঙ্কিউ। কিন্তু দাদু, এ বয়সে কি আর জন্মদিন নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি চলে? - বয়স আবার কী? ইউ আর মাই নাতি, আমার কাছে তুমি সবসময় এই এত্তটুকুনই থাকবে। কাজেই ওয়ান্স এগেইন, জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা। নাও, চটপট করে উঠে পড়ো দেখি। - আর একটু শুয়ে থাকি দাদু? প্লীজ? - না! একদম নয়। আগে যাও গিয়ে তোমার মা'কে প্রণাম করে এসো। - মা প্রত্যেকবার বড্ড ইমোশনাল হয়ে বড়ে। আমার জন্মদিন না নোবেল পেয়েছি বোঝা দায়। - শী ইজ ইওর মাদার। তোমার জন্মদিনে সে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বে; সে'টাই স্বাভাবিক। বরং তোমায় বলি; মিলেনিয়ালদের মত কূল হতে গিয়ে কোল্ড হয়ে পড়ো না বাপনবাবু! নাও গেট আপ। ক্যুইক, ক্যুইক। - যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি! উফ! *** - কী হল দীপা! এমন ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলে! দুঃস্বপ্ন? - না, দুঃস্বপ্ন কেন হবে! রাত সোয়া বারোটা হয়ে গেছে। সাতই ফেব্রুয়ারি পড়ে গেছে। - বাপনের জন্মদিন..। - ও এসেছিল গো, গত পাঁচ বছর ধরে যেম

বইমেলায় গুমখুন

- দত্তবাবু, কলকাতা বইমেলার স্টল সংখ্যা তিনশো চোদ্দ দশমিক এক পাঁচে আপনাকে স্বাগত জানাই। - স্টল নাম্বার কত? - তিনশো চোদ্দ দশমিক এক পাঁচ। - জব্বর গোলমাল পাকিয়েছে দেখছি গিল্ড! ডেসিমালে স্টল নম্বর! - আপনি বইয়ের জন্য এসেছেন না স্টল নম্বরের জন্য? - দাঁড়ান দাঁড়ান, তিনশো চোদ্দ থেকে বেরিয়ে তিনশো পনেরো নম্বর স্টলে ঢুকতে যাবো। তিনশো চোদ্দ থেকে বেরোতেই সামান্য হোঁচট খেলাম, আর তারপরেই এই...। - স্টলে এসে পড়লেন, স্বাভাবিক।  তিনশো চোদ্দ আর তিনশো পনেরোর মাঝখানে ঢুকতে হলে হোঁচট খেতেই হবে। - ভোজবাজি দেখছি। - এ'বারে বইগুলো একটু নেড়েচেড়ে দেখুন দত্তবাবু। এসেই যখন পড়েছেন..। - আপনাদের এ'টা কোন পাবলিকেশন? - গুমখুন প্রকাশনী। - সর্বনাশ! এ'টা কোনো নাম হল? - বইয়ের স্টলের নম্বর আর প্রকাশনার নামগুলোই সব নয় দত্তবাবু, বইয়ের জন্য বইমেলায় আসা। বই দেখুন। - এক মিনিট, আপনি আমার নাম জানলেন কী করে? - আপনিও আমায় চেনেন। অমনোযোগী না হলে দিব্যি চিনতে পারতেন। - কে আপনি? - কত টালবাহানা আপনার মশাই। স্টলের নম্বর নাপসন্দ। প্রকাশনার নাম শুনে বিরক্তি। স্টলে বসে থাকা মানুষকে নিয়ে খুঁতখুঁত।